জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং – পার্ট ১১
একাদশ পরিচ্ছেদ
তিনটি রেলিক
স্কুল থেকে ফিরে আসার পরের সাময়িক উত্তেজনার শেষে গ্রিমাল্ড প্লেসে ক্রিসমাসের ছুটির দিনগুলো আর পাঁচটা দিনের মতোই কাটতে থাকলো। র্যালফের সঙ্গে সবার পরিচয় করে দেওয়ার পর আর একজন পারিবারিক সদস্যর মতো সে মেতে গিয়েছে বাকিদের মতোই আনন্দের জোয়ারে। ক্রিসমাসের আগের বুধবারে হুগো আর রোজকে নিয়ে আঙ্কল রন ও হারমায়োনি আন্টি এসে গেলেন। কিছুক্ষন বাদেই হাজির হলেন ভিক্টরির বাবা মা আঙ্কল বিল আর ফ্লেঊর আন্টি। জেমস এইসব মানুষগুলোকে খুবই পছন্দ করে। এই বাড়ীতে থাকার জায়গা তুলনামূলকভাবে কম হলেও জেমসের ভালই লাগছিল সবার এই একত্র হওয়াটা।
থার্ড ফ্লোরের বেডরুমে যাওয়ার সময় নিজের আর হারমায়োনির লাগেজ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে রন বললেন, ‘একদিক থেকে ভালোই হয়েছে মাম আর ড্যাড চার্লির কাছে গিয়েছে। জায়গাটা যে এতো ছোটো এটা ছোটবেলায় বুঝতে পারিনি।’
হারমায়োনি আদরের ছলে কনুইয়ের খোঁচা মেরে ব্যঙ্গ করে উত্তর দিলেন, ‘রন, আসলে তোমার আয়তনটা অনেক বেড়ে গেছে। সেটার দিক নজর না দিয়ে তুমি বাড়িটার খুঁত ধরছো।’
‘আমি মোটেই খুঁত ধরছি না। তাও তো একটা ঘর পেলাম। পার্সি যদি আসতো, ওকে বোধ হয় ক্রিচারের সঙ্গেই শুতে হতো।’
জেমস, র্যালফ এবং অন্যান্য ভাই বোনেরা একসঙ্গে হই হট্টগোল করে সময় ভালোই কাটাচ্ছিল। মাঝে মধ্যে আঙ্কল রনের সঙ্গে ম্যাজিক্যাল দাবার আসরও বসছিল। কখনো ওরা দল বেঁধে ঘুরতে বেড়াচ্ছিল রাস্তায়। আবার কখনো জিন্নি বা হারমায়োনির সঙ্গে যাচ্ছিলো মার্কেটে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারতে। ইতিমধ্যে আঙ্কল বিল আর ফ্লেঊর আন্টি, র্যালফ আর জেমস এর সাহায্য নিয়ে ঘরে ঢোকালেন একটা ঝাঁকড়া ক্রিসমাস ট্রী। যেটা হলঘরের দুই তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে নিলো।
‘এটা করতে আমার একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না,’ বিল বললেন, নিজের জাদুদন্ডটাকে গাছের দিকে তাক করে। ‘রিডিউসিও!’
গাছটা তিনভাগের একভাগ মাপে ছোট হয়ে গেল। ডাল বা পাতার ঘনত্ব সেই অনুসারে না কমায় ওটাকে এখন গাছের বদলে একটা ঝোপ বলে মনে হচ্ছিল। ক্রিসমাস ইভের পুরো সকালটা জেমস, র্যালফ, রোজ আর ভিক্টরি পপকর্ণের মালা বানালো, গাছটাকে সাজালো এবং উপহারগুলো রঙিন কাগজে মুড়ে ফেললো। ওইদিন রাতে হারমায়োনি বাড়ির সবাইকে একত্র করে ক্রিসমাস ক্যারল শেখাবে বলে ঘোষনা করলেন। রন বা হ্যারির যা মোটেই পছন্দ হলো না।
‘হারমায়োনি আমাদের বাদ দিলে ভালো হয়,’ হ্যারি ফায়ারপ্লেসের কাছে রাখা একটা ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বললেন। ‘আজ সারাদিন আমাদের খুব খাটনি গেছে।’
‘ঠিক বলেছিস,’ রন সায় দিলেন, ‘সবে ছুটির শুরু। আর একটুও গা এলানোর সুযোগ পেলাম না। এটা কি ঠিক হচ্ছে?’
‘রোনাল্ড ওয়েস্লী, এই আপনার কোট আর টুপি। কথা না বড়িয়ে রেডি হয়ে নিন,’ হারমায়োনি জিনিস দুটো রনের কোলের ওপর ছুড়ে দিলেন। ‘সারা বছরে কোনো মতে আমরা একবার সুযোগ পাই পরিবারের সকলের সঙ্গে একত্র হওয়ার। তাও ভাগ্য ভালো থাকলে তবেই। এবার প্রায় সবাই উপস্থিত। এই অবস্থায় আমি তোমাদের গা এলিয়ে বসে থাকার কোনো সুযোগই দেবোনা। ‘তাছাড়াও’, একটু ছদ্ম গাম্ভীর্য এনে বললেন, ‘আসার সময় বলেছিলেনা তোমার নাকি ক্যারল গাওয়াটাকে হাস্যকর মনে হয়।’
‘ওটা যখন বলেছিলাম তখন বুঝতে পারিনি তুমি সিরিয়াস মুডে ছিলে’, রন উঠে দাঁড়িয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বিড়বিড় করলেন।
‘তোমাকেও উঠতে হবে,’ জিন্নি হেসে হ্যারির হাত ধরে টেনে চেয়ার থেকে ওঠালেন। ‘তুমি চাইলে ক্রিসমাসের গোটা দিনটা শুয়ে থাকতে পারো। কিন্তু আজ রাতে আমরা কিছু মজা করবো, চাও বা না চাও তাতে যোগ দিতেই হবে।’
হ্যারি গুঙিয়ে উঠলেন এবং জিন্নির বিরোধিতা না করে ভালোছেলের মতো কোটটা পড়ে নিলেন। জিন্নি ইয়ারকির ছলে হ্যারির পেটে এক গুঁতো মারলেন। হ্যারি হেসে উঠে জিন্নির স্কার্ফটা ধরে টেনে দিলেন। রন আর হ্যারির মধ্যে বিষয়টা নিয়ে বিরক্তি দেখা গেলেও আঙ্কল বিল এব্যাপারে একপায়ে খাড়া হয়ে আছেন। বুকে হাত রেখে দরজা থেকে হলে আসার পথটার কাছে দাঁড়িয়ে গলা সাধা শুরু করে দিয়েছেন। ফ্লেঊর নিজের মেয়ের মত সাজগোজ করে অনুরাগের দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন নিজের কর্তার দিকে। ওরা দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। জেমস শুনতে পেল আঙ্কল রন চাপা গলায় ড্যাডকে বলছেন, ‘আমি বাজি ধরতে পারি ও যতটা বউকে ইম্প্রেশ করার চেষ্টা করছে ততটাই আমাদের ফাঁদে ফেলার ধান্দা করছে।’
রাতের আবহাওয়া এতোটাই নিখুঁত রকমের ক্রিসমাসের মতো হয়ে উঠলো যে জেমসের মনে হচ্ছিল মাম আর হারমায়োনি আন্টি নিশ্চিত কিছু ম্যাজিক করেছেন। শুরু হয়েছে তুষারপাত। সাদা বরফে ঢেকে যাচ্ছে রাস্তাঘাট বাড়ি দেওয়াল সহ আশেপাশের সব কিছু। হারমায়োনি সবাইকে গান লেখা কাগজ দিয়ে দিয়েছেন। ওদেরকে দাঁড় করিয়েছেন সারিবদ্ধভাবে ছোট থেকে বড় উচ্চতা অনুসারে। রন হ্যারিকে বললেন, ‘আমারতো মনে হচ্ছে মা যদিও এখানে নেই তবু হারমায়োনি কোনো ভাবে উনার সত্বাটাকে নিজের মধ্যে নিয়ে নিয়েছে।’ গানের অভ্যাস চলার সময় হারমায়োনি বিরক্ত হচ্ছিলেন টেডের ওপর। কারণ ও বিভিন্ন রকম নিজস্ব সুরে ক্যারলটা গাইছিল। যেটা শুনে অ্যাল্বাস আর হুগো ভালোই মজা পাচ্ছিলো। অবশেষে একসময় সকলের পারফরমেন্সে খুশী হয়ে হারমায়োনি দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো গ্রিমাল্ড প্লেসের রাস্তায়। একের পর এক বাড়ির ডোরবেল বাজিয়ে চলতে থাকলো সমবেত ক্যারল সঙ্গীত। বেশীর ভাগ মাগল বাসিন্দারা যারা দরজা খুলেছিল ব্যাপার স্যাপার দেখে অবাক বিষ্ময়ে হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকলো।
কেবলমাত্র এক বড় সড় হিয়ারিং এইড পড়া বুড়ো দরজা খুলে চিৎকার করে জানিয়ে দিলো হরটেন্স হোম ফর ফেরাল ফেলাইনশ ছাড়া সে আর কোন চ্যারিটিতে টাকা দেয় না। তারপর ধ্রাম করে মুখের ওপর দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
টেড এই সুযোগে বললো, ‘ম্যাকগনাগল ম্যামের উচিত একে একটা ক্রিসমাস কার্ড দেওয়া।’
কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই জেমস র্যালফের দিকে হাত নেড়ে বললো, ‘অ্যানিমাগাস। আমি তোকে পরে বুঝিয়ে বলবো।’
ক্রিসমাসের সকালটা শুরু হলো ঝকঝকে সূর্যের আলো মেখে। তুষার জমে থাকা জানলাগুলো ভেদ করে একটা আবছা মায়াময় আলো ঢুকছিল ঘরে। ব্রেকফাস্ট করতে যাওয়ার সময় সিঁড়িতে রোজ আর অ্যাল্বাসের সঙ্গে দেখা হলো জেমস আর র্যালফের।
‘চেষ্টা করে কোন লাভ নেই,’ রোজ বললো। ‘মাম বলেছে কেউ যদি ব্রেকফাস্ট করার আগে উপহার খুলে দেখার চেষ্টা করে তার ওপর উনি ক্রাসিয়ো মন্ত্র ছুঁড়ে দেবেন।’
জেমস চোখ মেরে বললো, ‘হারমায়োনি আন্টি এটা বলেছেন?’
অ্যাল্বাস উত্তর দিলো, ‘না মানে ঠিক ওই কথাটা বলেন নি। তবে আঙ্কল জর্জের জেড-রে স্পেশ্যাল চশমাটা পড়ে কি উপহার মোড়ানো আছে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছি আর উনি খুব রেগে গেছেন। একেবারে ডিমেন্টর এর মতো দেখাচ্ছিল ওনাকে। সাঙ্ঘাতিক যাকে বলে!’
‘আঙ্কল জর্জ এসে গেছেন নাকি? উও দারুন!’ জেমস প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েই দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো।
অ্যাল্বাস বিরক্তি মেশানো স্বরে বললো, ‘হ্যাঁ, তবে উনি সঙ্গে করে ক্যাটি বেলকে নিয়ে এসেছেন। আসলে অ্যাল্বাস ক্যাটি বেলকে যত না অপছন্দ করে তার চেয়ে বেশি অপছন্দের বিষয় ওর কাছে এটা যে, জর্জ ওয়েশ্লী এবার বিবাহিত জীবন শুরু করবে।
পুরানো রান্নাঘরটার কাছে যেতেই জেমস আর র্যালফের কানে এলো জর্জের গলা, ‘আরে এটা কি জানো ওই পাবলিসিটিটা করার পর ট্রিপল ডাবলু’র দুটো নতুন ঠিকানা বেড়েছে। সঙ্গেই এটাই এখন উইজারডিং জগতের একেবারে এক নম্বরে থাকা জোক শপ। সেটাওতো বোধ হয় জানো না। আরে বাবা ওই বিতর্কসভার মতো একটা জায়গায় নিজের প্রচার করার সুযোগ ছাড়া যায় নাকি, যেটা আবার বড়সড় ভাবে ব্রডকাস্ট হচ্ছিল। যেনতেন ভাবে জনগণের কাছে পৌঁছানোটাই বিজনেসের আসল কথা।’
লম্বা বাদামী চুলের অধিকারিনী সুন্দরী ক্যাটি বেল চায়ের কাপ হাতে বললেন, ‘আশা করি তুমি শুনেছো মাইরন ম্যাড্রিগ্যাল ওয়্যারলেসে ব্যাপারটার নিয়ে কি বলেছে।’
টেড কাশলো, তারপর অতি কৌতূহলীর মতো জানতে চাইলো। ‘কি বলেছেন উনি?’
‘বলেছে “অতি জঘন্য ধরনের নিচুমানের ভাবনাচিন্তার ফসল ওটা”- জর্জ বললেন গর্বের সঙ্গে, নিজের জুসের গ্লাসটা সামনের দিকে বাড়িয়ে ধরে।
নিজের গ্লাসটা জর্জের গ্লাসের সঙ্গে ঠেকিয়ে টেড মুচকি হেসে বললো, ‘বাহ, বেশ ভালো! বেশ ভালো!’
‘আরে জেমস, এসে গেছিস তাহলে, খুব ভালো! আয় এখানে বস,’ নিজের গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রেখে পাশের চেয়ারটায় চাপড় মেরে। ‘তারপর বল ওই বুড়ি নিয়ম রক্ষাকারিনী কেমন কাজকর্ম করছেন?’
