মৃত্যুদণ্ড
লেখক: দেবদত্তা ব্যানার্জী
শিল্পী: অমৃতরূপা কাঞ্জিলাল
বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে, কদিন ধরে বঙ্গোপসাগরের উপর যে নিম্ন চাপটা জমে ছিল তা আজ উপকূলে আছড়ে পড়েছে সজোরে। রায়পুরে গঙ্গার ধারে এই বাড়িটা তিনশো বছরের পুরানো। ঝড়ের তাণ্ডবে কড়িবর্গা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ডঃ রায় দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়ান। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসছে, কিন্তু দু চোখে রয়েছে এক নতুন আশা। তিন বছর ধরে গবেষণা করে আজ প্রায় সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন উনি। কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো….
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে পাশের ঘরটায় ছুটে যান। বিছানায় শুয়ে আছে আঠারো উনিশ বছর বয়সের একটি কিশোরী। একটা সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা শরীর। হাতে একটা বেল। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ডঃ রায় দেখলেন মেয়েটির চোখে জল। পাশের চেয়ারে বসে একটা রুমাল দিয়ে পরম যত্নে চোখের জলটুকু মুছিয়ে দিলেন উনি। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন -’কি কষ্ট হচ্ছে মা? উঠে বসবি একটু। টিভি চালিয়ে দেবো?’
নিরুত্তর মেয়েটি চোখের ইশারায় কিছু বলে। আজ চার বছর ও বিছানায়। মস্তিষ্কের কিছু রক্ত ক্ষরণে ও কোমরের হাড় ও মেরুদণ্ড ভেঙে ও বিছানায় পঙ্গু। বাঁ হাতটা একটু নাড়তে পারে, তাই বেলটা বাজাতে পারে। অসার জিহ্বা, শব্দ আর ওর মুখ দিয়ে বের হয় না। একমাত্র চোখের ইশারায় কয়েকটা কথা বলতে পারে মেয়েটা।
পাশের মিউজিক সিস্টেমে গান চালিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসেন ডঃ রায়। চোখের জল ওঁর শুকিয়ে গেছে। একমাত্র মেয়ের এমন করুণ পরিণতি ওঁকে ঠেলে দিয়েছে এক অন্য ধরণের গবেষণায়। অথচ কত স্বপ্ন ছিল এই মেয়েকে নিয়ে।
‘স্যার, সলিউশনটা একবার দেখবেন।’ ওঁর ল্যাব আ্যসিস্টেন্ট আরাধ্যার ডাকে ল্যাবে গিয়ে ঢোকেন উনি।
দোতলার শেষ বড় ঘরটা জুড়ে ওঁর ল্যাব। ল্যাবের চারদিকে নানারকম সব জারে কেমিকেল, একদিকে বেশ কিছু কাচের চৌকো বাক্সে বিষাক্ত কিছু সাপ, সামুদ্রিক সাপ ও রয়েছে কিছু। আমাজনের গভীর অরণ্যে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় রেইন ফরেস্টের বেশ কিছু বিষাক্ত ব্যাঙ রয়েছে কাচের বাক্সে। এদের উপরেই গবেষণা করছেন ডঃ রায়।
ল্যাবে সাদা গাউনে কাজ করছে অহনা। আরাধ্যা ও অহনাকে ডঃ রায় মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। ওরা এখানেই থাকে।
এই বিশাল রায় ভিলা পাহারা দেয় হায়দর ও কামাল শেখ। এ ছাড়া আছে নাটু আর কমলা। শহরের কোলাহলের বাইরে গঙ্গার ধারে এক বিশাল বাগান বাড়ি এই রায় ভিলা।
‘স্যার, এই সলিউশনটা আপনি যেমন বলেছিলেন সেভাবেই প্রয়োগ করা হয়েছে। গিনিপিগটা ঘুমোচ্ছে খাঁচায়।’
আরাধ্যার পেছনেই কিছু সাদা ইঁদুর, গিনিপিগ, বাঁদর, কুকুর, বেড়াল রয়েছে কিছু খাঁচায়। কেমিক্যাল আর পশুপাখি মিলে এক অদ্ভুত গন্ধ ছাড়ছে সারা ঘরে।
‘ওকে আর খাঁচায় রেখো না, কাচের বাক্সে রাখো। আর ফাইবার গ্লাভস ছাড়া ওকে ধরবে না কেউ।’
ওদের আরও কিছু বুঝিয়ে উনি চলে যান নিজের টেবিলে। খবর কাগজটা টেনে প্রথম পাতায় চোখ রাখতেই শক্ত হয়ে ওঠে চোয়াল। আজ আবার দুটো ছেলে মারা গেছে টালিগঞ্জে, বিষাক্ত কাঁটা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের বুকে। এই নিয়ে সাত জন।
ফোনটা তুলে একটা নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করেন ডঃ রায়।
‘কলম্বিয়া থেকে পার্সেলটার কি হল?’
‘সামনের সপ্তাহে ঢুকে যাবে। একটু কড়াকড়ি চলছে। অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি এবার।’
ফোনটা কেটে ল্যাপটপে মননিবেশ করলেন উনি।
(২)
পার্ক সার্কাস স্টেশনের গায়ে এই অঞ্চলটা সন্ধ্যার পর থেকেই চলে যায় সমাজবিরোধীদের হাতে। আলম বাদশা আর ইরফান দিনের বেলা অটো চালায় আর রাতে ওদের ঠেক এই রেলবস্তির ধারে। রাতের অন্ধকারে হেন দুষ্কর্ম নেই যা ওরা করে না। সুপারি কিলিং থেকে কিডন্যাপিং সবেই হাতেখড়ি হয়েছে। সামনের রাস্তাটা দিয়ে হিলের খটখট আওয়াজ তুলে মেয়েটাকে ওদিকে যেতে দেখে অবাক হয়েছিল তিনজনেই। কয়েকটা নতুন বহুতল হয়েছে ওধারে। সেখানেই কিছু মেয়ে মেস করে রয়েছে।
শেষ পাইটটা শেষ করে আলম বলে, ‘শালা, গরমি নিকালতে হ্যয় চল!!’
