ওমোশো
লেখক:
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
লুকোনো গ্যারেট আছে গ্যারেজের ছাতটায়,
রোজ যা লাগে না কাজে, ওইখানে রাখা যায়।
নীচ থেকে দড়ি টেনে খোলা যায় চোরা ঘর,
অবশ্য রাখি না কিছু, খালি থাকে বরাবর।
ঢাকা খুলে সরু সিঁড়ি নেমে আসে ক্রমশ,
কিছুদিন ওই ঘরে ছিল ক-টা ওমোশো।
শেষমেশ একদিন ওমোশোরা গেল চলে,
সেদিনই প্রথম শুনি “ওমোশো” ওদের বলে।
যদিও দেখিনি চোখে, জানি নাকো নাম ধাম,
পৃথিবীর প্রাণী নয়,—সেটা ঠিকই বুঝতাম।
জানতাম থাকে, তবু তাড়াইনি, মায়া হত,
ক্ষতি তো করে না কোনো, থাকুক না আপাতত।
ঠাসাঠাসি করে থাকে,—আছে কোনো মজবুরি;
তা না হলে ঘুপচিতে কেন দেবে হামাগুড়ি?
গাড়ি নিয়ে ফিরতাম, ওরা টের পেত ঠিক!
ছাত থেকে কত কথা!—ওরা খুব সামাজিক।
জানি না চেহারাগুলো মোটা নাকি প্যাংলা,
তোতলাতো,—ভাঙা ভাঙা ইংরিজি, বাংলা।
একদিন মাঝরাতে কোঁক-কোঁক, বিপ-বিপ,
বাড়িতে দাঁড়ালো এসে পুলিসের দুটো জিপ।
লাল-কোট-পরা লোক জনা কয় মোটাসোটা,
মাপা শুরু করে দিল বিপারের শব্দটা।
গ্যারেজে ঢুকেছে যেই, কানফাটা কোঁক-কোঁক;
ওমনি ছাতের দিকে আলো ফ্যালে দুটো লোক।
গ্যারেট দেখেই বোঝে পেয়ে গেছে সন্ধান,
একজন লাল-কোট দড়ি ধরে দিল টান।
আরেকটা সিঁড়ি বেয়ে উঠে পড়ে চাগিয়ে,
আরও তিন জন নীচে পিস্তল বাগিয়ে।
আমার খারাপ লাগে, শেষে ধরা পড়ছে!
ক্ষতি তো করেনি কারু, তবু কেন ধরছে?
লাল-কোট নীচু হয়ে ঢুকে গেল ভেতরে;
ইস্, ওই ওরা যদি টের পেত আগে রে!
এটিকেটে নেই কিছু! আলো ফেলে খুঁজল,
ধীর পায়ে নেমে এলো, কি জানি কী বুঝল।
ক্ষীণ হতে হতে কোঁক থেমে গেল ক্রমশ,
একজন বলে ওঠে, “তার মানে ওমোশো!”
“নিঃসাড়ে চলে গেল, এইখানে থাকত,
শালগুলো ফেলে গেছে,—কাছে কাছে রাখত।”
শুনলাম ওমোশোরা যদি থাকে খালি গায়,
আলো নাকি শরীরটা ভেদ করে চলে যায়।
যে আলোই হোক নাকো, প্রাকৃতিক, কৃত্রিম—
সোজা ভেদ করে যাবে সে সব আলোর বীম।
খালি গায়ে থাকে যদি, দেখাটা অসম্ভব,
এমনই জাদুতে ভরা ওমোশোর অবয়ব!
ন্যাংটার নেই ভয়, আসুক না বাটপার,
ধীরে হেঁটে পাশ কেটে চলে যাবে বার বার।
পৃথিবীতে এভাবেই ঘোরে নাকি ওমোশোরা,
শুনে খুব খুশি লাগে, আহা ভালো থাক ওরা।
Tags: অমল সান্যাল, নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা