দ্বিশতবর্ষজয়ন্তী – কির বুলিচেভ
লেখক: কির বুলিচেভ, বাংলা অনুবাদ: সুমন চট্টোপাধ্যায়
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য (চিত্রচোর)
দুশো বছরের এই এক্সপেরিমেন্টের আজ একটি গৌরবময় দিন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমনটা আর কখনো ঘটেনি। আয়োজন দেখে মাথা খারাপ হবার জোগাড়। এই পরীক্ষা যাঁরা আরম্ভ করেছিলেন আজ তাঁরা বরণীয় হয়ে থাকবেন।
ওঁরা অবিশ্যি আজ অ্যাসেমব্লি হলের দেওয়ালে ছবি হয়ে ঝুলছেন। ডারউইন, মেন্ডেল, প্যাভলভ, সসনোরা, জ্যাকবসন, স্যাটো।
এঁদের মধ্যে প্রথম তিনজন এই পরীক্ষার কথা কিছুই জানতেন না, আর শেষ তিনজন এর ফল দেখে যেতে পারেননি।
উদ্যোগ আয়োজনের গোলমালে হাঁপিয়ে উঠে আমি লাইব্রেরীতে আশ্রয় নিলাম।
গিয়ে দেখি মারুসিয়া ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটাকে পটানোর চেষ্টা করছে। এই ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটি হল আমাদের ইনস্টিটিউটের সবচেয়ে দামী যন্ত্র। সাধারণতঃ ওর কাজ হল বইয়ের আলমারি পরিষ্কার রাখা। আমি ভেবে আতঙ্কিত হলাম যদি এখন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এখানে কাজে লাগে তবে কি পরিমাণ ধুলো উড়বে। ভাগ্য ভাল, ও রাজি হল না। ও মারুসিয়াকে বোঝাচ্ছিল, এখন ওর মিউজিয়ামে সার্ভিস দেওয়া খুব জরুরি। ওখানে অতিথিরা শিগগিরিই এসে পড়বেন।
মারুসিয়া আমাকে দেখতে পেয়ে বলল “তুমি কি ওপরে আসবে?” ও বোধহয় ভাবছিল আমি ওর সুন্দর চোখ দেখে ভুলে যাব, নিজেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওকে বই পেড়ে দেব।
আমি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটার সঙ্গে কেটে পড়লাম।
বাগানেও যে একটু নিরিবিলিতে বসব তার জো নেই। ম্যানেজার স্ক্রিসনিকের বিটকেল হুকুমে পুরো জায়গাটায় মাটি খুঁড়ে ফুলের বেড তৈরি করা হয়েছে। ২০০ সংখ্যাটির আকারে টিউলিপ গাছ লাগানো হয়েছে। ফুলগুলি ম্লান হয়ে এসেছে।
খেলার মাঠে গেলাম। সেখানে শিশুরা নেই, একটা নতুন বেড়া লাগানো রয়েছে কেবল। শক্তিশালী, অদৃশ্য, আধুনিক। চিন্তা করে দেখুন এটা বাচ্চাদের কি পরিমাণ অসুবিধা সৃষ্টি করবে। ওদের স্নায়বিক বিকার দেখা দেবে, খিটখিটে হয়ে উঠবে। শিশু শিম্পানুষদের মধ্যে এই মানসিক বিকারের কারণ খোঁজার জন্য সবাই উঠেপড়ে লাগবে, যতক্ষণ না কোন উজ্জ্বল ছাত্র ধরতে পারছে যে বেড়াটাকে দেখতে না পাওয়াই এর কারন।
আমি সিকামোর গাছটির ছায়ায় বসে বাচ্চাগুলির দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। সবাই বলে গাছটি নাকি স্বয়ং শাস্ত্রজ্ঞ সসনোরা নিজেই পুঁতেছিলেন। পুকুরধারে কচিকাঁচার দল চেঁচামেচি করে খেলা জুড়েছিল। টিচাররা ওদের পেছনে পেছনে ঘুরছিল পাছে কোনোটা জলে পড়ে গিয়ে নিউমোনিয়া বাঁধায়। পুকুরটার নতুন করে সংস্কার হয়েছে, পাড় জুড়ে নতুন করে রং করা হয়েছে।
ওদের দিকে একবার তাকিয়েই প্রত্যেকের জেনেটিক লাইন যেন আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। একশো বছরেরও আগে স্টার্ক নামের একটি ছোট হালকা রঙের লোমওয়ালা পুরুষ আগামী বহু প্রজন্মের মধ্যে তার এই বৈশিষ্ট্য ছড়িয়ে দিয়ে গেছে। এই প্রবল ফেনোটাইপটি এখনো বাচ্চাদের মধ্যে ফুটে ওঠে, যারা জানেই না তাদের প্রপিতামহ কে ছিল। মনে করে দেখুন জার্মানির হ্যাবসবার্গদের কথা, যাদের বসা চোয়াল আর ঝোলা গোঁফের বৈশিষ্ট্য, যা কিনা পরবর্তী ছশো বছর ধরে দেখা গিয়েছিল। শিল্পীরা যতই তাঁদের চেহারা সুন্দর করে আঁকার চেষ্টা করুন না কেন, তাদের ফ্যামিলি পোট্রেটের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য চমৎকার ফুটে উঠেছে।
আমরা কেবলি প্রকৃতিকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাই, বাঁধতে চাই আর প্রকৃতি নানা উপায়ে সেই বাঁধন ছিঁড়ে নিজের পথ করে নেয়। উপর উপর দেখলে মনে হবে এ তো খুবই নিরীহ একটা এক্সপেরিমেন্ট মাত্র, কিন্তু আসলে এর পিছনে আছে মানুষের আকাশচুম্বী অস্মিতা। উন্নততর জীবসৃষ্টির জন্য রেডিয়েশন জেনেটিকসের প্রয়োগ করে শিম্পাঞ্জিদের মানুষে পরিণত করতে চাওয়া – এ তো স্বয়ং ঈশ্বরের আসনে বসার তোড়জোড়!! সর্বশক্তিমান আমরা একদল শিম্পাঞ্জিকে নিয়ে তাদের অভিযোজনের পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, বিবর্তনের সময়সাপেক্ষ কানাগলি থেকে সরে এসে তাকে ত্বরান্বিত করে দেখতে চাই মানুষের মত বুদ্ধিমান তার কোনও ভাই প্রকৃতিতে আবির্ভূত হয় কি না।
যাঁরা এই পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছিলেন, যাঁরা টাকাপয়সার জোগাড় ও পরীক্ষাগারের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং যাঁরা মানবজাতির পক্ষে এই পরীক্ষার অপরিসীম গুরুত্ব গবেষণার কাজে অর্থ জোগানকারী সংস্থাগুলোর মাথায় ঢুকিয়েছিলেন – তাঁরা সকলেই মনে মনে জানতেন ফলাফল দেখে যাওয়ার জন্য তাঁরা কেউই বেঁচে থাকবেন না। যদিও আশা করতেন বছর তিরিশেকের মধ্যেই অলৌকিক কিছু একটা ঘটে যাবে, একজন মিউট্যান্ট তৈরি হবে যে কথা বলবে আর নামতা মুখস্থ করতে পারবে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই, তাঁরা যা পরিকল্পনা করেছিলেন তা বাস্তবায়িত করা হল, কিন্তু তাঁরা যা আশা করেছিলেন প্রকৃতপক্ষে তা ঘটল না।
একবার আমি লাইব্রেরী ঘেঁটে দু’শো বছরের পুরোনো একটা জার্নাল খুঁজে পেয়েছিলাম। সেটায় একটা প্রবন্ধ ছিল যাতে তাঁদের সেই সময়ের ইতিহাসের ভারি জীবন্ত বর্ণনা দেওয়া ছিল। কিভাবে তাঁরা চিড়িয়াখানা আর অভয়ারণ্যগুলোতে চিরুণী-তল্লাসী চালিয়ে সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে অগ্রসর শিম্পাঞ্জীদের খুঁজে বের করেছিলেন এবং তাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই জায়গায় একসঙ্গে বেড়ে ওঠার জন্য তাদের জড়ো করেছিলেন। এই জায়গাটা ছিল খানিকটা চিড়িয়াখানা, খানিকটা জেনেটিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আর খানিকটা জড়বুদ্ধিসম্পন্নদের ডরমিটরির একটা খিচুড়ি মতো।
প্রথম প্রথম পয়সাকড়ি ও যন্ত্রপাতির অভাব প্রচুর উৎসাহ দিয়ে মেটাবার চেষ্টা হত। মানুষের হাজারো সমস্যাকে বাদ দিয়ে এই এক্সপেরিমেন্টের পিছনে পয়সা ঢালার যৌক্তিকতা সবার মাথায় ঢোকানো যায় নি। কিন্তু ইনস্টিটিউটের হাল ধরেছিলেন সসনোরা, তিনি বরাদ্দ জমির খানিকটায় একটা সহায়ক প্রকল্প চালু করলেন, গরুদের উন্নতিসাধনের মাধ্যমে তাদের দুধের উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো। এইভাবে ওই নির্বোধ প্রাণীগুলির সাহায্যে, যেগুলো পুকুরপাড়ে আজও চড়ে বেড়ায়, সসনোরা এই কর্মপ্রচেষ্টাকে লাভজনক বলে প্রমাণ করতে সক্ষম হলেন। এরপর তিনি আর বছরদশেক মাত্র বেঁচেছিলেন।
পরবর্তী পরিচালক এসে ক্রমশঃ এই প্রজেক্টকে আরও বড়ো করে তুলেছেন। তিনি এই দলে কিছু অত্যন্ত প্রতিভাসম্পন্ন নতুন শিম্পাঞ্জি যোগ করেছেন, যাতে এখানকার বিশেষ দলটি স্বজাতিদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে। একটা নতুন প্রজাতির সৃষ্টি না হয়, যারা তাদের বন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে বংশবিস্তারে অক্ষম হয়ে পড়ে।
বহু ঝড়ঝাপটার মধ্যে দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ইনস্টিটিউট কখনো বন্ধ হয়নি। ইনস্টিটিউটের সমগ্র কর্ম-নীতিতে কিছুটা অবাস্তবতা তো ছিলই, এ যেন নিজেকে ভগবানের আসনে বসিয়ে বিজ্ঞানের চর্চা। ডিরেক্টররা একে একে এসেছেন এবং চলে গেছেন, বিজ্ঞানীরা মাইনে পেয়েছেন, আবিষ্কার করেছেন, গবেষণামূলক পেপার লিখেছেন, তারপর একদিন অবসর গ্রহণ করেছেন। অন্যান্য বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানে যেমন বিজ্ঞানীরা কাজ করে থাকেন অনেকটা তেমনই।
আর এইসব ব্যাপারের মধ্যে দিয়ে জেনেটিকস সম্পর্কে ধারণা এবং পদ্ধতি বদলেছে, নতুন থিয়োরি জন্মলাভ করেছে, বাতিল হয়ে যাওয়া থিয়োরি আবার নতুন করে ফিরে এসেছে। নিও-লামার্কবাদ প্রথমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তারপর এল পোস্ট-ডারউইনিজম, অবশেষে সবকিছুকে হঠিয়ে দিয়ে সুপার-মেন্দেলিজম আসর দখল করল।১
একদিক দিয়ে এইসব থিয়োরির প্রত্যেকটির পরিবর্তন শিম্পাঞ্জির দলের প্রতি ব্যবহারের নীতিতে স্পষ্ট ছাপ ফেলেছিল। সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক নমুনারা পরবর্তীকালে বাতিল হয়ে যায় এবং তাদের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় আর চিকিৎসা সংস্থায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শ্রেষ্ঠ সাফল্য হঠাৎ পশ্চাদাপসারণ হিসেবে গণ্য হতে থাকে, আবার কয়েক বছর বাদে সেগুলোকেই হয়ত মহান আবিষ্কার রূপে দেখা হয়।
থিয়োরিসমূহের এই ওঠা, পড়া, পতন ও পরিবর্তনের পুরো ঝাপটাটা এসে পড়েছিল শিম্পাঞ্জিদের ওপর। নির্বোধ পশু থেকে যুক্তিবাদী জীব তৈরি করতে গিয়ে, বানর থেকে মানুষ গড়তে গিয়ে মানবজাতি মনুষ্যত্বকেই বিসর্জন দিয়ে বসল। বেশী দিনের কথা নয়, সিয়েনা-৪ -এর কেসটাই ধরা যাক, যাকে চিড়িয়াখানায় পচে মরবার জন্য ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হল, অথচ ও ছিল অঙ্কে খুবই তুখোর। কারণটা কি? না, ওর বস যিনি ছিলেন, সেই প্রতিভাধর, চমৎকার অথচ সরল মানুষটি বিভাগীয় কতৃপক্ষের সাথে কি সব গোলমালে জড়িয়ে পড়ে এক্সপেরিমেন্টটি ত্যাগ করতে একরকম বাধ্য হলেন। আর ইনিই ছিলেন একমাত্র লোক যার উপর সিয়েনা-৪ – এর বিশ্বাস ছিল বা তাঁর কথা শুনত।
অতএব, এই পরীক্ষার একজন অংশগ্রাহী হিসেবে এবং আরো অনেকের মত একজন অবদানকারী হিসেবে, এখানে যা চলছে সে ব্যাপারে আমার গভীর ব্যক্তিগত আপত্তি ছিল। দু’শো বছর ধরে নির্দেশিত পথে অভিযোজন, ক্রমাগত টেস্ট আর অপারেশন, পরীক্ষামূলক চিকিৎসা আর বাসস্থানের পরিবেশ পরিবর্তন করেও এরা কোনও স্থির ফলাফলে পৌঁছতে পারল না। উল্টে শিম্পানুষ আর এইসব পরীক্ষা-বিলাসীদের মধ্যেকার দূরত্ব ক্রমে বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে অদ্ভুত কথা হল, এই এক্সপেরিমেন্টের পিছনে দু’শোটা বছর আর একগাদা সম্পদ নষ্ট হল, যা জ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্র প্রসারে অনেক ভালোভাবে কাজে লাগানো যেত।
আসলে মানুষ নিজেদের পৃথিবীর আর সব জীবের থেকে আলাদা মনে করে, আর সেটা এরা কিছুতেই ভুলতে চায় না। এদের কাছে শিম্পানুষরা আজও কেবলমাত্র একটা শিম্পাঞ্জিমাত্র ছাড়া আর কিছু নয়, যাদের নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা চলে, কিন্তু বুদ্ধিতে তাদের নিজের সমকক্ষ ভাবা? নৈব নৈব চ…
আচমকা একটা চেঁচানিতে আমার এইসব হতাশাজনক চিন্তার স্রোতে বাধা পড়ল। একজন আচরণ-বিশেষজ্ঞ, যার নাম আমরা দিয়েছিলুম ‘ফরমুলা’, তারই চিল্লানি।
“জন, তুমি কোথায়?” বলে ডাকতে ডাকতে মহিলা করিডর ধরে ছুটছিলেন।
আমাকে দেখতে পেয়ে একবার জিজ্ঞেস করলেন, “জনকে দেখেছ?” বলে আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই এগিয়ে গেলেন। আমাকে দু’চক্ষে দেখতে পারতেন না উনি।
জন একটা বুড়ো শিম্পানুষ, দেখতে কুৎসিৎ, প্রায় মাথাজোড়া টাক, সেইসঙ্গে উটকপালে আর মন কপটতায় ভরা। ওর কিছু কিছু ব্যাপারের জন্য পরীক্ষা-পাগলের দল ওকে খুবই পছন্দ করত। ওর সামান্য কিছু শব্দের পুঁজি নিয়ে ও যখন কথা বলত, তখন এরা নিজেদের সাফল্যের আহ্লাদে আটখানা হয়ে যেত। যখনই কোনও প্রতিনিধিদল অথবা ভিআইপিরা আসতেন, তখনই এরা সবসময় জনকে তাদের সামনে হাজির করত। বক্সারদের প্যান্ট আর লাল জামা পরা জনকে তখন দেখাত যেন মানুষের একটা ক্যারিকেচার। তাঁদের সামনে জন তার আধো আধো বুলি অল্পস্বল্প ঝাড়ত, কিন্তু বাঁদরের দলের মধ্যে এলেই তার বকবকানি থামানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়াত।
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম আজকের দিনে ফরমুলা জনকে এত ব্যস্তভাবে খুঁজছে কেন? আমি জানলার কাছে গিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম পুরোনো ফুলবাগিচাটার কাছে দাঁড়িয়ে মহিলা ডেকে চলেছেন “জন, কোথায় তুমি? তোমাকে যে বড্ড দরকার।” যথারীতি জন কাছেই কোথাও ঘুম লাগাচ্ছিল, ডাক শুনে নিজের বিশাল ভুঁড়ি চুলকোতে চুলকোতে ঝোপের আড়াল থেকে অলসপায়ে বেরিয়ে এল। বিলোনো খাবার খেয়ে খেয়ে জন তার বিশাল ভুঁড়িটি বাগিয়েছিল।
“জন্নিসোনা” ফরমুলা আহ্লাদে আটখানা হয়ে বললেন, “নতুন আসা মেয়েটিকে স্বাগত জানাবে চলো। তুমিই তো এ ব্যাপারে সবচেয়ে এক্সপার্ট। প্লিজ চলো।”
“তার বদলে আমি কি পাব?”
