জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং – পার্ট ৩
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
একটি ভুত এবং একজন অনুপ্রবেশকারী
জেমসের ঘুম ভেঙে গেল অন্যদের ওঠার আগেই। ঘরটা নিস্তব্ধ, অন্যান্য গ্রিফিন্ডোরদের নিঃশ্বাসের শব্দ এবং নোয়ার বাঁশীর মত নাক ডাকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে শুধু। ঘরের মধ্যে হাল্কা গোলাপী রঙের আলোর আভা ছড়িয়ে আছে। জেমস আর একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না। আগামী বারো ঘণ্টায় কি কি ঘটতে পারে তার চিন্তায় ওর মন উৎকণ্ঠিত। আর শুয়ে না থেকে উঠেই পড়লো এবং বাইরে যাওয়ার ড্রেস পড়ে নিল।
হগওয়ারটসের হলগুলো এখন শান্ত ও ফাঁকা, কিন্তু যেন কিসের একটা ব্যস্ততা ছড়িয়ে আছে সর্বত্র আজকের এই সকালে। কুয়াশা মাখা ঠান্ডা জড়িয়ে আছে আবহাওয়ায়। সকালের আবছায়া এখানে ওখানে। তারই সাথে কিরকম যেন একটা না দেখতে পাওয়া চলাচল ঘটে চলেছে সরু সরু সিঁড়ির ধাপ আর গুরুত্বহীন দরজা গুলো দিয়ে। জেমস ফাঁকা ক্লাসঘরগুলোর পাস দিয়ে হেঁটে চলতে চলতে দেখতে পাচ্ছিল হাউসএলফদের কর্মচঞ্চলতা। হঠাৎই একটা বাথরুমের দরজা খুলে গেল, হাতে বালতি ও ন্যাতা, জলের ফোঁটা পড়ছে তার থেকে, নিয়ে বেরিয়ে এলো ওদের একজন। নাকে ভেসে এলো গরম পাউরুটির গন্ধ। দূর থেকে ভেসে আসছে বাসনপত্রের ঠোকাঠুকির আওয়াজ। সারি সারি জানলা গায়ে পরদা ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিথর ভাবে।
জেমস গ্রেটহলে ঢুকলো। ফাঁকা এবং শান্ত। সিলিং এখন ফ্যাকাশে গোলাপি আভা মেখে সকালের প্র্থম সূর্যালোকের প্রতীক্ষায়। সেদিকে তাকাতেই কিছু যেন একটা নজরে এলো জেমসের। চোখ কচলে ভালো করে তাকালো। কিছু একটা নড়ছে অস্বচ্ছ কড়ি বরগাগুলোর ওখানে। একটা ছাই রঙের অবয়ব ভেসে বেড়াচ্ছে, সাথেই গুন গুন করে ভাঁজছে গানের সুর। জেমস চেষ্টা করলো বোঝার ওটা কি। দেখে মনে হচ্ছে একটা ছোট্ট মোটা মতন মানুষের অবয়ব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে। ছোট ছোট কিছু জিনিষ একটার ওপর আর একটা ব্যালান্স করে সাজানোর চেষ্টায় রত। জেমস লক্ষ্য করে দেখলো জিনিষগুলো সাজানো হচ্ছে ঠিক হাউস টেবিলগুলোর ওপর। একটু হাওয়া লাগলেই ওগুলো সব ছিটিয়ে পড়বে নিচে।
‘ফি ই ইই’ জেমস চমকে গেল সহসাই অবয়বটার চিৎকারে। ওটা ওকে দেখে ফেলেছে। এত দ্রুত ওটা ওর দিকে নেমে এলো যে আর একটু হলে জেমসের হাত থেকে বইগুলো পড়েই যেত। অসন্তোষ এবং হাসি মেশানো এক অদ্ভুত গানের সুরে অবয়বটা জানতে চাইলো, ‘কেহে তুমি চরের ওপর করছো গুপ্তচর গিরি, সকালের দুষ্টুমিটা যাতে না করতে পারি ?’
‘ওহ,’ জেমস একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, “এবার চিনেছি। ড্যাড আর মাম বলেছিল বটে তোমার কথা। পীভস।’
জেমসের চারদিকে এক পাক ঘুরে নিয়ে পীভস বললো, ‘আরে আমিওতো তোমায় চিনি, ছোট্ট সোনা! খুদে পটার, জেমস! উও উও! সকাল সকাল এটা সেটার খোঁজে বেরিয়ে পড়েছ। একদম বাবার মত নয় স্বভাব! সে আবার রাতের বেলা ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতো! কি জন্যে এসেছো, ব্রেকফাস্ট? ও হো, সরি, ওই এলফি তেলফিরা এখনো সব বানিয়ে উঠতে পারেনি। এত সকালে শুধু মাত্র আমাকে পাবে। তা পেরুভিয়ান ব্যালাস্টিক বীন খাবে নাকি দু একটা?’
‘ না, থ্যাঙ্কস! আমি … আমি তাহলে এখন আসি, পরে আসছি ।’ জেমস ঘুরে পেছন দিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাঁটা শুরু করলো।
‘ঠিক আছে কথা দিলে কিন্তু?’ উমম! বীন, বীন একেবারে সুরেলা বীন!’ পীভস জেমসকে ছেড়ে আবার উঠে গেল সেই কড়িবরগার ওপর। ‘যত বেশী হবে সাজানো, তত বেশী যাবে ফাটানো! খুদে পটারের কুমড়োর জুস, হবে ফটাস ফুস!’ খিল খিলিয়ে হেসে উঠলো।
পিভসের গানের আওতা থেকে দূরে যাওয়ার জন্য জেমস হেঁটেই চললো । একসময় ও পৌঁছে গেল একটা লম্বা একাধিক থামের ওপর দন্ডায়মান ব্যালকনিতে। যেখান থেকে স্কুলের মাঠটা পেরিয়েও দেখা যায়। সূর্যের আলোয় সোনালী হয়ে থাকা মেঘের গায়ে লেক থেকে উঠে আসা কুয়াশা ভাসছে। জেমস রেলিংএ ভর দিয়ে ঝুঁকে দাঁড়ালো। একটা অজানা আনন্দের শিহরন ওকে রোমাঞ্চিত করছিল স্কুল শুরুর প্রথমদিনটায়।
দূরে কি যেন একটা নড়াচড়া করছে। জেমস মনোযোগ দিল ওটার দিকে। হ্যাগ্রিডের কেবিনের কাছে, অরন্যের ধার ঘেঁষে। মনে হয় হ্যাগ্রিড ফিরে এসেছে। জেমস কেবিনটাকে দেখলো ভালো করে। না চিমনী দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না। সামনের চত্বরটা অপরিষ্কার, বড় বড় ঘাস গজিয়েছে। জেমস একটু চিন্তায় পড়লো। হ্যাগ্রিড এখনো ফিরে এলো না কেন? ও জানে ওই আধা-দানবটার মনে একটা কোমলস্থান আছে পশু ও দৈত্যদের জন্য। মাম এবং ড্যাডও এব্যাপারটা নিয়ে চিন্তায় থাকে। যদিও আপাতভআবে সব ঠিকঠাকই মনে হয়, কিন্তু যদি দৈত্যরা হ্যাগ্রীডদের আক্রমণ করে , ধরে বন্দী বানিয়ে রেখে দেয় , কোনোক্রমে। তাহলে –
আবারো নড়া চড়াটায় জেমসের নজর গেল। হ্যাগ্রিডের কেবিনের পেছনে যেখানে জ্বালানীকাঠের টুকরো স্তুপ করে রাখা আছে সেখানেই একটা রঙ্গিন কিছু নড়লো যেন, একটা আলোর ঝলক ও দেখা গেল। জেমস চোখ কুঁচকে, ঝুঁকে চেষ্টা করলো দেখার। ওই তো আবার। কাঠের স্তুপের পেছন দিয়ে একটা মাথা উঁকি মারছে। এতদূর থেকে জেমস মোটামুটি বুঝতে ওটা একটা ড্যাডের বয়সী লোক। মাটির দিকে তাকিয়ে কিছু খুঁজছে, তারপরই আস্তে আস্তে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একটা ক্যামেরা তুলে ধরলো। আবার দেখা গেল আলোর ঝলক, লোকটা এই দুর্গের ছবি তুলছে।
জেমস যখন ভাবছে এই ঘটনাটার কথা কাউকে গিয়ে ওর বলা দরকার, একজন শিক্ষক নিদেনপক্ষে একটা এলফকে, তখনই কিছু একটা ওর পাশ দিয়ে বিদ্যুৎ বেগে চলে গেল। লাফিয়ে জেমস একপাশে সরতে যেতেই এবার সব বই হাত থেকে পড়ে গেলো। ওই কিছু একটাটার শরীরটা সাদা এবং অস্বচ্ছ এবং চলন শব্দহীন। সোজা ওটা নেমে গেল নিচের জমিতে, ধেয়ে গেল ওই অজানা ক্যামেরাধারীর দিকে। সূর্যের আলোয় ভুতুড়ে অবয়বটাকে ঠিক করে দেখা না গেলেও অনুপ্রবেশকারী ওকে দেখতে পাচ্ছিল, বোঝাও গেল এমন হবে ও জানতো। একটা ভয়ের চিৎকার লোকটার কন্ঠ দিয়ে বের হলেও পালিয়ে গেল না। চকিতে ক্যামেরাটা তুলে গোটা কয়েক ছবি তুলে নিল এগিয়ে আসা অস্পষ্ট মূর্তির। তারপরই ঊর্ধ্বশ্বাসে মারলো দৌড় অরন্যের ধার ঘেঁষে। একসময় ঢুকে গেল জঙ্গলের অন্ধকারে। প্রেতাত্মাটাও শিকারি কুকুরের মতই ছুটে গেল অরন্যের প্রান্তসীমা পর্যন্ত। জেমস দেখতে পেল ওটার অবয়ব আরো পরিষ্কার হচ্ছে। ব্যালকনির কাছে যখন ফিরে এলো তখন ওকে দেখতে লাগছিল একজন যুবকের মতন। মাথা নিচু করে হতাশ ভঙ্গীতে হাঁটছিল, যদিও প্রত্যয় দেখা যাচ্ছিল তার মধ্যেই। সহসাই ওপর দিকে তাকালো , জেমসকে দেখেই থমকে গেল। বেশ খানিকক্ষণ একভাবে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে জেমসকে দেখতেই থাকলো এবং হঠাৎই বাস্পের মত উবে গেল, দ্রুত চোখের সামনে থেকে।
জেমস ভালো করে তাকালো যেখানে এই মাত্র অবয়বটা দাঁড়িয়ে ছিল। ও জানে ও কোন দিবাস্বপ্ন দেখেনি। প্রেতাত্মা হগওয়ারটসের একটা অঙ্গ, জাদুদন্ড আর নড়াচড়া করা ছবির মতই। ও এর মধ্যেই র্যাভেনক্ল হাউসের হাউসঘোস্ট দ্য গ্রে লেডীকে দেখেছে গত রাতে দুঃখিত মুখে বারান্দায় ভেসে বেড়াতে। ও অপেক্ষায় আছে গ্রিফিন্ডোরের হাউস ঘোস্ট প্রায় মাথা কাটা নিকের সাথে দেখা হওয়ার। এই প্রেতাত্মাটি ওর কাছে নতুন। অবশ্য ওর বাবা মা এখানকার জীবন যাত্রার প্রতিটি বিষয় ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলেন নি। অনেক অনেক নতুন কিছুই অপেক্ষা করে আছে ওর জন্য। এখনো যেন ওই অবয়ব ওর চোখের সামনে ভাসছে, ঠিক যেমনটা ভাসছে ক্যামেরাম্যানের চেহারা। লোকটা কি কোন উইজার্ডিং ট্যাবলয়েডের থেকে এসেছিল? “ দি কুইব্ল্যার” থেকে নয় নিশ্চিত। জেমস জানে যারা ওই পাবলিকেশনটা চালায় তাদের কোন উৎসাহ নেই হগওয়ারটসের সকাল বেলার খবরাখবর নিয়ে। তবুও এমন অনেক ছিঁচকে ওঁচা উইজার্ডিং পাবলিকেশন আছে যারা সব সময়েই আগ্রহী হগওয়ারটস বা জাদুমন্ত্রক অথবা জেমসের ড্যাডের ছোট খাটো কেচ্ছাকাহিনীতে।
জেমস চললো কমন রুমের দিকে। আশা টেড বা কোন গ্রেমলিন সদস্যর দেখা পাওয়া যাবে। মনে পড়লো প্রফেঃ লঙবটমকে এখনো পারিবারিক শুভেচ্ছাটা জানানো হয়নি। আজ ওটা ব্রেকফাস্টের সময় সেরে ফেলতে হবে। আর সেই সুযোগেই জেনে নিতে হবে এই নতুন ভূত আর ক্যামেরাম্যানের ব্যাপারটা কি।
যদিও গ্রেট হলে ও নেভিলের দেখা কোথাও পেল না। স্কুলের পোষাকে সজ্জিত ছাত্রছাত্রীর ভিড়ে টেবিলগুলো ভর্তি।
মুখে ফ্রেঞ্চ টোস্টটা ঢুকিয়ে র্যালফ বললো, ‘তুই একটা লোককে দেখলি যে মাঠে ছবি তুলছিলো? বুঝতে পারছি না এতে এতো চিন্তার কি আছে?’