‘ইলাকেকা মাল হ্যয় ভাই, ফাঁস যাওগে।’ ইরফান বলে।
‘আরে তু চল তো।’
অন্ধকার দেওয়ালটার ধারে মেয়েটাকে ঘিরে ধরে তিনটি অবয়ব। জবরদস্তি তুলে নিয়ে আসে ওদের ঠেকের পিছনে ঝোপের ধারে।
ভয়ে মেয়েটার মুখ সাদা হয়ে গেছে। প্রথমে এগিয়ে যায় ইরফান, কিন্তু মেয়েটা বোধহয় ক্যারাটে জানে, ওকে পেঁচিয়ে ছুঁড়ে ফেলে লাইনের উপর।
আলম আর বাদশা একসঙ্গে এসেছিল। কিন্তু দুজন দু-দিকে ছিটকে পড়ল। হাতে কিছু ফুটিয়েছিল মেয়েটা। শরীরটা অবসন্ন হতে হতে আলম দেখে ইরফানের উপর দিয়ে ছুটে গেল একটা আপ লোকাল। বাদশার শরীরটা দুবার কেঁপে স্থির হয়ে যায়। ওর ফর্সা গালে নীলচে আভা ও ঠোঁটের কোনে গ্যাঁজলা জমেছে।
মেয়েটা উঠে পড়ে। দ্রুত এগিয়ে যায় বড় রাস্তায়। একটা গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছিল। নিঃশব্দে তুলে নেয় ওকে।
ঠিক একই সময় সল্টলেকের এক শুনশান রাস্তায় একটা মেয়েকে ঘিরে ধরেছে তিনজন। জোর করে একটা গাড়িতে তোলে। গাড়ি ছুটে চলে রাজারহাটের দিকে। হঠাৎ চালকের মনে হয় বন্ধুরা এত চুপচাপ কেন!! এ সময় চটুল শব্দের ঝড় ওঠার কথা, মেয়েটাই বা ধস্তাধস্তি করছে না কেন!! আয়নায় তাকাতেই ঘাড়ের কাছে কিছু ফোটার যন্ত্রণা। ব্রেকটা করতে পেরেছিল কোনওরকমে। গাড়িটা কেমন বেঁকে দাঁড়িয়ে যায় নিউ টাউনের রাস্তায়। নেমে যায় মেয়েটি। একটা গাড়ি এগিয়ে এসে তুলে নেয় ওকে।
ইন্সপেক্টর ব্রতীনের নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। সারা কলকাতা জুড়ে একাধিক খুনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ করে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে এরা। মিডিয়া ফুঁসছে। জনগণ লাফাচ্ছে। আর ব্রতীন ছুটে বেড়াচ্ছে। উফ..। বিষাক্ত কাঁটা ঢুকিয়ে দিচ্ছে শরীরে। এ যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। তবুও বাঁচোয়া খুন যারা হচ্ছে সব অ্যান্টি সোশাল। খুনিরা সব মহিলা, ফরেনসিক বিজ্ঞান তাই বলছে, ধর্ষণ করতে গেছিল, প্রাণ বাঁচাতেই খুন মনে হচ্ছে। তাই জনতার একটা অংশ ও মিডিয়া খুনির দলে।
আবার একটা দল বলছে বিষাক্ত কাঁটা নিয়ে কেউ এমনি এমনি শহরের রাস্তায় ঘোরে না। খুন করবে বলেই পথে নেমেছে একাধিক সাঙ্ঘাতিক খুনি। ফরেনসিকের ডঃ দত্ত বলেছেন খুনি একাধিক এবং এরা একটা দল। মেয়ে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর বিষটা ব্যাঙের বিষ, আমাজন অরণ্যের বিষাক্ত ব্যাঙ যার বিষ আদিবাসীরা নিজেদের তীরের ফলায় মাখায়। এই সব ব্যাঙ এদেশে নেই। এদের গায়ের চামড়ায় থাকে বিষ। এর বেশি ক্লু নেই। রাতে পেট্রলিং বাড়ানো হয়েছে। সিসিটিভি বসেছে বিভিন্ন জায়গায়।
ব্রতীন শহরে এই ব্যাঙ ঠিক কি ভাবে আসতে পারে ভেবেই যাচ্ছে।
(৩)
খুব সাবধানে সলিউশনটা নিয়ে কাজ করছে বর্ণালী। ওর মুখের একপাশে রোদ এসে পড়েছে, দু একটা লালচে চুল মুখের সামনে। অসাধারণ সুন্দরী বর্ণালী, টিকালো নাক, গালে ছোট্ট তিল, থুতনির ডানদিকে একটা ছোট্ট কাটা দাগ।
কিন্তু সামনে থেকে দেখলে যে কেউ শিউরে উঠবে। অ্যাসিডে পুড়ে গেছে মুখের বা দিকটা। চোখটার জায়গায় বীভৎস গর্ত,কপালের চামড়া গুটিয়ে গেছে মাথায়, এ দিকে চুল নেই প্রায়। বাঁ হাতটাও পুড়ে গেছিল। দু বছর আগের সেই ঘটনা বর্ণালীকে বদলে দিয়েছে আমূল। মেরুদণ্ডটা শক্ত হয়েছে।
‘দিদি, আজ কি বের হব?’ মিত্রার প্রশ্নে বর্ণালী ঘুরে তাকায়। আসলে একদিকের দৃষ্টি শক্তি না থাকায় ওর পাশে কেউ এলেও টের পায় না সব সময়।
‘না, আজ আর নয়। আপাতত দুটো মেলা কভার করতে হবে। পৌষ মেলায় যাবি তুই তন্নি আর রাশি। আর হস্তশিল্প মেলায় যাবে জারা, হিয়া আর কেকা। তবে খুব সাবধানে থাকবি। অযথা ঝামেলায় জড়াবি না কেউ।’
‘ঝামেলায় তো জড়াতে চাই না। তন্নিকে বুঝিয়ে বোলো একটু।’
বর্ণালী সাবান দিয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে গ্লাভস খুলে ফেলে। বলে, ‘আমাদের অনেক সাবধান হতে হবে। যে কাজ করছিস একটু ভুল হলে মৃত্যু নেমে আসবে। একজনের বিপদ সবার বিপদ ডেকে আনবে। রাতারাতি সিস্টেম বদলাবে না। সময় দিতে হবে।’
আরও দুটো মেয়ে এসে ঢোকে ঘরে। প্রথম জন বলে -’দি, শাড়ি গুলো সব রেডি, কুর্তির কাজ ও শেষ। এবার কিছু কস্টিউম জুয়েলারি করবো?’
‘হ্যাঁ, বানিয়ে নে। কাল থেকে তোরা হস্তশিল্প মেলায় যাবি।’
‘আমি কোথাও যাবো না দি’ দ্বিতীয় জন একটু ইতস্তত করে। ও এমনিতেই চুপচাপ।
‘কতদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখবি কেকা? এভাবে লুকিয়ে থাকবিই বা কেন?’ বর্ণালী বলে।
মাথা নিচু করে কেকা।
‘হিয়া কে দেখ। জারা, তন্নি এদের কে দেখে শেখ। নরম মাটিতে সবাই আঁচড় কাটে। শক্ত হতে হবে। জারা তুই ওকে বোঝা।’ জারা বলে, ‘চল, আপাতত গয়নাগুলো বানাই। আমরা থাকবো তো মেলাতে। অসুবিধা কি?’
বর্ণালী মেয়ে গুলোকে এনেছে বিভিন্ন হোমের থেকে। প্রতিটা মেয়ে নির্যাতিতা। বাড়িতেও আর জায়গা হয়নি ওদের। আপাতত বর্ণালীর বুটিকে ওরা কাজ করে। বর্ণালীর একটা খাবারের হোম ডেলিভারির ব্যবসা আর বুটিক রয়েছে। কিন্তু ওর এই বীভৎস চেহারার জন্য ও নিজে খুব একটা সমাজে বের হয় না। ওর এই মেয়েরা খুব কাজের। কেকা নতুন এসেছে। ছ’মাস হল। এখনও ট্রমাটা কাটিয়ে ওঠেনি। বর্ণালীর তো প্রায় পাঁচ বছর হল। ও নিজে কি পেরেছে ভুলে যেতে ওই বীভৎস ঘটনা? তবে ও ভুলতে চায় না। ওই ঘটনাই ওর জীবন শক্তি। যুদ্ধ করার প্রেরণা। নিজের পোড়া গালটায় একবার হাত বোলায় ও। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে গোটা সমাজের মুখে অ্যাসিড বাল্ব ছুঁড়ে মারতে। কিন্তু তাতে কি সমস্যার সমাধান হবে?
