প্রসঙ্গঃ অদ্রীশ বর্ধন
লেখক: সন্তু বাগ
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)
১৯৩২ সালের ১লা ডিসেম্বর কলকাতায় এক শিক্ষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন অদ্রীশ বর্ধন। বাবা অনিল বর্ধন পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক আর স্বামী বিবেকানন্দের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ ঠাকুরদা চন্ডীচরণ বর্ধন কলকাতার বউবাজারে সার্পেন্টাইন লেনে হিন্দু বয়েজ স্কুল নামে একটি বিদ্যালয় চালাতেন। ঠাকুরদার প্রতিষ্ঠিত স্কুলেই অদ্রীশ বর্ধনের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ হয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ‘মণিমালা’ নামক এক ব্রতচারী দলের সাথে যুক্ত ছিলেন, এখানে কাজ করেছিলেন বিমলচন্দ্র ঘোষ ওরফে ‘মৌমাছি’র সাথে। ডিস্টিংশন নিয়ে তিনি বি এস সি পাস করেন। স্কটল্যান্ডে ‘জুট টেকনোলজি’ পড়ার যোগ্যতা দেখিয়েও বঞ্চিত হন তিনি, তারপরেই ঝাঁপিয়ে পড়েন কর্মজীবনে।
ছোটবেলা থেকেই তাঁর অজানার প্রতি ছিল দুর্নিবার আকর্ষণ। শিবরাম চক্রবর্তীর “বাড়ি থেকে পালিয়ে” পড়ে অ্যাডভেঞ্চারের টানে কুড়ি বছর বয়সে পালিয়ে গিয়ে পৌঁছেছিলেন বোম্বে শহরে। বোম্বেতে নানা জায়গায় নানা রকম চাকরি করে শেষে ঢোকেন ‘ক্যালকাটা কেমিক্যালে’। পোস্টিং হয় ব্যাঙ্গালোরে। থাকতেন ব্যাঙ্গালোরের গান্ধীনগরে আর কর্মসূত্রে ঘোরাফেরা করতেন দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। সেই সময়েই মূলত তিনি লেখালিখি শুরু করেন অবসর সময় কাটাতে। তৎকালীন আর পাঁচটা ছাপোষা মধ্যবিত্তের মত জীবন তিনি চাননি, তাই বৈচিত্রের আকর্ষনে বারবার চাকরি পরিবর্তন করে শেষে পৌঁছেছিলেন নামী একটি প্রতিষ্ঠানের পারচেজ ম্যানেজার ও ডিরেক্টরের বিশেষ সচিব পদে। অবশ্য অবসর নেবার বহু আগেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে তিনি ফিরে আসেন কলকাতায়।
অদ্রীশ বর্ধনের লেটার হেড এর অংশবিশেষ
এবার আর অন্যের চাকুরিগিরি নয়, যা তাঁর মননকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলছিল সেই দেবী সরস্বতীর কমলকাননেই পা রাখেন তিনি। অবশ্য অনেক ছোটবেলাতেই ওনার সাহিত্য সাধনা শুরু হয়েছিল দেওয়াল পত্রিকা দিয়ে। প্রথমে গল্প লেখার সাথে ছবিও আঁকতেন। জীবনের প্রথম গল্প ছিল ভূতের গল্প, নাম ‘পোড়োবাড়ির খাঁড়া’। চাকরি সূত্রে বোম্বেতে থাকাকালীন লেখেন প্রথম গোয়েন্দা গল্প, ১৯৬০ সালে উল্টোরথ পত্রিকায় একটি প্রতিযোগিতায়, নাম ‘আমার বান্ধবী সুনন্দা’। মেরিন ড্রাইভে বসে মাথায় আসে গল্পের প্লটটি, সাথে সাথে লিখে পাঠিয়ে দেন পত্রিকার দপ্তরে। প্রথম পুরষ্কার পেয়েছিল গল্পটি।
সাহিত্যের প্রতি তাঁর অক্ষুণ্ণ ভালোবাসা তো ছিলই, সঙ্গে ছিল সায়েন্স ফিকশনের প্রতি গভীর প্রেম। সেইসুত্রেই তিনি শুরু করেন সায়েন্স ফিকশন নিয়ে লেখালিখি।
বিদেশে তখন চলছে সায়েন্স ফিকশনের স্বর্ণযুগ অথচ বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশন ধারায় তেমন লেখালিখি নেই, নেই সায়েন্স ফিকশন নিয়ে কোন পৃথক পত্রিকা। এমনকি বাংলা সাহিত্যিকরা তখন সায়েন্স ফিকশনকে সাহিত্যের কোন ধারা বলে মানতেই রাজী ছিলেন না। বাংলা সাহিত্যের সেই নামহীন অচ্ছ্যুত ধারাকেই অদ্রীশ বর্ধন সাদরে লালন করলেন তাঁর কলমে। বাংলায় তখন সায়েন্স ফিকশন গল্প পরিচিত ছিল ‘বিজ্ঞানভিত্তিক কাহিনি’ নামে। তিনিই প্রথম সৃষ্টি করলেন সায়েন্স ফিকশনের বাংলা প্রতিশব্দ ‘কল্পবিজ্ঞান’ শব্দবন্ধটি। কল্পবিজ্ঞানই যে ‘মহাকাশ যুগের রূপকথা’ একথা তিনিই প্রথম বলেন। জীবনযাপনে যে বেপরোয়া সাহসী বলিষ্ঠ মনোভাব ছিল তাঁর, সেই গুণের প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর লেখাতেও। এইজন্যেই তিনি অনায়াস বিচরণ করতে পেরেছেন বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান, অতীন্দ্রিয় জগত, অতিপ্রাকৃত, অনুবাদ–এর ভূমিতে – আর সব ক্ষেত্রেই পেয়েছেন স্বীকৃতি। তাঁর লেখা “নিতঙ্ক”ই বাংলায় প্রথম গুপ্তবিজ্ঞান নিয়ে লেখা শ্বাসরোধী কাহিনি। আজও এই ধারার লেখা বাংলা সাহিত্যে হাতে গোনা। তিনি কল্পবিজ্ঞানের গল্প লিখতে শুরু করেন ষাটের দশকের শুরুতে। তাঁর প্রকাশিত বই–এর সংখ্যা ১৫০ এর উপরে।
