ফ্রাঙ্কেনস্টাইন – রুপোলী পর্দার রূপকথা
লেখক: রূপক ঘোষ
শিল্পী: রূপক ঘোষ
ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। এই নামটির সাথে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত, কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার এই যে, সেই দৈত্যের নাম আদৌ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নয় বরং যিনি তার সৃষ্টিকর্তা তার পদবীই হলো ফ্রাঙ্কেনস্টাইন, ব্যারন ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। জার্মানির Ingolstadt এর ইউনিভার্সিটি থেকে বের হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই তার মায়ের মৃত্যু হয়; ভিক্টর নানান কাজের মধ্যে যুক্ত হয়ে সে কথা ভোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি রসায়নে এবং বিজ্ঞানের নানা শাখায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি মৃত প্রাণীর মধ্যে প্রাণ সঞ্চারের একটি গোপন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। শেষ পর্যন্ত তার ভগবান হওয়ার সাধ জাগে, এইজন্য তিনি তার ল্যাবের অ্যাসিস্টেন্ট ইগরের মারফৎ আনিয়েছিল নানান মৃত মানুষের দেহাবশেষ। আলাদা আলাদা মানুষের অসম আকৃতির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একসাথে জুড়ে একটা শরীর তৈরী করতে গিয়ে, ভিক্টর প্রায় আট ফুট উচ্চতার এক প্রাণীর সৃষ্টি করেন। শেষপর্যন্ত যখন বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যেমে মৃত ব্যাক্তিটির মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করা হয়, তখন বাইরে প্রচন্ড জোরে বজ্র-বিদ্যুতের ঝলকানির শব্দ আসছে, এরই মধ্যে মৃত শরীরে হঠাৎ শুরু হয় হৃৎস্পন্দন, তিনি পেরেছেন। ইটস্ অ্যালাইভ – চিৎকার করে ওঠেন ভিক্টর।
কিন্তু হিতে বিপরীত হয়, ভিক্টরের দেবদূত পরিণত হয় মৃত্যুদূতে। ভগবান হতে গিয়ে তিনি সৃষ্টি করেন এক সাক্ষাত শয়তানের। তার কোনো নামকরণ করা হয়নি, তাকে মনস্টার বা দৈত্য নামে ডাকা হতো, তারপর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন্স মনস্টার, ক্রিয়েচার -এভাবেই কখন যেন সে নিজেই হয়ে ওঠে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। ১৮১৮ সালে মেরি শেলীর লেখা Frankenstein; or, The Modern Prometheus প্রথম দিকের কল্পকাহিনির এক সেরা নিদর্শন, যা এখন কাল্ট-ক্লাসিকের পর্যায় পৌঁছেছে. এর থেকেই প্রায় দুই শতাব্দী ধরে নানাজনে নানানভাবে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন, তাকে নিয়ে হয়েছে অসংখ্য সিনেমা, কমিক্স, রেডিও ড্রামা, সিরিয়াল, নানান সাহিত্য, নাটক, খেলনা পুতুল আরও না জানি কতো কি! সর্বোপরি ২০০ বছর পার করে “ফ্রাঙ্কেন্সটাইন” বা “ফ্রাঙ্ক’দা” আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন।
ব্যক্তিগতভাবে আমার অতি প্রিয় এই চরিত্রটিকে নিয়ে এবারের কল্পবিশ্বে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হতে চলেছে তা একদম শেষ মুহূর্তে জানতে পারি। এই স্বল্প সময়ে ভালোভাবে মনের মতো গুছিয়ে সুন্দর করে লেখা সেভাবে সম্ভব নয় বলেই আমি এবারে বিশেষত ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনকে নিয়ে যেসব চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে এবং ফ্যাঙ্ক’দা যেভাবে পপ কালচারে নিজের আসর জমিয়ে নিয়েছেন, ও আমাদের মননে ও হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন, সে বিষয়েই স্বল্প পরিসরে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
গত দুই শতকের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকা
যুগের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে। মানব সভ্যতার শুরু পর থেকে ভাষা সৃষ্টির আগে মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যেমন ছবির উদ্ভব হয়েছিল, তেমনি তারপরে ভাষার আদান প্রদানের প্রচলন হওয়ার অনেক পরে আসে লেখ্যরূপ বা লিখে রাখার প্রচলন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এইভাবেই সৃষ্টি হয় সাহিত্যের বিভিন্ন ঘরানার লেখার। আর তারপরে আসে বেতার মাধ্যম, এরপরে আসে চলচ্চিত্র, যেখানে চলনশীল ছবির মাধ্যমে কোনও গল্পকে তুলে ধরা হয়।
লেখায় যতোটাই হৃদয়গ্রাহী হোক না কেন, তা সত্ত্বেও ছায়াছবি বা চলচ্চিত্রের মাধ্যেমে কিছু দেখলে বা শুনলে, সাধারণ ভাবেই পড়ার তুলনায় সেটি মনের মধ্যে গেঁথে যাওয়াই স্বাভাবিক। সে সময়েও সেটি ঘটেছে এবং বর্তমান কালে বইপোকা ব্যাতিত সাধারণ মানুষেরা তুলনমূলক ভাবে বই পড়ার থেকে সিনেমা দেখতেই বেশি পছন্দ করেন। এখন তো সিনেমার পরেই বেশিরভাগ নভেল বা উপন্যাস আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেরকমই ১৮১৮ সালে মেরি শেলীর বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান ক্লাসিক উপন্যাস “ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন” আজ অব্ধি বিভিন্নভাবে, বিভিন্নরূপে, বিভিন্ন চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে, মূল ভাবনাটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু মৌলিক ছায়াছবি ও মূল কাহিনির থেকে অনুপ্রানিত একাধিক সিনেমা। গত দুই শতকে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনকে নিয়ে সৃষ্ট চলচ্চিত্রের সেইসব ইতিহাস আমরা সংক্ষেপে জেনে নেবোঃ-
