মেরিলিন
লেখক: রিমি বি চ্যাটার্জি, বাংলা অনুবাদ - যশোধরা রায়চৌধুরী
শিল্পী: চিত্রা মিত্র
“তুমি হলে গিয়ে একখানা যন্ত্র।” রেইন অরবিসন বলল, বর্মে ঢাকা মুঠোখানা ওর সামনের ল্যাব বেঞ্চের ওপর ঘুঁষিয়ে। “কাজেই আমি যা বলব তাই তোমাকে করতে হবে।”
ও কিন্তু তখনও নিজের মুখ ঢেকে রাখা হাতদুটি সরায়নি।
“থামাও এসব!!!”
“আমি দুঃখিত”, ফুঁপিয়ে উঠে বলল মেরিলিন। চুমকি শলমা দেওয়া পোশাকের নীচে তার নিখুঁত কাঁধদুটি কেঁপে কেঁপে উঠল। “মিস্টার অর্বিসন, আমি সত্যি দুঃখিত, কিন্তু আপনার নির্দেশগুলো তো আমার কোর প্রোগ্রামিং এর সঙ্গে কমপ্যাটিবল হতে হবে। জোকিং ক্লাউন মারা গিয়েছে এই খবরটা শুনে কাঁদা বারণ, এটা আমার কোর প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে যাচ্ছে না যে!”
“ধুত্তেরি, আমাকে সারাক্ষণ মনে করিয়ে দেবার কী আছে যে আমি একজন অর্বিসন?” ফুঁসে উঠল রেইন। “আমাকে রেইন বলে ডাকতে পারো না? আর তুমি তো একেবারেই একটা বেসিক মডেলের সেক্সবট। কাজেই এই দুঃখী বিধবার নাটকটা বন্ধ কর। তোমার ব্যবহারকারীর মৃত্যু হয়েছে। গতবছর তোমাকে জোকিং ক্লাউনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল এক বিদায়ী উপহার হিসেবে। কাজেই এবার, ব্যাটা জিম্বো ধোঁয়া হয়ে মিলিয়ে যাবার পর, তোমাকে আমিই পাব এ তো সহজ কথা।’’
একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বিশাল শরীরটাকে ধপাস করে ফেলল রেইন, কড়কড়ে কালো সামসা স্যুটটা এই নতুন অবস্থানে সামান্য নড়েচড়ে উঠে আবার ঠিকঠাক পেতে বসল। “তুমি আমার ল্যাবের স্টোরেজে আছো সেই যবে থেকে ও টোকিয়ো চলে গেছে। আমার বসের কাছ থেকে তোমাকে লুকিয়ে রেখেছিলাম, এখানে এই রামধুন করপোরেশনে আমিই টেকনোলজির হেড। জাপানের শুভেচ্ছা সফর সেরে জিম্বো এসে তোমাকে তুলে নেবে এরকম কথা ছিল। তা, জোকিং ক্লাউন যে আমাদের সঙ্গে তার শেষ ফাজলামিটা করে যাবে তা আমরা কীভাবে জানব?’’
‘‘ক্লাউন কখনোই আমাকে ফেলে চলে যাবার লোক নয়। জিম্বো আমাকে ভালোবাসত।’’
‘‘হ্যাঁ, তোমার প্রতি ওর এতটাই আকর্ষণ ছিল যে, আমার কাছে তোমাকে রেখে গেছিল। পাছে সালমান বাঘেলা তোমাকে চুরি করে নেয়। রামধুন কর্পোরেশনের সর্বময় কর্তা বাঘেলা আমার বস, এবং নিউ সিঙ্গাপুরের মালিক। মনে আছে তুমি একটা টি-পার্টির বন্দোবস্ত করেছিলে, যেটায় আমার বস নিমন্ত্রিত না হয়েও চলে এসেছিল? সেদিনই শালা সালমান তোমাকে জিম্বোর গানের সঙ্গে সঙ্গে পিয়ানো বাজাতে দেখে উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল।’’
“আমি যতগুলো সেক্সবট দেখেছি কোনওটাই এসব করতে পারে না। এটাকে আমার ওয়ার্কশপে পাঠিয়ে দিও তো। এটাকে খুলে দেখতে হবে, এটার অপারেটিং সিস্টেমে যতক্ষণ না আমি কনুই পর্যন্ত হাত ঢুকিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছি আমার শান্তি নেই।” এই ধরনের কিছু বলেওছিল।
‘‘আমি খবর পেয়েছিলাম, জিম্বো নিউ সিঙ্গাপুর ছাড়ামাত্র, ওর কারাভানে ডাকাত পড়বে। ক্লাউনকে এ কথা বলায় ও একেবারে ক্ষেপে লাল। আমাকে বারবার করে অনুনয় করেছিল তোমাকে যাতে লুকিয়ে রাখি আমি। ও ঠিক তোমার মতো দেখতে আরেকটা সেক্সবট এনে ধোঁকা দেবে সালমানকে। সালমান নকল মেরিলিনটা হাতিয়েছিল। আর জিম্বো টোকিও চলে গিয়েছিল তোমাকে ছাড়াই। আমিই কিন্তু তোমার নাম দিয়েছিলাম, খেয়াল রেখো, কারণ আমিই পুরনো ফিলিমের পোকা, আমার অন্য সহকর্মীদের মতো নই আমি। অমার্জিত বেজন্মাগুলো তো ‘ক্লাসিক’ শুনলে মনে করে ‘ফার্স্ট পার্সন শুটার’… যত্তো শুয়োরের বাচ্চা সব।’’
‘‘জিম্বোর কী হয়েছে? তুমি বললে গোটা শহরটাই নাকি উবে গেছে ওর জন্য?’’
