একাদশ মাত্রার সন্ধানে
লেখক: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
শিল্পী: সুপ্রিয় দাস
“প্রকৃতি আমাদের সিংহের লেজের ডগাটা শুধু দেখতে দেন। গোটা সিংহটা আসলে এত বড় যে সেটা একবারে দেখা সম্ভব নয়।”
ইউনিফায়েড ফিল্ড থিওরির অনুসন্ধানে ত্রিশটি ব্যর্থ বছর কাটাবার উপলব্ধির সারসংক্ষেপ বলা যায় এই বহু-চর্চিত উক্তিটাকে। ব্যর্থ বিজ্ঞানীটির নাম আইনস্টাইন। ব্যাপারটা একটু ভেঙে বলা যাক।
একেশ্বরবাদের তত্ত্ব ও বিশ্বাস মানুষের সভ্যতায় পুরোনো দিন থেকেই চলে আসছে। প্রধান প্রধান ধর্মগুলোর দিকে চোখ ফেলে দেখুন, তাদের প্রায় প্রতিটিতেই একেশ্বরবাদ প্রধান জায়গাটি দখল করে রেখেছে। তার মূল কথাটি হল, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। আমরা তাঁর একই রূপের নানান বহিঃপ্রকাশ দেখি মাত্র।
বিশের শতকে এসে আধুনিক বিজ্ঞানও সেই একই কথা নতুন করে বলল। তার দাবি হল, মহাবিশ্বে, মহাকাশে যা কিছু অনুভুতিগ্রাহ্য রয়েছে তা একই আদিশক্তির বহুরূপী বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
তবে, ভক্তিমার্গের প্রশ্নহীন বিশ্বাসের পথে বিজ্ঞান হাঁটে না। তাই একেশ্বরবাদের যে ধার্মিক পথে যুগ যুগ ধরে বিশ্বাসীরা নির্বিবাদে হেঁটে গিয়েছেন, বিশ শতকের নতুন ধর্ম বিজ্ঞানও যখন সেই একেশ্বরবাদের উপপাদ্যকে তুলে আনলো তার অংকের খাতায় তখন কিন্তু বিজ্ঞানধর্মা মানুষেরা তার প্রমাণ চেয়ে বসল। অতএব শুরু হল মানবসভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এক অনুসন্ধানের। বস্তু ও শক্তির বহুরূপে বিদ্যমান ব্রহ্মাণ্ড যে একই শক্তির ভিন্ন ভিন্ন রূপ, তার প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে সেই প্রথম আদিশক্তিকে। যুক্তি ও গণিতের আলোকবর্তিকাকে সম্বল করে এক অজানা অন্ধকারের দেশে পা বাড়ালেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে পদে পদে ভুল করবার সম্ভাবনা। আজ যাকে সত্য মনে হয় , কাল প্রমাণ হয় তা ছিল মায়ামাত্র। এক একজন মানুষের সারাজীবনের গবেষণা ও আবিষ্কার নিমেষে অর্থহীন হয়ে যায় কোনও অনুজ বৈজ্ঞানিকের একটি ছোট্ট আবিষ্কারে।
অবশ্য এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঊনবিংশ শতকের শেষদিক থেকেই। ১৮৬৪ সালে ম্যাক্সওয়েল এক যুগান্তকারী গবেষণাপত্রে প্রমাণ করলেন যে তাড়িতিক ও চৌম্বকীয় বল আসলে একটিই বল, যা হল, আলোর গতিতে ছোটা তড়িচ্চুম্বকীয় বল বা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স। তাঁর দেখানো সেই একীভবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় বিজ্ঞান প্রমাণ করল, মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তার সবই মূলত চারটে শক্তির বহিঃপ্রকাশমাত্র। তারা হল, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তি (আলো, রেডিও তরঙ্গ, চুম্বকের শক্তি, সকলেই তার নানা রূপ), উইক ফোর্স (তেজস্ক্রিয়তার সময় পরমাণুর কেন্দ্রক থেকে ইলেক্ট্রনের স্রোত বা বিটা রশ্মি নির্গত হয় যে শক্তির ফলে। একে বলা হয় বিটা ডিকে বা বিটা ক্ষয়) স্ট্রং ফোর্স (যে শক্তির বলে প্রোটনদের সম-তাড়িতিক বিকর্ষণকে অতিক্রম করে পরমাণুর কেন্দ্রক নিজেকে ভেঙে যাবার হাত থেকে বাঁচায়), ও নিউটন আবিষ্কৃত ব্রহ্মাণ্ড-ব্যাপ্ত রহস্যময় শক্তি মহাকর্ষ।
কাজেই আদিশক্তির অনুসন্ধান এবারে সীমিত হল চারটে মাত্র শক্তিকে একীভূত করবার গবেষণায়। বিজ্ঞানী জীবনের ত্রিশটা বছর এই কাজে দিয়েছিলেন আইনস্টাইন। সফল তিনি হননি, তবে সমস্যার প্রকৃত রূপটাকে আইনস্টাইন কিন্তু চমৎকার ধরেছিলেন তাঁর ওই উক্তিটিতে।
বিজ্ঞানদেবতার পূজারিরা অবশ্য হতাশ হননি। উত্তর-আইনস্টাইন যুগে তাঁরা চেষ্টা চালাতে লাগলেন নতুন নতুন পথে, নতুন নতুন ধারণা ও উন্নততর প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে।
এপ্রিল ১৮, ১৯৫৫ তারিখে আইনস্টাইনের মৃত্যু হল। এর বছর দুয়েক পরে, ১৯৫৭ সালের পাদুয়া ভেনিস কনফারেন্সে এক তরুণ ভারতীয় বিজ্ঞানী, রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশ করলেন, উইক ফোর্সের বাহক বিটারশ্মি নিষ্ক্রমণের জন্য দায়ী বল-এর চরিত্রের এক নতুন ব্যাখ্যা। সুদর্শন ও মারশাকের দেয়া এই নতুন তত্ত্বের নাম ভি-এ তত্ত্ব। এরপর, সেই ব্যাখ্যার ওপরে ভিত্তি করে এবার শুরু হল উইক ফোর্সের জন্য একটা কোয়ান্টাম তত্ত্বভিত্তিক ব্যাখ্যা তৈরির কাজ। এর আগে, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফোর্সের কোয়ান্টাম প্রতিরূপ (কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রোডাইনামিকস বা সংক্ষেপে কিউ ই ডি) তৈরি হয়ে গেছে ৪০-এর দশকেই। এবারে উইক ফোর্সের জন্যও সেই পথেই কাজ এগোলো। (তাত্ত্বিক ভাষায় একে বলা যায় উইক ফোর্সের জন্য একটা গজ থিওরি তৈরি করা। গজ থিওরি এই প্রবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয় নয়। তবে উৎসাহী পাঠকের যদি উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কলনবিদ্যা ও স্থানাংক জ্যামিতির জ্ঞান থাকে তাহলে গজ থিওরির সরল ব্যাখ্যার জন্য এই সুন্দর লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন– http://terrytao.wordpress.com/2008/09/27/what-is-a-gauge/ )
কাজটা করবার জন্য যে গাণিতিক প্রমাণগুলো করা দরকার ছিল তা করতে গিয়ে ষাটের দশকে গ্লাসো, সালাম ও ওয়েইনবার্গ আলাদা আলাদাভাবে দেখালেন যে এমন একটা মডেল তৈরি করা সম্ভব, যদি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তিকেও সে মডেলের একটা অংশ হিসেবে নেয়া যায়। তাঁদের মডেল দেখাল যে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স ও উইক ফোর্স আসলে একটিই মূলশক্তির দুটি রূপ। তার প্রথমটি ভরহীন ফোটন কণাবাহিত হওয়ায় কাজ করে মহাজাগতিক স্কেলের দূরত্বে। আর দ্বিতীয়টির চলৎশক্তি তার এক কোটি ভাগের এক ভাগ মাত্র। তা কাজ করে পারমাণবিক দূরত্বের অতিক্ষুদ্র স্কেলে। ডবলু ও জেড বোসন নামের যথাক্রমে ৮০ ও ৯০ বিলিয়ন ইলেক্ট্রনভোল্টের তূল্যমূল্য ভরের দুটি অতিশয় ভারী মূলকণা তাদের বাহক হবার দরুন তাদের এহেন শ্লথগতি।