বিজ্ঞানের রাজত্বে ছোটদের মন টানার জন্যে, হাসিঠাট্টা কৌতুক পরিহাসের মোড়কে বৈজ্ঞানিক অ্যাডভেঞ্চারের নায়ক হিসেবে খাড়া করেছিলেন এক শ্রীহীন আধবুড়ো ফোকলা আদ্যন্ত বাঙালি ‘প্রনাবচ’ অর্থাৎ ‘প্রফেসর নাটবল্টুচক্র’কে – যার নাম শুনলেই ছেলেমানুষেরা বুঝতে পারে মানুষটা কি নিয়ে যত্তোসব উদ্ভট সৃষ্টিছাড়া ব্যাপারের গবেষণা করেন। বাঙালি বৈজ্ঞানিক যে ফেলনা নয় সেটা বোঝানোর উদ্দেশ্যই ছিল মনের মধ্যে। সেই সঙ্গে বাঙালি ছেলে যে কতখানি ডানপিটে হতে পারে তা তুলে ধরার জন্য নিয়ে আসেন প্রফেসরের সঙ্গী বোম্বেটে টাইপের মারকুটে দুঃসাহসী ‘দীননাথ নাথ’–কে। হাসিঠাট্টা, কৌতুক, পরিহাসের মোড়কে পরিবেশিত প্রফেসর আর দীননাথের কাহিনি মন জয় করেছে বড়দেরও। তাঁর সৃষ্টি চরিত্র ইন্দ্রনাথ রুদ্র, ফাদার ঘনশ্যাম, প্রফেসর নাটবন্টু চক্র, রাজা কঙ্ক, জিরো জিরো গজানন, চাণক্য চাকলাদার আজও মানুষের মনের কন্দরে বাসা বেঁধে আছে।
“ভূতের গল্প যেমন ভূতেদের জন্যে নয়, ঠিক তেমনি কল্পবিজ্ঞানও বৈজ্ঞানিকদের জন্য নয়” – এমন আপ্তবাক্য মাথায় রেখেই ১৯৬৩ সালের জানুয়ারি মাসে আকাশ সেন ছদ্মনামে অদ্রীশ বর্ধন সূচনা করেন ভারতের প্রথম কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা ‘আশ্চর্য!’। এটি একটি মাসিক পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। একই সঙ্গে তিনি স্থাপন করেন ‘আলফা–বিটা পাবলিকেশন্স্’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা। ১৯৬৭ সালে এই প্রকাশনা থেকে শুরু হয় ‘নাইস বুক ক্লাব’। আলফা–বিটা প্রকাশন থেকে আস্তে আস্তে প্রকাশিত হতে শুরু হয় কল্পবিজ্ঞানের সাথে সাহিত্যের অন্যান্য বিভিন্ন শাখার পুস্তক। কল্পবিজ্ঞানের জন্য প্রকাশিত হতে থাকে রকেট সিরিজের বই, তখনকার দিনে এই বইগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়।
আশ্চর্য!-এর কিছু প্রচ্ছদ
আশ্চর্য!-র প্রকাশক
রকেট সিরিজের বইয়ের বিজ্ঞাপন
‘আশ্চর্য!’ এর প্রকাশক ছিলেন অদ্রীশ বর্ধনের দাদা ডঃ অসীম বর্ধন। বাংলায় কল্পবিজ্ঞান চর্চাকে জনপ্রিয় করতে ‘আশ্চর্য!’-র উদ্যোগ সব থেকে বেশি। অল্পদিনের মধ্যেই পত্রিকাটি পাঠকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ছদ্মনামে পত্রিকা সম্পাদনা করার বুদ্ধি দেন বিখ্যাত সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র। বলেন যে ছদ্মনামে পত্রিকা প্রকাশ করলে স্বনামে আরও বেশি লিখতে পারবেন অদ্রীশ বর্ধন। নিজের নাম প্রকাশের পাগলামি যে তাঁর কোনোদিনই ছিল না, তা তিনি স্বীকার করেছেন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে। পত্রিকা প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারেন যে নিজস্ব প্রেস না হলে সময়ে পত্রিকা বের করা বেশ সমস্যার। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, বাড়ির একতলাতেই বানিয়ে ফেললেন একটি প্রেস, নাম দিলেন ‘দীপ্তি প্রিন্টার্স’।