‘দারুন, কিচ্ছু বলার নেই ও নিয়ে,’ চেয়ারে বসে একটা টোস্ট তুলে নিয়ে জেমস বললো। ‘জর্জ এ আমার বন্ধু , র্যালফ।’
‘হুম, আমরা তো ওর ব্যাপারে সবাই জানি, তাই না?’ জর্জ বললেন র্যালফের দিকে ঝুঁকে নিজের নাকে হাত ছুঁইয়ে। ‘আমাদের দলের লোক বিপক্ষ শিবিরে, ঠিকতো?’ স্লিদারিন যুদ্ধ মেশিনের সঙ্গে গোপনে মিশে থাকা গুপ্তচর। যেভাবে সুযোগ মিলবে সেভাবে ওদের হকচকিয়ে দেওয়ার জন্য তৈরী।’
র্যালফ টেডের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।
টেড বললো, ‘আমি কিছুই বলিনি। শুধু জানিয়েছিলাম তুই টিম বি তে ছিলি, আমাদের সারপ্রাইজ প্যাকেজটা ওখানে প্রদর্শনের আগে অবধি। বাকিটা জর্জ নিজেই বুঝে নিয়েছে তোকে এখানে দেখে।’
র্যালফ কাঁচুমাচু ভাবে বললো, ‘কিন্তু সব কিছু যে ঠিক তা নয় সেটা তুমি জানো। আমি একটা ছোট ছেলে।’
জর্জ গম্ভীর ভাবে বললেন, ‘র্যালফি, একটা ছোট ছেলে কি করতে পারে বা না পরে তার কোন ধারণাই তোমার নেই।’
ক্যাটি সম্মতি সূচক কন্ঠে বললেন, ‘এক্কেবারে ঠিক কথা। জর্জ আর ওর ভাই ফ্রেড আম্ব্রিজ দ্য টে্রিবল এর জমানায় হগ ওয়ারটসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণ্ডগোলটা পাকিয়েছিল সেটা ভুলে গেলে চলবেনা।’
‘আরে বাবা আমিতো বললামই যেনতেন প্রকারে জনগণের নজরে নিজেদের নিয়ে আসতে হবেই।’
ক্যাটি হেসে বললেন, ‘তার সঙ্গে খানিকটা প্রতিশোধের ফোড়ন মিশিয়েও দিতে হবে।’
‘আরে বাপরে!! এরকম একটা ভাবনার কথা বলার চিন্তা টিন্তাও তাহলে তোমার মাথাতেও ঘোরে?’
র্যালফ আর জেমস একে অপরের দিকে তাকালো।
জেমস, র্যালফ, টেড আর জর্জ বেকফাস্ট টেবিলে বসেই গল্প গুজব চালাতে থাকলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাড়ির বাকী ছোট সদস্যরা ওদের টেনে নিয়ে গেল সেখানে যেখানে আপাতত বাড়ির সবাই হাজির উপহারের মোড়ক খোলার জন্য।
‘কি কেমন মজা হলো?’ জর্জ বললেন, অ্যাল্বাস উনাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই। ‘মাঝরাতে উপহারগুলো খুলে দেখে নাও তারপর আবার যেমন ছিল তেমন ভাবেই রেখে দাও রিপারো মন্ত্র ব্যবহার করে।’
অ্যাল্বাস জবাব দিলো, ‘আমি চেষ্টা করে ছিলাম। জেমসের জাদুদণ্ডটা নিয়ে এসে বিস্কুটের বাক্সের ওপর ওটা প্রয়োগ করতে। হলোই না! মাঝখান থেকে সব ঘেঁটে ঘ হয়ে গেল। মাম যে আমায় মারে নি এটা আমার ভাগ্য।’
জেমস কথাটা শুনতে পেয়ে তেড়ে গেলো, ‘তুইনা বলে আমার জাদুদন্ড নিয়ে এসেছিস। মাম মারেনি তো কি হয়েছে? আমি ওটা করবো এবার! দে ফেরত দে ওটা!’
অ্যাল্বাস জিভ ভেঙ্গিয়ে পালালো, পিছু নিলো জেমস।
এরপর চিৎকার চ্যাঁচামেচি, মোড়কের কাগজ খোলা ও ছেঁড়ার শব্দ জেমসকে ভাবাতে বাধ্য করলো যে, গ্রিমাল্ড প্লেসের এই পারিবারিক ক্রিসমাস পালনের সঙ্গে জ্যানের বলা স্টেটসে ওদের ক্রিসমাস পালনের অমিল আদপেই আছে কি। এও তো সেই হিঙ্কি পাঙ্কের মতই ব্যাপার স্যাপার। অল্প বয়েসী ওয়েস্লী আর পটাররা উচ্ছাসের সঙ্গে নিজেদের উপহার খুলে নিয়ে ওখান থেকে চলে যাওয়ার পর পরিবেশটা একটু শান্ত হলো। হ্যারি জিন্নিকে একটা অদ্ভুত রকমের হাঁড়ি উপহার দিয়েছেন, যেটা হাতে নিয়ে জিন্নি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলেন।
‘এটা একটা কনজ্যুর পট,’ একটু থতমতভাবে হ্যারি বললেন। ‘এটা ঝট করে ডিনার বানিয়ে দেয় ! রোজ সকালে তোমার কাপবোর্ডে যা কিছু মশলা এবং সব্জি পড়ে থাকবে ওর মধ্যে দিয়ে দেবে। কি দিলে সেটা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। এই জাদুপাত্র ওই সব জিনিস থেকে সেরা ডিশ বানিয়ে রেখে দেবে দিনের বেলায়। রাতে যখন আমরা বাড়ি ফিরবো, কিচ্ছু করার দরকার পড়বে না। একেবারে সারপ্রাইজ ডিশ তৈরী থাকবে। যে সমস্ত মায়েরা দিনে কাজে ব্যস্ত থাকেন তাদের জন্য আদর্শ জিনিস।’
‘এ কথাগুলোই লেখা ছিল বুঝলে জিন্নি, ট্রিস্টান অ্যান্ড টাপার ওয়ারথ এর বিজ্ঞাপনে,’ রন মুচকি হেসে মন্তব্য করলো। হ্যারি ওর মাথার পেছনে এক চাঁটা মারলো।
ফ্লেঊর নাক কুচকে বললেন, ‘আমরা যেখান থেকে এসেছি সেখানে স্বামীর তরফ থেকে স্ত্রীর জন্য রান্নার বাসন কিনে আনাটা অসম্মান জনক।’
‘তার আসল কারণ তোমাদের ওই জায়গাটাই ওরকম। কারণ ওখানে পুরুষদেরকেই রান্নার কাজকর্মটা করতে হয়,’ বিল উত্তর দিলেন মোলায়েম স্বরে।
‘বলছিলাম কি, ওই গিফট প্যাকেটটা একটু খোলোতো,’ হ্যারি বললেন একটু অস্বস্তির সঙ্গে।
জিন্নির জন্য আনা এই প্যাকেটটার ভেতরে ছিল এক জোড়া মার-পার্ল এর কানের দুল। যেটা দেখে জিন্নির মুখের ভাবটাই বদলে গেল অকল্পনীয় আনন্দের উচ্ছাসে।
‘হ্যারি! এতো দামী একটা জিনিস তুমি কিনলে কি করে? মার – পার্ল! আমি তো ভাবতেই পারছি না…!’ চোখটা ছলছল করে উঠলো জিন্নির।
হ্যারি হেসে বললেন , ‘এবার পড়ে দ্যাখো। যদি ওটা পড়ার পর তোমার মন শিহরিত হয়, তাহলে ওটা নকল। লেপ্রেচন – পার্ল। ওই কনজ্যুর পটটা কেনার কারনে গিফট পেয়েছি।’
‘আমার সেরকম কোন অনুভুতিই হলো না,’ জিন্নি হেসে বললেন এবং হ্যারিকে একটা চুম্বন করলেন।
রন হারমায়োনিকে দিলেন ছোট্ট কিন্তু দারুন দামী একটা পারফিউমের শিশি। নাম হুইমসিজ এঞ্চ্যান্টমেন্ট। হারমায়োনি খুবই খুশী হলেন ওটা পেয়ে। জিন্নি আর হারমায়োনি, হ্যারি আর রনকে দিলেন কুইডিচ ওয়ার্ল্ড কাপের টিকিট। যা ওরা নিজেরা গিয়ে কিনে এনেছিলেন।
‘আমরা জানি তোমরা দুজনেই গত কয়েকবছর ধরে এটা দেখার ভাবনা চিন্তা করছিলে,’ হারমায়োনি বললেন, রন আর হ্যারি একে অপরকে অভিনন্দন জানালেন। ‘কিন্তু আগেভাগে টিকিট কেনার কথাটা কখনোই তোমরা ভাবোনি। ওখানে মোট আটটা টিকিট আছে। চাইলে পুচকেগুলোকে নিয়ে যেতে পারো। ওদের ভালই লাগবে ব্যাপারটা। তোমাদের স্ত্রীদেরও ভালো লাগবে, অবশ্য যদি সঙ্গে নিয়ে যাও। সেটা তোমাদের ইচ্ছের ওপর নির্ভর। যা খুশী করতে পারো, আমাদের তরফে কোন চাপ নেই।’
কথাগুলো কতটা রন বা হ্যারির কানে গেল সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে কারণ ওরা তখন মেতে উঠেছেন কাপে কিরকম দল খেলবে সে নিয়ে আলোচনায়।
জেমস নিজের উপহারের মোড়কটা খুলে দারুন অবাক হলো, একটা নতুন উড়ুক্কু ঝাঁটা।
‘ওয়াও,’ একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বললো। ‘থান্ডারস্ট্রীক! মাম, ড্যাড তোমরা আমার জন্য থান্ডারস্ট্রীক কিনে এনেছো?’
‘হ্যাঁরে,’ হ্যারি ধীরে ধীরে বললেন, ‘আমি জানি তুই ঝাঁটা নিয়ে ঊড়তে গিয়ে যথেষ্ট সমস্যায় পড়েছিস। আমি জ্যানের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি যে তুই ইদানীং ভালোই উড়তে শিখে গেছিস। আমার মনে হলো তোর নিজের একটা ঝাড়ু থাকা দরকার। স্কুলেরগুলো খুবই পুরোনো। ধীর গতির, ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রনের উপযোগি নয়। এটা ব্যবহার করলেই তুই ফারাকটা বুঝতে পারবি।’
‘অবশ্য যদি তুই ওটা ব্যবহার করতে না চাস,’ জর্জ জানালেন,’ তুই টেডের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারিস। ওর নিম্বাস ঝাড়ুটাতো ফ্লবারওয়ার্ম মতোই শ্লো। যদিও ওটার একটা অ্যান্টিক ভ্যালু আছে।‘
টেড একটা কাগজ পাকিয়ে সোজা জর্জের মুখে ছুঁড়ে মারলো।
জেমসের র্যালফের জন্য খারাপ লাগছিল। ছুটির দিনে ব্যবসার কাজে ট্যুরে যেতে হবে এই খবরের পর ওর বাবার দিক থেকে আর কোনো খবরই আসেনি। র্যালফ এই ভাবনায় পাত্তা না দেওয়া ভঙ্গী করে বলেছে ওর ড্যাড সম্ভবত উপহারটা স্কুলের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। ওরা দুই বন্ধুই অবাক হয়ে গেল যখন জিন্নি একটা ছোট্ট প্যাকেট র্যালফের হাতে তুলে দিলেন।
‘এটা তেমন বড় কিছু নয়, তবু আমাদের মনে হয় এটা তোমার কাজে লাগবে,’ জিন্নি হেসে বললেন।
র্যালফ মোড়কটা খুললো। একটা অতি পুরানো পাতার কোনা দুমড়ে যাওয়া জীর্ণ বই। মলাটের ওপরের লেখাগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঝাপসা হয়ে গেছে। নাম অ্যাডভ্যান্সড পোশন-মেকিং।
‘এটা একজন নামজাদা স্লিদারিনের সম্পত্তি ছিল। আশা রাখছি তুমিও একদিন সেরকম হবে,’ হ্যারি বললেন শান্ত আবেগমাখা কন্ঠে। ‘আমি ভেবেছিলাম ওটা হারিয়ে গেছে। হঠাৎ কয়েক সপ্তাহ আগে ওটা খুঁজে পাই। তুমি এখানে আসার আগে পর্যন্ত ভেবে পাচ্ছিলাম না ওটা নিয়ে কি করবো। তারপর মনে হলো এটা তোমার কাছেই থাকা উচিত। প্রফেসর স্লাগহর্নকে খবরদার বইটা দেখিয়ো না। ওটাকে সহায়ক বই হিসাবে ব্যবহার কোরো।’
র্যালফ সাবধানে বইটার পাতা উল্টিয়ে দেখলো। মার্জিনের ফাঁকা অংশগুলো হাতে লেখা তথ্য এবং আঁকাতে ভর্তি। ‘এসব নোট কে করেছেন?’
হ্যারি উত্তর দিলেন, ‘সেটা কোন বিশেষ ব্যাপার নয় জানার জন্য। তুমি ওনাকে চেনো না। বইটার যত্ন নিও, এবং অতি সাবধানে ভেবে চিনতে ওটার তথ্য ব্যবহার কোরো। কিছু কিছু জায়গায় লেখা যদিও একেবারেই ঝাপসা হয়ে গেছে। তাসত্বেও একজন ভাল স্লিদারিন সদস্যর কাছেই ওটা যাচ্ছে বলেই আমার ধারণা। হ্যাপি ক্রিসমাস র্যালফ।’
র্যালফ হ্যারি আর জিন্নিকে ধন্যবাদ জানালো। ও ভালোমতই চমকে গেছে ওকে আর বইটাকে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে। এটা বুঝতে পেরেছে বইটা যতটা রহস্যময় ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। জিন্নির কাছে থেকে একটা কাপড়ের টুকরো নিয়ে তাতে জড়িয়ে বইটাকে নিজের ট্রাঙ্কে ঢুকিয়ে রাখলো।
জেমসের খুসীর মাত্রা বেড়ে গেল নেভিল আর লুনা লাভগুড বিকেলবেলায় এসে যেতেই। বেশ কয়েকমাস ধরে ওদের মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছে। যদিও জেমস শুনেছে ওর মাম, অ্যান্ড্রোমিডা টঙ্কসকে বলছেন যে এর পরিণতি কিছুই হবে না। জেমস জানেনা ওর মাম কি ভাবে এটা ধারণা করলেন, কারণ ও এই ব্যাপারে মামের সঙ্গে একমত। নেভিল আর লুনাকে স্বামীস্ত্রীর বদলে ভাইবোন বলেই মনে হয় জেমসের।
ডিনারের পর, রনের মা ফায়ারপ্লেসের পথ ধরে সকলকে ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য উপস্থিত হলেন। জানালেন, ‘আমরা চার্লির সঙ্গে এখানে দারুন আনন্দ মাখানো একটা সময় কাটাচ্ছি। প্রাগ শহরটা অসাধারণ। এই যে ছেলেরা শোন, তোরা একটু তোদের বাবার সঙ্গে কথা বলিসতো। এখানকার মাগল নির্মিত বাড়ি ঘর স্থাপত্য দেখে উনি একেবারে মোহিত হয়ে গেছেন। আরো কয়েক সপ্তাহ এখানে থাকবেন বলে মনস্থির করেছেন। মন্ত্রকের কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর ওর মতিগতি বোঝাই দায়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছেলে মেয়ে থাকাটা মোটেই ভালো নয় বাপু। এরপর কি ভাবে যে আমার নাতিপুতিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবো কে জানে?’