কেকাকে নিয়ে মোট ছ’টা মেয়ে হল। আপাতত পাঁচটা মেয়েকে ও তৈরি করতে পেরেছে। আত্মরক্ষার কৌশল, ক্যারাটে এসবের পাশে এদের মনোবল বাড়াতে নিয়মিত কাউন্সিলিং করে ও নিজে। এই মেয়েরাই হাজার হাজার মেয়েকে প্রশিক্ষণ দেবে এরপর। মহিলা বাহিনী তৈরি হবে একদিন। পাশের বন্ধ ঘরটায় ঢোকে ও। কাচের জারে রয়েছে দু তিনটে সোনালী ছোট ব্যাঙ। জীব বিজ্ঞানের উপর ডক্টরেটটা আর করা হয়নি ওর। তবে হাতে কলমে কাজটা ও করে দেখিয়েছে। একটা নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে ও।
‘হ্যাঁ, আমার নতুন অতিথির খবর কি? কবে আসছে?’
‘খুব ঝামেলা ম্যাডাম। রিস্কি কাজ। তবু পেয়ে যাবেন এ সপ্তাহেই।’
(৪)
‘স্যার, বাঁদরটা মরে গেছে।’
‘গুড, খেয়াল করেছো কতক্ষণ লেগেছে? ‘
‘কামড়ানোর মিনিট দেড়েকের মধ্যে।’
‘আজ ছাগলটাকে ওই খাঁচায় রাখো।’
‘আচ্ছা স্যার। বাঁদরটা…’
‘খুব বিষাক্ত… হায়দরকে বলো পেছনের বাগানে গর্ত করে পুঁতে দিতে।’
আরাধ্যা বেরিয়ে যায়। আজ সারের মেয়ে ঐশানীর জন্মদিন। কষ্ট হয় মেয়েটাকে দেখলে। কয়েক বছর আগেও ঐশানী ছিল একটা হাসি খুশি চঞ্চল মেয়ে। এক ঝড়ের রাতে মেয়েটার জীবন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছিল। বজবজের কাছে বড় রাস্তায় ওর গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছিল। ড্রাইভার গেছিল মেকানিক ডাকতে। আর কিছু লম্পট ওকে একা পেয়ে জোর করে তুলে নেয়। দু দিন পর ওর ক্ষতবিক্ষত শরীর ওরা ফেলে দিয়েছিল বাটা নগরের কাছে এক পরিত্যক্ত কারখানায়। ধর্ষণ ছাড়াও নানারকম অত্যাচারের পর ওরা ভেবেছিল ও মরে গেছে। মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ আর মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে ঐশানী তখন কোমায়। দীর্ঘ চিকিৎসায় প্রাণ বাঁচলেও ও এখন পঙ্গু। আর ওই মেয়ের দিকে তাকিয়ে ডঃ রায় মেতে উঠেছেন এক অন্য গবেষণায়।
আরাধ্যা আর অহনার জীবনেও ঘটে গেছিল এক চরম সর্বনাশ। ওরা কেউ বিজ্ঞানের ছাত্রী নয়। আরাধ্যা ভূগোল নিয়ে পড়েছে আর অহনা ইংরেজি সাহিত্য। কিন্তু ভাগ্য ওদের এখানে এনে ফেলেছিল। সেই চরম লাঞ্ছনার পর আরাধ্যা নিজেকে শেষ করে দেবে বলে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিল। ডঃ রায় ওকে উদ্ধার করেছেন নিজেদের বাড়ির ঘাট থেকে। অহনাকে নিতে চায়নি ওর শ্বশুর বাড়ি, ওর দু-বছরের মেয়ের নাকি বিয়ে হবে না ও থাকলে। ওর পরিবারের কাছে ও মৃত। কারণ ওর মামাশ্বশুর ওর শ্লীলতাহানি করেছিল। আর ও প্রতিবাদ করায় পুরো পরিবার ওর বিরুদ্ধে চলে গেছিল। কেস চলছিল ওর মেয়ের কাস্টডি পাওয়া নিয়ে। ও পায়নি মেয়েকে। ওর চরিত্র খারাপ প্রমাণ হয়েছিল টাকার জোরে। চোখের জল নিয়ে ও আশ্রমে চলে এসেছিল। সেখান থেকে ডঃ রায় ওকে নিয়ে আসেন। হাতে কলমে জীববিজ্ঞানের সঙ্গে ওদের পরিচয় এখানে এসে। ডঃ রায় বিবর্তন থেকে বিভিন্ন জীব জগতের অজানা তথ্য গল্পের মতো করে ওদের বোঝায়। কাজগুলো খুব সুন্দর করে করিয়ে নেয় ওদের দিয়ে। তবে ওঁর আসল উদ্দেশ্যটা এখনও মাথায় ঢোকেনি ওদের। ওঁর রিসার্চের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অজানা।
বোধহয় একজন জানে ব্যপারটা। ডঃ অর্জুন। ডঃ রায়ের ডান হাত বলতে গেলে। তবে সে রোজ আসে না। মাঝে মধ্যে আসে। আজ অর্জুনের আসার কথা।
ঐশানীর জন্মদিন।
ঠিক বিকেলে কেক নিয়ে এল অর্জুন। ঐশানীর বেডটা তুলে ওকে বসানো হয়েছে, হাল্কা গান বাজছে ও ঘরে। কিছু বেলুন লাগানো হয়েছে। ওর হাত ধরে কেক কাটিয়ে একটু ক্রিম ওর গালে ঘষে দেয় অর্জুন। চোখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মেয়েটার। ডঃ রায়ের চোখটা জ্বালা করে ওঠে। দু’ফোটা নোনা জল লুকোতে বাইরে বেরিয়ে আসেন উনি।
(৫)