সাধারণ তাপমাত্রায় এরা দুটি নিতান্তই অসম-শক্তির ভিন্ন ভিন্ন বল হলেও, অতি উচ্চ তাপমাত্রায় (১০০ বিলিয়ন ইলেক্ট্রনভোল্ট শক্তিস্তরে, বা, ১০১৫ ডিগ্রি (একের পিঠে পনেরোটা শূন্য) কেলভিন তাপমাত্রায় এরা কিন্তু একই শক্তিতে পরিণত হয়। ব্রহ্মাণ্ডে এই তাপমাত্রা তৈরি হয়েছিল মাত্র একবারই, মহাবিস্ফোরণে বিশ্বসৃষ্টির
১০-১২ সেকেন্ডের মাথায়। অর্থাৎ তার আগে, সময়ের শুরুর থেকে ওই সময়-মুহূর্ত পর্যন্ত যতক্ষণ ব্রহ্মাণ্ডের তাপমাত্রা ওর থেকে বেশি ছিল ততক্ষণ ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক ও উইক ফোর্স ছিল একটাই বল। তারপর ব্রহ্মাণ্ড যেই সে তাপমাত্রার থেকে আরো ঠাণ্ডা হল অমনি ব্রহ্মাণ্ডের সেই সুষম রূপটা নিজেনিজেই ভেঙে গিয়ে সেই শক্তি থেকে তৈরি হল আলাদা আলাদা ভরের কণায় বাহিত বলের দুটো আলাদা রূপ। সৃষ্টি হল বৈষম্যের। আদিশক্তি নিজেকে ভেঙে এক থেকে একাধিক হলেন।
কিন্তু কেন এমন হল? একই শক্তি যখন ভেঙে দুই রূপ নিলো তখন তাদের বাহক কণাদের ভর (বা শক্তি) এত আলাদা হয়ে গেল কী করে? বিজ্ঞানীরা এর সদুত্তর দেবার জন্য যে অন্য মূলকণার অস্তিত্বর প্রস্তাব দিয়েছেন তার নাম হিগস বোসন। তাঁদের মতে, এই হিগস বোসনের প্রভাবেই অতো ভারী হয়ে উঠেছিল ডবলু ও জেড বোসন। তাঁদের তত্ত্ব বলে, যাবতীয় মূলকণাদের ভর দেবার জন্য দায়ী এই হিগস বোসন। তাই যদি হয় তাহলে মহাবিস্ফোরণের পরের সেই ভরহীন আদিশক্তির মহাকুণ্ড থেকে বস্তুময় ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি তবে হতে পেরেছিল এই হিগস বোসনের কল্যাণে! বিজ্ঞানীরা তাই একে সসম্ভ্রমে নাম দিয়েছেন গড পার্টিকল বা ঈশ্বরকণা।
১৯৮৩ সালে ডবলু ও জেড কণাদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হবার চার দশক বাদে ২০১৩ সালে এসে বিজ্ঞানীরা এরকম একটি মূলকণার দেখা পেলেন যার ধর্ম হিগস বোসনের সঙ্গে মেলে। জেনিভার কাছে বসানো সতেরো মাইল লম্বা অতি শক্তিধর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার আর তার অ্যাটলাস নামের পার্টিকল ডিটেকটার যন্ত্রে কিছু যুগান্তকারী পরীক্ষানিরীক্ষা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য জুগিয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এই নতুন পাওয়া কণার ভরের একটা নিখুঁত আন্দাজ দেয়া হয়। দেখা যাচ্ছে সে ধর্মের মাপজোক হিগস বোসনের প্রস্তাবিত মাপজোকের সঙ্গে মিলেও যাচ্ছে।
১৯৭৯ সালে ইলেক্ট্রোউইক তত্ত্বের জন্য নোবেল পুরষ্কার পেলেন সালামরা তিনজন। কিন্তু যে মূল ভি এ তত্ত্বের ওপর ভর করে তাঁদের এই আবিষ্কার, তার প্রবক্তা ভারতীয় বিজ্ঞানী সুদর্শন কিন্তু নোবেল পুরষ্কারের থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন আজও।