অদ্রীশবাবু তাঁর স্মৃতিচারণায় বলেছেন, “আজকের দিনে মনে পড়ে ‘আশ্চর্য!’ প্রকাশনার প্রথম দিনের কথা। প্রথম সংখ্যাটির আত্মপ্রকাশের পর সে কী আলোড়ন, কী রোমাঞ্চ, কী চাঞ্চল্য সাহিত্য মহলে – তেমনি তার আশে পাশে কি উন্নাসিকতা, সতর্কিত সন্দেহ, কত তাচ্ছিল্যের মৃদু হাস্যপরিহাস! অবশ্য সংবাদপত্রের ‘ফিচার–কলামে’ সপ্রশংস সুরে এই দুঃসাহসের উল্লেখ হলো, শুভেচ্ছার সঙ্গে মূল্যবান পরামর্শ বর্ষিত হলো, উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো, আশা করা হলো বস্তাপচা সাহিত্যের দুর্গন্ধ দূরীকরণের একটা সঠিক প্রচেষ্টা এবার শুরু হলো।”
অতি অল্পদিনের মধ্যেই ‘আশ্চর্য!’ জনচিত্তে স্থান করে নিতে পেরেছিল। পত্রিকা প্রকাশের প্রথম থেকেই প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন পদ্মশ্রী প্রেমেন্দ্র মিত্র, আর শিল্প উপদেষ্টা ছিলেন চন্দ্রনাথ দে। আশ্চর্য! পত্রিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সত্যজিৎ রায়। আশ্চর্য! পত্রিকার একাধিক নামাঙ্কন করেন বিমল দাস। ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ রায় প্রমুখের তীব্র উৎসাহে চলতে লাগলো পত্রিকাটি। পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা সাহিত্যের এই ক্ষীণ ধারাটিকে পুষ্ট করা। সেই সংকল্প নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে ‘আশ্চর্য!’। এই পত্রিকার প্রায় প্রতি সংখ্যায় যেমন নিয়মিত প্রকাশ পেয়েছে প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিৎ রায়, ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বিখ্যাত লেখকদের গল্প, তেমনি প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন নতুন লেখক রণেন ঘোষ, ডক্টর দিলীপ রায়চৌধুরি, বিশু দাস, মনোরঞ্জন দে, শ্রীধর সেনাপতি, এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়, সমরজিৎ কর, হীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখরাও পত্রিকার হাত ধরে উঠে এসেছিলেন।
আশ্চর্য!-র নামাঙ্কনঃ বিমল দাস
সম্পাদক হিসাবে অদ্রীশবাবু অত্যন্ত বিবেচনার সঙ্গেই কল্পবিজ্ঞান কবিতা, খুব ছোট কলেবরের গল্প, ‘সায়েন্স ফিকশন লাইব্রেরী’ শিরোনামে বাংলা সায়েন্স ফিকশন বইয়ের সমালোচনা, কল্পবিজ্ঞান লেখকদের বই নিয়ে আলোচনা, ধারাবাহিক উপন্যাস, ধারবাহিক কমিকস, বিভিন্ন সিনে ক্লাবের সাই ফাই সিনেমা এবং তৎসংক্রান্ত নানান খবর, বিদেশের বিভিন্ন সায়েন্স ফিকশন বইয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিস্ময়কর মজার ঘটনা প্রভৃতি উৎকৃষ্ট বিষয়াবলীকে স্থান দিতেন তাঁর পত্রিকাতে। এছাড়াও স্থাপিত হয়েছিল ‘SF পত্রমৈত্রী ক্লাব’ যেখানে পাঠকদের ঠিকানা এবং সংক্ষিপ্ত সখের বিবরণ প্রকাশিত হত। পাঠকরা যুক্ত হতেন তাঁদের সহ–পাঠকদের সাথে পত্রের মারফত। ‘আশ্চর্য!’ বন্ধ হবার পর প্রায় অর্ধশতাব্দী কেটে গেছে, কিন্তু আজ অবধি দ্বিতীয় কোন কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা এতগুলি বিষয় নিয়ে অনায়াস নাড়াচাড়া করতে পারেনি। এখান থেকেই বোঝা যায় কল্পবিজ্ঞানের প্রবাদপুরুষ অদ্রীশ বর্ধনের কতখানি জ্ঞান ছিল সাহিত্যের এই ধারার উপরে।
ছদ্মনামে পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারে আইনি জটিলতার কারণে পরে নিজের নামেই ‘আশ্চর্য!’ পত্রিকা বের করতে থাকেন। পরবর্তী স্মৃতিচারণায় অদ্রীশবাবু বলেছেন, “আমার জানা ছিল না ছদ্মনামে সম্পাদনা করা বেআইনি। এজন্যে আমাকে লালবাজার থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তৎকালীন ডিসি হেডকোয়ার্টারে ডেকে পাঠিয়ে প্রথমে খুব খোশগল্প করলেন। পরে আসল কথাটা পাড়লেন। জানিয়ে দিলেন, ছদ্মনামে পত্রিকা করা যায় না।”
