মেমারি চিপ
লেখক: বুবুন চট্টোপাধ্যায়
শিল্পী: অমৃতরূপা কাঞ্জিলাল
টিফিনের বাক্সটা খুলে টুপুরের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। শ্রুতি বলল, কীরে, টুপুর কাঁদছিস কেন? টুপুর বলল, কিছু না, এমনি। শ্রুতি ওর ছোট্ট দু-হাতের পাতা জড়ো করে টুপুরের গালটা ধরে বলল, জানিস না, বেস্ট ফ্রেন্ডকে মিথ্যে কথা বলতে নেই। শ্রুতির কথায় টুপুরের আরও কান্না পেল। চোখ দুটো জলে ভেসে গেল। সেই দেখে শ্রুতি বন্ধুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। কোনওরকমে কান্নাটা সামলে টুপুর বলল, দেখ, রোজ এই এক টিফিন। ব্রিটানিয়ার কেক। শ্রুতি বলল, আন্টিকে বলিস না কেন? সত্যিই তো রোজ কী এক টিফিন খেতে ভালো লাগে? শ্রুতি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, কী করে বলবো বল! মা তো টিফিন দেয় না আর! বাবাই কিনে দেয়। শ্রুতি বেশ অবাক হয়ে বলল, কেন? আন্টির কী হয়েছে? টুপুর চোখটা নামিয়ে বলল, মা, অনেকদিন ধরে অসুস্থ। সারাদিন শুয়ে থাকে। কী অসুখ আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে ডাক্তার নাকি বলেছে ডিপ্রেশন। সারাদিন শুয়ে থাকে। কারওর সঙ্গে কোনও কথা বলে না। স্কুল থেকে ফিরলে আগে আমাকে কত আদর করতো। প্রথম কথাই জিজ্ঞেস করতো টিফিন খেয়েছি কি না। এখন তো টিফিন ও দেয় না, খেয়েছি কি না জিজ্ঞাসাও করে না। সকালে বাবা আমাকে ঘুম থেকে তোলে। আমরা যখন বেরোই মা তখন ঘুমোয়। আমাদের বাড়িটা কেমন হয়ে গেছে রে। আর ইচ্ছে করে না বাড়ি ফিরতে। মনে হয় কোথাও হারিয়ে যাই। শ্রুতি সব শুনে বন্ধুর পিঠের উপর হাত রাখে। বলে, সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস, আন্টি তো ওষুধ খাচ্ছে। ঠিক আবার আগের মতো হয়ে যাবে দেখিস।
সঞ্জয় আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে। কারণ পলাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বিলেত থেকে একজন খুব নাম করা সাইক্রিটিস্ট এসেছেন। এ শহরে দু’দিন রুগী দেখবেন। অনেক কষ্টে অ্যাপয়েনমেন্ট পাওয়া গেছে। তিনি নাকি এইসব কেসে সাক্ষাৎ জাদুকর। দেশ বিদেশের বহু মরণাপন্ন রুগীকে তিনি সারিয়েছেন। আজ সেই ডঃ জন প্যাটারসন এর কাছেই পলাকে নিয়ে যাবে। সঞ্জয় আর সহ্য করতে পারছে না। তার সংসারটা একদম ভেসে গেছে। বিশেষ করে টুপুর। বাবা হয়ে প্রতিদিন তাকে দেখতে হচ্ছে টুপুরের মা থেকেও নেই। অযত্নে, অবহেলায় মেয়েটা পড়াশুনোতে তো পিছিয়ে পড়েইছে, সেইসঙ্গে জেদিও হয়ে গেছে খুব। সঞ্জয় কতদিকে সামলাবে? একে প্রাইভেট ফার্মে চাকরি, সময়ের কোনও মাথামুন্ডু নেই। তার উপর বাড়িতে এমন বিষাদ প্রতিমা স্ত্রী। প্রায় দু-বছর হয়ে গেল পলা ডাঃ মুখার্জির ওষুধ খাচ্ছে। কোনও উন্নতি হয়নি। উলটে দিনকে দিন যেন আরও অবশ হয়ে