“জনি, তুমি তো ভালো করেই জানো, আমি তোমায় কখনো হতাশ করিনি…”
“ওক্কে ডকি” বলল জন, তারপর ফরমুলার পিছু পিছু চলল। যতটা দরকার তার থেকেও বেশি ঝুঁকে, যাতে ওর আঙুলগুলো মেঝেয় ঠেকে থাকে। একটা নীল প্যান্ট আর একটা সাদা রঙের টুপি পরে ছিল ও, টুপিটা আবার পিছনবাগে ঘোরানো, যাতে ওর উটকপাল দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়।
আমি ঠিক করলাম ওদের পিছু নেব।
ওরা ল্যান্ডিং প্ল্যাটফর্মের দিকে এগিয়ে গেল। পরিবাহী হেলিকপ্টারটার পাশে পার্ক সার্ভিসের একজন বিশাল চেহারার কর্মচারী দাঁড়িয়ে ছিল, হাতে শিকলে বাঁধা একটা মেয়ে-শিম্পাঞ্জি। এই উড়ানের ধকলে আর অপরিচিত পরিবেশের মাঝে পড়ে বেচারি ভয়ে আধমরা হয়ে ছিল। যেমনই রূপসীটিকে দেখা, অমনি জেনেটিক সায়েন্সের গর্ব একটা কামুক শিম্পাঞ্জিতে পরিণত হল। মেয়েটাকে ভারি পছন্দ হয়ে ছিল ওর। জনের মাথায় নিশ্চয় খেলছিল মেয়েটাকে ও বিছানায় নিয়ে যেতে পাবে। ও স্রেফ বাঁদরামো জুড়ে দিল। ঠোঁটের বাদ্যি বাজিয়ে, মুখ দিয়ে “হুট হুট” আওয়াজ করে, লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে সে এক কাণ্ড! আবার বুকের ওপর দুমদাম কিলও মারছিল, যেনবা ও একটা ভয়ঙ্কর গোরিলা। স্বভাবতই অল্পবয়সী মেয়েটা এইসব কাণ্ড দেখে আরও ভয় পেয়ে গেল।
মেয়েটি সত্যিই ভারি সুন্দর। ওর মন এখনো ঘুমন্ত, তবে কথা হচ্ছে ওর মধ্যে যুক্তিবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য ওকে এখানে আনা হয়নি। ওকে আনা হয়েছে শুধু প্রজাতিটা টিকিয়ে রাখার জন্য, শুধুমাত্র কিছু ফ্রেশ জিনধারা এখানকার জিনের স্রোতে মেশাবার জন্য।
“জনি ওকে ভয় দেখিয়ো না” ফরমুলা মিনতি করলেন। “ওকে বোঝাও ও এখানে খুব সুখে থাকবে, ওকে শান্ত হতে বল।”
ভাবতে অবাক লাগে আমাদের একেকজন গবেষকের মন কি সরল! শিম্পানুষ তৈরি করতে বসে এরা ধরেই নিয়েছে সাধারণ শিম্পাঞ্জিদেরও একরকম আদিম ভাষা আছে এবং জনের মত কারুর সঙ্গে তারা কথাবার্তাও চালাতে পারে। অন্যদিকে জন নিজের বন্য পূর্বপুরুষদের ভাষা কিচ্ছু জানত না, ফলে নিজের সুনাম বজায় রাখার জন্য সাইন ল্যাঙ্গোয়েজে হাত পা নেড়ে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এ ভাষা আদিম হতে পারে, কিন্তু শ্বাসের ওঠাপড়া দিয়ে ও চিহ্ন সংকেতের মাধ্যমে প্রায় সবই এতে বোঝানো চলে। কিন্তু কোনও কাজই হচ্ছিল না। মেয়েটা দাঁত খিঁচিয়ে উঠল, শিকলধরা লোকটার পিছনে লুকোতে চেষ্টা করল, বোধহয় ভাবল সাদা টুপি পরা একটা অজানা জন্তুর চেয়ে একজন চেনা সাধারণ মানুষ অনেক ভালো।
ঘটনার গতি ক্রমশ আরও খারাপ দিকে মোড় নিচ্ছে দেখে আমি আসরে নামলাম, আমি জানতাম আমি এই অবোলা জীবটিকে শান্ত করতে পারব। সবই ঠিকঠাক হত যদি হতচ্ছাড়া ফরমুলা মাঝখানে এসে না বাগড়া দিত।
“থামো বলছি!” মহিলা চিৎকার করে উঠলেন। “জন, বদমাইশটাকে থামাও। ফায়ার-হোসটা কোথায় গেল?” জন আমার দিকে ভুরু কুঁচকে এমন হাবভাব করতে লাগল যেন মানবজাতির এক পরিত্রাতা এলেন। যদিও মনে মনে জন আমাকে ভয় করত, ও বেশ জানত যে আমার গায়ে আঙুল ছোঁয়ালেই আমি ওকে মজা টের পাইয়ে ছাড়ব।
মেয়ে-শিম্পাঞ্জিটার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বিশ্বাস আর ভরসা দেখতে পেলাম, আমিও মৃদু হেসে তার উত্তর দিলাম। আমি জানতাম, সেই মূহুর্ত থেকে সে আমার একান্ত বিশ্বাসী একজনে পরিণত হল আর শুধু এটাই আমি চেয়েছিলাম। আমি তাকে শান্ত করার জন্য মুখ দিয়ে মৃদু হ্রেষাধ্বনির মত আওয়াজ করলাম, আর সেইসঙ্গে মুখের একটা ভঙ্গিতে জানালাম যে ভয়ের কিছু নেই। তারপর ফরমুলার চিক্কুরের চোটে, আর পার্ক সার্ভিসের হতভম্ব হয়ে যাওয়া লোকটার সন্দেহজনক গতিবিধির ফলে আমি লাফ মেরে সবচেয়ে কাছের গাছটায় গিয়ে উঠলাম আর মূহুর্ত-মধ্যে নিচু ডালে একটা দোল খেয়ে উপরের একটা ডালে চড়ে বসলাম। মেয়েটার মুগ্ধ দৃষ্টি এসে আমার পিঠের ওপর পড়ছিল, টের পাচ্ছিলাম আমি। গাছে গাছে দোল খেয়ে অতি চেনা পথ ধরে আমি ঘুমোবার কোয়ার্টারের দিকে ফিরে চললাম।
অনেকগুলো শিম্পানুষ খাটে শুয়ে বিশ্রাম করছিল; কেউ বই পড়ছিল, কেউ বা ভিডিও ক্লিপস দেখছিল। ব্যারি নামের একজন জন্ম-ছুতোরমিস্ত্রি একটা কাঠের টুল মেরামত করছিল। প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আমরা একসঙ্গে চেয়ার-পত্তর সারাতাম।
“কি ব্যাপার হে?” গীতা জিজ্ঞেস করল। সে ছিল অসাধারণ ইনটুইশনের অধিকারী একজন বর্ষীয়সী ও জ্ঞানী শিম্পানুষ।
“ওই হতচ্ছাড়ি ফরমুলা,” আমি বললুম। “ওরা এক সুন্দরী তরুণীকে নতুন এনেছে, তাই ফরমুলা এসে জনিকে ডেকে নিয়ে গেল। তা, বুড়ো ছাগলটা এমন…”
“আর বলতে হবে না, বুঝে গেছি।” ব্যারি বাধা দিয়ে বলে উঠল। হাতের হাতুড়িটা পাশে নামিয়ে রেখে বলল “ওহে শুনেছ, ব্যাটারা আজ আবার আমাকে পরীক্ষার জন্য টেনে নিয়ে গেছিল।”
“আমার অনুমান তুমি সারাক্ষণ কলার কথা ভাবছিলে।”
“হ্যাঁ, কমলালেবুর কথাও ভাবছিলাম,” ব্যারি হেসে উঠল। “ওরা ভারি হতাশ।”
“ওঃ, এ আর পারা যায় না,” বলল গীতা। “আমার সবচেয়ে চিন্তা হয় কমবয়সীদের কথা ভেবে। আজ হোক, কাল হোক ওরা আমাদের জায়গা নেবে।”
“নয়তো আর কিই বা আমরা করতে পারি?” প্রশ্ন করলাম আমি। “সবকিছু বিনা প্রতিবাদে মেনে নেব? একটা কথা-বলিয়ে বাঁদরমাত্র হয়ে প্রচার-মাধ্যমের শিকার হব?”
“যদি আজ ঠিকঠাক মত সব চলে,…” ব্যারি বলে উঠল।
“ডঃ ভ্যাম্প আজকে আমাকে তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিলেন।” একজন তরুণ শিম্পানুষ, নাম থার্ড, বলে উঠল। “উনি জানতে চাইছিলেন আমি তোমাকে মেনে চলি কিনা।”
“তা তুমি কি জবাব দিলে?”