১৯৭০ সালে অদ্রীশবাবু বিবাহ করেন। তাঁর একমাত্র পুত্র অম্বর বর্ধনের জন্ম হয় ১৯৭১ সালে। তার ঠিক এক বছর পরেই ওনার স্ত্রীবিয়োগ হয়। অদ্রীশবাবুর তখনকার মানসিক অবস্থা দেখে সত্যজিৎ রায় তাঁকে বলেছিলেন, “তোমার জীবনের প্যাটার্ন পাল্টে গেছে অদ্রীশ, তুমি এসব বন্ধ করে দাও।” ১৯৭২ সালের ‘আশ্চর্য!’-র সংখ্যা থেকে সম্পাদক, মুদ্রক ও প্রকাশকের ভূমিকায় ডঃ অসীম বর্ধনের নাম দেখা। সেই বছর অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয় ‘আশ্চর্য!’ পত্রিকা। তারপরেই ‘আশ্চর্য!’ পত্রিকা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। সন্তান মানুষ করতে অনেকটা বাধ্য হয়েই তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন ‘আশ্চর্য!’। তিনি অবশ্য এজন্য উপযুক্ত লেখকের অভাবকেই মূলত দায়ী করেন। ‘আশ্চর্য!’ প্রায় আট বছর চলেছিল এবং সায়েন্স ফিকশন এর সমার্থনাম অর্জনে সমর্থ হয়।
শুধু পত্রিকা প্রকাশই নয়, সমাজের সর্বক্ষেত্রেই বাংলা কল্পবিজ্ঞানের প্রসারের জন্যে সচেষ্ট হয়েছিলেন অদ্রীশ বর্ধন। তাঁরই প্রচেষ্টায় মূলত ‘আশ্চর্য!’-র লেখকদের নিয়ে ১৯৬৫ সালের ৩রা মার্চ আকাশবাণী কলকাতা–তে সম্প্রচারিত হয়েছিল সাহিত্য–বাসর অনুষ্ঠান। গল্পের নাম “বাঙালি মহাকাশচারী”। গল্প লিখন এবং পাঠে অংশ নিয়েছিলেন তিন সাহিত্যিক যথা প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন এবং দিলীপ রায়চৌধুরী। প্রথম বারের সাফল্যের পরে দ্বিতীয় গল্প “সবুজ মানুষ” পাঠ হয় ১৬ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬ সালে। গল্প লিখন এবং পাঠে অংশ নিয়েছিলেন চার বিখ্যাত সাহিত্যিক যথা সত্যজিৎ রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন এবং দিলীপ রায়চৌধুরী। এই বারোয়ারী কাহিনীর মূল পরিকল্পনা করেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, নামকরণও তাঁরই করা।
অদ্রীশ বর্ধনের স্মৃতিচারণ থেকে জানতে পারি যে সেদিন সত্যজিতের অসামান্য কণ্ঠস্বরের কাছে বাকিরা হেরে গিয়েছিলেন। তাঁর নিজের কথায়, “এক গ্লাস জল চেয়ে নিয়ে স্টুডিয়োতে ঢুকেছিলেন। রেকর্ডিং হয়ে যাবার পরে প্লে ব্যাক শুনে উপস্থিত সকলকে অভিভূত হয়ে বসে থাকতে হয়েছিল! মুখের কথায় এমন গভীর ধ্বনিময় চিত্রকল্প সৃষ্টি করেছিলেন মানিকদা যা কেবল ওঁর পক্ষেই সম্ভব।”
বেতার জগত পত্রিকা থেকে সবুজ মানুষের অংশবিশেষ, চিত্রঋণঃ দেবজ্যোতি গুহ
১৯৬৫ সালেই কল্পবিজ্ঞানকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার আরেক অসামান্য পরিকল্পনা নিয়ে অদ্রীশ বর্ধন গিয়েছিলেন বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সত্যজিৎ রায় ছোটবেলা থেকেই কল্পবিজ্ঞানপ্রেমী। তাঁর লেখা বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক চরিত্র প্রফেসর শঙ্কুর কথা জানেনা এমন বাঙালীর সংখ্যা হাতে গোনা। তাই অদ্রীশ বর্ধনের প্রস্তাবে লাফিয়ে উঠলেন তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৬শে জানুয়ারি আশ্চর্যের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হল ভারতের তথা বিশ্বের সর্বপ্রথম সায়েন্স ফিকশন সিনে ক্লাব। উদ্দেশ্য সারা পৃথিবী থেকে বাছাই করা ভালো ভালো সায়েন্স ফিকশন ফিল্মের প্রদর্শনী করা এবং সায়েন্স ফিকশনকে জনপ্রিয় করে তোলা। ১৯৬৬ সাল থেকে আশ্চর্যের উদ্যোগেই বাংলায় শুরু হয় মাসিক পত্রিকা, আকাশবাণী এবং ছায়াছবি – এই তিনপথে সায়েন্স ফিকশনের জয়যাত্রা।
১৯৭২ সালে কলকাতার আমেরিকান দূতাবাসে আর্থার সি ক্লার্কের সঙ্গে আলাপচারিতার শুরুতেই অদ্রীশবাবু জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ আর শ্রীলঙ্কার উপকূলে সাগরতল অভিযান চালিয়েছিলেন একদা, প্রচুর ফটো তুলেছিলেন তখন, আপনি লন্ডনের রকেট পাবলিশিংয়ের ডিরেক্টর। আপনি পেয়েছেন ইন্টারন্যাশানাল ফ্যানট্যাসি পুরষ্কার, হিউগো পুরষ্কার, ইউনেসকো কলিঙ্গ প্রাইজ, পেয়েছেন আরও অনেক পুরষ্কার আর স্বীকৃতি। কিন্তু কেন আপনি সায়ান্স ফিকশন লেখা শুরু করলেন?”
