পাঁচটি গোল্ডেন এজ সায়েন্স ফিকশন
লেখক: কুণাল কর্মকার
শিল্পী: মূল প্রচ্ছদ
দ্য মার্সি়য়ান ওয়ে – আইজাক আসিমভ
১৯৫২-র নভেম্বর মাসের Galaxy Science fiction পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসিকাটি৷ আসিমভ, ম্যাকার্থির কম্যুনিস্টবিরোধী অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ লিখেছিলেন গল্পটি৷
পৃথিবী ও মঙ্গলের মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে৷ জন হিল্ডার নামের এক রাজনৈতিক নেতার মতে শুক্র, মঙ্গল ও চাঁদের কলোনীগুলো, পৃথিবীর জলসম্পদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপসৃষ্টি করছে, তাই জল পাঠানো বন্ধ করতে হবে৷ ফলস্বরূপ, পৃথিবী থেকে জলের জোগান কমতে থাকে মঙ্গলে৷ রকেট জ্বালানী হিসেবেও জল অপরিহার্য৷ মঙ্গলবাসী বুঝতে পারে যে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী থেকে আর জল পাওয়া যাবে না৷ মঙ্গলের নেতা হ্যামিশ সারকভ ঠিক করলেন শনি গ্রহের বলয়ের থেকে, বরফের চাঙড় নিয়ে আসতে হবে, আর সেই উদ্দেশে পাঠানো হল ২৫টি মহাকাশযান৷ মঙ্গল কি পারল জলের ব্যবস্থা করতে, স্বাধীনতা বজায় রাখতে? জানতে হলে তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলুন, টানটান গল্পটি৷
ফন্ডলী ফারেনহাইট – অ্যালফ্রেড বেস্টার
পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তি ওড়াতে বেশি সময় নেয়নি বড়লোকের বখাটে ছেলে জেমস ভ্যান্ডালিউর৷ শেষ সম্বল বলতে একটি দামি অ্যান্ড্রয়েড যাকে ভাড়া খাটিয়ে তার দিন চলে৷ কোনও গ্রহেই তারা বেশিদিন টিকতে পারে না৷ এক গ্রহের একটি খুন হয়ে যাওয়া শিশুর নখের তলায় যদি অ্যান্ড্রয়েড রক্ত পাওয়া, তবে আরেক গ্রহের মহিলাকে খুন করা হয় গালাই সোনা ঢেলে৷ তারা পালাতে থাকে গ্রহ-গ্রহান্তরে৷ হত্যালীলা তাদের পিছু ছাড়ে না যতক্ষণ না অনিবার্যভাবেই মৃত্যু হয় দুজনের, আর তারপরই গল্পে অসাধারণ এক ট্যুইস্ট৷ খুনগুলো করছিল কে? কে কার সত্তার দখল নিয়েছিল, কিংবা আদৌ তেমন কিছু ঘটেনি, গল্পের কথকই বা কে? পড়তে গিয়ে এডগার অ্যালান পো-র মনস্তাত্বিক ভয়ের গল্পগুলির কথা মনে পড়বে৷
গল্পটি The Magazine Of Fantasy & Science-fiction ১৯৫৪-র অগাস্ট সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়৷ ১৯৯৯ সালে গল্পটি Locus’s poll for the best novelette of all time এ চতুর্থ স্থান দখল করে৷
ফার্স্ট কন্ট্যাক্ট – মারে ল্যান্সটার (উইলিয়াম ফিটসজেরাল্ড জেনকিনস)
১৯৪৫ সালে Astounding Science-fiction প্রকাশিত উপন্যাসিকা, দুটি প্রযু্ক্তিগতভাবে সমমানের সভ্যতার প্রথম সাক্ষাতের গল্প৷ First Contact শব্দটির ব্যবহার এই গল্পটিতেই প্রথম৷
