“ভূমিকম্প” – একটি সময়োপযোগী নিবন্ধ
লেখক: প্রদীপ্ত সাহা
শিল্পী: মূল প্রচ্ছদ
আপনার বাড়ির বিড়ালটি কি হঠাৎই অদ্ভুত আচরণ করছে? পালাতে চাইছে বাড়ি ছেড়ে? ইঁদুরগুলি কি গর্ত থেকে বেরিয়ে ইতস্ততভাবে ছোটাছুটি শুরু করেছে বিনা কারণেই? নদীর মাছ প্রাণভয় বিসর্জন দিয়ে কি ডাঙায় উঠে পড়েছে? এমন সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকলে বুঝতে হবে লক্ষণ ভাল নয়, হতে পারে ভয়াবহ ভূমিকম্প! ‘এডুকেশন ফোরাম’ থেকে প্রকাশিত, অবিশ্বাস্য সব তথ্যে ঠাসা, “ভূমিকম্প” বইটিতে তেমনটাই বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের “সলিল ও ভূতত্ত্ব বিভাগের” প্রাক্তন ভূতত্ত্ববিদ শ্রী প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত। জানতে চান কি ঘনাদার কোন গল্পে খেচর ও জলচরদের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পেতে দেখা গেছে? তাও পাওয়া যাবে ১১০ পৃষ্ঠার এই বইটিতে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতনতার অভাব পূরণ করতে ও দুর্যোগ মোকাবিলায় মানসিক প্রস্তুতি দিতে বইটি একটি সময়োপযোগী সংযোজন। একবিংশ শতকে উপমহাদেশে ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি বড় ধরণের ভূমিকম্প। সতর্কতার অভাব এতটাই যে কয়েক বছর আগেও ভূমিকম্প পরিমাপক পরীক্ষাগারগুলি অনেক ক্ষেত্রেই দুর্যোগের সময় নিষ্ক্রিয় থাকত।
মূল বইটি আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম তিনটি অধ্যায় ভূকম্পনের ক্ষমতা, পরিমাপ ও ভূতত্ত্ব সম্পর্কিত তাত্ত্বিক দিকগুলি, ভারতবর্ষের কম্পন প্রবণতা নিয়ে। পরের তিনটিতে রয়েছে ভূকম্পনের পূর্বাভাস সম্পর্কিত নানা তথ্য ও কৌতূহলোদ্দীপক আলোচনা। শেষ দুটি অধ্যায় পাই বিপর্যয় মোকাবিলার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা। ভূঅভ্যন্তরের গঠন ও ভূমিকম্পের তত্ত্বগত গম্ভীর বিষয়গুলি রেখাচিত্রের পর্যাপ্ত ব্যবহারে, সাবলীল ভাষায় পাঠকের সামনে রাখতে চেষ্টা করেছেন লেখক। সেখানে লেখন শৈলী পাঠ্যবই সুলভ ও মূলত বর্ণনামূলক; স্বল্প ব্যবহৃত পরিভাষা ও তার প্রকরণের ভারে হয়তো কিঞ্চিৎ ভারাক্রান্ত। লেখক কোথাও কোথাও উদাহরণ ও তুলনার মাধ্যমে বিষয়গুলি বুঝিয়েছেন, যেমন ভূমিকম্পের ক্ষমতা বোঝাতে লেখকের ব্যবহৃত তুলনাগুলি সহজেই বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করে। রেখাচিত্রগুলির কয়েকটি চেনা পাঠ্য বইয়ের থেকে একটু আলাদা, দুটি ক্ষেত্রে ছাপা আরও স্পষ্ট হতে পারত। পরের তিনটি পূর্বাভাস সম্পর্কিত বিভাগ তুলনায় বেশি আকর্ষণীয়। প্রকৃতি ও তার প্রাণীকুল যে কতভাবে এই ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের সংকেত আমাদের দেয় তারই একটি পর্যালোচনা সেখানে পাই। তা ছাড়াও রয়েছে পূর্বাভাসের নানান দিক নিয়ে আলোচনা। ভূকম্পন সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা বা এনেকডোটের উল্লেখে এই অংশের পঠনীয়তা বেড়েছে। এই অধ্যায় তিনটিতে এমন অনেক উপাদানই আছে যা কল্পবিজ্ঞানে ব্যবহার হতে পারে। পরিশিষ্টে দেওয়া ওয়েবসাইট লিঙ্ক ও তথ্যপঞ্জি ও উৎসাহী পাঠককে বিষয়গুলি নিয়ে আরও বেশি অনুসন্ধান করতে ইন্ধন জোগাবে।
পরিশেষে বলব বইটিতে পাওয়ার ভাঁড়ারে অনেক কিছু থাকলেও না পাওয়া বিষয়গুলিও একেবারে শূন্য নয়। কলকাতায় ১৭৩৭ সালে ১১ অক্টোবর যে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ঘটে সেটিকে অনেকেই ভূকম্পন-ঘূর্ণিঝড় যুগ্ম বিপর্যয় আখ্যা দিয়ে থাকেন। আশা করেছিলাম লেখক কোথাও এই নিয়ে আলোকপাত করবেন। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র নির্ণয়ের ব্যবহারিক পদ্ধতিটিও আলোচনার বাইরেই থেকে গেছে। কিছু কিছু ছাপার ভুল চোখে পড়ে। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে বইটি একটি সুন্দর রেফারেন্স বই, যা একটি লোকবিজ্ঞান বা পপুলার সায়েন্স বই এর চাহিদা পূরণ করে।
বইয়ের নাম – ভূমিকম্প
লেখক – প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত
প্রকাশক – এডুকেশন ফোরাম
Tags: গ্রন্থ পরিচিতি, পঞ্চম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত, প্রদীপ্ত সাহা
চমৎকার পর্যালোচনা। আলোচিত বইটি জোগাড় করতে হচ্ছে তাহলে।
ধন্যবাদ ।
সমালোচনাটি মনোজ্ঞ ও এখানে যে মতামত দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত সুচিন্তিত। বইয়ে যা কিছুর অভাব রয়েছে বলে সমালোচক চিহ্নিত করেছেন পরবর্তী সংস্করণে সেগুলি যোগ করে দেব বলে ইচ্ছা রাখি। প্রদীপ্ত সাহাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বই কোথায় পাবো।
কুরিয়ার এর মাধ্যমে পাঠানো কি সম্ভব
যদি সম্ভব তাহলে টাকা কিভাবে দেবো