কল্পবিজ্ঞানে ভূবিজ্ঞানের প্রভাব
লেখক: প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত
শিল্পী: সৌরভ ঘোষ
কল্পবিজ্ঞান বর্তমানে সাহিত্যের একটি বিশেষ ধারা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ভাষায় শত শত কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি সৃষ্টি হচ্ছে। কল্পবিজ্ঞানের কাহিনির রচয়িতাদের মধ্যে অনেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, প্রথিতযশা সাহিত্যিক, চলচ্চিত্রকাররা রয়েছেন। লিখিত কাহিনি ছাড়াও অনেক কল্পবিজ্ঞানের গল্প জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। কল্পবিজ্ঞানের মধ্যে যে বিষয়গুলি সবচেয়ে বেশি তুলে ধরা হয় তা হল, ভবিষ্যতের পৃথিবী, মহাকাশযাত্রা, অন্যগ্রহের প্রাণ, প্রাণরসায়ণ, আশ্চর্য ওষুধ, বিচিত্র প্রাণ বা প্রাণী, যন্ত্রমানবের কাণ্ডকারখানা, মহাকাশযুদ্ধ ইত্যাদি। এর মধ্যে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, কমপিউটার, কৃত্রিম বুদ্ধি ইত্যাদি বিজ্ঞানের বিষয়গুলি নিয়ে যতটা চর্চা হয় সে তুলনায় ভূতত্ত্বের চর্চা কিছুটা কম। বিজ্ঞানের অন্য শাখার বিজ্ঞানীরা কল্পবিজ্ঞান রচনায় যতটা এগিয়ে এসেছেন ভূতাত্ত্বিকদের অংশগ্রহণ সে তুলনায় নগন্য।
অন্যদিকে চলচ্চিত্রে রূপায়িত যে কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিগুলি বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার অধিকাংশের ক্ষেত্রেই কিন্তু গল্পের ভূতাত্ত্বিক উপাদানগুলিই দর্শক আকর্ষিত করেছে সবচেয়ে বেশি। তার সবচেয়ে বড় কারণ গল্পের দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষের ঘটনাগুলিতে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী অথবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা দেখানো হয়ে থাকে যা একদিকে উত্তেজক আবার অন্যদিকে দৃষ্টিনন্দনও বটে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে জুরাসিক পার্ক, জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ও ভলক্যানো, বা সুনামি নামের চলচ্চিত্রগুলির উল্লেখ করতে পারি। আমার এই প্রবন্ধের থেকে আপাততঃ চলচ্চিত্র ও গ্রাফিক উপন্যাসগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখছি। শুধুমাত্র লিখিত উপন্যাস এবং গল্প নিয়েই আলোচনা করব।
ভূতাত্ত্বিক কল্পবিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার আগে আমি ভূতত্ত্ব কাকে বলে এবং ভূতত্ত্বের কোন দিকগুলি কল্পবিজ্ঞানের বিষয় হতে পারে তাই নিয়ে একটু আলোচনা সেরে নিই। অভিধানে ভূতত্ত্বের যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে তা হল, এটি এমন একটি বিষয় যা পৃথিবীর বিবর্তন এবং প্রাকৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। পৃথিবীর বিভিন্ন শিলাস্তর এবং যে সব উপাদান দিয়ে পৃথিবী গঠিত এবং পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীতে যে ভৌতিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক পরিবর্তনগুলি হয়েছে বা হচ্ছে তা অধ্যয়ন করাই ভূবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে ভূবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হল ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, হিমবাহ, ইত্যাদি গতিশীল এজেন্টগুলি যেগুলি এই পৃথিবীর প্রতিটি ল্যান্ডস্কেপ গঠন করেছে ও নিয়ত পরিবর্তন করছে। পৃথিবীর অভ্যন্তর, জীবনের ক্রমবিকাশ, পুরাজীববিদ্যা ও জীবাশ্ম, শিলা ও খনিজপদার্থ, খনন ও প্রসপেক্টিং, মানচিত্র রচনা, উল্কা ও বহির্বিশ্বের শিলা ইত্যাদিও ভূতত্ত্বের বিশেষ অধ্যয়নের বিষয়। কাজেই যদি কোনও কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিতে ভূতাত্ত্বিক কারণজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়, প্রাগৈতিহাসিক জীবের সঙ্গে সংঘাত, পৃথিবীর অভ্যন্তর, উল্কাপাতজনিত বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, পৃথিবীর প্রাকৃতিক ইতিহাস ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয় তাকে ভূতাত্ত্বিক কল্পবিজ্ঞান আখ্যা দেওয়া যেতেই পারে। একটা কথা বলা দরকার, তা হল, আজকের দিনের ভূবিজ্ঞান শুধুমাত্র পৃথিবীতেই আটকে নেই, এটা সমগ্র সৌরমন্ডলকে তার অধিক্ষেত্র বানিয়েছে। কল্পবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ভূবিজ্ঞানের বিস্তার অন্য নক্ষত্রমন্ডলীর অন্য কোনও গ্রহে পৌঁছাতেই পারে।
বিজ্ঞানে অন্যান্য বিষয়গুলির তুলনায় ভূতত্ত্ব অনেকটাই নতুন। এর যাত্রা শুরু বলতে গেলে উনিশ শতকে, যখন ভূতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলি মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করছিল, পৃথিবী ও মানবজাতির উত্স সম্পর্কে নতুন নতুন জ্ঞান পুরোনো বিশ্বাসের স্তম্ভগুলিকে একে একে ভেঙে দিচ্ছিল, পৃথিবীর ইতিহাস নতুন করে লেখা হচ্ছিল। অ্যাডেলিন বাকল্যান্ডের (Buckland, 2013) ‘বিজ্ঞান: কথাসাহিত্য এবং উনিশ শতকের ভূতত্ত্বের আবিষ্কার’ গ্রন্থে তিনি বলেছেন যদিও ভূতত্ত্ব বিজ্ঞা্নের বিষয় হিসাবে আরও আগেই আত্মপ্রকাশ করেছে কিন্তু তা পাঠ্য বিষয় রূপে এবং মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনে প্রবেশ করেছে উনবিংশ শতকেই। ভিক্টোরিয়ান যুগের অনেক উপন্যাসেই ভূতাত্ত্বিক ঘটনাবলী হয় গল্পের পটভূমি রচনায় অথবা কাহিনির মোড় ঘোরাতে সাহায্য করেছে, যদিও সেগুলি কল্পবিজ্ঞান ছিলোনা।
১৯৬১ সালে প্যাঙ্গবর্ন (Pangborn, 1961) ভূতাত্ত্বিক কল্পবিজ্ঞান নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি সে সময় পর্যন্ত প্রকাশিত কুড়িটি কল্পবিজ্ঞানের কাহিনির উল্লেখ করেছেন যার মূল বিষয় হল ভূতত্ত্ব। তিনি বলেছেন জনপ্রিয় ভূকল্পবিজ্ঞানের মূল আকর্ষণ হল প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী এবং ভূমিকম্প ও অগ্নুৎপাতের মতো ঘটনাগুলি, যেখানে এরাই গল্পের ভিলেন।
