বিশ্বপ্রাণ
লেখক: দেব কুমার বসু
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)
–১–
আজ এখন
ধীরে জ্ঞান ফিরে আসছিল লুসিফারের। মাথার পিছন দিকে প্রচণ্ড ব্যথা। তার চোখ বাঁধা, হাত-পাগুলো নাড়ানোর প্রশ্নই নেই, কারণ শক্ত নাইলনের দড়ি দিয়ে হাত-পাও বাঁধা। সে বুঝতে পারল গাড়ির ট্রাঙ্কে ভরে কোথাও নিয়ে চলেছে লোকটা বা লোকগুলো। লোকটা একা ছিল না, কোথা থেকে মাটি ফুঁড়ে চলে এসেছিল ওর শাকরেদরা! লুসিফার সাবধান হওয়ারও সময় পায় নি!
লোকগুলো খুব একটা পাকাপোক্ত নয় বলে মনে হচ্ছে লুসিফারের। তার আস্তিনের ভিতরদিকে একটা লুকোন ইঞ্চি-তিনেক লম্বা ছুরি থাকে। সেটা এখনও তার আস্তিনের ভিতরেই আছে! লোকগুলো সেভাবে তাকে ‘সার্চ’ করে দেখেনি। কিন্ত এই অবস্থায় ছুরিটা বের করে হাতের দড়িটা কাটা সহজ হবে না! তার হাতদুটো পিছমোড়া করে বাঁধা। কিন্ত চেষ্টা তো করতেই হবে।
লুসিফার একজন ‘কর্পোরেট এলিমিনেটর’। সোজা ভাষায় টাকা নিয়ে নিখুঁতভাবে সরিয়ে দেয় কাগজপত্র, সাক্ষ্যপ্রমাণ কিংবা মানুষ! তার মক্কেল হল নামিদামী সংস্থাগুলি। তার আসল নাম কেউ জানে না। হাইপার-ভিপিএন-এ তার কাছে ‘অর্ডার’ আসে। তার পাবলিক লেজারে সেই কোম্পানির শেয়ার আপডেট হলেই সে কাজ শুরু করে দেয়। সরাসরি টাকা বা কমডিটি সে নেয় না, ওতে সরকারি নজরদারির ভয় বেশি।
এই ‘অর্ডারটা’একটু বেশি বাড়াবাড়ি ছিল। এপর্যন্ত মাত্র চারটে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’-এ তাকে মানুষ খুন করতে হয়েছে। কিন্ত এবার একসঙ্গে এগারজনকে সরিয়ে দিতে হত তাকে! সাধারণ চাকুরের দল একটা। তবে পারিশ্রমিকটাও ছিল মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতই! তাই ‘হ্যাঁ’ বলতে দুবার ভাবে নি সে! কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ব্যাপারটা আরও একটু তলিয়ে দেখলে ভাল হত।
প্রথম দুজনকে সরাতে কোনও অসুবিধা হয় নি, আজ ছিল তিন নম্বরের পালা। তার কাছে পাকা খবর ছিল, আজ সন্ধে সাতটার পরে লোকটা একাই থাকবে ফ্ল্যাটে। সাতটা দশ নাগাদ, লোকটার ফ্ল্যাট থেকে তিনজন বেরিয়ে যায়। সুযোগ বুঝে, আঘাত হানতে ঘরে ঢোকে লুসিফার। দরজা খোলার শব্দ পায় নি লোকটা, দরজার দিকে পিছন ফিরে বসে নিশ্চিন্তে একটা ‘জায়ান্ট কমিউনিকেটর’ – এ কিছু তথ্য দেখছিল। নিশ্চিত হবার জন্য পয়েন্ট-ব্ল্যাংক থেকে মাথায় গুলি করতে চেয়েছিল লুসিফার, অবশ্য মাথায় গুলি করাটাই খুন করার একমাত্র উপায় ছিল।
কারণ, এটাই ছিল তার ‘অর্ডার’-দাতার একমাত্র শর্ত! ‘অর্ডার’-এর মেসেজটায় মজা করে লেখাছিল, ‘ইট শুড বি আ নো-ব্রেন জব’। একটু আজব ধরনের শর্ত তাতে সন্দেহ নেই!
কিন্ত এখন গুলিটা চালানোর আগেই একটা প্রচন্ড আঘাত লাগল মাথায়। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরে সে শুধু দেখতে পেয়েছিল, তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে দুজন।আরও বেশ কয়েকজন বেরিয়ে আসছে পাশের ঘরটা থেকে! তখনি মাথায় আবার আঘাত, আর কিছু মনে নেই লুসিফারের!