“ওঃ, তুমি তো জানোই আমি বোকা বোকা সেজে থাকি,’ আমি বললাম, ‘আমাদের নেতা শক্তিমান।’”
আমি হাত বাড়িয়ে থার্ডের হাত থেকে একটা কলা নিলাম – হঠাৎ আমার খেয়াল হল আমার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে।
“মেয়েটা কি খুব সুন্দরী?” সেকেন্ড প্রশ্ন করল।
“তাতে তোমার দরকার?” ওকে এক ধমকে চুপ করিয়ে দিলাম আমি। “বনে গেলে ওর চেয়ে অনেক ভালো দেখতে মেয়ে পেয়ে যাবে।”
“কনফারেন্স তো শুরু হল বলে,” ব্যারি বলে উঠল। “আমাদের শোনা দরকার ওরা কি বলে।”
“ওরা নিশ্চয় অতিথিদের কোথায় রাখবে, ভোজসভার আয়োজন কোথায় করবে এইসব নিয়ে আলোচনা করছে।” গীতা মন্তব্য করল।
“তবুও আমাদের সেখানে যাওয়া উচিত নয় কি?” ব্যারি তবুও নাছোড়।
“আমি নিজেই যাচ্ছি।” এই বলে আমি জানলায় উঠে বসলাম। তারপর আঙুরলতা ধরে সোজা উঠে গেলাম ছাদে। এরপরে ছাদের ওপর দিয়ে গুড়ি মেরে কনফারেন্স রুম। আমাদের এই সব পথ বংশপরম্পরায় শিম্পানুষদের দ্বারা পরীক্ষিত, প্রমাণিত। আমরা এখনো মানুষদের থেকে বুদ্ধিতে সামান্য খাটো হতে পারি, কিন্তু গাছে চড়া, লাফানো এবং – সবচেয়ে জরুরি যা – নিজেদের চিন্তা ও কাজকর্ম লুকিয়ে করা, এসব আমরা কখনো ভুলি না। জঙ্গলের শিক্ষা শহুরে শিক্ষার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী, এবং দু’শো বছর সময় অতীতকে ভুলিয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট সময় নয়। কে প্রথম গা-ঢাকা দিয়ে চুপিচুপি কনফারেন্স রুম অবধি পৌঁছতে সফল হয়েছিল তা আমি জানিনা, কিন্তু যে শিম্পানুষ প্রথম বুঝতে পেরেছিল যে তার মন এতটাই অগ্রসর যে – যারা তাকে নিজের হাতে তৈরি করেছে, সেই মানুষদের কাছ থেকেও সে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে, – সে নিঃসন্দেহে একজন জিনিয়াস।
আমাদের চারিদিকের যন্ত্রপাতি নিয়ে যেসব লোকজন ঘোরে ফেরে, তাদের দেখলে শুধু ভয় আর অবিশ্বাস জেগে ওঠে। লোকে ভাবত বুঝি আমাদের প্রতিটি টুকরো চিন্তা, আবেগের প্রতিটা কণিকা তৎক্ষণাৎ সেল্ফ-রেকর্ডারে আর বায়ো-ফোনে রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। এখানেই এরা বিরাট ভুল করত। এরা নিজেরা যেমন কল্পনা করেছে, সেইমত আমাদের পুনর্গঠন করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু প্রকৃতি আরও বেশি শক্তিমান। আমরা এটা বুঝতে পারলাম যখন দেখলাম নিজেদের যন্ত্রপাতির ওপর অগাধ বিশ্বাস থাকার ফলে এদের মধ্যে আমাদের সম্পর্কে ভুলভাল ধারণা গড়ে উঠছে। এই বিরাট আবিষ্কার আমার জন্মের আগেই ঘটেছিল।
সেইদিন থেকে আমরা গোপনতা শিখলাম। আমরা এদের কাছে যন্ত্রপাতির মাধ্যমে নিষ্ঠুর পরীক্ষা-নিরীক্ষার বস্তুমাত্র ছিলাম। এদের চোখের সামনে, এদের খবরদারির ভেতরে থেকে আমাদের খেতে হত, ঘুমোতে হত, চিন্তা করতে, কাজ করতে এমনকি এদের চোখের উপর সন্তানের জন্ম দিতে হত। তবুও এসবের মধ্যেই আমরা নিজেদের লুকোতে শিখলাম, বুঝতে শিখলাম যে আমরা কোন দ্বিতীয় শ্রেণীর জীব নই। আমরা একটি নতুন জাতি: শিম্পানুষ!
যেখানে কনফারেন্স হচ্ছিল সেই ঘরের কাছে আমি একেবারে সঠিক সময়ে গিয়ে হাজির হলাম। ওরা তখন আমার বিনয়ী চরিত্র নিয়ে সবে আলোচনা শুরু করেছিল। ফরমুলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিল।
“ও একেবারে অসহ্য হয়ে উঠেছে।” মহিলা খ্যাঁকখ্যাঁক করে উঠলেন। “ওর দুষ্ট প্রভাব এবার অন্য সাবজেক্টদের নষ্ট করবে।”
অ-হ-হ্, আমার মনে হল “জন্তু” শব্দটা উচ্চারণ না করতে পারার জন্য এদের কত কসরৎ-ই না করতে হয়।
“ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার করে বলবেন?” ডঃ ভ্যাম্প জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি ছিলেন হাসপাতাল ও রুগ্নাবাসের অধিকর্তা। উনি প্রায়ই অতিরিক্ত নিষ্ঠুর পরীক্ষাগুলোর প্রতিবাদে মুখর হতেন। তাঁর একমাত্র কাজ ছিল অসুস্থকে সারিয়ে তোলা এবং সে কাজটি তিনি খুব যত্ন-সহকারে করতেন। যদি মানুষের মধ্যে থেকে সবচেয়ে ইতিবাচক “সাবজেক্ট”দের বেছে নেওয়া হয়, তবে ডঃ ভ্যাম্প নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে পড়বেন।
“আজকে আমরা একটা নতুন মেয়েকে রিসিভ করেছি,” বলল ফরমুলা।
মেয়েটির সুন্দর মুখ আবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল, মনে পড়ল পার্ক সার্ভিসের বিরাট দৈত্যটার পা জড়িয়ে ধরে তার দাঁড়িয়ে থাকার ভীত সুন্দর ভঙ্গিটি।
“আমি জনকে ডেকেছিলাম আমায় সাহায্য করার জন্য।”
“ওই জনকে আমার খুব একটা বিশ্বাসী বলে তো মনে হয় না।” বাত্যা, এই ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর, মন্তব্য করলেন।
“কেন? ও তো বেশ অগ্রসর জীব।” ফরমুলা বলে, “ও প্রায়ই আমাদের হেল্প করে। মেয়েটা খুবই ভয় পেয়ে ছিলো। আমরা দুজন মিলে ব্যাপারটা দিব্যি সামলে নিতে পারতাম, এমন সময় ঝোপের ভেতর থেকে লিডার বেরিয়ে এলেন এবং মেয়েটার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আমার ধারণা ওই ছোট্ট মেয়েটাকে ধরে ওর ঠ্যাঙানোর মতলব ছিল।”
মনে হল ফরমুলা বুঝি কেঁদেই ফেলবে। হা ভগবান! মনে মনে ভাবলাম আমি, ও কি আমাকে একটা রাক্ষস মনে করে নাকি?