‘শোন হে ব্রতীন ওই বিমান বন্দর আর কাস্টমসের চোখ এড়িয়ে এদেশে ব্যাঙ ঢোকার প্রচুর রাস্তা আছে। জলপথ স্থলপথ নানা দিক দিয়ে ঢুকতে পারে। তোমার ইনফরমার যারা স্মাগলিং এর খবর রাখে তাদের ধরো।’ ডঃ দত্ত কাঁটাটা পরীক্ষা করতে করতে বললেন।
‘তাই করেছি স্যার। কিন্তু…’ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর ব্যাঙের মধ্যে প্রথম স্থানটি অধিকার করে আছে এই বিষাক্ত সোনা ব্যাঙ। প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে কলম্বিয়ার রেইন ফরেস্টে এদের দেখা মেলে।
প্রচুর বৃষ্টিপাত আর মাঝারি তাপমাত্রা এদের বসবাসের জন্যে উপযুক্ত। Golden poison frog প্রজাতির এই ব্যাঙগুলো লম্বায় ৫ সেন্টিমিটারের বেশি হয় না।শরীরের সোনালী চামড়াই এদের বিষের ভাণ্ডার। এদের বিষ এতটাই শক্তিশালী যে, এর ১ মিলিগ্রাম ১০,০০০ ইঁদুর কিংবা ১০ থেকে ২০ জন মানুষ মেরে ফেলতে পারে কয়েক সেকেন্ডের ভেতর।”
ব্রতীন মুখ মোছে। এখন এই ব্যাঙের খোঁজে ছুটতে হবে। বলে, ‘দেখি, ফলো করে… যদি কিছু হয়।’
নিজের অফিসে ফিরে ও দেখে ছোটুলাল এসেছে, নিশ্চই খবর আছে। ছোটুলাল এক সময় ছিঁচকে চুরি করত। এখন ইনফরমার, বিদেশ থেকে পশু পাখি সাপ্লাই যারা করে তাদের পেছনে ওকে লাগানো হয়েছে। জানা গেল বজবজের ওদিকে এক ডাক্তার কিছু সাপ ব্যাঙের উপর রিসার্চ করছেন। আপাতত এই লিডটুকু নিয়েই এগোতে হবে।
বাকি কাজ গুছিয়ে নিতে বেশ রাত হল। উঠতে যেতেই টেবিলের ফোনটা সশব্দে জানান দিল কিছু হয়েছে কোথাও। ডিপার্টমেন্টাল ফোন ওখানে আসে। আবার একটা খুন, মিলন মেলা প্রাঙ্গণে, রাত সাড়ে নটায়। আবার কাঁটা ফোটানো হয়েছে। ব্রতীন ছুটে চলে যায়।
লোকটা স্থানীয় দালাল, এক বড় প্রোমোটারের চামচা। মেলায় পিছনে বাথরুমের পাশে পড়েছিল লাশটা। জায়গাটা অন্ধকার বেশ।
কোনও ক্যামেরাও নেই এদিকটায়। লোকটার ফোনটা ঘেঁটে দেখল ব্রতীন। না, কিছুই নেই তেমন।
পরদিন ডঃ দত্ত বললেন, ‘খুনির একটি চুল পাওয়া গেছে। তবে হাতের ছাপ এবারেও নেই। চুলটা পরীক্ষা করে দেখেছি, বয়স পঁচিশের কম। মেয়ে তো আগেই বলেছি।’
‘বিষটা…’
‘সেই এক জিনিস। বিষাক্ত ব্যাঙের গায়ে ঘসে নিচ্ছে কাঁটাটা। সোনালী ব্যাঙ, আমাজন রেইন ফরেস্টের বিভীষিকা।’
‘আচ্ছা, ব্যাঙটা…’
‘ব্যাঙ না খুঁজে মেয়েটাকে খোঁজো। না হলে আরও মৃত্যুর জন্য তৈরি হও।’ ডঃ দত্ত যে বেশ বিরক্ত সেটা বোঝে ব্রতীন। সন্ধ্যায় হেড অফিসেও বৈঠক আছে। অথচ ব্রতীনের কাছে দেওয়ার মতো উত্তর নেই। আজ ডঃ রায়ের বাড়ি যেতেই হবে বৈঠকের আগে।
রায়পুর এসে অত বড় বাড়ি দেখে ব্রতীন অবাক। ফ্ল্যাটের জন্য কোনও প্রোমোটার থাবা বসায়নি যখন, তখন এটা বেঁচে যাবে মনে হচ্ছে। এক ভদ্রলোকের বাড়ি এভাবে ঢোকা যায় না। ম্যাগাজিনের রিপোর্টার সেজে ওঁকে ফোন করেছিল ব্রতীন। কিন্তু উনি কথা বলতে রাজি নয়। আশেপাশেই খোঁজ নিচ্ছিল ব্রতীন। ওঁর মেয়ের ঘটনাটা এখানে এসেই জানতে পারে ব্রতীন। আরও দুটো মেয়েকে নিজের কাছে এনে রেখেছেন উনি তাও জানা গেল। একটা ছোকরা গোছের ইলেক্ট্রিশিয়ান জানালো ওঁর বাড়িতে বিষাক্ত সাপ ব্যাঙ থেকে ইঁদুর, বাঁদর, গিনিপিগ সব রয়েছে।
সান্ধ্য বৈঠকে ডঃ রায়ের কথাই বলল ব্রতীন। লোকটার মোটিভ আছে, বাড়িতে দুটি মেয়ে আছে।
ডিসিডিডি বললেন।, ‘লোকটা একজন বড় বৈজ্ঞানিক, গবেষণা করছেন একটা। প্রমাণ ছাড়া এগনো যাবে না। লোক লাগাও, মেয়ে গুলো কখন কোথায় যায় দেখো।’
‘লাগিয়ে রেখেছি স্যার।’
(৬)
‘অর্জুন, এবারও আমরা সফল। একদম ঠিক পথে এগোচ্ছি। কিন্তু এবার যে গিনিপিগ বা বাঁদর নয়, মানুষ চাই। কে এগিয়ে আসবে? কার উপর প্রয়োগ করবো এই বিশেষ গবেষণা?’
‘স্যার আসবে। আমি আনবো। খোঁজ করছি। আপনার স্বপ্ন সফল হবেই।’
‘আচ্ছা অর্জুন, এই কাঁটার কেসটা দেখছ? মোটিভটা ঠিক কি? এই বিষ পাচ্ছে কোথায়?’
‘আমিও ভাবছি স্যার, কাজটা তো আমাদের মতোই প্রায়। আমিও খোঁজ করছি।’
‘একা একজন নয়। কয়েকজন রয়েছে পুলিশ বলছে।’
‘হুমম, আচ্ছা স্যার আমাদের নতুন অতিথি কবে আসছে?’