নির্বাক যুগের হারানো ছবিগুলি ( ১৯১০ – ১৯২১)
ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র শুরু হয় ১৯১০ সালে এডিসন স্টুডিও-র তরফ থেকে নির্মিত J. Searle Dawley পরিচালিত প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র “ফ্রাঙ্কেনস্টাইন”। এতে ডঃ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়েছিলেন Augustus Phillips ও ইসাবেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন Mary Fuerte আর মনস্টার হয়েছিলেন Charles Ogle । ১৬ মিনিটের এই ছবিতে কেমিক্যালি দৈত্যটিকে সৃষ্টি করার পর থেকে ডঃ ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের বিবাহ পর্যন্ত সেই দৈত্যের আতঙ্ক তাকে ধাওয়া করে বেড়াতো, কিন্তু প্রকৃত প্রেমের কাছে পরাজয় স্বীকার করে দৈত্যটি কোথাও গায়েব হয়ে যায়। সংরক্ষণের অভাবে ধরে নেওয়া হয়েছিল ছবিটি হারিয়ে গেছে কিন্তু ১৯৮০ সালে এক চলচ্চিত্র সংগ্রাহক জানান যে এটির ১৯৫০ সালের প্রিন্ট তার কাছে আছে, এবং এটার বিলুপ্তির কথা তিনি জানতেন না।
বিঃদ্রঃ এই ছবিটির পুনরুদ্ধিত সংস্করণ দেখা যাবে নিচের লিঙ্কেঃ
এরপর ১৯১৫ সালে Life Without Soul নামে আরেকটি ছবি নির্মাণ করেছিলেন Joseph W. Smiley। এতে William A. Cohill ডঃ উইলিয়াম ফ্রাউলের চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি একজন সে সময়ের আত্মাবিহীন মানুষের সৃষ্টি করেন, শেষে জানা যায় একজন যুবক মেরী শেলির উপন্যাস পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, এবং প্রদর্শিত সমস্ত ঘটনাই একটা স্বপ্ন বই কিছু নয়। এই ছবিটির শুটিং আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে করা হয়েছিল, এবং আগের থেকে আরও বিস্তৃত ভাবে দেখানো হয়েছিল। Percy Standing যিনি দৈত্যের চরিত্রে অভিনয় করেন, তিনি স্বল্প মেকাপের জন্য বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন। এই ছবিটিও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যায়।
এছাড়াও একটা ইউরোপিয়ান ছবি, ইতালির Il Mostro di Frankenstein (“The Monster of Frankenstein”) মুক্তি পায় ১৯২১ সালে। ছবিটির প্রযোজক Luciano Albertini স্বয়ং ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় অভিনয় করেন, এবং দৈত্যের ভুমিকায় Umberto Guarracino অভিনয় করেন। Giovanni Drivetti চিত্রনাট্যের ওপর ভিত্তি করে Eugenio Testa এই ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন। এটিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যায়।
সবাক চলচ্চিত্রের শুরুর থেকে ( ১৯৩১ – ১৯৪৪ )
ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে নিয়ে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুক্তি পায় ১৯৩১ সালে ইউনিভার্সাল পিকচার্সের তরফ থেকে। ইউনিভার্সাল পিকচার্স কে সেই সময় বলা হতো আসল মনস্টারর্সদের আঁতুড়ঘর বা “Home of Original Monsters”, কারণ এদের তরফ থেকেই বিখ্যাত সব ক্লাসিক উপন্যাসের অমর চরিত্ররা সর্বপ্রথম রুপোলী পর্দায় উঠে এসেছেন।
উপরের ছবিতে “ইউনিভার্সাল মনস্টারর্স” এর অমর মনস্টার চরিত্রগুলিকে দেখা যাচ্ছে। বাঁদিক থেকে যথাক্রমে পরপর চরিত্রগুলি হলো দ্য ব্রাইড (Elsa Lanchester), ইনভিজিবল ম্যান (Claude Rains), ড্রাকুলা (Bela Lugosi), দ্য মমি ও ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন (Boris Karloff), এরিক, দ্য ফ্যন্টম (Lon Chaney,Sr), উল্ফ ম্যান ( Lon Chaney,Jr) ও গিল ম্যান (Richard Carlson)। এ বছরে অস্কারের “বেস্ট পিকচার” বিভাগে অস্কারজয়ী ছবি “দ্য শেপ অফ ওয়াটার” এর মারম্যান এর কস্টিউম ডিজাইন গিল ম্যানের ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত।
সবাক যুগের আগেও ইউনিভার্সালের মনস্টারর্স সিরিজ শুরু হয়েছিল ১৯২৩ এর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি The Hunchback of Notre Dame এর মাধ্যমে। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এর আগে ও পরে অনেক অমর চরিত্রের দেখা মিলেছে এই ফিল্ম সিরিজে যেমন ড্রাকুলা (১৯৩১), দ্য মমি (১৯৩২), দ্য ইনভিজিবল ম্যান (১৯৩৩), ব্রাইড অফ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন (১৯৩৫), দ্য উলফম্যান (১৯৪১) ফ্যান্টম অফ দ্য অপেরা (১৯২৫, ১৯৪৩) ও ক্রিয়েচার ফ্রম দ্য ব্ল্যাক লেগুন (১৯৫৪) এবং এদের একাধিক সিক্যুয়েল, ক্রসওভার এবং প্যারোডির।
