সম্পাদকীয়
লেখক: টিম কল্পবিশ্ব
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
মা এসেছেন। তাঁকে দেখতেও যাবো। তবে মাস্ক পরে। উৎসবে সামিল হব। তবে দূরত্ব রেখে। আনন্দ করব, তবে মেপে।
এমনটা হবার কথা ছিল না আসলে। তবুও হল। প্রকৃতি আর মানুষ একে অপরের কথা শুনল না বলেই। বিপদ আর দুর্যোগ পেরিয়ে তাই মুখোমুখি হতে হল অতিমারীর। অনেক প্রাণের বিনিময়ে রোগটাকে দমিয়ে দেওয়া গেলেও একেবারে থামিয়ে দেওয়া যায়নি এখনও। সাবধান থাকাটা সে কারণেই জরুরি। আমরা মানুষ। শত শত দুর্যোগ আর ভয়কে পেরিয়ে এতদূরে এসে পৌঁছেছি আজ। থেমে থাকাটা বোধহয় আমাদের রক্তে নেই। মায়ের আগমনে তাই সাজতে হবে, গাইতে হবে, উৎসবের গীতিবাদ্যের মধ্যে দিয়েও একটা বার্তা আমাদের দিতেই হবে— ‘আমরা অমৃতের পুত্র!’
শুধু মানুষ নয়। কল্পবিশ্ব পত্রিকাতেও দুর্যোগের রেশ আছড়ে পড়েছিল বিলক্ষণ। প্রথমে ‘সাইট হ্যাক’ হল। গুণী লেখকদের অজস্র সৃষ্টি ডিজিটাল সমুদ্রে হারিয়ে গেল কোথাও। মেরুদণ্ড ভেঙেই গিয়েছিল প্রায়। তবু সকলের সদিচ্ছায় আর সম্পাদকমণ্ডলীর অক্লান্ত পরিশ্রমে সে সাইট আবার ফিরে এল নতুনরূপে। লেখাগুলো ‘রিস্টোর’ করে নতুন সাইটের বহিঃপ্রকাশও হল ঠিক সময়ে। পাঠকরা সেখানেও ভালোবাসার দানে আমাদের ভরিয়ে দিয়েছেন আগের মতোই। যতবার আক্রমণ ধেয়ে এসেছে কল্পবিশ্বের দিকে আমরা ততবার ফিরে এসেছি নতুন উদ্যমে। কারণ বোধহয় একটাই— ‘দায়িত্ব’। বাংলা কেন, ভারতের কোনও আঞ্চলিক ভাষাতেই ‘শুধুমাত্র’ কল্পবিজ্ঞান আর ফ্যান্টাসি নির্ভর পত্রিকা নেই, একমাত্র কল্পবিশ্ব ছাড়া। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার ‘দায়িত্ব’ আমাদের মজ্জাগত। তাই এবারও দিব্যি টিকে গেলাম।
শুধু তাই নয়, ফিরে এলাম কয়েকটা অসামান্য খবরের ডালি হাতে। প্রখ্যাত লেখিকা বন্দনা সিংহের সঙ্গে প্রথমবার আলোচনাপর্ব হল অনলাইনে। ভারতীয় কল্পবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা হল ন্যাশনাল সায়েন্স ফিকশন কনফারেন্সে। দেশ বিদেশের অসংখ্য জ্ঞানীগুণীদের সমাবেশে চোখ ধাঁধিয়ে গেলেও সেখানে বাংলা কল্পবিজ্ঞানে কল্পবিশ্বের ভূমিকা নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিলেন সম্পাদক সুপ্রিয় দাস এবং দীপ ঘোষ। এ আলোচনা চক্রের সহ-পরিবেশক হিসাবে অংশগ্রহণ করে আমরাও যথেষ্ট ঋদ্ধ হয়েছি সে কথা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে সোহম গুহ, যিনি কিনা আমাদের পত্রিকার নিয়মিত লেখক এবং বিশ্বের দরবারে একজন পরিচিত শব্দশিল্পী, তাঁর একটি গল্প ইংরেজিতে প্রকাশ পেয়েছে Hachette India থেকে গোলাঞ্চ বুক অব সাউথ এশিয়ান সায়েন্স ফিকশন বইটিতে। বিশ্বমানের সংকলনে গ্রন্থিত এই গল্পটি বাংলায় প্রকাশিত হয়েছিল কল্পবিশ্বেই প্রথমে, এ কম গর্বের খবর নয়। প্রসঙ্গত এই সিরিজের প্রথম খণ্ডে বাঙালিদের মধ্যে স্থান পেয়েছিল প্রেমেন্দ্র মিত্র ও অদ্রীশ বর্ধনের গল্পের অনুবাদ।