হঠাৎ ব্যায়ামাগারের অধিকর্তা স্ক্রিপনিক দাঁড়িয়ে উঠে ফরমুলাকে সাপোর্ট করল।
“দিনদিন ও একটা বুনো জন্তু হয়ে উঠছে।” মোটকা স্ক্রিপনিক বলে চলল, “কাল ভাঁড়ারে ঢুকে ও প্রায় অর্দ্ধেক খাবার লুঠ করে নিয়ে গেছে। জানিনা ভোজসভায় গেস্টদের কি দেব।”
আমি চুপিচুপি হাসলাম। কাল গীতা আর আমি দুজন কমবয়সীকে সঙ্গে নিয়ে ওই লুন্ঠন চালিয়ে ছিলাম। যদিও আমাদের শুধু দরকার ছিল কনডেন্সড মিল্কের টিন ও অন্যান্য টিনের খাবার, কিন্তু কোনোরকম সন্দেহ যাতে না হয়, সেজন্য ব্যাপারটাকে লুঠপাঠ, ভাঙচুরের চেহারা দেবার দরকার ছিল।
“এবার ওকে চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেওয়া দরকার।” ফরমুলা বলল, “যদিও ও একজন মিউট্যান্ট, কিন্তু ওর প্রবণতা হচ্ছে পিছোনোর দিকে, একটা সাধারণ বাঁদর হওয়ার দিকে। পুরো এক্সপেরিমেন্টটার পক্ষে ও বিপজ্জনক।”
“আপনার কি মনে হয় ডক্টর?” ডিরেক্টর প্রশ্ন করলেন।
“আমি চট করে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না।” ডাক্তার বললেন। “যদ্দুর দেখেছি ও সুস্থ ও শক্তিশালী। দলের মধ্যে ওর বেশ আধিপত্যও আছে।”
“ঠিক কথা, ‘দলের’ মধ্যে। কিন্তু আমরা একটা ‘সমাজ’ গড়তে চাইছি! তাই না?” ফরমুলা বিস্মিত।
“আপনি কি মনে করেন?” ডিরেক্টর এবার এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট ল্যাবরেটরির অধিকর্তার দিকে ফিরলেন। এ হল আমাদের প্রধান শত্রু। এর সামনে এলেই আমরা মাথা থেকে সমস্ত আসল চিন্তা-ভাবনা সব দূর করে কেবল খাওয়ার কথা ভাবতাম, নাক কুঁচকে, ফোঁস ফোঁস করে গন্ধ শুঁকে যেন সর্বদা খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছি এমন ভাব দেখাতাম।
“গড়পড়তার হিসেবে বোধবুদ্ধি কম…” অ্যাসেসমেন্ট গুরু তাঁর নোট হাতড়াতে লাগলেন, পকেট থেকে একটা একটা করে কাগজ বের করে টেবিলের ওপর রাখছিলেন। আমার ডেটা অন্যান্য শিম্পানুষদের ডেটার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছিলেন তিনি, শেষপর্যন্ত ব্যাপারটা এমন ঘেঁটে গেল যে ডিরেক্টর বাধ্য হয়ে তাঁকে বসিয়ে দিলেন। তারপর তিনি সেখানে উপস্থিত অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতামত শুনতে চাইলেন। সবাই একবাক্যে জানালেন যে আমি অত্যন্ত গোলমেলে জীব, ছোটদের ওপর আমার প্রভাব খুবই খারাপ। তাদের কাছ থেকে আমাকে সরিয়ে নেওয়া উচিত।
একদিক দিয়ে দেখলে এসব শুনে আমার খুশি হওয়াই উচিত, কারণ এ থেকে বোঝা যায় যে আমি এদের সকলকে বোকা বানাতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু অন্যদিকে খুব অপমানজনকও বটে কারণ, তাকে চিড়িয়াখানায় পাঠানো হবে শুনলে যেকোনো বুদ্ধিমান জীবই চটে যেতে বাধ্য।
ডিরেক্টর বললেন, “তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে এটাই ঠিক হল যে আমরা লিডারকে ছাঁটাই করব। এটা খুব গোপনে করা দরকার। আমরা সুখুমি২-র চিড়িয়াখানাকে খবর দেব, কারণ ওদের শিম্পাঞ্জি দরকার। আমার মনে হয় ব্যাপারটা আজকেই সেরে ফেলা ভাল, একটু বেশি রাতের দিকে। যাহোক, এবারে অন্য ব্যাপারে মন দেওয়া যাক। আমাদের গেস্টদের ফ্লাইট কখন এসে পৌঁছবে?”
“বিকেল সাড়ে-পাঁচটায়।” স্ক্রিপনিক বললে। “উড়ুক্কু যানটা খুবই বড়; আমাদের বাড়তি ফাঁকা জমিটাতে আমরা ওটা পার্ক করে রাখব।”
এই উড়ুক্কু-যানের কথা আমি জানতাম। এটা অস্ট্রেলিয়া থেকে আসার কথা। আমাদের বাকি অতিথিরা অন্যান্য ছোট ছোট উড়ুক্কু-যানে আসবেন, কিন্তু আমাদের দরকার সবচেয়ে বড়টা।
এই খবরটুকুই শুধু আমার জানার দরকার ছিল। আর আমার এখানে থাকার কোন প্রয়োজন নেই। দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানা গেল। এক নম্বর, আর একটুও সময় নষ্ট করা চলবে না। যদি আজকেই সন্ধ্যেবেলা আমাদের প্ল্যান সফল না করতে না পারি, তবে মাঝরাতে এই বিশ্বাসঘাতকের দল আমাকে চিড়িয়াখানায় পাচার করবে। দু’নম্বর, যে উড়ুক্কু-যানটা আমাদের দরকার সেটা বিকেল সাড়ে-পাঁচটা থেকে বাইরের মাঠে পার্ক করা থাকবে। কি সৌভাগ্য! ওই মাঠের চারিদিকে রয়েছে জঙ্গল। ফলে সহজেই আমরা গাছপালার আড়ালে আড়ালে গা-ঢাকা দিয়ে যানটার কাছে পৌঁছতে পারব।
আমি লাফ মেরে ফের বাগানে এসে নামলাম। চোখ তুলে পুকুরটার দিকে একবার দেখলাম। আমাদের খেলার মাঠ, আমাদের সুন্দর সুন্দর বাড়িঘর, এসব দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। বড় চেনা এই পৃথিবীতে আমার আর কোনদিনও ফিরে আসা হবে না, যেখানে আমি বড় হয়েছি, যেখানে আমি আত্মসচেতন হতে শিখেছি, আমার জাতির প্রতি কর্তব্যকে চিনতে শিখেছি।
যাকগে, কি আর করা? শাস্ত্রে বলে সবকিছুই একদিন শেষ হয়, এমনকি রূপকথার গল্পের নটে গাছও একসময় না একসময় মুড়িয়ে যায়।
ওরা আমার জন্য শোওয়ার ঘরে অপেক্ষা করছিল।
“সবকিছু ঠিকঠাক।” ঘোষণা করলাম আমি। “উড়ুক্কু যানটা সাড়ে-পাঁচটায় ল্যান্ড করবে। ওটা সংরক্ষিত মাঠটায় পার্ক করা থাকবে।”
সবাই জয়ধ্বনি দিয়ে এই সংবাদকে স্বাগত জানাল।
আমি ভেবে দেখলাম আমায় চিড়িয়াখানায় পাঠানোর কথা এদের কাছে কিছু ফাঁস করা ঠিক হবে না। আমাদের দলটা ছোট হলেও এখানে আমার সর্বনাশ করার লোকেরও অভাব ছিল না। একথা শুনলেই ওরা রটাতে থাকবে আমি আসলে স্বার্থপর, কেবল নিজের পিঠ বাঁচানোর জন্যই আমি এখান থেকে পালাতে চাইছি।
ক্রমশ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। অতিথিরা এক এক করে আসতে শুরু করলেন। জুবিলি উদযাপন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল, সুতরাং আজ কোন অতিথি শিম্পানুষদের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন এমন সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু জনি ইডিয়টটা যথারীতি গম্ভীর মুখে নবাগতদের পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তাদের সঙ্গে ছবি তোলাচ্ছিল, আর অর্থহীন বকে চলেছিল। অতিথিরা তাই শুনেই অবাক হচ্ছিলেন, ঠিক যেমন আমরা তোতাপাখির মুখে “পলি একটা বিস্কুট চায়” বুলি শুনে অবাক হই।
পুরোপুরি অন্ধকার হবার আগেই আমরা রসদের একটা অংশ জঙ্গলের লুকোনো জায়গা থেকে নিয়ে এসে উড়ুক্কু যানের কাছাকাছি এনে রাখলাম। কঙ্গোর তীরে বড় বনে পৌঁছবার পরে আমাদের মোটেই জংলিদের মতো জীবন-যাপন করার কোন বাসনা ছিল না। আমরা জোগাড় করেছিলাম শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক মাইক্রোফিল্ম, রেকর্ডার-যন্ত্র এবং অন্যান্য সবরকমের সাজসরঞ্জাম আর যন্ত্রপাতি – এককথায় একটি ক্ষুদ্র জাতের মহান মাইগ্রেশন সংঘটিত হচ্ছিল। একটা জাত, যে জাত অন্যের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহৃত হতে হতে আজ ক্লান্ত। একটা জাত যারা আমার মধ্যে তাদের নেতাকে খুঁজে পেয়েছে।
সন্ধ্যে নামার পর বাগানের আলোগুলো জ্বলে উঠল। নবাগত অতিথিরা আপেল গাছটার নিচে জড়ো হয়েছিলেন। স্ক্রিপনিক একটা লম্বা লম্বা টেবিলের উপর অ্যাপেটাইজার সাজিয়ে রাখছিল। রাতের ঘুম ঘুমোতে যাবার আগে একটি শিশুর কলকন্ঠে গান শোনা গেল “বনের মধ্যে গজিয়েছিল ছোট্ট একটা ফার গাছ।” অতিথিরা বিভোর হয়ে গেলেন।
সবকটা প্রয়োজনীয় তালা ভাঙা আছে কিনা সেটা আমি একবার চেক করে নিলাম।
অন্ধকার হয়ে গেছিল। সবকিছু প্রস্তুত ছিল।
ভাগ্য ভালো বলতে হবে, উড়ুক্কু-যানটার কাছে কোন প্রহরী রাখার কথা ওদের মাথায় আসেনি।
যানটা দেখে আমার খুবই পছন্দ হল। এটা সত্যিই বিরাট বড়। আমি আগে এরকম উড়ুক্কু-যান ওড়াইনি, আমাদের কেউই ওড়ায়নি, কিন্তু অটোমেটিক কন্ট্রোল কিভাবে কাজ করে সেটা আমরা জানতাম। আমরা খুব নিচু দিয়ে উড়ে যাব, যতক্ষণে লোকে জানতে পারবে কি ঘটেছে ততক্ষণে আমরা আফ্রিকার উপর পৌঁছে গিয়েছি।
চাঁদের আলো খুব কম ছিল, ফলে আমরা একটু স্বস্তিতে নড়াচড়া করতে পারছিলাম। আমাদের লুকোতে প্রায় হচ্ছিলই না, এই একটা বিষয়ে অন্তত মানুষদের আমাদের সাথে এঁটে ওঠার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
চারিদিক ক্রমশ চুপচাপ হয়ে আসছিল। অতিথিদের জন্য নির্দিষ্ট হোটেল এবং কটেজের খোলা জানলা দিয়ে ভেসে আসা টুকরো কথা আর গানের আওয়াজ ছাড়া আর কোথাও কোন শব্দ ছিল না। ভাল, ভাল, যত পারে আনন্দ করে নিক ওরা। শুধু কাল সকালে ওদের ভীষণ হতাশ হতে হবে। ওদের কাছে ‘ডেমনস্ট্রেট’ করার জন্য আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
“শোনো,” জ্ঞানী গীতাকে প্রশ্ন করলাম আমি, “জনিকে কি আমাদের সঙ্গে নেবে না এখানে ফেলে রেখে যাবে?”
