আমার চোখে অদ্রীশ বর্ধন
লেখক: অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী
শিল্পী: সৌরভ দে ও দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)
আমি তখন আমেরিকার শিকাগোয়। খুব সম্ভবত ২০০৬ সালের অক্টোবর। একদিন হঠাৎ পত্রভারতীর দপ্তর থেকে ত্রিদিবদার ফোন। অদ্রীশ বর্ধন আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। উনি আমার লেখা প্রসঙ্গে ত্রিদিবদাকে ওঁর মুগ্ধতা জানিয়েছেন এবং সে প্রসঙ্গে আমার সঙ্গে কথা বলতে খুব আগ্রহী।
এটা যে সময়ের কথা সে সময় আমি কিশোর ভারতীতে বিজ্ঞানের কিছু প্রশ্ন নিয়ে পরপর বেশ কিছু প্রচ্ছদকাহিনী লিখেছিলাম। কল্পবিজ্ঞানের কিছু ছোট গল্পও সেসময় প্রকাশিত হয়েছিল। তবে তা নিয়ে যখন অদ্রীশ বর্ধনের মতো একজন লেজেন্ড কথা বলতে চান তা একজন লেখককে কতটা উৎসাহিত করে তা বোধহয় বলে বোঝানোর দরকার নেই। সত্যি কথা বলতে এরকম একটা কথা শোনার পরে আর ফোন না করে থাকা যায় না। আমি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ফোন করি ও ওঁর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়। আমাকে সেদিন সামান্য কথায় যেভাবে উৎসাহিত করেছিলেন, তার জন্য আজও আমি ওঁর কাছে ঋণী। এরপরে ওঁর সঙ্গে দুইবার আমার বইমেলায় দেখা হয়েছে। কিছু কথা বলেই মনে হয়েছে ওঁর মতো একজন না থাকলে আজও হয়ত কল্পবিজ্ঞানের সঙ্গে বড় অংশ বাঙালি পাঠকের কোন পরিচয় থাকত না।
এবার ওঁর লেখার কথায় আসি। আমি স্কুলে পড়াকালীন অদ্রীশ বর্ধনের লেখা পড়ার সুযোগ পাই নি। যদিও বন্ধুদের সঙ্গে যখনই কল্পবিজ্ঞান নিয়ে কথা হত ওঁর নাম বারবার ঘুরে ফিরে আসত। ১৯৯৭–৯৮ সালে কল্পবিজ্ঞানের একটা সংকলন করতে গিয়ে ‘আশ্চর্য’ পত্রিকার বেশ কিছু সংখ্যা ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়ি। তখনই ওঁর লেখার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়। গল্প সংকলনে ওঁর ‘চলমান গাছ’ বলে একটা গল্প নির্বাচিত করেছিলাম। পরে ওঁর আরও কিছু লেখা পড়েছি। তার মধ্যে ‘মাকড়সা আতঙ্ক’ উপন্যাসটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। তবে লেখক অদ্রীশ বর্ধনের থেকে অনুবাদক ও সম্পাদক অদ্রীশ বর্ধন আমার কাছে অনেক বেশী প্রিয়। শুধু কল্পবিজ্ঞানকে উপজীব্য করে আশ্চর্য – এর মতো পত্রিকা বার করা কতটা চ্যালেঞ্জিং সেটা বলার প্রয়োজন নেই। এজন্যই হয়ত আমরা ওই সময়ে অনেক কল্পবিজ্ঞানের লেখককে পেয়েছিলাম। ওঁর অনেক লেখা এখনও পড়া হয় নি। ইচ্ছে আছে আরও পড়ার। ওনাকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই। এই প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিকের কাছে বাংলা কল্পবিজ্ঞান চিরঋনী থাকবে।
Tags: অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী, আমার চোখে অদ্রীশ বর্ধন, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, সৌরভ দে, স্মৃতিচারণ