গ্রন্থ সমালোচনা – কপোট্রনিক সুখ দুঃখ
লেখক: বিশ্বদীপ দে
শিল্পী: মূল প্রচ্ছদ
বইঃ কপোট্রনিক সুখ দুঃখ।
লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
প্রকাশকঃ জ্ঞানকোষ প্রকাশনী।
সমালোচকঃ বিশ্বদীপ দে
বাংলাদেশের মুহম্মদ জাফর ইকবালের কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিগুলির সুখ্যাতি এবং জনপ্রিয়তা এপার বাংলার পাঠকদেরও অজানা নয়। অনেকেই পড়েছেন এবং জানিয়েছেন তাঁদের ভালো লাগার কথা। ফলে পড়ার ইচ্ছে অনেকদিন ধরেই ছিল। এবার সুযোগ হয়ে গেল। হাতে এল লেখকের খুবই পাঠকপ্রিয় একটি বই। কপোট্রনিক সুখ দুঃখ। কপোট্রন হল রোবটের মস্তিষ্ক। ফলে বোঝাই যাচ্ছে বইটা কী নিয়ে।
বইটি মূলত গল্প সংকলন। কিন্তু গল্পগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত, ফলে আসলে যেন একটি কাহিনিই বলে মনে হয়। প্রতিটি গল্পেরই প্রধান চরিত্র একজন খেয়ালি বিজ্ঞানী। তাঁর স্ত্রী বুলার সঙ্গে তাঁর প্রেম, পরিণয় এবং তাঁদের একমাত্র সন্তান টোপনের জন্ম গল্পগুলির মধ্যে দিয়ে ক্রমে বর্ণিত হয়েছে। সে হিসেবে গল্পগুলি কাল অনুসারে বইতে সাজানো হয়েছে একে একে। যেন কাজের ফাঁকে ডায়রি লিখে চলেছেন এক সত্যান্বেষী বিজ্ঞানী। তা বলে প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর সঙ্গে কোনও মিল নেই। শঙ্কু মূলত কিশোরপাঠ্য। এই বইটি প্রাপ্তমনস্কদের জন্য লেখা। লেখার আঙ্গিকও আলাদা। প্রতিটি গল্পেরই প্রধান অবলম্বন হল মানুষ ও তার তৈরি রোবটের আশ্চর্য ও ক্রমপরিবর্তনশীল সম্পর্ক।গল্পের শুরুতে রোবটের অবস্থান যেভাবে দেখানো হয়েছে, তা ক্রমে বদলেছে। জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে সেই সম্পর্ক। লেখক তাঁর অসাধারণ গদ্যে বুনেছেন সেই সম্পর্কের খতিয়ান।
বইয়ের প্রতিটি গল্পের প্লটই খুব ভালো। প্রায় প্রত্যেকটিরই শেষে কোনও না কোনও চমক আছে। তাই এখানে কোনও গল্পের উল্লেখ করলাম না। গল্পগুলি পড়তে পড়তে মনে পড়তে বাধ্য ‘রোবোটিক্সের তিনটি সূত্র’ যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত সেই আইজ্যাক আসিমভের কথা। জাফর ইকবাল যেন সেই সূত্রগুলির কথাই বলেছেন তাঁর গল্পগুলিতে।
গল্প থেকে গল্পে এসে পড়েছে রোবটের মধ্যে লজিকের ব্যবহার, সময় ভ্রমণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো বহু ব্যবহৃত ও বহু আলোচিত বিষয়গুলি। যদিও মূল বিষয় আসলে একটাই। মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ কী? অত্যধিক যন্ত্র–নির্ভরতার ফলে কি শেষ পর্যন্ত সত্যিই তাকে নিয়ন্ত্রণ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী রোবটরা? লেখক কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশার কথা শোনাতে পারেননি। ফলে আরও একবার মনে পড়ে যেতে বাধ্য স্টিফেন হকিং–এর করা ভবিষ্যদ্বাণী। হকিং সাহেব বলেছেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণেই নাকি বিলুপ্তি ঘটবে মানব সভ্যতার! সেই কথাই যেন অনুরণিত হয় এই বইটি পড়তে পড়তে। ফলে কিঞ্চিৎ মনখারাপও হয়।স্বল্পায়তন এই বইটি মননশীল পাঠককে অনেকক্ষণ ভাবাবে, পড়ার পরেও।
জাফর ইকবালের অন্য বইগুলিও পড়ার ইচ্ছে বেড়ে গেল এই বইটি পড়ে। প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিৎ রায়, অদ্রীশ বর্ধন, অনীশ দেবের লেখা সাই ফাই যারা পড়েছেন, তারা মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা পড়েও মুগ্ধ হবেন, নিশ্চিতভাবেই এ কথা বলা যায়।
Tags: কপোট্রনিক সুখ দুঃখ, গ্রন্থ সমালোচনা, প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল