নীল গিনিপিগ
লেখক: শীলা বিশ্বাস
শিল্পী: তৃষা আঢ্য
(১)
গ্রীষ্মের দাবদাহে শহরবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিছু বছর আগেও কলকাতায় এত গরম শোনা যেত না। টেম্পারেচারের পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে। ঘরে এসি লাগানো এখন আর বিলাসিতা নয়। কৃষ্ণেন্দুদের দমদমের কলোনি এলাকাতেও এখন ফিনান্সে লোকে এসি কিনছে। কৃষ্ণেন্দু সামনের মাসে মাইনে পেলে এসি কিনবে। রাতে কোনওরকমে হাঁসফাঁস করতে করতে ঘুমানো। ভোর পাঁচটায় মোবাইলে অ্যালার্ম বেল। পর পর দুটো স্নুজ করে তৃতীয় বেলে ওঠা। বেশি দেরি করা যাবে না। রোদ উঠে গেলে মর্নিং ওয়াক হয় না। ঘুম থেকে উঠে মিনিট দশেকের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ল। গেট খুলতেই চোখে পড়ল একটা জটলা। লোকের চোখে মুখে তখন উত্তেজনার ভাব। জটলার মধ্যে থেকে নানারকম জল্পনাকল্পনা ভেসে আসছে।
নারানদা বলছে, ‘একটা মরা খালে ভেসে এসেছে… মনে হচ্ছে যেন ঘুমিয়ে আছে।’
ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতেই লক্ষ করল একটা ডেডবডি। গায়ের রং অদ্ভুত নীল। বছর পঁচিশের একজন যুবকের দেহ। চেহারায় কোনও বিকৃতি দেখা যাচ্ছে না। বিবস্ত্র। কেউ যেন আশপাশ থেকে কোমরের কাছে একখণ্ড কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। ভিড় দেখে পাড়ার বউ মেয়েরাও ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে।
রানু বলল, ‘কোনও এলিয়েন নয় তো? আমি টেলিভিশনে নীল এলিয়েনের সিনেমা দেখেছি।’
রানুর মা চুপ করিয়ে দিয়ে বলল, ‘তোর যত আজগুবি কথা। দেখেছিস কেমন কৃষ্ণ ঠাকুরের মতো গায়ের রং। একটা বাঁশি থাকলেই…।’
পাড়ার সবার দাদা সঞ্জয়দা তিনিও চলে এসেছেন, ‘সবাই সরে যান, আমি দেখছি’ বলেই পকেট থেকে মোবাইল বের করে লোকাল থানায় ফোন করলেন। জটলা ক্রমে বাড়ছে। কিছু সময় বাদে পুলিশ ভ্যান এসে থামল। তড়িঘড়ি জায়গা খালি করে দেওয়া হল। পুলিশ অফিসার তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে নেমে এলেন। পুলিশ দেখে এলাকায় আরও ভিড় বেড়ে গেল। পুলিশ ভিড় ও ডেডবডি সামলাতে তৎপর। কৃষ্ণেন্দুর মর্নিং ওয়াক তো হলই না, ডিউটি কখন যাবে বুঝতে পারছে না। কাল একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ এসে গেছে। সারা কলকাতা ঘুরে ঘুরে কাজ। এই গরমে সব এসিগুলো যেন একইসঙ্গে খারাপ হতে হল।
(২)
মিঃ অভিকর্ষ দত্ত মুম্বাইয়ের একটি মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানীর সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার। ক্লিনিক্যাল রিসার্চ উইংয়ের তদারকিতে আছেন। সকলেই বেশ স্যার স্যার করে। দিল্লীর একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টক্সিকোলজিতে মাস্টার্স করেছেন। বিফার্ম কোর্সটা বেশ কাজে লাগছে এখন। বিটেক করার সময় অনেকেই এই সাবজেক্ট নিতে নিরুৎসাহিত করেছিল, বলেছিল চাকরীর বাজার নেই। এখন অভিকর্ষ তার অনেক বন্ধুদের তুলনায় ভালো চাকরি করছে বলে ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছে। চেহারাও আকর্ষণীয়, ফর্সা, একগাল চাপদাড়ি। স্যুটেড বুটেড হয়ে থাকে আর ইংরাজিটাও ফ্লুয়েন্ট বলে। সপ্তাহে একবার ফ্লাইটে কলকাতা-মুম্বাই করতে হয়। মুম্বাইয়ের অফিস তো ঝাঁ চকচকে। অনেকগুলো ডিপার্টমেন্টে ভাগ করা আছে। সব কিছু যদি ঠিক থাকে ঋদ্ধিমাকে নিয়ে সামনের অগ্রহায়নেই কোম্পানীর দেওয়া ফারনিশড ফ্ল্যাটে উঠতে পারবে। ঋদ্ধিমাকে পেয়ে অভিকর্ষ খুব হ্যাপী। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অনেক ছেলেই ঋদ্ধিমার পেছনে ঘুর ঘুর করত। ঋদ্ধিমার কিন্তু অভিকর্ষকেই পছন্দ ছিল। সেটা অবশ্যই অভিকর্ষের ঝকঝকে চেহারা আর স্মার্টনেসের জন্য।
তখন সন্ধে সাতটা। আইএমও তে ঢুকে পড়ল দুটো মানুষ। এক সন্ধে থেকে আরেক সন্ধেতে দুজন দুজনকে রূপের আলো ছড়িয়ে নতুন করে দেখে। অ্যাণ্ড্রয়েডের স্ক্রীন জুড়ে ঋদ্ধিমা।
–রিধি তুমি মুম্বাইতে চলে এস। এখানে তোমার চাকরি পেতে কোনও অসুবিধা নেই।
–তুমি বললেই হল। এখানের অসুবিধে তুমি বোঝ তো। দু একমাসের মধ্যেই আশা করি কাজগুলো গুছিয়ে নিতে পারবো। সম্পত্তির একটা ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত…। আর তা ছাড়া আমার এই অনলাইন কাজে বাড়িতে বসেই যখন কোম্পানীর ম্যানেজার হওয়া যায়। তখন অসুবিধে কোথায়?
–তুমি যা ভালো বোঝ। মাত্র দু’মাস সময় তার মধ্যে… আচ্ছা এবার কাজের কথায় আসি, মুম্বাই থেকে মাল যাচ্ছে, ট্রান্সিটে আছে। ইনভয়েস আমি মেইল করে দিচ্ছি। মানসকে বলা আছে, দেখো একটু।
অভিকর্ষের দক্ষিণ কলকাতার অফিসটা ছোট। চারজন স্টাফ। অভিকর্ষ যখন কাজের চাপে মুম্বাই থেকে আসতে পারে না তখন সব সামলায় ওর ছেলেবেলার বন্ধু মানস। মানস অভিকর্ষের সঙ্গেই ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়ে ছিল। বাবা মারা যাওয়ায় মানসকে সংসারের হাল ধরতে হয়। পড়াশুনা ওই উচ্চমাধ্যমিক। অভিকর্ষের সঙ্গে থাকতে থাকতে অভিজ্ঞতায় এখন বন্ধুকে ছাড়িয়ে যায়। মেডিসিনের কাজকর্ম মানস সামলে দেয়। ল্যাবের কাজও মানস সামলাতে পারে। ঋদ্ধিমা ছাড়া সেখানে কারোর প্রবেশ নিষেধ। অভিকর্ষ কলকাতায় এলে অফিসের চেহারা বদলে যায়। মুম্বাইয়ের অফিসের মতো করে এখানে কাজ করতে চায়। মানসও চেষ্টা করে অভিকর্ষকে খুশি রাখতে। নিজের হাতেই ফলের রস টেবিলে দিয়ে রাখে। টাইমে টাইমে চা জলখাবারের ব্যবস্থা রাখে। দরকারি জিনিসপত্র হাতের কাছে গুছিয়ে রাখার কাজটা সানন্দে করে ।
(৩)
আজ অনেকদিন বাদে ঋদ্ধিমা মানস মখোমুখি। কলেজ শুরুর দিনগুলোতে অভিকর্ষের সঙ্গে মানসকে কয়েকবার দেখেছিল। এখন কাজের সূত্রে অনেক কাছাকাছি এসে গেছে। দুজনেই ফাইল নিয়ে দুটো পাশাপাশি চেয়ারে।
ঋদ্ধিমা পাশে রাখা সংবাদপত্র টেনে নিয়ে পাতা ওলটাতে ওলটাতে বলল, ‘মানসদা আজকে পেপারে দেখেছ শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ধুন্ধুমার কাণ্ড নার্সিং হোমে। দু-বছরের শিশুকে নাকের ড্রপ দেওয়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানীর মালিক ও ডাক্তার গ্রেফতার।’
মানস মাথা নেড়ে বলল, ‘হুঁ, ড্রপের মধ্যে কলোডিয়াল সিলভার থাকে। বেশি পরিমানে শরীরে গেলে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়। এ রোগের নাম আরজিরিয়া। রোগের ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয়নি, গবেষণা চলছে।’
ঋদ্ধিমা অবাক হয়ে বলল, ‘মানসদা তুমি তো দেখছি অভির থেকে বেশি খবর রাখো।’
মানস হেসে বলল, ‘আরে অভির মতো তো আমি ব্যস্ত নই। অফিসে যত পিরিয়োডিক্যাল নেওয়া হয় সব খুঁটিয়ে দেখার অভ্যেস আমার আছে। তার থেকেই তো এত জানতে পারি।’
ঋদ্ধিমা বলল, ‘অভির তাহলে পিরিয়োডিক্যাল নেওয়া সার্থক।’
ঋদ্ধিমাকে যে অভি সবকিছু বলে না বুঝতে পেরে মানস বেশ খুশি হল। এরপর দুজনেই কাজে মন দেয়।
কাজ শেষ করে ঋদ্ধিমা উঠতে যাবে মানস বলে উঠল, ‘আরেকটু বসবে? তোমার সঙ্গে কথা আছে…।’
ঋদ্ধিমা অস্বস্তি বোধ করে। অভিরও পছন্দ না মানসের সঙ্গে কাজের কথা ছাড়া আড্ডা দেওয়া।
মানসকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে বলে, ‘মানসদা মায়ের শরীর ভালো নেই। অভি কাজের কথা বলল তাই আজ আসা, নাহলে আসতাম না। অভি এলে না হয় একদিন জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।’ একথা বলেই সেদিন বালিগঞ্জের অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে ঋদ্ধিমা।
পরের দিনে ঋদ্ধিমা আবার আসে অফিসে ট্রান্সিটের গুডস রিসিভ করতে। সেদিন মানসের বিহেভিয়ারে কিছু পরিবর্তন দেখল। ঋদ্ধিমা জানে মানসের ড্রিংক করার অভ্যাস আছে। কিন্তু আজ যেন মাত্রাতিরিক্ত। কাজ শেষ করে উঠতে যাবে ঋদ্ধিমা এমন সময় মানস ঋদ্ধিমার হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
হঠাৎ চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আজ তোমাকে উত্তর দিতে হবে। আমি অনেক দিনে অপেক্ষা করে আছি তোমার উত্তরের জন্য… বল বল …। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না ঋদ্ধিমা।’
ঋদ্ধিমা হতচকিত হয়ে চেঁচিয়ে বলে, ‘কি হচ্ছে কি? দাঁড়াও অভি এলে আমি সব বলব, ছাড় হাত…।’ কোনওরকমে হাত ছাড়িয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে ঋদ্ধিমা।
(৪)