আলোর চেয়ে দ্রুততর গবেষণাযান ‘ল্যানভাবন’ র সঙ্গে ক্র্যাব নীহারিকার কাছে হঠাৎই সাক্ষাত হয়ে যায় ভিনগ্রহী এক যানের৷ প্রথম সাক্ষাতে কেউ কাউকে এক চুলও জায়গা ছাড়তে রাজি নয়৷ পশ্চাদপসরন করে ফিরে যেতেও রাজি নয় কোনও পক্ষ, ভয় যদি একজন অনুসরণ করে অপরের গ্রহ আবিষ্কার করে বসে৷ একে অপরকে বিনা কারনে আক্রমণ করতেও কেউ চায় না৷ এই অচলাবস্থা কাটাতে দুই প্রজাতির দুই সদস্য আলোচনা শুরু করে৷ জানা যায় ভিনগ্রহীরা মানবাকৃতির হলেও নিজেদের মধ্যে তারা কথোপকথন চালায় মাইক্রোওয়েভে, আর দৃষ্টিশক্তি ইনফ্রারেড নির্ভর৷
কৃত্রিম যন্ত্রের সাহায্যে বার্তালাপ শুরু হওযার পরে দেখা যায় দুই সভ্যতায় অনেক মিল, কিন্তু সন্দেহ যায় না৷ কীভাবে বন্ধুত্ব স্থাপন হল এই পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরনে, সেটাই গল্পের মূল উপজীব্য৷
গল্পটিকে গোল্ডেন এজ সায়েন্স ফিকশানের একটি ক্লাসিক উদাহরণ হিসাবে ধরা হয়৷ কী নেই গল্পটিতে—ওভারড্রাইভ, কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণ, পরমাণুশক্তিচালিত স্পেস স্যুট, এমনকি Universal Translator-র প্রথম উল্লেখও৷
১৯৭০ সালে Science fiction writers of America গল্পটিকে নেবুলা পুরস্কার পূর্ববর্তী যুগের অন্যতম সেরার স্বীকৃতি দিয়েছে৷ সেরার সেরা হিসেবে স্থান পেয়েছে The Science-fiction hall of fame Vol.1 (1929-1964) এ৷ ১৯৯৬ সালে গল্পটি Retro Nebula Award এ ভূষিত হয়৷
লেস্ট ডার্কনেস ফল – এল স্প্রেগ দ্য্ ক্যাম্প
এই উপন্যাসটিকে একান্তর ইতিহাস (Alternate-History) কল্পবিজ্ঞান জনরার পথিকৃৎ হিসাবে ধরা হয়৷ ১৯৩৯-র ডিসেম্বর মাসের Unknown পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ করলেও, ১৯৪১ এ সম্পূর্ণ উপন্যাসরূপে প্রকাশিত হয়৷
গল্পের নায়ক পুরাতাত্বিক, মার্টিন প্যাডওয়ে৷ ১৯৩৮ সালে রোমের প্যান্থিয়ন ঘুরতে এসে প্রবল বজ্রঝড়ের কবলে পরে হঠাৎই তিনি পৌঁছে যান ৫৩৫ খৃষ্টাব্দের রোমে৷ শুরু হতে চলেছে গথিক যুদ্ধ যার ফলস্বরূপ ইউরোপ নিমজ্জ্বিত হবে অন্ধকার যুগে৷ পূর্ব-রোমান সাম্রাজ্যাধিপতি জাস্টিনিয়ন ১, অস্ট্রোগথদের হাত থেকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য ছিনিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর৷ মার্টিনের পড়াশোনা এই সময়কালের ওপরেই, রোমান যুদ্ধকৌশলের ওপর তার অগাধ জ্ঞান৷
অস্ট্রোগথদের সুষ্ঠ শাসনব্যবস্থার ওপর আস্থা রেখে নায়ক নেমে পড়লেন অন্ধকারকে আটকাতে৷ শাসকগোষ্ঠির কাছের মানুষ হবার তাগিদে শুরু করলেন ব্র্যান্ডি তৈরি করার ব্যবসা৷ করনিকদের শিখিয়ে দিলেন আরবী সংখ্যাসমূহ এবং দোহারা লিখন (double entry) হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি৷ ছাপার অক্ষর প্রবর্তনের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্রথম সংবাদপত্র৷ Semaphore Telegraphy-র প্রবর্তন করে পুরো সাম্রাজ্যর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আনলেন বিপ্লব৷