ইউনিভার্সাল পিকচার্স এর তরফ থেকে প্রথম “ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন” এর সবাক সাদাকালো চলচ্চিত্রায়ণ হয় ১৯৩১ সালে। দৈত্যের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মার্কিন অভিনেতা William Henry Pratt, যিনি পর্দায় বরিস কার্লফ নামে বিখ্যাত হয়েছিলেন। ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের চলচ্চিত্রে সর্বকালের সেরা অভিনেতাদের মধ্যে কার্লফ অন্যতম। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৯ এই আট বছরে তিনি প্রথম ৩টে ছবিতে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্যের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৪৪ সালের “ইউনিভার্সাল মনস্টারর্স সিরিজের” ষষ্ঠ ছবিতে তিনি Dr. Gustav Niemann এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ১৯৩২ সালের দ্য মমি ছবিতে ইমহোটেপ ও মমির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও তাকে “ইউনিভার্সাল মনস্টারর্স সিরিজের” অনেক সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায়।
ইউনিভার্সাল মনস্টারর্স [১৯২৩-১৯৫০ ও ১৯৬০] | |||||||
ক্রম | চলচ্চিত্রের নাম | সাল | নামভূমিকায় অভিনেতা | ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্যের ভূমিকায় | পরিচালক | গোত্র | সিনেমার পোস্টার |
০১। | Frankenstein | November 21, 1931 | Boris Karloff | James Whale | সাই- ফাই | ||
০২। | Bride of Frankenstein | April 22, 1935 | Elsa Lanchester | Boris Karloff | সাই- ফাই | ||
০৩। | Son of Frankenstein | January 13, 1939 | Basil Rathbone | Boris Karloff | Rowland V. Lee | সাই- ফাই | |
০৪। | The Ghost of Frankenstein | March 13, 1942 | Cedric Hardwicke | Lon Chaney, Jr. | Erle C. Kenton
| সাই- ফাই | |
০৫। | Frankenstein Meets the Wolf Man | March 5, 1943 | Lon Chaney, Jr. | Bela Lugosi | Roy William Neill | ক্রসওভার | |
০৬। | House of Frankenstein | December 1, 1944 | Boris Karloff |
Glenn Strange | Erle C. Kenton | ক্রসওভার | |
০৭। | House of Dracula | December 7, 1945 | John Carradine | ক্রসওভার | |||
০৮। | Abbott and Costello Meet Frankenstein | June 15, 1948 | Chick Young & Wilbur Grey | Charles Barton | কমেডি/ ক্রসওভার |
কার্লফ ছাড়াও “ইউনিভার্সাল মনস্টারর্স সিরিজ” এর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ৮টি ছবিতে বাকি যারা ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়েছিলেন তাদের ছবি ওপরে দেওয়া হল।
ব্রিটেনের হ্যামার ফিল্মস ( Hammer Films ) তাদের ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই সিরিজে ডঃ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের চরিত্রের ওপরে বেশি জোর দিয়েছিল, একটি বাদে সব ছবিতেই ডঃ এর নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন Peter Cushing, কেবলমাত্র Horror of Frankenstein ছবিতে ডঃ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় অভিনয় করেন Ralph Bates । Revenge of Frankenstein ছবিটিতে Peter Cushing দৈত্যের ভূমিকায় অভিনয় করেন। David Prowse দুটি আলাদা দৈত্যের অভিনয় করেছিলেন।
হ্যামার ফিল্মসের সিরিজটির প্রথম দুটি বাদে (এগুলি বেশ সুন্দর ভাবে নির্মিত হয়েছিল) বাকি সিনেমাগুলির পরের সিনেমার সঙ্গে কোন সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। বেশ কিছু ছবিতে ব্যারন চরিত্রটি বেশ দয়ালু, নায়কের মতো সুঠাম দেহ, আবার অন্য কোনটায় নির্দয়, আর সাক্ষাত শয়তানের রূপে দেখা গিয়েছে।
হ্যামার ফিল্মস [ ১৯৫৭ – ১৯৭৪ ] | |||||||
ক্রম | চলচ্চিত্রের নাম | সাল | ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় | দৈত্যের ভূমিকায় | পরিচালক | সিনেমার পোস্টার | |
০১ | The Curse of Frankenstein | 1957 | Peter Cushing | Christopher Lee |
Terence Fisher | ||
০২ | The Revenge of Frankenstein | 1958 | Peter Cushing | Michael Gwynn Peter Cushing | |||
০৩ | The Evil of Frankenstein | 1964 | Peter Cushing | Kiwi Kingston | Freddie Francis | ||
০৪ | Frankenstein Created Woman | 1967 | Peter Cushing | Susan Denberg |
Terence Fisher
| ||
০৫ | Frankenstein Must Be Destroyed | 1969 | Peter Cushing | Freddie Jones | |||
০৬ | The Horror of Frankenstein | 1970 | Ralph Bates | David Prows | |||
০৭ | Frankenstein and the Monster from Hell | 1974 | Peter Cushing | ||||