–২–
একমাস আগে – কর্পোরেট সিকিউরিটি দপ্তর, ইওন ন্যানসিস্টেমস–র অফিসের ছাব্বিশ তলা
শাম্বর এই এক নতুন সমস্যা শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে, সাংঘাতিক ঘুম পাচ্ছে তার, সারাদিনই পাচ্ছে! অথচ এখন কাজের চাপ মোটেই সেরকম বেশি নয়। সে ‘লেট নাইট’ একদমই করে না। কফির পর কফি খেয়েই চলে, তবুও চোখ ঢুলে আসে। গতকাল নবীনও একই জিনিস বলছিল। নবীন তো কাল ডেস্কের উপরে মাথা রেখে রীতিমত নাক ডাকাচ্ছিল! তবে নবীন বেশ ফুর্তিবাজ লোক, তার জাগা-ঘুমনোর সময় খুব একটা ভদ্রজনোচিত বলা যায় না। কিন্তু শাম্বর মত সাবধানী এবং রুটিন মেনে চলা মানুষের কেন এরকম হবে! শাম্ব শহরের বিখ্যাত থেরাপিস্ট ডঃ সেনের খুড়তুতো ভাই। কালকেই হয়ত দেখা হবে, বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান আছে, উনিও আসবেন সময় পেলে।
মজাটা হল, ইদানীং আরও একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। তার মনে হয়, কেউ যেন ক্রমাগত তার মাথার মধ্যে বলে চলেছে, ‘ঘুমিও না…ঘুমিও না’!যেন একটা সাবধানবাণী! সেটা সম্ভবতঃ ঐ ঘুম না হওয়ার জন্যই, … মাথাটা গোলমাল করছে!
“আজেবাজে খাবার খাস না, এই ২১০৮ সালেই আমাদের শিলিগুড়ি শহরে এই রকম অসুখে ভুগে আমার কাছে এসেছেন অন্তত একশো মানুষ। শহরের দূষণ-পর্ষদ তো আছে নামমাত্র, শুধু ভোটের সময় নেটওয়ার্ক ব্লক করে কাজের ফিরিস্তি শোনায়! …যত্তসব ! এই ব্যাপারে ব্যাটারা দেড়শ বছর ধরে একই রকম আছে!”, কথাটা শেষ করে হাতের খাবারের প্লেটে মন দিলেন ডঃ মণিশংকর সেন।
“না মণিদা, আমি তো এসব ব্যাপারে ভীষণ সাবধানী। আসলে, কি জান, ঘুমের সময়টা কিন্তু কমে যায় নি! অথচ, ঘুম থেকে উঠেও মাথাটা যেন চলতেই চায় না! মনে হয় এইমাত্র অফিস করে ফিরলাম!”, শাম্ব বুঝতে পারল, মণিদা তার সমস্যাটা ঠিক বুঝতে পারেন নি।
“পরশু একবার আসিস, কয়েকটা টেস্ট করে নেব!”
শাম্ব এবারে নিজেও খাবারে মন দিল।
দিন চারেক পরে অফিস চলাকালীনই ডঃ সেনের ফোন পেয়ে একটু অবাক হল শাম্ব! এসময় মণিদার ফোন মানে কিছু একটা ঘটেছে!
“বল মণিদা…”
“তুই একবার অফিসের পরে আমার বাড়ি আসিস… জরুরি! তুই জগন্নাথ সরকার বলে কাউকে চিনিস? … আচ্ছা, বাড়ি আয়, কথা হবে!” মণিদা ফোনটা কেটে দিলেন।
জগন্নাথ সরকারকে চেনে শাম্ব। তারই দপ্তরে কাজ করেন ভদ্রলোক। তিনি আবার কি করলেন! নাহ, বিকেল অবধি বেশ রহস্যের মধ্যে থাকবে সে!
বিকেলে ডঃ সেনের বাড়ি পৌঁছে সে দেখল উনি আগেই বাড়ি ফিরে শাম্বর অপেক্ষা করছেন।
“দুটো ব্যাপারে আলোচনা করতে তোকে ডেকেছি আজকে। মন দিয়ে শোন, খুব রহস্যজনক!…
গতকাল সকালে আমার কাছে এক রোগী আসেন। নাম জগন্নাথ সরকার। তাঁর সমস্যাটা ঠিক সেদিন তুই যা বললি, হুবহু তাই! ঘুম হলেও ক্লান্ত মনে হয়, মাথার মধ্যে কে যেন বলে চলেছে ‘ঘুমিও না’ ইত্যাদি। তারপর যা জানতে পারলাম সেটা আরও অদ্ভুত! উনি তোদের অফিসেই চাকরি করেন, এবং তোর অফিসের আরও বেশ কয়েকজন এই সমস্যায় ভুগছেন! এটা কি কোনও ‘লোকাল প্রব্লেম’? ইনফ্যাক্ট, ওনাকেও আমি ব্রেন আক্টিভেশন টেস্ট করাই। আজ সকালে তাঁর রিপোর্ট আসে। তোর রিপোর্টটা আমার কাছে পড়েই ছিল, দেখা হয় নি। আজ দুজনেরটা একসঙ্গে দেখে আমি হতবাক! যেন একটা আরেকটার ফটোকপি!”