‘আমার বাবা ওই ভুতের ব্যাপারটাই বেশী ইন্টারেস্টিং লাগছে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে ও কি করে মারা গেছে। ভুতেরা কি কেবলমাত্র তখনই ভুত হয় যখন ওরা বিচ্ছিরীভাবে মারা যায়?’, জ্যান বললো বেশ উৎসাহের সুরে।
জেমস কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, ‘আমার জানা নেই। কোনও একটা সিনিয়রকে জিজ্ঞেস করেনে। মনে হয় নিককে জিজ্ঞেস করলেই তুই সবচেয়ে ভালো জানতে পারবি।’
‘প্রায় মাথাকাটা নিক?’ সাব্রিনা জানতে চাইলো , ওই টেবিলেই একটু দূরে বসে আছে ।
‘হ্যাঁ সে কোথায়? আমাদের একটা প্রশ্ন আছে ওর কাছে?’
‘চলে গেছে,’ সাব্রিনা বললো মাথা দুলিয়ে যাতে ওর মাথায় লাগানো পালকটা নড়ে। ‘ ও তো বিদায় নিয়েছে আমার প্রথম বছরেই। ওর হেডলেস হান্ট এর অভিযান এক সময় শেষ হয়ে যায়। আমরা ওর জন্যে একটা পার্টি দিয়েছিলাম সেই উপলক্ষ্যে। ও আর ফিরে আসেনি তারপর। সম্ভবত ওর যা দরকার তা ও পেয়ে গেছে। একদিয়ে খুব ভালো হয়েছে। তবুও।’
‘হেডলেস! কবন্ধ…’ র্যালফ এর গলায় প্রশ্নের ছায়া । তবুও কারো কাছে কিছু জানতে চাইলো না।
‘ও আর ফিরে আসেনি তারপর?’ জেমস বললো পুনরায়। ‘কিন্তু ও তো গ্রিফিন্ডোরের হাউস ঘোস্ট ছিল! তাহলে এখন আমাদের হাঊস ঘোস্ট কে?’
সাব্রিনা আবার মাথা দোলালো। ‘ এই মুহূর্তে কেউ নেই। কেউ কেউ আশায় ছিল ডাম্বেলডোর জায়গাটা নেবেন। কিন্তু সেটা মোটেই হয়নি।’
‘কিন্তু…,’ জেমস কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল। কি বলবে ঠিক করতে পারলো না। প্রত্যেকটা হাউসেরই নিজস্ব ঘোস্ট আছে। ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো মাঠে দেখা অল্পবয়সী প্রেতাত্মাটির ছবি।
‘চিঠি এসেছে!’ জ্যান বললো। সবাই ওপরের দিকে তাকালো কারন ঊঁচু জানলাগুলো দিয়ে ঢুকতে শুরু করেছে প্যাঁচার দল। সহসাই ঘরটি ভরে গেল পাখা ঝাপ্টানো, চিঠি আর প্যাকেট পড়ার শব্দে। জেমসের চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছিল সকালে পিভসের অদ্ভুত কাজটার কথা মনে পড়ে যেতেই। ও কিছু বলার আগেই প্রথম সজোরে “ফটাস” আওয়াজটা কানে এলো। সাথে সাথেই একটা মেয়ে চিৎকার করে উঠলো রাগ ও অবাক হয়ে যাওয়া মেশানো স্বরে। মেয়েটি ঊঠে দাঁড়াতেই দেখা গেল ওর পোশাকে হলুদ হলুদ ছোপ।
‘আমার ডিমটা হঠাৎই ফেটে গেল!’ মেয়েটি বললো।
আর অনেক “ফটাস” শব্দ শোনা যেতে থাকলো যেই প্যাঁচাগুলো কড়িবরগার কাছে ঊড়ে গেল। র্যালফ আর জ্যান কি ঘটছে বোঝার চেষ্টা করছিল এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে।
‘চল, চল এখান থেকে পালাতে হবে!’ কোন রকমে হাসি সামলে জেমস বললো। বলতে না বলতে একটা পেরুভিয়ান ব্যালাস্টিক বীন এসে পড়লো কাছের একটা অর্ধেক শেষ করা কফির কাপে। আরো একটা “ফটাস” প্রায় ছোটখাটো একটা আগ্নেওগিরির বিস্ফোরণের মতই কফিটা ছিটকে গেল চারিদিকে। জেমস , জ্যান আর র্যালফ দিলো দৌড় ওই বিশৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে। আর এরই মধ্যে পীভসকে দেখা গেল খিলখিলিয়ে হাসতে আর গান করতে করতে গ্রেট হলের এদিকে ওদিকে ভেসে বেড়াতে।
টেকনোম্যান্সির ক্লাসটা হয় গ্রেট হলের ওপরের তলার একটা ছোট ঘরে। একটাই জানলা টিচারের বসার জায়গার ঠিক পেছনে। সেখান থেকে সকাল বেলার সূর্যের আলো ঢুকছে। সামনে বসে থাকা প্রফেঃ জ্যাক্সনের মাথার পেছনে তারফলে একটা সোনালী আলোকবৃত্ত যেন প্রতীয়মান। জ্যান আর জেমস যখন ওখানে উপস্থিত হল উনি পারচমেন্টে কলম দিয়ে কিছু একটা লিখে চলেছেন। ঘরটির মধ্যে দমবন্ধ করা এক নীরবতা বর্তমান। অতি সন্তর্পণে সেটা বজায় রেখে ওরা নিজেদের জায়গা খুঁজে নিল। একসময় সব সিট ভর্তি হয়ে গেল , তখনও কেবলমাত্র প্রফেসরের কলম ঘষার শব্দই শোনা যাচ্ছিল কেউ সাহস দেখিয়ে কিছু বলার চেষ্টাও করছিল না। একসময় প্রফেসর নিজেই ডেস্কে রাখা ঘড়ির দিকে তাকালেন এবং উঠে দাঁড়ালেন। পরনের ছাইরঙা টিউনিকটাকে একটু টেনে সমান করলেন।
‘ওয়েলকাম স্টুডেন্টস । আমার নাম আশা করি তোমরা জানোই, থিওডোর জ্যাক্সন। আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবছর তোমাদের টেকনোম্যান্সির ক্লাস নেওয়ার জন্য। আমি প্রচুর প্রচুর বই পড়াতে বিশ্বাস রাখি এবং অবশ্যই শেখাতেও। তোমাদেরকেও এই দুটো কাজ আমার ক্লাসে প্রচুর পরিমাণে করতে হবে।’ জেমসের ভাবনার তুলনায় মানুষটির কণ্ঠ অনেক বেশী শান্ত এবং মাপা মাত্রার। মাথার ধূসর ছাই রঙএর চুল পরিপাটি করে মিলিটারি ঢঙ্গে আঁচড়ানো। কপালের ওপর ঘন বড় বড় লোম ওলা ভুরু দুটো একেবারে সোজা স্কেলের মতই।
জ্যাক্সন ঘরটির মধ্যে পাইচারি করতে করতে বলা শুরু করলেন, ‘এটা বলা হয়ে থাকে যে, বোকা বোকা প্রশ্নের মত কোন জিনিষ হতেই পারেনা। আশা করি একথাটা তোমরাও মাথায় রাখবে। প্রশ্নকে সাধারনত ভাবা হয়ে থাকে কৌতূহলী মনের সঙ্কেত হিসাবে। ’ কথা থামিয়ে সকলের দিকে একবার দেখে নিলেন। ‘ আবার অন্য দিক থেকে এটাও বলা যায় যে প্রশ্ন চিনিয়ে দেয় সেই ছাত্র বা ছাত্রীকে যে মন দিয়ে ক্লাস করে না।’
জ্যান জেমসকে কনুই দিয়ে খোঁচা মারতেই জেমস ওর দিকে তাকালো, একই সাথে তাকালো জ্যানের সামনে রাখা পারচমেন্টটার দিকে। ওটাতে খুব অল্প দাগ টেনে জ্যান এঁকে ফেলেছে একেবারে হুবহু প্রফেঃ জ্যাক্সনের একটা কার্টুন। জেমস খুব কষ্ট করেই হাসিটাকে আটকালো।
জ্যাক্সন বলে চলেছেন, ‘ ক্লাসে মনোযোগ দাও। নোট কর যত বেশি সম্ভব। পড়ানোর সাথে সম্পর্ক যুক্ত টেক্সট পড়ো। যদি এগুলো করো তাহলে দেখবে প্রশ্ন করার কোন দরকার ই হচ্ছে না। তবে মনে রেখো, আমি মোটেই প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ করছি না। আমি শুধু বলে রাখছি আমি চাইনা আমার পড়ানো হয়ে যাওয়া কোন কিছুর রিপিটেশন করতে। যদি সেটা করতে হয় তাহলে…’ আবার থামলেন, সবার মুখ গুলো একবার দেখে নিলেন, ‘… আমি এই কথাগুলোই আবার “মনে” করিয়ে দেব আর যদি প্রশ্ন না আসে একই বিষয়ে তাহলে তোমরা পাবে আমার প্রশংশা।’
সম্পূর্ণ ঘরটা চক্কর মেরে উনি এবার গেলেন জানলার পাশে রাখা চক বোর্ডের কাছে। বার করে আনলেন নিজের জাদু দন্ড এবং ছোঁয়ালেন বোর্ডের গায়ে। নিটোল অক্ষরে লেখা ফুটে উঠলো, “ কেউ কি আমায় বলতে পারবে স্টাডি অফ টেকনোম্যান্সি আসলে কি?” বেশ কিছুক্ষন ক্লাসটি নিস্তব্ধ হয়ে রইলো। তারপর একটি মেয়ে হাত ওঠালো।
জ্যাক্সন মেয়েটির দিকে ফিরলেন, ‘ বলো মিস, ইয়ে… ফরগিভ মি, আমি খুব শীঘ্রই তোমাদের নামগুলো মনে রাখতে পারবো… মিস গ্যালোজ , ঠিক বললাম?’