ভূতত্ত্ব নিয়ে কল্পবিজ্ঞানের সাহিত্য সংখ্যায় কম হলেও ভূতাত্ত্বিক কল্পবিজ্ঞানের যাত্রা কিন্তু কল্পবিজ্ঞানের আদিকাল থেকেই শুরু হয়েছে। কল্পবিজ্ঞানে ক্ষেত্রে ভূতত্ত্বের আত্মপ্রকাশ উনবিংশ শতকেই ঘটেছে। এখানে দুটি জনপ্রিয় কাহিনির আমি উল্লেখ করতে চাই। একটি হল জুলে ভার্ণের ‘জার্নি টু দি সেন্টার অফ দি আর্থ’ যেখানে একটি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রবেশ এবং ভূত্বকের নীচে আর একটা জগতের সন্ধান পাওয়ার কথা রয়েছে। ১৮৯৪ সালে প্রকাশিত একটি কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি হল ‘এ জার্নি ইন দি আদার ওয়ার্লডস’ (লেখক জন জ্যাকব অ্যাস্টর IV)। এখানে মূল চরিত্র একজন ভূতাত্ত্বিক। কাহিনির সময় ভবিষ্যতের পৃথিবী (২০০০ সাল) যখন বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশ আমেরিকার দখলে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র এমন একটা কোম্পানিতে কাজ করে যারা পৃথিবীর হেলানো অক্ষকে সোজা করতে চায়। গল্পটির সঙ্গে জুলে ভার্ণের ‘দি পারচেজ অফ দা নর্থ পোল’ গল্পের বেশ কিছুটা মিল আছে। সেখানেও একটি আমেরিকান কম্পানি বরাত পেয়েছে উত্তর মেরুর দখলদারির। তাদেরও লক্ষ্য পৃথিবীর অক্ষকে সোজা করা। তবে জুলে ভার্ণের কাহিনিটি ১৮৮৯ সালে প্রকাশিত হয়।
আরও একটি কাহিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাহল আর্থার কোনান ডয়েলের দা লস্ট ওয়ার্ল্ড। এটির বিষয় হল একটি অনাবিষ্কৃত অজানা দ্বীপে প্রাগৈতিহাসিক জীবের সন্ধান পাওয়া। কোনান ডয়েলের আর একটি কাহিনি ‘হোয়েন দা ওয়ার্লড স্ক্রিমড’ এর বিষয় ও ভূতত্ত্ব। এখানেও প্রফেসর চ্যলেঞ্জার কাহিনির নায়ক। তিনি ভূত্বকের ভিতর দিয়ে ড্রিল করে পৃথিবীর ম্যান্টেল পর্যন্ত গিয়ে এক অদ্ভুত জীবের সন্ধান পান যা ভয়ঙ্কর।
প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের নিয়ে অসংখ্য কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি আছে যা শুরু করেছিলেন জুলে ভার্ন ও কোনান ডয়েল। এই ধারা আজ পর্যন্ত বহমান। জুল ভার্নের ধারার একজন উত্তরসূরী হলেন এডগার রাইস বারোজ। তিনি প্রাগৈতিহাসিক সময় নিয়ে ‘দা ল্যান্ড দ্যাট টাইম ফরগট’ (১৯১৮) নামে যে উপন্যাসটি লেখেন তার প্রধান বিষয় হল অজানা দ্বীপ এবং প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী। প্রাগৈতিহাসিক প্রাণ নিয়ে কল্পবিজ্ঞান একবিংশ শতকেও যে সমানভাবে জনপ্রিয় হতে পারে তার প্রমাণ ২০০৮ সালে প্রাকাশিত ‘ক্রিটেসিয়াস ডন’ (লেখক লিসা এম গ্রাজিয়ানো এবং মাইকেল এসএ গ্রাজিয়ানো)। এর গল্পটি আধুনিক সময়ে শুরু হয়ে এবং ৬৫ মিলিয়ন বছর আগেকার (ক্রিটেসিয়াস সময় শেষে) প্রাগৈতিহাসের প্রেক্ষাপটে সমাপ্ত হয়েছে। এই ধারার উপন্যাস স্টিফেন ব্যকস্টারের ‘দা ম্যামথ ট্রিলজি’ ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সালের মধ্যে লেখা তিনটি গ্রন্থ যার মধ্যে শেষ হিমযুগের প্রাণী ম্যামথ প্রধান চরিত্র। মানুষ (হোমো স্যাপিএন্স) এর আগ্রাসনে কীভাবে আরেকটি মানব প্রজাতি নিয়ান্ডারথাল সম্পূর্ণভাবে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল তাই নিয়ে লেখা উপন্যাস হল উইলিয়াম গোলডিং এর ‘দি ইনহেরিটার্স’ (১৯৫৫)।
