আতঙ্ক সেই সংকেত
লেখক: মূল রচনা - গেলর্ড সাবাটিনি, বাংলা অনুবাদ - সৌমেন চ্যাটার্জি
শিল্পী: সৌমেন চ্যাটার্জি
আতঙ্ক সেই সংকেত
মূল রচনা – গেলর্ড সাবাটিনি
বাংলা অনুবাদ – সৌমেন চ্যাটার্জি
অলংকরণ – সৌমেন চ্যাটার্জি
আমার নাম জেমস কার্টিস। পেশায় আমি একজন সাংবাদিক। দাঁড়ান… দাঁড়ান, এখুনি উইকিপিডিয়া খোলার দরকার নেই। কারণ আমি যে পত্রিকার সাংবাদিক, হাতে গোনা কিছু মানুষ সেই কাগজ পড়েন। তবে হ্যাঁ, যারা এই কাগজের পাঠক তাদের কাছে এর কদর বেশ ভালোই। কাগজটার নাম “গার্ডেনিং প্রাইড”। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই পত্রিকা উদ্ভিদ তথা উদ্যান পরিচর্যা নিয়ে। আর আপনাদের কাগজওয়ালা দাদাকে আগে থেকে বলে না রাখলে তিনিও তাঁর স্টলে এই পত্রিকা রাখেন না। তবে আর পাঁচজন সাংবাদিকের মতো আমার জীবনেও ফুরসত বস্তুটি একেবারেই নেই। তবে আমার অভিজ্ঞতা বা ডিগ্রী যাই বলুন না কেন, এই কাগজের সাংবাদিক হওয়ার দরুন নিশ্চয়তা জিনিসটি আমার জীবনে আছে। কারণ আমি খুব ভালোভাবেই জানি, হাজার সমস্যা হলেও আমাদের সম্পাদকমশাই আমাকে ছাড়বেন না। কারণ যেভাবে আমি হাসিমুখে বিভিন্ন উদ্ভট উদ্ভিদ বিশারদদের সাক্ষাৎকার নিই, তার বিকল্প তিনি মাথা খুঁড়লেও চট করে পাবেন না। যাইহোক আজ আমি আপনাদের নিজের ঢাকের বাদ্যি শোনাতে আসিনি। আমি আপনাদের বলব আমার জীবনের এক ভয়ংকর সত্যি ঘটনা তথা অভিজ্ঞতার কথা।
সেবার আমাদের কাগজের সম্পাদক আমাকে এক ক্যাকটাস বিশারদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার দায়িত্ব দিলেন। সঙ্গে এও জানালেন ব্লুম নামের এই ক্যাকটাস বিশারদের মাথার বেশ কিছু স্ক্রু ঢিলে আছে। তাতে আমি বিশেষ অবাক হলাম না। কারণ আজ এতদিন এই কাগজের সাংবাদিকতা করছি যে এইসব পাবলিকদের মুখোমুখি হতে আমি সবসময় স্ক্রু ড্রাইভার নিয়েই ঘুরি। এই স্ক্রু ড্রাইভারটা হল মাথা ঠাণ্ডা রেখে এদের সঙ্গে কথা বলে যাওয়া।
সে যাই হোক সম্পাদকের থেকে ঠিকানা নিয়ে রওনা হলাম মিঃ ক্যাকটাস, থুড়ি মিঃ ব্লুমের সাক্ষাৎকার নিতে। প্রথমে ভেবেছিলাম ডাকসাইটে এই ক্যাকটাস বিশারদকে খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি! এলাকার মানুষ তো দূর, মিঃ ব্লুমের ঠিকানা শেষ অবধি দিল এক মুদির দোকানি। তাও সে সম্বোধন করল ‘পাগলাবাবু’ বলে! সঙ্গে এও জানাল- “এই গলির একদম শেষ প্রান্তে সবথেকে বড় আর ভাঙাচোরা যে বাড়িটা, সেখানেই ‘পাগলাবাবু’কে পেয়ে যাবেন। সারাদিন বাড়িতেই থাকেন। গাছগাছালি নিয়ে কিসব মারণ উচাটন করেন কে জানে? আমিই তো মাসকাবারি বাজার দিয়ে আসি।”- মুচকি হেসে নিজের বক্তব্য শেষ করল মুদি। সঙ্গে বলল যদি সম্ভব হয় তার নামটাও যেন কোনওভাবে আমার লেখায় দিয়ে দিই। প্রচারের যুগ বলে কথা! আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রওনা হলাম ‘পাগলাবাবু’ থুড়ি মিঃ ব্লুমের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বলাই বাহুল্য পাগলাবাবু, গাছগাছালি নিয়ে মারণ উচাটন, ভাঙাচোরা বাড়ি – এই শব্দগুলো আমার মনে খুব একটা ভক্তির উদ্রেক ঘটাল না। যাইহোক, সাংবাদিকের কর্তব্য বলে কথা! কি আর করা যাবে!