১৯৫৯ সালে হ্যামার আধ-ঘন্টার একটা টিভি সিরিজের পাইলট এপিসোড বানানোর চেষ্টা করে, কলোম্বিয়া পিকচার্স এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। Anton Diffring ব্যারনের ভূমিকায়, Don Megowan দৈত্যের ভূমিকায় অভিনয় করেন। Curt Siodmak এর পরিচালনার দায়িত্ব নেন। কিন্তু দুই কোম্পানির মধ্যে মতভেদের কারণে এটার পরিকল্পনা বানচাল করে দেওয়া হয়। যদিও এখন এটির একটি ডিভিডি ভার্সান বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ( ১৯৫০ – ১৯৬০ )
- ১৯৫৭ সালে আমেরিকান ইন্টারন্যাশেনাল পিকচারস্ স্বল্প বিনিয়োগে I Was a Teenage Frankenstein নামের একটা ছবি বানান, এর ঠিক কয়েকমাস পুর্বে I Was a Teenage Werewolf এর সাফল্যের কারণে। এখানে মহান বিজ্ঞানীর পরিবর্তে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন একজন প্রফেসর, গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া সব তরুণ তুর্কিদের দেহাবশেষ দিয়ে এক দৈত্যের সৃষ্টি করেন, এবং পরবর্তীতে এক সেই প্রাণীটিকে দিয়ে এক নিরীহ সৌম্যদর্শন তরুণকে খুন করার উদ্দেশ্যে পাঠান (খুনের পরে তার মুখের অবয়ব বসবে সেই দৈত্যের মুখের ওপরে)। Whit Bissell প্রফেসর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়েছিলেন আর দৈত্যের ভূমিকায় অভিনয় করেন Gary Conway। এর পরে How to Make a Monster, নামে একটি ছবি মুক্তি পায় ১৯৫৮ জুলাই মাসে, সেই ছবির অভিনেতা Gary Conway অন্য একটা ছবিতে ছোট্টবেলার ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
- ১৯৫৮ সালে নামের আরেকটি ছবি Frankenstein 1970 মুক্তি পায়, যার মূল থিম ছিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার, এবং চলচ্চিত্র জগত। Boris Karloff ডঃ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যিনি তার নিউক্লিয়ার ল্যাবে কৃত্রিম উপায়ে চলচ্চিত্রের নানা কুশলীবদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে নিজের একটি ক্লোন বানান। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল তার ক্লোনের মাধ্যেমে নিজের জিনকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিয়ে যাওয়া।
- ১৯৫৮ সালে Frankenstein’s Daughter নামের আরেকটি অদ্ভুত ছবি মুক্তি পায়, এতে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের বর্তমান বংশধর Donald Murphy, অদ্ভুতদর্শন এক মহিলার দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জুড়ে Jekyll/Hyde এর মতো এক ধরনের সিরামের সাহায্যে তার ওপরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন, দেখানো হয়। এতে John Ashley এবং Sandra Knight অভিনয় করেছেন ।
- ১৯৬১ সালে Frankenstein, el Vampiro y Cia(“Frankenstein, the Vampire and Company”) নামের আরেকটি ছবি মুক্তি পায়, এটা ইউনিভার্সালের ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের শেষ ছবি “Abbott and Costello Meet Frankenstein” এর মেক্সিকান রিমেক।
- ১৯৬৫ সালে Furankenshutain tai Chitei Kaijû Baragon (Frankenstein Conquers the World) নামের Ishirō Honda’র একটি জাপানি tokusatsu kaiju ছবি জাপানের গডজিলা বা গজিরা সিরিজের ছবিগুলির জন্য বিখ্যাত Toho Company Ltd ব্যানার থেকে মুক্তি পায়। ছবিটির শুরু ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। Reisendorf এর ল্যাব থেকে দৈত্যের হার্ট চুরি করে নাৎসিবাহিনী সেটাকে জাপানে নিয়ে যায়। অমরত্বের কারণে সেই হার্টটি জাপানের হিরোশিমার অ্যাটম বোম বিস্ফোরণের পরেও অক্ষত থাকে, এবং সেটার থেকে এক নতুন শরীরের সৃষ্টি হয়, সেটা প্রোটিনের মাধ্যমে জীবিত আছে, প্রোটিনের শোষণের মাধ্যমে শেষপর্যন্ত সেই দেহ বৃদ্ধি পেতে পেতে বিশালাকৃতি এক দৈত্যে পরিণত হয় এবং সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সেইসময় মধ্য তরাই অঞ্চলের দৈত্য Baragon এক গ্রামের মানুষ ও পশুদের ওপরে আক্রমণ চালাচ্ছিলো, ঘটনাচক্রে সে সেখানে গিয়ে পৌঁছায় আর তাদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। পরে এই ছবির আরেকটি ভাগ মুক্তি পেয়েছিল।
- ১৯৬৫ সালে :Frankenstein Meets the Space Monster নামের একটি ছবি মুক্তি পায়, এতে দেখা যায়, মঙ্গলবাসী মার্শিয়ানরা পৃথিবীর নারীদের তাদের গ্রহে নিয়ে গিয়ে বসতি বাড়িয়ে তোলার উদ্দেশ্যে নিয়ে তাদের অপহরণ করতে এসেছে। তাদের জন্য নাসার একটা মহাকাশযান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, সেইসময় হিউম্যানয়েড রোবট পাইলট ব্যাপকভাবে বিকৃত হয়ে গিয়ে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের মতো এক দৈত্যে পরিণত হয়, তার হাতে চলে আসে পৃথিবীর নারীবাহিনীকে বাঁচানোর গুরুদায়িত্ব।