চার আদিশক্তির দু’জনকে মিলিয়ে দেবার পর এইবারে কাজ চলেছে ইলেক্ট্রোউইক ফোর্স আর স্ট্রং ফোর্সের একীভবনের জন্য। সেটি যখন সম্ভব হবে,তা হবে ইলেক্ট্রোনিউক্লিয়ার ফোর্স বা গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরি। ১৯৭০ শেলডন গ্লাসো এবং হাওয়ার্ড জর্জি প্রস্তাব করেছিলেন, ১০২৭ ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রায় সেই একীভবন ঘটতে পারে। সৃষ্টির ১০-৪৩ সেকেণ্ড পরের সেই তাপমাত্রা তৈরি করা এখনও মানুষের সাধ্যের বাইরে। কাজেই এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া আজও সম্ভব হয় নি। স্ট্রং ফোর্সের বাহক যে গ্লুওন নামের কণা তার অস্তিত্বের কিছু পরোক্ষ প্রমাণ মিললেও (উৎসাহী পাঠক এ জন্য দেখে নিন থ্রি জেট ইভেন্ট। ১৯৭৯ সালে প্রথম।) তার প্রত্যক্ষ অস্তিত্বের প্রমাণ আজও অধরা রয়ে গেছে।
এই বাধাটা পার হলে তারপর তার সংগে মেলাতে হবে মহাকর্ষের শক্তিকে। তবে গিয়ে আমরা নাগাল পাব স্বপ্নের তত্ত্ব থিওরি অব এভরিথিং-এর। বৈজ্ঞানিকের অংকের খাতা প্রমাণ দেবে ব্রহ্মাণ্ডের একোমেবঅদ্বিতীয় ঈশ্বরশক্তির।
তবে, সেটা করতে গেলে প্রথমে জানতে হবে মহাকর্ষ বস্তুটা কী? এই মুহূর্তে মহাকর্ষের সর্বজনগৃহীত ব্যাখ্যাটা রয়েছে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী মহাকর্ষ হল দেশকালের (স্পেস-টাইম) একটি বিশেষ জ্যামিতিক ধর্মমাত্র। ভরের উপস্থিতি দেশকালের বিস্তারের গড়নে স্থানে স্থানে বিকৃতি আনে। এই বিকৃতি, কাছাকাছি অন্যান্য ভর, আলো এমনকি সময়কেও প্রভাবিত করে। এই প্রভাব দূরত্বের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সুনির্দিষ্ট হারে কমতে থাকে। সাদা কথায় এই হল মহাকর্ষের আইনস্টাইনীয় চেহারা।
ওদিকে আমরা দেখছি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা কীভাবে চার মূলশক্তির তিনটিকে একীভবনের পথে এগিয়ে গিয়েছে। তাহলে এই তিনের সঙ্গে মহাকর্ষকে জুড়তে গেলে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার তত্ত্ব দিয়ে মহাকর্ষের একটা মডেল তৈরি করা দরকার। কাজটা করবার পথে সবচেয়ে বড় বাধা যেটা আসছে সেটা হল, কোয়ান্টাম বলবিদ্যার যে মূলশক্তিদের ব্যাখ্যা দেয় তারা মূলত কাজ করে পারমাণবিক স্তরে। অন্যদিকে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব যে মহাকর্ষবলের কথা বলে তার প্রভাব পরে গ্রহতারাদের মত বড় বড় বস্তুদের এলাকায়।
বিজ্ঞানীরা প্রস্তাব করেছেন, অন্য তিনটে বল যেমন ফোটন,ডবলু বা জেড বোসন কিংবা গ্লুওন নামের বিভিন্ন বাহক কণা বা মেসেঞ্জার পার্টিকলের ওপরে নির্ভর করে কাজ করে, মহাকর্ষও তেমন কাজ করে একধরণের ভরহীন বাহক মূলকণার ওপর ভর করে। তাকে নাম রাখা হয়েছে গ্র্যাভিটন। এই কাল্পনিক কণার এখনও কোন বাস্তব হদিশ মেলেনি। প্রশ্ন উঠবে কেন মেলেনি? কারণটা বোঝাতে গেলে একটা সহজ পরীক্ষা করা যাক। একটা আলপিন নিন। সেটাকে এত বড়ো পৃথিবীটা নিজের দিকে টানছে। যদি গ্র্যাভিটন থেকে থাকে তাহলে সেই গ্র্যাভিটন কণারা সেই টান তৈরি করছে। এবারে একটা দশ গ্রাম ওজনের ছোটো চুম্বকের গায়ে পিনটা লাগান। সেটা মাটিতে পড়বে না। দশ গ্রাম ওজনের একটা