‘কাল বোধহয়। পৌঁছে গেছে কলকাতায়।’
কিছুক্ষণ পর অর্জুন বেরিয়ে যায়। ডঃ রায়ের সব চেয়ে প্রিয় ছাত্র শুধু নয় ওঁর ছেলের মতো সে। আজ সব ঠিক থাকলে ওই পঙ্গু মেয়েটা হত অর্জুনের স্ত্রী। অবশ্য এই গবেষণা শেষ হলেই অর্জুন প্রস্তাবটা তুলবে। ডঃ রায়ের অবর্তমানে ঐশানীর সব দায়িত্ব ওর।
আপাতত গভীর রাতের ত্রাসকে খুঁজে বের করতে হবে। মেলার কেসটায় একটা জিনিস পরিষ্কার মেয়েটি মেলায় রয়েছে। কারণ মেলা বন্ধের পর খুন হয়েছে। তখন সবাই দোকান গোটাচ্ছিল। দুশো দোকানের মধ্যে খুঁজে নিতে হবে তাকে। মেলায় ঘুরতে যারা এসেছিল তারা অত রাতে ছিল না। অর্জুন ঘুরে ঘুরে দেখছিল। কিন্তু এ যে খড়ের গাদায় সূচ খোঁজা। হস্তশিল্প মেলায় মেয়েরাই বেশি দোকান দিয়েছে। হোমের মেয়েদের স্টল ও রয়েছে।
আশা ছেড়ে দিয়েছিল ব্রতীন। মেলায় একটা খুনিকে খুঁজে পাওয়া বেশ শক্ত। খুনের সময় ছিল সাড়ে নটার আশেপাশে। ওই সময় থেকে সিসি টিভি ফুটেজ ভালো করে দেখেছে। অন্তত আঠাশটা মেয়ে এরপর বেরিয়েছে মেলা ছেড়ে। সেই আঠাশটা মেয়ের মোট এগারোটা স্টল খুঁজে নিয়েছে ব্রতীনের টিম। ওই বাথরুমের কাছে যে তিনটে স্টল সেগুলোতেই লক্ষ্য রাখছিল ও নিজে। বাকি গুলো বেশ দূরে, তবে সব কটাতেই নজর রাখা হয়েছে।যদিও ওধারের মেয়েরা এই বাথরুমে আসবে না হয়তো। তবুও লোক লাগিয়েছে ও। ওই তিনটের একটা স্টলে নানারকম গহনার মধ্যে হঠাৎ চুলের কাঁটাগুলো চোখে পড়ল। বেশ সুন্দর কাঁটা, তলায় নানা রকম ঝুলমি লাগানো। তার সঙ্গে ম্যাচিং গহনা। নানা রকম সুতো ও পুথি দিয়ে বানানো বেশ শক্ত কাঁটা। ঠিক এই ধরনের কাঁটাই ব্যবহার হচ্ছে। দোকানের নাম আশার আলো। দুটো কাঁটা কিনল সে। ডঃ দত্তকে দেখাতে হবে।
একটু দূরে একটা খাবারের স্টলে বসে মেয়ে তিনটেকে লক্ষ্য করছিল ও। ভালোই ভিড় হয়েছে। শাড়ি গহনা দেখাচ্ছে দুজন, একজন হিসেব রাখছে। আরকজন এসে ঢুকল ভেতরে শাল দিয়ে মুখটা আড়াল করা, দেখা গেল না ঠিক।
একটা ধোসা ধীরে সুস্থে শেষ করে একটা কফি নিয়ে বসল ব্রতীন, ও সাদা পোশাকে এসেছে। মুখ ঢাকা মেয়েটা অন্য মেয়েটাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এক ঝলক মুখটা দেখে চমকে উঠেছিল ও। মেয়েটার মুখটা কি বীভৎস!!
ওদের পেছনে ফলো করে বাড়িটা দেখে নেয় ব্রতীন।
রাতে ল্যাপটপ খুলে গুগলে সার্চ করছিল ব্রতীন। আশার আলোর সাইটটা পেলো, বর্ণালী বিশ্বাস এটার মালিক। তবে সাইটে শুধু শাড়ি ঘর সাজাবার জিনিসের আ্যড। এদের খাবারের হোম ডেলিভারির ব্যবসাও আছে। বেশ কাছেই জায়গাটা। পরদিন অর্ডার করা যাবে ভাবল ও।
এবার ও বর্ণালী বিশ্বাস দিয়ে সার্চ করতে গিয়ে বেশ কিছু তথ্য পেল। সব চেয়ে বড় তথ্য মেয়েটি জীববিজ্ঞানের স্কলার ছিল, একটা অ্যাসিড অ্যাটাকের পর আর রিসার্চ করা হয়নি ওর। একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেছিল। আপাতত সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়েই আছেন। কারণ একটা পাওয়া গেল তাহলে।
বর্ণালী যে অসাধারণ সুন্দরী ছিল বোঝা যায় ছবি দেখে। তবে দুই বর্ণালী কি এক? এক ঝলক যে মুখটা দেখেছিল সে কি এই বর্ণালীর। নাকি অন্য কেউ!!
গুগলে কিছু খোঁজাখুঁজি করছিল অর্জুন। ওদের রিসার্চের জন্য আপাতত একটি মেয়ে চাই। কিন্তু বাঁদরটার সঙ্গে যা হল…. তা যদি আবার হয়!! জীব বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিবর্তন আনতে চলেছে এই গবেষণা। কিন্তু সফল হবে তো?
অহনা বা আরাধ্যা কে এই জন্যই নেওয়া যাবে না। নতুন কাউকে চাই। তাকে তৈরি করতে হবে।
আপাতত নিজের ছোট্ট ল্যাবটায় ঢোকে অর্জুন। নতুন কিছু রিসার্চ পেপার এসেছে। পড়াশোনায় মন দেয় সে। টেবিলের একদিকে ছড়িয়ে রয়েছে কিছু স্ক্যান রিপোর্ট। ডঃ স্মিথ আসবেন পরের সপ্তাহে, ঐশানীকে দেখাতে হবে একবার। আগের থেকে অনেকটা ইমপ্রুভ করেছে ও। তবে ওকে সারিয়ে তুলবেই অর্জুন।
(৭)
ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা কাচের বেশ বড় কিউবিকল। তাতে একটা বাথটব বসানো। বৃষ্টির মতো জল পড়ছে ঝাঁঝরি দিয়ে। বেশ কিছু গাছপালা, কাদামাটি বাথটবে। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, কয়েকটা সোনালী ব্যাঙ দেখা যাচ্ছে। নব ঘুরিয়ে জলটা বন্ধ করল বর্ণালী। গাছের পাতা থেকে টুপটাপ জল পড়ছে। হাল্কা আলো জ্বেলে বেরিয়ে আসে ও। কৃত্রিম উপায় ওদের ওই পরিবেশ দিতে হবে, নয়তো বাঁচবে না ওঁরা।
পাশের ঘরে চারটি মেয়ে শাড়ি গুছোচ্ছে। হিয়াকে দেখে বলে, ‘বার বার বললাম মেলাতে গণ্ডগোল চাই না, তাও….’
‘লোকটা মেয়েদের বাথরুমে ঢুকে আমাকে চেপে ধরেছিল। মাইকের আওয়াজে কেউ শুনতে পেতো না আমার চিৎকার। জারা দি ঠিক সময়ে এসে পড়েছিল – না হলে…’ হিয়া আস্তে আস্তে বলে।
‘মেলাতে পুলিশ নজর রাখছে। জারা আর যাবে না।’বর্ণালীর কথার ফাঁকে বেল বেজে উঠল নিচে।
বেলের আওয়াজে দরজা খুলল তন্নি। একটা অল্প বয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে, হাল্কা চাপ দাড়ি, চোখে চশমা।
‘এটা বুটিক তো, শাড়ি দেখতাম… বয়স্কদের জন্য…’
ভেতরে আসতে বলে তন্নি ছেলেটাকে। প্রথম ঘরটাতেই বসার জায়গা। দেওয়ালে নানা রকম হাতের কাজ, গহনা টাঙানো। শোকেসে শাড়ি। মিত্রাদিকে ডেকে দেয় ও। মিত্রা শাড়ি দেখাচ্ছিল। ছেলেটা বেশ সময় নিয়ে দুটো শাড়ি নিলো।
একটু ইতস্তত করে বলল, ‘ইয়ে… মানে হোম ডেলিভারি… খাবারের… আসলে একা থাকি তো এখানে। তাই আর কি…’
মিত্রার হাসি পাচ্ছিল। ছেলেটা বেশ ক্যাবলা তো। বলল, ‘হ্যাঁ, খাবার পৌঁছে দি আমরা। তবে মাসিক চুক্তি করলে অ্যাডভান্স নিই। কোথায় বাড়ি?’