যাচ্ছে। কড়া, কড়া সিডেটিভ এ সারাদিন ঘুমোচ্ছে। মরে যাওয়া আর দিনের পর দিন একজন সুস্থ লোক মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে থাকা জাস্ট চোখে দেখা যায় না। সঞ্জয় ভেবে পায় না কেন পলার এইরকম মারাত্মক ডিপ্রেশন হল। তাদের মধ্যে তো কোনও অশান্তি ছিল না। ছোট্ট টুপুরকে নিয়ে তাদের তিনজনের সংসারে কোনও কিছুর অভাব ছিল না। তবে কী পলার কোনও লুকোনো দুঃখ যা সঞ্জয় এই পনেরো বছরের দাম্পত্যে টের পায়নি? তা কী করে হয়? দুজনে এতগুলো বছর পাশাপাশি আছে সঞ্জয় টের পেত না পলার সেই গোপন বিষাদ? পলা চিরকালই একটু মুডি। নিজের জগতে থাকতেই বেশি পছন্দ করে কিন্তু সঞ্জয় জানে পলা পাশাপাশি সংসারটাকেও খুব ভালোবাসত। আর টুপুরের প্রতি তার যত্নেরও কোনও অভাব ছিল না। আস্তে, আস্তে যে কী হল! সঞ্জয় ভেবে কোনও কুলকিনারা পায় না। দেড় বছর টানা ওষুধ খাওয়ার পরও পলা যেদিন তেরো তলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিতে গেল সেদিন সঞ্জয় বুঝেছিল এতদিনের ওষুধে কোনও কাজ হয়নি। পলার ডিপ্রেশন একটু ও কমেনি বরং বেড়েছে। সেদিন মিনতির মা না দেখলে যে কী সর্বনাশ হত সঞ্জয় ভাবতে চায় না। এই ঘটনার মাস তিনেকের মধ্যেই সঞ্জয় ডাঃ প্যাটারসনের খবরটা পেল। সঞ্জয়ের মনে হল কোনও বুজরুকি যখন নয় একটা শেষ চেষ্টা করে দেখা যেতেই পারে।
টুপুরকে তার দিদুনের কাছে রেখে সঞ্জয় সানি পার্কে ডাঃ প্যাটারসনের অস্থায়ী চেম্বারে যখন প্রবেশ করল দেখলো লোকে লোকারণ্য। দাঁড়াবার জায়গা টুকু নেই। একী! এত মানুষ এসেছে মনের রোগ সারাতে? এ শহরে এত মানুষের মনের অসুখ! সঞ্জয়ের মনে হল সে যেন একটা বিষাদ নগরীতে বাস করে। হাজার, হাজার মানুষের মন ভালো নেই। মন ভালো নেই। মন ভালো নেই। পাশের ভদ্রলোককে সঞ্জয় জিজ্ঞেস করল এত লোককে দেখতে গেলে তো ভোর হয়ে যাবে। ভদ্রলোক হেসে বললেন, অনেকেই এসেছেন অনুরোধ করতে যদি একটু দেখেন শুনেছি সাক্ষাৎ ভগবান। ডিপ্রেশন থেকে সরিয়ে মানুষকে আবার পুর্নজন্ম দেন। সঞ্জয় বলল, হুম! দেখা যাক কী হয়।
পলার যখন টার্ন এল তখন প্রায় রাত দশটা বাজে। দুরু দুরু বুকে প্যাটারসনের চেম্বারে ঢুকতেই এক সৌম্যকান্তি পুরুষ হ্যালো! গুড নাইট বলে হাত বাড়িয়ে দিলেন করমর্দনের জন্য। সঞ্জয় সাহেবের বাড়ানো হাত ছুঁয়ে যেন একটু ভরসা পেলো। পলার যাবতীয় অসুখের সিম্পটম শুনে প্যাটারসন যা বললেন অবিশ্বাস্য। প্রথমে প্রয়োজন একটি ছোটখাটো অস্ত্রোপচার। অর্থাৎ সার্জারী। তিনি শরীরের একটি বিশেষ স্থানে একটি মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেবেন। এই মাইক্রোচিপটি এমন ভাবে প্রোগ্রামড করা থাকবে যে পলা দীর্ঘ ঘুমের সময় রোজ একটু একটু করে ছেলেবেলায় পৌঁছে যাবে। প্রতিদিন একজন বিষাদমগ্ন, পূর্ণবয়স্ক