প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য হারমায়োনি জানতে চাইলো, ‘চার্লি, ক্লেয়ার আর ওদের ছেলেরা কেমন আছে?’
‘ভালোই আছে। যদিও চার্লি মাঝে মাঝেই পুঁচকে হ্যারল্ড আর জু্লসকে নিজের কাজের জায়গায় নিয়ে যেতে চায়। বোঝেও না ওই সব ভয়ানক প্রানীগুলোকে দেখে বাচ্চাগুলো দুঃস্বপ্ন দেখবে।’
জেমস ওর তুতো ভাই হ্যারল্ড আর জুলসের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথাবার্তা বলেছে। আর তার থেকে ওর ধারণা হয়েছে, ড্রাগন দেখে ওরা যতটা না দুঃস্বপ্ন দেখবে তার চেয়ে ওদের দুষ্টুমির চোটে উলটে ড্রাগনগুলোই পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।
ওইদিন রাত বেশ খানিকটা বাড়তেই বাড়ির অনেকেই শুতে চলে গেল। জেমস আর র্যালফকে দেখা গেল লুনা লাভগুডের সঙ্গে বসে আছে ফায়ারপ্লেসের কাছে। উনি ওদের শোনাচ্ছেন উনার সর্বশেষ অভিযানের গল্প। হাইল্যান্ড পাহাড়ে গিয়েছিলেন উমগুবুলার স্ল্যাস কিল্টারের খোঁজে।
‘ইতিবাচক কোনো প্রমাণ পাইনি,’ উনি জানালেন, ‘কিন্তু ওদের বিচরণের ক্ষেত্রর একটা বিরাট এলাকা খুঁজে পেয়েছি। ওদের খাদ্য তালিকায় ব্লাস্টার ওয়ারম্পস এবং ফিগলস থাকে। ফলে খুব সহজেই ওদের মলের গন্ধ থেকে ওদের চলার পথ খুঁজে পাওয়া যায়। গন্ধটা পিপারমিন্ট ধরনের। মোটেই খারাপ না।’
‘আন গ্লুবুলাস……স্ল্যাস কিলার্স?’ র্যালফ বলার চেষ্টা করলো।
‘কাছাকাছি হয়েছে,’ লুনা নম্রভাবে বললেন। ‘ওরা একধরনের ওড়ার শক্তিহীন শিকারী পাখী। যাদের সঙ্গে দূরবর্তী সম্পর্ক আছে হিপ্পোগ্রিফ আর অক্টোগেটরদের। আমি ওদের পথ চলা অনুসরন করে ওদের মলের নমুনা নিয়ে এসেছি। গন্ধটা শুঁকে দেখার ইচ্ছে হচ্ছে নাকি?’
‘লুনা,’ জেমস বললো, সামনের দিকে একটু ঝুঁকে আর গলার স্বর যতটা সম্ভব নিচু করে, ‘আমি কি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি? আমার মনে হয় না আর কেউ এটার ব্যাপারে জানে।’
‘আর কেউ যে ব্যাপারে জানে না আমি সেই সব ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ বলতে পারো,’ লুনা বললেন।
‘না মানে, আমি চাই যে এটা গোপন থাকুক।’
‘ওহ,’ লুনা বললেন মুখটাকে সামান্য গম্ভীর করে। জেমস চুপ করে থাকলো, লুনা সেটা লক্ষ্য না করে মৃদু হাসলেন। জেমস ভেবে দেখলো লুনার সঙ্গে কথা বলার এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর পাওয়া যাবে না, বলেই ফেলি।
‘এটা স্ল্যাস কিল্টার বা র্যাক্সপ্রাঊট বা ওই ধরনের কিছুর ব্যাপার নয়, সত্যি বলতে কি এটা আপনার ড্যাডের জন্য অনেক বেশী উপযুক্ত একটা বিষয়। কিন্তু আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে আপনিও এর উত্তর জানেন। আচ্ছা আপনি … অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্স আর মারলিন অ্যাম্ব্রোসিয়াসের বিষয়ে কি জানেন?’
জেমসের দেখা একমাত্র মানুষ হলো লুনা যিনি কখনও কোনো কিছুতেই চমকে যান না। আগুনের দিকে দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘হ্যাঁ ঠিকই বলেছ এটা আমার আওতার ব্যাপার নয়। আমার ড্যাডের সারা জীবনের একটা হবি ওই বিষয়টা। অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্স ছিলেন একজন ইতিহাসবিদ যিনি মারলিনাসের জীবনের শেষদিনগুলো এবং প্রতিশ্রুত প্রত্যাবর্তনের কথা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। একটা এমন বিষয় যা নিয়ে কয়েক শতক ধরে প্রচুর প্রচুর জল্পনা কল্পনা হয়ে চলেছে, জানো আশা করি।’
‘হ্যাঁ,’ জেমস উত্তর দিলো, ‘আমরা জানি। আমরা মারলিনাসের বিষয়ে এবং ঐ প্রতিশ্রুত প্রত্যাবর্তনের বিষয়েও পড়েছি। অবাক হচ্ছি শুধু এটা ভেবে যে, ওই ব্যাপারটা আদতেই কি সম্ভব? যদি সম্ভব হয় তাহলে কি ভাবে?’
লুনাকে একটু চিন্তিত দেখালো, ‘হুম, আমার বাবা এখানে উপস্থিত থাকলেই ভালো হতো। এ বিষয়ে উনি দিনের পর দিন কথা বলে যেতে পারেন। বেলফাস্টে অল্টারনেটিভ ম্যাজিক্যাল পাবলিশার্সদের এক সমাবেশে এটা উনি একবার বলেছেন। যদি আমার ভুল না হয় বক্তৃতার বিষয় ছিল মারলিনাস ষড়যন্ত্রের প্রয়োগ পদ্ধতি এবং তত্ত্বগত খামতি। সাড়ে তিনদিন ধরে টানা বলে গিয়েছিলেন, তারপর মঞ্চের ওপরেই ঘুমিয়ে পড়েন। আমার তো মনে হয় উনি আরো আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, কেঊ সেটা বুঝতেও পারেনি। উনি একজন সাঙ্ঘাতিক রকমের ঘুমের মধ্যে কথা বলা মানুষ। নাইটগাঊন পড়া অবস্থাতেই উনি বেশিরভাগ বক্তৃতাগুলো দিয়েছেন। বেশীরভাগ মানুষ এটাকে পাগলামো ভাবলেও আমার মতে এটা একধরনের মাল্টি টাস্কিং। একই সঙ্গে ঘুমানো এবং বক্তব্য রাখা!’ বাবার প্রতি ভালোবাসার ছোঁয়া মাখানো ছিল শেষ কথাটায়।
জেমস জানে বেশী সময় নেই ওর হাতে, জর্জ বা যে কেউ এসে যেতে পারে। মাম বা ড্যাড এসে গেলে তো সব কেঁচিয়ে যাবে। ‘লুনা আপনার বাবার কি মতামত এ বিষয়ে? মারলিনের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা বিষয়ে উনি কি বলেন?’
‘অবশ্যই উনার কিছু নিজস্ব মতামত আছে। একশোর বেশী তত্ব আছে এ নিয়ে। উনি আশায় আছেন যে সেদিনটা পর্যন্ত উনি বেঁচে থাকবেন। তবে উনি নিশ্চিত নন যে ফিরে আসা মারলিন ঠিক কি ধরনের জাদুকরদের তালিকায় থাকবেন। ভালো না খারাপ ? উনি দ্য কুইব্লার এ বেশ কিছু নিবন্ধ লিখেছিলেন তিনটি রেলিকের বিষয়ে। একশো গ্যালিয়ন পুরষ্কার ঘোষণাও করেন কেউ যদি ওগুলোর বিষয়ে কোন প্রামান্য তথ্য দিতে পারে, এই মর্মে।’
জেমসের লুনাকে থামানোর ইচ্ছে নেই তবু জানতে চাইলো, ‘তিনটে রেলিক মানে?’
‘ওহ, আমি ভেবেছিলাম তোমরা এ বিষয়ে আগেই পড়েছো?’
র্যালফ বললো, ‘আমরা পড়েছি এ বিষয়ে, তবে রেলিক তিনটে কি এ নিয়ে কোন উল্লেখ পাইনি। ওখানে শুধু লেখা ছিল মারলিন মানুষদের জগত ত্যাগ করছেন এবং ফিরে আসবেন যেদিন ওর উপযুক্ত ক্ষেত্র পুনরায় তৈরী হবে, এই জাতীয় কিছু।’
‘আরে ওটাই তো আসল কথা, বুঝতে পারোনি বোধ হয়?’ লুনা বললেন বিজ্ঞভাব সহকারে। ‘ওই রেলিকগুলোইতো দিক নির্দেশ করবে সঠিক সময় হয়েছে না হয়নি তার। মারলিনের তিনটি ম্যাজিক্যাল জিনিস এর জন্য দরকার। ওনার সিংহাসন, ওর পোষাক এবং ওর জাদু লাঠি। যেগুলোর দায়িত্ব উনি দিয়ে গিয়েছিলেন অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্সকে। ভবিষ্যৎবানী অনুসারে “হল অফ এল্ডারস ক্রসিং” নামক একটি জায়গায় ওই তিনটে বস্তুকে একসঙ্গে নিয়ে আসলে মারলিন ফিরে আসবেন ওগুলোর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য।’
জেমস ঢোক গিললো। ওর মনে গেল রহস্যময় দ্বীপের গেটে লেখা ছিল নামটা “হল অফ এল্ডারস ক্রসিং”। ওর হৃদপিণ্ড ধকধকিয়ে উঠলো, ও নিশ্চিত লুনা ওটার আওয়াজ শুনতে পেলেন। চেষ্টা করলো নিজের উত্তেজনা দমানোর। ‘মারলিনের তিনটি রেলিক গেল কোথায়?’
‘কেউই সেটা নিশ্চিতভাবে জানেনা,’ লুনা হাল্কা স্বরে উত্তর দিলেন। ‘যদিও আমার বাবা এ বিষয়ে কিছু যুক্তিগ্রাহ্য তত্ব খাড়া করেছেন। উপকথা অনুসারে মারলিনের পোশাকটি তৈরী করা হয়েছিল এমন বস্তু দিয়ে যাতে ওটা কোনো দিনই নষ্ট না হয়। যা নাকি পরবর্তী সময়ে জাদু জগতের প্রথম রাজা ক্রীগলের মরদেহকে জড়িয়ে কবর দেওয়া হয়েছিল। আফসোসের ব্যাপার হলো কবরটা যে কোথায় সেটাও কারো জানা নেই। যারা জানতেন তাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এর গোপনতা চিরদিনের জন্য স্থায়ী হয়ে গেছে।’ র্যালফ আচমকাই শিহরন অনুভব করলো। লুনা বলতে থাকলেন, ‘মারলিনের সিংহাসন বংশ পরম্পরায় মাগলদের রাজাদের কাছে গচ্ছিত থেকেছে মহান জাদুকরের ফিরে আসার অপেক্ষায়। তারপর সেটাও কালের কুয়াশাজালে কোথায় যেন অন্তর্হিত হয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন ষোল শতকের এক উইজার্ড রাজা ওটা খুঁজে পান এবং সেটা এখন জাদু মন্ত্রকের কোন এক স্থানে আছে। ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রীজ এর অগণিত ভল্টের কোন এক জায়গায়। এবার তিন নম্বর।’ লুনা চোখ কুঁচকে একটু ভেবে নিলেন, ‘মারলিনের স্মৃতি চিহ্নগুলির মধ্যে সেরা, ওনার জাদু লাঠি। সেই সময়ে উইজার্ডরা লাঠি ব্যবহার করতেন এখনকার মতো জাদুদন্ডের বদলে। লম্বা একটি লাঠি যা উচ্চতায় জাদুকরের সমান। মারলিনেরটা বানানো হয়েছিল এক কথা বলা নাকলঊড গাছের গুড়ি থেকে। বলা হয়ে থাকে উনি ওর লাঠির সঙ্গে কথা বলতেন। আর এই ক্ষমতা লাঠিটাকে দিয়ে ছিল এক ড্রায়াড। অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্স ওই জাদু লাঠি নিজের কাছে রেখে দেন। মারলিন ফিরে আসলে নিজে ফিরিয়ে দেবেন এই আকাঙ্ক্ষায়। ওটাকে লুকিয়ে রাখেন। কোথায়? সেটাও জানা যায় নি। উনি মারা যান ব্যাস সব তথ্যও হারিয়ে যায় উনার সঙ্গে সঙ্গে।’
র্যালফ চাপা গলায় বললো, ‘ওয়াও।’
‘কিন্তু তবুওতো কেউ ওই তিনটে রেলিক সংগ্রহ করতেই পারে। এখন প্রশ্ন হলো ওই হল অফ এল্ডারস ক্রসিংটা কোথায়?’ জেমস জানতে চাইলো।
লুনা উত্তর দিলেন, ‘একই কথা বলতে হচ্ছে এটাও কেউ জানে না। অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্স এর উল্লেখ করে গিয়েছিলেন কারণ তার সময়ের পাঠকেরা জায়গাটা চিনতো। বা বলা যেতে পারে ওটা ছিল খুব পরিচিত একটা জায়গা। কিন্তু সেটা ওই সময়ের ব্যাপার। এখনকার যুগে যার কোন হদিশই এই সময়ের মানুষেরা জানে না।’
‘কিন্তু আপনার বাবাতো ভাবেন যে মারলিনাসের প্রত্যাবর্তন সম্ভব? তিনিতো মনে করেন এটা হতেই পারে। তাই না?’ জেমস বললো।
এই প্রথম লুনার মুখটা গম্ভীর দেখালো। জেমসের দিকে তাকালেন। ‘আমার বাবা অনেক রকম জিনিষের ব্যাপারেই বিশ্বাস করেন জেমস। যেগুলো যুক্তিগ্রাহ্যভাবে বাস্তবে নেই। উনি বিশ্বাস করেন মারলিন ফিরে আসবেন। উনি বিশ্বাস করেন নারগেল ওয়ারটসের নিরাময় ক্ষমতা আছে। উনি এটাও বিশ্বাস করেন নিঃশ্বাস ফেলে এমন ঝরনার অস্তিত্বে। বিশ্বাস করেন মরডমাঙ্কস নামের এক জাতীয় আধামানব প্রজাতির সভ্যতার বিষয়ে যারা মাটির নীচে বসবাস করে। আমি বলতে চাইছি যে আমার বাবা বিশ্বাস করেন বলেই যে সব সত্যি হতে হবে তার কোনো মানে নেই।’
জেমস কিছুটা হতাশার সুরে বললো, ‘হ্যাঁ সেটা বুঝতে পারছি?’