কৃষ্ণেন্দু বালিগঞ্জ স্টেশন রোডে বাড়ির নম্বর মেলাতে এসে পৌঁছে গেছে ঠিক জায়গায়। নেমপ্লেট মিলিয়ে নিল। মিঃ অভিকর্ষ দত্ত, নিচে মানস সরকার। ডোর বেল বাজাতেই একজন সিকিউরিটি গার্ড দরজা খুলে দিল। ঘুপচি মতো সরু অন্ধকার জায়গায় কোনওরকম একটা লোহার সিঁড়ি। সেটার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করল সিকিউরিটি গার্ড। কৃষ্ণেন্দু আস্তে আস্তে উপরে উঠে এল। উপরে ওঠার সময় নাকে একটা ঝাঁঝাল তীব্র গন্ধ পেল। নাকে রুমাল চাপা দেবে কি না ভাবছিল হঠাৎ ভেতর থেকে একজন ল্যাবকোট পড়া দোহারা গড়নের লোক কৃষ্ণেন্দুকে ভেতরে আসতে বললেন। ঘরটার একটি মাত্র জানলা তাও বন্ধ। জানলার সামনেটা অনেক কারটুন পড়ে আছে, চারিদিকে টেস্টটিউব বার্নার, কাচের শিশিও পড়ে আছে।
কৃষ্ণেন্দু নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, ‘মানস সরকার কি আপনি? মানে এই ফোন নম্বরটা আপনারই তো। আমি ইলেকট্রো এজেন্সি থেকে এসেছি, এসি সারভিসিংয়ের ব্যাপারে। মানস মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ভেতরে আসতে বলে।
দেয়ালে এসি মেশিনটা দেখিয়ে বলল, ‘চার-পাঁচ দিন হল এসিটা চালালে ঘর ঠান্ডা হচ্ছে না। একটু দেখে দিন।’
কৃষ্ণেন্দু কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাটি করে বলল, ‘কিছু না ড্রাই ওয়াশ করে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। কোম্পানীর রেট ছ’শো টাকা। আমায় সরাসরি ডাকলে একটু কমে করে দিই। এখন আমি করে দিচ্ছি কোম্পানীর রশিদে। আমার মোবাইল নাম্বারটা রেখে দিন। পরে কখনও দরকার পড়লে ডাকবেন।’
মানস ফোন নাম্বারটা কল লিস্টে সেভ করে নিল। মেশিন চেক করতে গিয়ে কৃষ্ণেন্দুকে ছাদে উঠতে হয়। ছাদ থেকে দেখল বাড়িটার ভিতরদিকে বেশ কিছু মেশিনারি চলে যেগুলো বাইরে থেকে দেখলে ঠিক বোঝা যায় না। সেদিনকার মতো কাজ শেষ করে চলে যায় কৃষ্ণেন্দু।
মাস চারেক বাদে কৃষ্ণেন্দুর মোবাইলে রাত এগারোটার সময় হঠাৎ একটা ফোন। নামটা ভেসে উঠল মানস সরকার। ‘কৃষ্ণেন্দুবাবু আপনাকে একটু কাল সকালে আমাদের বালিগঞ্জের অফিসে একটু আসতে হবে, আমাদের আরেকটা এসি মেশিন একটু দেখে দিতে হবে, একটু তাড়াতাড়ি এলে ভাল হয়।’
কৃষ্ণেন্দুর উত্তর, ‘ঠিক আছে, কাল দশটার মধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করব।’
বালিগঞ্জ যখন এসে পৌঁছল প্রায় এগারোটা। এবারে সোজা ওপরে উঠে এল। একটু পরিবর্তন চোখে পড়ল, আগেরবার যেটা জানলা ভেবেছিল আসলে সেটা একটি দরজা। দরজাটি খোলা, ভেতরে ছোট এক ফালি জায়গা প্রায় বারান্দা সাইজ, সেখানে একটা টেবিল, চেয়ার ও বেশ কিছু শিশি। তাতে নানারকম রঙিন রাসায়নিক তরল রাখা আছে। রূপালি রঙের। টেবিলের উপর রূপালি ধূলো। ব্রাশ দিয়ে গুছিয়ে রাখতে রাখতে একজন চাপ দাড়িওয়ালা সুদর্শন ব্যক্তি কৃষ্ণেন্দুকে বললেন, ‘আপনি এত দেরি করলেন? যাইহোক বহু পুরানো একটা এসি মেশিন এবার বিগড়েছে, একটু দেখুন।’