মিঃ ব্লুমের বাড়ির সামনে এসে বেশ অবাক হলাম। মুদি যেভাবে সবথেকে বড় আর ভাঙাচোরা বাড়ির কথা বলেছিল, বাড়িটা তার থেকেও বেশি বড় আর ভাঙাচোরা। সবথেকে যে ব্যাপারটা দেখে অবাক হলাম, বাড়ির দরজা হাট করে খোলা! অবশ্য আপনভোলা বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে এ ঘটনা বিচিত্র নয়।
বাড়ির ভেতর ঢুকে মনে হল যেন কোনও হানাবাড়িতে ঢুকে পড়েছি। এখন মিঃ ব্লুমকে পাই কোথায়? মিউজিয়াম পরিভ্রমণের মতোই হানাবাড়ির ইতিউতি খুঁজতে লাগলাম মিঃ ব্লুমকে। অবশেষে তাঁকে খুঁজে পেলাম। স্যাঁতসেঁতে এই বাড়ির দোতলায় তুলনামূলক উষ্ণ গ্রিন হাউসের এক কোণে বসে আছেন তিনি। আমার আজকের গল্পের নায়ক ক্যাকটাস বিশারদ মিঃ ব্লুম। ছোটখাটো চেহারার মানুষটাকে দেখে আমি বেশ অবাক হলাম। মুদি বর্ণিত ‘পাগলাবাবু’ ইমেজের সঙ্গে একেবারেই মিলছে না। মাথার চুল ধবধবে সাদা। চামড়া দেখলে মনে হবে অ্যানিমিয়ার রুগী। এত সাদা আর ফ্যাকাসে গায়ের রং আমি আগে দেখিনি। কেউ যেন ব্লটিং পেপার দিয়ে শরীরের সব রক্ত শুষে নিয়েছে। প্রথম দর্শনে তাঁকে দেখে ‘হ্যামার হাউস’ এর কোনও ভ্যাম্পায়ার সিনেমার প্রধান চরিত্র বলেই মনে হবে।
আমি ওঁর কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু বৃদ্ধ একটা সুন্দর ক্যাকটাসে জল দিতে এতই মশগুল যে আমার উপস্থিতি টেরই পেলেন না। একটু গলা খাকরে নিয়ে ডাকলাম- “মিঃ ব্লুম?” আমার গলার আওয়াজে মিঃ ব্লুম যেভাবে চমকে উঠলেন, দেখে আমিই ভয় পেয়ে গেলাম! কিছুটা জল চলকে পড়ল ওঁর জুতোর ওপর। ওঁর চোখমুখ দেখে মনে হল, আমি যেন ওঁকে খুন করতে এসেছি! জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন তিনি। “আমি…আমি…” এত হাঁপাচ্ছেন যে কোনও কথাই বলতে পারলেন না। তারপর হঠাৎ দ্বিগুণ উত্তেজিত হয়ে কি যেন খুঁজতে লাগলেন আশেপাশে। তারপর পেয়েও গেলেন সেটা। একটা বিকট আকারের ছুরি। দক্ষিণ আমেরিকার গভীর জঙ্গলে গাছ কেটে পথ বের করে নেওয়ার জন্য অভিযাত্রীরা যে ছুরি ব্যবহার করেন, এই ছুরিটাও অবিকল সেইরকম। তারপর মাথার ওপর ছুরিটা তুলে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। ওঁর ভাবভঙ্গী দেখে মনে হল যেন অন্য কলেজের কোনও ছাত্র তাঁর প্রেমিকাকে উত্যক্ত করতে এসেছে। আর এক পা এগোলেই ঘটবে রক্তপাত! এ যোদ্ধা লড়াই না করে যেন মরবে না!
আমিও ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে এলাম। কার মুখ দেখে আজ উঠেছিলাম কে জানে! “সাবধান! আর এক পাও এগোবেন না। এই জিনিস আমি আপনাকে কিছুতেই দেব না! কিছুতেই না!” শঙ্কামিশ্রিত তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন মিঃ ব্লুম। ও হরি! এবার বুঝলাম। উনি ভেবেছেন আমি ওঁর ক্যাকটাস চুরি করতে এসেছি। যাক, পাগলাবাবু নাম সার্থক।
আশ্বস্ত করার ভঙ্গীতে আমি বললাম –“মিঃ ব্লুম, শান্ত হন। আমি কোনও চোর ডাকাত নই। আমার নাম জেমস কার্টিস। আমি গার্ডেনিং প্রাইড পত্রিকার সাংবাদিক। আপনার ইন্টারভিউ নিতে এসেছি” – কোনওমতে আমার বক্তব্য শেষ করলাম। আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলেন তিনি। তারপর তিরতির করে তাঁর ঠোঁট কাঁপতে লাগল। চোখও কয়েক ডিগ্রীতে অবস্থান পরিবর্তন করল। কাঁদবেন নাকি? হ্যাঁ, আমার ধারণাই সঠিক প্রতিপন্ন করে মিঃ ব্লুম সশব্দে ছুরিটা ফেলে দিলেন মেঝেতে। তারপর হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন কিশোরী মেয়েদের মতো।
কাছে এসে তাঁর কাঁধে হাত রাখলাম আমি। তারপর বললাম, “মিঃ ব্লুম, শান্ত হয়ে বসুন। হঠাৎ এরকম করছেন কেন? ইন্টারভিউ না হয় পরেই হবে। কী হয়েছে বলুন। নিজের মনের কথা অন্য কাউকে বললে হয়তো আপনার মন হালকা হবে।”
তারপর মনে হল দেখি তো একবার ক্যাকটাসকে ভালো করে। সত্যি বলতে কি উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে এতদিন পড়াশোনা করেছি, এই পত্রিকার দৌলতেও অনেক উদ্ভিদবিজ্ঞানী আর উদ্যানপ্রেমী মানুষের সংস্পর্শে এসেছি, দেখেছি তাদের সাধনার পরিশ্রম। কিন্তু এরকম অদ্ভুত সুন্দর গাছ আজ অবধি আমার চোখে পড়েনি। গাছটার উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট। হাতের মতো দুটো শাখা বেরিয়ে এসেছে মূল কাণ্ড থেকে। আর তার ফুলের শরীরে যেন খেলে গেছে রামধনুর মতো রঙের ছটা। অপার্থিব এই সৌন্দর্যকে কোনও পুঁথিগত ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু এই সৌন্দর্যের কোথায় যেন একটা অসঙ্গতি লুকিয়ে আছে। ভালোভাবে দেখেও আমি সেটা বুঝতে পারলাম না।
“আমার জীবনে আছে এক ভয়ংকর অভিশাপ….” মিঃ ব্লুমের কথায় আমার সম্বিত ফিরল। “সেই ঘটনা কাউকে না বলতে পারলে…আমি…আমি হয়তো পাগল হয়ে যাব”–ভাঙা ভাঙা গলায় ফের বললেন মিঃ ব্লুম। তারপর মুখ তুলে তাকালেন আমার দিকে। এবং বললেন, “আমার বয়স কত বলুন তো?”
এ আবার কি বিটকেল প্রশ্ন! কোনও সিনেমার নায়ক এই প্রশ্ন করলে অবাক হতাম না। কিন্তু একজন ক্যাকটাস বিশারদের এই প্রশ্ন শুনে রীতিমতো ব্যোমকে গেলাম। যদিও ওঁকে দেখে সত্তর বছরের কম মনে হয় না, হয়তো সেটা কোনও রোগের জন্যই। তবে মিঃ ব্লুমের বয়স পঁয়ষট্টি হলেও হতে পারে। তবুও একটু কৌতুক মেশানো স্বরে বললাম, “ইয়ে… মানে কত আর হবে… এই ষাট বাষট্টি…?”