উনি জবাবটা দিলেন খুব ছোট্ট – “টু ইন্সপায়ার”।
তাঁর কথায় “আমি তো বিশ্বাস করি অনেক পড়লে একটু লেখা যায়। অনেক পড়ার পরে মনে হয় কলমটা যেন একটু সরছে।” অদ্রীশ বর্ধনের ভালবাসাগুলোই হল – লেখা, পড়া, বেড়ানো আর সুরের জগতে ডুবে যাওয়া।
‘আশ্চর্য!’ পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরবর্তীকালে, লেখক তাঁর জীবনের আরেক অনন্য কাজে ব্রতী হন। সাধারণ বাঙালী পাঠকের কাছে পৃথিবীর বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান কাহিনীগুলি পৌঁছে দেওয়ার জন্যে তিনি শুরু করেন জুল ভের্ণ অনুবাদ। এই অনুবাদের ইতিহাস প্রসঙ্গে লেখক জানিয়েছেন, ওনার স্ত্রী বিয়োগের পরে তাঁর ক্রমাগত রাত আড়াইটেয় ঘুম ভেঙে যেত। ওই সময়েই ওনার স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন। বাকি রাতটা আর ঘুমাতে না পেরে তিনি অনুবাদ করেই কাটাতেন, এভাবেই তিনি জুল ভের্ণের সমগ্র রচনাবলী অনুবাদ করে ফেলেছিলেন যা গ্রন্থাকারে প্রকাশ পেয়েছিল বেঙ্গল পাবলিশার থেকে নয় খণ্ডে। বর্তমানে লালমাটি থেকে চার খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে সমগ্র জুল ভের্ণ রচনাবলী।
বেঙ্গল পাবলিশার এবং লালমাটি প্রকাশনার জুল ভের্ন অনুবাদের প্রথম খণ্ডের প্রচ্ছদ
শুধুমাত্র অনুবাদে তাঁর অবদানের জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে থাকবেন। ‘আশ্চর্য!’ কিংবা ‘ফ্যান্টাসটিক’ পত্রিকার প্রয়োজনে অনুবাদ করেছেন প্রচুর বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান গল্প ও উপন্যাস। জুল ভের্ণ ছাড়াও তিনি অনুবাদ করেছেন এইচ জি ওয়েলস–এর সমস্ত কল্পবিজ্ঞান রচনার, পরে তা ‘গ্রন্থপ্রকাশ’ থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয়। তাঁর অনুবাদেই আমরা প্রথম পরিচিত হই ল্যাভক্রাফটের হরর ক্লাসিক রচনার সাথে। উপন্যাসের নাম ছিল “কেস অফ চার্লস ডেক্সটার ওয়ার্ড”। কোন লেখকের গল্পের অনুবাদ শুরু করার আগেই তিনি সম্পূর্ণ রচনাবলী জোগাড় করে নিতেন। সেই সময়ে বিদেশী লেখকদের সম্পূর্ণ রচনা জোগাড় করা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন এমব্যাসি থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছিলেন। অনুবাদের ক্ষেত্রে তিনি এক একজন লেখকের সম্পূর্ণ রচনাবলী অনুবাদ করার দিকে জোর দিতেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমসের সমগ্র রচনাবলীর উৎকৃষ্ট বাংলা অনুবাদ। এছাড়াও ডয়েলের ছেলের লেখা কিছু শার্লক হোমসের পাস্টিশও অনুবাদ করেছিলেন। অনুবাদ করেছেন প্রোফেসর চ্যালেঞ্জার সমগ্র, এডগার অ্যাল্যান পোর রচনাবলী, এডগার রাইজ বরোজের টারজান সমগ্র ইত্যাদি।
কিছু অনুবাদ গ্রন্থের প্রচ্ছদ
কল্পবিজ্ঞান ছাড়াও বিভিন্ন নামি অনামি পত্রপত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখেছেন গোয়েন্দা গল্প এবং ভুতের গল্প। তাঁর সৃষ্ট গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র এবং ফাদার ঘনশ্যাম। স্বনামের পাশাপাশি আকাশ সেন ছদ্মনামে লিখতেন অনেক পত্রিকায়। বেশ কিছু বিজ্ঞানের বইও ছদ্মনামে প্রকাশ করেন বেঙ্গল পাবলিশার থেকে।
সারাজীবনে তিনি একটিই সামাজিক উপন্যাস লিখেছিলেন, নাম ‘তখন নিশীথ রাত্রি’। স্ত্রী বিয়োগের পরে লেখা এই উপন্যাসটি মূলত তাঁরই জীবনের প্রতিচ্ছবি। ওই সময় তাঁর মানসিক অবস্থা ভেঙে পড়েছিল, এমনকি শরীরের নিম্নাঙ্গ প্যারালাইসিস হয়ে গেছিল। আস্তে আস্তে আবার সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। সত্যজিৎ রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্রের উৎসাহে আবার শুরু করেন পত্রিকা প্রকাশের কাজ।