কৃষ্ণেন্দু কিছুক্ষন দেখে বলল, ‘গ্যাস ভরলে ঠিক হয়ে যাবে। আগামীকাল গাস ভরে নিয়ে আসব। এই রকম সময় যদি আসি তাহলে সুবিধা হয়।’
ভদ্রলোক হাসিমুখে বললেন, ‘ওকে ওকে, আপনার সময়মতো আসুন।’ এক গ্লাস জল চাইতে ভদ্রলোক কৃষ্ণেন্দু্কে সরবত ঢেলে দিলেন গ্লাসে। কৃষ্ণেন্দু্ বুঝল এই তাহলে মালিক মিঃ অভিকর্ষ যার নাম বাইরে নেমপ্লেটে আছে।
(৫)
অভিকর্ষ মুম্বাই থেকে ফিরেছে আজ সকালেই। মনে বেশ স্ফূর্তি। ঋদ্ধিমাকে ক’দিন কাছে পাওয়া যাবে। এবারে বিয়ের দিন ফাইনাল করে মুম্বাই ফিরবে এরকম ভাবনা মনের মধ্যে। মানসের কাছে বুঝে নেয় কাজকর্মের হিসাব। মানস যেন অভিকর্ষের কাছে কিছু লুকোচ্ছে। চোখে চোখ রেখে কথা বলছে না। ট্রান্সিটের গুডস রিসিভ করেছে ঋদ্ধিমা। ঠিকঠাক অবস্থায় ছিল। অভিকর্ষ লক্ষ করল কার্টুনটা ও আসার আগেই খোলা হয়েছে। যা আগে কখনও হয়নি। ঋদ্ধিমারও কোনও পাত্তা নেই। হঠাৎ শরীর খারাপ জানিয়ে ক’দিন আইএমওতেও আসেনি। নিজের কম্পিউটার খুলে সব চেক করে পুরানো পাসওয়ার্ড চেঞ্জ অপশনে গিয়ে চেঞ্জ করে নিল অভিকর্ষ। সন্দেহ ঘনীভূত হল মানসের উপর। তবে কি মানস সব বুঝে ফেলল। অভিকর্ষের কপালে চিন্তার ভাঁজ। মানসকে সব কিছু জানতে দেওয়া যাবে না। আরজিরিয়ার ওষুধ আবিষ্কারের কৃতিত্ব একা অভিকর্ষেরই প্রাপ্য। কিছুদিনের মধ্যে অঘটন কিছু হতে যাচ্ছে। সমস্ত কাগজ জমা দেওয়া হয়ে গেছে। ঋদ্ধিমাকেও সব কথা খুলে বলেনি। সারপ্রাইস দেবার ইচ্ছা ছিল ওকে। মানসের কিছু অবদান থাকলেও এই মুহূর্তে স্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। মানস একজন অধঃস্তন কর্মচারী মাত্র, তার বেশি তো নয়। পাহাড়ের শীর্ষে ওঠার সময় শেরপারা সাহায্য করে তাই বলে কি শিখর ছোঁয়ার কৃতিত্ব ওদের দেওয়া যায়? ফুরফুরে মনটাতে এখন অজানা ভয়। গভীর চিন্তার ভাঁজ কপালে প্রস্ফুট হয়ে উঠল।
(৬)
কৃষ্ণেন্দুর আজ অনেক দেরি হয়ে গেল। গ্যাস ভরার কাজটা খুব আর্জেন্ট ছিল। কি করবে পাড়ায় এরকম একটা ঘটনা। কৃষ্ণেন্দুর কিছু করার নেই।
বালিগঞ্জের অফিসে পৌঁছে কৃষ্ণেন্দু ডোর বেল টিপতেই সিকিউরিটি গার্ড বেরিয়ে এসে বলল, ‘আপনাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেছেন।’
কৃষ্ণেন্দু বলল, ‘দেখুন আমাকে তো আরও অনেক বাড়ি যেতে হবে…।’
‘কাল আপনি চলে যাওয়ার পর থেকে এই দরজা আর খোলেনি। গতকাল আমাকে শুধু একটা চিঠি দিয়ে ছোট স্যার বলেছিলেন খামের উপরের ঠিকানায় আজ যেন চিঠিটা দিয়ে আসি।’
‘তুমি খবর নিলে না এতক্ষন দরজা খুলছে না …’
‘পেছনের দিকে একটা দরজা আছে। তবে সেটা সবসময় খোলা হয় না। ভেতরে আমার যাওয়া নিষেধ।’