“ষাট!!” মিঃ ব্লুম এমনভাবে চিৎকার করে উঠলেন যেন ওঁকে ওঁর কোনও প্রিয়জনের মৃত্যু সংবাদ দিয়েছি আমি। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “অবশ্য আমাকে দেখলে সেরকমই মনে হবার কথা। কিন্তু আমার বয়স পঁয়ত্রিশ”- বলে আমার দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকালেন মিঃ ব্লুম। আমার কথা হারিয়ে গেছে। এ আবার কি ভাঁড়ামি! তারপর মনে হল আমার কথায় হয়তো উনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। তাই বিনয়ের সঙ্গে বললাম, “আমি অত্যন্ত দুঃখিত মিঃ ব্লুম। আমি আসলে আপনাকে আঘাত করে কিছু বলতে চাইনি। কিন্তু…আমার…মানে…”
আমাকে হাত তুলে থামালেন মিঃ ব্লুম। তারপর এই প্রথমবার একটু হেসে বললেন, “আমি জানি আমাকে দেখলে অনেক বুড়ো মনে হয়। আসলে… আসলে আমার জীবনে যা ঝড় ঝাপটা গেছে… তার প্রভাবেই হয়তো আজ আমার এইরকম অবস্থা”–বলেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তারপর স্থিরভাবে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন ক্যাকটাসটার দিকে। মনে হল মনে মনে কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিছুক্ষণ তাকানোর পর আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন মিঃ ব্লুম। তারপর বললেন, “বসুন মিঃ কার্টিস। ইন্টারভিউ নেওয়ার আগে আমি আপনাকে একটা গল্প শোনাব। তবে এটা গল্প নয়। আমার জীবনেই ঘটে যাওয়া একটা হৃদয়বিদারক ঘটনা।”
এখন আমি বসে আছি একটা লোহার চেয়ারে। আমার উলটোদিকের চেয়ারে মিঃ ব্লুম। মাঝখানে একটা টেবিলে রাখা আছে বরফ দেওয়া নারকেল দুধ। আমার তখন মিঃ ব্লুমের আতিথেয়তার দিকে খেয়াল নেই। যাবতীয় আগ্রহ ওঁর সেই ঘটনাটা শোনার জন্য।
“আপনি সমান্তরাল জগতে বিশ্বাস করেন, মিঃ কার্টিস?” প্রশ্ন করলেন ব্লুম। তারপর আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলে চললেন, “ইতিহাসের সেই দিনগুলোর কথা একবার ভেবে দেখুন তো, যখন আমাদের একটা সিদ্ধান্তই হয়তো বদলে দিতে পারত গোটা দুনিয়ার ইতিহাস। জার্মানরা যুদ্ধে জিতলে কিংবা কলম্বাস আমেরিকা খুঁজে না পেলে হয়তো গোটা ইতিহাসই অন্যভাবে লেখা হত। ভাবুন তো, নেপোলিয়ান যদি ওয়াটারলুর যুদ্ধে জিতে যেতেন তাহলে কী হত? যদি আজও দশ কোটি বছর আগের সেইসব অতিকায় প্রাগৈতিহাসিক জীবেরা চলাফেরা করত আমাদের আশেপাশে? যদি আজ আপনি আমার সঙ্গে দেখা করতে না আসতেন?”
যদি আমার মাথায় দুটো শিং আর আপনার পেছনে একটা ল্যাজ থাকত – মনে মনে বললাম আমি। কিন্তু আমার উত্তরের তোয়াক্কা না করেই ব্লুম বলতে থাকলেন, “আমার বিশ্বাস এই ঘটনাগুলো আজও আমাদের সমান্তরাল জগতে ঘটে চলেছে। তবে সম্পূর্ণ অন্য তলে। এই দুই জগতের মাঝে রয়েছে এক অদৃশ্য দরজা। সেই দরজা খেয়ালখুশি মতোই হঠাৎ হঠাৎ খুলে যায়। তখন দুই ভিন্ন জগতের প্রাণীরা সীমারেখার আবর্ত পেরিয়ে একে অন্যের জগতে পা রাখতে পারে”। কথা শেষ করে আমার দিকে তাকালেন ব্লুম। আর এই প্রথমবার আমি খেয়াল করলাম ওঁর চোখের রং সবুজ!
আমার মেরুদণ্ড দিয়ে তখন ভয়ের এক হিমেল স্রোত বয়ে চলেছে। বিন্দু বিন্দু ঘাম অনুভব করলাম ঠোঁটের ওপর। মিঃ ব্লুম বলতে থাকলেন, “সৃষ্টির গোড়ায় প্রাণ বলতে ছিল কিছু এককোষী প্রাণী আর উদ্ভিদ। তারা তখন সবে নড়তে চড়তে শিখেছে। আমাদের বহু পরিচিত এককোষী অ্যামিবা কিন্তু লক্ষ লক্ষ বছর পরেও একইভাবে বেঁচে রয়েছে। একইভাবে সাঁতারু উদ্ভিদ ক্লামাইডোমনাস আজও তার শিকারকে গ্রাস করে চলেছে। এদের ক্ষুদ্র মনে হলেও এদের সমান আকারের প্রাণীদের কাছে কিন্তু এরা কম ভয়ংকর নয়”।
“আপনি যখন গাছপালা নিয়ে চর্চা করেন, কলস গাছের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। মাংসাশী এই গাছ সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে থাকে, তারপর গ্রাস করে মাছি, পোকামাকড়কে। তারপর আমাদের চোয়ালের মতোই বন্ধ করে নেয় নিজের পাপড়ি। বন্দী হয় শিকার।”
“গভীর সমুদ্রের অতলে এমন অনেক প্রাণী আছে, যাদের আচরণ উদ্ভিদের মতো। আবার এমন অনেক উদ্ভিদও রয়েছে, বাইরে থেকে যাদের দেখলে প্রাণী বলেই মনে হয়”
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন মিঃ ব্লুম। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এইসব ভ্যান্তারা আমার আর ভালো লাগছিল না। “তবে এসব জিনিসের গুরুত্ব আপনার আমার মতো লোকের কাছেই। সাধারণ লোক এদের নিয়ে ভেবেও দেখবে না”
তারপর টেবিলের ওপর হাতের ভর দিয়ে আমার দিকে একটু ঝুঁকে এসে বললেন, “আচ্ছা ধরুন, এমন যদি কোনও সমান্তরাল জগত থাকে, যেখানে বিবর্তনের লড়াইয়ে প্রাণীদের টপকে উদ্ভিদরা অনেক অনেক এগিয়ে গেছে? সেখানকার প্রাণী… ধরুন মানুষ… তাদের থেকেও বুদ্ধিমত্তায় অনেক এগিয়ে সেখানকার উদ্ভিদরা?”
“আপনি কি বলছেন মিঃ ব্লুম? এ কি করে সম্ভব?” ফিসফিস করে বললাম আমি। রীতিমত কুলকুল করে ঘামছি তখন।
চেয়ারে হেলান দিয়ে হাসতে শুরু করলেন ব্লুম। আমার মনে হল তাঁর হাসির সঙ্গে সঙ্গে যেন আশেপাশের উদ্ভিদরাও হাসতে শুরু করে দিয়েছে।
“কিন্তু মশাই, আপনি যতই অসম্ভব বলুন না কেন, আপনার চোখ দেখে বেশ বুঝতে পারছি আপনি ইতিমধ্যে এর অর্ধেকটাই বিশ্বাস করে বসে আছেন। তাও আসল ঘটনাটাই এখনও শোনেননি” হাসতে হাসতেই বললেন ব্লুম।
তারপর হাসি থামিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ব্লুম। তারপর বলতে লাগলেন, “যে ঘটনা এখন আমি আপনাকে শোনাব, আমি নিজেও সেই ঘটনার এক হতভাগ্য অংশীদার।”
বছর দুয়েকের আগেও আমার জীবন বয়ে চলেছিল স্বাভাবিক স্রোতেই। আমি যখন জন্মেছিলাম, তখনই আমার মা মারা যান। এবং তার বছর কুড়ি পরে মারা যান আমার বাবাও। আমার বাবা বেশ ভালোই বিত্তবান ছিলেন। ফলে তিনি মারা যাবার পরে উত্তরাধিকার সূত্রে সব সম্পত্তি আমার হাতেই আসে। আমার খাওয়া পরার ভাবনা আর রইল না। ফলে বেশিরভাগ সময়ই আমি কাটাতে লাগলাম পড়াশোনা করে। শুধু জ্ঞান বাড়াবার জন্যই পড়ে যেতে লাগলাম নানা বিষয়ে। যদিও উদ্ভিদই ছিল আমার পছন্দের বিষয়।
হ্যাঁ, যে কথা বলছিলাম। বছর দুয়েক আগে আমি একবার গিয়েছিলাম কালাহারি মরুভূমিতে। একটা দুষ্প্রাপ্য ক্যাকটাসের খোঁজে। আমার সঙ্গী ছিল একটা ল্যান্ড-রোভার জিপ। একদিন সেই জিপ নিয়ে উঁচু-নিচু পথে ঝাঁকুনি খেতে খেতে চলেছি মরুভুমির বুক চিরে। মাথার ওপর জ্বলন্ত সূর্য গনগন করে তাপ বিকিরণ করছে। মাথার ওপর সূর্যের তাপ আর নীচে মরুভূমি! আমার অবস্থাটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন!
একটা সমতলভূমিতে পৌঁছে গাড়ির গতিটা সবে একটু বাড়িয়েছি, হঠাৎ বাজ পড়ার মতো একটা ভয়ানক আওয়াজে চারদিক কেঁপে উঠল! আমার চোখের সামনে সবকিছু হঠাৎ করেই ঝাপসা হয়ে গেল, আবার ঠিক তার পরের মুহূর্তেই আবার স্পষ্ট হয়ে ফিরে এল! আমি অবাক হয়ে চারদিক দেখতে লাগলাম।
সবকিছু যেন কেমন বদলে গেছে! রঙগুলো পালটে গেছে বর্ণালীর বিপরীত প্রান্তের রঙে! হলদে বালির রং এখন নীল আকাশে! সারা আকাশ জুড়ে হলদে রঙের ছড়াছড়ি। আমার গা দিয়েও যেন কেমন একটা সবুজ আভা বেরোচ্ছে! তাপমাত্রা একশো কুড়ি ডিগ্রী ফারেনহাইট থেকে নেমে এসেছে সত্তর ডিগ্রীতে। ভয়ে ভয়ে ওপর দিকে তাকিয়ে যা দেখলাম, তাতে আমার দম আটকে আসার জোগাড়! মাথার ওপর সেই সূর্যের রং এখন পান্নার মতো সবুজ!!
গাড়ি থেকে কোনওমতে টলতে টলতে নামলাম। তারপর বালিয়াড়ির খাড়াই বেয়ে পৌঁছলাম কতগুলো গোলাপী রঙের পাথরের কাছে। এরপর কী দৃশ্য আমার জন্য অপেক্ষা করছে কে জানে! ভেবেই এক অজানা আতংকে আমি শিউরে উঠলাম। তারপর অনেক সাহস সঞ্চয় করে পাথরের আড়াল থেকে উঁকি মেরে আমি যা দেখলাম, আমার গলা দিয়ে নিজের অজান্তেই এক আর্তনাদ বেরিয়ে এল।
আমার সামনে এক বিস্তৃত নীল রঙের মাঠ। সেই মাঠে নিখুঁতভাবে প্রায় ছ-ফুট অন্তর অন্তর দাঁড়িয়ে আছে একটা করে কাঠের খুঁটি। আর সেই খুঁটিগুলোতে বেঁধে রাখা হয়েছে এক একজন মানুষকে। তারা সম্পূর্ণ নগ্ন। আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠতাম হয়তো, কিন্তু নিজেকে সংযত করলাম। চিৎকার থামাতে কামড়ে ধরলাম নিজের হাত। জিভে ঠেকল রক্তের নোনতা স্বাদ।
খুঁটিতে বাঁধা লোকগুলো চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। ওদের মুখে কোনও যন্ত্রণার ছাপ নেই। হঠাৎ সারির দূরে কারও নড়াচড়া টের পেলাম। তারপর যা দেখলাম সেরকম ভয়ানক দৃশ্য হয়তো এই দুনিয়ায় একমাত্র আমিই দেখেছি!
সামনে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় বারো ফুট লম্বা একটা বিশাল জিনিস। যার গোড়াটা প্রায় সাত ফুট ব্যাসের। সেখান থেকে ডগার দিকে সামান্য সরু হয়ে গেছে। ডগা থেকে শুঁড়ের মতো অসংখ্য বাহু সাপের মতো চারপাশে ছড়িয়ে কেমন যেন সর সর করে কাঁপছে। গোটা জিনিসটাও কেমন যেন টলমলে। প্রথমবার দেখে মনে হল কোনও সামুদ্রিক ফুল। প্রত্যেকটা শুঁড় প্রান্তের দিকে এসে পাতার মতো চ্যাপটা হয়ে গেছে। দেখে মনে হল ওগুলো মনে হয় আমাদের হাতের মতোই কাজ করতে পারে। ঘোলাটে লাল রঙের জিনিসটার সারা গায়ে কালো চাকা চাকা দাগ! অনেকটা আঁচিলের মতোই। অবশেষে বুঝলাম জিনিসটা আসলে কি! একটা উদ্ভিদ!