মানুষ যদি এইভাবে স্বপ্নের ভেতর দিয়ে চিন্তাহীন, ক্লান্তিহীন শৈশবের কাছে যেতে পারে তবে ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্কের সেরোটোনিনএর ক্ষরণ স্বাভাবিক হবে। কারণ মস্তিষ্কে সেরোটিনিন এর কম ক্ষরণের কারণেই মূলত ডিপ্রেশন হয়। বিশেষ নার্ভের ভেতরে এই স্বপ্ন দেখানোর মাইক্রোচিপটি তিনমাসের বেশি কাজ করবে। তিনমাস লাগাতার একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ যদি রোজ তার ঘুমের মধ্যে তার রামধনুর মতো রঙিন ছেলেবেলার কাছে ফিরে যেতে পারে তাহলে একটা সময় তিনি বুঝতে পারবেন জীবনটা আসলে উপভোগ করার জিনিস। তাকে এইভাবে দুমড়ে, মুচড়ে খাঁচায় বন্দী করার জিনিস নয়। কিন্তু একটা শর্ত এক্ষেত্রে যিনি বা যাকে এই মাইক্রোচিপ দিয়ে চিকিৎসা করা হবে তার শৈশবটি ও যদি যন্ত্রণাময় হয় তাহলে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা কোনও কাজ করবে না। কারণ বেসিক্যালি এটা একধরনের হিলিং প্রসেস। ভালো গান যেমন ভালো থাকতে সাহায্য করে এও অনেকটা সেরকম। প্যাটারসনের মতে সাকসেস রেট প্রায় নাইনটি পারসেন্ট। মনোচিকিৎসক হিসেবে তাঁর দীর্ঘ পঁয়তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি গত দশ বছরে দেখেছেন এই চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে বহু ডিপ্রেশনের রোগীকে তিনি ভালো করেছেন। বিশেষত ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিতে এই রোগ প্রায় মহামারীর আকার ধারণ করেছে। কারণ দেখা গেছে যে দেশে মানুষ যত স্বচ্ছল, যে দেশে সাধারণ মানুষের বেসিক নিডস নিয়ে চিন্তা করতে হয় না সে দেশে মানুষ তাড়াতাড়ি ডিপ্রেসড হয়ে পড়ে। অথচ উলটোটাই হওয়ার কথা। কিন্তু না। ডাঃ প্যাটারসনের মতে তৃতীয় বিশ্বের মতো গরীব দেশগুলোতে দু-বেলা খাওয়া-পরার জন্যই বেশিরভাগ মানুষকে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে তাদের মস্তিষ্ক অন্যভাবে ক্রিয়া করে।
সঞ্জয় সব শুনে জানতে চাইলো এই চিকিৎসার খরচ কেমন। ডাঃ প্যাটারসন জানালেন প্রাথমিক অস্ত্রোপচার এবং হ্যাপি মাইক্রোচিপ নিয়ে ইন্ডিয়ান রুপিতে এক লাখ টাকা মতো খরচ। সঞ্জয় রাজী হয়ে গেল। সেই আগের হাসিখুশি পলাকে ফিরিয়ে আনার জন্য এক লাখ টাকা কিছুই নয়।
নির্ধারিত দিনে পলার অপোরেশন হয়ে গেল। সঞ্জয় আর সঞ্জয়ের বাবা গিয়ে পলাকে বাড়িতে নিয়ে এল। সঞ্জয়ের যেন তর সইছে না। সে চাইছে পলা এক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়ুক। আর তার ছেলেবেলার সব ভালো ভালো ঘটনাগুলো তার চোখের পাতায় ভর করুক। তার যে তার হাসিখুশি বউটাকে ফিরে পাওয়ার খুব দরকার। শুধু তার? টুপুরের আরও দরকার। আজ তার মা থেকেও নেই। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?