‘ওই বালিগঞ্জ পার্ক রোডে। আমি নিজেই নিয়ে যাবো না হয়। আজ কি পাওয়া যাবে?’
‘ভাত না রুটি?’
‘দুপুরে ভাত, রাতে রুটি, রাতে মাছ খাই না।’
‘বসুন, প্যাক করে দিচ্ছি। ভাত, ডাল, ভাজা, একটা তরকারি, চিকেন আর চাটনি হবে এখন।’
‘তাই দিন। যেদিন যেদিন নেবো ফোন করে দেবো না হয়। তার একটু পরে এসে নিয়ে যাবো।’
‘ঠিক আছে।’ মিত্রা হাসি চেপে ভেতরে চলে যায়। সেদিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে ব্রতীন পকেট থেকে ছোট মাইক্রোচিপ বার করে। ও যেন ঘুরে ঘুরে সব দেখছে এমন স্বাভাবিক রাখে নিজেকে। এক ফাঁকে সিসিটিভি ক্যামেরা বাঁচিয়ে টেবিলের নিচে, শোকেসের পাশে একটা ফুলের ঝাড়ে আর দেওয়ালে টাঙানো গয়নার মাঝে তিনটে চিপ বসিয়ে ফেলে চটপট। ওর শরীরে ক্যামেরা আড়াল হয়ে যায়। রোজ আসার বাহানাও বানানো গেছে। দেখা যাক কি হয়।
ডঃ দত্ত কাঁটা দেখে বলেছিলেন একই কাঁটা। এগুলোই ওই ব্যাঙের শরীরে ঘসে নেওয়া হয়েছে, বা ওই বিষের সলিউশনে চোবানো হয়েছে। ব্যাঙটা বা ব্যাঙগুলো এই বাড়িতেই আছে মনে হয়।
খাবার নিয়ে টাকা মিটিয়ে বেরিয়ে আসে ব্রতীন।
ওদিকে ডাক্তারের বাড়ির বিশেষ খবর নেই। মেয়েগুলো বের হয় না বিশেষ। খুনের দিনগুলোও বের হয়নি ওরা। এই বাড়িতেও নজর রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।
তবে কিছু ব্যাঙ শহরে ঢুকেছে খবর আছে।
(৮)
‘আরে, এটা তো আমি চাইনি, আমি যেটা চেয়েছিলাম… এটা তো আরও ডেঞ্জারাস।’ ডঃ রায় কাচের জারে হলদে ব্যাঙগুলোকে দেখে বললেন।
‘এটাই তো স্যার… আচ্ছা দাঁড়ান, দেখছি। আরেকটা অর্ডার ছিল।’ ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলে ফারুক। একটু পরে ফোন রেখে বলে, ‘সরি স্যার, এটা দিয়ে দিন। আপনারটা কাল আসবে। একটু ভুল হয়েছে আসলে।’
‘এ শহরে আর কে এসব আনাচ্ছে ফারুক?’ ডঃ রায় গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করেন।
একটু আমতা আমতা করে ফারুক বলে, ‘কাষ্টমারের আইডি আমরা বলি না স্যার। এ ব্যবসায় গোপনীয়তাই আসল কথা।’
‘কলকাতায় কাঁটা ফুটিয়ে মানুষ মারছে কেউ বা কারা জানো তো? এবার বোলো।’
‘মাফ করবেন। আমি বলবো না। আমরা অস্ত্র বিক্রি করি মাঝে মাঝে, কে খুন হল খোঁজ রাখি না স্যার’ বেরিয়ে যায় ছেলেটা। চোয়াল শক্ত করে ডঃ রায় ফোনটা তুলে নেন।
‘হায়দর, ফারুককে ফলো করো। আমায় জানিও ওর হাতের বাক্সটা কি করে ও।’
হায়দর জেল খাটা কয়েদি, খুব বিশ্বস্ত। ফারুকের হাঁড়ির খবর পেয়ে যাবেন এবার।
প্রায় দেড় ঘণ্টা পর একটা ফোন পেয়ে উনি বেরিয়ে যান।
অর্জুনকে নিয়ে যখন বাড়িটার সামনে এলেন, তখন দুপুর তিনটে। বেল বাজাতেই একটি মেয়ে এসে দরজা খুলে বলল, ‘কাকে চাই?’
‘বর্ণালী বিশ্বাস।’
‘উনি তো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া কারও সঙ্গে…’
‘বলো জীববিজ্ঞানী ডঃ মনোহর রায় এসেছেন।’
মেয়েটা ইতস্তত করে ওদের বসতে বলে উপরে চলে গেল। ঘরটার চারদিকে হাতের কাজের জিনিস সাজানো। একদিকে দেওয়ালের রেকে শাড়ি সাজানো। একটু পরে স্কার্ফে মুখ ঢাকা একটি মেয়ে নেমে এলো। মুখের যে অংশ টুকু দেখা যাচ্ছে তাতে বোঝা যায় মেয়েটি সুন্দরী। ওদের নমস্কার জানিয়ে মেয়েটা বলল, ‘বলুন কি করতে পারি?’
‘আলোচনাটা গোপনীয়, এখানে বসেই করবো?’ ডঃ রায় বলেন।
‘কি ব্যাপারে!!’
‘একটা পার্সেল বদলের ব্যাপার। তাছাড়া যে হারে খুন হচ্ছে শহরের বুকে…’ ডঃ রায়ের কথার ফাঁকে বর্ণালী বলে ওঠে, ‘আপনারা কি পুলিশ?’
‘না, আমিও জীব বিজ্ঞানী। ও শল্য চিকিৎসক। আমরা একটা নতুন প্রজেক্টের উপর কাজ করছি।’
‘আপনার নাম জানি, ছবিও দেখেছি। আপনি বহুবছর খবরের বাইরে তাই ভুলে গেছিলাম।’
‘তুমিও তো ভালো ছাত্রী ছিলে, রিসার্চটা ছাড়লে কেন?’
ডঃ রায়ের প্রশ্নে বর্ণালী বলে, ‘ভাগ্য খারাপ তাই।’
‘কিন্তু যে কাজে নেমেছ তাতে পুলিশ তোমাদের ধরে ফেলবে খুব তাড়াতাড়ি। একটু এদিক ওদিক হলে জীবন সংশয়।’
মেয়েটি অবাক হয়ে তাকায়। অর্জুন নীরব শ্রোতা।
‘যদি কাঁটাটা কোনও ভাবে নিজের গায়ে প্রবেশ করে!! ভেবে দেখেছ কখনও?’