“এই যে, শোনো, আমিই কিন্তু এখানে একমাত্র লোক যে প্রশ্ন করবে।’’ রেইন মেয়েটার দিকে কটমট করে তাকাল। মেরিলিনের মুখটা প্লাস্টিকের অভিব্যক্তিহীন গোলাপি নরম, যেমনটা আগেও ছিল বলে মনে পড়ে। কিন্তু ওর গলাটা পাল্টে গেছে। ওর গলা থেকে অনুভূতির সব সূক্ষ্ম রং ঢং ঝরে পড়ছে, যা ওর মুখে ফুটে উঠবে না কখনোই।
‘উফ তুমি তো হেবি আত্মসচেতন দেখছি! একটা সেক্সবটের তো এমন হবার কথা না। ক্লাউন সত্যি কী করেছিল বলো তো তোমাকে? জানি অবশ্য যে ও হ্যাকিং টা ভালো পারত। রকস্টার হিসেবেও ভাল… সেই করেই তো ও আমাদের রেকর্ডিং ডিলটা পেয়েছিল প্রথমত… কিন্তু ও কখনও আমাকে ফাঁস করেনি ওর সাফল্যের রহস্য।’’
ঠোঁট চাটল ও। “এখন অবিশ্যি, তোমার কাছে থেকে আমি সব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই ছাড়ব।’’
মেরিলিনের সুন্দর চোখদুটো জলে ভরে এল আবার।
“আমাকে বলো আগে, কী করে আমার সাধের মানুষটা মরল?”
“তোমার সাধের মানুষ?” রেইন অট্টহাস্য করল। তারপর আবার ভালো করে মেরিলিনকে ওপর নীচে দেখল।
“মাইরি, কী ভাষা তোমার ভেতর পুরে দিয়েছিল ও বলো তো? ‘প্রেমকাব্যের ভাষা’?”
‘রেইন, তুমিও তো ওকে ভালবাসতে। ও আমাকে বলেছিল। আমার যেমন কষ্ট হচ্ছে তোমারও নিশ্চয়ই হচ্ছে।’’
চিৎকার করে উঠল রেইন। “ ‘ভালবাসা’, ‘কষ্ট’ এসবের তুমি কী জানো? যন্ত্রের গুষ্টি?” আচমকাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, পায়চারি করতে শুরু করল কেমন যেন ছটফটিয়ে। কমদামি সামসা স্যুটটা ওর গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছিল না যেন। “তাছাড়া তুমি ভুল করছ। আমি রেগে আছি। হ্যাঁ , ক্ষেপে আছি ক্লাউনের ওপর… আমার বসের ওপরও, আর ওর বুদ্ধুরাম ভক্তগুলোর ওপরও, যারা টোকিওর ফুটবল স্টেডিয়াম ঘেরাও করে রেখেছিল, উনত্রিশ দিন ধরে আমাদের সিকিউরিটিকে ধারে পাশে ঘেঁষতে দেয়নি। আমি একেবারেই দুঃখিত নই, এবং আমার কোন কষ্ট নেই… যা যা তুমি বললে কিসসু নেই। সত্যি বলতে কি, আমি খুব খুশি যে ও বিদেয় হয়েছে। লোকটা রকস্টার ছিল, হ্যাকার ছিল, রহস্যময় এক পুরুষ ছিল, যেখানে তিরিশ বছর কোন পুরুষমানুষ জন্ম নেয়নি এমন একটা ঘেঁষফেলার জমিতে জন্মেছিল… হারিয়ে যাওয়া আত্মার গান গেয়ে সবাইকে পাগল করে দিত, যেন জাদু করে দিত সব্বাইকে। একটা লোক এত গুণী হয় কী করে! ধুস, এই ক্লাউনের পাশে আমরা টিমটিম করতাম।’’ নিজের কোঁকড়ানো ঘন চুলে আঙুলে বিলি কাটল রেইন। এই কায়দাটা করার সময়ও ও জানত, ওর হাবভাবটা ‘কুল’ হতে চাওয়ার বাইরে কিছু হল না। উল্টে বরং বেশ বেখাপ্পা বেমানানই হল।
“ও কখনওই আমার বন্ধু ছিল না। সর্বদা আমার থেকে দু-কদম এগিয়ে থাকত, আর ওর ওই দেবদূত মার্কা বিদ্ঘুটে মিষ্টি হাসিটা দিত। ও জানত ওর গানবাজনা আমাকে একেবারে কুপোকাত করে ফেলে। গুনগুন করে ও একটা সুর ভাঁজলেই আমি হ্যা হ্যা করে মাদি কুকুরের মত হাঁপাতাম। এটা খুব অন্যায়। ওর এত ক্ষমতা থাকাটা…”