না! নো চেঞ্জ। সঞ্জয় আজ সকালে পলার মধ্যে কোনও ভাবান্তর দেখতে পেলো না। সেই এক ই রকম ভাবলেশহীন মুখ। চোখের কোণে তীব্র কালি। কে কখন কোথায় যাচ্ছি, কী করছি কোনও কিছু নিয়েই কোনও আগ্রহ নেই। অবশ্য সঞ্জয় জানে ধৈর্য ধরতে হবে। দুদিনে কীই বা আকাশ পাতাল ঘটবে? সাতদিনের মাথায় টুপুর কে নিয়ে যখন সঞ্জয় স্কুলে বেরোচ্ছে পলা এসে দরজার সামনে দাঁড়াল। কিন্তু কোনও কথা বলল না। সঞ্জয়, টুপুর দুজনেই দুজনের মুখ চাওয়াচায়ি করল। সঞ্জয় মৃদু হেসে পলাকে বলল দরজা টা আটকে দাও। প্রত্যুত্তরে পলা দরজা আটকেই দিল। এক বিন্দু হাসিও ফেরত দিল না। সঞ্জয়ের কোথায় যেন খচ করে লাগলো। সঞ্জয় সত্যিই বুঝতে পারছে না এই মাইক্রোচিপ আদৌ কোনও কাজ করবে কি না। একটা ছোটো যন্ত্র মনখারাপ সারিয়ে দেবে অত সোজা? তবে কী সঞ্জয় ঠকে গেল। এই মাঝবয়সে এসে জীবনের কাছে হেরে গেল? জানে না। আর ভাবতে পারছে না সঞ্জয়। বেশি ভাবলেই টুপুরের মুখ টা মনে পড়ে। তখন মনে হয় দম টা বন্ধ হয়ে যাবে। কেউ যেন তার গলা টিপে ধরেছে।
সপ্তাহ তিনেক বাদে টুপুর স্কুল থেকে আসার পর মায়ের ঘরে যেতেই পলা টুপুর কে জড়িয়ে ধরল। জড়িয়ে ধরে অঝোরে কান্না। টুপুরের শরীরটা যেন থরথর করে কাঁপছে। ক…..ত দিন, কত্তদিন পরে মা আদর করল টুপুরকে। কতদিন পর টুপুর মায়ের গায়ে সেই পন্ডস পাউডারের গন্ধটা পেল। টুপুরের কেন জানি মনে হল মা এবার ভালো হয়ে যাবে। পলা টুপুরের থুতনিটা তুলে জিজ্ঞাসা করল, খেয়েছিস মা? টুপুর বলল, খাবো। মিনতি মাসী দেবে। পলা বলল, না আজ আমি তোমাকে খেতে দেব। আমি তোমাকে খাইয়ে দেব। টুপুরের যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। সে ভুলেই গেছে কবে মা তাকে শেষ খাইয়ে দিয়েছে। মিনতির মা ও অবাক। কতদিন পর বৌদি মেয়েটাকে নিয়ে টেবিলে এসে বসলো। মিনতির মা পলার সামনে টুপুরের ভাতের থালাটা দিয়ে বলল, খাইয়ে দাও না বৌদি মেয়েটাকে। রোজ তো একা একা খায়। পলা মিনতির মায়ের দিকে যেন কেমন শূন্য চোখে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে টুপুর বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ মা দাও না। কতদিন তুমি আমাকে খাইয়ে দাওনি। পলার ভেতরে কী যেন একটা হল। টুপুরের কথায় বুকটা ধক করে উঠল। তারপর ভাতে হাত দিয়ে বলল, আয়, আজ তোকে আমি খাইয়ে দেবো। দু গ্রাস মুখে তুলেই টুপুর মিনতির মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, পিসি আজকেও তুমি এত্ত ঝাল দিয়েছো? জানো আমি খেতে পারি না। পলা বলল, চাটনি করেছো কিছু? মিনতির মা কীরকম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, মিস্টি আচার আছে। দেবো? পলা বলল, তাই দাও। এত ঝাল দাও কেন? জানো মেয়েটা খেতে পারে না। মিনতির মা থালায় আচার দিতে দিতে ভাবছে বৌদির আজ হল কী! তবে কী বৌদি ভালো হয়ে যাচ্ছে? ঠাকুর দয়া করো বলে মিনতির মা র হাত দুটো জোর কয়ে আপনা আপনি ই কপালে উঠে গেল।