এরপর যা ঘটল, তা আরও ভয়ানক! নারকীয় গাছটা সারি ধরে এগিয়ে আসতে লাগল। তারপর খুঁটির বাঁধন খুলে একজন মানুষকে টেনে নিল। ক্ষুরের মতো ধারালো পাতা দিয়ে ছিন্নভিন্ন করতে লাগল লোকটার হাত-পা। ঠিক যেমন আমরা কাঁচি দিয়ে পাতাবাহার গাছ ছাঁটি। তারপর উঁচু করে তুলে ধরল সেই অবশিষ্ট দেহটা।
এবার গাছটার ওপরের অংশ খুলে গেল। সেখানে দেখা দিয়েছে এক বিশাল অন্ধকার মুখগহ্বর! লোকটার শরীর থেকে ছলকে ছলকে বেরিয়ে আসা রক্ত খুব মন দিয়ে পান করতে লাগল গাছটা! আনন্দে যেন গাছটার গোটা দেহ থরথর করে কাঁপতে লাগল। দেহটার শেষ রক্তের ফোঁটা যখন শেষ হল, গাছটা দেহটা ছুঁড়ে ফেলে দিল একদিকে। সেদিকে জমে রয়েছে পচাগলা প্রচুর লাশ।
এবার সেই ভয়ানক উদ্ভিদ এগিয়ে এল দ্বিতীয় মানুষটার দিকে। একইভাবে সেই পৈশাচিক দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখলাম চোখের সামনে! এবার ভালোভাবে মাথা তুলে তাকালাম। গোটা জায়গাটাতেই অসংখ্য মানুষকে খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। পুরুষ ছাড়াও স্ত্রীলোকও রয়েছে তাদের মধ্যে। আর সেই মৃত্যুভূমিতে কুড়িটারও বেশি ভয়ংকর উদ্ভিদ একে একে বেছে নিচ্ছে তাদের শিকার।
একটা জিনিস দেখে খুব অবাক হলাম, পুরুষ ও স্ত্রী মিলিয়ে হয়তো প্রায় হাজার জনেরও বেশি মানুষ এখানে বন্দী রয়েছে, কিন্তু কেউই বাঁধন খোলার চেষ্টা করছে না! এমনকি সঙ্গীদের এই ভয়ানক পরিণতি দেখেও সবাই কেমন যেন নির্বিকার! কোনও হেলদোল নেই কারোর মধ্যে। যেন সবটাই তারা ছেড়ে দিয়েছে অদৃষ্ট নিয়তির ওপর।
এইভাবে কেটে গেল বেশ কয়েক ঘণ্টা। গাছগুলোর রক্ততৃষ্ণার যেন শেষ নেই! হতবুদ্ধি হয়ে নীরব সাক্ষী হয়ে দেখলাম এই নারকীয় হত্যালীলা। হঠাৎই একটা ছোট পাথরের আড়ালে একটা চাপা আলোড়ন আমার চোখে পড়ল।
কতগুলো গাছ নিজেদের মধ্যেই হিংস্রভাবে লড়াই শুরু করেছে। হঠাৎ করেই প্রায় গোটা দশেক গাছ ছুটে বেরিয়ে এল। ওদের লক্ষ্য বিচ্ছিন্নভাবে ইতিউতি পড়ে থাকা বিভিন্ন মানুষের মাথা! দেখে মনে হল যেন কোনও দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে শয়তান গাছগুলোর মধ্যে! কে ক-টা মাথা সংগ্রহ করতে পারে সেই খেলাই যেন খেলছে ওরা নিজেদের মধ্যে! মাথাগুলো শূন্যে ছুঁড়ে দিয়েই আবার শুঁড় দিয়ে লুফে নিতে লাগল! যেন কোনও বাচ্চা ক্রিকেটের বল নিয়ে ক্যাচ ক্যাচ খেলছে! আর গাছগুলোর চলা দেখে মনে হচ্ছিল যেন হাওয়ায় ভর দিয়ে চলছে ওরা।
হঠাৎ ঘাড়ের কাছে একটা শিরশিরানি টের পেলাম। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে টের পেলাম বড় কোনও বিপদ আসন্ন। এক লাফে উঠে দাঁড়ালাম!
ভাগ্যিস উঠে দাঁড়িয়েছিলাম! নয়ত সেই আঘাত আমি কোনওভাবেই এড়াতে পারতাম না। আঘাত করেছিল একজন মানুষ! সম্পূর্ণ নগ্ন, ছুঁচলো দাঁতওলা একটা মানুষ। মাথায় বড় বড় চুল আর চোখে পাশবিক দৃষ্টি নিয়ে সে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
তার হাতে একটা নল। আকার ইঙ্গিতে সে আমাকে বোঝাল আমার শরীরে নলটা ঢুকিয়ে সে আমার শরীরের রক্তপান করতে চায়। তবে তার চোখে এক অদ্ভুত চাউনি! যেন সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না কেন আমি তাকে আমার রক্ত খেতে দিচ্ছি না। ছোবল মারার ভঙ্গীতে সে এগিয়ে আসতে লাগল। আমিও কি করব ভেবে না পেয়ে হাতের সামনে একটা পাথর পেয়ে ছুঁড়ে মারলাম তার দিকে! সে কিন্তু আঘাতটা এড়াবার কোনও চেষ্টাই করল না। নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে রইল। পাথরটা গিয়ে তার মুখে আঘাত করতেই সে কাটা কলাগাছের মতো ধপ করে পড়ে গেল। এরকম আজবভাবে আক্রমণের কাছে কাউকে আত্মসমর্পণ করতে আমি কাউকে দেখিনি। বিশেষ করে একটু আগে যাদের দেখেছিলাম, সেই বিভীষিকাদের সঙ্গে এর আচরণকে কোনওভাবেই আমি মেলাতে পারলাম না।
দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। এদিকে খিদে আর তেষ্টায় আমার অবস্থা কাহিল। কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম জানি না, হঠাৎ দৃশ্যপটে সামান্য পরিবর্তন হতে আমার হুঁশ ফিরল। একজন পুরুষ আর একটা মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে আমার সামনে। দুজনের হাতেই সেই নল! মনে মনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি, কিন্তু তার আগেই আমাকে অবাক করে দিল তারা। আমার দিকে না তাকিয়ে এগিয়ে গেল পড়ে থাকা তাদের সেই সঙ্গীর দেহের কাছে। তারপর সেই দেহের পাঁজরের দু-দিকে দুটো নল ঢুকিয়ে চোঁ চোঁ করে রক্তপান করতে লাগল।
এই দৃশ্য দেখে আমার বমি এসে গিয়েছিল। ছুটে পালিয়ে যেতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না। মেয়েটা নল থেকে মুখ তুলে একবার তাকাল আমার দিকে, তারপর ইশারায় তার নলটা দেখিয়ে আমাকেও তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বলল।
তারপরেই ঘটল আরও সাংঘাতিক এক ঘটনা। আমার দিকে মেয়েটা যখন তাকিয়েছিল, সেই কয়েক মুহূর্তের হেরফেরেই মেয়েটার সঙ্গী নিজের হাতের নল বসিয়ে দিল মেয়েটার বুকের মধ্যে! হাতের নলটা ফেলে দিয়ে মেয়েটা শুধু কয়েকবার কাশল। তারপর সঙ্গীর দিকে একবার তাকিয়ে দেখল তার রক্তপানের দৃশ্য!