সম্ভবত গতকাল বলা প্রফেঃ ফ্রাঙ্কলিন এর উপদেশ মাথায় রেখেই মেয়েটি বললো, “ হ্যাঁ স্যার! টেকনোম্যান্সি , আমি মনে করি, ম্যাজিক অফ সায়েন্সের স্টাডি করা।’
‘ মিস গ্যালোজ, তুমি র্যাভেনক্ল হাউসের জন্য পাঁচ পয়েন্ট অর্জন করলে।’ মেয়েটি মাথা ঝোঁকালো। জাক্সন বললেন, ‘যদিও আমি ‘মনে করি বা বিশ্বাস করি’ ধরনের কথা বলা আমার ক্লাসে পছন্দ করি না। বিশ্বাস আর জ্ঞান এর মধ্যে কমন ফ্যাক্টর ,যদি কিছু থাকে তাহলে তা খুবই নগণ্য। এই ক্লাসে আমরা নিজেদের ভাবনা যাচাই করবো জ্ঞানে। বিজ্ঞানে। তথ্য দ্বারা। আর যদি কেউ বিশ্বাসের ভিত্তিতে ক্লাস করতে চাও চলে যেতে পারো তাহলে মাদাম ডেলাক্রয় এর ক্লাসে যা আর এক ঘণ্টা বাদেই শুরু হবে নিচে হল ঘরে।’ এই প্রথম ওই পাথুরে মুখটাতে যেন একটু মজার ছোঁয়া দেখতে পাওয়া গেল। কিছু শিক্ষার্থী সাহস করে হেসেও ফেললো। জ্যাক্সন ঘুরে আবার জাদুদন্ড নাড়ালেন বোর্ড লক্ষ্য করে।
‘ম্যাজিকের মধ্যে থাকা বিজ্ঞানের অনুসন্ধান। হ্যাঁ একদম ঠিক। খুব সাধারন এবং একটা ভ্রান্ত ধারনা প্রচলিত আছে যে ম্যাজিক হলো অপার্থিব বা রহস্যময় একটা ব্যাপার। যারা সেটা বিশ্বাস করে- আমি এখানে ইচ্ছে করেই বিশ্বাস কথাটা ব্যবহার করলাম- যারা বিশ্বাস করে ম্যাজিক আসলে অজ্ঞেয় শক্তি তারা নিয়তি, ভাগ্য এবং আমেরিকান কুইডিচ টিমকেও বিশ্বাস করে। সোজা কথায়, যেখানে হেরে যাওয়ার পেছনের সত্যি এবং বাস্তবগ্রাহ্য দিকগুলোকে যারা স্বীকার করে না তাকে সমর্থন করার কোন মানে নেই।’ এবার ঘরে আর বেশি হাসির আওয়াজ শোনা গেল। অবশ্য প্রফেঃ জ্যাক্সনের চোখ বাঁচিয়ে।
‘ম্যাজিক,’ উনি বলতে শুরু করলেন, সাথে সাথেই চক বোর্ডে কথা গুলো লেখা হয়ে যাচ্ছে, ‘ কখনই, আমি রিপিট করে বলছি, কখনই বিজ্ঞানের কোন স্বাভাবিক নিয়মকে ভাঙ্গে না। কেবলমাত্র ওই নিয়মগুলোকে ব্যবহার করে বিশেষভাবে এবং সৃজনশক্তির দ্বারা। মিঃ ওয়াকার।’
জ্যান চমকে উঠলো। মুখ তুলে তাকালো । সবাই যখন মন দিয়ে বক্তব্য শুনছিল, ও মগ্ন ছিল ছবিটাকে আরো ভালো করার চেষ্টায়। প্রফেঃ জ্যাক্সনের মুখ কিন্তু জ্যানের দিকে নেই, উনি এখনো বোর্ডের দিকেই ঘুরে আছেন।
‘ আমার একজন সহকারী দরকার। আমি কি তোমার পারচমেন্টটা ধার নিতে পারি?’ এটা মোটেই রিকোয়েস্ট ছিল না। বলা শেষ করেই উনি জাদুদন্ডটা ঝাঁকালেন আর জ্যানের পারচমেন্টটা উড়ে গিয়ে ভেসে যেতে থাকলো ওনার দিকে। উনি ধরলেন ওটাকে হাত দিয়ে। আস্তে আস্তে করে ঘুরলেন, উঁচু করে ধরে আছেন পারচমেন্টটা, তাকাচ্ছেন না ওটার দিকে। সব শিক্ষার্থীরা তাকিয়ে আছে আঁকাটার দিকে। জ্যান ক্রমশ কুঁকড়ে গিয়ে চেষ্টা করছিল যদি কোনভাবে ডেস্কের তলায় লুকাতে পারে।
‘এটা কি অবশ্যই একটা ম্যাজিক নয় যদি একটি উইজার্ডের আঁকা জ্যান্ত হয়ে যায়?’ জ্যাক্সন জানতে চাইলেন। বলার সাথে সাথেই পারচমেন্ট এর আঁকাটা নড়তে শুরু করলো। কার্টুন চরিত্রটির শীতল চোখটি বদলে গেল রাগের অভিব্যক্তিতে। পারিপার্শ্বিক কিছু রদবদল ঘটলো। একটা ডেস্ক এসে গেল কার্টুন চরিত্রটির সামনে। খুদে কার্টুন রুপী জ্যানকেও দেখা গেল ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে। ছবির জ্যাক্সন একটা বিরাট মাপের ক্লিপবোর্ড বার করলেন যার ওপর লেখা ও ডাব্লিউ এল। ওর ওপর দিতে থাকলেন লাল লাল দাগ। কার্টুন জ্যান হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষমা চাইতে লাগলো। কিন্তু কার্টুন জ্যাক্সন মাথা নেড়েই চললেন। ছবির জ্যান এর মুখে হতাশার ছাপ, মাথার চারপাশ দিয়ে ছিটকে বেড়াতে থাকলো কান্নার জল।
এতক্ষনে আসল জ্যাক্সন মাথা ঘুরিয়ে তাকালেন পারমেন্টটার দিকে, আর পুরো ক্লাস ভেঙে পড়লো অট্টহাসিতে। উনিও হাসলেন, একটা সত্যিকারের হাসি। ‘ দুর্ভাগ্যবশতঃ মিঃ ওয়াকার , তোমার জন্য মিস গ্যালোজের অর্জন করা পাঁচটি পয়েন্ট মাইনাস হয়ে গেল র্যাভেনক্ল এর হাউস থেকে। দুঃখ করে লাভ নেই। কি আর করা যাবে এটাই জীবন।’
দ্রুত হেঁটে এসে আঁকাটা যত্ন করে রেখে দিলেন জ্যান এর ডেস্কে এবং ফিরে গেলেন। ‘না, ম্যাজিক এই কথাটায় কোন জাদু নেই। বাস্তবে একজন প্রকৃত উইজার্ড শিখবে কাগজের ওপর নিজের ব্যক্তিত্বের ছাপ ফেলতে কোন কাজের দ্বারা, কলমের দ্বারা নয়। কিছুই অপ্রাকৃত ভাবে ঘটে না। কেবলমাত্র একটা আলাদা রকম মাত্রার অভিব্যক্তি নিজের জায়গা করে নেয়। ম্যাজিক স্বাভাবিক নিয়মকে নিজের মত করে ব্যবহার করে কিন্তু কখনোই নিয়মকে ভাঙে না। ঘুরিয়ে বললে ম্যাজিক কখনোই অপ্রাকৃত বা আনন্যাচরাল কিছু নয় বরং অতিপ্রাকৃত বা সুপার ন্যাচরাল। যেটা স্বাভাবিকের সীমানার ছাড়িয়ে কিন্তু কখনোই তার বাইরে নয়। আর একটি উদাহরণ রুপে। মিঃ ইয়ে …’
জ্যাক্সন কাছেই বসে থাকা একটি ছেলের দিকে আঙুল তুলে নির্দেশ করলেন, যে নিজের চেয়ারে খাড়া হয়ে বসে তেরছা ভাবে তাকিয়ে উত্তর দিল ,’ মারডক স্যার।’
‘মারডক। তোমার তো এটা অ্যাপারিশন [আবির্ভাব] বিষয়ে কাজ করার বছর, তাই না?
‘ ওহ, হ্যাঁ স্যার,’ মারডক বললো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
‘ অ্যাপারিশন বিষয়ে তিমি আমাদের কিছু বলতে পারবে?’
মারডক একটু হকচকিত দেখালো। ‘ একটা বেশ মৌলিক বাপার, ঠিক কিনা? মানে বলতে চাইছি, কোন একটা জায়গার কথা মনের মধ্যে নিয়ে আসুন, চোখটা বন্ধ করুন, পরিষ্কার করে ভাবুন আপনি যেটা করতে চাইছেন। আর ব্যাস,সেখানে পৌঁছে যাবেন।‘
‘আর ব্যাস? এটাই বললে না তুমি?’ জ্যাক্সন বললেন মুখের একটাও পেশি না নড়িয়ে।
মারডকের মুখ লাল হয়ে গেল। ‘ হ্যাঁ, মানে প্রায় সেই রকমই। আপনি ঝপ করে ওখানে চলে যাবেন। একেবারে এইরকমই ব্যাপারটা।’
‘তার মানে তুমি বলতে চাও এটা চকিতে বা ততক্ষনাৎ ঘটে যায়।’
‘হ্যাঁ। আমার অনুমান আমি সেটাই বলেছি।’
জ্যাক্সন একটা ভুরু ওপর দিকে উঠিয়ে বললেন, ‘ তুমি অনুমান করছো?’
মারডক আর থতমত খেয়ে, কাছে বসে থাকা অন্যদের দিকে তাকালো সাহায্যের আশায়। ‘ইয়ে। না। মানে বলতে চাইছি যে হ্যাঁ। অবশ্যই। তাৎক্ষনিক। ঠিক যেমনটা আপনি বললেন।’
‘যেমনটা তুমি বললে মিঃ মারডক,’ জ্যাক্সন হাল্কাস্বরে বললেন। এবার এগিয়ে গেলেন ঘরটির সামনের দিকে। যেতে যেতেই একটি ছাত্রীর কাঁধে টোকা দিলেন। ‘মিস?’
‘সাব্রিনা হিলডেগার্ড স্যার,’ সাব্রিনা যতটা সম্ভব পরিষ্কার এবং নম্রভাবে বললো।
মিস হিল্ডেগারড, তুমি কি আমাদের জন্য একটা ছোট্ট কাজ করে দেবে? দুটো ১০ সেকেন্ডের টাইমার দরকার। নিয়ে আসতে হবে প্রফেসর স্লাগহর্নের পোশনরুম থেকে। যতদূর মনে পড়ছে এখন থেকে বেরিয়ে বাঁদিকে দ্বিতীয় দরজা। ধন্যবাদ।’
সাব্রিনা দ্রুত নিষ্ক্রান্ত হতেই জ্যাক্সন আবার ক্লাসরুমের দিকে ফিরলেন। ‘ মিঃ মারডক, তোমার কোন ধারনা আছে, ঠিক কি ঘটে, নির্দিষ্ট ভাবে, যখন তুমি অদৃশ্য হয়ে যাও?’
মারডক ঠিক করেই নিয়েছে ও কিছু জানে না এই ভাবটা দেখানোই ওর পক্ষে সঠিক পথে হাঁটা হবে। ও মাথা নেড়ে নেতিবাচক ভাব দেখালো।
জ্যাক্সন মনে হল মেনেও নিলেন সেটা। ‘চলো তাহলে একটা পরীক্ষা করা যাক এ বিষয়ে। কে বলতে পারবে অদৃশ্য হওয়া জিনিষপত্র কোথায় যায়?’
এবার পেট্রা মরগ্যানস্টারন হাত তুললো। ‘স্যার, অদৃশ্য বস্তু কোথাও যায় না, বলা হয়ে থাকে, ওগুলো সব জায়গায় যায়।’
জ্যাক্সন মাথা ঝুঁকিয়ে বল লেন , ‘ মিস, এটা একেবারে টেক্সট বুক এর উত্তর। কিন্তু সারমর্মহীন। বস্তু কক্ষনো এক সময়ে দু জায়গায় থাকতে পারে না। কোথাও যায় না আবার সব জায়গায় যায় এটা হতে পারে না। আমি সময় নষ্ট করতে চাই না এ নিয়ে অযথা কথোপকথন করে। সময় এসেছে মন দিয়ে আমার কথা শোনার।’
ঘরের সবাই রেডি কলম নিয়ে। জ্যাক্সন পাইচারি করতে করতে শুরু করলেন বলা, ‘ বস্তু , যেমনটা তোমরা জানো, পুরোটাই তৈরী হয়েছে আসলে কিছু না দিয়েই। অ্যাটমেরা একত্রিত হয়ে একটা আকৃতি গঠন করে যা আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয় সলিড। এই যে মোমবাতিটা…’, ডেস্কের ওপর রাখা পেতলের মোমবাতি দানের ওপর রাখলেন, ‘… দেখে মনে হচ্ছে একটা দারুন কঠিন বস্তু, কিন্তু, আসলে লক্ষ কোটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনু একত্র হয়ে একে অপরের সংস্পর্শে এসে একে রুপদান করেছে এবং এর ওজন সৃষ্টি হয়েছে। যখন আমরা একে অদৃশ্য করি,’ প্রফেসর জ্যাক্সন জাদুদন্ডটা নাড়ালেন আর খুবই মৃদু একটা পপ শব্দ হয়ে ওটা মিলিয়ে গেল । ‘আমরা কিন্তু মোমবাতিটাকে সরালাম না বা ধ্বংস করলাম না বা এর বস্তুগত কোন পরিবর্তন ঘটালাম না। সেরকম কিছু করলাম কি, কি মনে হয় তোমাদের?’