এবার আসি অনুবাদের দিকে। সেখানেও ব্যতিক্রম। এবারের পুজো সংখ্যা শুধু ইংরাজি গল্পের বঙ্গানুবাদই নয়, রয়েছে বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদও। ভাষার আদানপ্রদানে আমাদের দেশের আখ্যানও যে অন্যদের কানে পৌঁছবে সে বিশ্বাস আমাদের বেশ জোরদার। এই খবরগুলো শুধু ‘মাইলস্টোন’ নয়, ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজে উৎসাহী হবার পাথেয়-ও বটে।
অনেক কথা হল। এবার পুজো সংখ্যার কথা। আগের বারের মতোই এবারেও আমাদের সুদীর্ঘ সংখ্যাটি প্রকাশিত হতে চলেছে ইবুক ফরম্যাটে। কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের ওয়েব সাইটেও প্রকাশিত হবে সংখ্যাটি। সেখানে বিনা খরচে কল্পবিজ্ঞানের হালহকিকত প্রতিবারের মতোই জানতে পারবেন উৎসাহী পাঠক।
সবার শেষে ধন্যবাদ জানাবার পালা। পুজো সংখ্যার মনোরম কভারটি যিনি নিজের হাতে সাজিয়েছেন, সেই উজ্জ্বল ঘোষকে জানাই কল্পবিশ্ব টিমের তরফ থেকে ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা। তা ছাড়াও ধন্যবাদ জানাই তাঁদেরও যাঁদের সাহায্য ছাড়া এতবড় কর্মযজ্ঞ সঠিক সময়ে শেষ করা একেবারেই সম্ভব হত না। রাকেশ দাস, সৌরভ দে, সুমন দাস— ধন্যবাদ আপনাদেরকেও। অন্যদিকে দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, সুমিত বর্ধন, ঋজু গাঙ্গুলি— কল্পবিশ্বের জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের কাছে বটবৃক্ষের মতন আশ্রয় হয়ে উঠেছেন নিজ গুণে। তাঁদের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ সে সব পাঠকদের কাছেও যাঁরা আমাদের সমস্ত ঝড়ঝঞ্ঝার মলিন দিনে আশ্বাসের আলো হয়ে দেখা দিয়েছেন ক্ষণে ক্ষণে।
শেষ করি এই বেলা Margaret Atwood-এর বক্তব্য ধার করে, “There’s something to be said for hunger: at least it lets you know you’re still alive.” আরও অনেক ভালো কাজ করার ক্ষিদেই কল্পবিশ্বকে বাঁচিয়ে রাখবে আগামী দিনে। আপনারা তাই সঙ্গে থাকুন। পুজো কাটান আনন্দে। ভালো থাকুন সবাই মিলে। ধন্যবাদ!
কল্পবিশ্ব সম্পাদকমণ্ডলী
Tags: টিম কল্পবিশ্ব, ষষ্ঠ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, সম্পাদকীয়
অপূর্ব সম্পাদকীয়। বাংলা সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের ঘরানাকে সমৃদ্ধ এবং জনপ্রিয় করে তুলতে এই পত্রিকার নেতৃস্থানীয় অবদানকে সহস্র কুর্নিশ জানাই।।