কে তুমি
লেখক: রণেন ঘোষ
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য
কে তুমি
লেখক – রণেন ঘোষ
অলংকরণ – দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য
শ্রী রণেন ঘোষ জানুয়ারী ১, ১৯৮১
১৫, লিন্টন ষ্ট্রীট,
কলকাতা – ৭০০০১৪
মহাশয়,
আপনার লেখা ‘সময়ের রূপ’ ফেরত পাঠালাম। গল্প হিসেবে ছাপার উপযুক্ত বটে, কিন্তু তবুও ছাপা গেল না। কারণ গল্পটা ঠিক বোধহয় আপনার নয়। ১৯৬২ সালে ‘আশ্চর্য’ পত্রিকায় প্রথম বেরিয়েছিল গল্পটা… গল্পটা নিয়ে সম্পাদক আকাশ সেন ও সম্পাদকীয় লিখেছিলেন অনেকটা।
গল্পের লেখক শ্রী নির্মোক ঘোষের এটাই প্রথম লেখা। আপনার গল্পের প্রতিটি অক্ষর শ্রী নির্মোক ঘোষের গল্পের হুবহু এক। এরকম নির্লজ্জ চুরি শুধু নিন্দনীয়ই নয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আশা করি সমস্ত ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়।
নমস্কারান্তে,
ভবদীয়,
শ্রী অদ্রীশ বর্ধন
সম্পাদক
ফ্যান্টাসটিক
**********************
শ্রী অদ্রীশ বর্ধন জানুয়ারী ৭, ১৯৮১
সম্পাদক
ফ্যান্টাসটিক
মাননীয় মহাশয়,
বিশ্বাস করুন গল্পটা আমার চুরি করা নয়। শ্রী নির্মোক ঘোষকে চিনিও না… জানিও না ও নামে কাউকে। সময়ের রূপ আমার লেখা মৌলিক গল্প… আমার নিজের বানানো গল্প।
মাত্র একমাস আগে গল্পের আইডিয়াটা আসে আমার মাথায়। বুঝতে পারছিনা কেমন করে আমার গল্পের সঙ্গে নির্মোক ঘোষের গল্পের মিল হল। আর যদি হয়েও থাকে সে-টা নেহাৎ কাকতলীয়বৎ।
থাক, আমাকে ভাবিয়ে তুলছে আপনার চিঠি। কিছুকাল আগে, আর একটা গল্প পাঠিয়েছিলাম ‘গ্রহান্তর’ বিজ্ঞানভিত্তিক পত্রিকায়। নাম ছিল ‘সূর্যের রং কালো’… দুঃখের বিষয় সেটাও ফেরত এসেছিল। সঙ্গে ছিল সম্পাদীয় মন্তব্য… শ্রী নির্মোক ঘোষের গল্পের হুবহু নকল।
আশ্চর্য! কে এই নির্মোক ঘোষ? জন্মাবধি নির্মোক ঘোষ বলে কাউকে জানিও না… নামও শুনিনি… লেখা পড়া তো দূরের কথা। বিজ্ঞানভিত্তিক গল্পের আমি একজন দারুণ ভক্ত… অথচ… আশ্চর্য!