জ্যাক্সন একের পর এক শিক্ষার্থীর দিকে দেখতে থাকলেন । আর ওরা অপেক্ষা করতে থাকলো কখন প্রফেসর আবার বলা শুরু করেন।
‘না,সেরকম কিছু করিনি। বদলে যেটা করলাম তা হল ওর অ্যাটমগুলোর সংযোজনার স্থানগুলোকে বদল করে দিলাম। আমরা প্রসারিত করে দিলাম ওদের একের সাথে ওপরের পাশাপাশি অবস্থানকে। কয়েক হাজার, বা কয়েক লক্ষ গুন ভাবে। এই প্রসারনের গুণফল মোমবাতিটাকে সমগ্র গ্রহজগতের মাপের সমান করে দেওয়াটাও বিচিত্র কিছু নয়। আর তার ফলে যেটা হবে আমরা ওটার অ্যাটমগুলোর মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলেও ওটার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারবো না। সহজ কথায় মোমবাতিটা এখানেই আছে। ওটা এতটাই বড় মাপে প্রসারিত হয়ে গেছে , এত সুক্ষ হয়ে গেছে যে আমাদের চিরাচরিত বস্তু জগতে ওটা আর অস্তিত্বের সীমানায় নেই। আর সেজন্যই এটা এখন সব জায়গায় থেকেও কোন জায়গায় নেই। ’
সাব্রিনা ফিরে এলো টাইমারগুলো নিয়ে, রাখলো জ্যাক্সনের ডেস্কে। ‘ ধন্যবাদ মিস হিল্ডেগারড। মারডক।’
মারডক আবার চমকে উঠলো। মৃদু কিছু হাসি শোনা গেল এদিক ওদিক থেকে। ‘স্যার?’
‘ অত ভয়ের কিছু নেইরে বাবা। আমি চাই যে তুমি সেটাই করে দেখাও যেটাকে তোমার খুবই সহজ সিম্পল একটা ব্যাপার বলে ধারনা হয়েছে। আমি চাই তুমি আমাদের জন্য অদৃশ্য হয়ে দেখাও।’
মারডককে দেখে বোঝা গেল ও রীতিমত শকড। ‘’অদৃশ্য? কিন্তু … স্কুল চত্বরের মধ্যে কারোর ওটা করা বারন স্যার।’
‘একদম ঠিক। একটা সেকেলে এবং প্রায় প্রতীকী নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু কেউ ভাঙতে চায় না। সৌভাগ্যবশতঃ আমি একটা সাময়িক অনুমতি আদায় করেছি । যার সাহায্যে মিঃ মারডক এখানে অদৃশ্য হওয়ার কাজটা করে দেখাতে পারবে , ঠিক এখান থেকে,’ জ্যাক্সন হেঁটে গেলেন ঘরটার একটা কোনায় , ‘এতদূর পর্যন্ত।’
মারডক উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা চিন্তাহ্নিত স্বরে বললো,’আপনি চাইছেন আমি এই ঘর থেকে ডিসাপারেট করে … এই ঘরেই যাই?’
‘হ্যাঁ, ঠিক তুমি যেখানে আছো ওখান থেকে এইখানে আসবে। এই কোনাটায়, যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তবেই। আমি এটাকে খুব বড় কোন চ্যালেঞ্জ হিসাবে মনে করছি না। শুধু আমি চাই তুমি তোমার সাথে এটাকে রাখো।’ জ্যাক্সন একটা ছোট্ট বালিঘড়ি হাতে তুলে নিলেন যা সাব্রিনা নিয়ে এসেছিল। ‘ অদৃশ্য হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে এটাকে চালু করে দেবে। বুঝতে পেরেছো?’
মারডক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো, ‘নো প্রবলেম স্যার। আমি ওটা চোখ বেঁধেও করে দেখাতে পারবো।’
জ্যাক্সন ওর হাতে একটা বালি ঘড়ি দিলেন এবং বললেন, ‘ আমার মনে হয় না সেটার দরকার আছে।’ ফিরে এলেন ডেস্কের কাছে এবং দ্বিতীয় ঘড়িটা হাতে তুলে নিলেন।
‘মিঃ মারডক, রেডি, আমার তিন গোনার সাথে সাথেই … এক…দুই …তিন!’
দুজনেই নিজের নিজের ঘড়ি উল্টালেন। এক সেকেন্ডের একটা নীরবতা। জোরালো এক “খ্যা অ্যাচ” শব্দ শোনা গেল। মারডক অদৃশ্য হয়ে গেল নিজের জায়গা থেকে। সবাই একসাথে তাকালো ক্লাসঘরের কোনাটার দিকে।
প্রফেঃ জ্যাক্সন ঘড়িটার বালি পতনের দিকে তাকিয়েছিলেন একদৃষ্টে। একটু গুনগুন করে উঠলেন। ডেস্কের ওপর একটু ভার দিলেন নিজের শরীরের। তারপর আস্তে করে ঘুরে তাকালেন ওই একই কোনার দিকে।
আবারো একটা একই রকম শব্দের সাথে সাথেই দৃশ্যমান হল মারডক। বিদ্যুতগতিতে ওর কাছে গিয়ে বালি ঘড়িটা নিয়ে ডেস্কের কাছে ফিরে এসে পাশাপাশি রাখলেন। একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখলেন দুটোকেই। ওনার হাতে থাকা ঘড়িটার বালি প্রায় সমান সমান দুদিকেই। ওদিকে মারডকের ঘড়িটায় ওপরের অংশে বালি প্রায় একই অবস্থায় আছে।
‘আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি মিঃ মারডক তোমার ভাবনা পুরো ভুল।’ জ্যাক্সন বললেন , চোখ এখনো ঘড়ি দুটোর দিকেই। ‘যাও এবাই নিজের সিটে গিয়ে বসো। থ্যাঙ্ক ইউ।’
প্রফেসর এবার ছাত্রছাত্রীদের দিকে তাকালেন। ‘ কমবেশী প্রায় চার সেকেন্ডের পার্থক্য। যা প্রমান দিচ্ছে অ্যাপারিশন মোটেই তাৎক্ষনিক নয়। কিন্তু –একই সাথে এটাও বলতে হচ্ছে , যা বেশ ইন্টারেস্টিং, যিনি অদৃশ্য হচ্ছেন তার কাছে ওটা তাৎক্ষনিক। আর এব্যাপারে টেকনোম্যান্সির ব্যাখ্যা আমাদের কি জানাচ্ছে? এটা একটা জমকদার প্রশ্ন। উত্তরটা এবার বলি শোনো।’
জ্যাক্সন আবার গোটা ঘরে পাইচারি শুরু করলেন, সাথে সাথেই চকবোর্ডে ফুটে উঠতে থাকলো লেখা। সকল শিক্ষার্থী মাথা নামিয়ে লেখায় মগ্ন। ‘ বস্তু অদৃশ্য করার ক্ষেত্রে যে ব্যাখ্যা অ্যাপারিশন এর ক্ষেত্রেও সেই একই কথা। যিনি অদৃশ্য হচ্ছেন তিনি নিজের অ্যাটমগুলোকে এতটাই প্রসারিত করেন যে ওদের বস্তুগত অস্তিত্ব হারিয়ে যায় চোখের সামনে থেকে, চলে যায় মাপের বাইরে, বিস্তারিত হয় সর্বত্র। এই অবস্থায় যাওয়ার পর অ্যাপারেটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের অ্যাটমদের দূরত্ব কমিয়ে আনেন। কিন্তু সেটা ঘটে অন্য এক স্থানের নির্দিষ্টকরনে। আর স্থানটি নির্ধারিত হয় অদৃশ্য হওয়ার আগের মুহূর্তে অ্যাপারেটরের ভাবনার ভিত্তিতে।একজন উইজার্ড দাঁড়িয়ে আছেন লন্ডনে , মনের চোখে দেখছেন এব্বেটস ফিল্ড, অদৃশ্য হলেন—মানে, অর্জন করলেন সর্বত্র স্থানে থাকার ক্ষমতা – আর আবির্ভূত হলেন এক নতুন জায়গায় যার নাম এব্বেটস ফিল্ড। এটা অবশ্য প্রয়োজনীয় একটা বিষয় যে ডিসঅ্যাপারেশন এর আগে ঠিক করে নিতে হবেই যে কোথায় নিজের অ্যাপারিশন ঘটাবো। কেউ কি বলতে পারবে টেকনোম্যান্সিতে এর কি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে?’
কোন সাড়া নেই। গ্যালোজ নামের মেয়েটিই আবার হাত তুললো। ‘ কারন আপারিশন এর এই কার্যকালটা উইজার্ড এর কাছে তাৎক্ষনিক।’
‘হ্যাঁ , মিস গ্যালোজ কিছুটা ঠিক বলেছো তুমি,’ জ্যাক্সন বললেন নরম স্বরে । ‘ কতদুরে যাবো তার ওপর অ্যাপারিশন ঘটার সময় নির্ভর করে। যেমনটা আমরা একটু আগে দেখলাম। সময় কিন্তু মোটেই ফ্লেক্সিবল নয়। উইজার্ডকে নিশ্চিত ভাবে কোথায় যাবো সেটা ভেবে নিতে হবেই অদৃশ্য হওয়ার আগে। কারন যখন একজন উইজার্ড সর্বত্র বিস্তৃত হন তখন তার মন হাইবারনেশনে চলে যায়। ডিসঅ্যাপারেট থেকে অ্যাপারেট হওয়ার ব্যাপারটা তাৎক্ষনিক ভাবে মোটেই ঘটেনা, কিন্তু যেহেতু ওই সময়টায় উইজারডের মন কাজ করা থামিয়ে দেয় তাই ওই সময়টার কোন অনুভুতি সে বুঝত পারে না। মনে করে পুরোটা ঝট করে ঘটে গেল। আর এই কারনেই যে উইজার্ড অদৃশ্য হওয়ার আগে কোন নতুন স্থানে নিজের পুনর্গঠন ঘটাবে ঠিক না করতে পারে …. সে আর কোনদিন এই বস্তজগতে ফিরে আসতে পারে না।’
জ্যাক্সন ভ্রু কুঁচকে দেখতে থাকলেন মুখগুলোকে, তার কথাগুলো ওরা বুঝতে পারলো কিনা সেটার কিছু একটা চিহ্নের আশায়। বেশ কিছুটা সময় পরে একটা হাত উঠলো। মারডকের। ওর মুখটা ফ্যাকাশে মেরে গেছে প্রফেসরের মৌলিক তথ্যগত বক্তব্যটা অনুধাবন করতে গিয়ে। জ্যাক্সনের ভুরুদুটো নেচে উঠলো।
‘ইয়েস, মিঃ মারডক?’
‘একটা প্রশ্ন। মাফ করবেন। যদি বলেন –’ গলাটা একবার ঝেড়ে নিলো। শুকনো ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিল জিভ দিয়ে । ‘ওই এব্বেটস ফিল্ডটা কোথায়?’
লাঞ্চ করার পর , জেমস , জ্যান আর র্যালফ একত্র হলো। তিন জনেরই আপাতত ক্লাসের বিরতি। অনেকটাই সময় পরের ক্লাসে যাওয়ার জন্য বাকি কিন্তু কমনরুমে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার মত পর্যাপ্ত নয়। ওরা দিকভ্রান্তের মত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল। চেষ্টা করছিল সিনিয়র শিক্ষার্থীদের পথে বাধা সৃষ্টি না করার। সাথেই চলছিল আলোচনা জ্যাক্সনের ক্লাস নিয়ে।
‘ আমি বলে রাখছি, ওই বুড়ো স্টোনওয়াল প্যাসেজ অফ টাইম নিয়ে কিছু একটা ম্যাজিক্যাল গড়বড় করে!’ জ্যান বললো র্যালফকে প্রত্যয়ের সাথে। ‘ আমি দিব্যি কেটে বলতে পারি, আমি দেখলাম ঘড়িটার বালি ওপর দিকে উঠে যাচ্ছিলো।’
‘আমার কিন্তু প্রফেসর ফ্লিটউইককে দারুন লাগলো। তোরাও তো দেখেছিস ওকে,’ র্যালফ কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবেই কথা ঘুরালো।
জ্যান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললো, ‘জ্যাক্সনের মাথার পেছনে বা অন্য কোন জায়গায় চোখ আছে নিশ্চিত। কে ভেবেছিল জাদুবিদ্যার স্কুলে এরকম সব ব্যাপার থাকবে?’