১৯৭৫ সালে, আর ছদ্মনামে নয় এবার স্বনামেই শুরু করেন ফ্যানট্যাসটিক পত্রিকা সম্পাদনার কাজ। সহযোগী ছিলেন রণেন ঘোষ। এই বিষয়ে সম্পাদক গল্পচ্ছলে বলেছিলেন, “‘আশ্চর্য!’র পরে ‘অত্যাশ্চর্য!’ বের করার উপদেশ দিয়েছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। চন্দ্রনাথ দে প্রচ্ছদও এঁকে ফেলেছিলেন, কিন্তু অনুমতি পাওয়া গেলো ‘ফ্যানট্যাসটিক’ নাম–এর।” সত্যজিৎ রায় স্বয়ং এই পত্রিকার নামাঙ্কন করেন। তবে এই পত্রিকায় শুধু কল্পবিজ্ঞানের গল্পই ছাপা হত না, সত্যজিৎ রায় ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের নির্দেশে ফ্যান্টাসি ও ভুতের গল্পও ছাপা হত। পত্রিকায় ছড়ানো থাকতো হাফটোন ছবি সমেত বিজ্ঞানের নানা খবর, বিজ্ঞানের কিছু ঘটনা নিয়ে ছোট নিবন্ধ, পুস্তক সমালোচনা, সায়েন্স পাজল ইত্যাদি। প্রথম দু তিন বছর বেঙ্গল পাবলিশার্স এর অফিস থেকে ফ্যানট্যাসটিক পত্রিকা প্রকাশ পায়, পরে অদ্রীশ বাবুর বাড়ি থেকেই ফ্যানট্যাসটিক প্রকাশ পেতে থাকে।
‘ফ্যানট্যাসটিক’ পত্রিকার বিভিন্ন নামাঙ্কন
সায়েন্স ফিকশন যে বাংলা সাহিত্যে স্থান করে নিতে পেরেছে তার জন্য ‘আশ্চর্য!’, ‘ফ্যানট্যাসটিক’, ‘বিস্ময়!’ ইত্যাদি পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। উপযুক্ত লেখার অভাবে ফ্যানট্যাসটিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে। যদিও বছরে একটি বার্ষিকী নিয়মিত প্রকাশ পেয়েছে প্রতি শরৎকালে। ১৯৮৩ সালে আবার নতুন করে মাসিক পত্রিকা প্রকাশের চেষ্টা করেন অদ্রীশ বর্ধন। সঙ্গে চেষ্টা করেন ‘সায়েন্স ফিকশন সিনে ক্লাব’ এর পুনোরুজ্জীবনের জন্য।
ফ্যানটাসটিক পত্রিকার কয়েকটি প্রচ্ছদ
বাংলা সাহিত্যে রহস্যরোমাঞ্চ ধারায় অদ্রীশ বর্ধন গত পঞ্চাশ বছরে পরিবেশন করে এসেছেন অজস্র রকমারি স্বাদের প্রহেলিকা কাহিনি। কল্পবিজ্ঞান নিয়ে জনপ্রিয় পাক্ষিক প্রতিযোগিতার আহ্বান করে বেশ কিছু নবীন প্রতিভার সন্ধান পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে যোগ দেন ইত্যাদি প্রকাশনীর কিশোর মন পত্রিকার সম্পাদনার কাজে। পত্রিকাটি ডিসেম্বর ১৯৮৬ পর্যন্ত সম্পাদনা করেন প্রায় ৫০টি সংখ্যা। তারপর সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসেন আবার ফ্যান্টাসটিকে। কিশোর মন পত্রিকার সম্পাদনার সময়ে আমেরিকা ভ্রমণের আমন্ত্রণ পেয়েও যেতে পারেননি মাতৃহীন ছেলেকে রেখে।
সারাজীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরষ্কার আর সম্মান। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি লাভ করেন ‘দক্ষিণীবার্তা’ ও ‘কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান’ পুরষ্কার। অনুবাদের ক্ষেত্রে লাভ করেন ‘সুধীন্দ্রনাথ রাহা’ পুরষ্কার। ২৪ জুলাই ২০০৯ সালে পান ‘প্রসাদ’ পুরষ্কার। এছাড়াও ‘অনির্বাণ’ ও ‘চিলড্রেন্স ডিটেকটিভ’–এর পক্ষ থেকে গুণীবন্দনা, দীনেশচন্দ্র স্মৃতি পুরষ্কার, রণজিৎ স্মৃতি পুরষ্কার, মৌমাছি স্মৃতি পুরষ্কার, রোটারি ক্লাব সম্মান প্রভৃতি পুরষ্কারে ভূষিত হন তিনি। ১৯৭৬ সালে কলকাতার রাজভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে সায়েন্স ফিকশন প্রসঙ্গে আলোচনাও করেন। এও তাঁর কাছে পুরষ্কারের থেকে কম কিছুই নয়। সুইডেন থেকে প্রকাশিত ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অফ সায়েন্স ফিকশন’–এ অদ্রীশ বর্ধনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি আছে।
সুধীন্দ্রনাথ রাহা–র কন্যা অপর্ণা সেন এর বড় জামাই তুষার পাল এর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে যুগান্তর পত্রিকার সম্ভবত ২১শে জুলাই ১৯৮৬ তারিখের কাটিং–টির ছবি তুলে এনেছেন সোমনাথ দাশগুপ্ত ১০ই এপ্রিল ২০১৭ তারিখে।