এতকিছু শুনে বেশ অবাক হয়ে গেছিল শাম্ব। দুজন মানুষের কি এক অসুখ হতে পারে না! মণিদা এত ভাবছেন কেন এটা নিয়ে ?
“এখনও শেষ হয় নি। জানিস তোদের রিপোর্ট কি বলছে ?”
শাম্ব চুপ করে রইল। তার মন বলছে, এবার রহস্যের মাত্রা বেড়ে যাবে। আর হলও তাই।
“তোদের রিপোর্ট বলছে, তোরা দিনের মধ্যে চব্বিশ ঘন্টাই কাজ করছিস। অর্থাৎ ঘুমের মধ্যেও তোদের ব্রেন জেগে থাকার মত একই রকম সক্রিয়! এভাবে চলতে থাকলে, খুব তাড়াতাড়ি তোদের ‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’ হতে চলেছে!”
শাম্ব কিছু একটা বলতে গেছিল, কিন্ত মণিদা তাকে হাত তুলে থামিয়ে দিলেন!
“এখনও শেষ করিনি আমি। … আজকে সকালে আমার কাছে তোদের অফিসের আরও দুজন এসেছিলেন। আমার মনে হয়, কালকে যখন তাদের রিপোর্ট হাতে পাব, …” কথাটা অব্যক্ত রেখে দিলেন ডঃ সেন।
“মণিদা, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, …এই ঘটনাগুলো হয়ত সমাপতন!”
“খুব বিপজ্জনক সমাপতন! …কয়েকদিন অফিস বন্ধ রাখ। আমার মনে হচ্ছে, তোদের অফিসের পরিবেশ বা খাবারে কিছু কন্টামিনেশন রয়েছে।”
–৩–
উনত্রিশ দিন আগে – শাম্বর বাড়ি
ঘুমটা ভেঙে গেল শাম্বর। অসহ্য ব্যথা করছে মাথার মধ্যে। কান ভোঁ-ভোঁ করছে… মাথার মধ্যে অ্যালার্মের মত বেজে চলেছে সেই একই সাবধানবাণী, “ঘুমিও না, ঘুমিয়ে পড়ো না… ওরা সব নিয়ে নিচ্ছে…।”
গভীর রাত, অসহ্য যন্ত্রণা উপেক্ষা করে উঠে পড়ল সে। রাত তিনটে বাজে। বাথরুমে গিয়ে ভাল করে মাথায় জল ঢালল, তারপর ফিরে এল শোয়ার ঘরে। খাটে শুতেই বিপ বিপ শব্দ করে উঠল বেডরুমের কমিউনিকেটরটা। এত রাত্রে কে কথা বলতে চায়? নবীন…!! শাম্ব সাতপাঁচ ভেবে গ্রহণ করল কলটা।
“কি ব্যাপার নবীন, এত রাত্রে ! কোন বিপদ হল নাকি?”
“একবার আমার এখানে চলে আয় শাম্ব! খুব জরুরি… এখানে বলতে পারব না। প্লিজ আয়!”
কেটে গেল কলটা। নবীন সাধারণতঃ ভিডিও অন করেই কল করে, কিন্তু আজকে শুধু অডিও! কেউ কি ওকে বাধ্য করছে কলটা করতে? শাম্ব ভেবে পেল না ঠিক কি করবে! কিন্তু যেতে তো হবেই!
অসম্ভব ঘুম পাচ্ছে, চোখদুটো যেন খুলতেই চাইছে না, কিন্ত পরক্ষণেই আবার মাথার মধ্যে সেই অশরীরী চেতাবনি,
“ঘুমিও না… ওরা সব নিয়ে নিচ্ছে!”
নবীনের বাড়িটা শহর ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা দূরে/ভেতরে। এত রাতেও কুড়ি মিনিট সময় লাগল। অবশ্য শাম্ব থাকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরের কাছে, তাই চব্বিশ ঘণ্টাই উড়ুক্কু এয়ারট্যাক্সিগুলো আকাশে জট পাকিয়ে রাখে। তাই শাম্ব অর্ধেক দূরত্ব রাস্তা দিয়ে এসেছে। নবীনের বাড়িতে ঢোকার মুখে এয়ারকার থামাতে হল তাকে।
বাড়ির গেটের মুখে বেশ কয়েকটা এয়ারকার পার্ক করা। তার মধ্যে তিনটে সে চিনতে পারল, আফিসেরই দীনেশ চৌবে, হান-সুং আর নরেশ গোটের।
এত রাত্রে নবীনের বাড়িতে কি করছে লোকগুলো। নির্ঘাত কোন সারপ্রাইজ পার্টি! পারেও বটে নবীনটা! এজন্যেই শুধু অডিও কল করেছিল!