- ১৯৬৬ সালে :Jesse James Meets Frankenstein’s Daughter. নামের একটি ছবি মুক্তি পায়। পরিচালক William Beaudine এর সাই-ফাই ছবিতে দেখা যায়, ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের প্রপৌত্রী মারিয়া ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনকে। মারিয়া Jesse James’ (John Lupton) এর নানান পাপকাজের সহকারী ষণ্ডামার্কা সাকরেদ হ্যাঙ্ক ট্রেসি (Cal Bolder) আইনের ফাঁদে আটকা পড়ার হাত থেকে বাঁচায় ও তার সৃষ্টির নতুন নামকরণ করে ইগর। Narda Onyx মারিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেন।
- ১৯৬৬ সালে Furankenshutain no Kaijû: Sanda tai Gaira (The War of the Gargantuas) নামের ছবিটি Honda’র জাপানি ছবির সিক্যুয়েল। ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্যের বিভক্ত কোষ বৃদ্ধি পেয়ে দুটো বিশালাকৃতি ভ্রাতৃসম দৈত্যের সৃষ্টি হয়। ছেলেবেলা থেকেই বিজ্ঞানীদের কাছে পালিত শান্ত স্বভাবের সান্দ্রা (বাদামী রঙের Gargantua ) আর অমিত শক্তিধর ক্রুর প্রকৃতির দৈত্য গারিয়া (সবুজ রঙের Gargantua) যে নরখাদক। টোকিওতে এই দুই দৈত্যের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
সত্তর ও আশির দশকে (১৯৭০ – ১৯৮০)
- ১৯৭১ সালে Al Adamson এর পরিচালনায় Dracula vs. Frankenstein নামের ছবিটি অতি স্বল্প বাজেটের হরর, থ্রিলার ছবি মুক্তি পায়। এতে বর্ষীয়ান অভিনেতা Carroll Naish ও Lon Chaney Jr অভিনয় করেছেন, ছবিতে কাউন্ট ড্রাকুলা (Vorkov) ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্যের দেহ উদ্ধার করেন আর সেই বংশের শেষ বংশধরের (John Bloom) মাধ্যমে দৈত্যের শরীরে পুনরায় প্রাণের সঞ্চার করেন।
- ১৯৭১ সালে ইতালির ছবি La Figlia di Frankenstein(“The Daughter of Frankenstein”) নর্থ আমেরিকায় Lady Frankenstein নামে মুক্তি পেয়েছিল। ছবিটিতে Joseph Cotten ব্যারন ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় অভিনয় করেন, ছবির শুরুতেই তার সৃষ্ট দৈত্যের হাতেই তার মৃত্যু হয়। ব্যারনের কন্যার ভূমিকায় ছিলেন Sara Bay, সে একজন সৌম্যদর্শন যুবকের দেহ আর তার বুদ্ধিমান ঘরকুনো প্রেমিকের (Paul Muller) মগজ দিয়ে এক নতুন দৈত্যের সৃষ্টি করে।
- ১৯৭২ সালে Jesús Franco একটি ছবি বানান Dracula Contra Frankenstein(“Dracula Vs. Frankenstein”), নর্থ আমেরিকায় সেটি Dracula, Prisoner of Frankenstein নামে মুক্তি পেয়েছিল। ছবিটিতে Dennis Price ব্যারন ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় অভিনয় করেন, তিনি তার দৈত্যকে সাহায্য করার জন্য ড্রাকুলাকে (Howard Vernon) পুনরুজ্জীবিত করেন। একদল ভ্যাম্পায়ার সেনাকে পরাজিত করার সময় দৈত্যকে সাহায্য করা ও বিশ্বজয় করার জন্যই এই ব্যবস্থা করেন ব্যারন।
- ১৯৭২ সালে আগের ছবির মতোই এর সিক্যুয়েলেও একই মশলা মিশিয়ে ড্রাকুলা/ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন ক্রসওভার বানান ফ্র্যাঙ্কো। The Erotic Rites of Frankenstein ছবিটি অনেক জায়গায় The Curse of Frankenstein নামে মুক্তি পেয়েছিল, কিন্তু একই নামের হ্যামার ফিল্মস এর ছবিটির সঙ্গে এর কোনো মিল নেই । ছবিটিতে Dennis Price ব্যারন ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় অভিনয় করেন, ছবির শুরুতেই শয়তান Count Cagliostro (Howard Vernon) সাকরেদের হাতে তার মৃত্যু হয়, যিনি ব্যারনের দৈত্যেকে কাজে লাগিয়ে সারা দুনিয়াতে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চান।
- ১৯৭২ সালে Mario Mancini একটি ছবি বানান, ছবিটি Frankenstein 80 নামে মুক্তি পায়। ছবিটিতে Albrechtstein নামের একজন আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীকে দেখানো হয়েছে, যিনি Mosaico (Xiro Papas) নামের এক দানবের সৃষ্টি করেন। Mosaico পরে লোভের বসে নরঘাতী হয়ে ওঠে, সেই সঙ্গে তার শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলো বিকল হতে শুরু করে।
- ১৯৭৩ সালে William A. Levey একটি স্বল্প বিনিয়োগের blaxploitation গোত্রের ছবি বানান, ছবিটি Blackenstein বা Black Frankenstein নামে মুক্তি পায়। ছবিটি একই গোত্রীয় ও প্রায় একই বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ড্রাকুলার ওপরে বানানো “ব্ল্যাকুলা”র সাফল্য চুর্ণ করার জন্য বানানো হয়েছিল।
- ১৯৭৩ সালে Andy Warhol এর ছবি Flesh for Frankenstein নামে মুক্তি পায়। Udo Kier ব্যারনের ভূমিকায় অভিনয় করেন, তিনি খ্যাপাটে হলেও একজন বুদ্ধিধর বিজ্ঞানী যিনি একটা পুরুষ ও একটা স্ত্রী জম্বি বানান, এক নতুন উন্নত মনুষ্যজাতি গড়ার উদ্দেশ্যে। Joe Dallesandro তার সহকারীর ভূমিকায় ও Monique van Vooren ব্যারনের nymphomaniac স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন।