একে একে বন্ধ হয়ে গেছে আশ্চর্য, ফ্যান্টাস্টিক, বিস্ময়ের মত বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন পত্রিকা। বন্ধ হয়ে গেছে সায়েন্স ফিকশন ভিত্তিক বিভিন্ন উদ্যোগ। অদ্রীশ বর্ধন এককালে যে ধারার সূত্রপাত করেছিলেন বাংলা সাহিত্যে, সেই ধারাকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন সত্যজিৎ রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্যের মত বিজ্ঞানমনস্ক লেখক, কিন্তু আজ প্রায় পঞ্চাশ বছর পরেও এই ধারাটি মানুষের হৃদয়ে পাকাপোক্ত স্থান করে নিতে পারেনি। আজও বাংলা সায়েন্স ফিকশনকে পৌঁছে দেওয়া যায়নি বিশ্বের দরবারে, তার একমাত্র কারণ সায়েন্স ফিকশন লেখার ক্ষেত্রে জনাকয়েক লেখক ছাড়া বলিষ্ঠ লেখনী আর অনন্য চিন্তাভাবনার অভাব। অদ্রীশ বর্ধনের বর্তমানে বয়স ৮৫–র কোঠায়, বয়সজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবে তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, হারিয়েছেন স্মৃতিশক্তিও। তা সত্ত্বেও কল্পবিজ্ঞানের নামে তিনি ছোট শিশুর মতোই উদ্বেল, উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। এক কিংবদন্তী লেখক যিনি যৌবনেই তৈরি করেছেন ‘কল্পবিজ্ঞান’ শব্দবন্ধটি, যিনি আজীবন এই বিশেষ ধারাটিকে বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ ঘরানার মর্যাদায় উন্নিত করে গেছেন, বাঙালি পাঠকের মনে এই সাহিত্যের রসসঞ্চার ঘটিয়েছেন তাঁর বিপুল কর্মোদ্যোগের মাধ্যমে, তিনি যতই শারীরিক ভাবে অথর্ব হয়ে পড়ুন না কেন, মানসিক ভাবে যতই নুব্জ হোন না কেন – বাংলা কল্পবিজ্ঞান যতদিন থাকবে, অদ্রীশ বর্ধনের নাম ও কাজ পরম শ্রদ্ধায় উচ্চারিত, লিখিত এবং পঠিত হতে থাকবে। অদ্রীশ বর্ধন কেবল লেখক নন, তিনি একজন পথিকৃৎ, বাংলা কল্পসাহিত্য পথের অগ্রদূত।
অদ্রীশ বর্ধনের পঞ্চাশটি বিখ্যাত বইয়ের নামতালিকা যা পাঠকের হৃদয়মন ছুঁয়ে যেতে সক্ষমঃ
বইয়ের নাম | প্রকাশক | প্রকাশকাল |
অমানুষিকী | পত্রভারতী | জানুয়ারি ১৯৮৪ |
অসহ্য সাসপেন্স | পত্রভারতী | জানুয়ারি ২০০১ |
অসহ্য সাসপেন্স ২ | পত্রভারতী | ডিসেম্বর ২০০৬ |
অসহ্য সাসপেন্স ৩ | পত্রভারতী | জানুয়ারি ২০০৮ |
আতঙ্ক অমনিবাস | ফ্যানট্যাস্টিক | বইমেলা ২০০৬ |
আমার মা সব জানে ১ খণ্ড | আনন্দ | জানুয়ারি ১৯৯২ |
আমার মা সব জানে ২ খণ্ড | আনন্দ | জানুয়ারি ১৯৯৫ |
আমার মা সব জানে ৩ খণ্ড | আনন্দ | ডিসেম্বর ২০০৬ |
আবার শার্লক হোমস্ (অ্যাড্রিয়ান কন্যান ডয়েল ও জন ডিকসন কার) | নাথ | নভেম্বর ২০০৭ |
আশ্চর্য আলমারী | নাথ | ২০০৮ |
ইটি | ফ্যানট্যাস্টিক | জানুয়ারি ১৯৮৫ |
এডগার অ্যালান পোর রচনা সংগ্রহ ১ খণ্ড | ফ্যানট্যাস্টিক | – |
এডগার অ্যালান পোর রচনা সংগ্রহ ২ খণ্ড | ফ্যানট্যাস্টিক | – |
এডগার অ্যালান পোর রচনা সংগ্রহ ৩ খণ্ড | ফ্যানট্যাস্টিক | – |
কেস অফ চার্লস ডেক্সটার ওয়ার্ড | ফ্যানট্যাস্টিক / বেঙ্গল | জুলাই ১৯৭৬ |
কন্যা, তুমি অনন্যা | ফ্যানট্যাস্টিক | জানুয়ারি ২০০৪ |
কথাসরিৎসাগর | পারুল | |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ১ খণ্ড | নাথ | জানুয়ারি ২০০২ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ২ খণ্ড | নাথ | জানুয়ারি ২০০৩ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ৩ খণ্ড | নাথ | জানুয়ারি ২০০৪ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ৪ খণ্ড | নাথ | জানুয়ারি ২০০৫ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ৫ খণ্ড | নাথ | জানুয়ারি ২০০৬ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ৬ খণ্ড | নাথ | জানুয়ারি ২০০৭ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ৭ খণ্ড | নাথ | নভেম্বর ২০০৭ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ৮ খণ্ড | নাথ | নভেম্বর ২০০৮ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ৯ খণ্ড | নাথ | নভেম্বর ২০০৯ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ১০ খণ্ড | নাথ | নভেম্বর ২০১০ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ১১ খণ্ড | নাথ | ডিসেম্বর ২০১১ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ১২ খণ্ড | নাথ | জানুয়ারি ২০১৩ |
