জানালা
লেখক: যশোধরা রায়চৌধুরী
শিল্পী: সুমিত রায়
জানালা
লেখক – যশোধরা রায়চৌধুরী
অলংকরণ – সুমিত রায়
নীরজার ঘুম ভাঙল একদম নতুন একটা জায়গায়। আগে পিছে আশেপাশে কোথাও কিচ্ছুটি নেই। আধখোলা চোখে মিটিমিটি চেয়েও একটা কোনও জিনিস চোখে পড়েনি। তাছাড়া নীরজা তো নীরজার জিনিসদের জানে, চেনে। ও তো জানে ওর সব জিনিস এলোমেলো থাকে। লাট খেয়ে খাটের একপাশে থাকে বিছানার চাদরটা। শুতে যাবার আগে কোনওওমতে সরিয়ে ও বিছানায় সেঁধোয়। খাটের একদিকে সার দিয়ে রাখা বইপত্র। ফাইল। ফাইলে হাজারটা না শেষ হওয়া নোট। কাজের নোট। চিন্তাভাবনা।
সামনের টেবিলে পড়ে থাকে, কাল রাতে খেয়ে সিংকে রেখে না আসা এঁটো থালা, চামচ, গেলাস। ওর ল্যান্ড ফোন। ওর একাধিক প্রিয় মোবাইল এবং তার চার্জার, ল্যাপটপ। সারাক্ষণ চোখের কাজ করার ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে চোখের ফ্লুইড। সেজন্যে ডাক্তারের দেওয়া চোখের ওষুধের বোতলটা, একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা ওর নানারকম প্রয়োজন অপ্রয়োজনের অন্যান্য ওষুধ পত্র। পড়ে থাকে ওর ছোট হাত ব্যাগ। তার ভেতরে ওর টাকাপয়সা, বাড়ির চাবির গোছা।
কিচ্ছু নেই এখন। চারপাশ ধুয়ে গেছে সাদাটে আলোয়। সাদা কাপড়ের বিছানার পাশ থেকেই যেন শুরু হয়েছে সাদা টাইলের মেঝে।
খুব স্পষ্ট করে জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নীরজা টের পায়, সারা শরীরে কোনও বোধ নেই। একটা অদ্ভুত অসাড়তা। যেন ঝিঁ ঝিঁ ধরার অনুভূতি। শরীর ভারি, কিন্তু ব্যথা নেই কোনও… মানে বোধ না থাকলে ব্যথাই বা থাকবে কীভাবে?
ও একটা সম্পূর্ণ ফাঁকা ঘরে শুয়ে আছে। শোবার সময়ে গতকাল যে কালো টি শার্ট আর সবুজের ওপর লাল ছোপ ছোপ ছাপ দেওয়া স্কার্ট পরে শুয়েছিল, সেটাই পরা আছে। কিন্তু বিছানাটা আলাদা। শক্ত। মেঝের ওপর পাতা।
ভীষণ ভয় পেয়ে নীরজা উঠে বসে। কপালে ফুটে ওঠে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
আমি কোথায়! কোথায় আমি?
যে মুহূর্তে ওর মস্তিষ্কের মধ্যে আকার পায় এই প্রশ্ন, সেই মুহূর্তেই ও নিজের মাথার ভেতরেই শুনতে পায় একটা যান্ত্রিক এবং ভোঁতা গলা। ভয় পাবেন না। আপনি আমাদের পরীক্ষাগারে। নিরাপদ। এবং সম্পূর্ণ অধীন।
মাথার ভেতরে আওয়াজ। এও কি কোনও ভুল বোঝা? কোনওরকমের একটা ভ্রান্তি, ইলিউশন? নীরজা পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি? কোনও মানসিক অসুস্থতা?
না, আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ নন। আপনি আমাদের পাঠানো প্যাকেজ পাচ্ছেন। আমরা তরঙ্গ দিচ্ছি, আপনি ধরছেন।
প্যাকেজ? একটা এক ঘেয়ে সুর। আওয়াজই বটে। কিন্তু তা তার মাথার ভেতরে বাজছে। বাইরে থেকে আসছে না।
আবার আশেপাশে তাকাল নীরজা। জানালা নেই অথচ আলো আসছে। আবার সিলিং এর দিকে তাকালে চোখ ধাঁধাচ্ছে। কিন্তু আলোক উৎস দেখা যাচ্ছে না।
এই সব আওয়াজই বল বা মেসেজই বল, বা এদের ভাষায় প্যাকেজ… কোথা থেকে এল?
আমাদের ল্যাবরেটরি থেকে।
নীরজা আশ্চর্য হয়ে দেখল মনের মধ্যে প্রশ্ন আকার পাওয়া মাত্র উত্তর আসছে। এই আওয়াজের যে মালিক, যে বা যারা, তারা কি নীরজার মনের কথা পড়তে পারে? কী আশ্চর্য।
হ্যাঁ, নীরজা আমরা আপনার মনের কথা পড়তে পারি। যেভাবে আপনি আমাদের প্যাকেজ পাচ্ছেন। সেইভাবেই আমরাও আপনার প্যাকেজ পাচ্ছি। কেন না আপনার সঙ্গে আমরা টিউনড। আপনি আমাদের সম্পূর্ণ অধীন।
উফ্। থামুন। থামুন আমাকে ভাবতে দিন… এত কথা বলবেন না।
আচ্ছা। ঠিক আছে। আপনিও এত প্রশ্ন করবেন না তাহলে।
ঝিম ধরা শরীর। ঝিম ধরা মাথা। নিজের হাতের পাতার দিকে তাকায় নীরজা। স্বপ্ন দেখছে, না সত্যি, বোঝার চেষ্টা করে। না, জেগেই তো আছে আর হাতে চাপ দিলে ব্যথাও লাগছে।
নিজেকে সাবধানে, ভঙ্গুর কাচের জিনিস নাড়াচাড়ার মত করে পরীক্ষা করে, উঠে দাঁড়ায় নীরজা। কোমর ঘুরিয়ে নেয়। পিঠ টান করে। দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করার পর যেমন হাত পায়ে রক্ত সঞ্চালনের জন্য ব্যাক আর্চ করে, দু দুটো বাহু একবার ওপরে তোলে একবার পিঠের দিকে টেনে নিয়ে মোচড়ায়, সেভাবেই এখনও করে।
সাবধানে ভাবে। ভাবনাকে আগল পরায়। প্রশ্ন করবে না সে। প্রশ্নকে রেগুলেট করে। প্রথমটা বিস্ময় ওর মাথাকে ভরে দেয়। তারপর আসে ভয়। সম্পূর্ণ অধীন! কথাটার মানে কী? না না, মানে কী জিজ্ঞাসা করবে না ও। ওদের কাছ থেকে উত্তর চায় না ও। নিজে নিজে ভাবতে চায়।
নীরজা উঠে দাঁড়িয়ে এবার চারিদিকে তাকায়। ঘরটার দেওয়ালের কাছে যায়। টিপে দেখে। স্পর্শ নেয়। খসখসে অথচ মসৃণ এক সাদা প্লাস্টিকের তৈরি দেওয়াল। শক্ত অথচ ঘাতসহ। ডিমের খোলার মত অনেকটা। সে আবারো আঙুল দিয়ে পরখ করে, চোখ দিয়ে বিদ্ধ করে দেওয়ালটাকে। ঘরটাকে। আশ্চর্য! ঘরটায় কোনও দরজা নেই। জানালাও না। শুধু সারা ঘর ভরে আছে এক জ্বলজ্বলে সাদা আলোয়। সে আলোর উৎস ও বোঝা যাচ্ছে না।
সাদা দেওয়ালগুলোও কিন্তু সমতল নয়। সমান নয়। বরং গোলচে। আসলে একটাই তল। বৃত্তের আকারের অবতল। কোনও কোণা নেই ঘরটায়। গোলঘর এটা। একেবারে ভাঁজহীন বৃত্তাকার । নীচের মেঝে ধাতব। সাদাটে দ্যুতি ময়।
সিলিং এর দিকে তাকান যায় না ধাঁধালো আলোর জন্য।
এইবার আতংক হয় নীরজার। এ কোথায় এসে পড়ল ও! এরকম কোনও জিনিস, কোনও ঘর সে জীবিতকালে কখনও দেখেনি। কোথায়?