“তুমি কি চাইছ?”
“আমি হলে সান্তনা পুরস্কার হিসেবে ওকে এখানে রেখে যেতাম।”
“আমারও তাই মত। বিশেষত ও আমাদের সাথে এসে খুশি হবে না। ও আরামে অভ্যস্ত, আর আমরা আমাদের সব আরাম বিসর্জন দিতে চলেছি।”
থার্ড বাচ্চাদের নিয়ে এল। তাদের কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়ছিল, কেউবা দুষ্টুমি চালিয়ে যাচ্ছিল। বাচ্চাদের সাথে তাদের মায়েরাও এল।
আমরা চটপট তাদের যানে তুলে নিলাম। অপূর্ব ব্যাপার, এই লোকগুলোর এত আত্মবিশ্বাস যে কোথাও কোন গার্ড রাখা কিংবা তালা-ফালা লাগাবার কথা এরা একবারও চিন্তা করেনি।
গীতা সব শিম্পানুষদের গুনে নিয়ে বলল “চৌষট্টিজন ‘সাবজেক্ট’,” বলে মুচকি হাসল। ফরমুলাকে ব্যাপক নকল করেছিল ও।
“সবাই উঠেছে?” ব্যারি জানতে চাইল। ইতিমধ্যেই ও ককপিটে চড়ে বসেছিল। ও হবে আমার কো-পাইলট।
“দাঁড়াও!”আমি বললাম। “আমরা ওই মেয়েটিকে আনতে ভুলেছি।”
“কে?” গীতা বুঝতে পারল না।
“যে মেয়েটিকে ওরা আজ সকালে এখানে এনেছে। ওকে আমরা এখানে জনির হাতে ছেড়ে দিয়ে যেতে পারি না।”
“বনে গেলে ওর চেয়ে অনেক ভালো দেখতে মেয়ে পেয়ে যাবে।” থার্ড আমারই ডায়লগ আমায় শুনিয়ে খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা করল।
আমি গর্জন করে ওকে এমন তাড়া লাগালুম যে থার্ড চোঁ-চাঁ দৌড়ে উড়ুক্কু-যানের একেবারে ভেতরে হাপিস হয়ে গেল। আমার মনে হল আফ্রিকা পৌঁছবার আগে ও আর মুখ খুলবে না।
“বোকার মত কোনো কাজ কোরো না,” গীতা বলল, “সমস্ত ইনস্টিটিউট জেগে উঠবে।”
“মোটেই না,” আমি দৃঢ় গলায় জানালাম। “তোমরা সবাই গুছিয়ে বসো, আমি এক্ষুণি আসছি।” বলেই আমি কোয়ারেন্টাইন রুমের দিকে ছুটলাম।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, দরজায় তালা লাগানো ছিল। আমি নিঃসাড়ে জানলায় উঠলাম। জানলাটা ছিল শকপ্রুফ, ভেতরে ঢোকার কোন উপায়ই নেই।
মেয়েটা তার ডাগর চোখ মেলে জানলার ওপার থেকে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। ও বুঝেছিল আমি ওর জন্যেই এসেছি। ও কাচের ওপর ঠোঁট চেপে ধরল, অর্থাৎ, আমাকে ভেতরে আসবার জন্য নীরব অনুরোধ। হায় রে বুদ্ধিহীন নির্বোধ প্রিয়তমা।
দুই লাফে আমি ছাদে উঠলাম। ভেন্টিলেটর গ্রিডের স্ক্রু-গুলো খুলতে আমার ঠিক দুমিনিট লাগল। আমি যতটা সম্ভব দ্রুত হাত চালাচ্ছিলাম। বেশ বুঝতে পারছিলাম আমার সঙ্গীরা আমাকে না দেখতে পেয়ে কিরকম উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। আমি না থাকলে একটা ছোটখাট বিদ্রোহ ঘটে যাওয়াও বিচিত্র নয়। শুধুমাত্র আমার লৌহকঠিন নেতৃত্ব ওদের আনুগত্য বজায় রেখেছে।
শেষপর্যন্ত গ্রিডটা খুলে ছুঁড়ে ফেললাম।
রাস্তা দিয়ে কে যেন এদিকে এগিয়ে আসছে। আমি ছাদের ওপর নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে শুয়ে রইলাম।
নাকে জনির গায়ের গন্ধ ভেসে এল। এতকিছুর পরে শেষে এই! আরেকটু হলেই আমি হেসে ফেলছিলাম আরকি। বাবুও অভিসারে এসেছেন! বটে! অন্ধকারের ভেতরে এক প্রতিদ্বন্দ্বী!
শুনতে পাচ্ছিলাম হাঁদারামটা জানলার ওপর আঙুল ঠুকে মেয়েটাকে ডাকছে। রাগে, হিংসায় আমার ব্রহ্মতালু অবধি জ্বলে গেল। কিন্তু আমি কি করব? ব্যাটার সঙ্গে লড়াইতে নামব? হঠাৎ আমার মাথায় একটা বিপজ্জনক আইডিয়া খেলে গেল।
ডিরেক্টরকে নকল করে আমি মোটা গলায় বলে উঠলাম, “এত রাতে তুমি এখানে ঘুরঘুর করছ কিসের জন্য? শিগগির বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ো, নইলে তোমায় চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেব।”
সঙ্গে সঙ্গে কাজ হল। জনি ঠিক একটা মুরগির মত চমকে উঠল। তারপর যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে ওর দ্রুতবেগে পলায়নের শব্দ কানে ভেসে এল।
এবার আমাকে আরও তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে। আমার গলা কারুর কানে যাওয়া বিচিত্র নয়। সবচেয়ে ঘৃণ্য হল পাহারাদার-রোবট। যদিও সাধারণত মাঝরাতের আগে ওটা মোতায়েন হয় না। আমরা ওটাকে ভেঙে ফেলব বলে ঠিকও করেছিলাম, কিন্তু শেষপর্যন্ত আমাদের স্বভাবগত উদাসীনতারই জয় হল – এবং আমরা স্রেফ ভুলে গেলাম।
আমি দেহটাকে সরু করে ভেন্টিলেটরের ফুটো দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। জব্বর টাইট।
আমি মৃদুস্বরে শিস দিলাম। মেয়েটি বুঝতে পারল। ও ওর লম্বা নরম আঙুলগুলো দিয়ে আমার হাতটাকে জড়িয়ে ধরল। অনুভব করলাম আমার হাতের ওপর ওর মধুর স্পর্শ!
ওকে টেনে তুললাম আমি, তারপর ছাদের ওপর দিয়ে গুঁড়ি মেরে যেতে ওকে সাহায্য করলাম।
ও পরম বিশ্বাসে আমাকে অনুসরণ করছিল। সে যে কি সুখ! ওর প্রতিটি চাহনি, প্রত্যেকটি নড়াচড়া যেন জানিয়ে দিচ্ছিল “তুমিই আমার প্রিয়তম।”
“খুব শিগগির তুমি কথাও বলতে পারবে।” মনে মনে বললাম আমি।
এদিকে উড়ুক্কু-যানের ভিতর তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একে আমি নেই, তার উপর কোনোরকম আদেশও রেখে যাইনি। ওদের মধ্যে যাদের মাথা একটু বেশি গরম তাদের গীতা আর সামলে রাখতে পারছিল না। ব্যারি তো আমার উপর রাগে ফেটে পড়ে গাল পাড়তে লাগল। আমি মেয়েটিকে অন্যদের হাতে তুলে দিয়ে দ্রুত পাইলটের সিটে এসে বসলাম।
“অ্যাটেনশন!” আমি বলে উঠলাম। “সবাই বসে পড়ো। মায়েরা, বাচ্চাদের সামলে রাখো। আমাদের একটু তাড়া আছে। আফ্রিকার ঘন জঙ্গল আমাদের জন্য প্রতীক্ষায় আছে। স্বাধীনতা আমাদের জন্য প্রতীক্ষায় আছে।”
শেষবারের মত ইনস্টিটিউটের দিকে তাকিয়ে বিদায় জানালাম। কয়েকটা জানলায় এখনো আলো জ্বলছে। বিংশ শতাব্দীর আদলে তৈরি বাড়ীটার কালো অবয়ব, গাছগুলোর মাথা ছাড়িয়ে আকাশে মাথা উঁচিয়ে রয়েছে।
আমি কনসোলের ওপর হাত রাখলাম। মনে ফুটে ওঠা ছবিতে অটোমেটিক সিস্টেম অন করে দিলাম। অমনি ড্যাশবোর্ডে আলো জ্বলে উঠল।
আমি কোড পাঞ্চ করলাম – এই কাজটা কি করে করতে হয় সেটা আমি জানতাম। ডিরেকশন…. উত্তর গোলার্ধের একটা ম্যাপ ফুটে উঠল। আমি কঙ্গোর অবস্থান দেখিয়ে দিলাম।৩ ইন্ডিকেটরকে সরিয়ে আমাদের গন্তব্যর একজ্যাক্ট পয়েন্টে নিয়ে এলাম। এরপর স্টার্ট বোতামটা টিপতেই উড়ুক্কু-যান দ্রুত উপরে উঠতে শুরু করল।
পিছনের দিকে কচিকাঁচার দল কিচমিচ করে কেঁদে উঠল। ইনস্টিটিউট ক্রমশ অন্ধকারে ডুবে গেল।
পৃথিবীর আলো ক্রমে নিষ্প্রভ হয়ে এলো। আমরা পাতলা মেঘের স্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। যানটা দিক বদলালো, তারপর নিজের নির্দিষ্ট যাত্রাপথ ধরে এগোতে লাগল।
আচমকা কারুর স্পর্শ অনুভব করলাম আমি।
ফিরে দেখি আমার ভালোবাসার পাত্রীটি দাঁড়িয়ে আছে আমার পিছনে। ও আমার সঙ্গ চাইছিল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
“আমরা এখন নিরাপদ।” আমি অন্য সিটে বসে থাকা ব্যারিকে বললাম, “ওরা আর আমাদের ধরতে পারবে না।”
“এখনও ওরা কোন এয়ারোড্রোম থেকে একটা মেশিন আমাদের পিছন পিছন পাঠিয়ে দিতে পারে।”
“সন্দেহ আছে,” আমি বললাম। “ওরা এখনও কিছুই জানে না। যখন জানবে তখন আমরা কোনদিকে গেছি তার হদিশ পাবে না।”
ঠিক সেই মুহুর্তে আতঙ্কে পাথর হয়ে দেখলাম কনট্যাক্ট স্ক্রিনটা আলো হয়ে উঠল।
প্রথম ঝোঁকেই আমি নিচু হয়ে লুকোতে গেলাম, যাতে স্ক্রিনের ভিডিও-আইতে আমায় দেখা না যায়।
ব্যারি একটা খাবি খেল।
পরমুহুর্তেই বুঝতে পারলাম যে লুকিয়ে কোনই লাভ নেই। বরং সাহসের সঙ্গে বিপদের সামনা-সামনি হওয়া ভাল।
স্ক্রিনে ডিরেক্টরের মুখ ভেসে উঠল। বাত্যাকে খুবই সিরিয়াস দেখাচ্ছিল।
“লিডার,” তিনি বললেন। “আমি জানি তুমি ওখানেই আছো।”
“হ্যাঁ, আমি আছি।” সোজা হয়ে বসে বললাম আমি। “আপনি আমাদের মেরে ফেলতে পারেন, তবু আটকাতে পারবেন না।”
বাত্যা বললেন, “লিডার, তুমি হয়তো চাইবে তোমার আমার কথাবার্তা একান্তে হোক। যদি রাজি থাকো তবে ব্যারিকে স্থানত্যাগ করতে বলো।”
“আমি এখানেই থাকব।” বিশ্বাসী ব্যারি বলল, “আমি কাউকে ভয় পাই না।”
“ডিরেক্টর ঠিকই বলছেন।” আমি বললাম। “চলে যাও প্লিজ। তোমার পেটে তো কথা থাকে না।”
ব্যারি ক্ষুব্ধ হল। অনিচ্ছাভরে ধীরে ধীরে ওর সিট থেকে নামল, কিসব বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে গেল। মেয়েটি ঘাবড়ে গিয়ে একবার আমার দিকে তাকাল, তারপর ডিরেক্টরের দিকে তাকাল। ডিরেক্টর অবিশ্যি ওকে ধর্তব্যই মনে করেননি। উনি জানতেন ও কিছুই বুঝবে না। অন্য অনেকের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন ব্যতিক্রম। তিনি আমাদের মুখ দেখেই কে কোনজন তা চিনতে পারতেন।
পাইলট কেবিনটা ছিল ছোট, আমি হাত বাড়িয়েই কেবিনের দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।
“বলুন আপনার কি বলার আছে,” আমি প্রশ্ন করলাম। “আপনার চরমপত্রটি শোনা যাক।”
“এ কোন চরমপত্র নয়,” বললেন ডিরেক্টর, “শুধুই একটা তথ্য মাত্র।”
“ভাল কথা।” মনে মনে আমি আতঙ্কে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। গোটা পৃথিবী আজ আমার বিরুদ্ধে। তিনশো কোটি মানুষ।
“লিডার, অনেককাল হল আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমাদের যন্ত্রপাতিগুলো থেকে তোমাদের সত্যিকারের বাস্তব অবস্থার ছবি আমরা পাই না। আমরা প্রথমেই বুঝতে পারিনি, এবং পরেও সহজে বুঝিনি যে আমাদের গবেষণা আসলে সত্যি সত্যিই সাফল্য লাভ করেছে। সত্যি বলতে কি আমরা যা আশা করেছিলাম এই সফলতা তাকে বহুলাংশে ছাপিয়ে গেছে। দুশো বছর ধরে এই পরীক্ষামূলক গবেষণার ফলে বিজ্ঞানীরা কিছুটা যান্ত্রিক স্বভাবের হয়ে পড়েছিলেন। আমরা খানিকটা রক্ষণশীল গোছের হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু যেদিন আমরা বুঝতে পারলাম যে তোমাকে, আমাদের ছোট ভাইটিকে, – যাকে আমরা নিঃসন্দেহে যুক্তিবোধ ও চেতনা দান করতে পেরেছি – আমাদের আর শেখানোর মত কিছুই বাকি নেই, সেদিন আমরা একথাও উপলব্ধি করেছিলাম যে এবার তোমাকে এক অচলাবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু আমাদের বাধ্য হয়েই সে উপলব্ধি তোমাদের কাছে গোপন রাখতে হয়েছিল।”
“কতকাল হল আপনারা এসব জানতে পেরেছেন?”
“অনেক অনেকদিন আগে।”
“কেন একথা লুকিয়ে রেখেছিলেন?”
