Thursday, November 21, 2024
অনুবাদ উপন্যাসধারাবাহিক উপন্যাস

জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং – পার্ট ১৮

লেখক: জি নরম্যান লিপার্ট, ভাষান্তরঃ প্রতিম দাস

শিল্পী: মূল প্রচ্ছদ, সুদীপ দেব

অষ্টাদশ অধ্যায়

 দ্য টাওয়ার অ্যাসেম্বলী

দিগন্তরেখায় ভোরের গোলাপি আলো দেখা দিতেই জেমসের চোখ খুলে গেল। ও পড়ে আছে লুক্কায়িত দ্বীপের ঘাসের ওপর অস্বস্তিকর ভাবে। মনে হচ্ছে ওর হাড় পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে গেছে। একটা কাতরানোর শব্দ বেড়িয়ে এলো নিজের অজান্তেই, উঠে বসার সময়। চারদিকে তাকাতেই প্রথমেই চোখে পড়লো মারলিনের সিংহাসনটা নেই। যেখানে ওটা রাখা ছিল, সেখানকার ঘাসের ওপর ওটা যে রাখা ছিল সেরকম কোন চিহ্নই নেই। চারদিকে তাকিয়ে  আরো একটা ব্যাপার জেমস বুঝতে পারলো যে লুক্কায়িত দ্বীপের সেই জাদুমায়ার জগতটাও আর নেই। মারলিনের সিংহাসন অদৃশ্য হতেই দ্বীপটা তার আসল বুনো প্রাকৃতিক রূপে ফিরে গেছে। সেই গথিক ধাঁচের শিহরণ উদ্রেককারী স্থাপত্যর কোন চিহ্নই নেই কোথাও। চারদিকে পাখি ডাকছে গাছে গাছে।

‘ওরে বাবারে,’ একটা গোঙানি ভেসে এলো কাছ থেকে। ‘আমি কোথায়? আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে এক কাপ কফি আর ফায়ারপ্লেস দেখতে পাওয়ার কোন আশাই নেই যদি আমি চোখ খুলি।’

‘জ্যান,’ জেমস বললো, কম্পিত পায়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে। ‘তুই ঠিক আছিস? র‍্যালফ কোথায়?’

র‍্যালফ বিড়বিড় করে বললো, ‘আমি এখানে। চেক করে দেখছি আমার শরীরে হাড় সহ বাকি জিনিসগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা। যা বুঝছি চিন্তার কিছু নেই; কিন্তু এই মুহূর্তে আমার সেন্ট লোকিমাগাসের চেয়েও বেশী দরকার বাথরুমে যাওয়ার।’

জেমস পাথরের ধাপগুলো ধরে উঠে এলো ওপরে। সকালের আলো এখনো ঠিক করে ফুটে ওঠেনি, আশেপাশের ঝোপঝাড় গাছপালা ভেদ করে দ্বীপের বেশী দূর দেখা যাচ্ছেনা । জ্যান আর র‍্যালফ টলতে টলতে ওপরে উঠে এলো।

চারদিকে তাকিয়ে জেমস বললো, মারলিন চলে গেছেন। জ্যাক্সন বা ডেলাক্রয়কেও দেখা যাচ্ছে না।’ জ্যাক্সনের ভাঙ্গা জাদুদন্ডের টুকরোয় পা পড়তেই জেমস কেঁপে উঠলো।

‘আমরা ওই মানুষটার বিষয়ে ভুল ধারণা করেছিলাম তাই না?’ র‍্যালফ বললো।

জেমস সম্মতির স্বরে বললো, ‘আমরা অনেক ব্যাপারেই অনেক ভুল ভেবে বসেছিলাম।’

জ্যান নিজের পশ্চাৎদেশে হাত দিয়ে ককিয়ে উঠলো। তবু এটা বলতেই পারি আমরা খুব খারাপ কিছু করিনি, সবকিছু যদি ভেবে দেখি। আমরা মারলিনের প্রত্যাবর্তন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলাম, ধন্যবাদ পাওয়া উচিত ঐ লাঠিটা আর আমার ফিটনেসের। ওর কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হতেই ও থেমে গেল। ওরা পৌছে গেল এমন একটা ফাঁকা জায়গায় যেখান থেকে ড্রাগন মাথা সেতুটাকে দেখা যাচ্ছে। জলজ লতাপাতায় ঢেকে আছে। কেমন যেন ভাঙ্গাচোরা মনে হচ্ছে। ড্রাগনের মাথাটাও নেই। জলের কিনারাটা ভেজা ভেজা, কাদা ভর্তি, সকালের শিশিরে।

‘আরে ওই দিকটায় তাকা,’ র‍্যালফ হাত তুলে দেখালো। কাদার মধ্যে দেখা গেল পায়ের ছাপ।

‘দেখে মনে হচ্ছে দুজন মানুষ ওইদিক দিয়ে গেছেন। স্কুলের পাশ কাটিয়ে,’ জ্যান বললো, নিচু হয়ে পায়ের ছাপ দেখতে দেখতে। ‘তোর কি মনে হয় এর মধ্যে একজন মারলিন?’

জেমস মাথা নাড়লো। ‘না, মারলিন জুতো পড়ে ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছে ডেলাক্রয় আর জ্যাক্সন। মাদাম প্রথমে গেছেন, তারপর প্রফেসর ওঁর পিছু পিছু। তাছাড়া প্রয়োজন না থাকলে মারলিন নিজের পায়ের ছাপ রেখে যাবেননা।’

‘আশা করছি মাদামকে ধরতে পারলে জ্যাক্সন দু আধখান করে তবেই ছাড়বেন,’ জ্যান বললো বটে তবে খুব একটা জোর দিয়ে নয়।

র‍্যালফ গম্ভীর ভাবে বললো, ‘উল্টো না ঘটে যায়। দেখেছিস তো উনি প্রফেসরের জাদু-দন্ডটাকে কিভাবে ভেঙে দিয়েছেন।’

জেমস বিড়বিড় করে বললো, ‘ওসব কথা আর মনে করাস না। আমি আর ওসব নিয়ে ভাবতে চাইছি না।’ এগোতে থাকলো সামনের দিকে, জঙ্গল অভিমুখে, যেখানে ওরা প্রেচকাকে ছেড়ে এসেছিল। যদিও কোনো নির্দিষ্ট ভাবনা ওর মাথায় নেই কোথায় যাবে সে বিষয়ে। ওর মনে এখন দারুন একটা সন্দেহ মারলিন কোথায় গেছেন এ বিষয়ে।   যার জন্য ওর নিজেকেই দায়ী মনে হচ্ছে।  মনে হচ্ছে ডেলাক্রয় ওর অনুগামী হয়েছে। যেভাবেই হোক মাদাম উনাকে  রাজি করিয়েছেন এটা মেনে নেওয়ার জন্য, আর উনি মেনেও নিয়েছেন।

একেবারে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে উনি পোশাকটা আনিয়েছেন। কি পরিমাণ সঠিক মাদামের কথা। খুব বেশী আঙুল নড়ানোর দরকারই পড়েনি ওনার। এটা সত্যি যে শেষ পর্যন্ত সব ঠিক থাক ঘটেনি ডেলাক্রয়ের ক্ষেত্রে; কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। একজন একা, পাগলাটে মারলিন অনেক বেশী ভয়ঙ্কর প্রোগ্রেসিভ এলিমেন্টের সঙ্গে থাকা মারলিনের তুলনায়। আর কিছু নাহোক, ওই দলটা যা করবে তা ভেবে চিনতে বুঝে শুনে; কিন্তু মারলিন এসেছেন সম্পূর্ণ এক ভিন্ন মানসিকতার সময় থেকে, যখন সব কিছুই সরাসরি করা হতো এবং মৃত্যু ছিল খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। অসহায়তা এবং এক অসহ্য অপরাধবোধের ভার নিয়ে জেমস এগিয়ে চললো। জ্যান আর র‍্যালফ ওকে অনুসরন করলো কোনো কথা না বলে।

 প্রেচকা চলে গেছে। জেমস একটুও অবাক হয়নি। ডাইনোসরের পায়ের ছাপের মতো প্রেচকার পায়ের ছাপ নরম মাটিতে দেখা যাচ্ছে। কোনো কথা না বলে তিন বন্ধু পায়ের ছাপ লক্ষ্য করে এগিয়ে চললো। শিশির ভেজা পায়ে, কাঁপতে কাঁপতে। জঙ্গল ঢেকে আছে কুয়াশায়। মনে হচ্ছে সামনের কিছু গাছপালা ছাড়া আর কিছুর অস্তিত্ব নেই। ওদের এগিয়ে চলার সঙ্গে সূর্যের তাপে কমতে থাকলো সেই কুয়াশার পরিমাণ । জঙ্গল চঞ্চল হয়ে উঠতে শুরু করলো পাখিদের ডাকে ।   অজ্ঞাত জীবজন্তুর চলাফেরায়। সহসাই ওদের কানে এলো কিছু আওয়াজ, ওদেরকে কেউ ডাকছে।

জ্যান একটু থেমে ভালো করে শুনে বললো, ‘আরে! এ তো টেডের গলা!’

র‍্যালফ বললো, ‘সঙ্গে সাব্রিনাও আছে! ওরা এখানে কি করে এলো? এই যে! আমার এখানে!’

এবার তিন বন্ধু এক সঙ্গে দুই গ্রেমলিন সদস্যকে উদ্দেশ্য করে সাড়া দিলো। অন্যদিক থেকে ভেসে এলো সাড়া পাওয়ার প্রত্যুত্তর। একটা বিরাট অবয়ব বের হয়ে এলো কুয়াশার ভেতর থেকে, গাছপালা বাঁচিয়ে।

‘গ্র্যাপ!’ জ্যান হেসে ছুটে গেল দৈত্যটার দিকে।

গ্র্যাপের কাঁধ থেকে টেড বলো, ‘বাপরে তোদের দেখে মনে হচ্ছে নৌকডুবি হয়ে উঠে এলি। কি কান্ড! তোরা সারা রাত ওখানেই থেকে গেলি?’

জ্যান বললো, ‘সে এক বিরাট গল্প, মোদ্দা কথা হ্যাঁ আমরা ছিলাম ওখানে। আর দু চার কথায় বললে বলতে  হয়…মারলিন ফিরে এসেছে , ভুডু কুইন পালানোর পথে আর জ্যাক্সন একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ। উনি ডেলাক্রয়ের পিছু নিয়েছেন। ফলা ফল কি হয়েছে জানি না’

র‍্যালফ কাঁপতে কাঁপতে বললো, ‘গ্র্যাপের কাঁধে আমাদের তিনজনের জায়গা হবে? আমার মনে হচ্ছে খুব বেশী হলে আর এক পা  হাঁটতে পারবো, তারপরেই মরে যাবো।’

গ্র্যাপ হাঁটু গেড়ে বসলো, ওরা তিন বন্ধু পিঠ বেয়ে উঠে টেড আর সাব্রিনার কাছে গেল। ওপরে ওঠার আগে জেমস ভাঙ্গা ডান হাতটা ঝাড়ল। ব্যাথার চিহ্ন মাত্র নেই। হাড়গুলো এখন অনেক সতেজ। ব্যান্ডেজ খুলে কি মনে করে না জানি ঢুকিয়ে নিলো পকেটে।

‘তোরা দুজন বেরিয়ে এলি কি করে?’ জেমস টেডের পাশে বসে, গ্র্যাপের ঘাসের মতো মোটা চুল এক গাছা আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করল। ‘আমি তো জানতাম তোদের বাইরে বার হওয়া মানা।’

টেড বললো, ‘সে তো শুধু কালকের রাতটার জন্য। কাল রাত থেকে ওখানে সব পাগল করে দেওয়ার মতো কাজ কারবার হয়ে চলেছে। মাঝরাতেই ওখানে মারলিনের আবির্ভাব হয়েছে। একটা কথা না বলে পারছি না, মানুষটা জানে কিভাবে নিজেকে সবার সামনে আনতে হয়।’

‘প্রেচকার ঘাড়ে চড়ে উনি ওখানে পৌছেছেন এবং প্রেচকাকে দিয়ে লাথি মারিয়ে ভেঙ্গেছেন মূল দরজা’, সাব্রিনা জানালো। ‘উনি নিশ্চিতভাবেই দৈত্যটার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ওকে একেবারে বদলে দিয়েছেন। দরজা ভাঙা সারা হলে নিচে নেমে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। এখনো ঘুমাচ্ছে প্রধান দরজার কাছে জগতের সবচেয়ে বড় নোংরা কাপড়ের স্তুপের মতো।’

‘আমাদের সবার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল দরজা ভাঙ্গার শব্দেই,’ টেড বলে চললো। তারপর তো এক হুলুস্থুলু কান্ড। রাতের পোষাক পড়া ছাত্রছাত্রীর দল এদিক সেদিকে দৌড়াদৌড়ি করছে কি হলো সেটা জানার জন্য। বুঝতেই পারছিস প্রেস্কটের কারণে এমনিতেই সবাই টেন্সড হয়েছিল। কেউতো জানেইনা প্রেস্কটের আসল উদ্দেশ্য কি। তারপর আবির্ভাব হলো মারলিন নামক বিশালাকায় মূর্তির, পরনে ফাদার ক্রিসমাস কাম দানবদের মতো পোশাক। শুরু করলেন পদচারণ, একবার কারোর দিকে তাকালেই সে ঢলে পড়ছিল ঘুমে। এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে ঠুকছিলেন নিজের বিরাট লাঠিটা, যার শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল সারা দুর্গ জূড়ে। এরপরই ওঁর চোখে পড়ল পীভসের দিকে আর ঘটে গেল সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনা!’