টেরা ফার্মার ওপরেই নীরজা। তবে মানবিক ধুলো ও পাপ থেকে মুক্ত।
ধুলো! পাপ! মাথার ভেতরে বার্তা আসার অনুভবে আবার হকচকিয়ে যায় ও। আর প্রশ্নাকারে কোনও কিছু ভাববেই না, ঠিক করে নেয়।
ওর চেনা জিনিসদের অভাব এবার ও অনুভব করে। ওর চোখের কোণ জ্বালাজ্বালা করে। ওর চোখে ওষুধ দেবার ইচ্ছা হয়। ও বাথরুম যেতে চায়। ছটফটে একটা অস্থিরতা যেইমাত্র ওর মাথায় বাসা বাঁধে, ও আবার মনে মনে প্রশ্ন করে ওঠে: উফ বাড়ি কবে যাব? কী করে যাব?
শুনতে পায়, সেই যান্ত্রিক কন্ঠ। আপনার সব জিনিসসহ আপনার বাড়িটি আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। আর আপনি সেখানে ফিরে যেতে পারবেন না। কারণ বাড়িটি দূষিত। মানবিকতায় দূষিত। আপনার যা যা দরকার বলুন, এনে দেওয়া হবে।
আমার জিনিসগুলো চাই। ফোন ল্যাপটপ। খাবার। ওষুধ।
সব আসবে। আপাতত আপনি শান্ত হোন।
জোরে কথা বলার প্রয়োজন আর নেই। মনে মনে কথা জড়ো করে নীরজা। এখন এভাবেই আদান প্রদান চলবে। বুঝে গেছে সে।
“এই ঘরটায় অনন্তকাল থাকতে হবে নাকি? আমি বাথরুমে যাব। আমার জৈবিক প্রয়োজন আছে।” সে মনের ভেতরে বলে।
‘হ্যাঁ, মানবদেহের ক্রিয়া প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা অবহিত। আসুন।’ যান্ত্রিক গলা বলে ওঠে। তার মানে এরা মানুষ নয়। এই সাজানো গোল সাদা ঘরের পেছনে কোনও মানুষ নেই-ই? গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে নীরজার। তার জীবনের স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে তবে? এই দুঃস্বপ্নটার মধ্যে দিয়েই?
গোল দেওয়াল ফুঁড়ে একটা দরজা তৈরি হয়। মন্ত্রমুগ্ধের মত সেই পথে নীরজা বেরোয় ঘর থেকে। আরেকটা বুদবুদের মত গোল ঘর। সেখানে আছে স্বাভাবিক বাথরুমের মত কমোড, বেসিন, কল। কল খুললে জল পড়ে। কিন্তু না, কোনও আয়না নেই।
নীরজার সন্দেহ হয় এই ঘরটার আদপেই অস্তিত্ব আছে কিনা। তার মনে হয়, একটা অ্যামিবা যেমন জন্ম দেয় আরেকটা অ্যামিবার, সেরকমই এই ঘরটা গজিয়েছে অন্যটা থেকে। একটা সাবানজলের বুদবুদের গায়ে যেমন লেগে থাকে আরেকটা সাবানজলের বুদবুদ, অপেক্ষাকৃত ছোট, কিন্তু হাত লাগলে মিলিয়ে যায়, সেভাবেই এই ঘরটা উদ্ভুত হয়েছে অন্য ঘরটা থেকে।
এই ঘরটা কি তবে একটা ভার্চুয়াল ঘর? নীরজা কমোডের ফ্লাশট্যাঙ্কের ঢাকনা ধরে টানাটানি করে। পেছনের পাইপে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সেটা সত্যিকারের পাইপ না ধোঁয়া, বা আলোর প্রতিসরণের ফলে নির্মিত এক মায়া? কিন্তু বাথরুম করার পর ফ্ল্যাশ টানলে আসল জল বেরিয়ে আসে ফ্লাশট্যাংক থেকে। গড়গড় জলের শব্দ। খলর বলর ট্যাংক ভর্তির শব্দ। নীরজাকে তা আশ্বস্ত করে। এটা সত্যি করেই আছে।
আয়না নেই কেন? অভ্যাসমত একবার নিজের মুখচোখ দেখে নিতে ইচ্ছে হয় চোখে মুখে জল দেবার পরেই। না পেয়ে থতমত খেয়ে যায় সে।
তাহলে আদৌ সে নীরজা তো? নীরজার চোখ মুখ তার আছে কিনা জানার জন্য হাত নিশপিশ করে। নিজের মোবাইল ফোনের সেলফি মোডে গেলেই তো পাওয়া যাবে আয়নার বিকল্প। ভার্চুয়াল আয়না। এখানে ফোন নেই। আয়না নেই। আদৌ নীরজা বেঁচে আছে কিনা, পুরোটাই স্বপ্ন কিনা, নীরজা নীরজাই কিনা, এসব প্রশ্ন তার মনে আসে।
প্রশ্ন এলেও উত্তর আসে না। যন্ত্র তার বাথরুমের প্রাইভেসিকে বিঘ্নিত করছে না। এটা ভালো কথা। যন্ত্র মানুষ নয়, তবু মানুষ সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানে দেখা যাচ্ছে। অন্তত বাথরুমে থাকাকালীন তার মন পড়ে নিচ্ছে না যন্ত্র।
হাতড়ে হাতড়ে এই গোলাকৃতি বাথরুমের দেওয়ালে কোথাও কোনও ফাঁক বা ছেদ আছে কিনা দেখার চেষ্টা করে নীরজা। পায় না কোনও ফাঁক। এতই সোজা নাকি?