- ১৯৭৬ সালে Victor Frankenstein(The Terror of Frankenstein,) নামের একটি ছবি বানানো হয়, যেটির কাহিনিটি আসল নভেলের থেকে নেওয়া হয়েছিল। এতে ভিক্টরের চরিত্রে Leon Vitali আর দৈত্যের চরিত্রে Per Oscarson অভিনয় করেন।
- ১৯৮১ তে আরেকটি জাপানি ছবি মুক্তি পায়, এটি Kyofu Densetsu: Kaiki! Furankenshutain নামের একটি অ্যানিমেশান ছবি। আমেরিকাতে এটি The Monster of Frankenstein নামে মুক্তি পেয়েছিল।
- ১৯৮৪ তে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ওপরে আরও একটি ছবি মুক্তি পায়, নাম ছিল Frankenstein’s Great Aunt Tillie। এটি ট্রান্সেলভ্যানিয়ার ওপরে বানানো একটি কমেডি ছবি।
- ১৯৮৫ তে Franc Roddam এর নির্দেশনায় The Bride নামে একটি ছবি মুক্তি পায়। Clancy Brown এতে দৈত্যের ও বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী Sting ডক্টরের ভূমিকায় অভিনয় করেন। কাহিনির শুরুতেই দেখা যায় দৈত্য এক সার্কাসের বামনের (David Rappaport) সঙ্গে ইউরোপের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ও অবাক চোখে সবকিছু দেখছে, অন্যদিকে ডঃ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তার সৃষ্ট রমনীর সঙ্গে প্রেমে পড়ে যান। Jennifer Beals ব্রাইডের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন । এতে মূলত ত্রিকোণ প্রেমের প্রভাবে তিনটি চরিত্রের মনের অন্তরদ্বন্দ্ব তুলে ধরা হয়েছে।
- ১৯৮৭ তে Fred Dekker এর পরিচালনায় TriStar Pictures এর তরফ থেকে The Monster Squad নামের একটি কমেডি/হরর ফিল্ম মুক্তি পেয়েছিল। এই ছবিতে বেশ কিছু সংখ্যক ক্লাসিক ভিলেন চরিত্র যেমন;- ড্রাকুলা, ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্য, উল্ফ ম্যান, মমি ও গিল ম্যান প্রভৃতির দেখা মিলেছিল।
নব্বই এর দশকে ও বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত …
- ১৯৯০ তে Fred Dekker এর নভেলের ওপর ভিত্তি করে Roger Corman পরিচালনায় (এটি তার পরিচালিত শেষ ছবি) Frankenstein Unbound নামের একটি সাই-ফাই ফিল্ম মুক্তি পেয়েছিল। এই ছবিতে একজন বিজ্ঞানী সময়ে ভ্রমণ করে অতীতে পিছিয়ে গিয়ে ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন (Raúl Juliá) ও তার সৃষ্ট দৈত্য, এমনকি মেরি শেলীর সঙ্গেও দেখা করেন।
- ১৯৯২ তে David Wickes কাহিনি ও পরিচালনায় Frankenstein নামের একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। এই ছবিতে দৈত্যটিকে বিভিন্ন মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে বানানো হয়নি, এতে আমরা দেখতে পাই এটা ডঃ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের নিজের ক্লোন, এবং স্রষ্টা (Patrick Bergin) ও তার সৃষ্টির (Randy Quaid) মধ্যে একটি মানসিক বন্ধন রয়েছে। সেভাবেই এলিজাবেথের (Fiona Gillies) দেহ দিয়ে আরেকটি সমতুল্য দৈত্য প্রায় বানিয়ে ফেলা হয়েছিল।
- ১৯৯৪ তে Kenneth Branagh এর পরিচালনায় Mary Shelley’s Frankenstein নামের ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। পরিচালক নিজেই এই ছবিতে ডঃ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই ছবিতে Robert De Niro দৈত্যের ভূমিকায়, Tom Hulce হেনরি এবং Helena Bonham Carter এলিজাবেথের ভূমিকায় অভিনয় করেন। নামকরণ এক হলেও বহুক্ষেত্রে এই ছবি মূল নভেলের থেকে অনেকটাই আলাদা।
- ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত Van Helsing. এই ধরনের মনস্টার মুভির ক্ষেত্রে এক বিপ্লবের সূচনা করেছিল, ইউনিভার্সাল পিকচার্স তাদের ৩০ ও ৪০ এর দশকের বিখ্যাত ছবিগুলোকে নতুনভাবে একটা ইউনিভার্সে প্রতিষ্ঠা করেন। এই ছবিটিতে ফ্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্যকে আরও জনপ্রিয় করার জন্য ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন নামেই ডাকা হয়েছে, কিন্তু আগের দশকের বেশিরভাগ ছবিতে তাকে হয় “ক্রিয়েশান” নয়তো “ক্রিয়েচার” নামেই ডাকা হতো। এছাড়া এই ছবিতে তার চেহারার ক্ষেত্রেও বেশকিছু পরিবর্তন করা হয়, তার মগজ আর হৃৎপিণ্ড বাইরে থেকে দেখা যেতো। এই গল্পে মূল চরিত্রে ছিলেন হিউ জ্যাকম্যান, Shuler Hensley এতে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
- ২০০৪ সালে Frankenstein The True Story নামের আরও একটি দুই এপিসোডের মিনি সিরিজ হয়েছিল, এটি আসল নভেলের ওপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছিল।
- ২০০৫ সালের ছবি Frankenstein vs. the Creature from Blood Cove তে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্যকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলা হয়। সেই সঙ্গে এই ছবিতে ছিল আধা-মানুষ ও আধা-মাছের মতো বেশকিছু প্রাণী, শেষপর্যন্ত সে পরিকল্পনা বিফলে যায়।