‘কি হলো?’ জ্যান উৎসাহ ভরা কণ্ঠে জানতে চাইলো। ‘পীভস কি ওঁর গায়ে একগাদা র‍্যাস্পবেরীর দানা ছড়িয়ে দিয়ে কোন একটা কিছুর মধ্যে মিলিয়ে গেল?’

‘না,’ সাব্রিনা বললো, ‘পীভস, ওঁর সহগামী হলো! দেখে তো মনে হচ্ছিল সেরকম কিছু করার  ইচ্ছে আছে কিন্তু পারছেনা। বাধ্য হল যেন মারলিনের সঙ্গে যেতে। মারলিন, পীভসকে দেখতে পেয়েই থেমেছিলেন, কিছু কথাও বললেন ওর সঙ্গে। জানি না অবশ্য কি কথা হলো ওদের মধ্যে। কারণ কি ভাষায় যে ওরা কথা বললেন সেটাই বোঝা গেলনা। আমরা তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে পীভস এবার এমন কিছু করবে যার ঝক্কি সামলাতে হবে আমাদের। কিন্তু দেখলাম পীভস শুধু হাসলো। আর সে হাসি ওকে যেভাবে হাসতে আমরা দেখি, এ সে হাসি নয়। এটা সেই হাসি, যেটা অনেক সময় দেখা যায় মালিকের হাতে হাউস এলফদের মার খাওয়ার পর। দাঁত বের হয় সে হাসিতে কিন্তু মজা থাকে কম, বুঝতে পারছিস আশা করি? এরপর পীভস জাদুকরের এক পাশে চলে গেল। কয়েক সেকেন্ড ওরা নিচু গলায় কথা বললো। একটু বাদেই পীভস  ভেসে এগিয়ে গেল, তবে গতি অনেক কম যাতে মারলিন ওকে অনুসরণ করতে পারে। মারলিন কোন একটা জায়গায় যেতে চান বলেই মনে হল, পীভস ওকে নিয়ে চললো সেই জায়গায়।’

‘পীভস এটা করলো?’ র‍্যালফ বললো অবিশ্বাসের স্বরে।

‘বুঝতে পারছি,’ টেড বললো, ‘এটা স্বভাবিক নয়। বুঝতে পারলাম মারলিন ব্যক্তিটি মোটেই সুবিধাজনক নন। গ্রেমলিনরা প্রায় সকলেই বুঝে গিয়েছিল, এই হল মারলিন। নিশ্চিত হলাম পীভসের ঘটনার পর।’

জেমস শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলো, ‘তা ওরা গেল কোথায়?’

সাব্রিনা উত্তর দিলো, ‘সিল্ভীন টাওয়ার। মানে এই নামেই ওটাকে ডাকা হয়। কোনো কাজে ওটা ব্যবহার হয় না। শুধু শোনা গেল যে উনি ওখানে অপেক্ষা করছেন কোন এক “পার্লে উইথ দ্য পেনড্রাগন” এর জন্য , জানি না কি এর মানে।’

জ্যান বললো, ‘আমার কিন্তু কথাটা মোটেই ভালো ঠেকছে না।’

‘কারোরই ভালো মনে হচ্ছেনা,’ টেড বললো। ‘উনি মনে করছেন ঐ দুর্গের পেনড্রাগন একজন নেতা বা রাজা। কোনো এক মধ্যযুগীয় চ্যালেঞ্জের ব্যাপার স্যাপার মনে হচ্ছে। এদিকে ম্যাকগনাগল সব ফ্যাকাল্টিদের একসঙ্গে ডেকে পাঠাতে গিয়ে বুঝেছেন জ্যাক্সন আর ডেলাক্রয় নেই। তারপরই খবরটা এল যে তুই হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে গেছিস। অগত্যা উপায় না থাকায় ম্যাকগনাগলই আমাদের পাঠালেন তোদের খুঁজতে। উনি নিজে আসতে পারলেন না ব্যস্ত থাকায়। তবে বুঝতে পেরেছিলেন পারলে আমরাই তোদের খুঁজে বার করতে পারবো। আমার তো মনে হয় উনি সন্দেহ করেছেন তোরা তিনজনে এই ঝামেলাটার ব্যাপারেও জানিস। যথেষ্টই সন্দেহজনক ওই বুড়ি?’

টেডের কথা বলা শেষ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গ্র্যাপ ওদের নিয়ে পৌঁছে গেল জঙ্গলের প্রান্ত সীমায়। সকালের সূর্যালোকে দুর্গ এবং তার জানলা গুলো ঝকমক করছে, ভেতরের গন্ডগোলের বিন্দুমাত্র ছায়া পড়েনি সেখানে। আল্মা আলেরনের গাড়ি রাখার জায়গাটার দরজা লাগানো আছে। জেমসের মনে পড়লো সময়ের পার্থক্যর কথা, ওর সঙ্গে যুক্ত ফিলাডেলফিয়ার অংশ এখন গভীর ঘুমে মগ্ন। স্কুল চত্বরের কোনাটায় পৌছাতেই টেড গ্র্যাপকে বলো ওদের এখানেই নামিয়ে দিতে।

সাব্রিনা আন্তরিকভাবে গ্র্যাপের কাঁধ চাপড়ে বললো, ‘খুব ভালো কাজ করলে গ্র্যাপ! যাও এবার গিয়ে প্রেচকার সঙ্গে বিশ্রাম নাও, ঠিক আছে?’ গ্র্যাপ একটা সম্মতিসূচক আওয়াজ করে এগিয়ে গেল প্রেচকার দিকে যে এখনো নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে দুর্গের সিঁড়ির ঠিক পাশেই। বিরাট কাঠের দরজাটা ভেতর দিকে ভেঙে ঝুলছে। এন্ট্রান্স হল পুরো ফাঁকা এবং নিস্তব্ধ। ওখানে ঢুকেই ঢোঁক গিলে র‍্যালফ জেমসের হাত চেপে ধরে হাত তুলে দেখালো। মিঃ রিক্রিয়ান্ট আর মিস সাকারিনা মেঝেতে পড়ে আছে অদ্ভুত ভঙ্গীতে। দুজনেরই চোখ খোলা, সিলিং এর দিকে তাকিয়ে অপ্রাকৃত ভাবে হাসছেন। সাকারিনার হাত সামনের দিকে বাড়ানো, সকালের আলোয় ফ্যাকাসে সাদা রঙের দেখাচ্ছে ওটাকে।

র‍্যালফ তোতলালো, ‘ও ওরা …ক কি ম মরে গেছেন?’

টেড রিক্রিয়ান্টের পায়ে হাল্কা করে পা ছোঁয়ালো। ‘মনে হচ্ছে না। গা গরম এবং নিঃশ্বাস ও নিচ্ছেন। তবে সেটা খুবই আস্তে আস্তে। আমার মনে মারলিন যখন এখানে আসেন তখনই ওঁরা এখানে নেমেছিলেন। দেখে মনে হচ্ছে ওরা ওকে সম্ভাষণ জানাতে গিয়েছিলেন আর মারলিন ওদের জাস্ট একটু ছুঁয়ে দিয়েছেন। অনেক ছাত্রছাত্রীকেই উনি ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছেন, তবে এদের একটু বিশেষ রকমের ঘুম পাড়িয়েছেন। আমরা ওদেরকে রাস্তার মাঝ থেকে একটু সরিয়ে দিয়েছি, তা না হলে অন্যরা হোঁচট খেতে পারে।’ কাঁধ উঁচিয়ে কি আর করবো এরকম একটা ভঙ্গি করে টেড ওদের নিয়ে এগিয়ে চললো।

জেমস দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে জানতে চাইলো, ‘সিল্ভীন টাওয়ারটা কোথায়?’

‘ওটা ক্যাসলের প্রাচীনতম অংশের সবচেয়ে উঁচু এবং সবচেয়ে সরু টাওয়ার,’ টেড জানালো।  ওর কণ্ঠস্বর অযাচিত ভাবে গম্ভীর। ‘কেবলমাত্র নক্ষত্র দেখার কিছু প্রয়োজন ছাড়া ওটা ব্যবহারই হয় না। খুবই উঁচু এবং কষ্টকর ওটাতে চড়া। পেট্রা বলেছিল ওটা নাকি অনেক অনেক দিন আগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা স্থান ছিল এই দুর্গের। প্রত্যেক দূর্গেই নাকি এরকম একটা টাওয়ার থাকে।   নিরপেক্ষ জমিতে বানানো হয়। বলতে পারিস একধরনের ইউনিভারসাল এমব্যাসি। দুটো যুদ্ধরত দেশ বা রাজ্যর আলোচনা ক্ষেত্র। যেখানে দু পক্ষের রাজা থাকতেন সামনাসামনি। চারজন করে পরামর্শদাতা কেবল ওখানে যাওয়ার সুযোগ পেতেন। বাকিদের নিচে অপেক্ষা করতে হতো। কখনো সখনো যুদ্ধের মীমাংসা ওখানেই হয়ে যেত, এক রাজা আরেক রাজাকে হত্যা করে নিচে ফেলে দিত, ব্যাস।’

জেমসের মনে হল হৃদপিন্ডটা যেন হঠাৎ খুব ভারী মনে হচ্ছে। ‘এখন ওখানে কে আছেন ওঁর সঙ্গে?’

টেড কাঁধ ঝাঁকালো, ‘জানি না। আমরা যখন তোদের খুঁজতে বার হচ্ছিলাম ম্যাকগনাগল সবাইকে একত্র করছিলেন। আমার তো মনে হয় উনি নিজেই ওঁর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। ওনাকে এর জন্য দারুণ উৎসাহিত মনে হচ্ছিল, অন্তত আমার।’

পাঁচ জন হাঁটতে হাঁটতে নিচু ধনুকাকৃতি দরজা পেরিয়ে এই দুর্গের প্রাচীনতম এবং খুব কম ব্যবহার হওয়া অংশে পৌছালো। অনেক  ঘুরে সরু সরু করিডোর পার হয়ে ওরা যেখানে এসে উপস্থিত হল সেখানে অনেক মানুষ। ছাত্র ছাত্রীরা জড় হয়েছে ওখানে। দেওয়ালের গায়ে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে কথা বলছে চাপা গলায়। টেড ওদের নিয়ে এলো একটা গোল কক্ষে, যার সিলিং অনেক উঁচু। দেখাই যাচ্ছেনা কোন অন্ধকারে মিশে আছে। চারদিকে সন্ত্রস্থ ছাত্রছাত্রীর জটলা, চলছে নানা জল্পনা। একটা সরু ঘোরানো কাঠের সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে টাওয়ারের উচ্চতায়। কিছুক্ষন দেখে নিয়ে, টেড ওটা দিয়ে উঠতে শুরু করলো। পেছন পেছন জেমস, জ্যান, র‍্যালফ আর সাব্রিনা।

‘ম্যাকগনাগল ওপরে আছেন… ওর সঙ্গে?’ র‍্যালফ প্রশ্নের সুরে। ‘কতটা ভাল আছেন কে জানে?’