জাঁ ব্রুলার (ছদ্মনাম Vercors) নামে একজন ফরাসি কল্পবিজ্ঞানের লেখক ১৯৫২ সালে ‘ইউ শ্যাল নো দেম, দা মার্ডার অফ দা মিসিং লিঙ্ক’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন। এই অসাধারণ উপন্যাসে অনেকটা মানুষের মতো দেখতে নিউগিনির এক আদিম মানবের কথা বলা হয়েছে যাদেরকে সেখানকার খনির মালিকরা বিনা পয়সার শ্রমিক হিসাবে কাজে লাগাতে চায়। কিছুটা ভূতত্ত্ব ও কিছুটা সমাজ বিজ্ঞানের মিশেল দেওয়া এই উপন্যসটি চলচ্চিত্রেও রূপান্তরিত হয়। এই বইতে মানুষের সংজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
ভূতাত্ত্বিক কল্পবিজ্ঞানের অন্যতম চর্চিত বিষয় হল ভূমিকম্প। এই নিয়ে অনেক উপন্যাস লেখা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ‘দি আর্থকোয়েক’ (১৯০৬) নামে উইলিয়াম হল্ট হোয়াইট একটি উপন্যস লেখেন যার মধ্যে ১৯০৭ সালে ইংল্যান্ডে একটি কাল্পনিক ভূমিকম্পের কথা বলা আছে। কল্পবিজ্ঞানের একেবারে প্রথম যুগে ভূমিকম্প ও তার ভয়াবহতার এত নিখুঁত বর্ণনা করা হয়েছে যে এই বইটির জন্য তাঁকে জুলে ভার্ণের সঙ্গে এক আসনে বসানো যেতে পারে।
১৯০৬ সালে সান ফ্রান্সিস্কোতে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটেছিল সেটি অনেক কল্পবিজ্ঞানের কাহিনির জন্ম দিয়েছিল। তার মধ্যে একটি হল জেমস ডালেসান্ড্রো এর লেখা ‘1906’। প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে এটি একটি বিকল্প-ঐতিহাসিক উপন্যাসও বটে। বেথ কাট এর উপন্যাস ‘ব্রিদ অন আর্থ’ ১৯০৬ সালের ভূমিকম্পের উপর ভিত্তি করে রচিত এবং এর মধ্য দিয়েও এক বিকল্প ইতিহাসের ন্যারেটিভ গড়ে উঠেছে। এই ভূমিকম্পকে কাহিনির মূল সূত্র বানিয়ে আর্থার ক্লার্ক ১৯৯৬ সালে ‘Richter 10’ নামে একটি কাহিনি লেখেন যেখানে ১৯০৬ সালের সান ফ্রান্সিস্কোর ভূমিকম্পে সর্বস্ব হারনো একটি ছেলে ভবিষ্যতে একজন ভূকম্পবিশারদ হয়ে পৃথিবীকে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কার করে। সে জানতে পারে ৮.৬ মাত্রার থেকেও বড় একটি ভূমিকম্প ঘটতে চলেছে।
বিংশ শতাব্দীর কল্পবিজ্ঞানে এইচ পি লাভক্র্যাফট একটি অতি জনপ্রিয় নাম। তিনিও ভূতত্ত্বকে প্রধান বিষয় করে একটি উপন্যাস লেখেন যার নাম ‘অ্যাট দা মাউনটেইনস অফ ম্যাডনেস’ (Lovecraft, 1931)। উত্তম পুরুষে লেখা এই গল্পের নায়ক একজন ভূতাত্ত্বিক। তিনি আন্টার্কটিকায় একটি অভিযান বন্ধ করতে চান, কারণ তার আগের এক অভিযানে তিনি সেখানে হিমালয়ের থেকেও উঁচু একটি পর্বত পার হয়ে কয়েকটি প্রাগৈতিহাসিক জীবের সন্ধান পান। সেই সব প্রাণীরা, ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের হলেও তারা অত্যন্ত উন্নত। লাভক্র্যাফটের এই উপন্যাসের পিছনে রয়েছে ভূতাত্ত্বিক সময় এবং জীবাশ্ম সম্পর্কে তাঁর ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান। এ ছাড়াও এই কাহিনিতে তিনি ওয়াগনারের মহীসঞ্চালনের তত্ত্বকেও তুলে ধরেছেন। জেমস ব্লিশের লেখা দা ‘ফ্রোজেন ইয়ার’ (১৯৫৭) বইটিতে উত্তর মেরু অঞ্চলে একটি উল্কার খোঁজে ভূতাত্ত্বিক অভিযানের কথা আছে।
উইলেম হারম্যানের ‘বিয়ন্ড স্লিপ’ (Beyond Sleep) ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত একটি উপন্যাস যার নায়ক একজন ডাচ ভূতাত্ত্বিক। তাকে একটি উল্কাপাতের ফলে সৃষ্ট গহ্বরের ভিতরে ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের কাজে পাঠানো হয়। সে সেখানে তার গাইডের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও একা এক অজানা দেশে প্রবেশ করে।