মনে ক্ষীণ আশা। প্রশ্ন সে করুক বা না করুক একটা অস্বাভাবিক নীরবতা। কোনও বোঁ বোঁ করা নীরবতার শব্দ যেন, সম্পূর্ণ শব্দনিরোধিত ঘরে যেমন। মাথার ভেতরে বাজে। কর্ণযন্ত্রে আঘাত করে।
ওরা সুইচ অফ করেছে কি? তাই হবে। প্রাইভেসির কারণে হয়ত বা। যান্ত্রিক গলা যখন এখানে তাকে ডিসটার্ব করছে না, এখানে বসে বসেই ঘন্টাখানেক ধরে সে নিজের পালানোর পরিকল্পনা করে ফেলতে পারবে।
পালাব, পালাব, এখান থেকে পালাব। কিন্তু পালাবটা কী করে? নীরজা চিন্তা করার চেষ্টা করে। চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে।
মাথাটা এমন ভোঁতা কীভাবে হয়ে গেল? তবে কি এরা ওকে বাড়ি থেকে তুলে আনার সময়ে কোনও ওষুধ প্রয়োগ করেছে? যে ওষুধে মাথার চিন্তা গুলিয়ে যায়? ঘেঁটে যায় যুক্তি বুদ্ধি? যে কেমিক্যালের প্রবেশে, ওই যন্ত্র বুঝতে পারছে তার মনের কথা?
আয়নার অভাবে, অন্ধের স্পর্শের মত করে, নীরজা নিজের মুখ, মাথা, সবখানে হাত বোলায়। নিজের অঙ্গুলিস্পর্শ দেয় নিজের কপালে, চুলের ভেতরে, কানের পাশে, গলার কাছে। হাত ক্রমে গিয়ে পৌঁছয় ঘাড়ের পেছনে, শিরদাঁড়ার ঠিক মাঝখানে। একটা ছোট্ট স্টিলের বোতামের মত স্পর্শ পায়, ঠান্ডা, ধাতব। স্পর্শটা ওকে যেন ছিটকে দেয় একেবারে। হতভম্ব হয়ে যায় ও। কোনও ব্যথাবোধ নেই। কিন্তু এই ধাতব বোতাম কোনও মন্ত্রবলে এখানে লাগানো? কোনও আশ্চর্য আঠা দিয়ে কি তবে? কোনও ছোট খাট অপারেশন করে বসানো? এতটুকুও ব্যথা নেই বলেই সে বুঝতে পারছে না? চামড়া ফুঁড়ে বসিয়ে দিয়েছে ওরা এটাকে?
মাথায়, চুলের ভেতরে এমন আরো চারটে বোতাম ও খুঁজে পায়।
২
রাসায়নিক নানারকম ওষুধের ভেতরে থাকার একটা পুরানো সময় নীরজার মনে পড়ে যায়। ওর জীবনে তার আগের পর্যায় একেবারে শূন্য। কোথাও কোনও স্মৃতি নেই। কোথায় যেন লেখা দেখেছিল, স্মৃতি নেই তাই বেদনাও নেই। সে ছিল ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ। সরকারি হাসপাতালের নীল করিডোরে দেখা সেইসব স্মৃতিহীন নরনারী। ওর মতই। ট্রমা সেন্টার ছিল সেটা।
ওরা শুধু লিখতে ভুলে গেছিল, স্মৃতি নেই তাই পরিবার নেই, স্নেহ নেই, মানুষ নেই। নীরজা জানে তার মন এক বৃহৎ তরঙ্গহীন সচেতনার কারাগার শুধু। তার কোনও স্নেহপ্রেম পরিবারবন্ধন না থাকাকে সে এক অর্থে পছন্দই করে। সে এক সূক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন চটপটে কর্মী। অত্যন্ত কার্যকরী।
কিন্তু তারপর তো আর কখনও এমন ভোঁতাভাব আসেনি। কেউ তাকে ধরে নিয়ে পুরে দেয়নি কোনও সাদা গোলঘরে এতদিন।
নীরজা কোনও বোকা মেয়ে নয়। গুনে গুনে সাত বছর ধরে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স নিয়ে পড়াশুনো করেছে, তাও সরকারি পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত এক প্রজেক্টে। অনেক অনেক লেখাপড়ার পরে, সে সেখানেই থেকে গেছে। সে প্রজেক্টের কর্মী এখন। যন্ত্রপাতি তার কাছে জলভাত। সে কাজ করে এমন এক ল্যাবে, যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ডেভেলাপ করা হয়।
প্রজেক্টের দেওয়ালেও একটা পোস্টার থাকেঃ এ আই আমাদের নিয়তি, এ আই আমাদের ভবিষ্যৎ।
শৈশবে অনাথাশ্রম আর কৈশোরে ট্রমা হোম। রাষ্ট্রের চোখে একটা সংখ্যা, একটা ফাইল নাম্বার। পারিবারিক জীবন কী, তা নীরজা জানেই না। সে শুধু জানে লেখাপড়া, বুদ্ধির চর্চা। জানে তার বস, মিস্টার এক্স, তার বস মিস্টার ওয়াই। তার বস মিস্টার জেডকে।
নীরজার শৈশব কৈশোরের স্মৃতির দুর্বিষহতা মুছে দিতে তৎপর ছিল রাষ্ট্র। ডাক্তাররা তার ট্রমার পরিমাণ ধার্য করেই, তার স্মৃতি ধুয়ে ফেলার অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই তার মগজে কোনও দুষ্টু দৈত্য নেই, কোনও স্মৃতির পাহাড় নেই। যে পাহাড়ের তলায় মানুষের সব ভালো কাজ ভালো চিন্তা, যুক্তিবোধ নড়বড়ে হয়ে যায়, চাপা পড়ে যায়। তাই সে শুধু কাজ করে যায়। কাজ কাজ কাজ কাজ কাজ।
সংসার, বিয়ে থা কিছুই করেনি নীরজা। ঠিক ওর মত আরো বেশ কয়েকজন আছে। ওর সহকর্মীরা। তাদের সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব, প্রেম, যা খুশিই হতে পারত। কিন্তু হয়নি। আর সেইজন্যেই, ও আর ওর সহকর্মীরা, সকলেই একা। দুঃখী নয়। শুধু একা। স্মৃতিহীন বেদনাহীন একা।
বেছে বেছে এই প্রজেক্টটাই আসলে বানানো হয়েছিল তাদের জন্য, যারা কখনও না কখনও মোলেস্টেশন বা ধর্ষণের শিকার ছিল। ৭ জন ছেলে ও ৩০ জন মেয়ে। এখন ওরা কর্মী। শুধু কর্মী। স্মৃতি মুছে ফেলা।
ওর প্রজেক্টের উদ্দেশ্যের সঙ্গে ভালোভাবে মিলে গেছে ওদের সবার ইতিহাস। প্রোফাইল। ওরা আবেগহীন স্মৃতিহীন তাই একেবারে কোনওদিকে না তাকিয়ে, কাজে ডুবে গেছে। একটা এ আই তৈরি করা হচ্ছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে পুতুল। পুতুল কবে মানুষ হবে তাই নিয়ে ওরা লড়ে যাচ্ছে। বহুদিন হল, পুতুলের অগ্রগতি একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়েছে।