সাব্রিনা গম্ভীর গলায় বললো, ‘উনি আমাদের হেডমিস্ট্রেস ভুলে যাস না। উনি ভালোই আছেন।’

জেমস আস্তে করে বললো, ‘আমিও সেটাই আশা করি।’

ওরা বাকি ধাপ কটা ওঠার সময় আর কোনো কথা বললো না। সময় লাগলো অনেকটাই, জেমস  খুবই ক্লান্তি এবং যন্ত্রণা বোধ করছিল ওপরে ওঠার পর। র‍্যালফ পেছনে একটা থাম ধরে দাঁড়িয়ে হাঁফাচ্ছিল। অবশেষে সিঁড়ি শেষ হয়ে ওরা আবার একটা ঘরে ঢুকলো। নিচু ছাদ, ধুলো মাকড়শার জাল আর শত বছরের পায়রা আর প্যাঁচার বিষ্ঠায় পূর্ণ। কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গবাক্ষ দিয়ে সকালের আলো ঢুকছে ঘরটায়। বেশ কয়েকজন মানুষ সেখানে উপস্থিত। কিন্তু তাদের মধ্যে হেডমিস্ট্রেস এবং মারলিন নেই।

‘জেমস,’ একটা ভারী কণ্ঠ জেমসের কাঁধের হাত রেখে বললো, ‘তুমি এখানে কি করছো? আমার ভয় লাগছে কারণ এটা তোমার আসার জায়গা নয়।’

‘প্রফেসর স্লাগহর্ন ওকে এখানে ডেকে পাঠান হয়েছে, ‘সাব্রিনা উত্তর দিলো, একই সঙ্গে তাকাল অন্যদের দিকেও। ‘হেডমিস্ট্রেস ওকে এবং সঙ্গে র‍্যালফ আর জ্যানকেও এখানে নিয়ে আসতে বলেছেন। ওরা ওপরে যাবে।’

‘ওপরে?’ র‍্যালফ আঁতকে উঠলো। ‘আরো উঁচু নাকি এটা? এটাই শেষ নয়?’

‘ওহো, মিঃ ডিডল,’ স্লাগহর্ন বললেন, র‍্যালফকে ভালো করে দেখে নিয়ে। ‘বলতে বাধ্য হচ্ছি আরো খানিকটা আছে, তবে সেটা খুব বেশি নয়। আমাদের ঠিক মাথার ওপরেই। মিস হিল্ডেগারড, তুমি নিশ্চিত তো এ ব্যাপারে? এটা মোটেই শিশুদের জায়গা নয়।’

জেমসের মনে হলো, স্লাগহর্ন এর আসলে ক্ষোভ হচ্ছে। কারণ উনি ওপরে যেতে পারছেন না। অথচ জেমস, জ্যান আর র‍্যালফ যেতে পারবে।

‘প্রফেসর আপনি তো তখন ঘরে ছিলেন যখন হেডমিস্ট্রেস ম্যাম আমাদের পাঠান ওদের নিয়ে আসার জন্য,’ টেড বললো কিছুটা ইচ্ছে করেই কঠোরতা মিশিয়ে।

‘হ্যাঁ, তা ছিলাম,’ স্লাগহর্ন বললেন,‘তবে তাতে এটা প্রমাণ হয় না যে কাজটা করা ঠিক হচ্ছে।’

জানলার কাছের একটা বেঞ্চ থেকে প্রফেসর ফ্লিটউইক বললেন,‘ওদের যেতে দাও হোরাস। যদি ওদের ডাকা হয়ে থাকে তবে নিশ্চিত ডাকা হয়েছে। আমাদের এখানে থাকলেও ওরা খুব একটা সুরক্ষিত নয় ওই বুনোটার নিরিখে।’

স্লাগহর্ন জেমসের দিকে তাকালেন, মনের জোরে মুখে ভাবে আনলেন কোমলতা। র‍্যালফের দিকে ঘুরলেন হাল্কা একটা চাপড় মারলেন ওর কাঁধে। ‘মিঃ ডিডল ভালোভাবে নিজের কাজটা কোরো।’

টেড এগিয়ে গেল একটা পাথরের সিঁড়ির দিকে যেটার পরেই একটা ট্রাপডোর লাগানো আছে সিলিং এর সঙ্গে। জেমস র‍্যালফ আর জ্যান এগিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে উঠলো বিবর্ণ ধাপগুলোতে । ট্র্যাপ ডোরটায় তালা লাগানো নেই। জেমস ঠেলে ওটাকে খুললো, এক ঝলক সূর্যের আলো এসে পড়লো ওর ওপর। জেমসের মুখ পাথরের মতো, শুধু চোখ নড়িয়ে দেখলো ওদের।

‘মিঃ পটার,’ হেডমিস্ট্রেসের কণ্ঠস্বর ছিটকে এলো, ‘মিঃ ওয়াকার এবং মিঃ ডিডল। ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য। আমার বাঁ দিকে এসে বসো। আমরা তোমাদের গল্পে একটু বাদেই ঢুকবো।’

জ্যান ট্রাপডোরটা বন্ধ করলো, জেমস ঘুরলো। ম্যাকগনাগল বসে আছেন ওদের পেছন দিকে, মারলিনের উলটো দিকে। একটা আগুনরঙ্গা অতি চটকদার পোশাক পড়ে আছেন মিনারভা, জেমস আগে কোনদিন এটা দেখেনি। অনেকটাই অল্প বয়সী মনে হচ্ছে ম্যামকে। মনে হচ্ছে যেন উনি কোন রাজ্ঞী। উনি এবং মারলিন যে চেয়ারে বসে আছেন তা পাথরে খোদিত, মুখোমুখী নিচের ধাপে। ম্যাকগনাগলের বাম দিকে একটু উচুতে আরো চারটে আসন। যদিও সেগুলো মুল চেয়ার দুটোর মতো অতোটা নকশাদার নয়। ওখানে বসে আছেন নেভিল লংবটম, প্রফেসর ফ্র্যাঙ্কলিন এবং হ্যারি পটার।

‘ড্যাড!’ জেমসের মুখে ফুটে উঠলো স্বস্তির হাসি। দ্রুত ধাপ বেয়ে উঠে গেল বাবার দিকে।

‘জেমস,’ হ্যারি গম্ভীর শান্ত কণ্ঠে বললেন। ‘আমাকে জানানো হয়েছিল তোমাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। তুমি আমাদের খুবই চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলে। তোমাদের তিনজনকে খোঁজার জন্য এতক্ষণ হয়তো আমাকেই বেরিয়ে পড়তে হতো । যদি না এখানে আসা মাত্র খবরটা পেতাম যে তোমাদের পাওয়া গেছে।’

র‍্যালফ ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইলো, ‘আপনি খবরটা কোথায় পেলেন?’

হ্যারি মুচকি হেসে একটা ওয়েস্লী রাবারের হাঁস তুলে দেখালেন। যার নিচে টেডের হাতের লেখা দেখা যাচ্ছে – ওদের খুঁজে পেয়েছি! সোজা ওখানে চলে আয়! ‘এটা পেট্রা মরগ্যানস্টারন এর। ওই জানালো এটা ব্যবহারের আইডিয়াটা ওরা তোদের কাছ থেকে পেয়েছে। বেশ ভালোই।’

‘সরি ড্যাড,  ম্যাপ আর ক্লোকটা না বলে নেওয়ার জন্য,’ জেমস তড়বড় করে বললো। ‘আমি জানি এটা করা উচিত হয়নি। আমি সত্যিই সব গোলমাল পাকিয়ে দিয়েছি। মারলিন ফিরে এসেছেন আর সবটাই আমার দোষ।’

হ্যারি মধ্যের চেয়ারগুলোর দিকে একবার দেখে নিলেন। ‘নিজেকে অতটা দোষী মনে করার কোন কারণ নেই। যাইহোক, পরে আমরা অনেক সময় পাব আলোচনা করার। এই মুহূর্তে আমার মনে হয় আমাদের মাথা ঘামাতে হবে অন্য বিষয়ে।’

জেমস এবার মারলিন আর হেড মিস্ট্রেসের দিকে ঘুরলো। ওদের দুজনের কথা ও ভুলেই গিয়েছিল ড্যাডকে দেখতে পাওয়ার উত্তেজনায়। ‘ও, হ্যাঁ হ্যাঁ। সরি।’ তিন বন্ধু দাঁড়িয়ে থাকলো হ্যারি, নেভিল আর ফ্র্যাঙ্কলিনের পাশেই। জেমস এবার লক্ষ্য করলো ওদের উল্টো দিকে প্রচুর পাখি এবং জীবজন্তু বসে আছে এবং এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে মারলিনের দিকে। প্যাঁচা ও পায়রার  সঙ্গে সঙ্গেই আছে দাঁড়কাক এবং কিছু বাজ পাখি। উলটো দিকের চারটে চেয়ারে, রেলিং এ এবং বাকি দুটো ধাপের মেঝেতে ওরা বসে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এছাড়াও জেমসের চোখে পড়লো কিছু গৃহপালিত জন্তুও আছে। ব্যাঙ আর ইদুরও দেখা গেল পাখিদের জটলার মাঝে উপস্থিত। সবাই তাকিয়ে আছে দাড়িচওয়ালা মানুষটার দিকে। এমন কি জ্যানের বিড়াল থাম্বসও বসে আছে ওখানে, একেবারে সামনে। মাঝে মাঝে নিজের কালো সাদা রঙএর নাকটা ঘষছে থাবায়।

মারলিনের বিশাল অনড় অবয়বের দিকে তাকিয়ে ম্যাকগনাগল বললেন, ‘প্রফেসর লংবটম আপনি যেন কি বলছিলেন?’

নেভিল উঠে দাঁড়ালেন, ‘আমি শুধুমাত্র আমার প্রতিবাদ জানাচ্ছিলাম… এই ব্যাপারে যে… এই অনুপ্রবেশকারীর সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে। যিনি না জানি গায়ের জোরে কোন মতলবে স্কুলের মধ্যে প্রবেশ করেছেন । একই সঙ্গে এমন একটা ভাষায় কথা বলছেন যা আমরা যারা আপনার সহকর্মী এবং বন্ধু তারাও বুঝতে অক্ষম। আপনাদের দুজনের মধ্যে এই, বলতে বাধ্য হচ্ছি এই আশ্চর্যজনক আলোচনা… আশা করছি বুঝতে পারছেন আমাদের অবস্থাটা।’

‘আমি ক্ষমা চাইছি, মিঃ লংবটম এবং বাকিদের কাছে,’ ম্যাকগনাগল বললেন মারলিনের অবয়ব থেকে চোখ সরিয়ে বাকিদের দিকে তাকিয়ে। ‘আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। এই মানুষটি এসেছেন আদব কায়দা ও প্রথা মেনে চলার এক বিশেষ সময় থেকে। আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করলাম, আমার স্থানের এই বিশেষ পোশাক পড়ে কারণ উনি সেটাই চেয়েছিলেন। উনি আমাদের, আমাকে এবং বাকি সহকর্মীদের,  যখন উনি প্রথম দেখেন  ভেবেছিলেন, আমরা বোধ হয় কৃষক যারা কোন এক উপায়ে এই দুর্গ দখল করেছি। ওঁর সময়ের হিসাব মতো পেনড্রাগন এর উপস্থিতি মোটেই আমাদের স্কুল পোশাকের মত জেল্লাবিহীন হতে পারে না।  এখানেই উনি ভুলটা করেন এবং শক্তি প্রদর্শন করেন। আর ভাষার ব্যাপারে বলতে পারি…।’

‘আমি আপনার ভৃত্যদের ভাষাতেও কথা বলতে পারি, যদি আপনি চান মাদাম পেনড্রাগন,’ বলে উঠলেন মারলিন, শান্ত গম্ভীর কণ্ঠে। ‘যদিও বুঝতে পারছি না কেন আপনি ওদের সঙ্গে সমস্তরীয়দের মতো কথা বলছেন। ওদের এই আচরণ সঠিক নয়।’

ম্যাকগনাগল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বুঁজলেন। জেমস বুঝতে পারলো এরকম ধরনের ভুল বোঝাবুঝি চলতেই থাকবে কিছু সময় ধরে। ‘এরা আমার সহকর্মী স্যার। আমার আদেশবাহক নয়। এটা সম্পূর্ণ একটা অন্য সময়, আমার ভয় হচ্ছে এটা আমাকে বার বার মনে করিয়ে দিতে হবে আপনাকে। আমি মোটেই কোন সাম্রাজ্যের পেনড্রাগন নই। আমি কেবলমাত্র পরিচালক এক ক্ষুদ্র এলাকার, আর তার সবটাই এই টাওয়ারের ওপর থেকে দেখা যায়। আর হ্যাঁ, আপনি সেই ভাষাতেই কথা বলুন যা সকলে বুঝতে পারে।’

‘যেমনটা আপনি চাইছেন তাই হবে মাদাম,’ মারলিন উত্তর দিলেন। ‘আশা করছি আপনার পক্ষের সকলেই এখানে উপস্থিত আছেন তাহলে?’

‘হ্যাঁ সবাই উপস্থিত। জেমস পটার, র‍্যালফ ডিডল, জ্যান ওয়াকার,’ হেড মিস্ট্রেস ওদের দিকে একবার করে তাকিয়ে নিয়ে বললেন, ‘এই মানুষটি দাবি করছেন ইনি মারলিনাস অ্যাম্ব্রোসিয়াস, ফিরে এসেছেন মানুষদের জগতে কোন এক সময়হীনতার জগত থেকে। আর তাতে সহযোগিতা করেছে তার ভুতুড়ে শিষ্য এবং পাঁচজন মানুষ। এই বিষয়ে তোমাদের কিছু বলার আছে?’

জেমস উত্তর দিলো, বুঝিয়ে বললো, যতটা সম্ভব ওর পক্ষে। কিভাবে তিনটে মারলিন রেলিক একত্র করা হয়েছিল লুক্কায়িত দ্বীপে। সঙ্গেই অতি সাবধানে এটাও জানিয়ে দিলো কিভাবে প্রফেসর জ্যাক্সন পোশাকটাকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন মাদাম ডেলাক্রয়ের পরিকল্পনা বানচাল করার জন্য, কিন্তু জেমস ভুল বুঝে সব গণ্ডগোল পাকিয়েছে।                                                            

অত্যন্ত হতাশ ভাবে বললো, ‘সব দোষ আমার। র‍্যালফ আর জ্যান আমায় সাহায্য করেছে কারণ আমি ওদের সাহায্য চেয়েছিলাম। আমি চেয়ে…,’ একটু থেমে ঢোঁক গিলে বললো, ‘আমি চেয়েছিলাম সব ঠিকঠাক করতে। কিন্তু সবই গোলমাল হয়ে গেল। আমি সত্যিই লজ্জিত।’

ম্যাকগনাগলের মুখে শান্ত ভাব কিন্তু মনের ভাব বোঝা যাচ্ছেনা । জেমস কথা শেষে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, একটু বাদেই সে মাথা সোজা হলো হ্যারির হাতের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ওর ভেতর থেকে।

মারলিন উপস্থিত সবার দিকে একবার করে তাকিয়ে নিয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস নিলেন। ‘অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্সের পরিকল্পনার কারণে অনেকেই ব্যতিব্যস্ত হয়েছে এটা বুঝতে পারছি। তার মধ্যে কেউ ভালো কেউ খারাপ। আশা করছি এই বালকটির বক্তব্যর পর আমার পরিচিতি নিয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই। আর সেকারনেই আমি আবার বলছি, ভালোভাবেই বুঝতে পারছি যে আমি  জড়িয়ে গেছি একটা জঘন্য মিথ্যে আর চক্রান্তে। আমার সময়ের বিভিন্ন গল্প কথা অনুসারে আমি একজন অতি নিম্নমানের আত্মদর্পী মানুষ। এমন একজন মানুষ যে হিংসুটে এবং লোভী। যার কথা আমায় বলা হল একটু আগে তোমাদের ওই ভল্ডেমরটের মতো আমি মোটেই নই। একটা ঝড় যতটা খারাপ আমি ততটাও নই। আমি কেবলমাত্র তখনই হত্যা করেছি, কেবলমাত্র তখনই যখন অনুতাপের আর কোন পথ খোলা থাকেনি। আমি কেবলমাত্র তাদের কাছ থেকেই কিছু আদায় করেছি যাদের থেকে নেওয়া উচিত। তার এক তৃতীয়াংশ আমি বিলিয়ে দিয়েছি চার্চ আর গরীব মানুষের মধ্যে। তোমরা যাকে শয়তান বলে থাকো আমি তাদের তুলনায় এমন সব শয়তান জাতীয় প্রানীদের দেখেছি আমার সময়ে, যারা তোমাদের এই সব শয়তানদের থেকে শতগুণে ভয়ঙ্কর।’

‘কোনো সন্দেহ নেই যে এটাই আপনার বিশ্বাস, ‘ ম্যাকগনাগল বললেন, ‘কিন্তু আপনি যখন এই পৃথিবীতে ছিলেন, এ জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি, সেই সময়েই নিকৃষ্ট মানসিকতার এক অতি শক্তিশালী  জাদুকরের লোক কথা মানুষের মুখে  শোনা যেত। আপনার ভয় হৃদয়ে নিয়ে প্রচুর মানুষ জীবনযাপন করতো।’

মারলিন গর্জে উঠলেন, ‘সেটা হতো সেই সব মানুষদের যারা বদমায়েশির জীবনযাপন করতো। তা সত্বেও আমি তাদের কাছে তলোয়ারের বদলে লাঠি হাতেই যেতাম মীমাংসার জন্য।’

‘তা হয়তো হতে পারে, মারলিনাস, কিন্তু এটা আপনি ভালো করেই জানেন আপনি যে বিদ্যার চর্চা করতেন তা মোটেই সবার পক্ষে গ্রহনযোগ্য ছিনা। আপনি জাদুজগতের এমন এক স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে  রাখতেন যা আপনাকে আলাদা করে দিয়েছিল বাকি মানবজগত থেকে। কেউ যদি বা সেই স্রোতে ভাসার চেষ্টা করতো সে হয়ে যেত পাগল। আপনি বদলে গিয়েছিলেন ওই নিয়মনীতি বিরোধী বিদ্যার চর্চা করতে করতে। অথবা ওটাই আপনাকে গ্রাস করেছিল। এমনকি অনেক সময় আপনি নিজের রায় নিয়েও সংশয়ে থাকতেন। মারলিনাস অ্যাম্ব্রোসিয়াশের রহস্যময় আনুগত্যের বিষয়ে সকলেই অবহিত আছে। সঙ্গে সঙ্গেই সবাই এটাও ভালো মতো জানে নন-ম্যাজিক্যাল জগতের প্রতি তার ভাবনা চিন্তা ঠিক কিরকম ছিল। সন্দেহ করা হয় যে আপনি তাদেরই সহযোগিতা করবেন যারা মাগল জগতটাকে ধ্বংস করে দিতে চায় বা শাসন করতে চায়। আমি আপনার সময়ের কথা বলতে পারবো না , কিন্তু এই সময়ে যারা এই ভাবনার পন্থী তারা আমাদের চিরশত্রু। সে কারনেই আমরা এখান থেকে তখনই আপনাকে যেতে দেবো যখন জানতে পারবো আপনি কোন পক্ষকে সমর্থন করছেন।’

মারলিন শান্ত নরম স্বরে জানতে চাইলেন, ‘আপনি কিন্তু একটু বেশী সাহস দেখাচ্ছেন, আমার বিষয়ে এরকম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে! ভুলে যাবেন না আমি চাইলে এক মুহূর্তের মধ্যে আপনাদের এই ধরাধাম থেকে মুছে দিতে পারি সামান্য আঙুল নাড়িয়ে।’

‘আমিও সেটা করার সাহস দেখাতে পারি ভালো কাজের প্রয়োজনে,’ ম্যাকগনগল বললেন দৃঢ় স্বরে। ‘আপনি ছিলেন আপনার সময়ের সবচেয়ে বিতর্কমূলক চরিত্র, আর সেটা তাবড় তাবড় ইতিহাসবিদও স্বীকার করে গেছেন।  এখনো সেটা বদলায়নি।  আপনার শক্তি বিষয়ে একটা কথা বলতেই পারি। যে স্রোত থেকে আপনি শক্তি সংগ্রহ করতেন সেটা আপনার সময় থেকেই অনেক অনেক নিচু মানের হয়ে গেছে, কারণ ধরিত্রী আর আগের মতো নেই। মোটেই এটা বোঝানোর ভান করবেন না যে সেটাই আপনার এ জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার এক অন্যতম কারণ সেটাও ছিল না। আপনি আশা করেছিলেন এমন একটা সময়ে ফিরে আসার, যখন এই পৃথিবীর শক্তি স্রোত আবার আগের মতো হয়ে যাবে। তার ফলে আপনার শক্তিও পুনরুজ্জীবিত হবে পূর্ণ মাত্রায়। কিন্তু এটা সেই সময় নয়। সেই শক্তি স্রোত এখন আরো ঝিমিয়ে গেছে। আপনার শক্তি হয়তো এখনো দারুন রকম ভাবেই কার্যকরী। যা এখানকার সব কিছুকে ধ্বংস করার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনাকে থামানো অসম্ভব। সেজন্যই বলছি মারলিনাস, একটু ভেবে সিদ্ধান্ত নিন এই যুগে আপনি কোন পক্ষে যোগ দেবেন।’

মারলিনাসের মুখ আগের মতই বিকারহীন পাথরের মতো চেয়ে থাকলো হেডমিস্ট্রেসের দিকে। ‘সত্যিই আমি এক অন্ধকার সময়ে ফিরে এসেছি। যেখানে একজন পেনড্রাগন বিশ্বাস করে একজন সম্মানীয় উইজার্ডের চিন্তাভাবনা সামান্য কিছু হুমকিতে বদলে যাবে। তবে আমি এটা বুঝতে পারছি যে আপনাদের লক্ষ্য বিষয়ে আপনারা সৎ । যদিও সে লক্ষ্য অতি নিম্নমানের। আমি কখনোই এরকম কোন পক্ষে ছিলাম না যারা যাদুহীন জগতের বিরোধিতা করে। আমি সব সময়ে কাজ করেছি দুই জগতের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য। চেষ্টা করেছি কারোর পাল্লাই যেন ভারী না হয়ে যায়, কিন্তু কেউই আমার আসল উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে পারেনি। আমি সকলের সেবা করেছি, কিন্তু আসল উদ্দেশ্য ছিল ওটাই। পতনমুখী মানব সভ্যতার কাছে ন্যায় ব্যাপারটা একটা মিথের মতো। বরং তার চেয়ে সাম্যের জন্য লড়াইকে নিয়ন্ত্রন করা সহজ। যদিও সেটা ওই প্রকৃত ন্যায় নামক বস্তুটির একটা ঝাপসা সংস্করণ ছাড়া আর কিছুই না।’

হেডমিস্ট্রেস বললেন, ‘আপনি বেশ ভালো বক্তা মারলিনাস। কিন্তু আপনি সোজাসুজি আমাদের উত্তরটা দিলেন না। আপনি কি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন নাকি বিরোধিতা?’