চুম্বক যে পরিমাণ শক্তি দিয়ে টানছে সেটাও তাহলে পিনটার ওপরে এত বড়ো পৃথিবীটার প্রযুক্ত মাধ্যাকর্ষণকে ছাপিয়ে যাবার পক্ষে যথেষ্ট। এইটাই সমস্যা। মহাকর্ষ আসলে বেজায় দুর্বল। কতটা দুর্বল সেটা অংকের হিসেবে দেখা যাক–একটা হাইড্রোজেন পরমাণুতে প্রোটন আর ইলেকট্রনটার মধ্যে যে পরিমাণ তড়িচ্চুম্বকীয় বল কাজ করে, কণা দুটোর মধ্যে কার্যকরী অভিকর্ষ বলের চেয়ে সেটা কতগুণ বড়ো তা বোঝাতে একের পিঠে উনচল্লিশটা শূন্য দিতে হবে। সে এত দুর্বল বলেই তো সামান্য রাসায়নিক জ্বালানির ধাক্কায় যেটুকু শক্তি তৈরি হয় তাতেই অত বড়ো রকেটগুলো মাটি ছেড়ে উঠে মহাকাশে চলে যায়। এক একটা গ্র্যাভিটনের শক্তি তাহলে ঠিক কতটা দুর্বল তার একটা আন্দাজ এতে পাওয়া যাচ্ছে। অত দুর্বল শক্তির স্বাক্ষর খুঁজে পাবার মতন সংবেদনশীল যন্ত্র এখনও বিজ্ঞানের নাগালের বাইরে।
তাছাড়া অন্য তাত্ত্বিক সমস্যাও রয়েছে মহাকর্ষকে এইভাবে কোয়ান্টাম বা কণা-চরিত্র দেয়ার মধ্যে। যেকোনো কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্ব সবসময় কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক প্যারামিটারের ওপর নির্ভর করে। এদের মান পরীক্ষার মাধ্যমে বের করে নেয়া যায়। মহাকর্ষকে এইভাবে গ্র্যাভিটন নামে কাল্পনিক কণা বাহিত বলে তার কোয়ান্টাম রূপ দিতে গেলে দেখা যাচ্ছে, তাতে অসীম সংখ্যক প্যারামিটার চলে আসছে। প্যারামিটারের সংখ্যা অসীম হলে তার শক্তির ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট হিসেবই আর খাটবে না। অবশ্য কম শক্তিস্তরে যখন আমরা পরীক্ষা চালাব তখন যুক্তি বলছে, মাত্র নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক প্যারামিটারের মান বড় হবে আর বাকিদের মান হবে নিতান্তই তুচ্ছ, ও সেক্ষেত্রে এই কোয়ান্টাম মহাকর্ষ আইনস্টাইনের জ্যামিতিক মহাকর্ষের সঙ্গে একই হয়ে যাবে, অতএব সেখানে সমস্যা থাকবে না কিছু। মহাকর্ষের একটা য়্যাপ্রক্সিমেট কোয়ান্টাম ব্যাখ্যা সম্ভব হবে। কিন্তু সমস্যা শুরু হবে শক্তিস্তর যখন খুব বেশি হবে। উচ্চ শক্তিস্তরে যখন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রভাব বেড়ে উঠবে তখন কিন্তু এই অসীমসংখ্যক প্যারামিটারের প্রতিটিই হয়ে উঠবে বেজায় গুরুত্বপূর্ণ। আর যেহেতু অসীমসংখ্যক প্যারামিটারের নিখুঁত হিসেব এক এক করে পরীক্ষার মাধ্যমে বের করে নেয়া সম্ভব নয় ফলে উচ্চ শক্তিস্তরে মহাকর্ষের কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্ব হালে পানি পাবে না।
স্বাভাবিকভাবেই, এহেন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আদিশক্তির খোঁজ কিছুটা থমকে গিয়েছিল। অবশ্য সেটা নতুন কিছু নয়। বিজ্ঞানের ইতিহাসে বারংবারই এইধরনের অন্ধ-গলির মুখোমুখি হতে হয়েছে গবেষকদের। আর ঠিক তখনই আপাত-অনতিক্রম্য সেই বাধাকে অতিক্রম করবার জন্য মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি গড়ে নিয়েছে সম্পূর্ণ নতুন পথ। যেমন ধরুন রাদারফোর্ডের