অগত্যা কৃষ্ণেন্দু কাছাকাছি দোকানে চা সিগারেট খেয়ে কিছু সময় কাটাবে বলে ঠিক করল। চা দোকানে বসে একটা সংবাদপত্রে চোখ বোলাতে বোলাতে দেখল দোকানদার চা দিয়ে গেছে। চায়ের কাপটা মুখে দিতে যাবে হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠল গোটা এলাকা। পিছনে তাকিয়ে কৃষ্ণেন্দু দেখে ওই সিকিউরিটি গার্ড আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে করতে ছুটে আসছে। আশেপাশের মানুষ হতচকিত হয়ে বেরিয়ে পড়েছে। কেউ কেউ ‘দমকল ডাক’ বলে চেঁচাতে লাগল। কেউ কেউ জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে লাগল। হই হই কাণ্ড। কিছুক্ষনের মধ্যে একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে থামল। একজন মহিলা উদ্ভ্রান্তের মতো নেমে এল। হাতে একটা খাম।
‘সব শেষ হয়ে গেল’ বলে চিৎকার করতে করতে ছুটতে লাগলেন। হাত থেকে অজান্তে খামটা নিচে পড়ে গেল। কৃষ্ণেন্দু দেখে খামের উপর ঋদ্ধিমা আর নিচের দিকে মানস সরকার লেখা আছে। কৌতুহলবশতঃ চিঠিটা খাম থেকে খুলে লেখার দিকে এক ঝলক তাকাতেই বুঝতে পারে এটা একটা সুইসাইডাল নোট। লেখাটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলে কৃষ্ণেন্দু। তাতে লেখা…
‘…আমি অভিকে মারতে চাইনি। আমাদের আবিষ্কার স্বীকৃতি পেলেও আমার নাম হয়তো কোথাও থাকতো না। আমি তোমাকেও এ জীবনে পেলাম না। আবিষ্কারের শেষ পর্যায়ে অ্যান্টিডোটটা কোনও না কোনও মানুষের উপর প্রয়োগ করতে হত। হয়তো আমিই গিনিপিগ হতাম। আমি গিনিপিগ হওয়ার আগে ওকেই গিনিপিগ বানাতে চেয়েছিলাম। সফল হলে ওষুধ বানানোর পেটেন্ট পেতাম আমরা। শুধুমাত্র কর্মচারীর পরিচয় থেকে মুক্তি পেতে আর তোমার যোগ্য হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম। আমি ওর ফলের রসে কলোডিয়াল সিলভার মিশিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু ভুল করে অতিরিক্ত পরিমানে মিশিয়ে ফেলেছিলাম। তাই ওষুধটা ঠিকঠাক কাজ করেনি। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ওকে মারতে চাইনি। ওষুধের মাত্রা বেশি হওয়ায় ওর গায়ের রঙ নীল হয়ে গেছিল। ওকে যাতে কেউ চিনতে না পারে তাই ওর দাড়ি কেটে খালের জলে ভাসিয়ে দিয়েছি। ভেবেছিলাম ও নিখোঁজ থাকলে তোমাকে অন্তত পাবো। কিন্তু না নিজের সঙ্গে আর যুদ্ধ করতে পারলাম না। গবেষণার যাবতীয় তথ্য খামের সঙ্গে এই সিডিটাতে তোলা আছে। অসমাপ্ত কাজের ভার তোমাকে দিয়ে গেলাম… ইতি মানস।’
Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, চতুর্থ বর্ষ প্রথম সংখ্যা, তৃষা আঢ্য, শীলা বিশ্বাস
ভালো।
bah, tomar godder haat to besh valo. valo laglo galpota.
ধন্যবাদ
ভালো লাগলো… কিছুটা predicted… Overall ভালো লাগলো
মতামতের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। শুভ নববর্ষ ।
Thik sc-fi holo na…golpou sei chena chhok theke berolo na…