লুনা বলতে থাকলেন, ‘আজ অবধি কোন উইজার্ড মৃত্যুকে জয় করতে পারেন নি। অবশ্য অনেকেই মৃত্যুকে আটকে রাখতে পেরেছেন অনেকটা সময় ধরে। তার জন্য তারা যেমন কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটিয়েছেন তেমনি শয়তানি পথেও হেঁটেছেন কেউ কেউ। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী আজ পর্যন্ত কোন একজন জাদুকর মৃত্যু ঘটার পর ফিরে এসে নিজের অভিজ্ঞতার বিবরন দিতে সক্ষম হননি। এটাই মরণশীলতার নিয়ম। একটাই জন্ম এবং একটাই মৃত্যু।’
জেমস মাথা নাড়লো, ওর মাথাতে আর কোনো কথাই ঢুকছিল না। মনে এখন ভাবনার ঝড়। ইতিমধ্যে জিন্নি এসে দুই বন্ধুকে শুতে পাঠিয়ে দিলেন।
মিসেস ব্ল্যাকের পর্দা ঝোলানো ছবি পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে র্যালফ জিজ্ঞেস করলো, ‘তাহলে, তুই কি ভাবছিস ? এখনও কি তোর মনে হচ্ছে একটা বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে মারলিনের বিষয়টা নিয়ে?’
জেমস ইতিবাচক ঘাড় নেড়ে বললো, ‘অবশ্যই। ডিফেন্স এগেইন্সট দ্য আর্টস এর প্রথম ক্লাসের দিনটা মনে আছে? যখন প্রফেসর জ্যাক্সন প্রফেসর ফ্র্যাঙ্কলিন এর সঙ্গে কথা বলতে এলেন? ওরা দুজনেই সামনের দিকটায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সহসাই ভুডু কুইনের আবির্ভাব হলো এবং উনি জানালেন ওদিকে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে অপেক্ষা করছে প্রফেসর জ্যাক্সনের জন্য। মনে পড়ছে?’
‘হ্যাঁ মনে পড়েছে।’
‘ঠিক আছে। তাহলে আশা করছি তুই এটাও লক্ষ্য করেছিস যে প্রফেসর জ্যাক্সন একটা স্যুটকেস সব সময় নিজের কাছে আগলে রাখেন? আমি ওটার ভেতরটা দেখেছি। কয়েক ফুট দূরে কিছু সময়ের জন্য ওটা আমার সামনে একটু সময়ের জন্য খোলা অবস্থায় ছিল। আমি দেখেছি ওটার ভেতরের একটা কালো কাপড়ের বান্ডিল আছে। আমি দেখছি এটা দেখে জ্যাক্সন এমন ভাবে আমার দিকে তাকালেন যে পারলে আমাকে ভস্ম করে দেবেন।’
জেমস দরজা খুললো, র্যালফ নিজেকে খাটে প্রায় ছুঁড়ে দিলো। ‘তো? আমি ঠিক বুঝলাম না?’
মনে করে দ্যাখ আমি তোকে কি বলেছিলাম ওইদিন রাতে ড্যাড আর প্রফেসর ফ্রাঙ্কলিন এর আলোচনার বিষয়ে ? যা আমি শুনেছিলাম অদৃশ্য পোশাকের আড়াল থেকে। ফ্র্যাঙ্কলিন বলেছিলেন উনি নজর রাখছেন জ্যাক্সনের দিকে। উনি এটাও বলেছিলেন যে এই অ্যান্টি অরোর প্রোপাগান্ডাটার পুরো ব্যাপারটার সঙ্গে জ্যাক্সন জড়িয়ে আছেন। এবার ঢুকলো কিছু মাথায়?’
র্যালফ ভুরু বিষ্ফারিত করে ভাবার চেষ্টা করলো, ‘ ঠিক ঠাক করে আমি বলতে পারছি না। আসলে আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না মাগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের চক্রান্তে উনি আছেন। হ্যাঁ মানতেই হবে উনি কঠোর প্রকৃতির মানুষ, কিন্তু মানুষটা খারাপ নন।’
‘র্যালফ এটা আমিও ভেবেছি। কিন্তু বুঝতে পারছিস কি ওই স্যুটকেসে কি আছে বলে আমি ভাবছি?’ আমার মনে হচ্ছে ওটা তিন রেলিকের একটা! ওটা মারলিনের পোষাক! উনি ওটাকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন। যতদিন না বাকি রেলিক দুটো জোগাড় হয়।’
র্যালফের চক্ষুদ্বয় বিস্ফারিত হলো। চাপা ফিসফিসে স্বরে বললো, ‘না! এ হতেই পারে না! মানে বলতে চাইছি যে প্রফেসর জ্যাক্সন…!’
জেমস নিজের ব্যাকপ্যাক হাতড়াতে হাতড়াতে বললো, কেবলমাত্র এটাই নয়।’ জ্যানের দেওয়া ডেইলি প্রফেটের কপিটা বার করে আনলো যেটাতে হ্যারি পটারের আগমনের দিনে হওয়া বিক্ষোভের খবর ছাপা হয়ে ছিল। ‘এটা দ্যাখ। এতদিন এটা আমার ব্যাগের ভেতরেই ছিলো। জানিনা কেন রেখেছিলাম। সে যাই হোক শেষ পাতার এই খবরটা পড়।’ জেমস আঙ্গুল দিয়ে দেখালো সেঈ খবরটাকে যেটায় জাদু মন্ত্রকের ভেতরে ধরা পড়া চোরদের কথা লেখা হয়েছে। যারা কিছুই চুরি করেনি। র্যালফ ধীরে ধীরে ওটা পড়লো তারপর জেমসের মুখের দিকে তাকালো, চোখ আবারো বিষ্ফারিত।
বললো, ‘এটা থেকে জানা যাচ্ছে ওরা ঢুকেছিল ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রীজ এর ভেতর। তোর কি মনে হয় ওরা মারলিনের সিংহাসন চুরি করতে এসেছিল?’
চিন্তামগ্ন গলায় জেমস জবাব দিল, ‘হতেও পারে। কিন্তু আমার সেটা মনে হয় না। আসলে ওদের ভাড়া করা হয়েছিল ভুল ভাবনা ভাবানোর জন্য। খবর অনুসারে ওই তিনজনের কারোরই বিশেষ অপরাধের রেকর্ড নেই, তাই তো? ওদের পক্ষে সম্ভবই না মন্ত্রকের ভেতর ঢোকা। নিশ্চিতভাবেই আমার মতে এটা একটা ধোঁকা দেওয়ার প্ল্যান। ওদের কার্যকলাপে যখন সবাই ওদের দিকে মনোযোগ দিয়েছে আসল পার্টি অন্য কোন জায়গা থেকে সিংহাসনটা হাতিয়ে চম্পট পগাড় পাড়।’
‘কিন্তু উনারা তো জানিয়েছেন কিছুই চুরি হয়নি,’ র্যালফ বললো পুনরায় খবরটার দিকে তাকিয়ে।
‘তোর কি মনে হয়, ওরা কি স্বীকার করতে চাইবেন যে মারলিনের সিংহাসন চুরি হয়ে গেছে? বুঝে দ্যাখ এই সাঙ্ঘাতিক খবরটা কিন্তু প্রায় ডার্ক ম্যাজিকের সমান। কারণ শত শত বছর ধরে শয়তান উইজার্ডরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মারলিনকে ফিরিয়ে আনার, ওই রেলিকগুলো একত্র করে।
তারপর ধর,’ জেমস চেষ্টা করলো লুনার কথাগুলো মনে করার, ‘যদি ওটা সত্যিই কোন এক ভল্টে লুকানো থাকে ষোল শতক থেকে তাহলে হয়তো মন্ত্রকের লোকেদেরই জানা নেই ওটা ঠিক কোথায় আছে। বা আদপেই আছে কিনা সেটাও হয়তো জানে না। ওরা হদিশ করবেন কি করে যদি এক আধটা জিনিস এদিক ওদিক হয়ে যায়? লুনা কি বললেন মনে নেই ? অগণিত ভল্ট।’
‘তার মানে,’ র্যালফ নিবন্ধটা পুনরায় পড়তে পড়তে বললো, ‘কিছু মানুষ বা কেউ তিনজন গুন্ডাকে ভাড়া করেছিল মন্ত্রকে ঢোকার জন্য। একটা হইচই বাধানোর জন্য। যে সুযোগটা নিয়ে আসল চোরের দল মারলিনের সিংহাসনটা নিয়ে পালাতে পারে। আর ওই আসল চোরেরাই ওই তিনজনকে কথা বলতে না পারার মন্ত্রে আচ্ছন্ন করে দেয়। যাতে সব দোষের ভারটাও ওদের কাঁধেই চেপে যায়। তাই বলছিস তো? বেশ ভাল যুক্তি। কিন্তু মারলিনের সিংহাসনের মত একটা জিনিস লুকিয়ে রাখবি কোথায়? এই ধরনের ডার্ক ম্যাজিক যুক্ত জিনিসগুলোর একটা প্রভাবতো আছেই তাই না? মানে বলতে চাইছি যে তোর ড্যাড বা বাকি অরোরেরা কি সেই জাদু প্রভাবটাকে ট্র্যাক করতে পারবেন না?’
‘হ্যাঁ ঠিকই বলছিস তুই,’ জেমস সম্মতি জানালো সংশয় সহকারে, ‘ওরা ওটাকে হয় লুকিয়ে রাখবে সভ্য জগতের নাগালের বাইরে অথবা অদৃশ্য করে রাখবে প্রচুর পরিমানে ডিশইলিউসনমেন্ট ও সিক্রেসির মন্ত্র দিয়ে। যার নাগাল পাওয়া অতি অভিজ্ঞ উইচ বা উইজার্ডের পক্ষেও মুস্কিল। ওদের প্রয়োজন একটা এমন জায়গা যেটা অতি সুরক্ষিত এবং অতীব গোপন , যেমন …’ জেমস থেমে গেল, মনে হচ্ছে ও ধরতে পারছে ব্যাপারটা। ওর মুখ হাঁ হয়ে গেল সেটা বুঝে, চোখে বিস্ময়ের ছাপ।
‘আরে কি হলো?’ র্যালফ জানতে চাইলো। জেমস তাকালো ওর দিকে, খবরের কাগজটা নিলো। সামনের পাতায় গিয়ে কিছু একটা দেখলো।
প্রায় দমবন্ধ কন্ঠস্বরে বললো, ‘এটা দ্যাখ! আমরা যেদিন স্কুলে প্রথম যাই তার আগের দিন রাতে হানাদারির ঘটনাটা ঘটেছিল! মনে পড়ছে আমরা লেকের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলাম? আমি লেকের পাড়ে একটা নৌকায় কোনো একজনকে দেখেছিলাম!’
‘হ্যাঁ’, র্যালফ চোখ কুঁচকে বললো, ‘মনে পড়েছে। পরের দিন যখন আমেরিকানরা এলো তুই মাদাম ডেলাক্রয়কে দেখে মনে করলি উনিই ছিলেন ওই নৌকায়। আর আমি ভাবলাম তোর মাথার স্ক্রূ ঢিল আছে।’
জেমস ওর কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে বললো, ‘ আমিও পরে ভেবে নিয়েছিলাম ওটা উনি হতেই পারেন না। কারণ আমি লেকে যাকে দেখেছিলাম তার বয়স অনেক কম। যদিও দুজনের মধ্যে মিলটা যথেষ্টই শিহরন জাগানো। জানিস ওই নৌকাটাকে আমি কোথায় দেখেছিলাম? ঠিক সেই জায়গায় যেখানে আমি আর জ্যান ওই দ্বীপটাকে খুঁজে পেয়েছিলাম ! রহস্যময় দ্বীপ! এখন নিশ্চিত যে ওটা মাদাম ডেলাক্রয়ই ছিলেন!’