পারমাণবিক মডেল। ওতে যে বিরাট সমস্যাটার মুখোমুখি হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা সেটা হল, ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন যত পাক মারবে নিউক্লিয়াসের চারদিকে ততই সে হারাবে শক্তি, আর তার ফলে একসময় তার কক্ষপথ ছোট হতে হতে সে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে কেন্দ্রকের বুকে। শেষ হয়ে যাবে তার অস্তিত্ব। অথচ পরমাণু কখনোই এইভাবে ধ্বংস হয় না। বরং সুদীর্ঘকাল ধরে সুস্থিত থাকে তার কেন্দ্রক ও তাকে ঘিরে ঘুরতে থাকা ইলেকট্রনের ঝাঁক। ক্লাসিক্যাল পদার্থবিদ্যার কাছে এ ধাঁধার কোন উত্তর ছিল না। তখন এর উত্তর খোঁজবার জন্য তৈরি হল সম্পূর্ণ নতুন এক বিজ্ঞান—কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। সেই নতুন বিজ্ঞান বলল, ইলেকট্রন ঘোরে কতগুলো সুনির্দিষ্ট কোয়ান্টাম কক্ষপথে। আর সেইসব কক্ষপথে যখন তারা ঘোরে তখন তাদের কোনও শক্তি-ক্ষয় হয় না। এইভাবেই বাধার মুখোমুখি হয়ে মানুষ বারংবার বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখার জন্ম দিয়েছে।
আদিশক্তির অনুসন্ধানের পথে এই যে মহাকর্ষের শক্তির সঙ্গে অন্য তিন বলের মিলনের পথে দুরতিক্রম্য বাধা, একে অতিক্রম করবার জন্য এই মুহূর্তে গড়ে উঠছে বিজ্ঞানের এক সম্পূর্ণ নতুন ধারা। তার নাম স্ট্রিং তত্ত্ব। এই তত্ত্ব বলে, তিন-মাত্রিক নয়, স্থান হল নয়-মাত্রিক, আর তার সঙ্গে সময়কে জুড়লে ব্রহ্মাণ্ড হল গিয়ে দশ-মাত্রিক। এর মধ্যে ছ’টা মাত্রা মহাবিস্ফোরণের ঠিক পরেই গুটিয়ে ছোট্ট হয়ে গিয়েছিল আর গায়ে গতরে বেড়ে উঠেছিল বাকি চারটে মাত্রা, যাদের মধ্যে আমাদের বাস। আর এই দশ মাত্রার দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ায় অজস্র ছোট ছোট স্ট্রিং বা সুতো হেন কিছু অস্তিত্ব। দৈর্ঘ্যে তারা ১০-৩৫ মিটার। প্রতিটি স্ট্রিং থর থর করে কাঁপে আর আলোর গতিতে ঘুরপাক খায়। তার কাঁপুনির এক এক ধরণের শক্তি ও অভিমুখ হলে তা এক এক ধরণের মূলকণার জন্ম দেয়। তার কম্পাংকই হল বস্তুকণার ভরের পরিমাপ।এই স্ট্রিং আবার আসলে ব্রেন (মেমব্রেন-এর ‘মেম’টুকু ছেঁটে ফেলে এই নাম)নামে এক ভৌত বস্তুর একমাত্রিক রূপ। উচ্চতর মাত্রায় তার নাম হবে মাত্রা অনুযায়ী ২-ব্রেন, ৩-ব্রেন—১০-ব্রেন এইভাবে। এই ব্রেন-রা কোয়ান্টাম মেকানিকসের সূত্র মেনে স্থানকালের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। তাদের ভর আছে, এবং তাড়িতিক চার্জও থাকতে পারে।
এ যেন সৃষ্টিকর্তার রুদ্রবীণার সঙ্গীত। স্ট্রিংগুলি (বা ব্রেনগুলি) তাঁর বীণার তার যেন বা। তাতে এক একটি স্বরের ঝংকার জন্ম দেয় এক একটি মূলকণার, আর সেইসব সুরকণাগুলির সুষ্ঠু সজ্জায় সৃষ্টি হয় এক অনুপম মহাসঙ্গীতের, যার অন্য নাম দৃশ্যমান বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। আর, যখন এই ব্রেনরা ১০ মাত্রিক দেশকালের পটভূমিতে নিজেদের অবস্থান পালটায়, তখন স্থান ও সময় তাদের ঘিরে বেঁকে-চুরে যায় সাধারণ আপেক্ষিকতার অংকের হিসেব মেনে। তৈরি হয় মহাকর্ষ। আর এইভাবেই স্ট্রিং তত্ত্ব মূলকণাদের প্রবক্তা কোয়ান্টাম বলবিদ্যা আর অভিকর্ষের ব্যাখ্যা দেয়া সাধারণ আপেক্ষিকতাকে ভারী সুন্দর ভাবে একীকরণের একটা রাস্তা দেখায় বিজ্ঞানীদের।