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র ১৩ খণ্ড | নাথ | জানুয়ারি ২০১৪ |
জুল ভের্ণ সমগ্র ১ খণ্ড | লালমাটি | ১৫ ই অগাস্ট ২০১৩ |
জুল ভের্ণ সমগ্র ২ খণ্ড | লালমাটি | ১৫ ই অগাস্ট ২০১৫ |
জুল ভের্ণ সমগ্র ৩ খণ্ড | লালমাটি | ১৫ ই অগাস্ট ২০১৬ |
জুল ভের্ণ সমগ্র ৪ খণ্ড | লালমাটি | জানুয়ারি ২০১৭ |
টারজান ফিরে এলো | লালমাটি | ২০০৬ |
নিতঙ্ক | ফ্যানট্যাস্টিক | জানুয়ারি ২০০৮ |
পাতায় পাতায় রহস্য | আনন্দ | ১৫ ই এপ্রিল ১৯৯৪ |
প্রফেসর নাটবল্টুচক্র সংগ্রহ ১ খণ্ড | আনন্দ | এপ্রিল ২০০৯ |
প্রফেসর নাটবল্টুচক্র সংগ্রহ ২ খণ্ড | আনন্দ | এপ্রিল ২০১৩ |
পাঁচটি রহস্য উপন্যাস | পত্রভারতী | জানুয়ারি ২০০৪ |
বিশ রহস্য | পত্রভারতী | ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৪ |
বিশ্বসেরা সায়ান্স ফিকশান | দে’জ | জানুয়ারি ২০১২ |
মাকড়শা আতঙ্ক | পত্রভারতী | ২০০৮ |
মেঘ দ্বীপের আতঙ্ক | ফ্যানট্যাস্টিক | জানুয়ারি ১৯৯৬ |
শার্লক হোমস সমগ্র ১ খণ্ড | লালমাটি | মার্চ ২০১১ |
শার্লক হোমস সমগ্র ২ খণ্ড | লালমাটি | এপ্রিল ২০১২ |
সুপারম্যান বিক্রমজিৎ | পত্রভারতী | ডিসেম্বর ২০০৮ |
সেরা কল্পবিজ্ঞান অমনিবাস | পত্রভারতী | জানুয়ারি ২০০৪ |
সেরা গোয়েন্দা উপন্যাস – ইন্দ্রনাথ রুদ্রের চারটি রহস্য অ্যাডভেঞ্চার | পত্রভারতী | জানুয়ারি ২০১৬ |
সেরা আশ্চর্য! সেরা ফ্যানট্যাস্টিক | ফ্যানট্যাস্টিক | জানুয়ারি ১৯৯৪ |
তথ্যসূত্রঃ
১) আশ্চর্য!, ফ্যান্টাসটিক পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা,
২) অদ্রীশ বর্ধনের সাক্ষাৎকার – বিশ্বদীপ দে
Tags: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, প্রচ্ছদ কাহিনি, প্রসঙ্গঃ অদ্রীশ বর্ধন, সন্তু বাগ
osombhob tothyosomrridhyo lekha. onek dhonyobad santu. Tumi na thakle ei issue ta aaj hotoi na!
Thanks Dip
অমূল্য পোস্ট। এছাড়া আর কোনো বিশেষণ খুঁজে পাচ্ছি না।
Lekha ti sudhu porlam bolle bhul hobe, cultivate o korlam. Je kono pathok o songrahok er jonno ekti asset.
খুব ভালো লেখা।প্রথম থেকে শেষ অবধি পড়ে যেতে হয়।অনেক কিছু জানা গেলো।লিস্টটা দারুন কাজে লাগবে।শুধু ভাষাটা একটু অন্যরকম লাগলো।
ধন্যবাদ সবাইকে আপনাদের মূল্যবান মতামতের জন্য।
বাংলাসাহিত্য ঋণী রয়ে যাবে এই লেখাটির জন্য। অদ্রীশ বর্ধন সম্পর্কে জানতে এককথায় এমন তথ্যমূলক লেখা…সত্যিই অমূল্য!
Adrish Babur Sara jiboner kormokander sathe porichito hobar jonyo tomar ei probondhoti adorsho.
Thanks you all for your feedback!
কিংবদন্তী লেখক সমন্ধে অনেক অনেক অজানা তথ্য জানলাম। এ এক বিশাল প্রাপ্তি। অনবদ্য আর্টিক্যাল।
Thanks Niloy Da.
এই বাংলার সাহিত্যে কল্পনার ধারাটা পুষ্ট করার ক্ষেত্রে এক অবিসংবাদী ভগীরথের নাম অদ্রীশ বর্ধন। ওঁর জীবন আর বিস্তৃত সৃষ্টিসম্ভার অসংখ্য পাঠককে প্রেরনা যোগায় আজও। লেখক সন্তু বাগ কে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন এক মূল্যবান রচনা আমাদের উপহার দেবার জন্য।
অদ্রীশ বর্ধন সম্বন্ধে একত্রীকৃত এত তথ্য আর কোন লেখাতেই পাই না।