মেয়েটা হঠাৎ স্কার্ফটা খুলে ফেলে এক ঝটকায়। বীভৎস পোড়া অংশটা বেরিয়ে আসে। অর্জুনের মুখে একটা বিস্ময় সূচক শব্দ হয়।
‘আমি এই জন্য রিসার্চ ছেড়েছি ডক্টর। পারবেন চোখটা ফিরিয়ে দিতে। এই ক্ষতবিক্ষত মুখ কোনও কসমেটিক সার্জারিতেও স্বাভাবিক হবে না। আর মনের ক্ষতর কথা ছেড়ে দিলাম। পুলিশ পারে নি দোষীদের শাস্তি দিতে। আমি দিয়েছি। আরও দেবো। বিষাক্ত পোকা গুলোকে পিষে মারবো এভাবেই। ধরুক পুলিশ আমায়। আমি তৈরি।’
‘আমরা একই কারণে এসেছি। তবে পদ্ধতি আলাদা। আমাদের একটা অকুতোভয় মেয়ে দরকার।’
বর্ণালী অবাক হয়ে তাকায়।
‘আমি চাইছি মেয়েদের শরীরে এমন একটা গ্ৰন্থী সংযোজন করতে যাতে থাকবে তীব্র বিষ,ঠিক বিষধর সাপের মতো। বিষাক্ত সাপ শিকার ও আত্মরক্ষার জন্য তাদের শরীরে উৎপন্ন প্রক্রিয়াকৃত লালা বা সর্পবিষ ব্যবহার করে। এই বিষপ্রয়োগের জন্য তাদের বিশেষভাবে তৈরি এক জোড়া দাঁতও থাকে যা বিষদাঁত নামে পরিচিত। এছাড়া কিছু কিছু সাপ তাদের চোয়ালের মাধ্যমে বিষ ছুড়েও মারতে পারে। বিবর্তনের ধারায় বিভিন্ন রকম সাপের মাঝে বিষ উৎপন্ন হয়েছে। কয়েকটি জাতের গিরগিটির মাঝেও বিষের উপস্থিতি দেখা যায়, যা মূলত লালা। এই বিষ নিজেদের রক্তে মেশে না। কিছু কিছু বিষাক্ত ব্যাঙের শরীরে অতি শক্তিশালী কিছু নিউরোটক্সিন থাকে। কিন্তু কিভাবে এই ব্যাঙগুলো সেই বিষক্রিয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করে জানো?’
বর্ণালী অবাক হয়ে শুনছে। অর্জুনের দিকে তাকিয়ে ডঃ রায় ইশারা করেন। অর্জুন বলে, ‘অদ্ভুতুড়ে বিষাক্ত ব্যাঙ এপিপোডোবেটস এন্থনি এপিবাটিডাইন নামক বিষের মৌলিক উৎস। এই বিষ ইকুয়েডর দেশটির বাইরে অন্য আর কোন প্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায়নি। ছোটখাটো আকার, চিত্রবিচিত্র ডোরাকাটা দাগ শরীর, এই ব্যাঙটি বিষাক্ত হলেও তার শরীরে এই বিষের কোন ক্ষতি হয় না। শিকারি প্রাণীদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য এই ব্যাঙ নিজের এই বিষ কাজে লাগায়। তারা এপিবাটিডাইন বিষ শিকারি প্রাণীর গায়ে লাগায়। সেই বিষ প্রাণীটির স্নায়ুতন্ত্রের রিসেপটরের সঙ্গে আটকে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যু ঘটায়।’
অথচ ব্যাঙটি নিজে কেন সেই বিষক্রিয়ার শিকার হয় না?
গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, বিবর্তনের ধারায় এই ব্যাঙগুলোর শরীরে ছোটখাটো কিছু জেনেটিক রূপান্তর ঘটেছে।যে আড়াই হাজার এ্যামইনো এ্যাসিড দিয়ে রিসেপটর গঠিত তার মধ্যে মাত্র তিনটি এ্যামাইনো এ্যাসিডের এই রূপান্তরের কারণেই সেই বিষ ব্যাঙের নিজস্ব রিসেপটরের ওপর কাজ করতে পারে না। যার ফলে ব্যাঙ সেই বিষের প্রাণঘাতী প্রভাব রোধ করতে পারে। নিজের শরীরে বিষ থাকা আপন অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ভাল। এতে শিকারি প্রাণীকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়। এই গ্ৰন্থী মানবদেহে প্রতিস্থাপন সম্ভব। আমরা বাঁদর, গিনিপিগের উপর পরীক্ষা করেছি। একটা ছোট জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে নারী দেহে এই বিষগ্ৰন্থী প্রতিস্থাপন সম্ভব। এতে নারী আত্মরক্ষা করতে পারবে নিজেই। শত্রু আক্রমণ করলে নখের মাধ্যমে বিষ প্রবেশ করবে শত্রুর দেহে। চাইলে দাঁতের মাধ্যমে আক্রমণ করা যাবে। কয়েক সেকেন্ডে প্রতিপক্ষর মৃত্যু, অথচ মেয়েটির রক্তে মিশবে না বিষ। আপাতত এই কাজের জন্য আমাদের দুটো মেয়ে চাই।’
অর্জুন পুরোটা বুঝিয়ে বলে ডঃ রায়ের দিকে তাকায়।
ডঃ রায় বলেন, ‘তোমরা বোধহয় এটাই করছ একটু অন্যভাবে। আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি বুঝতে পারছ কি হবে?’
‘এ তো যুগান্তকারী আবিষ্কার!! যদি সত্যি হয় নোবেল পেতে পারেন। বিশ্ব কে জানান।’ বর্ণালী উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
‘না, সব বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মতো এর খারাপ দিক রয়েছে। আমি বিশ্বকে জানালেই কিছু অসাধু লোক এই হাতিয়ারে বলিয়ান হয়ে উঠবে যা আমরা চাই না। ভাবতে পারছ এই অস্ত্র অসাধু লোকের হাতে পড়লে কি হবে?’ ডঃ রায় বলেন।
‘তাহলে!! কি করণীয়?’
‘বিষ নিয়ে যে পদ্ধতিতে তুমি কাজ করছ তা সেফ নয়। কাঁটার একটা আঁচড় নিজেদের গায়ে লাগলে কি হবে ভেবেছ?’
‘অনেক সাবধানতা অবলম্বন করি আমরা। যাইহোক, এখন বলুন আমরা কি করব?’
‘আমি দুজনের শরীরে এই গ্ৰন্থী বসাতে চাই আপাতত। একটু সময় লাগবে। জেনিটিক চেঞ্জ আসবে। তবে…’
‘আমি রাজি ডঃ, আমার মেয়েরাও রাজি হবে হয়তো। ‘বর্ণালী উঠে দাঁড়ায়। ভেতরে চলে যায়। একটু পরেই দুটি মেয়েকে নিয়ে ফেরে। মেয়ে দুটির চোখ জ্বলছে। বর্ণালীর কাছে এসে ওরা বেঁচে থাকার নতুন দিশা পেয়েছিল। আত্মরক্ষার কিছু কৌশল শিখেছিল। আপাতত বর্ণালী যা বলল যদি সত্যি হয় ওরা এই সমাজের বুকে বিপ্লব আনবে। সমাজ কে পরিষ্কার করার এ সুযোগ ছাড়া যায় না।
(৯)
কান থেকে হেড ফোন নামিয়ে ডঃ দত্ত বললেন, ‘কি বুঝলে?’