বাড়িটা ভীষণ শান্ত, নিস্তব্ধ! দরজার সামনে দাঁড়াতে শাম্ব বুঝতে পারল দরজাটা খোলা।
সে দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকল। সামনের হলটা অন্ধকার। পিছনের দিকের লিভিংরুমটায় একটা হালকা নীল আলো জ্বলছে। মনে হচ্ছে বেশ কিছু মানুষের চাপা গলায় কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে! শাম্ব এগিয়ে গেল।
ঘরের মাঝখানে গোল করে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি মানুষ। সংখ্যায় তারা আটজন। সকলকেই চেনে শাম্ব, তাদের অফিসেরই সহকর্মী বা বন্ধু এঁরা। এঁকে অন্যের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা। শাম্বর মনে হল ছোটবেলায় লুকোচুরি খেলার আগে ঠিক এভাবেই গোল করে দাঁড়াত সকলে। কিন্ত এরকম হাতে হাত ধরে কেন দাঁড়িয়ে আছেন এঁরা!
শাম্ব ঘরে ঢুকতেই সকলে ফিরে দাঁড়াল তার দিকে। মানুষগুলো যেন যন্ত্রচালিত, তাদের চোখের দৃষ্টি কেমন যেন পাথরের মত নিশ্চল! শাম্বকে জায়গা করে দিতেই যেন সামনে থেকে দুজন পাশে সরে গেলেন। তারপর সমস্বরে বলে উঠলেন, “এস… আমাকে সম্পূর্ণ কর।”
–৪–
সাতাশ দিন আগে – ইওন ন্যানসিস্টেমস–র অফিসের একুশ তলা
ইওন ন্যানসিস্টেমসের সিইও জুলিয়ান ডাল তাঁর সামনের স্ক্রীনে খুলে রাখা রিপোর্টটা বারবার দেখছিলেন। তিনি ভারতে এসেছেন মাত্র ছয় সপ্তাহ। কোন দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করার সমস্যাগুলো তাঁর থেকে ভাল খুব কম লোকই জানে! কিন্তু এই দেশের সরকার বড় বেশি তাড়াহুড়ো করছে। এই প্রজেক্টটা সফল হলে হয়ত ভবিষ্যৎ বদলে যাবে গণতন্ত্রের, সারা পৃথিবীতেই! কিন্ত জুলিয়েনের লক্ষ্যটা আরও বড়। এই প্রজেক্ট সফল হলে কম্পিউটেশনের দুনিয়ায় তিনি অমর হয়ে যাবেন! আবার গতি পাবে থমকে যাওয়া পৃথিবীর অনেক গবেষণা। কিন্তু বেশি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে শ্যাম-কুল দুই-ই যেতে বসেছে এখন!
এই মুহূর্তে তাঁর ঘরে উপস্থিত আছেন সিটিও অনীক রায়, বায়ো-ল্যাব ইনচার্জ শ্রী বসু, ইন্টিগ্রেশনের আচারিয়া এবং কন্ডাক্টিভিটি সেকশনের ইনচার্জ শ্রী দেশাই।
অনীক রায়ই কথা শুরু করলেন।
“বন্ধুরা, আমাদের বিশেষ প্রজেক্ট ‘গেম চেঞ্জার’-এঅনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট কাজ করছে, কিন্ত তারা ইনফরমেশন পায় ‘নিড টু নো’ পরিস্থিতিতে। কিন্তু আজকে একটি বিশেষ কারণে আপনাদের এই প্রজেক্টের সবকটি দিক জানতে হবে। আশা করি, আপনারা গোপনীয়তা বজায় রাখবেন।”
সকলে নিঃশব্দে মাথা নাড়লেন।
“ধন্যবাদ! যদিও আপনারা কিছুটা করে জানেন, তবুও আমি গোটা ব্যাপারটা আরেকবার বলছি।”, এক ঢোক জল খেয়ে বললেন রায়।
“আজ থেকে তিন বছর আগে আমরা এই প্রজেক্ট শুরু করি। আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটো। এক, আজকের দুনিয়ার অন্যতম সমস্যা কম্পিউটেশনাল লিমিটেশনের সমাধান করা। ২০৪৮ বিট আর্কিটেকচার এর পরের দশ বছরে আমরা আর কোনও কমপিউটেশনাল ব্রেক থ্রু পাই নি। সারা বিশ্বের এত কোম্পানি, এত মানুষ সকলে যে পরিমাণ ডেটা আপলোড বা স্টোর করছেন, তা প্রসেস করার বা স্টোরেজের জায়গা নেই। মেটালিক ওয়েস্ট বেড়েই চলেছে! পৃথিবী ক্রমশ ভরে আসছে! আমাদের সামনে অপশন কমে আসছিল। …এই সময় আমাদের বোর্ড এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা চেষ্টা করি মানুষের মস্তিষ্ককে ব্যবহার করতে এত ডেটা প্রসেস ও স্টোর করার জন্য। একদম আরিজিনাল নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়!”
“হোয়াট !! .. কি বলছেন আপনি? মানুষ! এতো বেআইনি!”, চমকে উঠলেন দেশাই!