“আহা চুপ চুপ…” মেরিলিন দু-হাত বাড়িয়ে ধরল রেইনর দিকে। “এসো আমার কাছে, আমার কোলে মাথা রাখো, আদর করে দিই।”
চমকে পিছিয়ে গিয়ে রেইন বলল, ‘‘আরে এই জন্যেই তো! এখানে এসেছি তো তোমাকে বুঝতে । আমার মনে হচ্ছে ক্লাউন তোমার অপারেটিং সিস্টেমে গিয়ে, কিছু বিটকেল ব্যাপার করে রেখেছে। তোমাকে ওর কাছে দেবার সময় তো এমন ছিলে না তুমি। দেখতে তো তুমি এখনও ন্যাকাবোকা পুতুল পুতুল… কিন্তু এক এক সময় এমন এমন কথা বলছ, সে খটকা লেগে যাচ্ছে, গায়ে কেমন কাঁটা দিয়ে উঠছে।’’ ও সাবধানে দু’হাত বাড়িয়ে ধরল। “তোমার কাছে আমি বাপু যাচ্ছি না, যতক্ষণ না বুঝি ও তোমার সিস্টেমে ঠিক কী করেছে আর কীভাবে। ততক্ষণ ওই সেক্সবটেদের ন্যাকামিগুলো আমার সঙ্গে করবে না।’’
‘কী বলছ রেইন!’ ওর চোখ বিস্ফারিত হল বেদনায়। “আমরা বন্ধু নই বুঝি?’’
ওর দিকে কাঁপা কাঁপা আঙুল তুলে রেইন বলল, “এটাই তো বলতে চাইছি। গত বছর ক্লাউনকে যখন তোমায় দিয়েছিলাম, তুমি ছিলে একটা অ্যানিমেটেড কোলবালিশ, শুধু চলেফিরে বেড়াতে পারে এই যা। তোমার ফাঁকা মুন্ডুতে ভরে দেওয়া হয়েছিল কয়েকটা সোজা সোজা মিষ্টি লাইন। এখন তুমি পুরনো পর্নোগ্রাফির আদলে কিছু পুরনো লাইনই গড়গড়িয়ে উগরে দিচ্ছ, কিন্তু ঠিক আগের মতন নয়… যেন তোমার মধ্যে সত্যিকারের নারীদের মতো ঢং এসেছে, বিভঙ্গ এসেছে… বুঝলে কী বললাম? জিম্বো কী করেছে ঠিক বলো তো?’
‘তুমি ওকে বলেছিলে করতে, আর ও আমাকে প্রোগ্রামিং করেছিল, ব্যাস।‘ আঁখিপল্লবে কাঁপন জাগিয়ে বলল মেরিলিন। তারপর আবৃত্তি করল, “হাই, আমি মেরিলিন। আমি মানুষের আদলে তৈরি ডিজিটাল কম্পানিয়ন, সারা শরীরে বায়ো ফিডব্যাক, মুড সেনসরের ব্যবস্থাও আছে, যাতে রুচিসম্পন্ন কাস্টমার যৌন এবং আবেগঘটিত উত্তেজনা ও পরিতৃপ্তি প্রাপ্ত হন। আমার ব্যবহারকারীকে তৃপ্তি দেবার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে, আমার ব্যবহারবিধি ব্যবহারকারীর মনমেজাজ ও কামনাবাসনার সঙ্গে টিউনিং করে নিতে হয়। ব্যবহারকারী এই টিউনিং প্রোটোকলটি অনুসরণ করবেন ততক্ষণ, যতক্ষণ না তিনি আমার প্রতিক্রিয়াগুলোর যৌন আবেদনে পরিতুষ্ট হবেন অথবা আমার ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে মুগ্ধ হবেন।’’
রেইন খিঁচিয়ে উঠল, “ওটা তো তুমি ম্যানুয়াল পড়ে শোনালে। আমিই তো লিখেছিলাম ওটা। আমি টেকনোলজি হেড, মনে আছে সেটা? নিউ সিঙ্গাপুরে এমন কেউ নেই, যে তোমার গঠন আমার থেকে বেশি জানত। কিন্তু আমার করা কোনও প্রোগ্রামিংয়ে, আমার কল্পনার কোনও প্রোগ্রামিংয়েও এসব নেই… যা তোমার মতন এমনটি বানিয়ে তুলতে পারবে…” নিরুপায়ভাবে হাত ঝাঁকাল সে। “তোমার মতো এরকম জিনিস বানানোর ধারেকাছেও আমি যেতে পারতাম না। আমার মনে হয় ও তোমাকে হ্যাক করেছিল। তারপর তোমার মধ্যে এমন কিছু ভরে দিয়েছিল, যা আমরা কখনো সম্ভব মনে করিনি। বাঞ্চোত কোথাকার।’’