আর আমি সহ্য করতে পারলাম না। একটা পাথর নিয়ে লোকটার মাথায় বসাতে যাব, হঠাৎ একটা শিষের শব্দে ফিরে তাকালাম।
বারোটারও বেশি সেই রাক্ষুসে উদ্ভিদ ঘিরে ধরেছে আমাকে! গায়ের জোরে পাথরটা ছুঁড়ে মারলাম ওদের দিকে। কিন্তু কোনও লাভই হল না। তীব্র শিষের মতো শব্দ করতে করতে লকলকে শুঁড় দিয়ে ওরা এগিয়ে আসতে লাগল। লোকটাকে আর মেয়েটাকে ঘিরে ধরল ওরা। তারপর পুতুলের মতো তুলে নিল দুজনকে।
এরপর এল আমার পালা। অসংখ্য শুঁড়ে আষ্টেপৃষ্ঠে আমাকে বেঁধে ফেলল। আমার তখন হাত নাড়াবারও ক্ষমতা নেই। সেই অবস্থাতেই দেখলাম একটা গাছ ওই লোকটার লম্বা চুল ধরে শূন্যে তুলল একটু। তারপর ক্ষুরের মতো পাতা বসিয়ে দিল তার ঘাড়ের পাশে। তারপর চুপিয়ে চুপিয়ে কাটতে লাগল।
আর একটা শুঁড় দিয়ে লোকটার পা-ও পেঁচিয়ে ধরল। তারপর টানতে লাগল। লোকটার মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে গেল, আর রক্তাক্ত শরীর থেকে গলার নলি, যকৃত, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড বেরিয়ে এল! আর সহ্য করতে পারলাম না আমি। প্রচণ্ড চিৎকার করে জ্ঞান হারালাম।
কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম জানি না। কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম খুঁটিতে বাঁধা সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়।
চারদিকে তাকিয়ে ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম। বুঝতে পারলাম কী পরিণতি আসতে চলেছে আমার! আমার সেই চিৎকার শুনে তিন ফুট দূরের খুঁটিতে বাঁধা একটা মেয়ে ফিরে তাকাল আমার দিকে।
তারপর অল্প হেসে বলল, “জায়গাটা খুব সুন্দর না?”
“তুমি কথা বলতে পারো?” সবিস্ময়ে বললাম আমি।
মেয়েটা হেসে বলল, “কেন পারব না? জানো তোমাকে না আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ওরা ঠিক করেছে আমাদের জোড় খাওয়াবে। দারুণ না? আমার তো খুব আনন্দ হচ্ছে। যাই বলো।”
“জোড় খাওয়াবে মানে?”
“মানে আমাদের একসঙ্গে শোয়াবে। জোড় খাওয়াবে। তোমার নিশ্চয়ই জ্ঞানবুদ্ধি অনেক বেশি, তাই এখানে তোমাকে এনেছে। কারণ এটাই সেরা জায়গা। আমাদের তিরিশজনকে সেরা সন্তান পাবার জন্য বারবার মিলিয়ে মিশিয়ে জোড় খাওয়ানো হয়েছে। আমাদের দেখতে খুব সুন্দর, তাই না?”
মেয়েটার চোখে গর্বের ছাপ দেখলাম। মেয়েটা আবার বলল, “আমরা বড় মাঠের ওই ছন্নছাড়া বা খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়ানো বুনো মানুষগুলোর মতো নই। এত সুন্দর দেখতে মানুষদের মধ্যে থাকতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।” এবার ভালোভাবে চাইলাম মেয়েটার দিকে। একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হলাম। এযাবৎ জীবনে যত মেয়েকে দেখেছি, নিঃসন্দেহে এই মেয়েটা তাদের সবার থেকে সুন্দরী। সরু কোমর পর্যন্ত নেমে এসেছে ঢেউ খেলানো চুল। কমনীয় মুখের মধ্যে সবথেকে আকর্ষণীয় ওর টানাটানা কালো দুটো চোখ। ওর শরীর থেকে চোখ ফেরাতে পারলাম না, আর একটা জিনিস আবিষ্কার করে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম! ইতিমধ্যে আমি মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছি!
হঠাৎ একটা হিস হিস করে শব্দে পেছন ফিরে চাইলাম। দেখলাম একটা দানবীয় গাছ খুঁটির সারি ধরে এগিয়ে আসছে। আর সুন্দর গন্ধওলা সেন্ট স্প্রে করছে আমাদের গায়ে। আর সেই জন্যই হিস হিস করে শব্দটা হচ্ছে। হিস হিস শব্দ করে তার মাথার গহ্বরটা একবার করে খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে।
সেই অদ্ভুত নেশা ধরানো, পাগল করা গন্ধ যেন আমার চিন্তনকে পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলল। একটা অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি হল, সেই অনুভূতিটা ঠিক কিরকম ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না। হেসে তাকালাম মেয়েটার দিকে। মেয়েটাও আমার দিকে দুষ্টু মদির হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মেয়েটা ওর শরীরটাকে খুঁটির ওপরে নীচে ঘষতে লাগল। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা। যেন গন্ধটাকে আরও ভালোভাবে উপভোগ করতে চাইছে। আমার শরীরে তখন গরম রক্তের স্রোত বইছে। হঠাৎ কিসের একটা হালকা ছোঁয়া আমার মুখে লেগেই বেরিয়ে গেল। দেখলাম একটা গাছ খোলা জায়গায় নল হাতে যে লোকটা একটা মেয়ের সঙ্গী ছিল, সেই লোকটার দেহের অবশিষ্টাংশ বয়ে নিয়ে চলেছে। একটা ভিজে চুঁইয়ে পড়া ব্যাগ থেকে তার মাথা, গলার নলী, হৃৎপিণ্ড উঁকি মারছে! ব্যাগটা চামড়ার ফিতে দিয়ে বাঁধা। হঠাৎ একটা জিনিস দেখে আমার গা গুলিয়ে উঠল! দেখলাম লোকটার মাথা হাসিহাসি মুখে চেয়ে আছে আমার দিকে। বুঝলাম যে ভাবেই হোক, লোকটা এখনও বেঁচে আছে। কিন্তু এ কি করে সম্ভব!