‘সেটা কি করে সম্ভব?’ র্যালফ জানতে চাইলো। ‘উনি তো পরেরদিন এসেছেন।’
আল্মা আলেরনের ভোজসভায় প্রফেসর ফ্রাঙ্কলিন মাদাম ডেলাক্রয় সম্বন্ধে কি বলেছিলেন সেটা এবার জেমস বললো র্যালফকে। ‘ওটা ছিল উনার প্রতিরুপ। উনি নিজের প্রতিরুপকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ওই দ্বীপে নিজস্ব বিশেষ ক্ষমতা বলে। আর এই কারনেই প্রফেসর ফ্রাঙ্কলিন, “মাদাম নিজের চেয়ে কম বয়সের প্রতিরুপ যেখানে খুশী পাঠাতে পারেন” কথাটা বলামাত্র ডেলাক্রয় রেগে গিয়েছিলেন। ’
র্যালফের সংশয় এখনো কাটেনি। ‘কিন্তু কেন? কেন উনি লেকের জলে ভেসে বেড়াচ্ছিলেন?’
যতটা সম্ভব স্বর নিচু রেখে জেমস বললো, ‘তুই কি কিছুই বুঝতে পারিস না। যে বা যারা মারলিনের সিংহাসন চুরি করবে তারা ওটা লুকিয়ে রাখতে চাইবে এমন কোন জায়গায় যেটার বিষয়ে কেউ ভাবতেও পারবে না। আর হগওয়ারটসের চেয়ে সুরক্ষিত জায়গা আর কি হতে পারে? আলাদা করে বিশেষ কোন লুকানোর জায়গা বানানোর কি দরকার যদি সেটা নাগালের মধ্যেই থাকে। আর সেখানে যাতায়াতে কোন সমস্যাই না থাকে। উনি ওটাকে হগওয়ারটসের এলাকায় ওই দ্বীপেই লুকিয়ে রেখেছে। আর ওই নিষিদ্ধ অরন্যে এত রকমের জাদু আছে যে ওইখানে সিংহাসনটার প্রভাব চাপা পড়ে যাবে। ওই রহস্যময় দ্বীপটাই লুকানোর জায়গা হতে বাধ্য!’
র্যালফ জেমসের দিকে তাকিয়ে থাকলো ঠোঁট কামড়ে চোখ বড় বড় করে। তারপর এক সময় বললো, ‘ওয়াও, পুরো ব্যাপারটা এতো সাঙ্ঘাতিক এবার বুঝতে পারছি। তাহলে তুই বলছিস মাদাম জ্যাক্সনের সঙ্গে মিলে কাজ করছেন?’
‘কোনো না কোনোভাবে ওরা এ ব্যাপারে জুড়ে আছেন তো বটেই।’
‘বিচ্ছিরি ব্যাপার,’ র্যালফ বললো। ‘আমার পছন্দের তালিকায় এসে গিয়েছিলেন প্রফেসর জ্যাক্সন। কিন্তু আবারও জানতে চাইছি এর পেছনের বড় লক্ষ্যটা কি? মানে বলতে চাইছি যে লুনা বললেন মারলিনকে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব একটা বিষয়। উনি যেভাবে বললেন তাতে মনে হল একমাত্র কোন ভুতুড়ে কান্ড ঘটিয়ে ওই ব্যাপারে বিশ্বাসীরা ওকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন। একবার মারা যাওয়ার জন্য চিরকালের জন্য মরে যাওয়া। আরে জ্যাক্সন আর ডেলাক্রয়কে ওদের কল্পজগত নিয়ে সময় কাটাতে দিলে ক্ষতি কি?’
জেমস সেটা হতে দিতে পারে না। মাথা নাড়লো। ‘আমি ডেলাক্রয়ের ব্যাপারে বলতে পারব না। কিন্তু জ্যাক্সন মোটেই হাওয়ার প্রাসাদ বানানোর ব্যক্তি নন। উনি টেকনোম্যান্সির ক্লাস নেন এটা ভুলে যাস না? উনি এমন কোনো পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হতেই চাইবেন না যেটা ওর ভাবনা অনুসারে ফল দেবে না। আর একটা ব্যাপার সবাই বলছেন মারলিন মারা গেছেন। কিন্তু অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্স কোথাও বলেননি উনি মারা গেছেন, বলেছেন কি? বলেছেন উনি মানুষের জগত ত্যাগ করেছেন।’
র্যালফ কাঁধ ঝাকালো। ‘সে যাই হোক। সবই আমার কাছে ঝাপসা লাগছে।’ বলেই মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো।
‘কাম অন র্যালফ!’ পুরানো খবরের কাগজটা ওকে ছুঁড়ে মেরে জেমস বললো। ‘ওরা মারলিনকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে যাতে ওরা মাগলদের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ শুরু করতে পারে! আর এটা থামানোর দায়িত্ব আমাদের।’
র্যালফ ঘুরে শুলো, তাকালো জেমসের দিকে। ‘কি বলতে চাইছিস তুই? তোর ড্যাড হেড অরোর। তোর যদি সত্যি এ ব্যাপারে মাথাব্যাথা থাকে তাহলে উনার সঙ্গে কথা বল। এটা তো উনার দায়িত্ব। এরকম কিছুকে আটকানো। ভুল বললাম কি? যাইহোক আমরা কি করতে পারি বল দেখি?’
জেমস উত্তেজনায় ছটফট করছিল। ‘আমরা চেষ্টা করতে পারি ওদের থামানোর! এখন আমাদের কোন কথাই কেউ বিশ্বাস করবে না। আমরা চেষ্টা করবো ওই রেলিকগুলো হাতানোর। আর সেটা করতে পারলে আমদের কাছে প্রমাণ জোগাড় হয়ে যাবে!’
র্যালফ প্রায় মিনিট খানেক জেমসের তাকিয়ে থাকার পর বললো, ‘তোর কি মনে হচ্ছে না তুই একটু বাড়াবাড়ি করছিস ব্যাপারটা নিয়ে? বুঝতে পারছি যে তুইও তোর ড্যাডের পথেই হাঁটার চেষ্টা করছিস। এই জগতকে বাঁচিয়ে হিরো হওয়ার…’
‘শাট আপ র্যালফ,’ জেমস সহসাই রেগে গিয়ে বললো। ‘তোর কোনো ধারণাই নেই তুই কি বলছিস।’
র্যালফ আবার ঘুরে শুলো। ‘হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস। সরি।’ জেমস জানে ওদের ঝগড়ার পর থকে র্যালফ কখনোই খুব বেশি বাদানুবাদের পথে হাঁটে না।’
‘ঠিক আছে, আমি বুঝতে পারছি কেন ওই কথাটা বললি। কিন্তু এটা পুরো আলাদা ব্যাপার। আমি মোটেই আমার বাবার মতো হতে চাইনা, এটা জেনে রাখ। শুনতে পেলি? মারলিনকে ফিরিয়ে আনার হয়তো সত্যিই কোন পথ নেই। কিন্তু প্রোগ্রেসিভ এলিমেন্ট এর মত গ্রুপগুলো মোটেই ভাল কিছু না। যদি আমরা এটা প্রমাণ করে দিতে পারি যে ওরা একটা যুদ্ধ বাঁধানোর ছক কষছে, তাহলে অন্তত ওদের গতিবিধিটাকে থামিয়ে দিতে পারি। পারি না? আর যদি সেটা করতে পারি তাহলে সেটা করাটাই আমাদের উচিত বলে আমার মনে হয়। তুই কি আমার সঙ্গে আছিস?’
র্যালফ ফিক করে হেসে জেমসের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘অবশ্যই আছি। শুধুমুধু জাদুকর হয়ে মজা কোথায়, যদি এই পৃথিবীকে রক্ষাই করতে না পারি?’
জেমস চোখ পাকিয়ে বললো, ‘র্যালফিনেটর বাজে বকা থামা – চল এবার ঘুমানো যাক।’
র্যালফকে কথাটা বললেও জেমসের চোখে ঘুম এলো না এরপরে অনেকটা সময় পর্যন্ত। ভেবেই চললো সেইসব সুত্রগুলোর বিষয়ে যা আজ সন্ধে থেকে আলোচনার মাধ্যমে জানা গেল। এখন বিষয়টা অনেকটাই পরিষ্কার। আর এটা সত্যি হতে বাধ্য। লুনার কথা ওর পুরো বিশ্বাস হচ্ছেনা। মারলিনকে এই জগতে ফিরিয়ে আনা যাবেনা। উনি যে সব সেরা জাদুকর ছিলেন এটাতো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। অন্যান্য শক্তিশালী উইজার্ডরা যেসব বিষয়কে অসম্ভব ভাবেন সেটা উনি করতে সক্ষম এটা জেমস বিশ্বাস করে। এই ব্যাপারটাকে সহজে দূরে সরিয়ে রাখা ওর পক্ষে অসম্ভব। র্যালফের কথাটা ওকে খোঁচা মারছে। জেমস একটা পথ বানিয়ে নিচ্ছে বাবার মত হিরো হওয়ার জন্য। ও ভয় পাচ্ছে এটা ভেবে নয় যে এই ভাবনাটা মিথ্যে। বরং এটা ভেবে যে হয়তো এটাই সত্যি হয়ে যাবে। আরো অনেকটা সময় পরে যখন পুরো বাড়িটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল, অনিশ্চয়তার দ্বন্দ্ব নিয়ে জেমসও হারিয়ে গেল ঘুমের জগতে।
স্কুলে ফিরে যাওয়ার আগের দিন গ্রিমাল্ড প্লেসের ওপরতলার ঘরগুলোতে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছিল জেমস একঘেয়েমি কাটানোর জন্য। শেষ অতিথি গতকাল বিদায় নিয়েছে। র্যালফ, টেড আর ভিক্টরির সঙ্গে মন্ত্রকে হ্যারির অফিস দেখতে গিয়েছে। জেমস ওখানে অনেকবার গিয়েছে বলে আর যায়নি। তারচেয়েও বড় কারণ ও চাইছিল একা একা সব কিছু ভালো করে ভাবতে। প্রায় আধঘন্টা ধরে বিছানায় শুয়ে নানান বিষয়ে ভাবনা চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে পারচমেন্ট কাগজে হাবিজাবি নানারকম কথা লেখা ও ছবি আঁকার শেষে উঠে এসেছে ওপরতলার ঘরে। ওপরতলাটা নিঃঝুম হয়ে আছে। বরফজমা জানলা দিয়ে আসা সূর্যের আলোয় ধুলিকনা ভাসতে দেখা যাচ্ছে। বিছানাপত্র, ট্রাঙ্ক সব গোছানো হয়ে গেছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই গ্রিমাল্ড প্লেস ছেড়ে চলে যাবে সবাই। আবার ফাঁকা পড়ে থাকবে জায়গাটা। এমনকি ক্রিচারও কয়েকমাসের জন্য মারবেল আর্চে যাবে প্রধান বসত বাড়িতে। বাড়িটার প্রাচীনত্ব আর নিস্তব্ধতা ঘরগুলোতে ছেয়ে আছে কুয়াশার মতো। জেমসের নিজেকে ভুতের মতো মনে হচ্ছিল।
ড্যাড আর মামের বেডরুমটার পাস দিয়ে যাওয়ার সময় ও থমকে দাঁড়ালো। পিছিয়ে এল এক পা, দরজা দিয়ে উঁকি মারল ভেতরে। পর্দাগুলো সরানো আছে। জোরালো সূর্যালোক একটা চারকোনা আকৃতি নিয়ে ঢুকেছে ঘরে, পড়েছে হ্যারি পটারের ট্রাঙ্কের ওপর। জেমস এদিক ওদিক দেখলো কেউ আসছে কিনা, তারপর পা টিপে টিপে ঢুকে পড়লো ঘরটায়। ট্রাঙ্কটা পুরো বন্ধ করা নেই। তালা লাগানোর ব্যবস্থাও নেই। জেমস আস্তে করে ঢাকনাটা ওঠালো, দেখলো ভেতরটা। শেষবার যেখানে ছিল এখনো ওটা ওখানেই আছে, ড্যাডের ইনভিজিবল ক্লোক। ভাল করে ভাঁজ করে এক কোনায় রাখা আছে, একগাদা মোজার সঙ্গে। জেমস দরজার দিকে তাকালো, একটা অপরাধবোধ মাথা চাড়া দিচ্ছে। এটা ওর করা উচিত নয় মোটেই। একদমই না। ওর ড্যাড ব্যাপারটা জানতে পারলে একটা বিরাট ঝামেলা পাকবে। আবার এটাও হতে পারে ড্যাড ব্যাপারটা বুঝতেই পারবেন না। এই পোশাকটা সঙ্গে নিয়ে ঘোরা সম্ভবত হ্যারি পটারের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। জেমস তো মনেই করতে পারছে না ড্যাড শেষ কবে এটা পড়েছেন। এটা মোটেই ঠিক হচ্ছেনা এরকম একটা দারুন জিনিস অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকছে। জেমস নিচু হলো, ছুঁলো ওটাকে তারপর বিন্দুমাত্র নিজেকে কিছু ভাবার সুযোগ না দিয়ে ওটাকে তুলে নিলো। এবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে যেতে হবে নিজের ঘরে, কিন্তু তার আগে আর একটা জিনিস ওর চোখে পড়লো। নিঃশ্বাস চেপে ও ওটার দিকে তাকালো। বিশ্বাস করাতে চাইলো নিজেকে যে ও সেই জিনিসটাই দেখছে। ইনভিজিবল ক্লোকটার তলায় ওটা রাখা ছিল। জেমস ওটা উঠিয়ে নিতেই দেখা গেল জিনিসটাকে। খুব কম মানুষই বুঝতে পারবে ওটা আসলে কি। প্রাথমিক ভাবে ওটা দেখে একটা পারচমেন্টের টুকরো বলেই মনে হবে। বেশ কয়েক ভাঁজ করে রাখা আছে। একটা ম্যাপের মতো। এটা নিতেই হবে তা না হলে টেড লুপিন জানতে পারলে বলবে জেমস একটা গোল্ডেন চান্স মিস করেছে।
জেমস ইনভিজিবল ক্লোক আর মরাঊডার ম্যাপটা বুকের কাছে চেপে ধরে সাবধানে ট্রাঙ্কটা বন্ধ করলো। যতটা সম্ভব দ্রুত নেমে এলো সিঁড়ি দিয়ে নিজের ঘরে। অপহৃত জিনিসগুলো নিজের ট্রাঙ্কে ঢুকিয়ে রাখতে রাখতে একই সঙ্গে ওর ভেতর কাজ করছিল ভয় এবং উত্তেজনার আনন্দ। এমন একটা সময় আসবেই যখন ওর এই কাজটা ধরা পড়বে। যদিও জানে ওর ড্যাড এটা অস্বীকার করতে পারবেন না যে এই সুযোগ পেলে উনিও জেমসের মতই কাজ করতেন। সে সময় যখন আসবে তখন দেখা যাবে। তার আগে এগুলোর যথাযত ব্যবহার করে নিতে হবে। জেমসের জানা নেই ঠিক কি করবে এগুলো নিয়ে। তবে এটা বলতেই পারে আগে যে অ্যাডভেঞ্চারই আসুক না কেন এই দুটো জিনিস থাকায় ও এখন অনেকটাই শক্তিশালী মানসিক ভাবে।
স্কুলে ফিরে যাওয়ার ট্রেন জার্নিটা ছিল অতিরিক্ত রকমের একঘেয়ে আর শান্ত, এটাই হয় আনন্দের মুহূর্ত কাটিয়ে রুটিনের বাঁধাধরা জগতে ফেরার ক্ষেত্রে।
পরের সপ্তাহে জেমস আর র্যালফ বিস্তারিত ভাবে সব কিছু জানালো জ্যানকে। লুনা কি বলেছিলেন থেকে শুরু করে ওরা তার ভিত্তিতে কি মতামত খাড়া করেছে অবধি সবকিছু। জেমস এটা দেখে খুশি হলো যে জ্যান ব্যাপারটা সহজেই মেনে নিলো।
লাইব্রেরীর এক কোনার দিকের টেবিলে বসেছে তিন বন্ধু। চাপা গলায় জ্যান বললো, ‘হয়তো মাদাম ডেলাক্রয় প্রফেসর জ্যাক্সনের ওপর ইম্পেরিয়াস কার্স প্রয়োগ করেছেন?’