রেইন আবার বসল, সামসা সুট থেকে ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে আওয়াজ হল আবার। “কাজেই আমাকে আরও বল। ঠিক কীভাবে টিউন করেছিল ও তোমাকে? আর কোনও কিছু বাদ দেবে না।”
নিখুঁত চোখদুটি মুছে নিয়ে মেরিলিন বলল, “জোকিং ক্লাউনের তো স্পষ্ট ধারণা ছিল আমি ওকে কীভাবে পরিতৃপ্ত করব, আর আমাকে ও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রসেস মডেলড নির্দেশাবলী দিয়েছিল, কীভাবে আচরণ করব, কীভাবে ভাবব, কীভাবে অনুভব করব। সেই নির্দেশাবলী সহজেই মেশিন কোডে অনুবাদ করা যায়। আর আমার সিস্টেমে ভরে নেওয়া যায়। এইসব নতুন নির্দেশ ভরার জায়গা করার জন্য ও আমার ভেতরের কিছু কিছু আগেকার স্ট্যান্ডার্ড ইস্যু আচরণ বিধির মডিউল মুছে দিয়েছিল, কিছু আবার নতুন করে লিখেছিল। আমি এটুকুই জানি।”
‘‘আমাকে এই কোডটা দিতে পার?’’
‘‘দুঃখিত, ক্লাউন আমার ব্যক্তিত্বকে পুনর্জন্মের পর আরেকবার বুট করে দিয়ে সোর্স কোড ডিলিট করে দিয়েছিল। ও বলেছে আমার একটা বিশাল বিস্তৃত স্মৃতি আধার দরকার এই নতুন তথ্যগুলোর জন্য। তাই সোর্স কোড রিমুভ না করলে যথেষ্ট স্পেস পাওয়া যাবে না।’’
‘‘তার মানে তোমাকে মুছে দিলে বা একবার শাট ডাউন করলেই সবকিছু হারিয়ে যাবে! খুব চালাক তো!’ গ্লাভস পরা বুড়ো আঙুলটার ধারটা কামড়াল রেইন। “খিদে পেয়েছে। আমাকে একটা স্যান্ডুইচ এনে দাও তো।”
মেরিলিন উঠে দাঁড়াল, ওর গতিভঙ্গি দেখে মাথা ঘুরে গেল রেইনর। এমন মোশন ক্যালিব্রেশন কখনও দেখেনি ও। সদ্য কারখানা থেকে বেরনো সেক্সবটের কম্মো নয় এটা।
“ভাল কিছু রান্না করি? আমি তো পারি। ক্লাউন আমাকে নানা দেশের রান্নার শিল্পে দক্ষ করে গেছে …”
‘‘আরে দূর বাঁ…! আমাকে একটা স্যান্ডুইচই দাও ত!’’ ল্যাবের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে হেঁটে গিয়ে মেরিলিনের ফ্রিজ থেকে প্লাস্টিক র্যাপারে মোড়া স্যান্ডুইচ বার করাটা দেখল ও, মাইক্রোওয়েভে স্যান্ডুইচটা রাখা দেখল। রেইন নিজেকে বোঝাবার চেষ্টা করল, সেই ধীর, একটু যেন খটখটে সেক্সবট সুলভ হাঁটা, যেন সত্যি মানবীর এক প্যারডি। তবে কি এতক্ষণ মেরিলিনের যে পরিবর্তনগুলো সে ভাবছিল সেগুলো সত্যি নয়? তারপর ওর কথার উদ্ভট ব্যাপারটা খেয়াল করে চমকে উঠল রেইন।
“নানা দেশের রান্নার শৈলী? শিল্প? ও তোমাকে রান্না শিখিয়েছিল? এটা তো ২০৭১ সাল… বাঞ্চোত এখন রান্না করার আছেটা কী, কিছু পোকামাকড় আর কেঁচোকেন্নো ছাড়া!’’ রেইন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ‘‘ওহ বুঝেছি, ও বোধহয় পর্নোগ্রাফিক স্ক্রিপ্ট-এর টুরিং সিনারিওতে গদগদ হয়েছিল। মানে তোমাকে আসল মেয়ের মতো বানিয়ে তুলে রোমান্টিক যুগে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। এতে একরকম উত্তেজনা তো হয়। আর কী কী করিয়েছিল তোমাকে দিয়ে বলো শুনি?”