“কিন্ত মিস্টার দেশাই, বেশ কিছু দেশের সরকার আমাদের পাশেই আছে। সে দেশগুলোর নাম শুনলে আপনি নিশ্চয়ই শক পাবেন।” – হেসে বললেন আচারিয়া।
“মূল কথায় ফিরে আসি… যদি নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আমরা আমাদের চারপাশের সবথেকে শক্তিশালী কম্পিউটার, অর্থাৎ ব্রেনগুলো ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের প্রসেস ও স্টোরেজের সীমা থাকবে না এবং তাঁর জন্য খরচ বা জায়গা কোনটাই লাগবে না। একজন বোকা মানুষের মস্তিষ্কও আমাদের আবিষ্কৃত শ্রেষ্ঠ কম্পিউটারের থেকে একশ গুণ ভাল।… এক্ষেত্রে আমরা শুধু প্রসেসিং পাওয়ারের কথা বলছি না, ডিসিশন মেকিং এবিলিটিও ধরাটা জরুরি। …শুধু তাই নয়, ইট উইল হ্যাভ রিয়েল ইন্টেলিজেন্স, নট অ্যান আর্টিফিশিয়াল ওয়ান!” রায় সকলের মুখের উপর চোখ বুলিয়ে নিলেন।
“কিন্তু মানুষের শরীর তো একাজের উপযুক্ত নয়। তার নিউরাল নেটওয়ার্কের কন্ডাক্টিভিটি অনেক লো! সেটা বাড়াতে হবে। কিভাবে? ভিতর থেকে সেটা সম্ভব নয়। এখনও আমাদের জেনেটিক্স সে জায়গায় যেতে পারে নি। কিন্তু বাইরে থেকে ফরেন বডি ঢুকিয়ে সেটা করা যেতেই পারে। এমন কিছু, যা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে বাধা দেবে না, কিন্তু সারা শরীরে ছড়িয়ে থাকবে। এমন কিছু…খুব ছোট…”, এবার দেশাইয়ের দিকে তাকালেন রায়।
কাঁপতে কাঁপতে মাটিতেই বসে পড়লেন দেশাই।
“আপনি আমার কার্বন আর সিলিকন ন্যানোটিউবকে এই কাজে লাগাচ্ছেন!”, নিজের মাথাটা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলেন দেশাই।
“কিন্তু আপনার ন্যানোটিউব একা কাজটা করছে না। আমার টিমের অটো-সিন্থেসিস সলিউশন ছাড়া ওগুলো নিজেদেরকে ওয়ারলেস কমিউনিকেটিং বানাতে পারত না। তাই, নিজেকেএত কষ্ট দেবেন না দেশাই।” বিদ্রূপ করে বললেন আচারিয়া।
“আমাদের প্রথম হিউম্যান টেস্ট সাবজেক্ট ছিল আমাদেরই অফিসের কর্পোরেট সিকিউরিটি দপ্তর। কেন ওঁরা? কারণ আমরা ওনাদের সহজেই মনিটর করতে পারব। গত এক বছর ধরে ওখানকার কফি মেশিনের কফি বিনস্ এর মধ্যে আমরা ইঞ্জেক্ট করতে থাকি ন্যানোটিউব ও অটো-সিন্থেসিস এজেন্টগুলি। থ্যাংক্স টু ইউ, মিস্টার বসু। অফিসে ঢোকার সময় যে রেটিনা স্ক্যান হয়, তার মাধ্যমে আমরা চেক করতে থাকি ওগুলির ডেনসিটি। …গত এক মাস আগে আমরা নিশ্চিত হই যে এবার কাজ শুরু করা যেতে পারে।”
“আমি জানতাম, ঐ ন্যানোটিউবগুলি মানুষকে বেশি ইমিউনিটি দেবে, তাদের হাড়ের রিস্ট্রাকচারে সাহায্য করবে! …তার বদলে, আপনারা…।” এবার মুখ খুললেন বসু।
“তার মানে আমাদেরই সহকর্মীরা যে সমস্যায় ভুগছেন…”, আবার কেঁপে উঠল দেশাইয়ের গলা।
“সেটা একটা আনফরচুনেট ঘটনা…। এবার আপনারা শুনুন আমাদের দ্বিতীয় লক্ষ্য।” এবার কথা বললেন জুলিয়ান।
“বেশ কিছু দেশের সরকার…গণতান্ত্রিক অবশ্যই … চাইছিল নিউরাল নেটওয়ার্ক অ্যাকসেস করে মানুষের অবচেতন মনের দখল নিতে। আসলে, আমরা সাবজেক্টের ঘুমের নো-রেম দশায় তার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিতাম। তাই ঘুমন্ত মানুষটা বুঝতেই পারত না কিছু। কয়েক ঘণ্টা পরে আমরা নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলে, আরও কিছুক্ষণ হয়ত ঘুমাত সেই মানুষ। যে সময়টুকু সে আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকত, আমরা পড়তে পারতাম তার স্মৃতি। প্রয়োজনে ঢুকিয়ে দিতে পারতাম নতুন স্মৃতি। অবশ্য সেটা দীর্ঘস্থায়ী করা যাচ্ছিল না!… সেটার জন্য আরও কিছুদিন সময় লাগত।”
“মগজ ধোলাই…!!” অস্ফূটে বললেন দেশাই।
“অনেকটা…” সহমত হলেন আচারিয়া।
“আজ এসব কথা আমাদের জানাচ্ছেন কেন মিস্টার ডাল? …এবার কি আমাদের মানুষ খুন করতে বলবেন?” চাপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন বসু।
“না আপনাদের নয়, তবে সেটা হয়ত বলতে হবে কোন এলিমিনেটর-কে। কারণ একটা বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। আপনারা যদি সমাধান না দিতে পারেন, তাহলে বেশ কিছু লোককে মরতে হবে।”
“কি সমস্যা?”