জেমস র্যালফকে জিজ্ঞেস করলো, ‘প্রফেসর ফ্লিটউইক প্রাথমিক স্তরের মন্ত্র আর জাদুদন্ডের ব্যবহার শেখাচ্ছেন, তাই না?’
‘হ্যাঁ। দারুন ব্যাপার কিন্তু। মানে বলতে চাইছি যে ম্যাজিকের ব্যাপারে পড়া এক জিনিষ, আর সেটা হতে দেখাটা একেবারে অন্য অভিজ্ঞতা। উনি নিজের চেয়ার, বই সব কিছু হাওয়ায় ঊড়িয়ে দেখালেন!’
‘বই ওড়ালেন?’ জ্যান প্রশ্ন করলো।
‘ হ্যাঁ , দেখেছিস বোধহয় উনি বেশ কয়েকটা বই চেয়ারে পেতে বসেন যাতে ডেস্ক পেরিয়ে আমাদের দেখতে পান? সব মিলিয়ে ১০০ পাউন্ড তো বটেই ওগুলোর ওজন। কেবলমাত্র নিজের জাদুদন্ডটা ব্যবহার করে উনি চেয়ার সমেত বইগুলোকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখলেন।’
‘তা তুই কি করলি ওই ক্লাসে?’ জ্যান আবার প্রশ্ন করলো। জেমসের হাসি পাচ্ছিলো র্যালফের অদ্ভুতদর্শন জাদুদন্ডটার কথা ভেবে।
‘ খারাপ কিছু ঘটেনি।‘ র্যালফ শান্ত ভাবে বললো। জ্যান আর জেমস ওর দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকলো।
‘সত্যি বলছি, গণ্ডগোল কিছু হয়নি।’ র্যালফ বললো, ‘আমরা চেয়ার বা ওই ধরনের ভারি কিছু ওড়ানোর চেষ্টা করিনি। আমাদের উনি পালক দিয়েছিলেন। ফ্লিটউইক এটাও বললেন যে উনি মোটেই কিছু আশা করছেন না আমাদের কাছে প্রথম দিনের ক্লাসে। কিন্তু অন্যরা না পারলেও আমি পেরেছি।’ র্যালফকে বেশ ভাবুক দেখালো। ‘ হয়তো একটু বেশীই ভালো পেরেছি। প্রফেসর ফ্লিটঊইক যথেষ্টই খুশী হয়েছেন। উনি বলেছেন আমার সহজাত ক্ষমতা আছে।’
জ্যান চরম বিস্ময়ের সাথে বললো, ‘ তুই ওই স্নোম্যান হুইস্কার কাঠের গুড়িটা দিয়ে একটা পালককে শূন্যে ভাসাতে পারলি!’
র্যালফকে কিছুটা বিরক্ত মনে হল। ‘ ইয়েস। ফর ইয়োর ইনফরমেশন, প্রফেসর ফ্লিটউইক বলেছেন যে জাদুদন্ড নিছকই একটা বস্তু। আসল ম্যাজিক তো করে উইজার্ডরা। হয়তো আমি সত্যিই ট্যালেন্টেড। এটা কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে মিঃ জাদুদন্ড বিষয়ে সবজান্তা মহাশয়।’
‘ সরি, ’ জ্যান আমতা আমতা করে বললো, ‘ তুই আবার আমার দিকে ওই স্নোম্যান কাঠের ডান্ডাটা তাক করিস না । আমি আমার হাত ও পা অক্ষত রাখতে চাই।’
‘ আরে ওসব কথা বাদ দে,’ জেমস ওদের শান্ত করার চেষ্টায় বললো। ‘ ফ্লিটউইক ঠিকই বলেছেন। কোথা থেকে তোর জাদুদন্ডটা এসেছে সেটা কেউ দেখবে না? তুইতো তোকে দেওয়া পালকটাকে ঊড়াতে পেরেছিস তাই না?’
র্যালফ একটু গর্বের হাসি হাসলো। ‘ একেবারে সিলিং এ উঠিয়ে দিয়েছিলাম। ওটা এখনো সেখানেই ভাসছে! আমি ওটাকে একটা বরগাতে আটকে দিয়েছি।’
‘দারুন,’ জেমস সামান্য ঝুঁকে ওকে উৎসাহিত করলো।
সবুজ টাই পড়া একটি সিনিয়র ছাত্র হঠাৎই ধাক্কা মেরে জেমসকে রাস্তা থেকে সরিয়ে পাশের ঘাসজমিতে নামতে বাধ্য করলো। ছাত্রটি র্যালফকেও ধাক্কা দিল, কিন্তু র্যালফ আকারে প্রকারে ওই ছেলেটার মতই, বরং একটু বেশ মোটা। ছেলেটাই ছিটকে গেল, র্যালফ থেকে গেল একইজায়গায়।
র্যালফ, ‘সরি,’ বলাতে ছেলেটি থেমে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকালো।
‘ রাস্তা দিয়ে তাকিয়ে হাঁটতে হয় বুঝলে প্রথম বছরের দল,’ ছেলেটি জেমসদের এক এক করে দেখে নিয়ে বললো। ‘ আর এই যে ডিডল , কখন কার সাথে মেলামেশা করবে সে ব্যাপারে আর একটু সতর্ক হও।’
‘এই হল স্লিদারিনদের তেজ। যার কথা তুই আমাকে বলেছিলি ট্রেনে,’ জ্যান বললো। ‘ “আশা করছি আমরা সবাই বন্ধুর মত থাকবো” এর পক্ষে একটু বাড়াবাড়ি।’
‘ওর নাম ট্রেন্ট,’ ছেলেটার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে বললো র্যালফ। ‘ওই আমাকে বলেছিল আমার গেমডেকটা একটা অপমান আমার উইজার্ড হওয়ার পক্ষে। আসলে ওটা ওকে আমি বেশী সময়ের জন্য ব্যবহার করতে দিইনি তাই।’
জেমস পুরো কথাটা মন দিয়ে শোনেনি। ওর নজর ছিল ছেলেটার সাথে থাকা একটা জিনিষের ওপর। ‘ ওর ব্যাজটায় কি লেখা ছিল?’
র্যালফ বললো, ‘ওরা ওটা ইদানীং পড়া শুরু করেছে। আজ সকালেই টাবিথা করসিকা ওগুলো ওদের দিয়েছে কমনরুমে। এই যে।’ র্যালফ নিজের ড্রেসের পকেট থেকে একটা ব্যাজ বার করলো। ‘ আমি নিজেরটা পড়তে ভুলেই গেছিলাম।’
জেমস ব্যাজটার দিকে তাকালো। কালছে নীল এর ওপর সাদা দিয়ে লেখা “প্রোগ্রেসিভ উইজার্ডিং এগেইন্সট ফলস হিষ্ট্রি”। একটা লাল রঙের কাটা চিহ্ন বার বার ফলস হিস্ট্রী কথাটার ওপর ফুটে উঠছে আর মিলিয়ে যাচ্ছে।
‘ সবগুলোতেই এক কথা লেখা নেই,’ র্যালফ জানালো, নিজের ব্যাজটা ফিরিয়ে নিয়ে। ‘ কিছুর ওপর লেখা আছে “ কোশ্চেন দ্য ভিক্টর”। অনেক গুলোর ওপর অনেক বড় বড় কথা লেখা আছে যা আমার মাথায় ঢুকলো না। আচ্ছা অরোর কি?’
জ্যান বলে উঠলো, ‘ আমার ড্যাড একবার ডাক পেয়েছিল “অরোর ডিঊটি” করার জন্য। কিন্তু উনি যেতে পারেন নি কারন সে সময় ওনার নিউজীল্যান্ডে শুটিং ছিল। উনি বলেছিলেন “যদি অরোরদের বেশী পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, তাহলে আমরা সঠিক রায় পেতে পারি”।’
র্যালফ বোকার মতো তাকিয়ে থাকলো জ্যানের দিকে। জেমস একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে বললো, ‘ অরোর হল সেইসব উইচ এবং উইজার্ড যারা অন্ধকারের উপাসক উইচ আর উইজার্ডদের পাকড়াও করেন। বলা যেতে পারে ওরা উইজার্ডিং এর পুলিসের মত। আমি যতটা বুঝি তাতে আমার ড্যাড একজন অরোর।’
‘হেড অফ দ্য অরোর, বলতে চাইছো তো,’ পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া দল থেকে কেও একজন বললো। টাবিথা করসিকা দলটির সামনে, ঘুরে জেমসের দিকে তাকালো। ‘ দুঃখিত আলোচনার মাঝে ঢুকে পড়ার জন্য।’ দলটার সকলে জেমসের দিকে তাকিয়ে ছিল। সবার মুখেই এক দুর্বোধ্য হাসি। সকলেই পড়ে আছে নীল রঙের ব্যাজ
‘হ্যাঁ, উনি তাই!’ জেমস সহসাই চিৎকার করে বললো।
‘তোর ড্যাড চীফ অফ দ্য উইজার্ড কপস?’ জ্যান স্লিদারিনদের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে প্রশ্নটা করলো। জেমস হেসে মাথা ঝুকালো। ও অন্য ব্যাজগুলো পড়তে পেরেছে। ওখানে লেখা ছিল, “সে নো টু অরোর ফিয়ার মঙ্গারিং; সে ইয়েস টু ফ্রিডম অফ ম্যাজিক্যাল এক্সপ্রেশন”। জেমস ঠিকঠাক জানে না ওগুলো কি বলতে চাইছে, কিন্তু একটা বাজে ধরনের অনুভুতি ওর ভেতরে গুমরে উঠতে চাইছিল।
জ্যান হঠাৎই র্যালফকে কনুই দিয়ে খোঁচা মারলো। ‘ তুই তাড়াতাড়ি ওই ব্যাজটা পড়েনে, তা না হলে তোর হাউসের বাকি সদস্যরা ভাবতে পারে তুই ফলস হিষ্ট্রি বা অরোর ইম্পেরিয়ালিস্ট বা ওই ছাতার মাথা বিষয়ে সমর্থন কারী।’
জেমসের মনে পড়ে গেল কয়েক মিনিট আগে র্যালফের বলা কথাগুলো । ‘ র্যালফ, তোর রুমমেট তোর কাছ থেকে গেমডেকটা চেয়ে নিয়েছিল বলছিলিনা?’
র্যালফ বললো, ‘ ওই যে চেয়েছিল তা নাও হতে পারে। তবে ওদের মধ্যেই কেউ একজন। খুব বেশী কেউ তো ওটার কথা জানে না। অবশ্য আমার অনুপস্থিতিতে ওটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানিনা। শুধু এটা বলতে পারি তোদের দেখানোর পর ওটা আমার ব্যাগ থেকে কেউ ঝেড়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে আমার হাউসমেটরা নকল ম্যাজিক থেকে ঘরটাকে পরিষ্কার রাখার সঙ্কল্প করেছে।’ একরাশ হতাশা ওর কণ্ঠে।
জেমসের কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল । ওই অদ্ভুত ব্যাজ আর স্লিদারিনদের হাসির মুখোস চড়ানো মুখগুলোকে ও ঠিক মেলাতে পারছিল না। এখন এটা জেনেও অবাক লাগছে যে মাগলদের গেম ডিভাইস ওদের মধ্যেই কেউ চুরি করেছে। কিন্তু কেন?
