অনুগল্প সংকলন
লেখক: বৈশম্পায়ন শীল, হিল্লোল ভট্টাচার্য, সোহম গুহ, সুমন গুহ, অনুরাধা দাসগুপ্ত
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)
আয়না
বৈশম্পায়ন শীল
–“ইউ গান্ডু, হাউ ক্যান ইউ সে—যে আমি তোদের এই জংলি প্ল্যানেটে জন্মেছিলাম? গপাস্টিক! তোদেরকে কী উইয়ার্ড দেখতে ভেবেছিস? ওই তো স্যান্ডো–জাঙ্গিয়া পরা একটা হিউম্যান শরীরের ওপর অ্যাসহোল–মার্কা একটা লাল লম্বামুখো ঢ্যামনা–বেবুনের ভিভিসেক্টেড হেড ফিট করা—দেখামাত্রই আন্ডারস্টুড, ডঃ মোরো টাইপ কোনো ‘গেঁয়ো–মদনা’রই ক্রিয়েশান তোরা! না আছে এনি চাল, না আছে এনি চুলো!… হাঃ, এত আগলি হলে না আমি মাই প্ল্যানেটে ‘মিস্ নেদারওয়ার্ল্ড’ অ্যানাউন্সড্ হতাম না নেভার! হাউ ডেয়ার তুই আমাকে তোদের সাথে বসাস?”
–“নিঃসন্দেহে ম্যাডাম, আপনিই আকাশগঙ্গা–র শ্রেষ্ঠতম সুন্দরী।… বেশ, এই অধম এবার আপনার কাছে আমাদের ইন্টারস্টেলার ইন্টারভিউ–এর শেষ প্রশ্ন রাখতে চায়—আপনি কি আয়না চেনেন?”
–“হোয়াট’স দিস ব্যাঙের মাথা?”
–“এটা হচ্ছে একটা অ্যালুমিনিয়াম প্রলেপ লাগানো মসৃণ কাঁচ–খণ্ড যেটা কোনো বস্তুর সামনে ধরলে ওই কাঁচের ভেতরে সমদূরত্বে হুবহু সেই বস্তুটার একটা নকল—মানে প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। আপনি চাইলে জলের মধ্যে বা কোনও চক্চকে তলেও এরকম নকল তৈরি করতে পারেন; যেমন এই যে ব্লু–কিউবয়েডটা আয়নাটার সামনে ধরলাম, আর ওই যে ভেতরে ওটার নকল—”
–“ওহ্ ড্যাম্, কোন ব্লাডি হেলে এসে পড়লাম… আয়না, চক্চকে, প্রতিবিম্ব—হোয়াট দ্য নরক?… উফ্ফ্, দেন শোন আতাক্যালানে জারোয়া, আমাদের প্ল্যানেটে এই ‘আয়না’ বুলশিট্টা নেই; উই হ্যাভ ফাইভ রিভার্স, বাট সবক’টারই ওয়াটার যেমন ইমালসন টাইপ, তেমন আয়োডিন–গ্যাস লাইক বেগুনি, ওতে নাথিং ক্যান বি সিন।… অ্যান্ড জন্ম থেকে কখনও দিস্ আজিব ‘প্রতিবিম্ব’ ম্যাটারটা শুনিনি, ওকে? এবার ভাব না মেরে ফুটে যা, সা–লা হাইব্রিড ঢ্যামনা–বেবুনের বাচ্চা!”
–“যথা আজ্ঞা ম্যাম। শুধু আরেকটা শেষ অনুরোধ—একটিবার এই চক্চকে কাঁচপ্লেট–টায় চোখ রাখুন—”
–“দেখি–ই–ই…!!!”
–“কীরকম বুঝছেন ম্যাম?”
–“ও–য়ে–ল… হেঁ–হেঁ… সরি ডার্লিং, দয়া করে প্লিজ কিছু মাইন্ড করবেন না এই পাগলী–র প্রিভিয়াস কথাগুলোয়…আসলে অত–শত থিঙ্ক করে স্পিক করিনিতো… হেঁ–হেঁ… বাট–বাট আপনি কিন্তু অ্যাকচুয়ালি আ ভেরি হ্যান্ডসাম জেন্টলমানুষ, সো–ও–ও সফিস্টিকেটেড… আজ থেকে ‘ফ্রেন্ডস’?… অ্যান্ড আই থিঙ্ক এই যে মাই মাদারল্যান্ড—বলতে গেলে সো বিউটিফুল জায়গাই বটে… কী বলেন? হেঁ–হেঁ…”
সুইপার
হিল্লোল ভট্টাচার্য
শেষ স্মার্টফোনের চিপটা পড়েছিল কলোরাডোর গানিশন ব্ল্যাক ক্যানিয়নের কাছে কুরেকানটি হ্রদের তলায়। সেটাকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে একটু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল RX22। এটা ভেবে হাসল যে, এই গ্রহের সভ্যতার শেষের দিকটায় মহাজাগতিক রহস্য, ভিনগ্রহী দের অস্তিত্ব নিয়ে কিরকম আকুলি বিকুলি করেছে মানবসম্প্রদায়।
অথচ নিঃশেষিত জ্বালানী, ক্রমবর্ধমান জল ও বাতাসের দূষণ এবং স্মার্টফোন ও অন্যান্য টেকনোলজি জনিত ভারচুয়াল রিয়ালিটি যে লাইফস্টাইলের জন্ম দিয়েছিল, সেটা একটা পুরো প্রজন্মের জেনেটিক মিউটেশন ঘটিয়ে ধ্বংস কে ত্বরান্বিত করেছিল।
পৃথিবী থেকে প্রাণ অবলুপ্তির পর প্রায় ৫০ বছর কেটে গেল সমস্ত দূষণের চিহ্ন মেটাতে। তার কাজ শেষ, প্রথম প্রাণসৃষ্টির উপযুক্ত অবস্থায় এই গ্রহকে রিসেট করে মহাকাশযানের দিকে পা বাড়াল RX22। আবার শূন্য থেকে শুরু।