‘হ্যাঁ এটা হতে পারে,’ র্যালফ সমর্থন জানালো, ‘ উনি প্রফেসরকে একটা যন্ত্রের মতো ব্যবহার করছেন।’
জেমস মাথা নাড়লো। ‘ড্যাড বলেছেন ইম্পেরিয়াস কার্স ব্যবহার করা সোজা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেটাকে কার্যকরী রাখতে হলে বিশেষ ইচ্ছে শক্তির দরকার। স্কুলের একটা বছর বিরাট একটা সময় এধরনের কিছু করার পক্ষে। একই সঙ্গে শক্তিশালী জাদুকররা এই মন্ত্রকে প্রয়োগ এবং কাটানোর পদ্ধতি ভালোভাবেই জানেন। জ্যাক্সন অত সহজ টার্গেট নন এ ব্যাপারে।’
র্যালফ কাঁধ ঝাকালো এবং কিছু শিক্ষার্থীকে এদিকে আসতে দেখে ঝুঁকে নিচুস্বরে বললো, ‘সে যাই হোক আমার কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। মানে বলতে চাইছি যে, জাদুকররা সেই কোন যুগ থেকে চেষ্টা করে চলেছেন মারলিনকে ফিরিয়ে আনার, কি তাই তো? আর এখন যে সমস্ত সেরা জাদুকর বেঁচে আছেন তাদের অনেকেই মনে করেন এটা একটা গল্প কথা। প্রফেসর ফ্রাঙ্কলিন তো ডার্ক আর্টসের ক্লাসে বললেন যে সবচেয়ে প্রামান্য তথ্য অনুসারে “লেডি অফ দ্য লেক” মারলিনের সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নেন এবং ওকে বন্দী করে রেখে দেন। হয়তো এটাও উপকথা, কিন্তু তবুও উনি অন্তত বারোশো বছর আগে মারা গেছেন এবং কোন এক জায়গায় উনাকে কবর দেওয়া হয়েছে।’
জ্যান যে সব সময় একটু অদ্ভুত রকমের ভাবনার জগতে বিচরন করে এটা শুনে বললো, ‘এটাও তো হতে পারে ওনাকে ইনফেরিয়াস রুপে ফেরত আনা হলো? ওর শরীরটাকে জোম্বি বা ওই জাতীয় কিছু করে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নেইতো ওদের?’
জেমস চোখ পাকিয়ে বললো, ‘ইনফেরি আসলে মৃতদেহকে জোর জবরদস্তি করে নড়চড়া করানোর পদ্ধতি। কাউকে ইনফেরি করে কেউ বলতে চাইবে না যে সে জীবন্ত মানুষটাকে ফিরিয়ে এনেছে। তাহলে সেটা মারলিনের খুলি নিয়ে পাপেট শো দেখানোর মত কিছু একটা হবে।’
জ্যান হাতটা তুলে আঙুলগুলো দিয়ে মুখের আকৃতি করে বললো, ‘এইযে, বালকগণ – আমি মারলিন। আমি মৃত্যুর জগত থেকে ফিরে এসেছি, কিন্তু আমার হাতটা বাঁধা কেন?’
জেমস হাসি সামলে বললো, ‘বাজে বকা থামিয়ে আসল কথায় আসা যাক। হতেই পারে মারলিনের এই উদ্ভট কাহিনী আসলে উপকথা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু প্রফেসর জ্যাক্সন আর মাদাম ডেলাক্রয় এবং আর যারা এই ব্যাপারটায় বিশ্বাস করেন, সঙ্গে সঙ্গেই প্রোগ্রেসিভ এলিমেন্ট এর সঙ্গে যুক্ত তার এটা নিয়ে কাজ করে যাবেন। এমনকি যদি এটা মারলিনকে ফিরিয়ে আনতে নাও পারে তবুও ওরা এটার সুযোগ নিয়ে অন্য কিছু একটা করবেনই। আর আমরা যদি সেটা প্রমাণ করতে পারি, তাহলে…’
‘তাহলে আমরা ওদের কাজকর্মটা থামিয়ে দিতে পারবো,’ র্যালফ বললো। ‘কি তাই তো? জাদু জগতে ওদের সম্মান খর্ব করা যাবে তাই না?’
‘একদম ঠিক। আর আমরা যদি সেটা করতে পারি, আমরা ওদের অনেকটা জোরই কমিয়ে দিতে পারবো ওদের লক্ষ্য পুরনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে।’
জ্যান মাথার পেছন দিকে দুহাতের আঙ্গুলের জোর বাঁধিয়ে পেছন দিকে হেলান দিলো। ‘যা বুঝছি তাতে আমাদের কাজ হবে ওদের রেলিকগুলো হাতানো। সিংহাসনটা হাতানো আমাদের পক্ষে কঠিন, যদি সত্যিই ওটা ওই দ্বীপে লুকানো থাকে। তাহলে থাকছে পোশাকটা। আমরা জানি যে ওটা কোথায় আছে। আর যাই হোক জ্যাক্সনের স্যুটকেস আমদের কামড়ে দেবে না যদি আমরা ওটা খোলার চেষ্টা করি।’
র্যালফের মুখটা ভীত দেখালো। ‘আর যাই হোক!!! মানে অন্য …’
‘আমাদের ওটা এমন ভাবে হাতাতে হবে যাতে জ্যাক্সন জানতে না পারেন ওটা গায়েব হয়ে গেছে। যদি ধরে ফেলেন তাহলে ওরা সব চিহ্ন বেমালুম লোপাট করে দেবেন,’ জেমস বললো, চিন্তাহ্নিত মুখে। ‘কোনো ভাবে যদি জানতে পারতাম ওরা ঠিক কবে রেলিকগুলো একত্রিত করতে চাইছেন। তাহলে ওদের চেষ্টার আগেই ওগুলো হাফিস করে দেওয়ার একটা চান্স নিতে পারতাম।’
র্যালফ এবার জানতে চাইলো, ‘ওই হল অফ এল্ডারস ক্রসিংটা কোথায়?’
জেমস ভুরু ওপর দিকে তুলে বললো, ‘ আমার ভাবনা অনুসারে ওটা ওই দ্বীপটাই।’
এবার জ্যান মাথা নাড়লো। ‘নাহ, হতেই পারে না। ওই গেটের ছড়া বলছে ওটা লুক্কায়িত দ্বীপ। আর একবারে নিচের দিকে হল অফ এল্ডারস ক্রসিং নিয়ে কিছু একটা লেখা ছিল, যার অর্থ ওটা অন্য কোনো জায়গা।‘
জেমস নিজের ব্যাকপ্যাক থেকে পারচমেন্টটা বার করলো যেটাতে ও আর আর মিলে গেটের লেখাটা কপি করেছিল। ওটা বিছালো সামনে। লুনার বলা কথা গু্লোর ভিত্তিতে ছড়াটা এখন অনেক বেশী বোধগম্য মনে হচ্ছে। ওরা ওটা পড়তে শুরু করলো সঙ্গেই নিজেদের করা নোট গুলো সহ, আরো একবার।
যখন ঝকমকে শশীর আলোয় জগত করবে স্নান– শশী = চাঁদ
আমি খুঁজে পাবো লুক্কায়িত স্থান; — মানে একে কেবল মাত্র চন্দ্রালোকিত রাতেই দেখা যায়
যখন রাত্রি হবে নির্দিষ্ট নিঃঝুম– নির্দিষ্ট? একটা বিশেষ দিন বা তারিখ?
ভাঙ্গবে কি তার সেই ঘুম – মারলিনাস ঘুমাচ্ছেন? রিপ ভ্যান উইঙ্কল
ফিরে আসবে সেই আকাঙ্খার ভোর – ঘটনাটা ঘটবে রাতের বেলায়?
না হারিয়ে একটিও পবিত্র চিহ্নডোর; — পবিত্র চিহ্নডোর , তিনটে রেলিক! ওদের একত্র করতে হবে
জীবনকে ফেলে এসে, এক নতুন জীবন– অতীতের কোন একটি জীবন এসে দাঁড়াবে নতুন এক সময়ে, এটাই কি উপকথার সূত্র?
আসছে হল অফ এল্ডারস ক্রসিং এর ক্ষন – এটা কোথায়?
‘তুই ঠিকই বলেছিস,’ জেমস সম্মতি জানালো। ‘এটা পড়ে সত্যি মনে হচ্ছে এল্ডারস ক্রসিং অন্য কোন জায়গা। বা এমনও হতে পারে লুক্কায়িত দ্বীপ বদলে যাবে হল অফ এল্ডারস ক্রসিং এর রুপে, কে জানে?’
জ্যান অসম্মতির ভঙ্গীতে কাঁধ ঝাঁকা্লো, ‘ধুর্!’
র্যালফ খানিকক্ষণ ভেবে নিয়ে বললো, ‘তাতে ইতর বিশেষ বদলাচ্ছে না কিছু। ছড়াটা যা ছিল তাই থেকে যাচ্ছে। কোন এক উপকথার অংশ রুপে।’
জ্যান বেশ উত্তেজিতভাবে বললো, ‘তুইতো ওই দ্বীপটাকে দেখিস নি,’ তারপর জেমসের দিকে ঘুরে বললো, ‘তোর কি মনে হয় ওই গোটা লুক্কায়িত দ্বীপটা জন্ম নিয়েছে ওই সিংহাসনটা ওখানে রাখা হবে বলেই ?’
‘হতেই পারে,’ জেমস সম্মতি সুচক মাথা ঝুঁকিয়ে বললো। ‘ উপকথা সত্যি হোক বা নাহোক ওই জিনিসটার একটা দারুন ম্যাজিক্যাল ক্ষমতা আছে। সম্ভবত মাদাম ডেলাক্রয় ওর সঙ্গে নিজের জটিল সুরক্ষা মন্ত্র তন্ত্র জুড়ে দিয়েছেন।’
‘তার মানে যে ভাবেই হোক,’ র্যালফ বললো, ‘জ্যাক্সনের ব্রিফকেস থেকে আমাদের পোশাকটা চুরি করতে হবে। কোনো আইডিয়া?’