সঞ্জয় অফিস থেকে ফিরতেই টুপুর বাবার হাঁটু জড়িয়ে ধরে বলল, জানো বাবা, মা আজকে আমাকে খাইয়ে দিয়েছে। সঞ্জয় অবাক। সঙ্গে সঙ্গে মিনতির মা ও এসে বলল, হ্যাঁ, দাদাবাবু। বৌদি আজকে টুপুরকে খাইয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে বৌদি এবার ভালো হয়ে যাবে। উফ! আমি মঙ্গলচণ্ডী, মা শেতলা, লোকনাথ বাবা সবার কাছে মানত রেখেছি ঠাকুর তুমি সংসারটাকে জুড়ে দাও। পলা আজ টুপুরকে খাইয়ে দিয়েছে শুনে অনেকদিন পর সঞ্জয়ের বুকেও যেন একটা কুলকুল স্রোত বয়ে গেল। জুতোটা ছেড়ে ভেতরের ঘরে গিয়ে দেখলো পলা একটা ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছে। এমনটাই তো চেয়েছিল সঞ্জয়। পলার মধ্যে বরাবরই একটা অনুভবী মন ছিল। ভালো গল্প, ভালো উপন্যাস, ভালো গান শুনলে কেমন ভেতরে ভেতরে খুশি হয়ে উঠত। সঞ্জয়ের সঙ্গেও শেয়ার করত। সেই পলা বছরখানেক ধরে খবরের কাগজটাও উলটে দেখে না। সারাদিন ঘুম, ঘুম আর ঘুম। তার মানে পলাকে ওই মাক্রোচিপ রোজ রাতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। রোজ রাতে তাকে হাত ধরে ছেলেবেলায় নিয়ে যাচ্ছে। কী করে সম্ভব? একটা ছোট্ট যন্ত্রের এত ক্ষমতা। মানুষের ব্যক্তিগত স্মৃতির মধ্যে ঢুকে পড়ছে? সঞ্জয় যত ভাবছে স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য মাইক্রোচিপটা তৈরি করার আগে ডাঃ প্যাটারসন এর কাছে পলাকে বেশ কয়েকবার সিটিং দিতে হয়েছে। বাবা, মা সহ ওদের পরিবারের অন্যন্যদের ছবি পুরানো, পারিবারিক অ্যালবাম থেকে স্ক্যান করে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ, বিশেষ আনন্দের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তারপর এই বিশেষ যন্ত্রটি একদিন ও.টি করে পলার কানের পেছনে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ হিপোকাম্পাসকে স্টিমুলেট করতে হবে। কারণ মস্তিষ্কের হিপোকাম্পাস মূলত মানবদেহের স্মৃতিভূমি বা মেমারি এরিয়া। এইভাবেই মানুষ যখন গভীর ঘুম অর্থাৎ এন, আর, ই, এম এর পর্যায়ে পৌঁছবে তখন মাইক্রোচিপটি অ্যাক্টিভ হয়ে কাজ শুরু করবে। ভাবা যায়? চিকিৎসা বিজ্ঞান কোথায় পৌঁছে গেছে? পুরানো স্মৃতি দিয়ে মনোবিকল মানুষ কে ঠিক করা। সঞ্জয় যত ভাবে তত যেন বিস্ময় ওকে চেপে ধরে।
আজ পলা সঞ্জয়কে সারপ্রাইজ দিল। আজ তাদের বিবাহবার্ষিকী। দুটো নাটকের টিকিট কেটে রেখেছিল পলা। তারপর বাইপাসের ধারে একটি পাঁচতারা হোটেলে ডিনার এবং ওখানেই রাত্রিবাস। একটা ডিলাক্স স্যুট বুক করেছে পলা। সঞ্জয়কে কিছুই জানায়নি। সঞ্জয় অবাক। পলার এত পরিবর্তন সে ভাবতেই পারছে না। অনেকদিন পর, অ – নে – ক – দি – ন পর সঞ্জয় যখন কালো স্লিভলেস, ট্রান্সপারেন্ট রাত পোষাকে পলাকে বিছানায় দেখল তখন চাঁদটা এমন অসভ্যের মতো জানলার কাছে এল যে সঞ্জয় বাধ্য হল পর্দাটা টেনে দিতে! ওরা ভেসে গেল অনেকদিনের জমানো উষ্ণতায়।
Tags: অমৃতরূপা কাঞ্জিলাল, কল্পবিজ্ঞান গল্প, চতুর্থ বর্ষ প্রথম সংখ্যা, বুবুন চট্টোপাধ্যায়
Khub bhalo laglo. Sotti jodi erom ekta chip hoto.
Amazing concept like black mirror but story couldn’t lead anywhere