কিন্তু প্রশ্ন হল এই স্ট্রিং-রা আসে কোথা থেকে? ব্যাপারটা আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে যখন দেখা যায় বিজ্ঞানীরা পাঁচপাঁচটা আলাদা শ্রেণীর স্ট্রিং তত্ত্ব তৈরি করে বসেছেন যারা প্রত্যেকে স্বতন্ত্র অথচ প্রত্যেকেই কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও সাধারণ আপেক্ষিকতাকে বেশ সুষ্ঠুভাবেই মিলিয়ে দিতে পেরেছে। কিন্তু কথা হল বিশ্ব ত একটাই। তাহলে এই পাঁচটা আলাদা আলাদা তত্ত্বের মধ্যে কোনটা আমাদের বিশ্বকে তৈরি করেছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ১৯৯৫ সালে এডওয়ার্ড উইটেন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রিং থিওরি কনফারেন্সে প্রস্তাব করেছেন এম -তত্ত্ব নামে এক রহস্যময় তত্ত্বের। এই তত্ত্ব বলে, বিশ্ব দশ-মাত্রিক নয়। তা হল এগারো-মাত্রিক। আর সেই এগারো-মাত্রিক দুনিয়ায় যে স্ট্রিংদের অস্তিত্ব কল্পনা করা হল, দেখা গেল, তার পাঁচটা ভিন্ন ভিন্ন রূপভেদ হল দশ-মাত্রিক বিশ্বের সেই পাঁচটা আলাদা জাতের স্ট্রিং তত্ত্ব। অর্থাৎ স্ট্রিংরা আদতে এগারো মাত্রার বাসিন্দা। দশ মাত্রার দুনিয়ায় তার পাঁচটা আলাদা আলাদা রূপভেদ দেখা যায় মাত্র। দশ মাত্রার দুনিয়াটা ধরুন একটা ঘর আর একাদশ মাত্রাটা হল তার বাইরের জগতটা। সেখানে বিরাট এক পাহাড় আছে। দশ মাত্রার ঘরের একটা জানালা দিয়ে দেখা যায় তার বরফ ঢাকা চুড়োটা, আরেক জানালা দিয়ে দেখি তার গায়ের একটা নদীকে, তৃতীয় জানালা দিয়ে দেখি গাছ ঢাকা তার একটা উপত্যকা। একাদশ মাত্রায়, অর্থাৎ ঘরের বাইরে গিয়ে দাঁড়ালে তখন তার গোটা রূপটা দেখা যাবে একসঙ্গে।বোঝা যাবে, দশ মাত্রার দুনিয়ায় বসে যে ভিন্ন ভিন্ন রূপগুলো দেখছিলাম তার, আসলে তা এক অভিন্ন দৃশ্যের ভিন্ন ভিন্ন অংশ মাত্র।
অংকের খাতায় এইসব সমাধান বের হলেও বাস্তবের পরীক্ষা নিরীক্ষায় হাতেকলমে এ তত্ত্বকে যাচাই করে নেবার মত যন্ত্রপাতি এখনও মানুষের নাগালের বহু বাইরে।কিন্তু একটা কথা ভেবে দেখুন, আমাদের পূর্বপুরুষেরা যখন পৃথিবীর আবহমণ্ডলের বাইরে গভীর মহাকাশে স্বর্গ নামের অতি উন্নত বাসভূমির কথা কল্পনা করেছিলেন, তখনও তো তা সে সময়ের বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল একেবারে। অথচ সে কল্পনা করবার মাত্রই চার পাঁচ হাজার বছরের মধ্যে মানুষ আজ হাতে কলমে মহাকাশে এবং গ্রহেগ্রহান্তরে বাসা বানাবার নকশা প্রায় ছকেই ফেলেছে। কাজেই অদূর ভবিষ্যতে এগারো মাত্রার বাসিন্দা, সকল সৃষ্টির উৎস স্ট্রিং মহাপ্রভুদের দেখাও যে মানুষ পাবে সে ব্যাপারে মানুষ নিশ্চিত। আর সেইদিন প্রমাণিত হবে ব্রহ্মাণ্ডের সকল শক্তিই একটিমাত্র শক্তির রূপভেদ মাত্র। মানুষের জ্ঞানের গণ্ডিতে আসবে দেশকালের রহস্য। আজকের চতুর্মাত্রিক ব্রহ্মাণ্ডের জায়গায় মানুষ চিনতে পারবে একাদশ-মাত্রিক প্রকৃত ব্রহ্মাণ্ডকে।