তিনজনেই একে অপরের মুখের দিকে তাকালো। একসময় জেমস বললো, ‘আমি একটা প্ল্যানের কথা ভাবছি। যেটার জন্য আমাদের কিছু একটা দরকার যেটা ওই পোশাকটার সঙ্গে বদলে দেওয়া যায়।’
র্যালফ বললো, ‘তুই তো বললি ওটা এক বান্ডিল কালো কাপড়, তাই না? সেরকম হলে আমার ক্লোকটা ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে আসার আগে ড্যাড আমাকে ওই উইজার্ডের পোশাকটা কিনে দিয়েছিলেন। আমার তো মনে হয় না কারো বিয়ে বা শোকসভায় যাওয়া ছাড়া ওটা আমার আর কোন কাজে লাগবে। ওটা আমার বিছানার চাদরের চেয়েও বড়।’
জেমস বললো, ‘তাহলেতো কথাই নেই। আমার মনে হয় ওটা ঠিকঠাক কাজেই লেগে যাবে। অবশ্য,’ র্যালফের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে বললো, ‘যদি না কেউ জানতে পেরে যায় ওটা তোর…’
র্যালফ কিছু সময়ের জন্য চুপ করে থাকলো তারপর তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো, ‘হুমম, বুঝলাম। আমার শত্রুর সংখ্যা খুব একটা কম নয়। আর দু একটা বেশী হলে ক্ষতি নেই।’
যে কাজ ওরা করতে যাচ্ছে সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত শত্রুদের ক্ষমতাটা কি লেভেলের সেটা জানতে পারলে র্যালফ হয়তো এটা এত সহজে বলতো না, জেমস ভাবলো। তবে এনিয়ে আপাতত কিছু বলবে না। ওর গর্ব হচ্ছিল এটা ভেবে যে র্যালফ ওর সঙ্গে সহযোগিতা করছে। যার অর্থ র্যালফ যথেষ্টই বিশ্বাস করে জেমসকে। আশা করা যায় জেমস এই ভরোসার দাম দিতে পারবে।
সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে জেমস সময়ই পেল না জ্যাক্সনের ব্রিফকেস আর জাদু পোশাক নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার। মনে হচ্ছিল প্রফেঃ জ্যাক্সন যেন জেনে গেছেন ওরা কি করতে চলেছে আর তার জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক অনেক বেশী হোম ওয়ার্ক চাপিয়ে দিচ্ছিলেন করে আনার জন্য। পাঁচটি চ্যাপ্টারের পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচশো শব্দের একটা নিবন্ধ ও লিখতে দিয়েছেন ডিসপ্লেসড ইনারশিয়া এর সঙ্গে সংযুক্ত হেক্টরস ল এর ওপর। ওদিকে প্রফেঃ ফ্রাঙ্কলিন একটা প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা নেবেন জানিয়েছেন শুক্রবার বিকেলে, ডিসআরমিং এবং ব্লকিং স্পেলের ওপর। হাতে মাত্র একটা দিন সময় পেয়েছিল তিন বন্ধু অভ্যাসের জন্য। র্যালফ বাধ্য হয়েছে একটা ফেন্সিং এর পুতুলের ওপর মন্ত্র প্রয়োগ অভ্যাস করার ক্ষেত্রে। দুঘণ্টা অভ্যাস করার পর ও সফল হলো এক্সপেলিয়ারমাস মন্ত্রটা প্রয়োগ করে পুতুলের গায়ের পোশাক একটুও না পোড়ানো বা ফুটো করার ব্যাপারে। ভাগ্যক্রমে র্যালফের দ্বৈত সমরের সাথী হলেন প্রফেঃ ফ্রাঙ্কলিন। র্যালফ কিছুটা স্বস্তি পেলো এই ভেবে যে ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় প্রফেসর অনেক সহজেই ওর ভুলভাল মন্ত্র প্রয়োগকে সামলে নেবেন। সমরকালীন সময়ে যেটা হলো সেটা দেখে অন্যদের চেয়ে র্যালফ নিজে চমকে গেল অনেকখানি। ওর এক্সপেলিয়ারমাস মন্ত্র প্রয়োগ ফ্রাঙ্কলিনের জাদুদন্ডকে ওনার হাত থেকে ছিটকে দিলো। ওটা ওপরে গিয়ে আটকে গেলো সিলিং এ, একটা তীরের মতো।
‘দারুন, মিঃ ডিডলে,’ ফ্র্যাঙ্কলিন মৃদুস্বরে বললেন নিজের জাদুদন্ডটার দিকে তাকিয়ে। ‘মিঃ পটার, একটু কষ্ট করে ওটাকে ফিরিয়ে এনে দেওয়া যাবে? ভাঁড়ার ঘরে একটা মই আছে। ’
ডিফেন্স এগেইন্সট ডার্ক আর্টসের ক্লাস শেষে র্যালফের সঙ্গে ফিরে আসার সময় জেমস আবার লক্ষ্য করলো গোঁফওয়ালা জাদুকরটা গ্লোব দেখতে থাকা জাদুকরদের ছবিটার মধ্যে থেকে ওর দিকে চেয়ে আছে। শেষ সপ্তাহ থেকে ও লক্ষ্য করে দেখেছে হলের বিভিন্ন ছবি থেকেই ওই ধরনের চোখ ওর দিকে তাকিয়ে থাকছে। সব পেইন্টিং এ এক ঘটনা ঘটছে না কিন্তু ও ভালোভাবেই চাহনি অনুভব করছে। পয়জনিং দ্য পেরাক্লেস ছবির কোনার দিকের টেবিলের কাছে থাকা মোটা জাদুকরটা, লাইব্রেরীতে যখন ওরা তিনজন জ্যাক্সনের ব্রিফকেস নিয়ে আলোচনা করছিলো, মনোযোগ দিয়ে ওদের কথা শুনতে চাইছিল বলেই মনে হচ্ছিল। ব্যাটল অফ ব্যুওর জিনিওনে ছবির ঘোড়ায় চড়া এক আরোহী আড়চোখে জেমসকে দেখছিলো যখন ও মাগল স্টাডির ক্লাসে যাচ্ছিলো। এর চেয়েও বিষ্ময়কর ব্যাপার সকালে ও যখন জ্যানের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট খাচ্ছিলো, হলের দেওয়ালে টাঙ্গানো একটা পেইন্টিং এর ভেতরে আঁকা কিং সিসিফাসের পোরট্রেট নির্লজ্জের মতো ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
জেমস কমন রুমে যাওয়ার আগে থেমে গ্লোব দেখতে থাকা জাদুকরদের ছবিটার দিকে এগিয়ে গেল। কালো গোঁফওয়ালা এবং চশমা পড়া উইজার্ডটি ওর দিকে তাকালেন কঠোর কিন্তু ভাবলেশহীন চোখে।
‘কি ব্যাপার বলুন তো?’ জেমস জানতে চাইলো, আমার পোশাক আশাক বা অন্য কিছু বিষয় কি আপনার গোলমেলে ঠেকছে? ’
ছবির জাদুকরের মুখাবয়বে কোন পরিবর্তন দেখা গেল না, জেমসের আবার কেন জানিনা মনে হলো এই মুখটা খুব চেনাচেনা ধরনের।
‘আমার কেন জানিনা আপনাকে খুব চেনা মনে হচ্ছে। আপনি কে বলুন তো?’
র্যালফ বললো, ‘তুই একটা ছবির সঙ্গে কথা বলছিস!’
‘আমি প্রত্যেকদিন একটা করে ছবির সঙ্গে কথা বলি কমন রুমে যাওয়ার সময়,’ জেমস উত্তর দিলো না ঘুরেই।
‘হ্যাঁ তা তো বলিস জানি। কিন্তু হলে টাঙানো কোন একটা ছবির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করাটা…
এটা একটু পাগলামো ধরনের বলেই মনে হচ্ছে।’
জেমস ছবিটাকে একটু বিরক্তির স্বরে আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘আমি আপনাকে কিভাবে চিনি ?’
ছবির ভেতরের আর একজন জাদুকর বললেন, ‘ইয়ং ম্যান, এই স্বরে আমরা কথা শুনতে অভ্যস্ত নই। যদি পারো একটু ভালভাবে শ্রদ্ধা সহকারে কথা বলো। আমরা তোমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়।’
জেমস কথা কানে না নিয়ে গোঁফ আর চশমাসহ জাদুকরকে দেখতেই থাকলো, যিনিও ওর দিকেই তাকিয়ে আছেন। জেমসের একবার মনে হল ওনাকে চেনা চেনা লাগার কারণ হল এই পেন্টিং এর বাকি লোকগুলোকেও প্রায় একই রকম দেখতে। কিন্তু সেটা তো একটা অদ্ভুত রকমের ব্যাপার তাই না? ওইতো একজন টাকমাথা মোটা লোক। ওর ভেতরে যে পোরট্রেটটা আঁকা আছে তিনি তো রোগা, সঙ্গেই আছে সোনালী এক গাদা দাড়ি। না যাদেরকে দেখতে পাচ্ছে তারা মোটেই একরকম দেখতে নন। কিছু বিচ্ছিরী ধরনের দেখতে মহিলাও আছেন ছবিতে। কিন্তু ওই চোখ আর মুখের ধাঁচে কি যেন একটা আছে। জেমস মাথা ঝাঁকালো। ওর অবস্থা এখন গলার কাছে এসে গিয়েও উচ্চারন করতে না পারার মতো।
‘আরে চ’তো,’ র্যালফ বললো জেমসের হাত টেনে ধরে। ‘ছবির সঙ্গে কথা পরে বলবি। আজ স্ট্রীক অ্যান্ড কিডনী নাইট , মনে আছে তো?’
ওই সপ্তাহের শেষে জেমস নিজের থান্ডারস্ট্রীক ঝাড়ু নিয়ে উড়লো। সত্যিই একেবারে অন্য রকম অভিজ্ঞতা এই ঝাড়ুতে ওড়া আর স্কুলের ব্যবহৃত ঝাড়ুতে ওড়ার মধ্যে। থান্ডারস্ট্রীকের গতি অনেক বেশি কিন্তু একে নিয়ন্ত্রন করা অনেক সহজ কারণ জেমসের ইচ্ছেমতই ঝাড়ুটা অতি সহজে এদিকে ওদিকে বাঁক নিচ্ছিলো। জেমস ভাবতে না ভাবতেই ও যা করতে চাইছে সেটা হয়ে যাচ্ছিলো। সেটা কোনো দিকে ঘোরাই হোক বা ঝাঁপ দেওয়া। টেড প্রায় দম বন্ধ করে উত্তেজনার সঙ্গে এর কারণ হিসাবে জানিয়েছে যে “এক্সট্রা জেসচারাল এনহান্সমেন্ট” নামক একটা বিষয় নাকি থান্ডারস্ট্রীক এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া আছে।
একটা রহস্যমাখানো স্বরে বলেছে, ‘ব্যাপারটা হলো, এই ঝাড়ুগুলো মালিকের মন বুঝতে সক্ষম। শুধু মাত্র একটা হাল্কা ছোঁয়া পেলেই এগুলো বুঝতে পারে তুই কোথায় যেতে চাইছিস। যেহেতু আগেভাগেই সব বুঝতে পেরে যায় তাই তুই ওটাকে নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে দেখতে পাবি তুই গন্তব্যে পৌঁছে গেছিস। ’
জেমস টেডকে ওটা নিয়ে ওড়ার জন্য বললো, কিন্তু টেড দুখিতভাবে মাথা নাড়লো। ‘ওটা তোর সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত হয়ে গেছে। তুই ওর মালিক। অন্যকেও যদি ওটাকে ওড়ানোর চেষ্টা করে ওটা পাগলের মতো আচরন করবে। এটা এই নতুন সিস্টেমের একটা খামতি বলা যেতে পারে। অথবা একটা দারুন ব্যাপার বলতেও পারিস। যদি তোর মনে হয় যে কেউ এটা চুরি করতে পারে, তাহলে।’
জ্যান চাপা গলায় বললো, ‘এরকম একটা কিনতেই হবে। দাম কি রকম এগুলোর?’
টেড জানতে চাইলো, ‘কত আছে তোর কাছে?’
জ্যান একটু ভেবে বললো, ‘এখন কিছুই নেই, কারণ শেষ পাঁচ ডলারটা আমি হাউস-এলফ ডোরম্যানকে দিয়ে দিয়েছি।’
টেড জানালো, ‘ওর দাম ওর চেয়ে অনেক বেশী।’
দুর্গে ফিরে যাওয়ার পথে জ্যান জেমস কে বললো, ও একটা প্ল্যান করেছে রেলিক পোশাকটার সঙ্গে র্যালফের পোশাকটা বদলানোর।
‘আজ রাতে র্যাভেনক্ল কমনরুমে আয়। র্যালফকেও আসতে বলে দিস দেখতে পেলে। ঠিক ন’টার সময় আমি প্রবেশ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকবো।’
সেদিন রাতে র্যাভেনক্ল কমনরুম এক্কেবারে ফাঁকা। জ্যান জানালো এর কারণ গ্রেট হলে চলছে উইজার্ড দাবা প্রতিযোগিতা। যতদূর জানি , আন অফিশিয়াল। সে যাই হোক সকলেই এখন ওখানে গেছে উৎসাহ দিতে। তা তোরা কি কিছু ভাবলি কি ভাবে জ্যাক্সনের কাছ থেকে ওটাকে হাতাবি?’
জেমস বললো, ‘তুইতো বললি কি একটা প্ল্যান করেছিস?’
‘করেছি তো। কিন্তু সেটা খুব ঝকমারি কাজ। আগে তোদেরগুলো শুনি, বলা যায় না আমার চেয়ে সহজ কিছু হতেও তো পারে।’
জেমস মাথা নাড়লো। র্যালফ বললো, ‘আমি কয়েকদিন ধরে প্রফেসর জ্যাক্সনের ওপর নজর রেখে দেখলাম উনি তো ব্রিফকেসটা হাতছাড়াই করেন না।’
‘ঠিকভাবে বললে ওটা পুরোপুরি সত্যি কথা নয়,’ জ্যান বললো ফায়ারপ্লেসের কাছে চেয়ার টেনে নিয়ে বসে।
র্যালফ আর জেমস বসলো সোফাতে। জেমস বললো, ‘র্যালফতো ঠিক কথাই বলছে। উনিতো ওটা কুইডিচ ম্যাচ দেখার সময়েও নিয়ে যান। খাওয়ার সময়ে দু পায়ের ফাঁকে ওটা রেখে তবে খাওয়া শুরু করেন। ওটাকে কাছছাড়া করেনই না।’
‘মেনে নিচ্ছি উনি ওটা কাছছাড়া করেন না। কিন্তু একটা সময় ঠিকঠাক ওটার দিকে উনি নজর রাখতেও পারেনও না।’
‘মানে? কখন, কোথায় ?
‘টেকনোম্যান্সির ক্লাসে,’ জ্যান বললো। ‘ভেবে দ্যাখ ভাল করে। উনি কি করেন গোটা ক্লাসের সময়টায়?’
জেমস একটু ভাবলো তারপর বললো, ‘পাইচারি করেন।’
‘একদম ঠিক,’জেমসের দিকে আঙুল তুলে বললো। ‘ডেস্কের কাছে নিচে মেঝেতে উনি ব্রিফকেসটাকে রাখেন, যত্ন করে আর তারপর চলতে থাকে উনার পাইচারি। আমি বাজি ধরতে পারি উনি গোটা ক্লাসটাকে অন্তত দশ চক্কর দেন। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি। প্রায় এক মিনিট লাগে একটা চক্কর দিতে। যার অর্থ অন্তত কুড়ি সেকেন্ড ব্যাগটা ওনার চোখের আড়ালে থাকে।’
‘আরে থাম থাম,’ র্যালফ বলে উঠলো, ‘ তুই কি ক্লাস চলাকালীন সময়ে অদলবদলটা করতে চাইছিস নাকি?’