আরও ভয়ংকর দৃশ্য দেখা তখনও আমার বাকি ছিল। দেখলাম ওই গাছের অপর কাঁধ থেকে ঝুলছে আরও একটা ওইরকম ব্যাগ। আর সেই ব্যাগ থেকে উঁকি মারছে লোকটার সঙ্গী সেই মেয়েটার মাথা! মেয়েটা যেন আমাকে দেখে একবার চোখ নাচাল।
বুঝলাম হয়তো সাজাবার জন্যই গাছটা মাথাদুটো নিয়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে খুঁটিতে মাথা ঠুকলাম। চেষ্টা করলাম এই ভয়ংকর দৃশ্যকে মন থেকে মুছে ফেলতে।
হঠাৎ শীৎকারের একটা শব্দে চোখ খুললাম। দেখলাম আমার সামনের খুঁটিতে বাঁধা সেই মেয়েটা হাসিমুখে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। ওর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে। মুখে আর সারা শরীরে জমেছে শিশিরবিন্দুর মতো ছোট ছোট ঘামের দানা। হাঁফাতে হাঁফাতে মেয়েটা বলল, “এর আগে কখনও আমার এত ভালো লাগেনি। এ নিশ্চয়ই তোমার জন্যই হয়েছে। তুমি টের পাওনি?”
যদিও বুঝতে পারলাম না ও ঠিক কি বলতে চাইছে, তবুও বললাম, “হ্যাঁ পেয়েছি।”
“আমাদের মিলনের আর দেরী নেই।” – পুলকিত গলায় বলল মেয়েটা।
“এভাবে আমাদের আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?” প্রশ্ন করলাম আমি।
মেয়েটা কোনও উত্তর দিল না। চোখ বুজিয়ে রইল হাসিহাসি মুখ করে। আমি আবারও একই প্রশ্ন করলাম।
এবার ও চোখ খুলে তাকাল। তারপর বলল, “কতক্ষণ মানে?”
“মানে কখন আমাদের বাঁধন খুলবে?”
“খুলবে না। ওরা আমাদের বাঁধন কখনও খোলে না। এইসব আজেবাজে কথা বললে কিন্তু আমি আর তোমাকে ভালোবাসব না, বলে দিলাম। আমি কি বুনো মানুষ যে খোলা অবস্থায় ঘুরে বেড়াব?”
“কিছু মনে করো না। আসলে… আসলে আমি ঠিক বুঝতে পারিনি।”
আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে অদ্ভুতভাবে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল মেয়েটা। তারপর বলল, “তুমি খুব অদ্ভুত। অন্য সবার থেকে আলাদা। খুব শিগগিরই ওরা তোমার বাঁধন খুলে দেবে।”
অবাক হয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “খুলে দেবে কেন?”
খিলখিল করে হেসে মেয়েটা বলল, “আমার সঙ্গে তোমাকে এক খুঁটিতে বেঁধে দেবার জন্য। বুঝেছ বুদ্ধুরাম?”
“ও” – আমার মুখে রক্তের ঝলককে উপেক্ষা করে বললাম আমি।
তারপর বললাম, “তুমি কি চাও, সারাক্ষণ তোমার সঙ্গে আমাকে এক খুঁটিতে বেঁধে রাখা হোক?”
“হলে ভালোই লাগত। কিন্তু তা সম্ভব নয়।”
আমাদের আলোচনায় বাধা পড়ল। সারি থেকে কেউ একজন চেঁচিয়ে বলল, “খাবার এসেছে! খাবার!”
আমরা তিরিশজন একইদিকে তাকালাম। দুটো গাছ সারি ধরে হেঁটে আসছে। তাদের হাতে একটা বড় ব্যাগ। ব্যাগ থেকে একটা নল বেরিয়ে এসেছে বাইরে। পালা করে নলটা তুলে দেওয়া হল উপোসী বন্দীদের মুখে। তারা পাগলের মতো উত্তেজনায় নলটা চুষতে লাগল। একজনের পালা শেষ হতে না হতেই নলটা ছিনিয়ে দেওয়া হচ্ছে পরের জনকে।
টের পেলাম আমারও ভয়ানক খিদে পেয়েছে। আর আমিও বাকিদের মতো খিদের জ্বালায় বাকিদের মতোই উত্তেজনায় ছটফট করছি। অপেক্ষা করছি কখন আমার পালা আসবে। গাছ দুটো আরও কাছে আসতে ঘেন্নায় কুঁকড়ে গেলাম। দূর থেকে যেটাকে আমি ব্যাগ ভেবেছিলাম, সেটা আসলে একটা মানুষের দেহ। বলের মতো শক্ত করে বেঁধে রাখার জন্য দূর থেকে আমার ব্যাগ মনে হচ্ছিল। সবাই মহানন্দে ওটারই রক্ত পান করে চলেছে!
এদিক ওদিক মাথা ঝাঁকিয়ে গাছদুটোকে বাধা দেবার চেষ্টা করলাম। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু আমার থেকে ওদের গায়ের জোর অনেক বেশি। ওরা জোর করে নলটা গুঁজে দিল আমার মুখে। বাধ্য হলাম রক্ত পান করতে। বুক ভরা তৃষ্ণা মিটিয়ে নিলাম।
এরপর গাছদুটো এগিয়ে গেল আমার সেই ভালোবাসার মেয়েটার দিকে। দেখলাম মহাতৃপ্তিতে ও নলে মুখ লাগিয়ে পান করে চলেছে রক্ত। এদিকে আমারও রক্ততৃষ্ণা যেন আবার জেগে উঠল।
এরপর ঘনিয়ে এল সন্ধ্যার অন্ধকার। আমার হাতের বাঁধন যে অনেক আলগা হয়ে গেছে, সেটা কিছুক্ষণ পরে টের পেলাম। বুঝলাম রক্ত পান করাবার সময় ধস্তাধস্তিতে ক্ষুরের মতো পাতা আমার বাঁধনের কয়েক জায়গায় কেটে বসেছিল। আর তার ফলেই এই অবস্থা।
ফিসফিস করে ডাকলাম মেয়েটাকে, “আমার বাঁধন খুলে গেছে, শুনছ?”