নমস্কার নেবেন,
বিনীত,
রণেন ঘোষ
**********************
শ্রী রণেন ঘোষ জানুয়ারী ১৩, ১৯৮১
১৫, লিন্টন ষ্ট্রীট,
কলকাতা – ৭০০০১৪
মহাশয়,
আপনার চিঠি পেলাম।
নিশ্চিত না হয়ে কোনও কথা বলিনা আমরা। পত্রিকা চালাতে এরকম অনেক ব্যাপারে শক্ত হতে হয় আমাদের। একই প্লটে দুটো কেন–অনেক গল্প লেখা যেতে পারে… কিন্তু আপনার ‘সময়ের রূপ’ শুধু প্লটেই এক নয়, এর প্রতিটি অক্ষর এক… ঠিক যেন নির্মোক ঘোষের লেখা।
দুঃখের বিষয় শ্রী নির্মোক ঘোষ আজ আর আমাদের মধ্যে নেয়। ওঁর লেখা ও খুব বেশী নয়… এখানে ওখানে নানান পত্রিকার অতীত সংখ্যায় ছড়িয়ে আছে সে সব। শ্রী ঘোষ একজন নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট ছিলেন… অথচ কি যেন কি কারণে দেশ-ঘর-বাড়ি ছেড়ে সুদূর আফ্রিকায় বাস করেছেন বহুদিন… জীবজন্তু নিয়ে কি যেন গবেষণায় মগ্ন। ১৯৭২ সালের মে মাসে পাগলা হাতির পায়ের তলায় প্রাণ হারান শ্রী নির্মোক ঘোষ… শেষ হয়ে গেল এক প্রতিভাবান লেখকের জীবন। লেখার যেমন ভাব, বিষয়বস্তু নির্বাচন, ঘটনার বিন্যাস ঠিক তেমনি ভাষার অপূর্ব কারুকার্য।
আপনি বলুন, এমন একজন লেখকের লেখা নকল করে নিজের নামে চালানো কি অন্যায় নয়? অন্যায় নয় অন্যের সুনাম নিজের বলে দাবী করা।
যাইহোক, কাকতলীয়বৎ বলে আপনি যা উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, সেটা সত্যি দুঃখজনক… কিছুতেই মানতে পারছি না আমি–লেখক হিসেবে অন্য লেখকের স্বীকৃতি স্বীকার করা উচিত ছিল আপনার।
নমস্কারান্তে,
ভবদীয়,
শ্রী অদ্রীশ বর্ধন
সম্পাদক
ফ্যান্টাসটিক
**********************
শ্রী অদ্রীশ বর্ধন জানুয়ারী ১৩, ১৯৮১
সম্পাদক
ফ্যান্টাসটিক,
মাননীয় মহাশয়,
রীতিমতো দুঃখ পেলাম আপনার ব্যবহারে। আমার সত্যি কথা সত্যি বলে স্বীকার করতে পারছেন না জেনে দুঃখিত আমি। আপনার কাছ থেকে এরকম ব্যবহার পাব আশা করিনি কোনওদিনও।
যাইহোক, পত্রিকার সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখতে চাই না আমি। মেম্বারশিপ লিস্ট থেকে আমার নাম কেটে দেবেন।
বিনীত,
রণেন ঘোষ
**********************
সম্পাদক, ফেব্রুয়ারী ১৫, ১৯৮১
ভারতীয় বিজ্ঞানভিত্তিক সাহিত্য সন্মেলন,
আকাশ গঙ্গা সরণি
কলকাতা – ৭০০০৯১
মাননীয় মহাশয়,
আমি একজন বিজ্ঞানভিত্তিক সাহিত্যের গোঁড়া ভক্ত। শ্রী নির্মোক ঘোষ এর বিজ্ঞানভিত্তিক গল্প বা লেখাগুলো পড়তে চাই একবার। তাড়াতাড়ি জানালে বিশেষ সুখী হব।
নমস্কারান্তে,
বিনীত,
রণেন ঘোষ
**********************
শ্রী রণেন ঘোষ,
১৫, লিন্টন ষ্ট্রীট,
কলকাতা – ৭০০০১৪, ফেব্রুয়ারী ২২, ১৯৮১
মহাশয়,
আপনাদের সকলের প্রচেষ্টায় কিছুদিন হল এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। আমরাও বিশেষ ভাবে আগ্রহী শ্রী নির্মোক ঘোষের লেখাগুলোর ব্যাপারে, কিন্তু একটাও জোগাড় করতে পারিনি এখনও।
যে সব পত্রিকায় শ্রী ঘোষের লেখা বেরিয়েছিল–সেই সব সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এই বিষয়ে। অথবা পুরানো বইয়ের দোকানে।
যাই হোক শ্রী ঘোষের গল্প পেলে আমাদের জানাবেন দয়া করে। এর জন্য আমাদের সন্মেলনের তরফ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদান্তে,
ভবদীয়,
শ্রী অমিতানন্দ দাশ,
সভাপতি –
ভারতীয় বিজ্ঞানভিত্তিক সাহিত্য সন্মেলন