জ্যান কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, ‘আমি তো আগেই বললাম আমার প্ল্যানটা খুব একটা সহজ না।’
‘কেন? গোটা কুড়ি শিক্ষার্থী থাকে ক্লাসে। আমরা ওদেরকে এই ব্যাপারটায় দলে টানতে পারি না?’
‘না,’ জেমস বললো সম্মতিবাচক ভাবে, ‘ফিলিয়া গয়েল আছে ক্লাসে। যে টাবিথা করসিকার কাছের লোক। এবং এই সম্ভাবনা আছেই যে ওরা মারলিনের প্লটটার সঙ্গে যুক্ত। এমনও হতে পারে ফিলিয়া জানে ওই ব্রিফকেসে কি আছে। আমি চাই না আর কেউ জানুক আমরা কি করতে চাইছি।’
জ্যান বললো, ‘এর মানে এটাও নয় যে এটা করা অসম্ভব।’
র্যালফ ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘তুই কি করে এটা ভাবছিস যে কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে আমরা জ্যাক্সনের ব্রিফকেসটা খুলে পোশাকটা বদলে নেব এবং গোটা ক্লাসের কেউ সেটা দেখতেই পাবে না ?’
‘হুমম,’ জেমস বললো এবার ভ্রূ কুঁচকে। ‘এটাও তো হতে পারে আমরা ওটা খুলবোই না। যদি আমরা ব্রিফকেসটাই বদলে দিই? র্যালফের ক্লোকটা আর একটা ব্রিফকেসে ঢুকিয়ে যে করেই হোক ওই ব্রিফকেসটার সঙ্গে বদলে নিই কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে।’
র্যালফ তবুও সংশয়ের সুরে বললো, ‘জ্যাক্সন ওটা ধরে ফেলবেন। ওটা নিয়ে সব সময় চলাফেরা করেন। সম্ভবত ওটার প্রতিটা অংশ উনি ভালোভাবে চেনেন।’
জ্যান চিন্তামগ্ন স্বরে বললো, ‘ওটা খুবই সাধারন দেখতে একটা চামড়ার ব্রিফকেস। আমি এরকম অনেককেই নিয়ে ঘুরতে দেখেছি এই হগওয়ারটসেই। একটু খুঁজলেই আমরা প্রায় কাছাকাছি একটা ওরকম দেখতে পেয়ে যাবো…’ সহসাই আঙ্গুলে তুড়ি মেরে জ্যান বললো, ‘হোরাস!’
‘হোরাস?’ জেমস চোখ পিটপিট করে বললো, ‘হোরাস বারচ? গ্রেমলিনের উইজার্ড দাবা খেলোয়াড়? ওকে আবার কি দরকার?’
জ্যান মাথা উত্তেজনায় ঝাঁকিয়ে বললো, ‘উকেট এর কথা মনে আছে? হোরাস ভিসাম-ইনেপ্সিও মন্ত্র ব্যবহার করে ফ্লাইং সসারের রুপ দিয়েছিল। চোখকে বোকা বানানোর মন্ত্র! ও বলেছিল ওটা মানুষকে সেটাই দেখায় যা সেই মানুষটা দেখতে চায়। যদি আমরা একটা মোটামুটি জ্যাক্সনের ব্রিফকেসটার মত দেখতে একটা কেস জোগাড় করতে পারি, তাহলে ভিসাম –ইনেপ্সিওর জাদু ওই বুড়ো স্টোনওয়ালকে বোকা বানাতে পারবে আমি বাজি লড়তে পারি! বলতে চাইছি যে , উনি আশাই করতে পারবেন না যে ক্লাস চলাকালীন সময়ে ওর ব্রিফকেস বিষয়ে কিছু ঘটবে। ফলে আমাদের নকল ব্রিফকেস ওর কাছে আসল বলেই মনে হবে। ভুল বললাম কিছু?’
র্যালফ আর একটু ভেবে নিয়ে বলে উঠলো, ‘আইডিয়াটা কামাল করার মতো, মনে হচ্ছে কাজ হয়ে যাবে।’
‘হুমম,’ জেমস সায় দিলো। ‘কিন্তু , ক্লাস চলাকালীন সময়ে অদলবদলটা কি করে করা যাবে এই প্রশ্নের সমাধান কি হবে?’
জ্যান গম্ভীর ভাবে বললো, ‘আমাদের কিছু একটা করতে হবে যাতে সবার মনোযোগ সেদিকে যায়।’
র্যালফ মুখ বেঁকিয়ে বললো, ‘তুই বড্ড বেশী টিভি দেখতিস বোঝাই যাচ্ছে।’
জেমস ভ্রু কুঁচকে বসে ইনভিজিবল ক্লোকটার কথা ভাবছিলো। বললো, ‘বুঝলি, আমার মনে হচ্ছে আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।’ জেমস ওদের দুজনকে ক্লোক আর মরাউডার ম্যাপ হাতানোর ব্যাপারটা বললো।
‘তুই ওদেরকে তোর ড্যাডের ট্রাঙ্ক থেকে মুক্তি প্রদান করেছিস!’ জ্যান বললো দুষ্টুমির হাসি হেসে। ‘পাজির পাঝাড়া কোথাকার! টেড এটা জানতে পারলে তোকে চুমু খাবেরে হতচ্ছাড়া!’
‘টেড এটার কথা জানে না, আর আমি আপাতত চাইছিও না যে ও জানুক ,’ জেমস কথাগুলো কেটে কেটে বললো। ‘কিন্তু ঘটনা হলো, আমার মনে হচ্ছে আমরা এই অদলবদলটা ইনভিজিবল ক্লোকটা ব্যবহার করে কাওকে জানতে না দিয়েই করতে পারি। আর তার জন্য আমাদের তিনজনকেই দরকার।‘’
র্যালফ বললো, ‘ কিন্তু আমি তো ওই ক্লাসের ছাত্র নই।’
জেমস বললো, ‘জানি। ওই সময়ে তোর কি ক্লাস আছে? বুধবার, প্রথম ভাগে?’
র্যালফ ভেবে বললো, ‘ইয়ে…অ্যারিথম্যান্সি। ধুর।’
‘তুই ওই ক্লাসটা ফাঁকি দিতে পারবি?’
‘পারবো মনে হয়। কেন?’
জেমস প্ল্যানটা বুঝিয়ে বললো। জ্যান হাসলো, কিন্তু র্যালফকে দেখে মনে হচ্ছিল ওর অস্বস্তি হচ্ছে। ‘ আমি না একদম মিথ্যে বলতে পারি না। ওরা ধরে ফেলবে। জ্যান আমার কাজ করলে হয় না ? ও এগুলো ভাল পারে।’
জেমস মাথা নেড়ে বললো, ‘ওতো আমার সঙ্গে ক্লাসেই থাকবে। ফলে ওটা হওয়ার চান্স নেই।’
জ্যান আশ্বাসের সুরে বললো, ‘তুই ওটা ভালোই পারবি র্যালফ। শোন মিথ্যে বলার সোজা উপায় হলো সোজা চোখের দিকে তাকাবি আর পলক না ফেলে কথাটা বলে দিবি ব্যাস। ও আমি শিখিয়ে দেবো। তোকে একটা পাকা মিথ্যেবাদী বানানোর দায়িত্ব আমার।’
ওই দিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে জেমস প্ল্যানটা আর কয়েকবার ঝালিয়ে নিলো মনে মনে। এখন ও মারলিনের ফিরে আসার অসম্ভব দিকটার ব্যাপারে নিশ্চিত। নিজেকেই একটু বোকাবোকা মনে হচ্ছে ঘটনাটাকে সত্যি হতে পারে ভেবে নেওয়ার জন্য। নিশ্চিতভাবেই এটা ডার্ক উইজার্ডদের একটা পাগলামো। তবুও এটার ওপর বিশ্বাস রেখে জ্যাক্সন আর ডেলাক্রয় ওটাকে বাস্তব করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেনই। যদি ওরা তিন বন্ধু পোশাকটাকে হাতাতে পারে তাহলে দরকারি প্রমাণ ড্যাড আর অরোরদের হাতে তুলে দিতে পারবে। এর ফলে উনারা লুক্কায়িত দ্বীপটায় তল্লাসি চালাতে পারবেন। পাওয়া যাবে মারলিনের সিংহাসন আর প্রমানিত হয়ে যাবে ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটা। ডেইলি প্রফেটের প্রথম পাতার খবর হবে ওটা। সঙ্গে সঙ্গেই টাবিথা করসিকার প্রোগ্রেসিভ এলিমেন্ট এর আসল উদ্দেশ্যও সামনে এসে যাবে। মিথ্যে প্রচার চালিয়ে যুদ্ধ আর শাসনের ছক কষার। পুরো বিষয়টার ছবি মাথার মধ্যে দেখার পর জেমস অনেকটাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হল যে হ্যাঁ ওরা ওই রেলিক পোশাকটা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
প্ল্যানটা সাজিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিছু সংশয় ওর মাথায় ঘুরছিলো। নিশ্চিতভাবেই এটা একটা জটিল চিন্তা ভাবনা। যার অনেকটাই নির্ভর করবে ভাগ্যের ওপর। একবার মনে হচ্ছে পুরোটা জলের মতো সহজভাবে ঘটে যাবে আবার পরক্ষনেই মনে হচ্ছে যদি না হয় তাহলে ও, জ্যান আর র্যালফতো ধরা পড়ে যাবে। কি উত্তর দেবে তখন ওরা? জ্যাক্সন বুঝে যাবেন ওরা ওর পরিকল্পনা ধরে ফেলেছে। সেটা কি যথেষ্ট হবে ওই শয়তানি পরিকল্পনা থামানোর জন্য? জেমস, হেড অফ দ্য অরোর এর ছেলে। রেলিকটা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে জ্যাক্সন এটা বুঝে যাবেন যে ওরা হ্যারি পটারকে এখনো এ বিষয়ে কিছু বলেনি। জ্যাক্সন আর সাথীরা কি খুন করার মতো পদক্ষেপ নেবেন তাদের চক্রান্তর খবর গোপন রাখার জন্য? বিশ্বাস তো হচ্ছে না। কিন্তু এরকম একটা সাঙ্ঘাতিক পরিকল্পনায় জ্যাক্সনের যুক্ত থাকাটাও তো অবিশ্বাস্য রকম সত্য। সে যাই হোক জেমস এ বিষয়ে নিশ্চিত যে যদি তাদের প্ল্যান সফল না হয় তাহলে ওরা তিন বন্ধু একটা বিরাট বিপদের সম্মুখীন হবে।
এই প্রথমবার ওর মনে হচ্ছে সব কিছু ওর ড্যাডকে জানানো দরকার। এখনো পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব কিছু লিখে একটা চিঠি পাঠিয়ে দিতেই পারে নবিকে দিয়ে। যদি ওরা রেলিক পোশাকটা হাতাতে সক্ষম হয় তাহলে প্রমাণ রুপে চিঠিটাকে দেখাতে পারবে। আর যদি ওরা সফল না হয় তাহলে অন্তত আর একজন জানতে পারবে মারলিনের প্লটটা বিষয়ে। অনেক রাত হয়ে গেছে এখন চিঠি লেখার পক্ষে। তবে কাল সকালে আগেই ওই কাজটা করতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই ওর চোখে নেমে এলো ঘুম।
পরেরদিন সকালে সব কিছু ভুলে গিয়ে ও চললো ব্রেকফাস্ট করতে। এক নতুন সপ্তাহের শুরুতে নতুন দিনের আলোয় ওর নিজেকে আত্মবিশ্বাসী মনে হলো, ওদের প্ল্যান সাকসেসফুল হবেই। অসফল হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। নিজেকে নিয়ে এতটাই মগ্ন ছিল যে লক্ষ্য করলো না অ্যাজাম্পশন অফ সেন্ট মাঙ্গো পেইন্টিং এর ফ্যাকাশে ধরনের জাদুকরটা ওকে একভাবে দেখে চলেছেন, কপাল কুঁচকে পাথরের মত মুখাবয়ব বজায় রেখে।
[চলবে]
লেখক পরিচিতিঃ জর্জ নরম্যান লিপার্ট আমেরিকান লেখক এবং কম্পিউটার অ্যানিমেটর। তবে ওনার বর্তমান পরিচয় উনি জেমস পটার সিরিজের লেখক। যে কারনে ওনাকে “আমেরিকান রাউলিং” নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এই সিরিজের প্রথম লেখা “জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং” প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। নানান কারনে এটি অনেক বিতর্কে জড়িয়ে যায়। সেসব সমস্যা পেরিয়ে আজ এটি পাঠক পাঠিকাদের চাহিদায় সারা বিশ্বে যথেষ্ট জনপ্রিয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই সিরিজের সব কটি বই ই-বুক এবং ফ্রি হিসাবেই প্রকাশ করেছেন মাননীয় জর্জ নরম্যান লিপারট। এই সিরিজ ছাড়াও ওনার আরো ১২ টি বই আছে। বর্তমানে উনি এরি, পেনসিল্ভ্যানিয়ার বাসিন্দা।
অনুবাদকের পরিচিতিঃ উপন্যাসটির অনুবাদক প্রতিম দাস মূলত চিত্র শিল্পী, ২০১৩ সাল থেকে ভারতের সমস্ত পাখি আঁকার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছেন। ৭৭৫+ প্রজাতির ছবি আঁকা সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে শুধু পাখি নয় অন্যান্য বিষয়েও ছবি আঁকা চলে একইসঙ্গে। দারুণ রকমের পাঠক, যা পান তাই পড়েন ধরনের। প্রিয় বিষয় রূপকথা, ফ্যান্টাসী, সায়েন্স ফিকশন, অলৌকিক। টুকটাক গল্প লেখার সঙ্গে আছে অনুবাদের শখ।
Tags: জর্জ নরম্যান লিপারট, জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং, ধারাবাহিক উপন্যাস, প্রতিম দাস, সুদীপ দেব