এই প্রথম মারলিনাসের মুখে চামড়া কুঞ্চিত হলো। চোখ বন্ধ করে উনি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলেন। জেমসের মনে হলো ওনার দাড়িটায় কোন রকম তেল মাখানো আছে। মাঝে মাঝে চারপাশের হাওয়ায় মশলা জাতীয় উগ্র ধরনের একটা গন্ধ ভেসে আসছে। ‘অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্স তার শাস্তি পেয়ে গেছে আমাকে এই সময়ে ফিরিয়ে আনার জন্য। আরো বেশি শাস্তি পাওয়া উচিত ছিল ওর।’ চোখ খুলে উপস্থিত সকলকে একবার দেখলেন। ‘আমি একটা এমন দুর্গে প্রবেশ করলাম যা আমার দেখা সবচেয়ে মজবুত ভাবে তৈরী। খোলা আকাশের নিচে অবস্থিত অথচ কোন পাহারাদার নেই। নেই কোন ভৃত্য যে আমার স্নানের জল যোগাড় করে দেবে বা আমার আদেশ শুনবে। আপনি আমার সঙ্গে দেখা করলেন আমি কে সেটা না জেনেই। আমাকে আশীর্বাদ করার মতো কোন হাত এগিয়ে এলোনা। আমার চারপাশে যারা উপস্থিত তাদের পোশাকে কোন আভিজাত্য নেই। প্রায় সবাইকে দেখতে লাগছে অতি সাধারণ মানুষ বা ভাঁড়ের মতো। পেনড্রাগন রুপে যাকে দেখা গেল সেও আমার অপেক্ষায় ছিলনা। তার পোশাকও তথৈবচ। মনে হচ্ছিল তিনি নিজেকে একটা আকার প্রকারহীন তাঁবুর ভেতর নিজেকে ঢুকিয়ে রেখেছেন। তারপর আমাকে, আমার সম্মানকে, আমার আনুগত্যকে ছুঁড়ে দেওয়া হল প্রশ্ন। যেখানে আমি শুধুমাত্র চেয়েছি একটুখানি শ্রদ্ধা। সত্যিই, আমার এই ফিরে আসা একেবারেই ব্যর্থ। আমার জন্য সেই সুসময় এখনো আসেনি।’

ম্যাকগনাগল সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে বললেন, ‘স্বার্থপর অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্স হয়তো ভুল করেছে, কিন্তু এটা হয়তো ভুল নয় মারলিনাস যে আপনি এই সময়টায় ফিরে এসেছেন। এটা ভাবা হয়ে থাকে যে আপনি মাগল দুনিয়ার বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু আপনার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে সেই বড় রকমের শোচনীয় ঘটনাকে আটকানোর মতো আরো বড় এক কাজ করার জন্যই আপনার এই আগমন ঘটেছে। এমনকি এই মুহূর্তে এমন সব গণ্ডগোল পাকিয়ে উঠছে যার একমাত্র পরিণতি খারাপের ইঙ্গিতই করছে । আজকের এই বিশেষ দিনে আমাদের এখানে উপস্থিত হয়েছে এক মাগল। এক বিপর্যয়ের সত্তা তাকে আমাদের এখানে এনে হাজির করেছে। তাকে আটকাতে পারেনি আমাদের জাদু সুরক্ষা। আর সেটা সম্ভব হয়েছে এক জাদুহীন বাস্তবের কারনে যার নাম টেকনোলজি। ওই মানুষটার কথা মতো সে এখানকার সব খবরাখবর কোন এক প্রেস অফিসে পাঠিয়ে  দিয়েছে যতে জাদু জগতের গোপনতা সমগ্র মানব জগতের সামনে উন্মোচিত হয়। এই গোপনতা বজায় আছে বলে বিগত শতাব্দীগুলোতে ভারসাম্য বজায় আছে। যদি ওই মানুষটার পরিকল্পনা সফল হয় তাহলে জাদু আর মাগল জগতের সমান্তরাল জগতটা নষ্ট হয়ে যাবে। এর ফলে তৈরী হবে অনেক ছক, শক্তি দখলের ভাবনা এবং শেষ পরিণতি হবে এক যুদ্ধ। আর পাঁচজনের তুলনায় আপনি অনেক ভালো বুঝবেন এর পরিণতি কি হতে পারে। আপনার উচিত আমাদের সাহায্য করা। যারা এই হইচইটা পাকাতে চায় তারা আপনার অপেক্ষায় আছে। ওদের ছোঁড়া তীর আপনি ওদের দিকেই ফিরিয়ে দিন মারলিনাস। আমাদের বাঁচান।’

প্রায় এক মিনিট স্থির হয়ে বসে থাকলেন মারলিন, সূর্যের আলোয় চকচক করছিল ওঁর দাড়ি। আশেপাশের জীবজন্তুগুলো খুব অল্পই নড়াচড়া করছিল। অবশেষে মারলিন উঠে দাঁড়ালেন। মনে হলো একটা পাহাড় যেন সহসাই খাড়া হয়ে দাঁড়ালো। অতি ধীরগতিতে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ালেন উনি। ওঁর জাদু লাঠিটাও ওর সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল পাশে। অন্তরভেদি নীল চোখ দিয়ে উনি তাকালেন হেডমিস্ট্রেসের দিকে ।

‘আপনি ঠিকই বলেছেন মাদাম,’ মারলিন বললেন দৃঢ় কণ্ঠে। ‘এটা আমারই স্বার্থপরতা। আমার সব শক্তি পুনরায় ফিরে আসবে এরকম একটা ভালো সময়ের আশায় আমি আমার নিজের সময়কে ত্যাগ করেছিলাম । সেই ঔদ্ধত্য আমার সব কিছু ব্যর্থ করে দিয়েছে। আমি ফিরে এসেছি এমন এক সময়ে যখন আমাকে খুঁজে বেড়াতে হবে আমার শক্তির খন্ডাংশগুলোকে। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, একজন সম্মানীয় ব্যক্তি রুপে, আমি  কিছুই করতে পারবো না। আমার ক্ষমতা নেই আপনাদের দেওয়া নেতৃত্ব গ্রহন করার। এটা আমার জগত নয়। আমাকে ছাড়াই আপনাদের লড়তে হবে। হয়তো আপনারা হেরে যাবেন । আমি কোন ভবিষ্যৎই দেখতে পাচ্ছিনা। শুধু বুঝতে পারছি আমার অবর্তমানে যেভাবে সূর্য উঠেছিল সেভাবেই উঠবে এবং অস্ত যাবে। তার আলো যুদ্ধের ওপর পড়বে নাকি শান্তির ওপর, সত্যির ওপর নাকি মিথ্যের ওপর, আমি জানি না। শুধু এটা জানি, সে আলো পড়বে এমন এক জগতের ওপর যে আমাকে চেনে না আর আমিও সেই জগতকে জানি না। এবার আমার বিদায় নেওয়ার সময় এসে গেছে মাদাম। আপনাদের সবাইকে জানাই আমার বিদায়।’

মারলিন হাত ওঠালেন, ধরলেন নিজের জাদুলাঠি। সঙ্গে সঙ্গেই সব পাখিগুলোও ভেসে উঠলো আকাশে। শত শত পাখার ঝাপ্টানির শব্দে মুখরিত হলো স্থানটি। সব পাখি উড়ে চলে যেতেই দেখা গেল সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য হয়েছেন মারলিন  ।

জেমস ভালো করে তাকালো সেই জায়গাটার দিকে যেখানে একটু আগে মহান জাদুকর দাঁড়িয়ে ছিলেন। সব কিছুর পরিসমাপ্তি হলো। আর কিছুই নেই এখানে। হ্যারি জেমসের দিকে ঘুরে ওকে জড়িয়ে ধরলেন দুহাতে। ‘সব ঠিক আছে, চিন্তার কিছু নেই,’ বললেন। জেমসের মোটেই বিশ্বাস হচ্ছে না যে সব কিছু ঠিকঠাক আছে। যদিও কথাগুলো ওকে অনেকটাই আশ্বস্ত করলো। ও ঘুরে ড্যাডকে জড়িয়ে ধরলো।

 

**********

 

‘আমি অবাকই হবো যদি উনি ভালোর জন্য ফিরে গিয়ে থাকেন,’ নেভিল বেশ জোরেই বললেন।

‘আমার কোনও সন্দেহ নেই উনি আমাদের  সেটাই বিশ্বাস করাতে চেয়েছেন,’ হেড মিস্ট্রেস জবাবে বললেন, টাওয়ারের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ‘আবার এটাও ঠিক যে ওঁর কোনো জায়গা নেই যাওয়ার। ওর ভৃত্য অ্যাসট্রামাড্ডুক্সকে শাস্তি দিয়ে উনি পাঠিয়ে দিয়েছেন এক নেতির জগতে। ফলে ওর আর কোনও সহযোগী নেই যে ওকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে যদি উনি আবার এ জগত ছেড়ে সময়ের সারণিতে ফিরে যেতে মনস্থ করেন। আশঙ্কা হচ্ছে আমাদের এটাই মেনে নিতে হবে যে মারলিনাস আমাদের মধ্যেই আছেন । সেটা ভালো বা খারাপ যাই হোক। মিঃ পটার ওকে ট্র্যাক করার কোন উপায় আছে?’

হ্যারি একটু ভাবলেন। ‘কঠিন কাজ তবে অসম্ভব নয়। উনি নিশ্চিতভাবেই সেই গাছেদের জগতে ফিরে যাবেন নিজের সুরক্ষার জন্য। কারণ ওখানেই ওর শক্তি বৃদ্ধি পায়। সন্দেহ নেই, উনি অনেক পন্থা জানেন দিন অতিবাহিত করার এবং লুকিয়ে থাকার। কিন্তু ওঁর মাপের জাদুকরদের অস্তিত্বের একটা প্রভাব চারদিকে ছড়িয়ে থাকে যা ডিটেক্ট করা সম্ভব। আমার বিশ্বাস আমরা ওকে খুঁজে বার করতে পারবো, কিছুটা সময় আর একটা অরোর টিম দরকার। এখন প্রশ্ন হলো ওকে খুঁজে পেলে আমরা কি করবো?’

মারলিন যে চেয়ারে বসে ছিলেন সেটার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে গম্ভীর স্বরে ফ্র্যাঙ্কলিন বললেন,  ‘ওঁর গতিবিধির দিকে নজর রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। মারলিনাস এক রহস্যময় এবং দুর্বোধ্য চরিত্র। উনি যাই বলে যাননা কেন, আমি বুঝতে পারছি উনি নিজের পক্ষকেও বিশ্বাস করেন না। ওঁর সময়ে সব কিছু অনেক খোলামেলা ছিল। আপনারা এ ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন কি? উনি এই যুগের বিষয়ে নিশ্চিন্ত নন। উনি জানেন না কাকে বিশ্বাস করতে হবে বা কাদের লক্ষ্য ওর ভাবনার সঙ্গে খাপ খাবে। এর ফলে সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার যা আপনি বুঝতে পারছেন আশা করি মাননীয়া হেড মিস্ট্রেস, মারলিনের নিজের নৈতিকতাই আপাতত দোলায়মান। উনি এখন একই সঙ্গে নিজের হৃদয়ের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই এই যুগের চালচলনটাও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।’

হ্যারি জানতে চাইলেন, ‘আপনি কি সত্যিই এটা বিশ্বাস করেন?’

ফ্র্যাঙ্কলিন সেই পেতলের যন্ত্রটা বার করলেন যা দিয়ে জেমসের ভাঙ্গা হাতটা কুইডিচ পিচে পরীক্ষা করে ছিলেন। ওটার ভেতর দিয়ে উনি তাকালেন মারলিনের চেয়ারটার দিকে। সম্মতির ভঙ্গীতে সামান্য মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ আমি বিশ্বাস করি। মারলিন আমাদের সামনেই স্বীকার করে গেলেন যে গর্ব ওঁর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। উনি কখনোই ওঁর নিশ্চিত হতে না পারার খামতিটা আমাদের সামনে প্রকাশ করবেননা। কিন্তু এ বিষয়ে কোন সন্দেহর অবকাশ নেই। উনি জানেননা এই যুগে ওর অবস্থানটা ঠিক কোথায় কারণ উনি এটাও জানেন না নিজের মনের কোনেও ওঁর অবস্থানটা আসলে কোথায়। যেটা উনি সবেমাত্র উপলব্ধি করতে পেরেছেন।’

‘এই দ্বিধাটা অবশ্য বেশীক্ষণ স্থায়ী হবেনা,’ নেভিল বললেন, ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসতে আসতে। ‘উনি কোন পক্ষে যোগ দেবেন এটা জানার জন্য আমারা বসে থাকতে পারিনা। ওঁর শক্তির পরিমাপ হয়তো অনেক স্তিমিত হয়েছে কিন্তু আমার বিশ্বাস জীবিত যে কোন জাদুকরের তুলনায় ওঁর শক্তি অনেকগুন বেশী। আপাতত আমাদের এটাই ধরে নিতে হবে উনি আমাদের বিপক্ষে। মানে যতক্ষন না নিজে থেকে জানান দিচ্ছেন যে উনি আমাদের দলে।’

হ্যারি মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘হুম, আমি মেনে নিচ্ছি উনি এই মুহূর্তে দোলাচলে ভুগছেন, কিন্তু আমার মনে হয়না উনি আসলে শয়তান। বা এটা বলতে পারি, শয়তানি কাজের পরিপন্থী অন্তত নন।’

জ্যান বলে উঠলো, ‘আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন? কয়েক শতাব্দী ধরে কি ওঁর গায়ে  সবচেয়ে শয়তান জাদুকরের তকমাটা এমনিই লাগানো আছে?’