- Olympic Productions এর তরফ থেকে ২০০৬ সালে Perfect Woman নামের একটি ছায়াছবি মুক্তি পায়। এতে আধুনিক যুগের একটি কাহিনি বর্ণীত হয়েছে। এতে দেখা যায় একটা রিয়েলিটি গেম শো এর ঘটনা যাতে একজন পারফেক্ট ওম্যান তার জীবনসঙ্গী হিসেবে একজন পারফেক্ট ম্যান (Marcus Schenkenberg) কে খুঁজে বেড়াবে, এই খেলার পেছনের আসল ষড়যন্ত্র খুব লোকই জানেন। এই খেলা আসলে এক কুটিল প্রতিভাধরের বিভিন্ন রমণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে একটি পারফেক্ট ওম্যান বানানোর চক্রান্ত।
- ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত Subject Two নামের এই ছবিটির কাহিনিকার ও পরিচালক ছিলেন Philip Chidel। এটা দেখানো হয়েছে এক মর্ডান ন্যানোটেকনলেজির আঙ্গিকে। এই কাহিনিতে একজন মোহমুক্ত মেডিকেল স্টুডেন্ট এক বরফাচ্ছন্ন পাহাড়ী অঞ্চলে গিয়ে ডঃ ভিকের সন্ধান পান।
- ২০০৮ এ মুক্তিপ্রাপ্ত Death Race ছবিতে জেসন স্ট্যাটহ্যামের চরিত্রটি একজন রেসার ড্রাইভার, যিনি ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন ছদ্মনাম নেন। এই চরিত্রটির আগের ঘটনাবলী আমরা এর প্রিক্যুয়েল Death Race 2 ও Death Race 3: Inferno ছবিগুলিতে দেখতে পাই।
- ২০০৯ সালে Richard Raaphorst এর পরিচালনায় Army of Frankenstein নামের একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল। এই ছবিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৪৫ সালের জার্মান ও পোল্যান্ডের সীমান্তযুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
- ২০১০ সালের Dino Stamatopoulos এর পরিচালনায় Mary Shelley’s Frankenhole নামের একটা মার্কিনের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বানানো স্টপ-মোশান অ্যানিমেশান ধারাবাহিক তৈরি করা হয়েছিল। এটা দু’বছর দুটো সিজন আর ২০ টা এপিসোডে শেষ হয়ে যায়।
- ২০১১ সালে BBC Threeতে একটি Frankenstein’s Wedding – Live in Leeds নামের মিউজিকাল ড্রামা দেখানো হয়েছিল। এতে ভিক্টর ও এলিজাবেথের প্রেমের সম্পর্ক সুন্দর সংগীতের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছিল, এবং এর মাধ্যমেই পুরো কাহিনি দেখানো হয়। এটা ১৯শে মার্চ, ২০১১ তে লাইভ সম্প্রসারণ করা হয়।
- ২০১১ তেই Frankenstein: Day of the Beast নামের আরকটি মার্কিন হরর ছবি মুক্তি পেয়েছিল। এটার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন Ricardo Islas.।
- ২০১২ সালে সোনি পিকচার্স অ্যানিমেশানের পক্ষ থেকে মুক্তি পায় Hotel Transylvania নামের একটি থ্রিডি অ্যানিমেটেড ছবি। এই ছবিতে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্য ছুটি কাটাতে বাকি অনেক দৈত্যদের মতোই ড্রাকুলার হোটেল “হোটেল ট্র্যান্সেলভ্যানিয়ায়” পৌঁছায়। এখানে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্যকে ফ্র্যাঙ্ক নামে ডাকা হয়েছে, এবং সম্পর্কে সে ড্রাকুলার মেয়ে মেভিসের কাকা। কমেডি অভিনেতা Kevin James তার কণ্ঠে আওয়াজ দিয়েছিলেন, সেই সঙ্গে তার ব্রাইডকেও দেখা গেছে, এতে তাকে ইউনিস নামে ডাকা হয়েছে। ব্রাইডের কণ্ঠের আওয়াজ দিয়েছিলেন Fran Drescher। এটি মুক্তির পরেও হোটেল ট্রান্সেলভ্যানিয়ার দুটি সিক্যুয়েল Hotel Transylvania 2 ২০১৫ সালে ও Hotel Transylvania 3: Summer Vacation এবছর জুলাই মাসে মুক্তি পাবে।
- I, Frankenstein, ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকশানধর্মী ছবি। এতে দেখানো হয়েছে বর্তমান যুগে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্যের নামকরণ করা হয়েছে অ্যাডাম, আরো দেখানো হয়ে বহু শতাব্দীর পুরানো দুই অমর সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘটে চলা এক জাতিবিবাদের কথা।
- ২০১৫ সালে Paul McGuigan এর পরিচালনায় Victor Frankenstein ছবিটি মুক্তি পায়। এতে ইগরের দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো কাহিনিটি বর্নিত হয়েছে। ভিক্টর ও ইগরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, যথাক্রমে James McAvoy ও Daniel Radcliffe।
- ২০১৫ সালে Bernard Rose’sFrankenstein এর উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে আধুনিক সময়ের একটি ছবি করা হয়েছিল। ছবিতে ভিক্টর ও তার স্ত্রী বিভিন্ন মৃতদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জুড়ে বানানোর বদলে, এবারে দৈত্যটিকে সৃষ্টি করেছেন অরগ্যানিক জেনেসিস বা ডি এন এ ম্যনেপুলেশানের মাধ্যমে। ছবিটি দৈত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বর্নিত হয়েছে।