**********************
শ্রী রাজকুমার রায়চৌধুরী,
সম্পাদক,
মহাবিশ্ব পত্রিকা, মার্চ ১, ১৯৮১
কলকাতা,
মাননীয় মহাশয়,
একটা গল্প পাঠালাম, নাম ছায়াপাথরের ছায়া। গল্পটা মৌলিক… তবে হাতের লেখাটা আমার ভালো নয়। ছায়াপথ সম্পর্কে একেবারে বর্তমানে যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া গেছে তার উপর ভিত্তি করে লেখা আমার এই গল্পটা। আশা করি গল্পটা ভালো লাগবে আপনাদের এবং ছাপাবার জন্য মনোনীত হবে।
পত্রিকার কোন সংখ্যাতে ছাপা হবে জানালে বিশেষ উপকৃত হব।
নমস্কারান্তে,
বিনীত,
রণেন ঘোষ
**********************
শ্রী রণেন ঘোষ,
১৫, লিন্টন ষ্ট্রীট,
কলকাতা – ৭০০০১৪, মার্চ ২১, ১৯৮১
মাননীয় মহাশয়,
স্বীকার করতে বাধা নেই গল্পের প্লট, বিষয়বস্তু ভাষা এককথায় অপূর্ব। তবে যতদূর মনে হচ্ছে ঠিক একই বিষয় নিয়ে পরলোকগত শ্রী নির্মোক ঘোষের গল্প আছে। তাই শ্রী ঘোষের গল্পের সঙ্গে না মিলিয়ে সন্দেহজনক কোনও লেখা ছাপা সম্ভব নয়। আশা করি আমাদের অবস্থাটা বুঝতে পারবেন।
ধন্যবাদান্তে,
ভবদীয়,
শ্রী রাজকুমার রায়চৌধুরী
মহাবিশ্ব পত্রিকা
**********************
শ্রী অদ্রীশ বর্ধন,
সম্পাদক,
ফ্যান্টাস্টিক মার্চ ২৯, ১৯৮১
মাননীয় মহাশয়,
শেষ পর্যন্ত আবার আপনার শরণাপন্ন হলাম। আমার আগের চিঠিতে যে সমস্ত কটুক্তি করেছি তার জন্য বিশেষ মর্মাহত।
জানেন, আমার সব গল্প ফেরৎ আসছে একের পর এক। কারণ সেই একই। কে এক পরোলোকগত বা নিখোঁজ নির্মোক ঘোষ, তার লেখার হুবহু নকল নাকি আমার লেখা। কিন্তু দোহাই আপনার বিশ্বাস করুন এক অক্ষরও কপি করিনি আমি… ওই নামের কোনও ভদ্রলোকের লেখা পড়িওনি কোনওদিনও। এমনকি ওই নামও শুনিনি কোনওদিনও। কেমন করে যে আমার লেখা ওর নকল হচ্ছে বুঝতে পারছিনা। আমার সব লেখাই আমার নিজের।
যায় হোক, কাল রাতে সুব্রত পান্ডের সঙ্গে কথা বলছিলাম। সুব্রত পাণ্ডে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির ছাত্র… ছাত্র বললে ভুল বলা হবে, জানেন, ওর একটা পেপার এই বছর ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে বিশেষভাবে মনোনীত হয়েছিল। সে যাইহোক… আমার সব কথা শুনে গুম হয়ে গেল… বেশ কিছুক্ষণ পরে বলল, আশ্চর্য… তবে অসম্ভব বোধহয় না। ওর সঙ্গে ঘন্টা দুই আলোচনা করে যা বুঝলাম তাই লিখলাম আপনার কাছে… আপনার কাছে লেখার কারণ আপনার সঙ্গে মানে আপনার পত্রিকার সঙ্গে পরিচয় অনেকদিনের… তাই আমার এই চিঠি নিশ্চয় পড়বেন বিশেষভাবে… পড়ে হয়তো কোনও আশার আলো দিতে পারবেন সে বিশ্বাস আমার আছে… অসম্ভব সম্ভবের সম্ভবনা পরপর লিখলাম বোঝবার সুবিধের জন্যে।
প্রথম সম্ভাবনা–নির্মোক ঘোষ শুনেছি নিউক্লিয়ার ফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করেছিলেন… দেশ ছেড়ে আফ্রিকায় গেছিলেন কেন… গোপন গবেষণা?… ‘সময়’ নিয়ে কোনও গবেষণা করেননি তো… হয়তো… হয়তো… সময়ের গর্ভে অতীত ভবিষ্যতের সহজ যোগসূত্র বানাবার কৌশল বের করছিলেন নাকি… অথবা পারমাণনবিক শক্তির মায়াবলে সময় আর স্থানের গন্ডী অতিক্রম করার কোনও সহজ কৌশল… আর তার ফলে বর্তমানের আমার লেখা গল্পের হুবহু নকল গল্প লিখেছিলেন আজ থেকে বহু বছর আগে… অথবা… আত্মা তো অবিশ্বর… আমার হাত দিয়ে শ্রী ঘোষের লেখাই লিখিয়ে নিচ্ছে মৃত শ্রী ঘোষের আত্মা?