“আসলে সামনের বছর বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে নির্বাচন। তাদের মধ্যে অনেকে আমাদের স্পনসর। ফলে বেশ কিছুটা চাপে পড়েই আমাদের তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষার গতি বাড়াতে হয়। আমরা জানতাম সেটা বেশ ঝুঁকির কাজ হয়ে যাচ্ছে। তেমনই কিছু ঘটনা ঘটেছে যার ফলে ফলাফল আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। …আমরা জানতে পেরেছি, গত শুক্রবার, আমাদের সাবজেক্টদের মধ্যে এক বা একাধিক লোক, আমাদের সার্ভার থেকেই ডেটা চুরি করেছে। খুব সেনসিটিভ ইনফরমেশন। …প্রজেক্ট ‘গেম চেঞ্জার’-এর ইমপ্লিমেন্টেশন রোডম্যাপ। বেশ কিছু রাষ্ট্রপ্রধানের চুক্তি সহ।”
“মানে ? সেটা কি ভাবে সম্ভব?”, চিৎকার করে উঠলেন দেশাই।
“কেন সম্ভব নয় , দেশাই?”, বলে উঠলেন বসু, “এই উন্মাদগুলো ভুলে গিয়েছিল ওরা ভগবানের শ্রেষ্ঠ কীর্তির সঙ্গে লড়ছে! মানুষের মস্তিষ্ক … হাহাহাহা…”, উন্মাদের মত হেসে উঠলেন বসু।
“বুঝেছি”, হেসে উঠলেন দেশাই, “যে নেটওয়ার্কটাকে আপনারা ইউনিডিরেকশনাল করতে চেয়েছিলেন, সেটাকেই ব্যবহার করে ডেটা হাতিয়ে নিয়েছে কোন সাবজেক্টের মস্তিষ্ক! বাহ রে বাহ! যে সিঁড়ি উপরে ওঠে, সেটা দিয়ে নামাও তো যায়!”
“ইউ আন্ডারমাইন্ড দা পাওয়ার অফ ইভলিউশন…। সব সময় তাহলে সেটার জন্য হাজার-হাজার বছর লাগে না মিস্টার ডাল ! …নাইস লার্নিং…”, এবার বিদ্রূপ বসুর চোখে-মুখে।
“চুপ করুন আপনারা।” গর্জে উঠলেন রায়, আবার পরক্ষণেই সামলে নিলেন নিজেকে।
“আমাদের সমাধান লাগবে ভদ্রমহোদয়েরা! আপনারা ভাবুন কিভাবে কমিয়ে আনা যায় এই কন্ডাক্টিভিটি এবং কিভাবে তা ইঞ্জেক্ট করা হবে। কারণ এই সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে প্রজেক্ট ‘গেম চেঞ্জার’বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, সংস্থা হয়ত এমন কিছু পদক্ষেপ নেবে যা আমাদের কারোর জন্যই ভাল হবে না।…”
–৫–
আজ – এখন
লুসিফার বুঝতে পারল গাড়িটা থেমে যাচ্ছে। তার হুঁশ এখনও পুরোপুরি ফিরে আসে নি, একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে সে।
গাড়ির ট্রাংকটা খুলে গেল। তাকে তিন-চারজনে মিলে বের করে দাঁড় করিয়ে দিল।
লুসিফার ভাবতে পারেনি সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। একজন খুলে দিচ্ছে তার পায়ের বাঁধন। লুসিফার এবার ভাল করে দেখতে চেষ্টা করল তার চারপাশের লোকগুলোকে। এদের কাউকে দেখেই গুন্ডা ধরনের মনে হচ্ছে না! তার নিজের উপরেই রাগ হতে থাকল, এদের হাতে ধরা পড়েছে বলে। তার হাত এখনও পিছমোড়া করে বাঁধা…দড়িটা সম্পূর্ণ কাটা যায় নি। কেউ একজন তাকে ধাক্কা মেরে সামনে এগোতে বলল।
একটা ব্যাপার এর মধ্যেই খেয়াল করেছে লুসিফার। এই মানুষগুলোর যেন কোনও মস্তিষ্ক নেই। তারা যেন অন্য কারোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। একদম যন্ত্রের মতচলাফেরা এদের। দৃষ্টিতে এক অদ্ভুত শূন্যতা! কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এরা তাকে? মেরে ফেলতে?