১৯৭৩ সালের জাপানি উপন্যাস ‘জাপান সিঙ্কস’ জাপানের দ্বীপপুঞ্জে এক ভয়াবহ ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের কথা বলেছে। যে ভূতাত্ত্বিক কারণে জাপান বহু লক্ষ বছর আগে এসিয়ার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল, ঠিক সেই রকম এক ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয়ে জাপানের দ্বীপগুলি সমুদ্রের নীচে চলে যাচ্ছে। জাপান এই বিপর্যয়ের মোকাবিলা কীভাবে করবে তার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ধারাবিবরণ পাওয়া যাবে এই বইতে।
১৯৯৩ সালে লেখা ‘দা স্টোনস ক্রাই আউট’ একটি জাপানি কল্পবিজ্ঞান। এর লেখক হিরাকু ওকুইজুমি। এটি সরাসরি ভূতাত্ত্বিক উপন্যাস না হলেও এর নায়ক মানাসে নিজের মানসিক অবসাদ ও অপরাধবোধ থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য পাথর ও জীবাশ্ম সংগ্রহ করতে শুরু করে। কারণ সে একজন ভূতাত্বিকের কাছ থেকে জেনেছিল যে একটি সাধারণ শিলাখন্ডও পৃথিবী নামক এই মহাজাগতিক বস্তুটির সৃষ্টির ইতিহাসের স্বাক্ষর বহন করে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের তলের উচ্চতা বৃদ্ধি জনিত ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয় অনেক আগে থেকেই কল্পবিজ্ঞানে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু তার আগে রচিত হয়েছিল গ্যাব্রিয়েল ডি টারডের ‘আনডারগ্রাউন্ড ম্যান’ (১৯০৫) উপন্যাসটি। এটি পরিবেশ বিপর্যয়ের উপর আধারিত একটি কাহিনি। এটির ভূমিকা লিখেছিলেন স্বয়ং এইচ জি ওয়েলস। জলবায়ু পরিবর্তন কী ধরনের ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয় আনতে পারে তাই নিয়ে ১৯২৭ সালে এস ফউলার রাইট লেখেন ‘ডেলুজ: এ রোমান্স’। ডেভিড ব্রিনের ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস ‘আর্থ’ (১৯৯০) সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে রচিত।
বিংশ শতকের শেষের দিকের চীনে অনেক কল্পবিজ্ঞানের কাহিনির জন্ম হয়। সরাসরি ভূতাত্ত্বিক কল্পবিজ্ঞানের সন্ধান না পেলেও পরিবেশের বিপর্যয় ও মানবকাল বা অ্যানথ্রপসিন নামক ভূতাত্ত্বিক কালের সমাজ, পরিবেশ ও প্রযুক্তির জটিল সম্পর্ক নিয়ে রচিত চেন কুইফান এর উপন্যাস ‘দা ওয়েস্ট টাইড’ (২০১৩) উল্লেখযোগ্য।
একবিংশ শতাব্দীকে বলা যেতে পারে কল্পবিজ্ঞানের নবযুগ, যখন উনবিংশ এবং বিংশ শতকের অনেক স্পেকুলেশন বাস্তবে পরিণত হয়ে গিয়েছে। ফলে কল্পবিজ্ঞানের লেখকদের উপর আরও নতুন কিছু লেখার দায়িত্ব বর্তাচ্ছে। সে সূত্র ধরে অসাধারণ সব কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাস লেখা হচ্ছে। এই সময়ে ভূবিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে লেখা এন কে জেমিসিনের লেখা ‘ব্রোকেন আর্থ ট্রিলজি’র কথা উল্লেখ করতে হয়। এই উপন্যাসগুলিতে orogene নামে একটি একটি তন্ত্রের কল্পনা করা হয়েছে যা পৃথিবীর অভ্যন্তরের ভূতাত্ত্বিক বল থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। এই উপন্যাস কিছুটা ফ্যান্টাসিধর্মী হলেও এতে লেখকের গভীর ভূতাত্ত্বিক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। ডগলাস প্রিস্টনের লেখা ‘টিরানোসরাস ক্যানিয়ন’ (২০০৫) নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে একটি রহস্যজনক বস্তুর অনুসন্ধানের কাহিনি, যাতে কিছুটা ভূতত্ত্বের ছোঁয়া আছে।