এদিকে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, পূর্ব রোমান বাহিনী দখল নিয়েছে দক্ষিন ইতালির৷ মার্টিনের সাহায্যে রাজা থিউডাহাড সমস্ত গথদের ঐক্যবদ্ধ করে, রোমান সেনাপতি বেলিসারিয়াসকে পরাজিত করলেন৷ মার্টিন এরপর বেলিসারিয়াসকে দলে টেনে, তারই সেনাপতিত্বে, সাম্রাজ্যের পশ্চিমে, ওঁত পেতে থাকা ফ্র্যাঙ্কদের পরাজিত করে, পত্তন করলেন এক ইতালো-গথিক রাস্ট্র যেখানে ক্রীতদাস নেই, আছে এক সংবিধান যা স্বীকৃতি দিচ্ছে ধার্মিক স্বাধীনতার এবং নিশ্চিত করছে সার্বজনিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য৷ ফলত, ইউরোপে আর অন্ধকার যুগ এলই না, বরঞ্চ জাগরণের সময়কাল এগিয়ে গেল প্রায় এগারোশো বছর৷
মার্টিন প্যাডওয়ে মাঝে আর কী কী করেছিলেন? গল্পের শেষেই বা কী করলেন? নিজের সময়ে ফিরতে পারলেন, না থেকে গেলেন পুরোনো রোমে? সব উত্তর জানতে গেলে পড়তেই হবে এই জনরার অন্যতম সেরা লেখাটি৷ পথিকৃৎ হিসেবেই নয়,গল্পের নিরিখেও এটি অবশ্যপাঠ্য৷
অ্যাট দ্য মাউন্টেন অব ম্যাডনেস – এইচ পি লাভক্র্যাফট
ভয়াল কল্পবিজ্ঞান (Horror Science fiction) জনরার এই অসাধারণ উপন্যাসিকাটি ১৯৩১ সালে লেখা হলেও, তিন ভাগে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ এর Astounding Stories পত্রিকায়৷
কাহিনির কথক ভূতত্ববিদ এবং মিস্কাটনিক ইউনিভার্সিটির দক্ষিণমেরু অভিযানের অধিনায়ক উইলিয়াম ডায়ার৷ গল্পটি তার কাতর মিনতি, আন্টার্কটিকায় যেন আর কোনও অভিযাত্রীদল পাঠানো না হয়, কারণ তাতে ফল হবে আরও ভয়ংকর৷
১৯৩০-র অত্যাধুনিক যন্ত্রে সুসজ্জিত দক্ষিণ মেরু অভিযানে, এক অজানা সভ্যতার বিশালকায় এক শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়৷ জমে থাকা কিছু অদ্ভুতদর্শন প্রাণীর খোঁজও পাওয়া যায়, সেগুলি না জীব না উদ্ভিদ৷ শুরু হয় হত্যালীলা, অভিযাত্রীদের মধ্যে ভয় দানা বাঁধতে থাকে, জমে যাওয়া প্রাণীগুলি বুঝি জেগে উঠেছে৷ অভিযাত্রীদলের অবশিষ্ট সদস্যরা ভগ্নস্তূপের মধ্যে খুঁজতে থাকে উত্তর৷
দেয়ালের চিত্রলিপির পাঠোদ্ধারে জানা যায়, এল্ডার থিংস নামক একটি প্রজাতি পৃথিবীর ঊষাকালে এই নগরের পত্তন করে; সগথ নামক আকার পরিবর্তনশীল প্রাণীরা ছিল তাদের ক্রীতদাস৷
তারপর একসময় এল্ডারদের সঙ্গে কুথুলু আর মিগোর যুদ্ধ বাধে৷ কে বা কারা যুদ্ধে জিতেছিল কে জানে, তবে এল্ডারসভ্যতার পতন হয়েছিল সগথ ক্রীতদাসদের হাতেই৷ ইতিমধ্যে অবশিষ্ট অভিযাত্রীরা একটি গুহার মধ্যে সম্মুখীন হয় কালো জেলির মতো এক প্রাণীর, সগথ৷ অজান্তেই তারা জাগিয়ে তুলেছে এমন এক প্রাগৈতিহাসিক জীবকে যার হাত থেকে নিস্তার নেই কারুর৷
Tags: কুণাল কর্মকার, গ্রন্থ পরিচিতি, পঞ্চম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, মূল প্রচ্ছদ
সবক’টা লেখাই পড়েছি— এ আমার সবিশেষ শ্লাঘার বিষয়!
পাঠকরা ফন্ডলি ফ্যারেনহাইট গল্পটি কল্পবিশ্বেই পড়তে পারেন বাংলায় , সৌমেন চ্যাটার্জির অনুবাদে। বেস্টার দিয়ে সার্চ করলেই পাবেন। অনূদিত গল্পটির নাম “বাতাসে মৃত্যুর ফাঁদ”।
বেশ লাগল রিভিউগুলি ।