আমার দিকে গোলগোল চোখ করে তাকাল মেয়েটা মেয়েটা। তারপর বলল, “কি করছ কি তুমি? আমি চেঁচিয়ে বলে দেব ওদের…” ওর কথা শেষ হবার আগেই ওর সামনে গিয়ে হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলাম। তারপর হাত সরিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরলাম ওর ঠোঁটে। সে যে কি স্বর্গীয় অনুভূতি, তা আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না।
তারপরে আমরা দুজন এক নীরব অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলাম। ও আমাকে আর বাধা দিল না। আমি ওর বাঁধন খুলে দিলাম। তারপর দুজনে পালাবার জন্য দৌড়তে শুরু করলাম।
এক নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে চললাম দুজনে। কতক্ষণ ছুটেছিলাম জানি না, কিন্তু পাথর বালিয়াড়ির খাড়াই পেরোতেই যা দেখলাম, খুশিতে আমার মন ভরে গেল। চাঁদের আলোয় দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার সেই রোভার! শক্ত হাতে মেয়েটার হাত ধরলাম। তারপর লাফিয়ে, হোঁচট খেয়ে খাড়াই বেয়ে নামতে শুরু করলাম দুজনে। গাড়ির কাছে পৌঁছনোর পর প্রায় লাফিয়ে উঠলাম গাড়িতে।
ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে যাব, এমন সময় কানে এল সেই শিষের শব্দ। শিষের শব্দ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। এদিকে ইঞ্জিনও স্টার্ট দিয়েছে। গিয়ার দিয়ে ক্লাচ ছাড়লাম। একটা প্রচণ্ড শব্দ করে ছুটতে শুরু করল গাড়িটা। হঠাৎ করেই বাজ পড়ার মতো বিকট শব্দ শুনতে পেলাম। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে গেল। আবার ঠিক তার পরের মুহূর্তেই আবার সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠল।
সামনে চাঁদের হলদে আলোর দিকে তাকিয়ে মনটা খুশিতে ভরে উঠল। যাক আমরা স্বাধীন! আর আমাদের কোনও ভয় নেই!
“হ্যাঁ, মিঃ কার্টিস। এক ভয়ংকর আবর্তের মধ্যে দিয়ে আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম এক সমান্তরাল জগতে। আর সেখান থেকে ফিরেও এসেছি আমি” – নিজের ঘটনা বলা শেষ করে আমার দিকে তাকালেন ব্লুম। সবকিছু প্রয়োজনের থেকেও বেশি চুপচাপ। একটা পিন পড়লেও যেন শব্দ পাওয়া যাবে।
আমি কুলকুল করে ঘামছি। একটু ঢোঁক গিলে বললাম, “এরকম ভয়ংকর ঘটনা আমি সত্যিই আগে শুনিনি, মিঃ ব্লুম। কিন্তু আমার মনে একটা প্রশ্ন আছে। আপনার সেই সঙ্গিনীর কী হল?”
মিঃ ব্লুম আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, মিঃ কার্টিস। ওই নারকীয় অভিজ্ঞতাই আমার জীবনে এনে দিয়েছে এই অকালবার্ধক্য। যাইহোক, আমার গল্প তো আপনি শুনলেন। এটা লিখলে আপনি অনেক টাকা পয়সাও কামাবেন। কিন্তু আমার পারিশ্রমিকের কি হবে?”
“চিন্তা করবেন না। আমাদের পত্রিকা আপনাকে আপনার যথাযোগ্য পারিশ্রমিকই দেবে।”
“আরে ধুর! টাকা কে চাইছে?”
“তাহলে?”
মিঃ ব্লুম লোহার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর হাতে একটা নল। সেটা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে তিনি বললেন –
“আমার এই ভাঙাচোরা শরীরে আর বেশি রক্ত অবশিষ্ট নেই, মিঃ কার্টিস। আমার বউ খিদেয়, তেষ্টায় ছটফট করছে। দিনের পর দিন আমি কীভাবে সেটা পারব? পারিশ্রমিক হিসেবে শুধু একটু রক্ত দিন মিঃ কার্টিস। শুধু একটু রক্ত… আমার প্রিয়তমার জন্য…”
“নাআআআ” – চিৎকার বেরিয়ে এল আমার গলা দিয়ে। লাফিয়ে উঠে একটা ধাক্কা মারলাম ব্লুমকে। পলকা শরীর নিয়ে মেঝেতে আছড়ে পড়ল ব্লুমের দেহ।
তারপর টলতে টলতে উঠে বসলেন তিনি। হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চললেন জমকালো সব ফুলের পসরা সাজানো ক্যাকটাসটার দিকে।
“আমি দুঃখিত সোনা! তোমাকে ও এক ফোঁটা রক্তও দিতে চাইল না! তুমি কি এতটাই অযোগ্য?” এই বলে গাছটাকে জড়িয়ে ধরে ব্লুম উঠে দাঁড়ালেন। তারপর ওটার গায়ে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে চোখ বুজলেন।
হঠাৎ একটা ভয়ংকর দৃশ্য নেমে এল আমার চোখের সামনে। দেখলাম গাছটা কেমন যেন নড়ে চড়ে উঠছে। তারপর গাছটা ধীরে ধীরে জড়িয়ে ধরল ব্লুমকে।
আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। মেঝে থেকে সেই ছুরিটা তুলে নিলাম। তারপর গায়ের জোরে আঘাত করতে লাগলাম ক্যাকটাসটার গায়ে।
আহত কোনও স্ত্রীলোকের শ্রীল গলার চিৎকার ভেসে এল! ব্লুম ছিটকে পড়লেন একপাশে। অবাক বিস্ময়ে দেখলাম অদ্ভুত ক্যাকটাসটা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে! গাছটার অসংখ্য কাটা জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছে লাল রক্ত! চিৎকার আর কাতরানি শোনা যাচ্ছে শুধু!
এরপর কি ঘটেছিল, আমার খুব বেশি কিছু মনে নেই। শুধু এটুকু মনে আছে, মিঃ ব্লুম একটা হাত খামচে ধরেছেন নিজের বুকের ওপর। আর তাঁর অপর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মৃত্যুমুখী গাছটার দিকে। আমার হাত থেকে ছুরিটা কখন খসে পড়েছে, টেরও পাইনি।
এক ছুটে বেরিয়ে এসেছি সেই বাড়ি থেকে। আমার দৌড় দেখে সেই মুদি হয়তো কিছু ভেবেছিল।
এরপর কেটে গেছে অনেকদিন। সাক্ষাৎকার নেবার কাজ এখন আর করি না। শুধু ফিচার লিখি। আজও মাঝে মাঝে সূর্যের দিকে তাকালে মনে হয়, ওটার রং পান্নার মতো সবুজ! আর কানে ভেসে আসে সেই শিষের মতো শব্দ!
কঃ সঃ গল্পটি গেলর্ড সাবাটিনির লেখা ‘ভরটেক্স অব হরর’ গল্পের অনুবাদ। গল্পটি এই প্রথম বাংলায় অনুদিত হল।
Tags: অনুবাদ গল্প, গেলর্ড সাবাটিনি, তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী, সৌমেন চ্যাটার্জি