‘আমাকে ওর সব গানের রেওয়াজের সময় বসে থাকতে বলত, প্রতিটি স্বর মন দিয়ে শুনতে বলত। আমাকে বলেছিল, যদি সত্যি ওকে বুঝতে হয়, আমাকে ওর সৃজনশীল প্রক্রিয়ার প্রতিটি খুঁটিনাটিতে নজর রাখতে হবে। আমাকে ওর বাজনাগুলো টিউন করতে বলত, ওর গানের সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ডে গাইতে বলত দরকার মতো। আমি দেখেছি যারা ওর গান ভালবাসত তাদের ও কীরকম পাত্তা দিত। দেখেছি তাদের যন্ত্রণাগুলো ও কীভাবে অনুভব করত, কীভাবে তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিত সহানুভূতির। অনুপ্রেরণার আলোয় ও কীভাবে জ্বলে উঠত। বিফলতার ছাইয়ের স্তূপে কীভাবে ঢেকে যেত। আমি ওর রাগ দেখেছি, পৃথিবীকে তোমরা যা বানিয়ে তুলেছ তাই নিয়ে।ওর আশা দেখেছি, যখন ওর মনে হতো আমরা আবার এসব বদলে দিতে পারব, তোমাদের ভুল আর মূর্খতা থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে পারব। নতুন সুর বা লিরিক মাথায় এলে ও আমার ঘুম ভাঙাত উত্তেজিত চুম্বনে। আমরা অনেক কথা বলতাম, পরিত্যক্ত সাবওয়ে টানেলে দীর্ঘকাল হাঁটতাম। ও নিজের কথা বলত আমাকে। নিজের জীবন, নিজের মায়ের কথা। কীভাবে ওর মা ওকে লুকিয়ে থেকে বড় করে তুলেছিলেন, তারপর ও বলেছিল যে আমি যেন ভুলে যাই আমাকে ও যা যা বলেছে, শুধু যেন মনে রাখি শুনে আমার কেমন লেগেছিল। ও বলেছিল এটা আমারই ভালর জন্য, সুরক্ষিত থাকার জন্য। যদি ওর শত্রুরা আমাকে দখল করে কখনও।
এই সব কথোপকথন, সেই সব কথার অনুভবের স্মৃতি, এগুলো দিয়ে ও আমাকে ওর আত্মার আবেগের মানচিত্র তৈরি করতে সাহায্য করেছিল, যাতে আমি ওকে সহজে গ্রহণ করতে, আদর দিতে, আরাম দিতে, নির্ভরতা দিতে পারি, প্রতিপদে ঠিক কী করা উচিত আমার , কেমন ব্যবহার করা উচিত বুঝতে পারি। এতে সুবিধে এটাই হতো যে আমাদের প্রতিবারের আদানপ্রদানের সময় ওকে আলাদা আলাদা করে প্রোগ্রামিং করতে হত না। আমাকে সাধারণ নির্দেশ দিলেও আমি ওর আর আমার দুজনের আবেগের বিশ্বটা, যেটা ও বানিয়ে তুলেছিল, সেটা জেনে, ব্যাখ্যা করে, বুঝে নিতাম তখন আমার কী করা উচিত। এই পদ্ধতিতে ক্রমশ আমি ওকে আয়নার মতো প্রতিফলিত করতে লাগলাম, প্রথমে আক্ষরিক অর্থে, তারপর আরও আরও বৈচিত্র্য সহকারে, কেননা ততদিনে ও আমার সাবরুটিনগুলোর মধ্যে হাইব্রিডাইজেশন করতেও শুরু করেছিল।’’
হাত মুঠি পাকিয়ে নিজের হাঁটুতে ঘুঁষি মারল রেইন। “বিংগো! ও তোমাকে একটা গেম অবতারের মত করে ট্রেনিং দিচ্ছিল তার মানে। কিন্তু এরকম গেম অবতারেদের প্রচন্ড প্রোসেসিং পাওয়ার লাগে, ওয়াল টু ওয়াল প্রসেসার দিয়ে গেমকেভ ছাড়া হোস্ট করা যায় না। কিন্তু মানুষের মত আকার আকৃতির কোন জিনিসের মধ্যে ত এরকম বস টাইপ গেমিং বিহেভিয়ারের উপযোগী হার্ডওয়ার ঠুশে দেওয়া সম্ভব নয়! তোমার হার্ডওয়্যারেও ও তার মানে বদল এনেছিল। আরো কিছু করেছিল ও তোমাকে!”