অ্যান ম্যাককাফের লেখা ‘ক্রিস্টাল সিঙ্গার’ সঙ্গীত, ভূতত্ত্ব এবং তার সঙ্গে খনি শিল্পের সংঘাতের গল্প। কিম স্ট্যানলি রবিনসন এর লেখা “2313” ভূবিজ্ঞানের পরিসরকে অন্য গ্রহে নিয়ে গিয়েছেন। এই গল্পের ব্যপ্তি মঙ্গলগ্রহ ছাড়িয়ে সমগ্র সৌরমন্ডলকে ছুঁয়ে গিয়েছে। কেলি রবসনের লেখা ‘গডস, মনস্টার্স অ্যান্ড দা লাকি পিচ’ টাইম ট্র্যাভেল, ভূসলিলবিজ্ঞান ও পরিবেশ বিপর্যয়ের এক অনবদ্য সংমিশ্রণ। গল্পে আছে ২৩১২ সালের এক বিজ্ঞানী সে সময়কার পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য ইতিহাস থেকে জ্ঞান সঞ্চয় করতে টাইম মেশিনে চড়ে ২০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে গিয়ে ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর অববাহিকায় কীভাবে জলসম্পদের ব্যবস্থাপনা হত তার অনুসন্ধান করছে।
কল্পবিজ্ঞানে ভূতত্ত্ব নিয়ে বেশ কিছু উপন্যাস থাকলেও ছোটগল্পে এর পরিমাণ অত্যন্ত কম। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রাশিয়ান ছোট গল্প অ্যান্তনভিচ ইয়েফ্রেমভ এর লেখা ‘প্রেত পাহাড়ের সরোবর’। এটির বঙ্গানুবাদ হয়েছে। গল্পে তিব্বতে একটি হ্রদের কথা আছে যেটি পারদে পরিপূর্ণ। আরেকটি রাশিয়ান গল্প ‘ল্যাবাইঙ্কার হ্রদ’, একটি প্রাগৈতিহাসিক দানবের গল্প যার খোঁজে একজন ভূতাত্ত্বিককে পাঠানো হয় (কল্পবিশ্ব)। রে ব্র্যাডবেরি তাঁর ‘ডাইনোসর টেলস’ বইতে প্রাগৈতিহাসিক জীবদের নিয়ে অনেকগুলি ছোটগল্প লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল ‘এ সাউন্ড অফ থান্ডার’ (১৯৫২), যেখানে একই সঙ্গে রাজনীতি, ডাইনোসর ও টাইমট্রাভেলকে নিয়ে কাহিনি রচনা করা হয়েছে।
ভূবিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে আজ থেকে ৬৫ লক্ষ বছর আগে ভূমধ্যসাগর একটা শুষ্ক গহ্বর ছিল। সে সময় ‘জ্যানক্লিয়ান প্লাবন’ নামক একটি ভূতাত্ত্বিক মহা ঘটনার ফলে জিব্রালটার দিয়ে আটলান্টিকের জল এসে ঢুকেছিল। এই ভূমধ্যসাগর নিয়ে রচিত দুটি গল্পের উল্লেখ না করে পারছিনা। একটি হল হ্যারি টারটেলডভ-এর লেখা ‘ডন ইন দা বটমল্যান্ডস’। বিকল্প-ইতিহাসভিত্তিক গল্পটিতে লেখক কল্পনা করেছেন যে সে সময় সেই প্লাবনের ঘটনা ঘটেনি। ফলে ভূমধ্যসাগর আজও শুষ্ক গহ্বর হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। জ্যানক্লিয়ান প্লাবনের উপর আর একটি গল্প হল পল অ্যানডারসন এর লেখা ‘জিব্রালটার ফলস’। এই গল্পে দুজন টাইম ট্র্যাভেলার মায়োসিন যুগে বেড়াতে গিয়ে এই প্লাবনের মুখোমুখি হচ্ছে।
ভারতবর্ষে কল্পবিজ্ঞান যথেষ্ট লেখা হচ্ছে। বাংলার বাইরে অন্যান্য ভাষায় প্রচুর লেখা হলেও তার জনপ্রিয়তা কতটা সে সম্পর্কে খুব একটা তথ্য নেই। হিন্দি ভাষায় বেশ কিছু উত্তম কল্পবিজ্ঞান রচিত হয়েছে। তার মধ্যে জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকারের লেখা ‘হিমপ্রলয়’ গল্পটিকে ভূতাত্ত্বিক কল্পবিজ্ঞানের আওতায় আনা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে হিমযুগ ফিরে আসা এই কাহিনির মূল বিষয়।