দ্বিতীয় সম্ভাবনা- বিখ্যাত বিজ্ঞানী য়ুঙ্গ (Jung)এর Racial Unconsciousness Theory… ডারউইন বা আধুনিক Genetic Theory থেকে জানতে পারি যে, Recessive Predominating Concept সেলের গঠন বৃদ্ধি ফর্ম ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। আমার লেখা হুবহু এক হওয়ার explanation হিসেবে বলা চলে যে, ধরা যাক, নির্মোক ঘোষ বা রণেন ঘোষ এর মধ্যে গল্প লেখার আগে বা পরে, প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ ভাবেই দুজনে কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বা করা সম্ভব নয়। অথচ তাদের চিন্তার যে Behavioral translation হয়েছে – সেটা এক হওয়ার কারণ হল চিন্তার উৎসে কোনও সাদৃশ্য অর্থাৎ কোনও Third factor ওখানে operate বা কাজ করছে। ধরা যাক, এদের দুজনের Racial Origin এক সেটা ওদের ঘোষ পদবী থেকে আংশিক পরিস্ফুট। সেক্ষেত্রে গত ২০/২৫ জন্ম আগের কোনও একজনের চিন্তা করা দুজনেই বংশ পরম্পরা সূত্রে লাভ করেছে সাইকোলজিরর Racial Unconsciousness Theory এর Isomorphy কারণে। ফলে দুজনে বর্তমানে communicate না করা সত্ত্বেও একই রকম behavior করছে। অর্থাৎ একজন আর একজনের concept ধার করছে বলে মনে হচ্ছে। (কারণ সাধারণ মানুষ Time Continuum এর concept টাকে এর মধ্যে মিলিয়ে ফেলছে unconsciously reasoning এর সময়) বস্তুত পক্ষে, এই দুটো independent outgrowth বা development… বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দুটো লেখা হুবহু এক হবার কারণ এরা দুজনেই effecting same cause (same racial unconsciousness)।
তৃতীয় সম্ভবনা – history of Science দেখলে দেখা যাবে যে Spirit of the time বা Zithguist Proposition অনুযায়ী Time continuum of Environmental Variable গুলো কোনও কোনও সময় যেমনভাবে assembled analyzed হয় সেটা কেউ কেউ sense বা অনুভব করতে অর্থাৎ receive করতে পারে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে, আকাশবাণী থেকে শব্দতরঙ্গ সব সময় email করছে।
চতুর্থ সম্ভবনা – ধরা যাক আমরা সবাই মানে এই পৃথিবীর সকলকে কোনও গ্রহ থেকে control এবং programming করা হচ্ছে… আমার বা নির্মোক ঘোষের গল্পগুলো prerecording করা আছে… নির্মোক ঘোষের সময় সেই program টা একটা নির্দিষ্ট বেতার তরঙ্গে পাঠান হয়েছিল… এবং নির্মোক ঘোষ নামক এক Receiver Set সেটা Receive করেছে… গল্প লিখেছে… আবার সেই program টাই এখনও পাঠানো হয়েছিল কোনও এক বিশেষ উদ্দেশ্যে যে-টা আমার মস্তিস্ক বাহিত হয়ে আমার গল্প হয়ে বেরিয়ে বসেছে… তাহলে আমার গল্প তো নকল করা নয়…
অথবা আরেকভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে আমার গল্প কোনও গল্পেরই নকল নয়… ধরা যাক দুটো রেডিও সেটের মধ্যে একটা আছে পৃথিবীতে আর একটা আছে পাঁচ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে কোনও গ্রহে… তাহলে যে বেতার তরঙ্গ আজ পৃথিবীর রেডিও থেকে শোনা গেল সেটাই আবার বহু বহু বছর পরে শোনা যাবে শোনা যাবে সেই দূরের গ্রহের রেডিও সেট থেকে। এবার কিন্তু দূরের গ্রহের সেই অনুষ্ঠান কি এইমাত্র পৃথিবীতে শোনা বেতার অনুষ্ঠানের নকল বলা যাবে? না কি উচিত হবে? তাহলে এবার বলুন তো আমার গল্প কি নকল?
এবার বুঝতে পারছেন তো আমার কথা সম্পাদক মশাই। উপরের যে কোনও একটা সম্ভাবনা তো সত্যি হতে পারে। আর তা হলে আমার লেখাই বা কেন শ্রী নির্মোক ঘোষের মতো হবে?
বিশ্বাস করুন নিরুপায় হয়ে লিখলাম আপনার কাছে। কী বলেন আপনি?