 ‘সবচেয়ে শয়তান জাদুকর মোটেই নন!’ ম্যাকগনাগল বললেন।

‘একদম ঠিক,’ হ্যারি সায় দিলেন। ‘একমাত্র তারাই এটা মনে করে যারা উনাকে ঠিকঠাক জানেনা বা এই ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে যে, তারা যা ভাবে সেটাই ঠিক। যাদের হৃদয় আসলে শয়তানের দাসত্ব করে বা যারা সব জেনে বুঝেও নিজেদের দোষ দেখেনা তারা ওকে বুঝতে পারবেনা। অন্তত এটা আমরা বুঝতে পারছি।’

ম্যাকগনাগল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘চলো এবার অফিস ঘরে ফিরে যাই। সবে মাত্র আমাদের দিন শুরু হয়েছে এবং অনেক কিছু সামলাতে হবে। কিভাবে তা জানা নেই। তার থেকেও বড় কথা আমাকে এই অস্বস্তিকর পোশাকটা থেকে মুক্তি পেতে হবে।’

ফ্র্যাঙ্কলিন ট্র্যাপডোরটা তুলে ধরে খুলে দিলেন, বাকিরা একে একে শুরু করলো নিচে নামা। যে জীবজন্তুগুলো ওপরে এসেছিল তারাও পায়ে পায়ে নামতে শুরু করলো। স্লাগহর্ন সহ বাকি প্রফেসরেরা  যারা নিচে অপেক্ষমাণ ছিলেন তারা একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। সেসব কথায় পাত্তা না দিয়ে জেমস ওর ড্যাডের সঙ্গে ঘোরানো সিঁড়ির ধাপ বেয়ে নামতে শুরু করলো।

‘ড্যাড, তুমি এত তাড়াতাড়ি এখানে কি করে এলে?’ জেমস জানতে চাইলো। ‘মারলিন এখানে মাঝরাতের আগে আসেননি এটা আমি জানি। তাহলে ম্যাকগনাতগল ম্যাম কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি তোমায় হাজির করলেন?’

‘হেডমিস্ট্রেস আমাকে এখানে নিয়ে আসেননি, জেমস, ‘ হ্যারি জবাব দিলেন, মুখ ঘুরিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে। ‘তোমার চিঠি পেয়ে আমি এখানে এসেছি। নবি আজ সকালেই ওটা দিয়েছে, পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি রওনা দিয়েছি। হেড মিস্ট্রেস আমাকে ফায়ারপ্লেসে উপস্থিত হতে দেখে দারুণ চমকে গিয়েছিলেন।’

‘কিন্তু সাকারিনা যে জানিয়েছিলেন তুমি নাকি স্পেশাল কি কাজে ব্যস্ত। তোমাকে বিরক্ত করা যাবে না!’

হ্যারি একচোট হেসে নিয়ে বললেন, ‘জেমস তোর চিঠির লেখা আমায় বাধ্য করে সব ছেড়ে এখানে আসার জন্য। তা ছাড়া সত্যিই তেমন কোন কাজ আমার এ সপ্তাহে ছিলও না। সাকারিনা যদি ওই রকম কোন কথা বলে থাকে তার অর্থ ও চায়নি আমি এখানে উপস্থিত হই।’

‘বুঝলাম,’ জেমস বললো।‘ স্নেপের পোর্ট্রেট আমাকে জানিয়েছেন যে সাকারিনা আর রিক্রিয়ান্ট মোটেই ভালো মানুষ নয়।  দুজনেই প্রোগ্রেসিভ এলিমেন্ট এর সঙ্গে যুক্ত।’

হ্যারি থেমে ঘুরে দাঁড়িয়ে তাকালেন জেমস, র‍্যালফ আর জ্যানের দিকে। গলার স্বর নিচু করে বললেন, ‘খুব সাবধানে এই সব কথা বলবে। বর্তমানে রিক্রিয়ান্ট আর সাকারিনার মতো মানুষদের নিয়ে মন্ত্রক খুব চিন্তায় আছে। যদিও অনেকের কাছে এরকম ব্যাপার আসলে অতিরিক্ত দেখনদারি ও নজর কাড়ার একটা প্রচেষ্টা। হারমায়োনি চেষ্টা করে যাচ্ছে এইসব প্রচার আটকানোর এবং খুঁজে বার করার কে বা কারা এসবের সঙ্গে যুক্ত সেটা জানার। কিন্তু বিষয়টা বেশ জটিল । রিক্রিয়ান্ট কেবলমাত্র দাবার একটা বোড়ে কিন্তু সাকারিনা খুব সাঙ্ঘাতিক চরিত্র। আমার তো মনে হয় মারলিনকে ফিরিয়ে আনার পেছনে মুল কারিগর ওই।’

ড্যাডের মতই যতটা সম্ভব গলা নামিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলো জেমস, ‘কি? এটা হতেই পারে না। গতকাল রাতে লুক্কায়িত দ্বীপেতো ছিলেন মাদাম ডেলাক্রয়।’

জ্যান বললো, ‘হ্যাঁ, তাইইতো, সাকারিনা তো কাল সন্ধের আগে এখানে আসেনইনি।’

হ্যারি আর গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘সাকারিনা অত বোকা নয় যে আসল কাজ নিজের হাতে করবে। এর জন্য ওর ডেলাক্রয়কে দরকার ছিল। আর সাকারিনার সাহায্য ছাড়া ডেলাক্রয় মারলিনের সিংহাসন মন্ত্রক থেকে হাতাতে পারতো না। রিক্রিয়ান্ট আর সাকারিনা এখানে এসেছে এই ছুতোয় যে ওরা আসলে এক “মাগল ম্যাজিক্যাল রিলেশন” বিশেষজ্ঞকে  নিয়ে এসেছে প্রেস্কট নামক লোকটার সঙ্গে দেখা করাবে। এরকম কোন এক্সপার্টের অস্তিত্বই নেই। মারলিনকে সেই বিশেষজ্ঞরুপে চালিয়ে দেওয়ার একটা প্ল্যান ওদের ছিল বলেই মনে হয়।’

‘তারমানে জাদু জগতের গোপনতা মাগল জগতের সামনে উন্মোচন করা থেকে প্রেস্কটকে আটকানোর কোন ভাবনাই ওদের কখনো ছিলনা!’ র‍্যালফ বললো বিবর্ণ মুখে। ‘সাকারিনা আর মারলিন আসলে একসঙ্গে কাজ করছে এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যাতে প্রেস্কটের গল্প বাইরের জগতে প্রকাশিত হয়?’

হ্যারি মাথা ঝোঁকালেন। ‘আমারও সেটাই মনে হচ্ছে। এসব কোন সুত্রহীন ঘটনার সারি নয়। ঘতে যাওয়া সব কিছু আসলে সাকারিনার মতো কিছু মানুষের পরিকল্পনা। মাগল আর জাদু জগতের একত্র হওয়া দরকার ওদের পরিকল্পনার স্বার্থে। যার একটাই লক্ষ্য যুদ্ধ।’

‘কিন্তু মারলিনের কথা শুনে তো মনে হলোনা যে উনি নিজের ছাড়া আর কোনো পক্ষে থাকবেন,’ জেমস বললো। ‘এটাই কি ওদের পরকল্পনাটাকে ভেস্তে দিতে পারে?’

হ্যারি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘জানি না। ঘটনার প্রবাহ এখন এমন জায়গায় এসে গেছে যে এর গতিরোধ করা খুব কঠিন। সাকারিনার হয়তো মারলিনকে দরকার হবেনা বাকি কাজটা করার জন্য।’

জ্যান জানতে চাইলো, ‘আপনি প্রেস্কটকে থামানোর ব্যাপারে কি ভাবছেন?’

‘থামানো? ভুলে যেওনা আমার এখানে থাকারই কথা ছিল না। সাকারিনার হাতে সব ক্ষমতা।’

‘কিন্তু উনিতো বদমাইশ!’ জেমস বললো। ‘তুমি মোটেই ওকে ওর ইচ্ছে মতো কাজ করতে দিতে পারোনা!’

‘আমরা সেটা করতে দেবোনা জেমস,’ হ্যারি জেমসের কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন। ‘তবে সব কিছু অতি সাবধানে করতে হবে। মন্ত্রকে সাকারিনার প্রভাব অনেক বেশী। আমি একা ওর বিরূদ্ধে কিছু করতে পারব না। ও আশা করে আছে আমি হঠকারী কিছু করে বসবো আর তার ভিত্তিতে ও আমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে। ও চায় অরোর বিভাগটাই বন্ধ হয়ে যাক।  এটাকে টিকিয়ে রাখাটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। জাদুজগতের গোপনতা বজায় রাখার থেকেও বেশি।’

জেমস ড্যাডের চোখে দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তার মানে সাকারিনা আর ডেলাক্রয় জিতে যাবে?’

‘এই মুহূর্তে হয়তো উত্তরটা হ্যাঁ। কিন্তু তোমাদের আশা হারানোর দরকার নেই । নেভিল, হেডমিস্ট্রেস এবং আমার কাছে কিছু তুরুপের তাস এখনো লুকানো আছে। প্রেস্কটের বিষয়ে যা হয় হোক, আমরা শেষ পর্যন্ত টিকে যাবো। এখন প্রশ্ন হলো ওকে এখানে ঢোকার পথটা চেনালো কে?’

‘কাজটা কি সাক্রিনা করতে পারেন না?’ জ্যান বললো।

‘না মোটেই না,’ জেমস উত্তর দিলো। ‘উনি ভো অফ সিক্রেসীতে স্বাক্ষর করেছেন অন্যান্য সব উইচ বা উইজার্ডদের মতো। উনি যদি কোনোভাবে, মানে কোন চিঠি লিখেও প্রেস্কটকে কিছু জানানোর চেষ্টা করে থাকেন তাহলেও গোপনতা রক্ষাকারি শক্তি বা ভো ওকে আটকে দিতো। তাছাড়াও উনি মোটেই জানেন না একটা গেম ডেক কিভাবে কাজ করে বা ওটা দিয়ে কাউকে কি ভাবে হগওয়ারটসের চত্বরে প্রবেশ করানো যায়।’

কথাবার্তা এবং পায়ের শব্দ শোনা গেল ঘোরানো সিঁড়ির ওপর থেকে। হেডমিস্ট্রেস এবং অন্যান্য প্রফেসররা নেমে আসছেন। হ্যারি ইশারা করলেন নিচে নামার।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হ্যারি বললেন, ‘এই জায়গাটাই আমাকে সবচেয়ে ভাবাচ্ছে। সব উইচ এবং উইজার্ড ভো অফ সিক্রেসীর বন্ধনে আবদ্ধ। যে কোনো মাগল অভিভাবক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কন্ট্র্যাক্ট অফ নন-ডিসক্লোজারের বাঁধনে। এর একটাই অর্থ এই জগত সম্বন্ধে জানে এমন কেউ এর কথা বাইরে প্রচার করতে সক্ষম নয়। কিন্তু কেউ একজন সেটাতো করেছেই বোঝা যাচ্ছে। আমাকে খুঁজে বার করতেই হবে কে সেটা ।’

ওরা পৌঁছে গেল ঘোরানো সিঁড়ির একেবারে শেষ ধাপে। ওদিকে হেডমিস্ট্রেস, নেভিল এবং বাকি প্রফেসররাও এসে গেলেন। অপেক্ষমাণ ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ম্যাকগনাগল বললেন।

‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যান, দেখতেই পাচ্ছ আমরা একদম ঠিকঠাক সশরীরে নিচে নেমে এসেছি। অকারণ গুজব এবং ভয় ছড়ানো আটকানোর জন্য আমি কাল থেকে আজ পর্যন্ত ঘটতে থাকা ঘটনা নিয়ে চুপ ছিলাম। এই দু দিনে দুজন মানুষকে অযাচিতভাবে স্কুল চত্বরে প্রবেশ করতে দেখেছি আমরা। প্রথমজন এখনো এখানে আছে। একজন মাগল, নাম মারটিন প্রেস্কট। মানুষটির উদ্দেশ্য যথেষ্টই প্রশ্ন সূচক, কিন্তু আমরা তোমাদের আস্বস্ত করতে পারি যে আমরা তৈরী হয়েছি…’

‘ধন্যবাদ মিনারভা,’ একটা উচ্চকিত রিনরিনে কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ‘আমি ইতিমধ্যেই শিক্ষার্থীদের আজকে কি হবে সেটা সংক্ষেপে জানিয়ে দিয়েছি। আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি তোমার কর্মপদ্ধতির ধারবাহিকতার জন্য। যাই হোক তুমি নিশ্চয় আমাদের সঙ্গে যোগদান করবে?’ সাকারিনা আর রিক্রিয়ান্ট ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। সাকারিনার হাস্যোজ্জ্বল মুখ সকালের আলোয় ঝকমক করছিল। ম্যাকগনাগল বেশ কিছুক্ষণ সাকারিনার দিকে তাকিয়ে থাকার পর শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমরা যে যার ক্লাসে চলে যাও। তোমাদের প্রফেসররা তোমাদের সঙ্গেই ক্লাসে চলে যাবেন এখান থেকে। এবার দেখা যাক বাকি দিনটায় আমরা কি করতে পারি, কি তাইতো?’

‘মিনারভা, আজকের মতো একটা সৃষ্টিছাড়া দিনে, তোমার কি মনে হয় ক্লাসে যাওয়াটা খুব দরকার?’  হেডমিস্ট্রেস এবং বাকিরা একেবারে নিচে নেমে আসার পর প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন সাকারিনা।

‘সৃষ্টি ছাড়া দিনগুলোই ক্লাসে যাওয়ার পক্ষে আদর্শ দিন, মিস সাকারিনা,’ ম্যাকগনাগল উত্তর দিলেন, পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যেতে। ‘আশা করছি কেউ ভুলে যাচ্ছেননা এই দুর্গে আমাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ কি? এক্সকিউজ মি?’

‘হ্যারি,’ মিঃ রিক্রিয়ান্ট ডাকলেন, একটু অতি উৎসাহব্যঞ্জক হাসি সহ। ‘স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, ব্রেন্ডা এবং আমি আশাই করিনি আজ এখানে তোমাকে দেখতে পাবো। নিশ্চয় পারিবারিক কিছু?’ জেমসের দিকে তাকিয়ে হাসলেন, সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গেই তাকালেন র‍্যালফ এবং জ্যানের দিকেও।

হ্যারি কাষ্ঠ হাসি হেসে বললেন, ‘আমিও অবাক হয়েছি তোমাদের দুজনকে এখানে দেখে। এরকম কোন নথি আমার চোখে পড়েনি যাতে তোমরা আল্মা আলেরন অতিথিদের সঙ্গে পুনরায় দেখা করবে বলা আছে। আর আমি যে নথিপত্র খুব মন দিয়ে দেখাশোনা করি সেটা তোমরা ভালো ভাবেই জানো।’

সাকারিনা হ্যারির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন ছাত্র ছাত্রীদের জটলা থেকে। তারপর অতি গোপন কথা বলার ভঙ্গীতে বললেন, ‘সত্যিই খুব অবাক করা ব্যাপার এটা। খুব ভয়ানক পরিস্থিতি। নিশ্চিত মিনারভা তোমাকে বলেছেন এ ব্যাপারে তাইনা? মারটিন প্রেস্কট, একজন মাগল সাংবাদিক স্কুল চত্বরে ঢুকে পড়েছে। যদিও মন্ত্রক মনে করছে এটা অনিবার্য একটা ব্যাপার।’

হ্যারি  দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে সাকারিনার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তাই বুঝি?’  তা লোকোয়াশিয়াস ন্যাপ জানেন এ বিষয়ে?’

‘মন্ত্রীমশাই সাধারন ঘটনাবলী সম্বন্ধে সব সময় অবহিত থাকেন,’ রিক্রিয়ান্ট উত্তর দিলেন। ‘আমরা এই সাধারণ ব্যাপারটা ওনাকে জানিয়ে ব্যতিব্যস্ত করতে চাইনি।’

‘ও তার মানে উনি এটাও জানেননা যে তোমরা এখানে এসেছো?’ হ্যারি হাল্কা একটা হাসির  সঙ্গে বললেন।

‘হ্যারি,’ সাকারিনা মোলায়েম কণ্ঠে বললেন, ‘ব্যাপারটা হলো এই ধরনের ঘটনাগুলো ডিপার্টমেন্ট অফ  অ্যাম্বাসাডোরিয়াল রিলেশনস এর আওতায় পড়ে। আমি নিশ্চিতভাবে এটা বলতেই পারি তুমিও নিশ্চয় অরোর বিভাগীয় ছোটখাটো সব কাজ করার আগে মন্ত্রীর স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য দৌড়াও না। আমরাও  তেমনই আমাদের সব কাজকর্ম করার আগে ওঁর সম্মতি আদায় করি না। তা, তুমি কি আজকের দিনটা থাকছো এখানে?’

হ্যারি শান্ত ভাবে বললেন, ‘মনে তো তাই হচ্ছে ব্রেন্ডা। থাকতে হবে। কি ভাবে ডিপার্টমেন্ট অফ  অ্যাম্বাসাডোরিয়াল রিলেশনস এরকম পরিস্থিতিতে নিজেদের কাজ কর্ম করে দেখার আগ্রহ হচ্ছে। তাছাড়া, আমার মনে হয় তুমি এটা মেনে নেবে যে একজন অন্য ক্ষেত্রের ব্যক্তি এরকম কাজে সাক্ষী হিসাবে থাকাটা বেশ কার্যকরী, মানে যদি কখনো জিজ্ঞাসাবাদের ঝামেলা আসে?’

‘বেশ, নিজেকে তৈরি রাখুন মিঃ পটার,’ সাকারিনা বললেন, মুখে হাসি অন্তর্হিত হয়েছে কথাটা শুনেই। ‘আজ বিকেল চার্টের মধ্যে সব মিটে যাবে। প্রেস্কটের দল এখানে হাজির হবে আর ওরা সব ঘুরে দেখে নেবে।   একে আটকানোর আর কোনো পথ আমাদের সামনে খোলা নেই। মি” প্রেস্কট আটঘাট বেঁধেই কাজে নেমেছেন। তুমি আমাদের সঙ্গে থাকতেই পারো কিন্তু নাক গলানোর চেষ্টা না করলেই খুশি হবো। সেটা করাটা তোমার পক্ষে ভালো হবেনা। তবে আমি জানি এ কথাগুলো তোমাকে আমার বলার কোন দরকারই নেই, তাইনা?’

‘প্রধান দরজার কাছে নাক ডাকিয়ে ঘুমটা ভালোই হয়েছে আপনাদের কি বলেন?’ সাকারিনা ঘুরতেই জ্যান প্রশ্নটা হাল্কা করে ছুঁড়ে দিলো। থেমে গিয়ে জ্যানের দিকে এগিয়ে এলেন সাকারিনা।

‘কি বলতে চা্লছো তুমি, ইয়ং ম্যান?’ জানতে চাইলেন। হ্যারি একইসঙ্গে অবাক এবং মজা পাওয়ার ভঙ্গীতে তাকালেন জ্যানের দিকে।

জ্যান বললো, ‘না মানে আসার সময় দেখেছিলাম আপনারা দুজনেই ওখানে শুয়ে ছিলেন। মারলিনের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে ছিল বোধহয় আপনাদের। অবশ্য উনি সম্ভবত আপনাদের চেয়েও বড় কোন রাঘব বোয়ালকে খুঁজছিলেন ! যে কারনে আপনাদের পাত্তাই দেননি। শয়তানি চোখের চাহনি দিয়ে আপনাদের ওখানেই ঘুম পাড়িয়ে দেন। ইস, খুবই কষ্টের ব্যাপার।’

সাকারিনার কাষ্ঠহাসি ফেরত এলো মুখে, এটার অর্থ এই মুহূর্তে উনি কিছু একটা ভাবছেন। চোখ ঘুরলো হ্যারির দিকে। ‘জানি না এই সব বাচ্চাদের মাথায় কিসব উদ্ভট গল্প আপনারা ঢুকাচ্ছেন মিঃ পটার। তবে এটা বলতেই পারি মন্ত্রকের অফিসিয়ালদের এই সব গল্প শুনিয়ে কোন লাভ নেই। ওই মারলিন বা ওই জাতীয় কিছু।’ মাথা নেড়ে এগিয়ে গেলেন ধনুকাকৃতি দরজার দিকে, অনুসরণ করলেন মিঃ রিক্রিয়ান্ট কিছুটা অস্বস্তির ভাব নিয়ে।

হ্যারি জ্যানের মাথার চুল নেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, ‘মানুষ কে কি করে খেপিয়ে দিতে হয় সেটা ভালোই জানা আছে দেখছি।’

‘আমার ড্যাড বলেন এটা আমার একটা বিশেষ ক্ষমতা,’ জ্যান সায় দিয়ে বললো। ‘কিন্তু মম বলেন এটা মোটেই ভালো কাজ না। কে জানে কে ঠিক?’

সিল্ভীন টাওয়ার ছেড়ে ওই একই ধনুকাকৃতি দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে র‍্যালফ বললো, ‘দেখে মনে হচ্ছিল মিস সাকারিনা যত না রেগে ছিলেন তার চেয়ে বেশী হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন।’

‘হতেই পারে,’ হ্যারি বললেন। ‘হয়তো মারলিন যাদের যাদের ঘুম পাড়িয়েছিল তাদের গতরাতের কথা মনেই নেই। সাকারিনার হয়তো এটাও মনে নেই গত রাতে এখানে এসেছে।’

‘তার মানে উনি হয়তো কি এখনো এটাই ভাবছেন যে প্রেস্কট এবং তার দলের সঙ্গে দেখা করার সময় মারলিনের আবির্ভাব হবে?’

‘সম্ভবত তাই। অবশ্য মারলিনের দেখা না পাওয়াটা খুব বেশী সময় সাকারিনাকে উজ্জীবিত করবে বলে মনে হয় না। মারলিন তো এতক্ষনে নিষিদ্ধ অরণ্যের অর্ধেক পেরিয়ে গেছেন, তার বিস্বস্ত ট্রী স্পিরিটদের সাহচর্যে। নিশ্চিত ভাবেই ওরা এখন জেগে উঠেছে।’

জেমস থমকে দাঁড়ালো। কয়েক পা এগিয়ে যাওয়ার পর সেটা বুঝে হ্যারিও থেমে গেলেন এবং ঘুরে ছেলের দিকে তাকালেন। জেমস বিস্ফারিত চোখে কিছু একটা ভাবছে। তারপরই চোখের পলক ফেলে ড্যাডের দিকে তাকালো।

‘আমাকে নিষিদ্ধ অরণ্যে যেতে হবে,’ বললো। ‘খুব একটা দেরী হয়নি বোধহয়। ড্যাড তুমি কি আমার সঙ্গে যাবে? জ্যান, র‍্যালফ তোরা যাবি?’

হ্যারি ছেলেকে একটাও প্রশ্ন করলেন না। কয়েক সেকেন্ড ধরে তাকিয়ে থাকলেন জেমসের মুখের দিকে, তারপর তাকালেন জ্যান আর র‍্যালফের দিকে। ‘কি তোমরা কি করতে চাও? ইচ্ছে আছে নাকি একটু অ্যাডভেঞ্চারের?’