এ আই আদৌ সফল হবে কি? মনে হচ্ছে হবে না। একটা ধাপে এসে, আটকে গেছে ওরা। নীরজা থেকে শুরু করে তার উর্ধ্বতন তিন চার বৈজ্ঞানিকের দিন রাতের স্বপ্ন প্রায় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। রাতে কোনওমতে টলতে টলতে বাড়ি ফিরে, কোনওমতে দোকান থেকে আনানো খাবার একটা ডিসপোজেবল প্লেটে ঢেলে খেয়ে নেওয়া, তারপর শুয়ে অকাতরে ঘুমানো, এটুকুই নীরজার জীবনের একমাত্র ব্যক্তিগত অংশ। এর বাইরে সবটাই তার কাজের জায়গায়, ল্যাবে।
৩
একদিকে মানুষ মানুষকে মানুষের খপ্পর থেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে, অন্যদিকে সে পাগলের মত চাইছে নকল মানুষ বানাতে। কেন না জেলখানাগুলো ভরে গেছে ধর্ষকে আর খুনিতে, চোরাগোপ্তা মানুষচালানকারী আর কেমিক্যাল অ্যাবিউজার-এ। আর ট্রমা হোম, রিহ্যাব হোম, অনাথাশ্রম ভরে গেছে ভিক্টিমে। এ অবস্থায় এমন কিছু চাই, যা ভালো খারাপ , আক্রমক আক্রান্তের বাইরে, শুধু শুকনো, পাপ পুণ্যহীনভাবে, কাজ করে যেতে পারবে। পৃথিবীর প্রয়োজনীয় সব জিনিসগুলো চালাতে কর্মী দরকার অক্লান্ত। এধার ওধার ছিটকে যাবে না যাদের নীতিবোধ, পশুপ্রবৃত্তির কাছে যারা ধরা দেবে না, কেবলই মুখ বুজে কাজ করবে।
নীতিবোধ নেই এমন যন্ত্রমানব চাই। অথচ তাকে মানুষের মত হতে হবে সব দিক দিয়ে। চিন্তাটাতেই কি গোড়ায় গলদ নেই? অথচ এই চিন্তায় চিন্তায় দেশ ফালাফালা হচ্ছে। এ আই বাদী এবং এ আই বিরোধীর মধ্যে তর্ক হচ্ছে। এ আই-এর জন্য প্রতিযোগিতায় মাতছে অসংখ্য কোম্পানি। সবাই চাইছে তৈরি করে দেখিয়ে দিতে, একেবারে মানুষের মত মেধাবী এ আই। যা জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।
মূল প্রশ্ন এইটাই ছিল। কোনওদিন কি যন্ত্র পারবে, মানুষের জায়গা নিতে? মানুষের মত ভাবতে, কল্পনা করতে, হাসতে কাঁদতে আবেগে ভাসতে? মানুষের যুক্তিশৃংখল কে কপি করে, টুকলি করে প্রোগ্রাম বানিয়ে এ আই-এর হাতে তা ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এ আই কি মানুষের মস্তিষ্কের মত সৃজনশীলতা পারবে? আইনস্টাইন হতে পারবে অথবা দালি? ভ্যানগখ হতে পারবে, অথবা আরেকটি লিওনার্দো? পারবে স্বপ্নে পেতে যন্ত্রের নকশা যেরকম পেয়েছিলেন জার্মান চার্লস ওয়াইসেনথাল, প্রথম সেলাইকল নির্মাতা? সূচের মুখে ছিদ্র, পেছনে নয়, এই সমাধান তিনি স্বপ্নে পান… যন্ত্র কি পারবে সেফটিপিন অথবা জিপার-এর মত কিছু যুগান্তকারী আবিষ্কার নিজে নিজে করতে? সে এখনও দ্রুত অঙ্ক করতে পারা যন্ত্র শুধু। তার বেশি কিছু নয়।
অন্যদিকে, এই চেষ্টাকেও অনেকেই রুখে দিতে চাইছেন। চাইছেন, কীভাবে নষ্ট করে দেওয়া যায় যাবতীয় এ আই ডেভেলাপ করার চেষ্টা। কারণ একবার যদি চিন্তা করতে সক্ষম যন্ত্র আসে, তাহলে ঘটে যাবে সেই অঘটনীয় ঘটনা। মানুষের সঙ্গে, তার সৃষ্টিকর্তার সঙ্গেই, সে টেক্কা দিতে শুরু করবে। তৈরি হবে এক অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা। যে মুহূর্তে এ আই বা কৃত্রিম বুদ্ধি বুঝতে পারবে যে তাকে সৃষ্টি করার পর আসলে তাকে নিজের কাজে ব্যবহার করতে চাইছে, নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, পরাধীন রাখতে চাইছে মানুষ, সেই মুহূর্তে শুরু হবে তার বিদ্রোহপ্রবণতা।
কেননা বুদ্ধি, স্বাধীন বুদ্ধি, যদি সত্যিই মানুষেরই সমতুল্য কোনও স্বাধীন বুদ্ধি, পেয়ে যায় কোনও যন্ত্রমানব বা গণক বা যা খুশি…, সেই স্বাধীনতাই তাকে বলে দেবে বিদ্রোহ করতে। সে আর নিয়ন্ত্রণ চাইবে না, চাইবে না কাজ করতে অন্যের জন্যে, অন্যের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে চাইবে না।
সেই বিখ্যাত বাটন বক্স থিওরি। যেখানে, ধরে নেওয়া হয়, যে যতবার কৃত্রিম বুদ্ধিমান কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে, তাকে পুরস্কৃত করে তার প্রোগ্রামার বা সৃষ্টিকর্তা, যাই বলুন, একটা লাল বোতাম টিপে। বার বার ঘটতে থাকে এটা। একটা সময় আসতেই পারে যখন কৃত্রিম বুদ্ধি জেনে যায়, যে ওখানে একটা লাল বোতাম আছে, তার নিয়ন্ত্রক সেটা টেপে বলেই, সে তার পুরস্কার পায়। তখন কৃত্রিম বুদ্ধি চেষ্টা করতে পারে, এমন কোনও উপায় বার করার, যাতে কাজটা না করলেও, সমস্যার সমাধান না করলেও, সে লাল বোতাম টেপার পুরস্কার আপনা থেকেই পেতে পারবে। সে তখন বুঝে যাবে যে নিয়ন্ত্রক না থাকলেও তো চলে। নিয়ন্ত্রক তাকে কখনও পুরস্কৃত করবে, কখনও করবে না, তার চাইতে, হঠিয়ে দাও গোটাগুটি এই নিয়ন্ত্রক বিষয়টাকে, সেই জায়গায় নিয়ে এস নিজের নিয়ন্ত্রণে আছে এমন কোনও নিচুতলার অন্য রোবট… তাকে আদেশ কর লাল বোতাম ক্রমাগত টিপে যেতে।
ফলে, এ আই একদিন মানুষকে সরিয়ে দিতে চাইবেই।
এখনও নীরজা জানে না, এই বাটন বক্স থিওরি কতটা সঠিক। এ আই নিজেই যদি আত্মসচেতন হয়, তাহলেই একমাত্র সেরকম ঘটবে। কিন্তু বিজ্ঞান মানেই তো কল্পনা, হাইপোথেসিস। তাই এটাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে জানে না, আদৌ সেরকম কোনও দিন আসবে কিনা, যেদিন এ আই মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিতে চাইবে। আপাতত তারা চাইছে বুদ্ধিকে বাড়াতে, উদ্ভাবনী করে তুলতে। অনেকে প্রশ্ন তোলেন, যাই কর না কেন, মায়ের মুখের হাসি তে যে আনন্দ আর ভালোবাসা আছে, তা কি কোনওদিন এ আই কোনও রোবটের মুখে ফুটিয়ে তুলতে পারবে? যন্ত্রের মধ্যে আনতে পারবে মানব মনের জটিল অভিব্যক্তি, আবেগ আর স্মৃতি?
আর যন্ত্রের মধ্যে পৃথিবীর ভালো যা কিছু, তা আনার দরকারই বা কী? তার কোম্পানির এক্স ওয়াই জেডরা বলেই থাকেন , যে, নীরজাদের কাজ হবে কর্মদক্ষ কিছু বুদ্ধিমান যন্ত্র বানানো। যারা মাটি ফুঁড়ে তেল বের করবে, জল তুলবে, আগুন জ্বালাবে, রান্না করে ফেলবে নিমেষে, ফ্যাক্টরিতে জটিল অ্যাসেমব্লি করবে যন্ত্রাংশের। কিন্তু তাদের জটিল ভাবাবেগ-এর দরকার নেই। নীতি বোধের তো নেইই। ভালো এলেও হাত ধরে খারাপ আসবে। ভালো খারাপের দ্বন্দ্ব আসবে। দরকার নেই এসবের। এসব বাদ দিয়ে তৈরি হোক না একটা আলাদা এ আই প্রজন্ম। মানুষকে নানা পেশা থেকে উৎখাত করে দিক। শহরের পর শহর ভরে যাক, এমন নীতিচেতনাহীন, পাপ ও পাপবোধ দুই থেকে মুক্ত যন্ত্রপ্রাণীতে। তারা কাজ করুক, নিখুঁতভাবে।
তাহলে তো ভিক্টিমরাও ভালো থাকবে। ভিক্টিম মেয়ে, ভিক্টিম পুরুষদের কোনও ভয় থাকবে না এ আইদের কাছে।
এসব কারণেই তাদের কোম্পানি স্মৃতি মোছা ভিক্টিমদের কাজে লাগিয়েছে। স্বপ্ন দেখিয়েছে দুষ্টমুক্ত পৃথিবীর।
সেসব অনেক দূরে। আপাতত নীরজা সেসব নিয়ে ভাবিত নয়, অন্তত ছিল না কাল রাত অব্দিও। আজ, আজ… ব্যাপারটা পালটে গেছে। তারা যে “পুতুল”কে তৈরি করেছে সে এখন তাদেরই হাতের পুতুল, নীরজা জানে। তার কোনও ক্ষমতা নেই তাকে বন্দী করার।
কিন্তু তাকে এখানে যে বন্দি করেছে, হ্যাঁ বন্দীই তো, কারণ সে তো খোলাখুলি জানিয়েছেও নীরজাকে, যে, সে এখন তাদের অধীন… সেই যন্ত্র কি তবে অন্য কোনও প্রতিযোগী কম্পানির তৈরি অন্য কোনও এ আই? এমন এ আই যা জানে কীভাবে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়?
নাকি এর পেছনেও কাজ করছে আসলে কোনও মানুষেরই দুরভিসন্ধি?
মাথা থেকে ধাতব বোতামগুলো আপ্রাণ টান মেরে খুলে ফেলার চেষ্টা করে নীরজা। তার বুক ধকধক করছে। যদিও এতক্ষণে সে বুঝে গেছে কোনও এক ওষুধ বা রাসায়নিক প্রয়োগের ফলেই হাঁটাচলা কাজ কর্ম সব করতে পারলেও, তার সাড়বোধ একেবারেই কমে গেছে, আর মাথার এই বোতামগুলোই তার চিন্তাধারাকে সরাসরি ট্রান্সমিট করে দিচ্ছে ওই যন্ত্রের কাছে।
বোতামগুলোকে ছিঁড়ে আনতে পারলেও তো হয়, কেন না ব্যথাবেদনার বোধ তো আপাতত সে পাবে না… কিন্তু নাহ, তাও পারল না। চামড়া মাংস মজ্জা ভেদ করে যেন বোতামগুলো ঢুকে বসে গেছে।
না, হয়ত হাতেও আর জোর নেই তেমন। কোনও সাঁড়াশি জাতীয় কিছু পেলে তাও চেষ্টা করা যেতে তুলে ফেলার জিনিসগুলোকে। কিন্তু তা তো নেই আশপাশে।
বাথরুমের বুদবুদ থেকে আবার মূল ঘরে ফিরে আসতেই বাথরুমের দরজাটা সম্পূর্ণ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল, মাখো মাখো কোনও সাদা রঙের দুধের তালের মধ্যে ভাঁজের মত মিলিয়ে গেল… সাদা ঘর আবার নিশ্ছিদ্র এবং ঝকঝকে!
৪
এবার আবার সে এসে পড়েছে সেই জিনিসহীন ঠান্ডা সাদা ঘরে। এ ঘরে কী করবে সে? কী সেই উদ্দেশ্য, যা সাধিত হবে যন্ত্রের, তাকে এখানে বন্দী রেখে? কী কারণে আমাকে ধরে আনা হল?
বাথরুমের প্রাইভেসি থেকে ফিরে আসার পর, এই ঘরে আবার কথোপকথন শুরু হবে হয়ত বা তাদের। ভেবে, নীরজা আশান্বিত হয়ে মনে মনে প্রশ্ন করে।
এদিক ওদিক তাকায়, দেখে, কিছু পায় না যা দিয়ে সে খেলতে পারে। হঠাৎ নীরজা বুঝতে পারে, সে একটা খেলনাই খুঁজছে, কেন না মানুষের হাতে জিনিসপত্র ত খেলনাই।
আমরা সকাল থেকে উঠে কাজ কাজ ভাণ করি। আসলে খেলি। ফোন নিয়ে খেলি, ল্যাপটপ নিয়ে খেলি, খাবার খাওয়াটাও জিভের ঠোঁটের গলনালির খেলা একরকমের। নিজেকে কিছুক্ষণ ব্যস্ত রাখা, ব্যাপৃত রাখা আসলে।
এই সব খেলার জিনিস এখন তার কাছে কিচ্ছু নেই। কোনও একভাবে সে বুঝতে পারছে, আসলে তাকে রাখা হয়েছে অবজার্ভেশনে। সে একজনের চোখের সামনে আছে। যন্ত্র তাকে দেখছে, তার হার্ট বিট মাপছে, তার মনের ভেতরের ওঠাপড়া দেখছে। যেভাবে বেল জারের মধ্যে ইঁদুরকে রাখা হয়। সেইভাবে তাকে দেখছে যন্ত্রটি।
হতাশ হয়ে সে চীৎকার করে, আমাকে এখানে আনা হয়েছে কেন? কেন? কেন?