প্রশ্ন হলো, ঐহিক লাভ কী হবে তাতে আমাদের? গত শতকের নব্বইয়ের দশকে মেক্সিকান বিজ্ঞানী আলকুবিয়ের এ বিষয়ে একটা উপপাদ্য দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, একাদশ মাত্রার সম্পূর্ণ চরিত্রকে জানলে মানুষ তখন সীমিত জায়গায় বিপুল শক্তির বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে সেই বহুমাত্রিক দেশকালকে ইচ্ছেমতো সংকুচিত ও প্রসারিত করতে সক্ষম হবে। ফলে, শত শত আলোকবর্ষ জুড়ে ছড়ানো স্থানকে মুহূর্তের জন্য গুটিয়ে ফেলে, একটুও না নড়েই চোখের নিমেষে পৃথিবী থেকে একেবারে দূর নক্ষত্রলোকে পৌঁছে যেতে পারবে মানুষের তৈরি মহাকাশযান।
(ধরুন একটা বড়ো রবারের চাদরের একপাশে আপনি দাঁড়িয়ে আর তার একেবারে অন্যপাশে চাদরের ওপরে একটা গোল্লা আঁকা। একবারও না নড়ে আপনি যদি সেই গোল্লাটার কাছে পৌঁছে যেতে চান তাহলে পা দিয়ে চাদরটাকে গুটিয়ে নিয়ে এলেই হলো। আপনাকে নড়তে হবেনা। গোল্লাটাই নিমেষে আপনার কাছে এসে হাজির হবে। তারপর গোল্লার ওপরে পৌঁছে যেই আপনি হালকা হয়ে দাঁড়াবেন, রবারের চাদর ফের ফিরে যাবে নিজের চেহারায়।)
বিজ্ঞান বলে, কোন বস্তুই আলোর চেয়ে বেশি জোরে ছুটতে পারেনা। কাজেই আলোর চেয়ে বেশি জোরে ছোটা মহাকাশযান তৈরিও বিজ্ঞানের হিসেবে সম্ভব নয়। এই নিয়ে বিজ্ঞানী-মহলে বহুকাল একটা হতাশা কাজ করেছে, যে তারার দেশে রকেট নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নটা বোধ হয় কল্পবিজ্ঞানেই আটকে থাকবে। আলকুবিয়েরের এই তত্ত্বটা বিজ্ঞানীদের একটা নতুন পথ দেখিয়েছে। সেটা হল এই যে এই পদ্ধতিতে, মহাকাশযানের আলোর চেয়ে বেশি গতিতে ছোটবার কোন দরকারই হবে না। সে থেমে থাকবে একই জায়গায়। শুধু এক মহাশক্তির বিস্ফোরণে দেশকাল সংকুচিত-প্রসারিত হয়ে তাকে পৌঁছে দেবে ব্রহ্মাণ্ডের এপার থেকে ওপারে। কিন্তু মুশকিল হল, এর জন্য প্রথমে একাদশ মাত্রাটিকে পুরো অনুধাবন করে জানতে হবে কোন পদ্ধতিতে তাকে কাজে লাগানো হবে দেশকালকে গুটিয়ে ফেলবার কাজে। আর দ্বিতীয় সমস্যাটা হল, অংক বলছে, কাজটা করবার জন্য যে পরিমাণ শক্তি বিচ্ছুরণের দরকার হবে তা কল্পনাতীত পরিমাণে বেশি।
মানুষের হাতে সে শক্তি আসতে এখনো অনেক দেরি। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে বাধা কি, যে আমাদের কোন বংশধর হয়তো একদিন সেই ভবিষ্যতের মহাকাশযানে চেপে আলকুবিয়ের ড্রাইভের ইঞ্জিনের শক্তিতে ভর করে চোখের নিমেষে সত্যিই পৌঁছে যাবে একেবারে আকাশের ওপিঠে!
আসুন আমরা সেই স্বপ্নটা দেখি। বিজ্ঞানের সাধনা তো অসম্ভব স্বপ্নদের বাস্তবে বদলে দেবারই অন্য নাম!
Tags: একাদশ মাত্রার সন্ধানে, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা, প্রবন্ধ, সুপ্রিয় দাস
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। লেখক ও কল্পবিশ্ব এর জন্য শুভ কামনা থাকল।