ওরা হেঁটে যাচ্ছিল হগওয়ারটসের ট্রফিগুলো যেখানে সাজানো ছিল সেখান দিয়ে। জ্যানের চোখে পড়লো বিভিন্ন বিষয়ে যোগদান করার কাগজগুলো। বললো, ‘ চল কিছু এক্সট্রা ক্যারিকুলার করা যাক।’ ও ঝুঁকে একটা বিশেষ বিজ্ঞাপন পড়তে শুরু করলো। ‘ সঙ্কেত পড়ো! নিজের এবং বন্ধুদের ভাগ্য অনুমান করো! গ্রহ নক্ষত্রের ভাষা পড়তে শেখো। ইত্যাদি ইত্যাদি … কন্সটেলেশন ক্লাব। মঙ্গলবার ওয়েস্ট টাওয়ারে এগারোটার সময় মিলিত হও। দেরী করে ফেরার জন্য একটা দারুন বাহানা। আমি যাবো।’ সেলফের সাথে সুতো দিয়ে বাঁধা কলমটা নিয়ে কালিতে চুবিয়ে নিজের নামটা লিখে দিল ওটাতে।
জেমস আর র্যালফ ও নজর দিল ওদিকে। র্যালফ পড়তে শুরু করলো প্রায় চিৎকার করে। ‘ডিবেট টিমস, উইজার্ড চেজ ক্লাব, হাউস কুইডিচ টিমস ।’
‘কি? কোথায়?’, জ্যান জানতে চাইলো , কলমটা ধরে আছে চাকুর মত করে যেন কাওকে আঘাত করবে। র্যাভেনক্ল এর কুইডিচ টিমের বাছাই পর্বর কাগজটা খূঁজে নিয়ে ওটাতেও সই করে দিল। ‘ আমি একটা ওই উড়ন্ত ঝাড়ু পেতে চাই । জেমস,আমার চান্স আছে… ওখানে ?’
জেমস জ্যানের কাছ থেকে কলমটা নিয়ে উত্তেজিত ভাবে মাথা নেড়ে বললো, ‘ সব কিছুই সম্ভব। আমার ড্যাড প্রথম বছরেই গ্রিফিন্ডোরের “সিকার” হয়েছিলেন। সবচেয়ে অল্প বয়সী ইতিহাস অনুসারে। ওনাকে দলে নেওয়ার জন্য নিয়মেও ফেরবদল করা হয়েছিল। আগের নিয়ম অনুসারে প্রথম বছরের শিক্ষার্থীরা ওথ সুযোগ পেতো না। এখন আর সেই নিয়মটা নেই। কিন্তু চান্স পাওয়াটা বেশ কঠিন এটা মানতে হবে।’ জেমস গ্রিফিন্ডোর টিমের কাগজে নিজের নামটা লিখে দিল। বাছাই হবে কালকে সব ক্লাস হয়ে যাওয়ার পর।
‘র্যালফ, নে তোর নামটা লিখে দে স্লিদারিন এর কাগজটায়? কাম অন! তোর সব বন্ধুরাই করেছে।‘ জ্যান বললো কিছুটা ব্যঙ্গের ছলে।
‘নাহ, আমি কোনদিনই খেলাধুলায় কিছু একটা করতে পারি না।’
‘তোকে কিছু করতেই হবে না। তুই তো একটা দেওয়ালের মত। শুধু গোলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাবি। বিপক্ষের খেলোয়াড়রা ফাঁকই খুঁজে পাবে না।’ জ্যান র্যালফের ঘাড়ে হাত রেখে কথাগুলো বললো, যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথেই। ‘ শুধু একটা বিরাট উড়ুক্কু ঝাড়ূ যোগাড় করতে হবে তোর মত ধুমসোর জন্য!’
‘শাট আপ!’ জ্যানের হাতটা কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে , হাসি মুখেই বললো র্যালফ। যদিও ওর কান মুখ বেশ লাল হয়ে গিয়েছিল। ‘আমি ভাবছি ডিবেট টিমে নাম দেবো। টাবিথা মনে করে আমার দ্বারা ওটা ভালো হবে।’
জেমস চোখ পিটপিট করে বললো, ‘টাবিথা করসিকা তাকে ডিবেট টিমে চেয়েছে?’
জ্যান বললো, ‘ দেখে মনে হচ্ছে ডিবেটের টিম হাউস অনুসারে হয় না। এ এবং বি নামের দুটো টিমে এটা বানানো হয় , যেখানে যে কোন হাউসের মেম্বার থাকতে পারে। আল্মা আলেরন থেকে আসা কয়েক জনের নামও দেখছি এখানে লেখা হয়েছে।’
‘ র্যালফ সইটা করতে দেরী করছিস কেন?’ জেমস বললো। র্যালফও সেটাই চাইছিল।
‘ জানি না কেন। তবে আমি করবো।’
জ্যান বললো, ‘আরে এখানে তো টিম এ তে পেট্রার নাম দেখছি।’ জ্যান ওখানেও সই করে দিল।
জেমস ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘পেট্রা মরগানস্টারন দলটায় আছে বলে তুই ওখানে নাম লিখছিস?’
‘আর কোনও ভালো কারন দেখাতে পারবি?’
জেমস হাসতে হাসতে বললো, ‘ পেট্রার সাথে টেড এর একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে বলেই আমার মনে হয়।’
জ্যান কলমটাকে ওটার নিজের জায়গায় ঠিক করে আটকে রাখতে রাখতে উত্তর দিল, ‘আমার ড্যাড বলেন সব কটা আইসক্রিম না খাওয়া পর্যন্ত মেয়েরা বলতে পারে না ঠিক কোনটা ওদের পছন্দ।’
র্যালফ চোখ বড় বড় করে বললো, ‘মানেটা ঠিক বুঝলাম না?’
‘মানেটা হলো জ্যান ভাবছে ও টেডের সাথে একটা রেস দেবে রোমান্স ডিপার্টমেন্টে কে কত খরচা করতে পারে এটা নিয়ে,’ জেমস বললো। একই সাথে জ্যানকে ওর ভালোও লাগছিল আবার চিন্তাও হচ্ছিল ।
জ্যান উত্তর দিল, ‘ মানেটা আর কিছুই নয়। পেট্রা ঠিকঠাক জানে না একজন পুরুষের কোন কোন গুন ওর পছন্দের। একাধিক পুরুষের সাথে না মিশলে সেটা ও জানবে কি করে? আমি ওর সেরা পছন্দটার কথা ভাবছি।’
র্যালফ বেশ খানিকক্ষণ জ্যা্নকে দেখলো, তারপর বলো, ‘তোর বয়স মাত্র এগারো এটা মনে আছে তো?’
জ্যান আর র্যালফ হাঁটতে শুরু করে দিলেও জেমস থেমে গিয়েছিল। ওর চোখে পড়েছে ট্রফি কেসের গায়ে আটকে থাকা একটা ফটোতে। একটু ঝুঁকে, ওটাকে ভালো করে দেখার জন্য হাত দিয়ে নিজের মুখে সূর্যের আলো পড়াটা আটকালো। একটা সাদা কালো ফটো, নড়ছে, যেমন নড়ে সব ম্যাজিক ফটো । ওর ড্যাডের ছবি। অল্প বয়েস, রোগা, মাথায় কালো ঝাঁকড়া চুল আর সেই বিখ্যাত কাটা দাগ কপালে। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন ক্যামেরার দিকে। মনে হচ্ছে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা কোন একজন বা কিছুর সাথে নজর মেলাতে চাইছেন না। পাশেই ফ্রেম করা আছে একটা রুপো আর নীল ক্রিস্টাল দিয়ে তৈরী ট্রফির ছবি যা ঝকমক করছে । জেমস ট্রফিটার নিচে খোদাই করা লেখা গুলো পড়লো।
“দ্য ট্রাই উইজার্ড কাপ …. যৌথ ভাবে প্রদান করা হল হগওয়ারটস এর ছাত্র হ্যারি পটার, গ্রিফিন্ডোর হাউস এবং সেড্রিক ডিগরি, হাফেলপাফ হাউস, কে, ট্রাই উইজার্ড টুর্নামেন্ট জেতার জন্য। যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই মাঠে। ডারমস্ট্র্যাং ইন্সটিটিউট এবং বিঊব্যাটন অ্যাকাডেমী অফ ম্যাজিকের সহযোগিতায়।”
আর অনেক কিছু লেখা ছিল, জেমস ওগুলো পড়লো না। ও সব জানে। ক্রাউচ নামের এক ডার্ক উইজার্ডের বদমায়েশির কারনে হ্যারি পটারের নামটা প্রতিযোগিদের তালিকায় ঢুকে যায়। যার কারনে হ্যারি এবং সেড্রিককে যেতে বাধ্য করা হয় ভলডেমরট এর লেয়ারে। ওই শয়তান জাদুকরের শারীরিক প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনে। ড্যাডকে ছবিতে ওরকম অস্বস্তিকর মুখে দেখার যথেষ্ট কারন আছে। একতো হ্যারির সে সময় বয়েসই হয়নি ওই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার , তার ওপর তিন জনের প্রতিযোগিতায় উনি হয়ে গিয়েছিলেন চার নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী। ওই ঘরের অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে উনি চিটিং করেছেন এবং ওনার কালো জাদু করার ক্ষমতা আছে।
জেমস এবার ট্রফিটার আরেক দিকে লাগানো ছবিটার দিকে তাকালো, ওটা ডিগরির একটা ছবি। ওনার হাসিটা স্বাভাবিক এবং হৃদয়ের থেকে উঠে আসা, হ্যারিরটার তুলনায়। জেমস এর আগে কোন দিন ডিগরির ছবি দেখেনি, মুখটা বেশ আপন আপন। ও ডিগরির ঘটনাটাও জানে। জানে কবরখানাতে ওনার মৃত্যু হয়েছিল ড্যাডের চোখের সামনেই ভল্ডেমরটের নির্দেশে। হ্যারি ওই রাতটার কথা বলতেই চায় না, জেমসও বোঝে কারনটা কি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও ছুটলো জ্যান আর র্যালফের কাছে যাওয়ার জন্য।
ওই দিনই কিছুটা সময় পরে জেমস নিজের ঘরে গেল ডিফেন্স এগেইন্সট দ্য ডার্ক আর্ট এর ক্লাসে যাওয়ার জন্য বই নেবে বলে, দেখতে পেল নবি জানলার বাইরে ওর অপেক্ষায় বসে আছে। ঠুকরাচ্ছে অধীর হয়ে। জানলা খুলে নবির পায়ে আটকানো পারচমেন্টটা নিয়ে তখনই পড়তে শুরু করলো।
ডিয়ার জেমস
তোমার ড্যাড আর আমি স্বস্তি পেয়েছি এবং রোমাঞ্চিত হয়েছি এটা জেনে যে তুমি ঠিকঠাক পৌঁছে গেছো স্কুলে। আঙ্কল রন কনগ্র্যাচুলেশন জানিয়েছেন গ্রিফিন্ডোর এ স্থান পাওয়ার জন্য। আমাদের তরফ থেকেও সেটা রইলো অজস্র পরিমাণে। খুব খুব অপেক্ষায় থাকছি তোমার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা জানার জন্য। আর একটা কথা, আশা রাখছি এখনো কেউ তোমায় এটা বলেনি … আমেরিকান উইজার্ডদের সাথে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা এবং অন্যান্য বিষয়ে “মিউচ্যুয়াল” কিছু আলোচনা করার জন্য তোমার ড্যাড হগওয়ারটসে যাচ্ছেন পরের সপ্তাহে। আমি বাড়িতেই থাকবো অ্যালবাস আর লিলের সাথে। যার অর্থ তোমার সাথে ড্যাডের দেখা হতে চলেছে। আশা করছি কেবল মাত্র প্যাস্ট্রি আর মিটপাই খাচ্ছো না বেশি বেশি করে। আর হ্যাঁ, নিজেকে আর নিজের পোশাক সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন ভালো করে ধোয়ার কথাটা মাথায় রেখো। [ একটু মজা করলাম। সত্যি বলতে, মজা ঠিক নয় এটা।]
ভালোবাসা ও চুম্বন নিও
মাম
জেমস চিঠিটা বইয়ের মধ্যে ভাঁজ করে ঢুকিয়ে নিল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকলো প্রায় ছুটে। আগামী সপ্তাহে হ্যারি আসছেন এই খবরটা ওকে এক দোলাচলে ঠেলে দিয়েছে। অবশ্যই ও উত্তেজিত হয়ে পড়েছে ড্যাডের সাথে দেখা করার জন্য এবং বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। সাথেই একটা ভয় পাচ্ছে, ওর বাবার খ্যাতির বিরাট ছায়াটা এবার আরো বড় হয়ে ওকে ধাওয়া করবে যার থেকে পালানো খুব কঠিন। ও একদিক থেকে নিশ্চিন্ত যে জ্যান আর র্যালফ মাগলদের সন্তান, ফলে ওর কিংবদন্তী বাবার বিষয়ে ওদের জ্ঞানটা বেশ কম।
ডিফেন্স এগেইন্সট দ্য ডার্ক আর্ট এর ক্লাস রুমে গেল জেমস এবং দেখতে পেল আর এক ধরনের লেখা সহ ব্যাজ স্লিদারিনদের পোষাকে। “প্রোগ্রেসিভ উইজারডস এগেইন্সট ম্যাজিক্যাল ডিসক্রিমিনেশন”। দরজার কাছে আটকানো একটা খবরের কাগজের লেখাগুলো দেখে ওর কেমন যেন একটা শূন্যতার অনুভুতি হল। ওখানে হেডলাইন রিবনে লেখাটা ক্রমাগত ওখানে ‘রান’ করছিল, “ হ্যারি পটার আন্তর্জাতিক উইজার্ডিং সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন”। ওর নিচে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা ‘ অরোর প্রধান দেখা করবেন ইউনাইটেড স্টেটস থেকে হগ ওয়ারটসে আসা প্রতিনিধিদের সাথে। সুরক্ষার ভাবনায় সমগ্র জাদুজগত”। হ্যারি পটারের একটা হাস্যরত ছবিও দেখা যাচ্ছে। আর তার সাথেই পিন করা আছে একটা নীল ব্যাজ। যার “কোশ্চেন দ্য অরোর” কথাটা মাঝে মাঝেই চক চক করে উঠছে।
‘চলে আয়, এদিকে, আমাদের দেরী হয়ে গেছে,’ র্যালফ ডেকে বললো।
ক্লাস ঘরে ঢুকে সামনের দিকেই ওরা দুটো বসার জায়গা পেয়ে গেল। র্যালফ জেমসের দিকে ঝুঁকে জানতে চাইলো, ‘খবরের কাগজে ওটা কি তোর বাবার ছবি?’