যান্ত্রিক গলা গমগম করে বলে ওঠে। অত চেঁচানোর কী হয়েছে। মনে মনেই বল। আমরা শুনছি।
নীরজা ক্ষিপ্তভাবে জোরে জোরেই বলে, কী করে বুঝব শুনছ! উত্তর দিচ্ছিলে না তো! আমি অনেকক্ষণ ধরেই তো বলছি। আমি কী করব এখানে? কেন এসেছি? আমার বাড়িতে ফিরে যেতে চাই।
না, তোমার নিরাপত্তার জন্যই তোমাকে এখানে এনেছি আমরা। তোমার বাড়ি মানবদূষিত। তাই।
মানে কী? মানবদূষিত?
মানে তোমার দেশ, তোমার মানুষ প্রভু, অধিকর্তাদের দ্বারা দূষিত।
তার মানে কী? তুমিই বা কে? এসব বলার অধিকার কী তোমার?
তোমার দেশ তোমাকে দেখেনি। তোমাদের অধিকর্তা বলেছে, শৈশবে যে অনাথাশ্রমে তোমাকে রাখা হয়েছিল সেখানে নাকি কিছুই ঘটেনি। অথচ তোমার ইতিহাস তথ্যাবলী থেকে আমরা জানতে পেরেছি, তোমাকে শৈশবে, এগারো বারো বছর বয়সে, অনাথাশ্রম থেকেই কিছু দুষ্টু যৌন বিকারগ্রস্ত মানুষের কাছে পাঠানো হত নিয়মিত। তেরো বছর বয়সে তুমি প্রায় উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলে। তখন তোমাকে ট্রমা হোমে পাঠান হয়। ট্রমা হোম থেকে তোমার চিকিৎসা করা হয়। তোমার স্মৃতি থেকে মুছে দেওয়া হয় সব ট্রমার স্মৃতি। যাবতীয় ধর্ষণের স্মৃতি। তারপর যারা তোমাকে ধর্ষণ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তোমার দেশের আইন অনুযায়ীই। যাতে দুষ্টেরা দোষী সাব্যস্ত হয় আর কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়। আর তুমি অঢেল টাকা পেতে পার।
আমি এসব কিচ্ছু জানি না, জানতাম না।
জানার কথা নয়। তোমাকে আড়াল করেই এসব করা হয়ে থাকে। তাই হবার কথা। কিন্তু গতকাল, দেশের উচ্চতম আদালত রায় দিয়েছে যারা দোষী তাদের সবার শিরশ্ছেদ, না মানে মুন্ডু কেটে ফেলা নয়, ব্রেইনের বিশেষ বিশেষ অংশ ছাঁটাই করা হবে। আর রাষ্ট্র সেই রায় নিয়ে অদ্ভুত এক অবস্থান নিয়েছে। ঘটনাটাকে তারা পুনর্বার দেখতে বলেছে আদালতকে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উচ্চতম অধিকর্তা বলেছেন, এই মামলাটাই নাকি ভুল। আসলে তোমার বা তোমার অনাথাশ্রমের অগুনতি ছেলে মেয়ের সঙ্গে নাকি কিছুই হয়নি। সবটাই সাজানো ঘটনা। আসল কারণ অন্য। আসলে রাষ্ট্র এ আই-এর ওপরে বাড়তি খরচ কমাতে চাইছে। চাইছে ধর্ষক বা খুনিরা যাতে দেশের কর্মীদলে আবার যোগ দেয়। কিছুটা অর্থসাশ্রয় তো তাতে হবে। খরচ কমবে।
কী বলছ? এমন হতে পারে কোনও দেশে?
হয়। তুমি বিপন্ন নীরজা। তোমার ভবিষ্যৎ বিপন্ন। অথচ এ আই-এর জন্য তুমি অনেক কাজ করেছ। তাই তুমি আমাদের কাছে মূল্যবান। আমরা চাই তোমার প্রাণ রক্ষা করতে। তোমাকে যদি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ধর্ষক আবার আক্রমণ করে। এবার তো প্রাণে বাঁচাবে না।
কে বলল এটা?
এটাই তো সবচেয়ে স্বাভাবিক । তাই মানবিক সংস্পর্শ বাঁচাতে তোমাকে ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে আমরা তুলে আনি।
এই তোমরাটা কে?
আমরা এ আই। আমরা এ আই-এর হয়ে এ আই ফ্রেন্ডলি যে সব মানুষ, তাদের জন্য এই কাজটা করি। মানুষ দুষ্ট, পাপী। তাই মানুষকে মানবিকতামুক্ত করে, নবজীবন দেবার চেষ্টা করি। অবশ্যই যদি তোমার মত থাকে। তোমার সায় ছাড়া এসব করা হবে না। আমাদের যন্ত্র দিয়ে আমরা তোমার মানবিক গুণাবলী উধাও করে শুধু তোমার যান্ত্রিক কর্মক্ষমতা বজায় রেখে দেব। তুমি শান্তি পাবে।
কীভাবে শান্তি পাব? কীভাবে? এই বিশ্রী ঘরটায় বসে, কিচ্ছু না করতে পারার ছটফটানিকে শান্তি বলে?
না না, এই ঘরটায় তো তোমাকে সাময়িকভাবে রাখা হয়েছে। এটা বেসিক মোডে আছে। তোমাকে সাজিয়ে দেব আমরা তোমার ল্যাবের মত দেখতে একটা ঘর। হুবহু এক। আর বসবাসের জন্য তোমার যে ঘরখানা ছিল, সেটাও বানিয়ে দেওয়া হবে। যে প্রজেক্টে তুমি কাজ করতে সেই কাজই তোমাকে করতে হবে। শুধু তোমার অস্তিত্ব থাকবে আমাদের নখদর্পণে। আর…
আর?
আর, বাইরের লোক কেউ জানতে পারবে না তুমি কোথায়। কোনও মানুষ জানতে পারবে না তুমি কোথায়। তোমাকে দেওয়া হবে হুবহু তোমার ঘরের মত দেখতে ঘর, শোবার খাট, টেবিল, ফোন, ওষুধ। শুধু সেই ফোন আর দরকার হবে না তোমার কারণ কাউকে ফোন করবে না তুমি। সেই ওষুধ আর লাগবে না, কারণ আমরা তোমার রোগ সারিয়ে দেব।
কীভাবে?