নমস্কারান্তে,
বিনীত
রণেন ঘোষ
**********************
শ্রী রণেন ঘোষ,
১৫, লিন্টন ষ্ট্রীট,
কলকাতা ১৪ এপ্রিল ২, ১৯৮১
মহাশয়,
সব পড়লাম… একটা কথাই মনে হচ্ছে… Negative Reasoning জানেন তো… যে খুনী সেও নিজের জঘন্য কাজকে যথার্থ বলে প্রমাণ করার জন্যে নানান দৃষ্টান্ত খাড়া করে… নানা যুক্তির অবতারণা করে… যাইহোক… এখুনি একজন সাইকোলজিষ্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার বন্ধু সুব্রত বাবু ও ভাল ডাক্তারের খোঁজ দিতে পারে। দেরী করবেন না… তাহলে আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে আপনার মনোবিকার।
নমস্কারান্তে,
ভবদীয়,
শ্রী অদ্রীশ বর্ধন
সম্পাদক
ফ্যান্টাস্টিক
**********************
শ্রী সুজিত ধর, এপ্রিল ১৪, ১৯৮১
সম্পাদক,
তারার আলো
বিজ্ঞানভিত্তিক গল্প কল্পের দ্বিমাসিক পত্রিকা,
কলকাতা
মাননীয় মহাশয়,
চিঠির সঙ্গে অনেকগুলো চিঠির নকল পাঠালাম। যদিও এগুলো ম্যানুষ্ক্রিপ্ট নয় তবুও চিঠিগুলো রহস্যপূর্ণ। আপনি পড়ে এগুলো থেকে যদি কিছু বুঝতে পারেন তো জানাতে দেরি করবেন না… এর জন্যে নাম ঠিকানা লেখা ডাক টিকিট দেওয়া খাম পাঠালাম। চিঠির ঘটনাগুলো আশ্চর্য রকমের অদ্ভূত… অবিশ্বাস্য।
চিঠি গুলোর বিষয় এবং তারিখ অনুসারে পরপর সাজানো আছে। চিঠি পড়ে বুঝতে না পারার কিছু নেই। যদি আপনার পত্রিকায় চিঠিগুলো ছাপান হয়তো কোনও পাঠক এই রহস্যের উপর আলোকপাত করতে পারেন… হয়তো অবিশ্বাস্য এই ঘটনা রোমাঞ্চকর হয়ে উঠবে। যাইহোক, সব চিঠিগুলো ছাপলে এর উত্তর দেবেন – কে তুমি?
নমস্কারান্তে,
ভবদীয়,
রণেন ঘোষ
**********************
শ্রী রণেন ঘোষ,
১৫, লিন্টন ষ্ট্রীট,
কলকাতা ৭০০০১৪ মে ১, ১৯৮১
মহাশয়,
আপনার পাঠানো চিঠিগুলো সত্যি দারুন ইন্টারেষ্টিং। অদ্ভূত রকম অবিশ্বাস্য ঘটনা… বিশ্বাস অবিশ্বাসের সীমারেখায় দোদুল্যমান।
কিন্তু একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি, এগুলো আপনার লেখা নয়। ১৯৭০ সালের আমেরিকার Tense world SciFi পত্রিকার মে সংখ্যায় বেরিয়েছিল এই চিঠিগুলো। লেখক শ্রী নির্মোক ঘোষ। চিঠির তারিখ, বিষয়বস্তু, এমনকি ২৯.৯.১৯৮১ তারিখের চিঠির সম্ভাব্য ভাবনাও হুবহু এক। শ্রী ঘোষ ও এই পত্র সাহিত্যের নাম দিয়েছিলেন – কে তুমি?
যাইহোক, অন্য লেখা থাকলে পাঠাতে দ্বিধা করবেন না কিন্তু।
নমস্কারান্তে,
ভবদীয়,
শ্রী সুমিত ধর,
সম্পাদক,
তারার আলো
Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, কে তুমি, তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য, পূজাবার্ষিকী, রণেন ঘোষ
মাননীয় শ্রী রণেন ঘোষঃ
আপনার গল্পের অবতারনা ও বিষয় খুবই ভাল লাগলো। তবে এই একই লেখা ১৯৫৫ সালে দেখেছিলাম। একদম এক। তবে তখনও ভাল লেগেছিল, এখনও ভাল লাগলো। নমস্কারান্তে,
ইতি
অমিতাভ রক্ষিত