“কারণ আমরা সবাই এ বিষয়ে একমত হতে পারছিলাম না, যেমন একমত হতে পারছিলাম না কিভাবে এই এক্সপেরিমেন্টকে এগিয়ে নিয়ে যাব সে বিষয়ে। কারণ এখন সময় এসেছিল দায়িত্বভার তুলে দেওয়ার, এমন কারুর হাতে, যাদের আমরা চোখের সামনে বেড়ে উঠতে দেখেছি…। বড় জটিল বিষয়। যদি দিন আসে হে নেতা, তবে সেইদিন আপনি আর আমি এক টেবিলে বসে, এক এক পেয়ালা চা হাতে নিয়ে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা যাবে।”
আমি বিস্ময়ে বজ্রাহতের মতো বসে রইলাম। দু’শো বছরে এই প্রথম কেউ একটা শিম্পাঞ্জিকে তুমি না বলে আপনি বলে সম্বোধন করল।
“আমি দুঃখিত,” আমি মেয়েটির হাতে চাপ দিয়ে দৃঢ়স্বরে বললাম, “কিন্তু আমরা ফিরছি না। এক্সপেরিমেন্ট খতম।”
“যাও বন্ধু, উড়ে যাও, কেউ তোমাদের বাধা দেবে না। তোমাকে জানিয়ে দি, লাগেজ কম্পার্টমেন্টে অনেক খাবার-দাবার রাখা আছে। তোমরা খুব বেশী খাবার তো নিয়ে যাও নি, পথে বাচ্চাদের পেট ভরে খেতে দেওয়া দরকার।”
“তার মানে আপনি সব জানতেন?” হঠাৎ আমার মনে একটা ভীষণ আঘাত এসে লাগল। আমার সব গর্ব, সব দর্প চূর্ণ-বিচূর্ণ হতে বসল। আমার সমস্ত গোপন কথা…
“মনখারাপ কোর না।” ডিরেক্টর বললেন, “এতে তোমার কৃতিত্ব কিছুমাত্র কমছে না। সমস্ত ইনস্টিটিউটকে একত্র করলেও তোমার পাশে দাঁড়াতে পারত না। একথা অকপটে বলছি।”
আমি জানতাম উনি অকপটেই বলছেন। আমাদের, শিম্পানুষদের ইনটুইশন মানুষের থেকে অনেক বেশি। মানুষকে আমরা এখনও অনেক কিছু শেখাতে পারি।
ডিরেক্টর আন্দাজ করলেন আমি কি ভাবছি।
“তোমরা আমাদের অনেক কিছু শেখাতে পারবে বলেই আমার আশা। আমাদের আলাদা হওয়া সেইজন্যেই আরও দরকার। ঠিক সময়ে একে অন্যকে ত্যাগ করা। আমরা যে পথ খুঁজে পাইনি তোমরা তা খুঁজে পাবে।”
“তাহলে আজকের মিটিং-এর ব্যাপারটা? আমাকে চিড়িয়াখানায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া এসব…”
“অনেকটাই সাজানো। আমরা জানতাম তুমি মিটিং-এ আমাদের কথা শুনতে আসবে।”
“আর ফরমুলা?” আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারব না যদি শুনি উনি…
“ডক্টর পিমেনোভা এসব জানতেন না,” ডিরেক্টর হাসলেন। “উনি জানলে কখনই তোমাকে ক্রান্তিয়-অরণ্যে, যেখানে জল ফুটিয়ে খাওয়া যায় না আর মশা কামড়ায়, এমন জায়গায় যেতে দিতেন না।”
“কিছু মনে করবেন না,” স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম আমি, “ওঁর কাছে তো ওঁর প্রিয়তম জনি রইল।”
পিছনে দরজা খোলার আওয়াজ হল। ফিরে দেখি গীতা আর ব্যারি উৎকন্ঠিত মুখে দাঁড়িয়ে।
“সব ঠিকঠাক আছে,” আমি বললাম। “উড়ান যেমন চলছে চলবে।”
আমি কানেকশনটা কেটে দেবার জন্য সুইচের দিকে হাত বাড়িয়ে দেখি স্ক্রিন আগেই কখন অন্ধকার হয়ে গেছে।
“ডিরেক্টর লাইনে ছিলেন বুঝি?” গীতা জিজ্ঞাসা করল, “কি চান উনি?”
“উনি চাইছিলেন আমরা ফিরে যাই,” আমি বললাম। “কিন্তু আমি না করে দিলাম। আমরা যেমন যাচ্ছি তেমনই যাব।”
ব্যারির মুখে চোখে মুগ্ধতা ফুটে উঠল। আমি স্বয়ং ডিরেক্টরকে পরাজিত করেছি, একি সোজা কথা?
গীতা কিন্তু ভ্রূ কুঁচকে আমার দিকে তাকাল। আমার কথায় ওর বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু তাতে ক্ষতি নেই, ওর সন্দেহ ও নিজের মধ্যেই গোপন রাখবে।
আমি নতুন মেয়েটির মাথায় একটা টোকা দিলাম।
“না, একে কোন ভাষা শেখাব না।” মনে মনে ভাবলাম আমি। ডিরেক্টরের সাথে আমার কথাবার্তা একদম গোপন রাখাই উচিত। শিম্পানুষ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতিকে তো সর্বদা সকল সমালোচনার ঊর্দ্ধে থাকতেই হয়।
১. Jean-Baptiste Lamarcke (1744-1829), Charles Darwin (1809-1882) এবং Gregor Mendel (1822-1884) হলেন বিবর্তন ও জেনেটিকসের বর্তমান ধারণার প্রবর্তক।
২.সুখুমি(Sukhumi) পশ্চিম জর্জিয়ার ব্ল্যাক সী সমুদ্রতীরে অবস্থিত একটি শহর।
৩. কঙ্গো নামে যে অঞ্চলকে ডাকা হয় তা মধ্য আফ্রিকায় অবস্থিত। এর বুক চিরে চলে গিয়েছে নিরক্ষরেখা। ১৯৮৫ সালে বুলিচেভ যখন গল্পটা লেখেন তখন এখানে মোবুটুর রাজত্বকাল। দেশটার নাম তখন ছিল জাইর। তিনি একজন দুর্নীতিগ্রস্ত একনায়ক হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু তিনি কমুনিস্ট-বিরোধী ছিলেন সেই কারণে আমেরিকা তাঁকে সমর্থন করত। ঠান্ডা-লড়াইয়ের এই রাজনীতির সঙ্গে বুলিচেভের গল্পের কোনও সম্পর্ক নেই। কঙ্গো অঞ্চল বহু বিখ্যাত এপ প্রজাতির(এরা সবাই এখন সংকটাপন্ন) স্বাভাবিক বাসস্থানরূপে চিহ্নিত। এদের মধ্যে রয়েছে সাধারণ শিম্পাঞ্জি, বোনোবো, ওয়েস্টার্ন গোরিলা আর ইস্টার্ন গোরিলা। সেজন্য বুলিচেভের গল্পে কঙ্গোকে বেছে নেওয়া খুবই যথোপযুক্ত হয়েছে।
অনুবাদ প্রসঙ্গেঃ
কির বুলিচেভ (Кир Булычев) (Kir Bulychev) ছদ্মনামে সারাজীবন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লিখে গেছেন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমান রাশিয়ার প্রচণ্ড জনপ্রিয় লেখক Igor Vsevolodovich Mozheiko। জন্ম: ১৮ই অক্টোবর, ১৯৩৪, মৃত্যু: ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০০৩। ১৯৬৫ তে স্নাতকোত্তর ও ১৯৮১ তে ডক্টরেট ডিগ্রি পান। স্মরণীয় কীর্তি ছোটোদের জন্য আলিসা সেলেজনেভা সিরিজ যেখানে আলিসা একজন ভিনগ্রহী এবং গাসলার সিরিজ যেখানে ভেলিকি গাসলার রাশিয়ার একটি শহর। ২০টিরও বেশি সিনেমার স্ক্রিপ্ট তাঁর লেখা। স্মরণীয় সম্মান – আয়েলিতা পুরস্কার, ১৯৯৭। তাঁর রচনার অন্তর্লীন হাস্যরসের ধারায় রয়েছে তাঁর অনন্যতা।
বাংলা অনুবাদক সুমন চট্টোপাধ্যায় এই পৃথিবীর একজন সামান্য মানুষ। পৃথিবীকে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন এই পৃথিবীর সবকিছুকে(মানুষকেও)। রবি ঠাকুরের ভক্ত, তাঁর মতোই বাঁচতে ভালোবাসেন, বেঁচে থেকে এই জগতের রূপ, রস, শব্দ, গন্ধকে যতটা পারেন উপভোগ করে যেতে চান। শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ও শ্রদ্ধাশীল। পয়সাকড়ি বেশি কামাতে পারেননি ঠিকই, তবে এই পৃথিবীর শেষ যে কটি মহৎ মানুষ অবশিষ্ট আছে, তাঁদের অকুন্ঠ ভালোবাসা পেয়েছেন, এটুকুই তাঁর জীবনের সঞ্চয়।
বর্তমান গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় Chemistry and Life পত্রিকায় ১৯৮৫ সালে ১২শ সংখ্যায়। ইংরেজি অনুবাদটি Yvonne Howell কৃত, Chtenia পত্রিকায় ২০১৫ সালের Vol. 8, No. 2, Issue 30 (Spring) সংখ্যায় ছাপা হয়। তাঁরই সম্পাদনায় Russian Life Books কর্তৃক প্রকাশিত Red Star Tales: A Century of Russian and Soviet Science Fiction গ্রন্থেও ইংরেজি অনুবাদটি অন্তর্ভূক্ত হয় ২০১৫ সালে। তবে প্রথমদিকের বেশ কিছুটা অংশ সেখানে না পাওয়ায় গুগুল ট্রান্সলেশনের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এই গল্পটি থেকে Yuri Moroz এর নির্দেশনায় ১৯৮৬ সালে Experiment-200″ (1986) নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ও তৈরি করা হয়।
কৃতজ্ঞতা: কির বুলিচেভ, Yvonne Howell, Russian Life Books প্রকাশনা
Tags: কির বুলিচেভ, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য, দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা, দ্বিশতবর্ষজয়ন্তী, রাশিয়ান অনুবাদ গল্প, সুমন চট্টোপাধ্যায়
অনেক ধন্যবাদ, এই অসাধারণ গল্পটি পড়ানোর জন্য। মুল গল্পটি নিয়ে কিছু বলার নেই। গ্রেট মাস্টারের লেখা মাস্টারপিস। অনুবাদ অসামান্য বললেও কম বলা হয়। কল্পবিশ্ব জিন্দাবাদ।
দারুণ লাগলো। গল্প আর অনুবাদ, দুই অসাধারণ।