অসমিয়া সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের যথেষ্ট উপস্থিতি আছে। তবে সেসবের মধ্যে ভূবিজ্ঞানের উপস্থিতি আমি খুঁজে পাইনি। ব্যতিক্রম শান্তনু তামুলীর লেখা ‘পানি’ গল্পটি। গল্পটি জিওপলিটিকাল কাহিনি হিসাবেও ধরা যেতে পারে। গল্পটিতে বলা হয়েছে চীনারা কীভাবে ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ পরিবর্তন করে, যার কারণে ১৯৫১ সালে আসামে ভূমিকম্প ঘটে।
পাঞ্জাবি ভাষায় ডাইনোসর নিয়ে একটি কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি লিখেছেন ড. বিদোয়ান সিং সোনি। এটি ছোটদের জন্য একটি সুলিখিত গল্প (Singh, 2006)।
ভারতের অন্যান্য ভাষায় যে সব কল্পবিজ্ঞান রচিত হয়েছে সে সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য আমি জোগাড় করতে পারিনি। যেটুকু সন্ধান পেয়েছি তাতে তামিল, তেলেগু, মালয়ালাম, মারাঠি ইত্যাদি ভাষার জনপ্রিয় কাহিনিগুলির কোনটাতেই ভূতত্ত্বের উপস্থিতি খুঁজে পাইনি। এই সব কটি ভাষাতেই খুব সমৃদ্ধ কল্পবিজ্ঞান রচিত হয়েছে।
বাংলা ভাষায় কল্পবিজ্ঞান এখন খুবই সমৃদ্ধ। অনেক নামকরা সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানীরা বাংলায় অসাধারণ কল্পবিজ্ঞান রচনা করেছেন। তার মধ্যে ভূতাত্ত্বিক কল্পবিজ্ঞানের খোঁজ করতে গিয়ে প্রথমেই পাচ্ছি পঞ্চাশের দশকে দেব সাহিত্য কুটির প্রকাশিত ‘অতীতের পৃথিবী’ বইটি। এটি পৃথিবীর সম্পূর্ণ ভূতাত্ত্বিক সময় ধরে টাইম ট্র্যাভেলের কাহিনি। চাঁদের পাহাড় (একে কল্পবিজ্ঞান বলা হয়তো যাবেনা) উপন্যাসে ভূতত্ত্বের জোরালো উপস্থিতি রয়েছে। হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘ময়নামতির মায়াকানন’ লস্ট ওয়ার্লডের বাংলা সংস্করণ বলা যায়। ভূতাত্ত্বিক কল্পবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা সিরিজের কয়েকটি গল্প। এর মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে ‘নুড়ি’ গল্পটি যেখানে এক দ্বীপের হ্রদের তলদেশ থেকে একটি নুড়ি তোলার জন্য একটি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত শুরু হয়ে গেল। আরেকটি গল্প ‘কাচ’, যেখানে ঘনাদা গাইগার কাউন্টার নিয়ে পিচব্লেন্ডের শিরার খোঁজ করছেন। সত্যজিত রায়ের ‘টেরোড্যাকটিলের ডিম’ গল্পটিকেও এই দলে ফেলা যায়। এই প্রসঙ্গে ভূতাত্ত্বিক সঙ্কর্ষণ রায়ের নাম উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে। বাংলা ভাষায় ভূতাত্ত্বিক হিসাবে কল্পবিজ্ঞান রচনার প্রথম কৃতিত্ব তাঁকেই দিতে হয়। ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধান ভিত্তিক গল্প ‘ঘাস’ এবং ‘মোতিঝিলের ডাইনোসর’ তাঁর দুটি উল্লেখযোগ্য গল্প। রসায়নবিদ দিলীপকুমার রায়চৌধুরী কল্পবিজ্ঞানের লেখক। তাঁর শীলাকান্থ গল্পটি ভূতাত্বিক কল্পবিজ্ঞান পর্যায়ে পড়ে (Banerjee, 2008)।
