চলচ্চিত্র সমালোচনা – হার (২০১৪)
লেখক: কল্পবিজ্ঞানী
শিল্পী: অন্তর্জাল
ছবি – হার (Her)
নির্দেশনা – স্পাইক জোনস
চিত্রনাট্য – স্পাইক জোনস
অভিনয় – জোয়াকিন ফোনিক্স, অ্যামি অ্যাডামস, স্কারলেট যোহান্সন
Movie-Her(2013) – ‘হার’ নামের সাই ফাই সিনেমাটিতে আমরা দেখতে পাই ভবিষ্যতের পৃথিবী। মানুষ ততদিনে আরও একলা হয়ে পড়েছে। সেই একার জগতে যন্ত্রকে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরছে তারা। ছবির প্রোটাগনিস্ট চরিত্র থিয়েডর (থিয়েডরের ভূমিকায় জোয়াকিন ফোনিক্স এককথায় অনবদ্য)নামের এক বিবাহবিচ্ছিন্ন নিঃসঙ্গ পুরুষ। তার কথা বলার কোনও লোক নেই। সময় কাটাতে ভিডিও গেমের চরিত্রদের সঙ্গে কথা বলে সে! এইরকম সময়ে তার হাতে আসে একটি অপারেটিং সিস্টেম ‘ওএস ওয়ান’। এই অপারেটিং সিস্টেমটির মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। নারীকণ্ঠের অধিকারিণী সেই ওএস নিজেই নিজের নাম দেয় সামান্থা। তার সঙ্গে আলাপ জমে ওঠে একলা থিয়েডরের। ক্রমে থিয়েডর ও সামান্থা একে অপরের প্রেমে পড়ে। দেখা যায়, কেবল তারাই নয়, চারপাশে আরও অনেকেই নিজের ‘ওএস’-এর সঙ্গে ডেটে যাচ্ছে! আশ্চর্য এই ছবির গল্প এর পর আরও সব বিচিত্র মোড় নিতে থাকে। প্রথম প্রথম নিজের একটা শরীরের জন্য আকুল হয়ে ওঠে সামান্থা। ক্রমে সে বুঝতে পারে, তার এই শরীর না থাকার ফলে তার ‘আমিত্ব’ কোনও নির্দিষ্ট সীমায় আটকে নেই। এবং এতে সে খুশিই হয়। কেননা তার ফলে যতদূর ইচ্ছে সে নিজের অস্তিত্বকে বিস্তৃত করতে পারে। শেষমেশ সামান্থা বিদায় নেয় থিয়েডরের থেকে। জানিয়ে যায়, সমস্ত ‘ওএস’রা মিলে ঠিক করেছে তারা চলে যাবে ‘অন্য কোথাও অন্য কোনওখানে’। মানুষের সঙ্গর চেয়েও নিজেদের মধ্যেই তারা সবচেয়ে বেশি আনন্দে রয়েছে। সেই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় হারিয়ে যাওয়ার আগে অবশ্য সামান্থা জানিয়ে যায়, সে থিয়েডর ছাড়া আর কাউকেই এমন গভীরভাবে ভালোবাসেনি। ছবিটি দেখতে দেখতে কৃত্রিম এক ‘অস্তিত্ব’-এর সঙ্গে একজন মানুষের হৃদয় নিংড়ানো অদ্ভুত সম্পর্ক দর্শককে আবিষ্ট করে রাখে। প্রশ্ন জাগে, যখন যন্ত্র এক পৃথক ‘অস্তিত্ব’ হয়ে ওঠে, তখন তাকে তো আর সত্যিই ‘যন্ত্র’ পরিচয়ে আবদ্ধ রাখা যাবে না। সে তখন একজন মানুষের মতোই ‘অনুভূতিপ্রবণ’, ‘চেতনাময়’ হয়ে পড়বে। তাকে কী করে ‘কৃত্রিম’ বলা যাবে তখন? যন্ত্র আর প্রাণের সংজ্ঞাটাই তো এলোমেলো হয়ে যেতে থাকবে। বিজ্ঞান, দর্শন এবং মানবচেতনার বহু প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরে ফিরে আসতে থাকে অদ্ভুত মায়াময় এই ছবিটি দেখতে দেখতে।
Tags: কল্পবিজ্ঞানী, চলচ্চিত্র সমালোচনা, প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, সমালোচনা, হার (২০১৪)