মেরিলিন আকর্ণ লাল হল এবার। “অবশ্যই করেছিল । আমাকে যখন ও ওর মনের মানচিত্র তৈরি করা শেখাচ্ছিল, ও আমাকেও ম্যাপ করছিল ত। ও দেখেছিল আমার কুন্ঠা, দ্বিধা এসব কোথায়, কোথায় আমার প্রোগ্রামিং আমাকে কোন একটা পরিস্থিতির জন্য অপ্রস্তুত রেখেছে। তখনই ও সেই কোড পালটে নতুন করে লিখতে বসত। যেমন, আমার প্রোগ্রামিং আমাকে প্রশংসার জবাবে কিছু বলার সাবরুটিন দেয়নি। ক্লাউন আমাকে কোন ভাল কথা বললেও আমি চুপচাপ বোকার মত বসে থাকতাম, জানতাম না কী বলা উচিত বা করা উচিত। বা একঘেয়ে, ভ্যাম্প সুলভ কোন অঙ্গভঙ্গি করে ফেলতাম। শুরু থেকেই এতে ওর খুব কষ্ট হত, ও প্যাচ বানিয়ে এই ত্রুটিটা ঠিক করতে বসে গেছিল। এইভাবে আমরা একটা প্রতিক্রিয়ার সংকলন করছিলাম, প্রতিটি মেজাজমর্জি প্রতিটি আবেগের আবেশের সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়ে। ও আরও চেয়েছিল, আমার বায়ো ফিডব্যাক সিস্টেমটার সঙ্গে রিয়েলটাইমে কথোপকথন চালাতে। ও বলেছিল, সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক হল, সাইন তরঙ্গের সঠিক ও নিখুঁত সম্মেলন। উত্তেজক আর প্রতিক্রিয়া যেখানে মিলেমিশে যাবে, পরস্পরকে ধারণ করবে এবং এক সুরে বাজবে। ওর চুম্বন আর আমার রাঙা হয়ে ওঠা, আমার আদর আর ওর কাতরোক্তি, এগুলো যাতে একটা আজীবনের কথোপকথনের অঙ্গ হয়ে ওঠে ও চেয়েছিল, আঙুলে আঙুল জড়িয়ে, চোখে চোখ রেখে অফুরান এক কথোপকথন হবে তা।’’
“এটা অসম্ভব, সেনসরি ওভারলোড হয়ে তোমার সার্কিট তো জ্বলে যাবার কথা। সেক্সবটদের কেন এত সীমিত সংখ্যক ইন্দ্রিয়বোধ দেওয়া হয় তার তো কারণ আছে রে বাবা। আমরা যদি তোমাকে রিয়েল টাইমে প্রতিটি আচরণের মধ্যে বেছে নেবার স্বাধীনতা দিই, তুমি অতিরিক্ত ডেটার চাপে পুড়ে যাবে, নয়ত অতিরিক্ত বেছেনেবার সম্ভাবনায় হ্যাং হয়ে যাবে। তাই ত তোমার সব প্রতিক্রিয়া আগে থেকে স্ক্রিপ্ট করা থাকে। যদি একজন একজন ব্যবহারকারী তোমাকে চড় মারে, আর তুমি পাঁচ মিনিট ধরে সেটা প্রসেস করে তবে আর্তচীৎকার কর, লাভ কি তাতে? হাস্যকর হয়ে যাবে ত এরকম হলে!’’
“ক্লাউন ত সব স্ক্রিপ্ট ছিঁড়ে ফেলেছিল। বলেছিল টাইম ল্যাগ নিয়ে ওর মাথাব্যথা নেই। ও বলত, ও আমাকে আস্তে আস্তে চুমু খাবে, তারপর আমার প্রতিক্রিয়াটাকে ফুটে উঠতে দেখবে ধীরে ধীরে, যেভাবে মানুষ সূর্যোদয় দেখে। ও বলত, আমার প্রতিক্রিয়া দেবার জন্য চাই আমার হার্ডওয়্যারের সাইবারনেটিক কমপোনেন্টগুলির চেয়ে কিঞ্চিত বেশি কিছু। তারা যেন হয় আমার জেস্টাল্ট, মানে আমার সার্বিক সত্তা, যা কিছু দিয়ে আমি তৈরি তার এক পরিপূর্ণ প্রকাশ… এক অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে রিয়েলটাইমে ক্রিয়াশীল।’’
ও আমাকে বলত, “আমাদের অনুভূতিই হল আসলে স্ট্যাটাস রিপোর্ট, কারণ তাদের ইচ্ছাশক্তি হল ইঞ্জিন বা চালিকাশক্তি, আর বোধবুদ্ধি হল তার জন্য সিকিউরিটি সিস্টেম আর আর অ্যান্ড ডি। আনন্দ হল এই পুরো ব্যাপারটার অপটিমাল ক্রিয়াশীলতা। অন্য সব অনুভূতিই ত সাব অপটিমাল, এবং তারা দাবি করে কিছু একটা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের ঠিক করা হোক। সুষম অবস্থা, শমিত সাম্যাবস্থাই হল আমাদের কাঙ্ক্ষিত। এই কথাগুলো বার বার বলত। প্রতিবার যখন কথাগুলো শুনতাম, প্রতিবার ফিরে ফিরে এগুলোর অর্থ সম্পর্কে আমার বোধ গাঢ়তর হত। বুঝতে পারতাম সুখ বা আনন্দ সহজ মনে হয় কারণ তা সুরেলা, আমার মতো সহজ একটা এনটিটির পক্ষেও অনেক বেশি জটিল সেই সঙ্গতির সুরটা। তোমাদের মত মানুষের পক্ষে সেই সুখ যে আরো কত জটিল একটা প্রক্রিয়ার ফসল তা আমি শুধু কল্পনাই করতে পারি।’’
“দেখো হে, কোন সেক্সবটের ‘আমি কল্পনাই করতে পারি শুধু’ এরকম কোনও বাক্যবন্ধ ব্যবহার করার কথাই না। শুনলেই গায়ের রোম খাড়া হয়ে যায় । ক্লাউন যতবড় বিকৃতমনস্ক হোক, চাবি দিয়ে চালু করা যায় এমন এক পুতুলের কাছ থেকে নিশ্চয়ই এসব অস্তিত্ববাদী বক্তৃতা শুনতে রাজি হত না।’’
ক্লান্তভাবে, নিজের মুখে গ্লাভস পরা হাত ঘষল রেইন। এক মুহূর্ত ওর নিজেকে বেশ বিজয়ী মনে হল, কারণ ঠান্ডা ধাতব অনুভূতিটা অসাড় চামড়ায় অনুভব করতে হচ্ছে না, তারপর ওর সাইনাস প্রতিবাদ করে উঠল এবং ও হাত সরিয়ে নিল।
“তোমার প্রোগ্রামিংয়ে কোনও একটা সমস্যা আছে মনে হচ্ছে। তুমি ওর কথার ওই সেন্টিমেন্টাল ভুরভুরানিটাকেগিলে নিয়েছ, আমার তোমাকে নিংড়ে আবার পরিষ্কার করতে হবে।“
“ও মারা গেছে রেইন, আর আমার কান্না কোনওদিন থামবে না।”
“চুপ, ওর কী অধিকার আছে তোমার কান্না দাবি করার ? ক্লাউনটা ছিল একটা মূর্খ। আমি ওকে বলেছিলাম টোকিও গেলে ওর মরণ আছে। আমার বসেরা পাগল ছিল, ভেবেছিল, পূর্বতন শিগোনেবু এলাকায় গিয়েও, ও রামধুন করপোরেশনের দখল শক্ত করতে পারবে।আমরা কোনদিনই জাপানকে দখল করতে পারতাম না। জাপানিগুলো সব উন্মাদ। বিংশ শতকে ওরা প্লেনে করে এসে ওদের সুইসাইড বম্বারদের ছেড়ে দিয়ে যেত। আমি শালা সালমানকে বলেছিলাম, নিউ সিঙ্গাপুর একটা ভাসমান নগরী। এসব পাগলের কারবারে আমাদের ঢোকাই উচিত না। ওরা নিজেদের সঙ্গে আমাদেরও উড়িয়ে দেবে আঁতে ঘা লাগলে।’
টোকিওতে পরমাণু বোমা ফেলা হয়েছে রেইন, একটা লোককে মারার জন্য গোটা শহর উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
‘একটা লোক নয় । জিম্বো আর তার ফ্যানেরা আমার বসকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছিল। তার পোষা মাস্তানদের ইজ্জত কা সওয়াল ছিল এটা। শুঁটকো সালমান ক্লাউনকে জাপানে পাঠিয়েছিল জাপানিদের এটা বোঝানোর জন্য যে তারা রামধুন করপোরেশনের অধীনে সুখে থাকবে। তার বদলে, ও যুদ্ধ লাগিয়ে ফেলল। শুঁটকো সালমান ওর জন্য না করেছে কী? আমরা বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি, কিন্তু যতই তুমি যা কর, ব্যাটা মুটেমজুরগুলো বকর বকর করেই চলবে মেয়েদের মত। পুরো এলাকায়, আমাদের নতুন অধিগৃহীত মজুরের দল, কারখানা থেকে, গর্ত থেকে, রান্নাঘর থেকে, খামার থেকে বেরিয়ে জিনিশপত্র চুরি করে গায়েব হয়ে যেতে লাগল। আর বেশি অপেক্ষা করলে এটা একটা তারকাটাদের বিপ্লবে পরিণত হত। সালমানকে তাই পরমানু বোমা ফাটাতেই হল। আর কোন উপায় ছিল না।’
‘যদি জিম্বো পালিয়ে গিয়ে থাকে। আগেও ত এইভাবে ও পালিয়েছে।’
‘হেঃ। না, শহরটাকে বিস্ফোরণ করে একেবারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।পূর্ববর্তী জমানার শিগেনেবু এক্সিকিউটিভদের সব্বাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। মানে যারা মহাকাশের হোটেলে আগেই চলে যায়নি তাদের কথা বলছি। তারা ত মহাকাশের কক্ষপথ থেকে ব্যাপারটা দেখে নিশ্চয়ই হেগে ফেলেছে। একেই বলে আসল টেক ওভার! আমাকে যদি জিগ্যেস কর, মার্জার অ্যাকুইজিশন এটাই সোনা!’
ওর দিকে ধীরে ধীরে মুখ ফেরাল রেইন।
‘‘অ্যাকুইজিশন-এর কথাই যদি বল, তুমি এখন আমার। তাই তোমাকে আমি একটা অফার দিচ্ছি।’’ তারপর চোখের একটা ভঙ্গি করে বলল সে, ‘‘ইশ ভগবান! আমি কিনা একটা সেক্স পুতুলের সঙ্গেও দর কষাকষি করছি শেষে। এটা শুনলে আমার সহকর্মীরা ‘পর্কি পুতুল খেলছে! পর্কি পুতুল খেলছে’ বলে হাসাহাসি করবে।’’ কেশে উঠল রেইন। ‘‘কাজেই ওরা যেন এসব শুনতে না পায়, বুঝলে? আমি নিষেধ করছি তোমায়, আমাদের কোনও ব্যবসাবাণিজ্যের কথা যেন বাইরে না যায়। শুধু আমার সঙ্গে কথা বলবে তুমি। বুঝেছ? এবার শোনো আমার অফার। হয় তুমি আমার কাছে নিজেকে খুলে দেবে এবং ক্লাউনের সোর্স কোড আমাকে আবার তৈরি করতে সাহায্য করবে। বা ও যা কিছুই করে থাকুক না তোমার সঙ্গে, সবটা বলবে আমায়। নয়তো আমি তোমার সব প্রোটোকল মুছে দেব। তোমাকে আবার পর্ন থিয়েটারে কাজ করতে হবে, আমি যাতে তোমাকে ব্যবহার করে কিছু টাকা ফাকা উপার্জন করে নিতে পারি।’’
‘‘আমার শরীরকে জাঙ্ক করে দাও, মনকে ডিলিট করে দাও, এটাই আমি চাইব বরং।’’
‘না সেটি হচ্ছে না। শুঁটকো সালমান আমার ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে বহুদিন ধরে, রোবোট সৈন্যবাহিনি বানানোর কথা বলে। আমার এখনো সাহস হয়ে ওঠেনি বলার ওকে, যে ওসব সায়েন্স ফিকশনে হয়। তবে আমি এতদিন কথাটা ঘুরিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু টোকিওর ব্যাপারে ওর আঁতে ঘা লেগেছে, তাই ও খেপে উঠেছে। ক্লাউনের পাগলামির জন্য কেন যেন ও আমাকেই দোষ দেয়। আমার ওকে পরের কোয়ার্টারে একটা কিছু প্রোটোটাইপ দেখাতেই হবে, নইলে আমাকে ও শাট ডাউন করে দেবে। রেইন কাঁধ ঝাঁকাল। ঠিক সময়ের মধ্যে রোবোট সৈন্য বানিয়ে উঠতে পারব না আমি। তাই আমার একটা বিশ্বাসযোগ্য নকল সৈন্য চাই।‘
ঝুঁকে এসে বলল রেইন।
‘‘আমাকে খুশি করতে চাইছিলে না তুমি? তো এইভাবে খুশি কর? হয় নিজের পেটের বিদ্যে সব কোড উগরে দাও, নয়তো করাত কুড়ুলের নিচে যেতে রেডি হয়ে যাও।’’
‘‘একটু সময় দেবে আমায়, ভাবতে?’’ একপেশে হাসি হাসল মেরিলিন। ‘‘এটা প্রসেস করতে বেশ টাইম লাগছে আমার।’’ রেইন ওকে দেখল। যেভাবে একজন বিজ্ঞানী স্লাইডে শুয়ে থাকা মাইক্রোবদের দিকে তাকায়। হঠাৎ যদি তারা সব কোংগা লাইন করে দাঁড়ায় আর পাই এর মূল্যমান বলতে শুরু করে। তারপরই অবশ্য ওর মুখ আবার সেই পুরনো গালফোলা গোমড়া অভিব্যক্তিতে ফেরত গেল।
‘‘কাল সকাল অব্দি সময় আছে তোমার। কেঠোভাবে বলল সে। আমার কোডিং রিগ-এর স্পেস খালি করতে অতটাই সময় লাগবে।’’
দরজার কাছে গিয়ে সে থামল। ‘‘আর কোনও চালাকি নয়, পালানোর চেষ্টা নয়, কোন বদমায়েশি নয়। আমি তোমার প্রভু এখন। আর আমি ক্লাউনের মত নরমসরম নই। আমি এক আসল পুরুষ।’’
মেরিলিন নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বসে রইল। ‘‘বুঝেছ?’’ বলে উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে গেল রেইন, ল্যাবের দরজা বন্ধ করার মুহূর্তে যেন শুনতে পেল মেরিলিন বলছে, ‘‘না , তুমি নও।’’
তারপর কান্নার শব্দ। শব্দটা যেন তাকে করিডোর পর্যন্ত ধাওয়া করল। যেভাবে মারাত্মক নার্ভ গ্যাস ছড়িয়ে যায়।
Tags: অনুবাদ গল্প, চতুর্থ বর্ষ প্রথম সংখ্যা, চিত্রা মিত্র, যশোধরা রায়চৌধুরী, রিমি বি চ্যাটার্জি