ব্রতীনের মুখে কথা নেই। কেসটা গোপনীয় বলে ও নিজের দায়িত্বে মাইক্রোচিপ লাগিয়েছিল। সাহায্য নিয়েছিল ফরেনসিকের ডঃ দত্তর। এত তাড়াতাড়ি সাফল্য আসবে বোঝেনি।
এখনি গ্ৰেফতার করা যায় মেয়েগুলোকে। কিন্তু মনের থেকে তেমন সায় পাচ্ছে না যেন।
‘বয়স কত তোমার?’ ডঃ দত্তর প্রশ্নে ঘুরে তাকায়।
‘জীবনে প্রচুর উন্নতি করবে, প্রমোশন হবে। এই কেসটা ভুলে যাও আপাতত।’
‘ম… মানে!!’
‘কাঁটার গল্প শেষ, আর খুন হবে না।’
‘কি করে বলছেন?’
‘অভিজ্ঞতা থেকে। কয়েকমাস পরে নতুন সিরিজ হবে, আজব জন্তুর নখের আঁচড়ে খুন!!’
‘তাই তো আটকাতে যাচ্ছি।’
‘কি আটকাবে, কাকে আটকাবে? ডঃ রায় বা ওই ছোকরার বিরুদ্ধে খুনের প্রমাণ নেই। এই মেয়ে গুলোকে ধরবে? ওরা অন্য মেয়ে খুঁজে নেবে। আর এ মেয়ে গুলোর বিরুদ্ধে জোরালো প্রমাণ কই? এই রেকর্ডিং এভিডেন্স নয়। কোর্ট স্ট্রং প্রমাণ চাইবে। মানবাধিকার কমিশন আছে, নারী কল্যাণ সমিতি আছে। আরও কত কি দেখবে তখন ওদের বাঁচাতে এসে যাবে।’
ব্রতীন বসে পড়ে।
‘বিজ্ঞানের একটা পরিবর্তন আসতে চলেছে। সমাজের কিছু জঞ্জাল পরিষ্কার হবে। এই অস্ত্র শত্রুর বিরুদ্ধে কাজে লাগবে। আমি তো ভাবছি চাকরি ছেড়ে ওদের প্রজেক্টে ঢুকে যাই। অন্তত একটা ভালো কাজ করতে পারবো। এই সমাজে মেয়েদের জায়গা কোথায় জানো তো? হাজার আইনি বদল এনেও ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না। কয়েকদিনের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা কাউকে সুরক্ষা দিতে পারেনি তোমার আইন। ডঃ রায় যা করতে চলেছেন তার সুদূর প্রসারে ভবিষ্যতে শিশু হয়ত সহজাত কবজ কুণ্ডলের মতো ওই বিষগ্ৰন্থী নিয়েই জন্মাবে। অন্তত আত্মরক্ষার একটা হাতিয়ার তো পাওয়া গেল। তাই আপাতত শুধুই দেখো কি হয়।’
‘আর কাঁটার কেসটা…?’
‘পৃথিবীর ইতিহাসে জ্যাক দা রিপার থেকে স্টোন ম্যান সাইকো খুনির অভাব নেই। কটা কেস সলভ হয়েছে বলতো? তোমাদের ডিপার্টমেন্টে সলভ কেসের থেকে আন সলভ কেসের সংখ্যা বোধহয় বেশি। ক্ষতি কি সেই সংখ্যাটা আরও একটা বাড়লে?’
ব্রতীন অবাক হয়ে সিনিয়র ফরেনসিক অফিসারের কথা শুনছিল। উনি বলছেন, ‘যারা মরেছে সব সমাজের জঞ্জাল। ওদের নিয়ে ভাবতে হবে না। পারলে এদের সুরক্ষা দাও। আইন কিসের জন্য? ওরা তো ভালো কাজ করছে। আপাতত অপেক্ষা করো।’
‘না, মানে… বস কে কি বলব…?’
‘বলবে নজরদারি বাড়ানোতে খুন বন্ধ হয়েছে আপাতত।’
(১০)
ছয় মাস পর।
কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে বিশেষ বৈঠক, রেড রোডের পাশে তিনটে মৃতদেহ পাওয়া গেছে, নখের আঁচড় ছাড়া কোন আঘাত নেই, এদিকে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু, বিষটাও আজব। সামুদ্রিক সাপের বিষ। কোন আজব জন্তুর আগমন ঘটেছে শহরে। দুদিন আগে আলিপুর জুএর কাছে চারটে দেহ পাওয়া গেছিলো, ছোট ছোট কামড়ের দাগ কারও হাতে, কারো মুখে, গলাতে, একজনের গায়ে আঁচড় ছিল শুধু, বিষাক্ত প্রাণী বোঝা যাচ্ছে। বিষটা অজানা। ফরেনসিকের ডঃ দত্ত বলছিলেন, ‘বিবর্তনের ফলে জীব জন্তুদের মধ্যে বদল আসে, তেমনি কিছু মনে হচ্ছে।’
কেশে ওঠে ব্রতীন। সামনের জলের বোতলটা খুলে গলাতে ঢালে।
কমিশনার বললেন, ‘জংলি বেড়াল হতে পারে, ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতরে আছে শুনেছি, আপাতত প্রেসকে এটাই বলা হোক। ব্রতীন দেখুক বাকিটা।’
ডঃ দত্তর সঙ্গে ল্যাবে গিয়েছিল ব্রতীন, ওঁর ঘরে গিয়ে বলল, ‘এবার স্যার? কি বলব এর পর?’
‘আপাতত বিড়াল খুঁজবে, ভাম বিড়াল দেখেছ? ভাম বিড়াল? মানুষের দাঁতে বা নখে বিষ হয় না জানো তো। চিন্তা কিসের? মৃত্যুদণ্ড বোঝ? আইন দিয়ে বুঝতে গেলে মুস্কিল, এটাকে বলে ভগবানের মার। সাধারণ মানুষের ক্ষতি যত দিন না হচ্ছে বিড়াল খোঁজো, যাও।’ কম্পিউটারে মন দেয় ডঃ দত্ত।
ব্রতীন ভাবে এই লোকটা কলকাতা পুলিশের গর্ব, একে শতকটি প্রণাম।
অর্জুন তখন কলকাতা বিমান বন্দরে ঐশানীকে নিয়ে লন্ডনের ফ্লাইটের অপেক্ষায়, ডঃ স্মিথ বলেছেন ও আবার সুস্থ হবে, একটা অস্ত্রোপচার দরকার। ডঃ রায় গবেষণায় ডুবে গেছেন বর্ণালীর সঙ্গে। আপাতত ঐশানীর ভার তাই অর্জুনের।
Tags: অমৃতরূপা কাঞ্জিলাল, কল্পবিজ্ঞান গল্প, চতুর্থ বর্ষ প্রথম সংখ্যা, দেবদত্তা ব্যানার্জী
sera galpo laglo ei sonkhyar..darun.
This is the best story of this magazine. Just amazing! Can’t get out of my head at all. Please add me as your friend on facebook
Thanks
asaadhaaran……….sudhu bhoy ektaai emon kichhu aabiskaar hole taar misuse haoaa taa aatkaano jaabe ki?
natun rupe bish-kanya kolponaar jonyo lekhika ke avinandan
Besh balo laglo.