জেমস বুঝতে পারলো র্যালফ কাগজটা পড়েনি। ও র্যালফের দিকে আড়চোখে তাকালো। ‘ হ্যাঁ। মামের কাছে থেকে একটু আগে চিঠি এসেছে। উনিও লিখে জানিয়েছেন। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই উনি এসে এখানে যাবেন । আমেরিকানদের সাথে বড় ধরনের কিছু নিয়ে আলোচনা হবে বলেই আমার ধারনা।’
র্যালফ কোনও উত্তর দিল না কিন্তু ওর মুখ দেখে বোঝা গেল ও একটা কিছুর দ্বন্দ্বে ভুগছে।
ক্লাস ঘর চুপ হয়ে যাওয়ায় জেমস ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করলো, ‘ তুই এ ব্যাপারে আগে থেকেই জানতে পেরেছিলি, তাই না?’
‘না, সেভাবে কিছু শুনিনি। তবে আমার রুমমেটরা আজ সারাদিন ধরে কিছু একটা বিরোধ প্রদর্শন এর আলোচনা করছিল। আমার যা মনে হল তাতে ওটা তোর ড্যাডের বিরুদ্ধেই হতে চলেছে।’
জেমস অবাক চোখে র্যালফের দিকে তাকালো। তারমানে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে হাসির মুখোস চাপিয়ে ট্যাবিথা করসিকা এবং ওর স্লিদারিন অনুগামীরা এই পরিকল্পনা করছে । স্লিদারিনদের কাজের পদ্ধতি বদলেছে কিন্তু উদ্দেশ্য বদলায়নি। জেমস নিজের হাঁ হয়ে থাকা মুখটা বন্ধ করে ঘুরে বসলো কারন ওদিকে প্রফেসর ফ্রাঙ্কলিন চলে এসেছেন ডেস্কে। পেছন পেছন ঢুকলেন প্রফেঃ জ্যাক্সন, হাতে তার সেই কালো চামড়ার বাক্স । উনি নিচু স্বরে কিছু একটা বলছিলেন।
‘স্বাগত শিক্ষার্থীগন,’ ফ্রাঙ্কলিন বললেন কেটে কেটে। ‘ আমি নিশ্চিত তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে প্রফেসর জ্যাক্সনের ক্লাস করে ফেলেছো। একটু দেরী হয়ে গেল আমার। তার জন্য ক্ষমা চাইছি।’ একই রকম গ্রানাইট পাথরের মুখ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে থাকলেন জ্যাক্সন। জেমস ভাবলো, জ্যানের দেওয়া নামটা মানুষটার পক্ষে একেবারে পারফেক্ট। ফ্রাঙ্কলিন জ্যাক্সনের দিকে ঘুরে কিছু একটা বললেন চাপা গলায়। সম্ভবত সে কথাটা জ্যাক্সনের পছন্দ হল না। উনি মেঝেতে নিজের স্যুটকেস্টা নামিয়ে রাখলেন, কিছু একটা বোঝানোর জন্য।
জেমস স্যুটকেশটার দিকে তাকালো। ও যেখানে বসে আছে সেখান থেকে মাত্র এক দু ফুট দূরে ওটা রাখা আছে। জ্যাক্সনকে স্যুটকেসটাকে হাতছাড়া করতেই দেখা যাচ্ছেনা, যেখানে উনি সেখানেই ওনার সাথে স্যুটকেশটা। জেমস প্রফেসরদের কথার দিকে কান না দেওয়ার চেষ্টা করলো। নিশ্চিতভাবে কিছু গোপন আলোচনা করছেন ওরা। আর যে কারনেই পুরো ব্যাপারটা আরো কৌতূহলজনক হয়ে পড়ছে। ওর কানে “লুক্কায়িত” আর “মারলিন” শব্দ দুটো ভেসে এলো। আর ঠিক তখনই তৃতীয় একটা কণ্ঠ শোনা গেল।
‘প্রফেসর জ্যাক্সন,’ চিৎকার নয় কিন্তু ব্যক্তিত্বব্যঞ্জক, প্রশাসনের ছাপ যুক্ত। জেমস তাকালো কন্ঠস্বর লক্ষ্য করে। মাদাম ডেলাক্রয় ঘরটির ভেতর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। ওনার দৃষ্টিহীন চোখ চেষ্টা করছে কাওকে খোঁজার। ‘ আমার মনে হয় আপনি ভুলে গেছেন আপনার ক্লাস আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। সবসময়েই আপনি এই ব্যাপারে……,’ সম্ভবত উনি সঠিক শব্দটা খোঁজার চেষ্টা করছিলেন, ‘নিয়মানুবর্তিটার ব্যাপারে খুঁতখুঁতে’। মাদামের কথা বলার ভঙ্গীতে ফরাসী আর দক্ষিন আমেরিকানটানের মিশ্রন। একটু হেসে উনি বেরিয়ে গেলেন। মেঝেতে বেতের লাঠি ঠোকার শব্দ আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল।
দরজার দিকে তাকিয়ে থাকা জ্যাক্সনের মুখটা এখন আরো বেশী পরিমাণে পাথরের বলে মনে হচ্ছিল। একবার ফ্রাঙ্কলিনের দিকে তাকিয়ে উনি চোখ নামালেন স্যূটকেশটার দিকে। খানিকটা এগিয়ে এসেই একটু থমকে গেলেন, জেমসও তাকালো ওনার পা লক্ষ্য করে। যে কোন ভাবেই হোক কালো চামড়ার স্যুটকেশটা একটু খুলে গেছে। পেতলের তালার মুখ চকচক করছে। জেমস আর প্রফেঃ জ্যাক্সন ছাড়া কেউ ওটা লক্ষ্যও করেনি। জ্যাক্সন দ্রুত এগিয়ে গিয়ে নিচু হয়ে বিরাট থাবা দিয়ে আগে লকটা করলেন। জেমস এর মধ্যেই একটু দেখতে পেয়ে গেছে ভেতরের জিনিষ। দেখে মনে হয়েছে বেশ দামী ও কালছে রঙের পোষাক সব । জ্যাক্সন সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য উঠতে যেতেই চোখাচোখি হয়ে গেল জেমসের সাথে। জেমস চোখ সরানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারলোনা। উনি বুঝে গেলেন একজন দেখে নিয়েছে সব, যদিও যে দেখেছে সে কি দেখলো তা বুঝতে পারেনি।
একটাও কথা না বলে, একবারো পিছন ফিরে না তাকিয়ে প্রফেসর জ্যাক্সন হনহনিয়ে হেঁটে চলে গেলেন। ঠিক যেন একটা পুরানো যুদ্ধ জাহাজ এগিয়ে গেল তার নিজের সব শক্তি একত্র করে।
‘ধন্যবাদ তোমাদের, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য,’ ফ্রাঙ্কলিন বললেন ক্লাসের উদ্দেশ্যে, নিজের চশমাটা একটু ঠিক করে নিয়ে। ‘ ওয়েল কাম টু ডিফেন্স এগেইন্সট দ্য ডার্ক আর্টস। তোমরা তো আমার নাম সকলে জেনেই গেছো। আশা করছি অনেকে আমার অতীতটাও খুঁজে নিয়েছ। নিশ্চিত ভাবে প্রশ্নটা আসবে জেনেই আগে থেকে জানিয়ে রাখছি, হ্যাঁ আমিই সেই বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। না আমি মোটেই মাগলদের জন্য বিদ্যুত সৃষ্টি করিনি, কিন্তু আমি ওদের সঠিক পথটার দিকে যাওয়ার সঙ্কেত দিয়েছি। হ্যাঁ, আমি আমেরিকান কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের সদস্য ছিলাম, এবং বিশেষ কারনেই, আমি ডিক্লারেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স এর স্বাক্ষরকারী ছিলাম না। সেই সময়ে আমি আমার নামের দুরকম বানান লিখতাম, যাতে আমার পক্ষে সুবিধা হত কোন ধরনের কাজটা আগে করতে হবে সেটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে। এর মধ্যে একটা নাম জানতো মাগলদের জগত। আমি জানি আমার মুখের ছবি ১০০ ডলারের নোটকে সম্মান দিয়েছে। সাথেই একটা অতি প্রচলিত জল্পনার অবসান ঘটাতে চাই যে আমি মোটেই যখন তখন ১০০ ডলারের নোট বার করে ভক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দিই না স্বাক্ষর করে। অবশ্যই আমি খুব খুব বৃদ্ধ মানুষ, যার জন্য ম্যাজিকের অবদান ১০০ শতাংশ। তবে এটাও বলতে চাই ব্যাপারটা যথেষ্টই একঘেয়ে ও ক্লান্তিকর । সাথে সাথেই আর একটা কথা আমি কিন্তু অমর নই। আমি প্রচুর প্রচুর বয়সের একটা বুড়ো মানুষ যে বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধার সাহায্যে অনেকের চেয়ে ভালো ভাবে বেঁচে আছে। হয়তো এতেই তোমাদের অনেকেই অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেলে , তাই না?’ ফ্রাঙ্কলিন থামলেন একটা মুচকি হাসি সহ, দেখতে থাক্লেন সামনে বসে থাকা হতবাক শিক্ষার্থীদের। একটা মৃদু গুনগুন শোনা যাচ্ছিল ক্লাসে।
‘কোন প্রশ্ন নেই ,এক্সিলেন্ট , তাহলে এবার আমরা এগোতে পারি আমাদের মূল কাজে। আর হ্যাঁ,’ ফ্রাঙ্কলিন একটা বিরাট মাপের বই খুলতে খুলতে বল লেন, ‘মাঝে মাঝে বলা আমার জোকসগুলোকে পাত্তা না দিলেও চলবে। দুশো বছর আগেও ওগুলো মজাদার ছিল না আর এখন তো ওগুলো একেবারেই হাসির খোরাক হারিয়ে ফেলেছে, থ্যাঙ্ক ইউ।’
জেমস আর র্যালফ গ্রেট হলে ডিনার করতে যাওয়ার পথে হ্যাগ্রিডের কেবিনের চিমনি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখলো। জেমসের মুখ ভরে গেল একরাশ হাসিতে। র্যালফ কে সাথে নিয়ে ও এগিয়ে গেল কেবিনটার দিকে।
‘জেমস!’ হ্যাগ্রিড দরজা খুলেই উচ্ছাসে ফেটে পড়লো। হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো বা বলা যায় ঢেকে নিলো নিজের শরীরে জেমসকে। র্যালফ বিষ্ফারিত চোখে ব্যাপারটা দেখে এক পা পিছিয়ে গেল। হ্যাগ্রিডকে দেখতে থাকলো আগাপাস্তালা। ‘ কি ভালই যে লাগছে একজন পটারকে আবার স্কুলে পেয়ে। মা বাবা অ্যাল্বাস আর পুচকে লিল কেমন আছে?’
