একটি অপরাহ্নে রাজেশ বসুর সঙ্গে
লেখক: প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য
একটি অপরাহ্নে রাজেশ বসুর সঙ্গে
লেখা – প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
অলংকরণ – দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য
দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়েছে সবে। মুখোমুখি হলাম রাজেশ বসুর।
তাঁর লেখা আমরা পড়েছি। ‘নেফ্রিখেফের কবল’ কিংবা ‘মহাকাশের মৃত্যুদূত’-এৱ মতো আরও কত বই! টানটান ভঙ্গিতে তাঁর লেখায় টেনে রাখেন রাজেশবাবু। মূলত কল্পবিজ্ঞানেই তাঁর উৎসাহ। তাই ‘কল্পবিশ্ব’-র তরফ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রবীণ, নবীন মিলিয়ে যত বেশি কল্পবিজ্ঞান লেখকের সঙ্গে পরিচয় করতে পারি, এটা আমাদের লক্ষ্য। যাতে পাঠের সমান্তরালে সেই সব লেখকদের ভাবনার সঙ্গে সরাসরি একটা সংযোগ গড়ে তুলে সামগ্রিক ভাবে বাংলা কল্পবিজ্ঞানের রূপরেখাকে খানিক আন্দাজ করা যায়।
এখন যাঁরা লিখছেন, তাঁদের মধ্যে রাজেশবাবু বেশ পরিচিত একটি নাম। দেখা গেল তিনিও ‘কল্পবিশ্ব’-র কথা শুনেছেন। বললেন, ‘‘চলে আসুন একদিন। আড্ডা হোক।’’ সেইমতো আমি আর বিশ্বদীপদা গিয়ে হাজির রাজেশবাবুর অফিসে। আগেই বলেছি, বিকেল সবে শুরু হয়েছে। চায়ের কাপ হাতে ‘ফ্লাইং সসার’ নিয়ে আড্ডা শুরু হল। তবে প্রথমেই স্বভাব লাজুক রাজেশবাবু বলে দিলেন, ‘‘ইন্টারভিউ-টিউ থাক না। এমনিই আড্ডা হোক।’’ আলোচনা এমন খাতে গড়াল, তিনিই আমাদের সাক্ষাৎকার নিতে আরম্ভ করে দিলেন। আমরা কী করি, হাজারও কাজের মধ্যে ঘরের খেয়ে ভিনগ্রহের প্রাণী নামানোর ইচ্ছে কেন হল ইত্যাদি।
সেসব উত্তর দিতে দিতে ঢুকে পড়া গেল তাঁর লেখালেখির প্রসঙ্গে। আগামী দিনে কেমন লেখা লিখতে চান? হার্ড সায়েন্স ফিকশন নাকি ফ্যান্টাসি-ধর্মী লেখা? রাজেশবাবু জানালেন, সব ধরনের লেখাতেই তাঁর উৎসাহ রয়েছে। তবে সম্পাদকদের চাহিদার কথাও উল্লেখ করলেন। জানালেন, সম্পাদকরাই কিন্তু লেখকদের ভিতর থেকে নানা রকমের লেখা বের করে আনতে পারেন।
জীবনের প্রথম লেখা অবশ্য কোনও সম্পাদকের জন্য লেখেননি। হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘কী জানেন, জীবনটা এমনিই চলে যাচ্ছিল। তাই হঠাৎ করেই লেখা শুরু।’’ বছর দশেক আগে একটি গল্প লিখে সোজা চলে যান সন্দীপ রায়ের কাছে। সে লেখা ছাপাও হয়ে যায়। উৎসাহ বাড়ে। ধীরে ধীরে লেখার জগতে চলে আসা। তৈরি হওয়া পরিচিতি। অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের থেকে।
সত্যজিৎ রায়ের গল্পের বিরাট ফ্যান। শঙ্কু-কাহিনিই তাঁর মনে বুনে দিয়েছিল অনুপ্রেরণার বীজ। পাশাপাশি প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন, ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্যদের লেখাও প্রিয় ছিল। পড়তেন বিদেশি জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞান লেখকদের লেখা। আসিমভ থেকে হাইনলেন। তবে তিনি মগ্ন হয়ে রয়েছেন জুল ভের্ন-এর লেখায়। উল্লেখ করলেন ভের্নের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত ‘প্যারিস’ উপন্যাসের কথা। কী অসম্ভব দূরদৃষ্টি ছিল কিংবদন্তি সাহিত্যিকের, সেকথাও জানালেন সবিস্ময়ে। আড্ডায় যেমন হয়, প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখার কথাও উঠে এল। কেবল পড়াই নয়। মনে কল্পনার রংমশাল জ্বেলে দিত সাদা-কালো টিভির পর্দায় দেখা ‘স্টার ট্রেক’।
ভালো কল্পবিজ্ঞান কী করে লেখা যায়? রাজেশবাবুর সপাট উত্তর, ‘‘সবার আগে একটা আর্জ থাকতে পারে। আপনি দেখবেন, অনেক বিশ্বসেরা সাহিত্যিকের ক্ষেত্রেই কিন্তু তেমনটা ঘটেছে। রাউলিং-এর কথাই ধরুন। আকস্মিক ভাবে ওঁর লেখা শুরু। কিন্তু লেখার একটা আর্জ কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিশ্চয়ই ছিল। কাজেই, কল্পবিজ্ঞান বলেই নয়, যে কোনও লেখা লিখতে গেলেই ভিতরে ভিতরে একটা ইচ্ছে থাকতে হবে। সেটাই আসল। তবে অবশ্যই, তার বিজ্ঞানে আগ্রহ থাকতে হবে। তার মানে বিজ্ঞানের ছাত্র হতে হবে, এমন নয়। কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহটা থাকতে হবে।’’ ‘আর্জ’-এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পড়তে হবে, সেকথাও মনে করিয়ে দিলেন।
আড্ডা হয়তো আরও গড়াত, কিন্তু সেদিন আর হাতে সময় ছিল না। আবার একদিন দেখা ও কথা হবে, এই কথা দিয়ে আমরা ফিরে এলাম। সঙ্গে রইল ওঁর উপহার দেওয়া বেশ কয়েকটি বই। রাজেশবাবু অনুরোধ করলেন, পরের আড্ডাটা যেন আরও দীর্ঘ হয়। সমস্বরে বলে উঠলাম, ‘‘নিশ্চয়ই।’’
Tags: ইন্টারভিউ, তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, বিশেষ আকর্ষণ, রাজেশ বসু
শুরু করতে করতেই খতম হয়ে গেল যে!