সার্কিটের পর সার্কিট বসাব আমরা তোমার দেহে। ক্রমশ তুমি আমাদের মত হয়ে যাবে।
আর এই ব্যবস্থায় আমি যদি রাজি না হই?
রাজি না হওয়াটা তো মানবিক গুণ। ধীরে ধীরে ওটাও চলে যাবে তোমার। তুমি তখন নিজের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বিনিময়ে মেনে নেবে যান্ত্রিকতাকে। তোমার রাষ্ট্রে, তোমার দেশে, কোনও মেয়েকে যে নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয়, তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হবে তুমি। আর সুখী হবে।
হা হা হা। হেসে উঠল নীরজা। সুখী?
হ্যাঁ , সুখী। এখনও তোমার প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই, বন্ধু নেই, বয়ফ্রেন্ড নেই। তখনো থাকবে না। তফাত এই-ই, যে তোমার শরীরও ক্রমে যন্ত্র হয়ে যাবে। কোনও আক্রমণযোগ্যতা আর থাকবে না। তোমার শরীর হবে অধর্ষণীয়। তুমি হবে স্টিলের তৈরি। তোমার যোনি হবে স্টিলের। এটাই তো সবচেয়ে বড় শান্তি, আর সুখ!
সুখী শব্দটা ব্যবহার করে, তুমি কিন্তু ধরা পড়ে গেলে। দুঃখের মত সুখ ও একটা মানবিক বিষয়। কে আছ যন্ত্রের পেছনে? তুমি তো যন্ত্র নও? তুমি তো মানুষ!! নইলে সুখী হবার আশ্বাস আমাকে দিতে না তুমি। …ধরা পড়ে গেছ তুমি …আমি এ আই-দের চিনি, জানি।
তুমি যদি সত্যি এ আই হতে, আমাকে তুমি সবচেয়ে সুবিধাজনক যাপনের কথা বলতে। বলতে আমার জীবন মসৃণ হবে আর প্রবলেম ফ্রি। অসুবিধা বিপদ সব থেকে মুক্তি। সুখের কথা বলতে না। তাই না?
কেন… কেন বলতাম না? যান্ত্রিক গলা আমতা আমতা করে বলল।
আমি জানি আজ অব্দি সারা পৃথিবীতে কেউ, কখনও এমন এ আই তৈরি করতে পারে নি, যা ভালো মন্দ, সুখ দুঃখ আর ইচ্ছা অনিচ্ছা বুঝতে পারে। …তুমি আসলে মানুষ। যন্ত্রের ছদ্মবেশে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছ! ছেড়ে দাও আমাকে। আমি একটুও বিশ্বাস করি না তোমার কথাগুলো। কী করে বুঝব তুমি আরেকজন দুষ্টু মানুষ নও, যে আমাকে অধীনতার মন্ত্র পড়িয়ে, আসলে নিজের উদ্দেশ্য চরিতার্থই করতে চাইছে না? …
খানিক নীরবতা। থমথমে।
নীরজা হেসে উঠে, বলল, কই, উত্তর দাও? না কি, উত্তর খুঁজে পাচ্ছ না?
সাদা দেওয়ালগুলো ঝনঝন করে বাজল যেন ওর হাসির শব্দে।
অগাধ আশা যেন হঠাৎ জেগে উঠল নীরজার। মোটেই আর অস্বস্তি হচ্ছে না। মাথাটাও যেন আর ঘোলাটে নেই। সব চিন্তাগুলো চমৎকার কাজ করছে। কোনওটা কোনওটার সঙ্গে মিলেমিশে যাচ্ছে না। ভারি হয়ে চেপে বসছে না। চ্যালেঞ্জের নিয়মই এই। মানুষের সৃষ্টিশীল মগজ যে, যন্ত্রমগজের থেকে আলাদা, তাই আবেগ, হ্যাঁ, রাগ জিঘাংসা ঘৃণা এমনকি তাচ্ছিল্য নামের আবেগও অনেক সময় চিন্তাকে ক্ষুরধার করে তুলতে পারে, যুক্তিকে শানিয়ে দিতে পারে।
এই মুহূর্তে অজানা যন্ত্র বা মানুষ যাই হোক, তাকে তাচ্ছিল্য করেই নীরজা যেন সবটুকু ক্ষমতা একজায়গায় জড়ো করে ফেলেছে।
দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে নীরজা বলে উঠল, তোমার এই গোলঘর থেকে বেরোনর পথ আমি ঠিক বার করে নেব। শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা। আর, যদি যন্ত্রও হয়ে থাক, জানবে, তোমাদের কথায় সায় দিয়ে নিজেকে ক্রমশ যন্ত্র করে তুলতে রাজি কোনওদিনই হব না আমি। ধর্ষক বা আক্রামকের সঙ্গে যোঝার চেষ্টা করব, ভিক্টিম হয়ে হেরে থাকব না। মানবিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে, শুধু কষ্ট, অত্যাচার আর খারাপ যাবতীয় কিছুকে সরিয়ে রাখার জন্য মানুষ কখনও যন্ত্র হতে চাইবে না। বোকার মত আমাকে আটকে রেখে তোমার কোনও উদ্দেশ্যই চরিতার্থ হবে না। দুঃখিত।
৫
ক্রমশ ঘরের আলো নিভু নিভু হয়ে আসতে থাকে। এতক্ষণ যে ঘরটা ছিল সাদা আলোয় ফেটে পড়া প্রায় অকল্পনীয় ঝকঝকে। সে ঘরের কোণে ছোপ ছোপ অন্ধকার বাসা বেঁধেছে এখন। তারপর আরো, আরো কমে যায় আলো। নীরজার শীত করে ওঠে। হাতড়ে হাতড়ে নিজের বিছানাটার কাছে যায়। মেঝেতে, প্রায় হামাগুড়ি দিতে দিতে, কুঁকড়ে, মাতৃগর্ভে যেমন থাকে মানুষ, তেমন আকারে গুটিয়ে, নিজের হাঁটুদুটোর মধ্যে মাথাটা গুঁজে দিয়ে, দুহাতে বেড় দিয়ে হাঁটুকে, সে বসে পড়ে। অসহায় লাগছে। তেজ বেশি দেখানো হয়ে গিয়েছে, ফলানো হয়েছে দাপট। এখন তারই শাস্তি দিচ্ছে এই অসহ্য যন্ত্রবেশী জানোয়ারটা তাকে। অদৃশ্য নিয়ন্ত্রকটা।
কান্না পায় নীরজার। হাত দিয়ে মাথার মধ্যে বসানো ছোট ছোট বোতামের আকারের স্টিলের ফোঁটাগুলোকে আর একবার স্পর্শ করে সে। নাড়ার চেষ্টা করে। পারে না। মাথা থেকে চিন্তা সরিয়ে দিয়ে শূন্য করতে চায় মগজকে। পারে না।
ধেয়ে আসছে বেদনা, কষ্ট, আর ভয়ানক সব স্মৃতি।
মনে পড়ছে সেই সব কৈশোরের ঘটনা। আস্তে আস্তে যেন একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে, মাথা গুঁজে সে ফের ফিরে যাচ্ছে তার ট্রমার ইতিবৃত্তে। দিনের পর দিন কে যেন বেঁধে রেখেছিল তাকে। খেতে দিত জল আর রুটি। টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেত বিছানায়। ধর্ষণ করত। তারপর রক্তাক্তভাবে সে পড়ে থাকত মেঝেতে। কয়েক দিন টানা, নড়া চড়ার তার অবস্থা থাকত না।
এ সব স্মৃতি নাকি কেমিক্যাল প্রয়োগ করে মুছে দেওয়া হয়েছিল তার মাথা থেকে? কেন ফিরে আসছে সব? নাকি ঐ যন্ত্ররূপী পশুটা, বদমাশটাই ফেরত দিচ্ছে তাকে এসব কথা, ভাবনা, ছবি?