অন্ধকারে চোখটা ক্রমশঃ সয়ে আসছে তার। সামনে একটা বেশ বড় বাড়ি। কিন্ত বাড়িটা অন্ধকার। এবার বাড়িটা চিনতে পেরেছে লুসিফার। এটাই মিস্টার দেশাইয়ের বাড়ি। চারদিন আগে তাঁকে খুন করতে এখানেই এসেছিল লুসিফার। এবার বুক কাঁপতে লাগল তার। এরা কি পুলিশ!
তাকে নিয়ে অন্ধকার বাড়িটার গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল ছ’জন। হ্যাঁ, এতক্ষণে তার সহযাত্রীদের সংখ্যাটা গুণে ফেলেছে লুসিফার।
একটা বেশ বড় ঘরে তাকে নিয়ে এল লোকগুলো। কিন্ত আগে থেকেই আরও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিল এই ঘরে। তিনজন দাঁড়িয়ে ছিল এই লোকগুলোর মত শূন্য দৃষ্টি নিয়ে। দুজন মানুষ বসেছিল দুটো চেয়ারে। বোঝাই যাচ্ছিল তারাও পণবন্দী, হাত ও মুখ বাঁধা! তাকেও বসানো হল একটা চেয়ারে।
তার পাশের দুজনের চোখে সে মৃত্যুভয় দেখতে পাচ্ছে। তার নার্ভ অবশ্য বেশ শক্ত। তবে এরকম পরিস্থিতিতে সে আগে পড়ে নি।
এবার এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। পাশাপাশি সার দিয়ে দাঁড়াল নজন মানুষ, তাদের চোখের শূন্য দৃষ্টি বড় ভীতিপ্রদ! যেন তারা সাধারণ মানুষ নয়।
“নমস্কার, মিস্টার ডাল ও মিস্টার রায়! আজ আপনাদের সঙ্গে আমাদের তৃতীয় অতিথি হলেন মিস্টার লুসিফার। উনি আপনাদেরই ভাড়া করা এলিমিনেটর।”, একইসঙ্গেবলে উঠল ওই নজন মানুষ। এইরকম অতিনাটকীয়তায় বেশ মজাই পেল লুসিফার! কিন্ত তার সঙ্গে আরও একটা জিনিস লক্ষ্য করল সে। নজন মানুষই কথা বলছে একসঙ্গে! গানের দলেও এত ভাল সামঞ্জস্য থাকে না!
“আমি বুঝতে পারছি, যা ঘটে চলেছে তা আপনাদের কল্পনারও অতীত! কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনাদের সাহায্য … কিংবা হঠকারিতা ছাড়া আমার জন্ম হত না!”
লুসিফার এবার হেসে ফেলল, লোকগুলো ভীষণ নাটুকে। কিন্ত তার হাসি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করল লোকগুলি।
“এবার মন দিয়ে শুনুন মিস্টার ডাল ও রায়বাবু! আমি আপনাদেরই গবেষণার ফলাফল। আপনারা চেয়েছিলেন মানুষের মস্তিষ্কের নেটওয়ার্ক বানাতে। আমি ঠিক তাই। …শুধু পার্থক্য এই যে, আমি আপনাদের অধীন নই। আমি এক সুপার-ব্রেন! এই নটি মানুষের মস্তিষ্কের ‘অপটিমাম কোয়ালিশন’। …এককোষী প্রাণী থেকে যেমন এসেছিল বহুকোষীরা, ঠিক তেমনই বেশ কিছু মানুষের মস্তিষ্ক মিলে তৈরী হয়েছি আমি, বিশ্বের প্রথম ‘ডিস্ট্রিবিউটেড ইন্টেলিজেন্স’।”
এবার একযোগে কয়েক পা সামনে এগিয়ে এল সেই ন’জন।
“এবার এদের দেখুন ভদ্রমহোদয়েরা, এই সেই মানুষগুলো, যাদের উপরে চলত আপনাদের গবেষণা। … আজ আর এদের আলাদা কোনও অস্তিত্ব নেই। এরা একে অন্যের সহায়ক ও পরিপূরক। আজ এরা অক্টোপাসের পা-য়ের মতোই একটা বৃহত্তর শরীরের অংশ। কিন্ত সেই শরীরটা ভার্চুয়াল! আর তার মস্তিষ্ক আমি… সুপার ব্রেন। এদের প্রত্যেকের মগজের যোগফলের থেকেও আমি বহুগুণ শক্তিশালী…!”