জেমস এগিয়ে গেল অরণ্যের দিকে, একটু পিছনে হ্যারি, জ্যান আর র‍্যালফ। ছোট ছোট গাছের সারি পেছনে ফেলে জেমস এগিয়ে চললো অরণ্যের গভীরে, যেখানে গাছগুলো আকারে প্রকারে বিশাল। যাদের ঘন পাতার ছাউনী পেরিয়ে সূর্যের আলো মাটিতে পৌছায় না। বেশ খানিকক্ষণ ওরা চারজন নিঃশব্দে হাঁটার পর একসময় জেমস থামলো । চারদিকটা দেখলো। এদিকে ওদিকে নড়া চড়া করতে থাকা গাছপাতার দিকে তাকালো। ডাল পাতার খসখসানি ছাড়া কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না আশেপাশে। হ্যারি, জ্যান আর র‍্যালফ ফুট কুড়ি দূরে দাঁড়িয়ে চুপচাপ দেখছিল। জেমস চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপর চোখ খুলে  চারদিকের বড় বড় গাছগুলোর দিকে তাকালো ভালো করে । তারপর কথা বলা শুরু করলো ।

 ‘আমি জানি এখনো তোমাদের অনেকেই আছো যারা জেগে ওঠোনি।  আর আমি এটাও জানি তোমাদের মধ্যে যারা জেগে উঠেছো তাদের অনেকেই আমাদের পক্ষে নও। কিন্তু এখানে যারা আমার কথা শুনতে পাচ্ছো, তারা হয়তো আমায় একটু সাহায্য করো। মারলিন এখানেই কোন এক জায়গায় আছেন। হয়তো অনেক অনেক দূরে আছেন এই মুহূর্তে, তবে আমার মনে হয় তোমরা জানো উনি এখন কোথায়।  উনি  তোমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আমি নিশ্চিত তোমরা তার সঙ্গে কথা বলেছ। আমি জানি তোমরা কথা বলতে পারো, কারণ আমরা সঙ্গে  তোমাদের একজনের কথা হয়েছে। মারলিনেরকে আমার কিছু কথা বলার আছে।’

জেমস থামলো, বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলো, ঠিকঠাক জানেনা ও কি বলবে। ওর কেন জানিনা মনে হয়েছে ওর একটা চেষ্টা করা উচিত। ও ব্যবহৃত হয়েছে ডেলাক্রয় দ্বারা মারলিনকে এই জগতে ফিরিয়ে আনার জন্য।  যদিও অনেকেই চেষ্টা করেছিলেন মনপ্রাণ দিয়ে সেটা আটকানোর। তাকে একটা খেলার পুতুলের মতো ব্যবহার করা হয়েছে এটা জানতে পারাটাই ওর কাছে একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। ওই সময়টায় ও সমানে ভেবে গেছে যা করছে ভালোর জন্য করছে, এই জগতটাকে রক্ষা করতে চলেছে শয়তানদের হাত থেকে, ঠিক ওর ড্যাডের মতো। যদিও ওর ইচ্ছে ছিল বাবার পথে না হাঁটা, ইচ্ছে ছিল সব কিছুর উল্টো করা। চেষ্টা করেছিলো সব কিছু একা হাতে করার, যেমন ওর ড্যাড করেছিলো, কিন্তু পারেনি। উলটে ও সাহায্য করে গিয়েছে শয়তান পক্ষকে। এখন সেই শয়তান চাইছে সে যেন এসব থেকে দূরে থাকে। জেমস তো সেটা হতে দিতে পারেনা। এবার ওর চেষ্টাটা হবে একটু অন্যভাবে। যার জন্য হয়তো সময় লাগবে, যে চেষ্টা হয়তো কোন ফল দেবেনা, কিন্তু চেষ্টা ওকে করতেই হবে। হয়তো এটাই ওর আসল কাজের পথ।

‘মারলিন,’ জেমস আস্থাহীন কণ্ঠে বললো, ‘আপনি বলেছিলেন অ্যাস্ট্রামাড্ডুক্স আপনাকে ভুল করে আমাদের সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। আপনি বলেছেন সে ছিল স্বার্থপর। কেবলমাত্র আপনার কাছে শপথ করা নিজের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়াটাই ওর লক্ষ্য ছিল । কিন্তু আমাদের হেডমিস্ট্রেস ম্যাকগনাগল মনে করেন আপনি ভুল ভাবছেন।  উনি মনে করেন এটাই সঠিক সময় আপনার ফিরে আসার। কারণ এই জগত আপনার সাহায্য চায় একটা যুদ্ধ থামানোর জন্য যা সম্ভবত আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দেবে।  যাইহোক… আমি জানি আমি একটা ছোট বাচ্ছা, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আপনারা দুজনেই ভুল ভাবছেন।’

জেমস ড্যাডের দিকে তাকালো। হ্যারি কাঁধ ঝাঁকিয়ে সম্মতিসূচক ভঙ্গী করলেন।

‘আমি সব শুনেছি যা আপনি বলেছেন এবং আপনি চলে যাওয়ার পর কে কি বলেছেন সেটাও।  সেসব থেকে মনে হয়েছে আপনাকে এই সময়ে আনা হয়েছে তার কারণ আপনার কিছু একটা দরকার আছে। আপনি নিজেই ঠিকঠাক জানেন না আপনি যা যা করেছেন সেগুলো ঠিক না ভুল। আপনি জানেন না, আপনি আপনার শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেন নাকি ঐ শক্তি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমার মনে হয় সত্যি এটাই যে এই জগতের এখন যেমন আপনাকে দরকার তেমনই এই জগতটাকেও আপনার দরকার । এটাই আপনার সুযোগ – হয়তো এটাই আপনার শেষ সুযোগ – নিজেকে প্রমান করার যে আপনি একজন ভালো উইজার্ড । শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ জল্পনা করে এসেছে  আপনি ভালো না মন্দ। কিন্তু ইতিহাস কি বললো তাতে কি যায় আসে? যদি আপনি নিজের হৃদয় থেকে জেনে থাকেন যে আপনি ঠিক জায়গায় ঠিক কাজ করেছেন তাহলে কে কি বললো তা নিয়ে ভাবার কি দরকার। আমি এটা এজন্য বলছি না যে আমি এটা ভালো মতো বুঝতে পেরেছি, কিন্তু এটা বলতে পারি যে আমি চেষ্টা করছি শেখার। মারলিন আপনি এখন এই জগতে কেন এটা ভাবার আর কোন মানে নেই। যেই আপনাকে এখানে নিয়ে আসুন তার কারণ শুধু এই জগতকে বাঁচানো নয় , বরং … আমার মনে হয় আপনি এখানে এসে পড়েছেন আপনার নিজের মন্দ সত্তা থেকে নিজেকে বাঁচানোর প্রয়োজনে।’

জেমস কথা শেষ করে করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলো।ওপর দিকে তাকালো, গাছগুলোর দিকে, বোঝার চেষ্টা করলো তার বলা কথাগুলো কারো কানে পৌছালো কিনা; বা কথাগুলো যাকে বলা তার কাছে গেল কিনা। গাছের পাতা আগের মতোই হুসহাস শব্দে নড়াচড়া করছিলো। ডালপালা নড়ছিল অতি ধীরে ধীরে। মিনিট খানেক বাদে, জেমস পকেটে হাত ঢুকিয়ে হতাশভাবে ফিরে এলো ড্যাড, জ্যান আর র‍্যালফের কাছে।

জ্যান জেমসের কাঁধে একটা আলতো চাপড় মেরে ফেরার জন্য ঘুরলো। সঙ্গে সঙ্গেই বললো, ‘এটা ছিল আমার শোনা সবচেয়ে বড় মাপের জ্ঞানদানের বক্তব্য। তবে আমার মনে হয় কথাগুলো তুই ঠিকই বলেছিস। আমার কথাগুলো খুবই পছন্দ হয়েছে, যদিও ওগুলো মারলিনের কানে হয়তো পৌছালোনা।’

র‍্যালফ জানতে চাইলো, ‘ওই সব কথাগুলো তুই নিজে থেকে ভেবে বানিয়ে বললি?’ জেমস কাঁধ নাচিয়ে মুচকি হাসলো।

হ্যারি হাঁটার সময় একটাও কথা বলেননি, তবে পুরো পথটা জেমসের কাঁধের ওপর হাত রেখে ওর পাশে পাশে হেঁটে এসেছেন। জেমসের মনে হয়েছে এর অর্থ ড্যাড ওর কাজটাকে সমর্থন করেছেন, যদিও উনি নিজে হয়তো এইভাবে কাজটা করতেন না।  তারপরই জেমস অনুভব করলো ড্যাড এটা মেনে নিয়েছেন কারণ ও কাজটা ওঁর পদ্ধতিতে করেনি। জেমস একটু হাসলো নিজের মনে বিষয়টা উপলব্ধি করে। হয়তো এই সত্যিটা বোঝা– যে সত্যি কোনও একজনকে নিজে নিজে শিখতে হয় । যদিও বেশীরভাগ মানুষ এটা শেখানোর চেষ্টা করেন কিছু কথাবার্তা বলে–এই শিক্ষাটা সত্যিই অনেক অনেক দামী যা ঘটলো তার নিরিখে। এখন শুধু আশা করতে পারে আগামীতে যা ঘটতে চলেছে তার তুলনায় এটা গুরুত্বপূর্ণই হয়ে থাকবে।

 

[চলবে]

লেখক পরিচিতিঃ  জর্জ নরম্যান লিপার্ট আমেরিকান লেখক এবং কম্পিউটার অ্যানিমেটর। তবে ওনার বর্তমান পরিচয় উনি জেমস পটার সিরিজের লেখক। যে কারনে ওনাকে “আমেরিকান রাউলিং” নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এই সিরিজের প্রথম লেখা “জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং” প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। নানান কারনে এটি অনেক বিতর্কে জড়িয়ে যায়। সেসব সমস্যা পেরিয়ে আজ এটি পাঠক পাঠিকাদের চাহিদায় সারা বিশ্বে যথেষ্ট জনপ্রিয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই সিরিজের সব কটি বই ই-বুক এবং ফ্রি হিসাবেই প্রকাশ করেছেন মাননীয় জর্জ নরম্যান লিপারট। এই সিরিজ ছাড়াও ওনার আরো ১২ টি বই আছে। বর্তমানে উনি এরি, পেনসিল্ভ্যানিয়ার বাসিন্দা।

অনুবাদকের পরিচিতিঃ উপন্যাসটির অনুবাদক প্রতিম দাস মূলত চিত্র শিল্পী, ২০১৩ সাল থেকে ভারতের সমস্ত পাখি আঁকার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছেন। ৭৭৫+ প্রজাতির ছবি আঁকা সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে শুধু পাখি নয় অন্যান্য বিষয়েও ছবি আঁকা চলে একইসঙ্গে। দারুণ রকমের পাঠক, যা পান তাই পড়েন ধরনের। প্রিয় বিষয় রূপকথা, ফ্যান্টাসী, সায়েন্স ফিকশন, অলৌকিক। টুকটাক গল্প লেখার সঙ্গে আছে অনুবাদের শখ। 

Tags: জর্জ নরম্যান লিপারট, জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং, জেমস পটার এ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং, ধারাবাহিক উপন্যাস, প্রতিম দাস, সুদীপ দেব

2 thoughts on “জেমস পটার অ্যান্ড দ্য হল অফ এল্ডারস ক্রসিং – পার্ট ১৮

  • Giridhar Maji

    Proton Babu ar ektu haat chalan…khub Valo cholchhe…aapnar deri dekhe majhe English tai PDF namiye porbo vebechilam. Apni Abar Suru korechhe dekhe besh Valo laglo. Tobe besi wait koraben na…week e Ekta kore chapter din.

    Reply
    • কল্পবিশ্ব পত্রিকা

      প্রতিম বাবু, সব কটাই দিয়ে দিয়েছেন। আসলে সেগুলো প্রুফ চেক করে পাবলিশ করতে কল্পবিশ্বের একটু দেরী হয়েছে। বাকি চ্যাপ্টারগুলো প্রতি সপ্তাহে একটি করে যাতে আসে সেটা আমরা দেখছি। পরের সংখ্যা এসে গেছে।

      Reply

Leave a Reply

Connect with

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!
Verified by MonsterInsights