নতুন
সোহম গুহ
দীর্ঘকাল নক্ষত্রমণ্ডলের পর নক্ষত্রমন্ডল পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত ব্রমের মহাকাশযান থমকে গেল সামনের কসমিক বোম্বারডমেন্ট দেখে। একটা হলুদ তারার পাশে পাক খাওয়া ধূসর গ্রহের ফুটন্ত সমুদ্রের জলে ধারে দাঁড়িয়ে নিজের রক্তের ফোঁটা বিসর্জন দিলো তাতে।
হাতের ক্ষতে যন্ত্রনা হলেও মুখে হাসি তার।
ঈশ্বর হতে হবে যে।
স্মৃতি
সুমন গুহ
পল্লব বাবু ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই অনুশ্রীর চিৎকার শুনতে পেলেন। আট বছরের ছেলের পেছনে এত চেঁচাতে কেন হয় রে বাবা! এই বুড়ো বয়সে এসব আর ভালো লাগে না।
টুকাই ততক্ষণে ল্যাপটপে ক্লাস লেকচার শেষ করে হাতের পাঁউরুটির টুকরোর হাফ সামনের টেবিলে ফেলে দিয়েছে।
অনুশ্রী হাতে স্কেলটা তুলে নিতেই টুকাই এক ছুটে পল্লব বাবুর পেছনে চলে গেল। বললো “দাদু যে বলেছিল আগে যখন সবাই ইস্কুলে গিয়ে পড়াশোনা শিখতো, তখন নাকি বন্ধুরা টিফিন ভাগ করে খেতো। হেব্বি মজা হত নাকি! আচ্ছা, এখন ইস্কুল হয় না কেন? তাই তো আর বন্ধুও হয় না। তাই তো টিফিন ভাগ করে টেবিলেই রাখছি। খাবার কেউ নেই যে“।
পল্লববাবু বাথরুমে ঢুকে গেলেন ধীর পায়ে। দুটো চোখের কোণ কেমন যেন জ্বালা জ্বালা করছে। স্মৃতিগুলো একটু জলের ঝাপটা দিয়ে কাটানো দরকার।
তখন রাত ১১.৫৯
অনুরাধা দাসগুপ্ত
অনেকদিন আগের কথা। তখন কলেজে পড়ি, পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরব। ট্রেন আসল ১১টা ৫৯ এ আর ছাড়ল ঠিক ১২ টায়। ট্রেন ছিল খুব লেট, তাই কামরাতে দেখি মাত্র দশ বারো জন লোক, তাও সবাই ঘুমিয়ে। শুধু একজনকেই দেখলাম অন্ধকারে এক কোণায় জেগে বসে আছে। তার সামনের সিটেই গিয়ে বসলাম।
আমার দিকে তাকিয়ে লোকটা বলল, “কোথায় যাবে?” আমি স্টেশানের নামটা বললাম। তারপর লোকটা হেসে আমার সাথে গল্প করতে লাগল।
অনেকক্ষণ পরে একসময় বললাম, “অনেক তো রাত হল, এবার ঘুমোন।”
লোকটা একটু হেসে বলল, “তোমায় কে বলল যে আমি জেগে আছি।”
– “এই যে আপনাকে সামনে বসে থাকতে দেখছি, কথা বলছি।”
– “কেন, বসে কি ঘুমানো যায় না? আর ঘুমিয়ে কি কথা বলা যায় না?
-“তা বলছি না, তবে আপনি তো জেগেই আছেন।”
– “না আমি ঘুমাচ্ছি। এমন অনেক কাজ মানুষ ঘুমিয়ে থাকার সময় করতে পারে যা জেগে থাকতে কল্পনাও করতে পারে না।”
– “যাঃ কি যে বলেন।”
– “বিশ্বাস হচ্ছে না তো আমায় ছুঁয়ে দেখো।”
ধরতে গেলাম, হাতটা হাওয়ায় কেটে বেরিয়ে গেল। এবার একটু ভয় ভয় করতে লাগল। লোকটা অন্ধকার কোণায় কেমন যেন ছায়ার মত বসে আছে।
বললাম, – “সকাল হয়ে গেছে, জানলাটা খুলে দি।”
– “আমিও তাহলে উঠি।”
লোকটা বাঙ্কে উঠে গেল। একটু পরেই উসখুস করতে করতে নেমে এল।
বললাম, “ঘুম হয়ে গেল?”
– “হুম”
– “আপনার সঙ্গে গল্প করে রাতটা ভালোই কাটল।”
– “গল্প! সন্ধ্যা থেকে ঘুমাচ্ছি, তো গল্প করব কিভাবে? যতসব পাগল!”
একটা স্টেশান এসেছিল, লোকটা নেমে পড়ল।
আজও বুঝিনি আসলে ঐদিন কি হয়েছিল।
Tags: অনুগল্প, অনুগল্প সংকলন, আয়না, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, নতুন, পূজাবার্ষিকী, বৈশম্পায়ন শীল, সুইপার, সুমন গুহ, সোহম গুহ, স্মৃতি, হিল্লোল ভট্টাচার্য
Onuradha Dasgupta o Hillol Bhattacharya er onugolpogulo bhalo laglo.
ami kivbe amr lekha dibo ai magazine a
doya kore ekhane dekhun – https://kalpabiswa.in/submit_writing/
নতুন,ei galpo ti puro bujlam na,ektu help korun.bhogobaan er dna theke amader dna elo,serom e daralo beparta
prosenjit