বাংলাদেশেও বাংলাভাষায় প্রচুর কল্পবিজ্ঞান রচিত হচ্ছে। কল্পবিজ্ঞান বাংলাদেশে যথেষ্ট জনপ্রিয়। অধ্যাপক মহম্মদ জাফর ইকবাল, মইনুল আহসান সাবের, হুমায়ুন আহমেদ, আলি ইমাম প্রভৃতি লেখকেরা প্রচুর কল্পবিজ্ঞান রচনা করেছেন। আমি আমার বর্তমান সীমিত গবেষনায় কোনও গল্পেই ভূতত্ত্বের উপস্থিতি দেখতে পাইনি।
কল্পবিজ্ঞানের বিশাল জগতে ভূতত্ত্বের উপস্থিতি সংখ্যায় কম হলেও কয়েকটি রচনা ক্লাসিকের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। আমার মনে হয় কল্পবিজ্ঞানে অনেক কাহিনি যেখানে বিকল্প-ইতিহাস, ইউটোপিয়া বা ডিস্টোপিয়ার মতো বিষয় এসেছে সেখানে ভূতত্ত্বেরও প্রয়োজন আছে। যে সব কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিতে ভবিষ্যতের পৃথিবী বা জগতের কল্পনা করা হয় সেগুলিকে ভূতাত্ত্বিক জ্ঞানের চশমা দিয়ে দেখলে অনেক ক্ষেত্রেই অবাস্তব ও অলীক বলে বোধ হবে। যে কোনও কল্পজগৎ বা বিকল্প-ইতিহাসভিত্তিক কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিতে যে ল্যান্ডস্কেপ রচনা করতে হয় সেটি কল্পনা করতে গেলে কিছুটা ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান আবশ্যিক (Erwin, 2019)। বাংলা ভাষায় কল্পবিজ্ঞান যে বিশাল অগ্রগতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, অসাধারণ সব কাহিনি রচিত হচ্ছে তার মধ্যে স্টিমপাঙ্ক, ডিস্টোপিয়া, রোবটিক্স, ইউটোপিয়া, ডায়িং আর্থ, ইত্যাদি উপবিষয়গুলির (sub-genere) পাশে ভূকল্পবিজ্ঞান (geosciencefiction) একটা স্থান পেতে পারে যদি এই বিষয় নিয়ে লেখকরা এগিয়ে আসেন।
তথ্যসূত্র:
1) কল্পবিশ্ব, https://kalpabiswa.in
2) Adelene Buckland (2013), Novel Science: Fiction and the Invention of Nineteenth-Century Geology (Chicago & London: The University of Chicago Press, 2013), 377 p, ISBN 978–0–226–07968–4
3) Banerjee, S., (2008) বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞান, পাওয়া যাবে http://hdl.handle.net/10603/223561 Accessed August 19, 2020
4) Danielle Clode (2014) Fictional depictions of climate change. Available from: https://www.researchgate.net/publication/269404881_Fictional_depictions_of_climate_change [accessed Aug 19 2020].
5) Erwin, P (2019) comment available at https://www.tor.com/2019/09/09/the-rise-of-geoscience-fiction-seven-books-about-remaking-the-world/ [accessed August 19, 2020]
6) Lovecraft, H. P., (1931), At the Mountains of Madness, available at https://www.hplovecraft.com/writings/texts/fiction/mm.aspx
7) Pangborn, Mark W. “Geology and Geologists in Fiction.” Journal of the Washington Academy of Sciences 51, no. 4 (1961): 49-53, available at www.jstor.org/stable/24534858. [accessed August 19, 2020].
8) Singh, D. P., (2006) On The Science Fiction Writings In Punjabi, Proc. 8th Conference of Indian Science Fiction Writer’s Association (ISFWA), 11-12 Nov. 2006, Aurangabad, Maharashtra, India.
Tags: পঞ্চম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত, প্রবন্ধ, সৌরভ ঘোষ