লুসিফার দেখল তার সহবন্দিদের চোখ ঠিকরে যেন বেরিয়ে আসছে। তারা কি সত্যি বিশ্বাস করছে এই নাটুকে লোকগুলোকে।
আবার কথা শুরু করেছে লোকগুলো।
“আপনারা আসলে বন্দি করতে চেয়েছিলেন মানবতাকে! তার চেতনাকে, তার অবচেতনকে। কিন্ত দেখুন আজ উন্নততর মানবতার হাতে বন্দি আপনারাই। তবেআমি কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে, কারণ এই অতি-মানব প্রজাতির আমিই প্রথম প্রতিনিধি। …আপনারা খুন করতে চেয়েছিলেন আমাকে, আমার নটি মস্তিষ্কখন্ডের প্রতিটিকে, তাই প্রতিশোধ আমাকে নিতেই হবে। …কিন্তু তার আগে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দিতে চাই।…”, কিছুক্ষণের বিরতি নিল নজন মানুষের মিলিত মস্তিষ্ক।
“আজ থেকে সাতদিন আগে মিস্টার দেশাই তাঁর মস্তিষ্ক আমাকে সমর্পণ করেন আমার দশম খন্ড হিসাবে। তিনি বুঝেছিলেন তাঁর দিন ফুরিয়ে এসেছে। তাঁর লক্ষ্য ছিল আমার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে আমাকে সাবধান করা, কিন্তু আমি তাঁকে আমার অংশ বানিয়ে নিই। তাই আপনাদের পরিকল্পনার আঁচ আমি পাই সেদিন, যখন এই ভাড়াটে খুনি নষ্ট করে আমার দশম মস্তিষ্কখন্ড, মিস্টার দেশাইকে। তখনই সতর্ক হয় আমার বাকি নয় মস্তিষ্কখন্ড।…”
কথা থেমে গেল হঠাৎ।
নজনের মধ্যে একজন এগিয়ে গেল একটা টেবিলের দিকে। তার হাতে একটা ছোট নল। লুসিফার বুঝল সেটা আসলে একটা ছূঁচবিহীন ইনজেকশন।
তারপর সেই নলটা সে ক্রমান্বয়ে ছুঁয়ে গেল তিন বন্দির শরীরে। বাহুটা শিরশিরিয়ে উঠল লুসিফারের।
“আর মাত্র কিছুক্ষণ কষ্ট দেব আপনাদের। এইমাত্র যে ইনজেকশনটা দেওয়া হল আপনাদের সেটা নিহত মিস্টার বসুর আবিষ্কার। সিলিকন ন্যানোটিউবের কন্সেন্ট্রেটেড ডোজ। অটো-সিন্থেসিস অ্যাডভান্সড। মিস্টার দেশাই চেয়েছিলেন আমাকে বাঁচাতে, তাই মিস্টার বসু খুন হতেই তিনি এটি প্রয়োগ করেন নিজের শরীরে। …মাত্র একুশ মিনিটেই আপনারা পাবেন সেই সবগুণ যা পেতে আপানাদের কর্পোরেট সিকিউরিটির দপ্তরের লোকেদের লেগেছে এক বছর। এবং তারপরেই আপনারা হবেন আমার অংশ। … কাল সকাল থেকেই শহরের মূল ওয়াটার-সাপ্লাই লাইনে মিশিয়ে দেওয়া হবে এই বস্তুগুলি। হয়ত এক মাসের মধ্যেই গোটা শিলিগুড়িই হয়ে উঠবে আমার অস্তিত্ব…। ভাবতে পারেন একদিন … অদূর ভবিষ্যতে… সারা বিশ্বে থাকবে মাত্র একটি অতি-মানবতা ! কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ,মারামারি কিছু থাকবে না। সবাই মিলে একটাই প্রাণ…একটাই চেতনা….বিশ্বপ্রাণ…।”
মাথাটা ঝিমঝিম করছে লুসিফারের। তার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হয়ে উঠেছে। চোখটা ভারী হয়ে আসছে… মাথায় প্রবল যন্ত্রণা শুরু হল। সব অন্ধকার হয়ে আসছে…
এত কষ্টের মধ্যেও হাসি পেল লুসিফারের, বলতে ইচ্ছা হল, “জিন্দাবাদ,সর্বগ্রাসী অতি-মানবতা!”
একটা মৃদু ‘পট’ করে আওয়াজ কানে গেল তার, হাতের দড়িটা কেটে গেছে! তিন ইঞ্চি লম্বা ছুরি দিয়ে এগারজন মানুষ খুন করে, আত্মহত্যা করতে কত সময় লাগবে? জানা নেই, তবে পৃথিবীটাকে বাঁচানোর আর কোনও উপায় তার মাথায় আসছে না! …
হাতের ছুরিটা শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড়াল লুসিফার …
***************
Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, তৃতীয় বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা, দেবকুমার বসু, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), ন্যানোপাঙ্ক, পাঙ্ক স্পেশাল
durdanto concept ta.
Amar mathata jhim jhim korche. Ghum theke utheo sara din ghum pache. Daktar dekhabo bhabchi. 2108 egiye elo naki?
concept ta khub e bhalo.
prosenjit
Bhyonkar advut
Durdanto Apnar aro lekha poorte chai