‘সবাই ভালো আছে হ্যাগ্রিড। তুমি কেমন আছ সেটা বলো? কোথায় ছিলে এতদিন’
হ্যাগ্রিড বেরিয়ে এলো বাইরে। ওরা বার হওয়ার পর দরজাটা লাগালো। এগিয়ে চললো দুর্গের দিকে, ওর পিছু নিল ওরা দুজন। ‘ ওই পাহাড়ের ওপরে। দৈত্যদের সাথে। গ্র্যাপ আর আমি, প্রত্যেকবার যেমন যাই, মনে নেই? চেষ্টা করি সদ্ভাব বাড়াতে। চেষ্টা করি ওদের সৎভাবে বাঁচিয়ে রাখতে, তা সে যেমন ভাবেই হোক না কেন।এবার একটু বেশীদিনই থাকা হয়ে গেল। ক্ষুদে গ্র্যাপের এবার একটা গার্লফ্রেণ্ড জুটে গেছে । আরে তোমার এই বন্ধুটি কে?’
জেমস কিছু সময়ের জন্য হ্যাগ্রিডের তুতো ভাই গ্র্যাপের, যে আবার পুরো দৈত্য, গার্লফ্রেন্ডের ব্যাপারটা নিয়ে এতটাই ভাবনায় ডুবে গিয়েছিল যে ভুলেই গিয়েছিল ওর সাথে র্যালফও আছে। ‘ওহ, এ আমার বন্ধু র্যালফ ডিডল। আমার মতই প্রথম বছর ওরও। হ্যাগ্রিড আমাদের গ্র্যাপের বান্ধবীর ব্যাপারটা আর একটু বলবে?’
হ্যাগ্রিডের মুখটা কোমল হয়ে এলো। ‘ আহা, কেন বলবো না। সে যে কি দারুন একটা ব্যাপার আমার খুদে গ্র্যাপ আর ওর বান্ধবীকে একসাথে দেখা। ঠিক যেন খাঁচার মধ্যে থাকা একজোড়া হিপ্পোগ্রিফস। দৈত্যদের মন দেওয়ানেওয়ার ব্যাপারটা খুব সুক্ষ ব্যাপার বুঝলে জেমস।’
র্যালফ ওদের কথাবার্তা গুলো ঠিক বুঝতে না পেরে জানতে চাইলো, ‘তোমার ভাই গ্র্যাপ একজন দৈত্য?
‘ হ্যাঁ গো, একদম একটা দৈত্য,’ হ্যাগ্রিড হাসতে হাসতে বললো। ‘ পুচকে একটা দৈত্য। ১৬ ফুট হবে খুব বেশী হলে। ওর বান্ধবীকে দেখবার মতো, সত্যি বলছি। ক্রেশট ডোয়েলার উপজাতি ভুক্ত, ২২ফুট ১ ইঞ্চি হাইট। আমার পছন্দের তালিকার মধ্যে নয় যদিও। কিন্তু গ্র্যাপ একেবারে মোহিত হয়ে গেছে ওর মার খেয়ে। অবাক হওয়ার কিছু নেই, যে কোন দৈত্যদের মন দেওয়া নেওয়ার প্রাথমিক কাজটাই হয় গাছে গুড়ি দিয়ে মাথায় আগাত করার করার মাধ্যমে। ওই ঘা খেয়ে আমার পুঁচকেটা প্রায় একদিন অজ্ঞান হয়ে ছিল। তারপর থেকে একেবারে মেয়েটার ন্যাওটা হয়ে গেছে পোষা কুকুরের মত।’
‘গ্র্যাপ ওর বান্ধবীকে নিয়ে এখানে ফিরে আসবে?’ জেমস প্রশ্নটা করলো কিছুটা সংশয় নিয়ে কারন উত্তরটা ও অনুমান করতে পারছিল বলেই ওর ধারনা।
হ্যাগ্রিড পেছন ফিরে তাকালো, বললো, ‘আরে, আসবেই তো। এটা ওর বাড়ি, সেটা ভুলে গেলেতো চলবে না, তাই না? প্রাক প্রণয় পর্ব শেষ হলে ওকে একজন ভালো স্ত্রীরুপেও তো পাবে। পাহাড়ের পেছনে জঙ্গলে একটা কুটির বানিয়ে মেয়েটা থাকে। গ্র্যাপ এখন সেখানেই আছে, ওকে সাহায্য করছে বলেই আমার মনে হয়।’
জেমস কল্পনা করার চেষ্টা করলো গ্র্যাপ একটা ২২ ফুটের দৈত্য কন্যাকে কাজে সাহায্য করছে। ওর মাথায়া তাজ্ঝিম মাজ্ঝিম করে উঠলো। জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে ভাবনাটা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করলো ও।
মেইন গেট পেরিয়ে ঢুকতে ঢুকতে হ্যাগ্রিড জিজ্ঞেস করলো, ‘শুনলাম কি সব মিটিং করতে তোমার ড্যাড আগামী সপ্তাহে এখানে আসছেন? মিটিং হবে যত্তসব কুয়োর ব্যাংগুলোর সাথে, যারা আবার এসেছে সাত সমুদ্র পেরিয়ে, তাই না?’
জেমস হ্যাগ্রিডের ভাষা ব্যবহারে স্তম্ভিত হয়ে বললো, ‘ তুমি যদি তাই বলো তবে তাই।’
‘আহা, দারুন হবে ব্যাপারটা, আবার তোমার ড্যাডের সাথে বসে চা খাবো। সেই সব পুরানো দিনের মতো। শুধু থাকবে না কোন গা শিউরানো অ্যাডভেঞ্চার। আমি তোমায় বলেছি সেইসব দিনের কথা যখন তোমার ড্যাড, রন আর হারমায়োনি আমার নরবার্টকে সাহায্য করে ছিল পালিয়ে যেতে?’
‘তা কয়েকশ বারতো হবে কম করে, মাননীয় হ্যাগ্রিড,’ জেমস হাসলো, গ্রেট হলের দরজাটা টেনে খুলতে খুলতে। ‘তবে প্রত্যেকবারই গল্পটায় কিছু না কিছু নতুন যোগ হয়েছে।’
ডিনার প্রায় শেষ হওয়ার মুখে জেমস উঠে হ্যাগ্রিডের কাছে গেল একটা বিষয়ে কথা বলার জন্য। ‘ হ্যাগ্রিড আমি তোমায় একটা বিশেষ প্রশ্ন করতে চাই?’
‘অ’শ্য ই করতে পারো। তবে বাপু আমি গ্যারান্টি দিতে পারবো না উত্তরটা আমি জানি কিনা এ বিষয়ে। চেষ্টা করবো যতটা সম্ভব।’
জেমস সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো র্যালফ স্লিদারিন টেবিলের কোনার দিকে টাবিথা করসিকার দলটার এক পাশে বসেছে। মোমবাতি আর সিলিং চুইয়ে নেমে আসা আবছা আলোয় আলোকিত হয়ে সিরিয়াস ভঙ্গীতে সুন্দরী করসিকা কিছু একটা বলে চলেছে। ‘আমি জানি না,আগে কখনো ভুল বিচার হয়েছে কিনা? মানে এরকম কখনো কি হয়েছে হ্যাগ্রিড, যে সরটিং হ্যাট ভুল করে কাঊকে ভুল হাউসে পাঠিয়ে দিয়েছে?’
হ্যাগ্রিড কাছেই একটা বেঞ্চে বসলো, স্বাভাবিক ভাবেই একটা অতিরিক্ত চাপ নেওয়ার আওয়াজ এলো বেঞ্চটার পায়াগুলো থেকে। ‘দ্যাখো বাপু এব্যাপারে আমার বলার মত কিছু নেই কারন আমি আগে কোনদিন এরকম কিছু শুনিনি। কারো কারো পছন্দ হয়নি তাদের যে হাউসে পাঠানো হয়েছে সেই হাউসটা, তার মানে এই নয় যে তারা ওখানে মিসফিট হয়েছে। কিন্তু তোমার হঠাৎ এ প্রশ্নের কি কারন জেমস?’
‘ না, আমি নিজেকে নিয়ে ভাবছিনা মোটেই।’ র্যালফের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল, যাতে কেউ বুঝতে না পারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুকে। ‘ না সেরকম কিছু না, আমার কেন জানি না জানার ইচ্ছে হল।’
হ্যাগ্রিড একটু হেসে জেমসের পিঠে একটা চাপড় মারলো। যার অনিবার্য ফল , জেমস সামনের দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকে পড়লো। ‘একেবারে ড্যাডের মতো হয়েছ তুমি। নিজের কি হবে সেদিকে খেয়াল না রেখে অপরের কি হবে সেদিকে নজর। এর ফলে কিন্তু অনেক বিপদ হতে পারে বলে রাখলাম, যেমন হ্যারির হয়েছিল!’ বলেই নদীর জলে অনেকগুলো ছোট পাথর ফেললে যেমন শব্দ হয় সেরকম শব্দ করে হাসলো। ভাবনাটা হ্যাগ্রিডকে বেশ খানিকটা নাড়া দিয়েছে বোঝা গেল ওর পরবর্তী কথায়। ‘সরটিং হ্যাট জানে ওকে কি করতে হয় , আমি অন্তত সেটাই মনে করি। সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ভালোই হবে। তুমি শূধু অপেক্ষা কর আর দেখে যাও।’
স্লিদারিনের টেবিলের পাশ দিয়ে জেমস নিজের টেবিলে ফিরে আসার পথে একবার তাকালো র্যালফের দিকে, কিছুটা অবাক হয়েই।
[চলবে]
লেখক পরিচিতিঃ জর্জ নরম্যান লিপারট আমেরিকান লেখক এবং কম্পিউটার অ্যানিমেটর। তবে ওনার বর্তমান পরিচয় উনি জেমস পটার সিরিজের লেখক। যে কারনে ওনাকে “আমেরিকান রাউলিং” নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এই সিরিজের প্রথম লেখা “জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রশিং” প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। নানান কারনে এটি অনেক বিতর্কে জড়িয়ে যায়। সেসব সমস্যা পেরিয়ে আজ এটি পাঠক পাঠিকাদের চাহিদায় সারা বিশ্বে যথেষ্ট জনপ্রিয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই সিরিজের সব কটি বই ই-বুক এবং ফ্রি হিসাবেই প্রকাশ করেছেন মাননীয় জর্জ নরম্যান লিপারট। এই সিরিজ ছাড়াও ওনার আরো ১২ টি বই আছে। বর্তমানে উনি এরি, পেনসিল্ভ্যানিয়ার বাসিন্দা।
অনুবাদকের পরিচিতিঃ উপন্যাসটির অনুবাদক প্রতিম দাস মূলত চিত্র শিল্পী, ২০১৩ সাল থেকে ভারতের সমস্ত পাখি আঁকার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছেন। ৭৭৫+ প্রজাতির ছবি আঁকা সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে শুধু পাখি নয় অন্যান্য বিষয়েও ছবি আঁকা চলে একইসাথে। সাথেই দারুণ রকমের পাঠক, যা পান তাই পড়েন ধরনের। প্রিয় বিষয় রূপকথা, ফ্যান্টাসী, সায়েন্স ফিকশন, অলৌকিক। টুকটাক গল্প লেখার সাথে সাথে আছে অনুবাদের শখ।
বিঃ দ্রঃ উপন্যাসটি লেখকের অনুমতি নিয়ে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।
Tags: অনুবাদ, জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং, ধারাবাহিক অনুবাদ গল্প, ধারাবাহিক উপন্যাস