- ২০১৮ তে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ইউনিভার্সাল পিকচার্স নতুন দর্শকদের উদ্দ্যেশে নতুনভাবে তাদের ক্লাসিক “ইউনিভার্সাল মন্সটার্স” সিরিজকে রিবুট করার সিদ্ধান্ত নেয়, সেইমতো ২০১৪ সালে ড্রাকুলা আনটোল্ড ছবির মধ্যে দিয়ে শুরু হয় সেই যাত্রা, আশানুরূপ সাফল্য না দেখে এবার ইউনিভার্সাল তাদের আরেকটি হিট ফ্র্যাঞ্চাইজি মমিকে বেছে নেয় পরবর্তী রিবুটের জন্য, ২০১৭ তে মুক্তি পায় Alex Kurtzman পরিচালিত “দ্য মমি” র রিবুট, নামভূমিকায় টম ক্রুজ, আর মমির চরিত্রে (Sofia Boutella). ২০১২ সালে মার্ভেলের সুপারহিরো ক্রসওভার ফিল্ম অ্যাভেঞ্জার্স এর সফলতার পর থেকে হলিউডে যেন ক্রসওভার আর শেয়ার্ড ইউনিভার্স বানানোর হিড়িক ওঠে। ইউনিভার্সাল ঠিক করে তাদের এই ক্ল্যাসিক মনস্টার ফিল্মস্ এর রিবুট সিরিজের নাম রাখা হবে “ডার্ক ইউনিভার্স”। ২০১৭ র মমি ছবিতেও সেরকমই ইঙ্গিত দেখানো হয়েছিল, এখানে দেখানো হয়েছিল প্রোডিজিয়াম নামের একটি গোপন সংগঠন, যার কাজ এই ধরনের দৈত্যদের ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে যাওয়া ও তাদের ওপর গবেষণা করা। এই সংগঠনের হর্তাকর্তা হিসেবে ডঃ হেনরি জেকএল (Russell Crowe) কে দেখানো হয়েছিল। ইউনিভার্সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী “দ্য মমি”-র মুক্তির পরে ইনভিজিবল ম্যান, উল্ফ ম্যান, ভ্যান হেলসিং, ক্রিয়েচার ফ্রম দি ব্ল্যাক লেগুন ও ব্রাইড অফ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন প্রভৃতি প্রজেক্ট পরপর বেরনোর কথা ছিল, সেইমতো বেশ কিছু চরিত্রের চরিত্রাভিনেতাদের বাছার কাজও প্রায় চুড়ান্ত পর্যায় পৌঁছায়, ২০১৯ এ Guillermo del Toro এর পরিচালনায় ব্রাইড অফ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, ঠিক হয়েছিল ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন দৈত্যের ভূমিকায় অভিনয় করবেন হোভিয়ের বার্দেম এবং ব্রাইড হবেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। কিন্তু “দ্য মমি” মুক্তির পরে তা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে আর অ্যালেক্স চুপিচুপি তার পরবর্তী প্রজেক্ট এর জন্য “ডার্ক ইউনিভার্স” কে অন্ধকারে রেখেই বিদায় নেন। তাই আপাতত এই “ডার্ক ইউনিভার্স” এর সমস্ত প্রজেক্ট সাময়িকভাবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, যতদিন না ভালো একটা স্ক্রিপ্ট পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৭ র শেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে ইউনিভার্সাল পিকচার্স গ্যাল গ্যাডট্ কে নিয়ে নতুন ছবির পরিকল্পনা করছে।
এই গেল চলচ্চিত্রের ইতিহাস, এছাড়াও ফ্যাঙ্কেনস্টাইনকে নিয়ে ১৮ টির কাছাকাছি প্যারোডি মুভি, ৭৮টি টিভি সিরিজ ও বিভিন্ন স্থানে পপ কালচার রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩০টির কাছাকাছি মিউজিক ভিডিও, ১০টি রেডিও অ্যাডাপ্টেশান, ১০টি নাটক, ২২টির কাছাকাছি নভেল, নানা ধরনের মার্চেন্ডাইস বা অ্যাকশান ফিগার রূপে এবং ডিসি ও মার্ভেল কমিক্স সহ অনেকগুলি বড়ো কমিক্স হাউস থেকে বহুবার ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনকে নানাভাবে, নানারূপে দেখা গেছে। এইভাবেই প্রায় দুই শতক পার করে ডঃ ফ্যাঙ্কেনস্টাইনের সেই দৈত্য কবে যেন নিজের অজান্তেই আমাদের কাছে “ফ্র্যাঙ্কদাদা” হয়ে উঠেছেন।
তথ্যসূত্র ও চিত্র সৌজন্যেঃ
০১। Wikipedia
০২। Imdb
০৩। bing
০৪। Google Images
০৫। bloody-disgusting.com
০৬। Pinterest
Tags: তৃতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা, প্রবন্ধ, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন - রুপোলী পর্দার রূপকথা, বিশেষ আকর্ষণ, রূপক ঘোষ
রূপোলী পর্দায় ছায়া ঘেরা এক চেতনার বারে বারে ফিরে আসা। সেই সামগ্রিকতার বয়ান নির্মেদ পরিবেশনে উঠে এসেছে। সুখপাঠ্য।
Onek Dhonyobad Dada. Eti amar Prothom Probondho, sei hisebe ekta ashonka chilo je lekhata likhchi seta tothyoohul holeo jeno beshi boring nah hoy, kintu swolpo porisore lekhar chesta korleo seti kromei
bilombito hoyeche. Asa kori bhobishotye aro bhalo lekha likhte parbo. Apnar Suchintito motamoter jonno Dhonnobad. 🙂
অসাধারণ। দুর্দান্ত। খুব ভালো লাগলো পড়ে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্যে।
Bah.. Besh sundor,guchiye lekha.. Informative to obviously.. Lekhatar pichone jemon time legeche temni toke porteo hoyeche..well done,bhai..
Darun hyeche dada.. evabe aka r lekhalikhi simultaneously chaliye jao…
শৈশবকালের অতন্ত আকর্ষণীয় একটি চরিত্র…অনেক না জানা কথা জানলাম… আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটি সুন্দর প্রবন্ধ আমাদের উপহার দেবার জন্য… ভবিষ্যতে এরকম আরও উপহার পাবার আসায় থাকলাম।