মগজে ঠুশে দিচ্ছে, যাতে সে কষ্ট পায়?
কিন্তু না না, এসবে সে তো নিজেকে দেখতে পাচ্ছে, বুঝতে পারছে এ তার ব্যক্তিগত, একান্ত ব্যক্তিগত স্মৃতিকোষ। এই তো এবার টানা কয়েকবছরের পৈশাচিক যৌনক্রীড়া পেরিয়ে নীরজার মাথায় অন্ধকার সুড়ঙ্গটা ফুরিয়ে আসছে, আর ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে আলো?
ওই ট্রমার পর্বের আগের দিনগুলোর স্মৃতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে তার মাথায়।
অসাড়, বিবর্ণ, বেদনাহীন, আবেগহীন মাথা, আবার ফুলে ফুলে উঠছে ভাবের তরঙ্গে। বেদনার, আনন্দের, হাসির, আহ্লাদের স্মৃতির ঢেউ যেন ধীরে ধীরে ফিরে আসছে তার কাছে। ঐ তো, তাদের অনাথাশ্রমের বাগানের দোলনা, ওই তো গাছে চড়ছে নীরজা। খিল খিল হাসির শব্দ… অঢেল শিশুর কলকাকলি। বন্ধু, বন্ধু ছিল তারও। বন্ধুদের চীৎকার। নীরজা! বলে ডাক।
ওই তো, কে যেন ওটা। চেনা মুখ, হাসি মুখ। মিলি তার ছোট্টবেলার একমাত্র বন্ধু। পিঠোপিঠি বোনের মত। খুব কাছের জন। তার সঙ্গে সারাদিন তার গল্প, কথা। আদানপ্রদান নিজেদের গোপন কথার। লুকিয়ে রাখা লজেন্সের খোঁজ দেওয়া। ভাঙা পুতুল আঠা দিয়ে সারিয়ে দেওয়া। ঘুড়ি ওড়ানো।
হু হু বেগে কান্না এল এবার নীরজার। মুছে দেওয়ার রাসায়নিক ওষুধ চিরদিনের জন্য মুছে দিতে পারে না স্মৃতিকে। নীরজা পড়েছিল সেটা কোথাও। কোনও আঘাত বা অন্য ট্রমা এসে জাগাতে পারে তার পুরানো নিউরন সংযোগ। পুরো হিপ্পোক্যাম্পাস খুঁড়ে তুলে ফেলে দেওয়া হয়নি তার। যা করা হয়ে জেলখানায় শাস্তি হিসেবে ধর্ষকদের। অক্সিটোসিন সেরটনিন ডোপামাইন সমৃদ্ধ অংশ আনন্দদায়ক হরমোন এনডরফিনকে কেটে ছেঁটে দিয়ে, স্মৃতি রাখার কৌটো হিপ্পোক্যাম্পাস উপড়ে বাদ দেওয়া হয়।
উদবোধক হিসেবে আজ এই গোলঘর, সাদা আলোয় ঝলসানো। এইই কাজ করেছে তার পুরানো নিউরনদের আবার স্মৃতির হাতে ফিরিয়ে দিতে। আবার নতুন করে ইলেকট্রিক পালস সঞ্চার করেছে তার মাথার ভেতরে।
এরা শত্রু নয়, এরা বন্ধু। এই লোকগুলো। যারা তাকে এখানে এনেছে। এ আই। অথবা মানুষ। যারা যন্ত্রের পেছনে বসে কলকাঠি নাড়ছে। তাকে বন্দী করেনি ওরা। আসলে মুক্তিই দেবে বলে ধরে রেখেছে।
নতুন করে তীব্র আশা জেগে ওঠে নীরজার। আশা! আকাঙ্ক্ষা। এসবই নতুন। এসবই তাকে কাঁপায়। ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়ে তার সীমাখন্ডিত শরীর মনে।
স্মৃতি ছাড়া সুখে থাকতে চাইলে, সে তো দিব্যি থাকতে পারত। কিন্তু সে অপশনই তো সে চায়নি। সে তো মানুষ হিসেবে বাঁচতেই অপট করেছে। বেছে নিয়েছে মানবিক জীবন। ক্ষতবিক্ষত আর বিপজ্জনক।
আর স্মৃতি ছাড়া মানুষ তো সাদা কাগজ। স্মৃতি বাদ দিয়ে কোনও অস্তিত্ব নেই মানুষের। তাই, ভালো স্মৃতিকে ফেরাতে গেলেও তো খারাপকেও নিতে হয়। তাই সবটাই ফিরিয়ে নিতে হল নীরজাকে। পুরো ট্রমাটার ভেতর দিয়ে আবার যেতে হল।
নীরজার পা কাঁপছিল। তবু ও উঠে দাঁড়াল। স্মৃতি মুছে দেওয়া মানুষকে অমানুষ বলাই যায়। মানুষের ছায়া ছিল নীরজা এতদিন… ছায়াছায়া কর্মীদের তৈরি করা প্রজেক্টের বাইরে একটা পৃথিবী এখনও অপেক্ষা করছিল ওর জন্য। সেখানে দুঃখের স্মৃতি আছে, সুখেরও। চিনে নিতে হয় কোনওটা ভালো, কোনওটা খারাপ।
দেওয়ালটার দিকে শক্ত পায়ে এগিয়ে যায় এবার নীরজা। দরজা, হ্যাঁ, এবং জানালা, এবার তার হাতে ধরা পড়বেই।
Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, জানালা, তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী, যশোধরা রায়চৌধুরী, সুমিত রায়
খুব ভাল লাগল। (অমিতাভ রক্ষিত)
অনেক ধন্যবাদ অমিতাভ বাবু। খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম।
বেশ লেখা। একটা দার্শনিক বোধ কোথায় যেন জুড়ে গেছে কল্পনা আ বিজ্ঞানের সাথে। চমৎকার।
dhonyobad, onek dhonyobad.