শৈত্যের গান
লেখক: সোহম গুহ
শিল্পী: ইন্টারনেট
জীবন আসলে একটা অচেনা রোডম্যাপ, সেখানে কিছু মোড় আঁধারে মোড়া, কিছু মোড়ে বসানো ফ্লাডলাইট। আমার হাঁটা হয়েছে কিছুটা পথ, যেখানে পৃথিবী পালটেছে আমার চোখের সামনে, বলতে গেলে পলকের মধ্যে। আমার কাছে কলকাতা এখন অচেনা। উত্তর দিকচক্রবালের দিকে মুখ করে, কোনও উঁচু স্কাইস্ক্রেপারের ছাদে ঠান্ডা সহ্য করে দাঁড়ালে দেখা যায় মেঘের মতো নীলচে একটা স্তর; ধীর গতিতে এক প্রকাণ্ড হিমবাহ তার সাম্রাজ্য বিস্তার করছে।
আমার পায়ের নিচে প্রস্তরীভূত ফুটপাথে একফোঁটা কালচে লাল দাগ। জমে যাওয়া রক্তের দাগ। আমার দাঁড়িয়ে স্যাম্পেল সংগ্রহ করার সময় ছিল না। এই কলকাতায় শান্ত আবহাওয়া তুন্দ্রার বসন্তের মতো, ক্ষণিকের। এক চিলতে রোদ আমার গালে আদর মাখিয়ে দিতে আমি চিন্তিত মুখে উপরের দিকে তাকালাম। মাথার উপর বৃত্তাকারে নীলাকাশ তৈরি হচ্ছে। ঝড়ের চোখ দ্রুত বউবাজারের দিকে এগোচ্ছে। আমি ওজনের ভারে ছিঁড়তে বসা ব্যাগের স্ট্রাপ আঁকড়ে হাঁটার গতি দ্রুত করলাম। মেট্রোর গেটের সামনে দুজন গার্ড আমারই অপেক্ষায় ছিল। সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় পেছনে শুনতে পেলাম শাটার বন্ধের শব্দ। তাও, একচিলতে কনকনে ভারী ঠান্ডা আমার সঙ্গে নেমে এল টিকিট-কাউন্টারের সামনে, মাথার উপরে ধুলো পড়া অক্ষরে যার এখনও লেখা, “সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনে আপনাকে স্বাগত।”
কিছু কচিকাঁচা আমারই হয়তো অপেক্ষায় ছিল, দেখতে পেয়ে ছুটে এল। “কাকু, পেয়েছ?”
এরা এখনও এদের বাবা-মায়ের মতো খিদে চাপতে শেখেনি, শেখেনি মুখে না ফোটাতে সেই অসহায়তাকে। আমি ব্যাগের ভেতর থেকে টেনে বের করলাম একটা মারি-বিস্কুটের প্যাকেট। আমি জানতাম এরা আমার অপেক্ষায় থাকবে; যতবার বাইরে গেছি, এদের আবদার ছিল একটাই, “কিছু এনো কাকু।” এই খণ্ডমুহূর্তগুলোয় ওদের মুখে যে হাসি ফুটে ওঠে, তাতে মনে আমার এই জীবনঝুঁকি নিয়ে বাইরে যাওয়া সার্থক। আমি মানুষ কোনওদিন ভালো ছিলাম না, তাহলে কেন এখন মনে হয় এগুলো আমার?
“এই, এদিকে শোন,” চেনা প্রমীলাকণ্ঠ শুনে পেছন ঘুরে তাকালাম। তার কালো কোঁকড়ানো চুল ফাঁক পেয়ে নেমে এসেছে টুপির নিচে, তার জ্যাকেটের নিচে ফুলে ওঠা পেট স্পষ্ট, তার ছেঁড়া বুটের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে না কাটা নখের আঙুল। “সঙ্গে একজনকে নিয়ে যেতে তোমার কি হয়?”
আমি মৃদু হেসে তার স্ফীত পেটে আলতো হাত রেখে বললাম, “সঙ্গে মানুষ নিলে আমার অসুবিধা হয়, রীতা।” গত সাতমাস ধরে আমরা এক সদ্যজাতর অপেক্ষায়। আমি সেন্ট্রালের নির্বাচিত দলপতি হতে পারি, কিন্তু আমার ঘর, হৃদয়ের চাবি অনেকদিন ধরেই একজনের কাছে গচ্ছিত। যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম, তার উপর দিয়ে বয়ে চলা তুষারঝড়ের কেবল গর্জন শোনা যাচ্ছিল। মেট্রোর জীর্ণ শাটারের উপর দাঁত-নখ পরখ করছিল বরফ। ভাবতে অবাক লাগে, মাত্র তিন বছর আগে আমেরিকার ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরির ওই বিস্ফোরণ না হলে আজকের দিনটা আমাদের কাছে অনেক অন্যরকম হত। আমাদের চিন্তা থাকতো ডাক্তার আর নার্সিংহোমের খরচা নিয়ে, বাঁচার দুশ্চিন্তা নিয়ে না। তিন বছর আগের সেই দিনটা আজও আমার চোখের সামনে ভাসে।
“সংগ্রাম, শীত আসছে।” কি অনায়াসে কথাটা বলেছিল রীতা সেদিন, অফিসের রিভলভিং চেয়ারটার উপর বাবু হয়ে বসে। দুই দিন আগে ভোরের বেলার ঘুম ভেঙে গেছিল একটা আওয়াজে। শব্দটার গুরুগম্ভীর প্রসার বুঝিয়ে দিয়েছিল এর উৎস অনেক অনেক দূরে। আমাদের পাঁচ তলার ঘরের শার্শি কেঁপে উঠেছিল সেই শব্দে। গোটা দুনিয়ার সঙ্গে কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তার কিছু আগে। বেতার শব্দের আগে ছোটে যে! আলিপুরে ইসরোর জুনিয়ার ক্লাইমেটোলজিস্ট হিসেবে কাজ করার ফলে রীতার টার্মিনালের নাগালে ছিল অনেকগুলো স্যাটেলাইটের লাইভ ফিড। সেদিন ওর কিঞ্চিৎ মজা করেই বলা ভবিষ্যৎবাণী আজকের রুক্ষ বাস্তব।
আমি, বা আমার মতো শক্তসমর্থ যারা খাদ্যের সন্ধানে বেরোয়, তারা খুব ভালো করেই জানে যে খাবার ফুরিয়ে আসছে। সেন্ট্রাল থেকে পূর্বে শিয়ালদা, দক্ষিণে হাজরা (তার পরের মেট্রো টানেল ধস নামায় পরিত্যক্ত), উত্তরে বেলগাছিয়া, এবং পূর্বে বি.বা.দি. বাগ – এই আমাদের বিচরণ ক্ষেত্র। সাহস এবং যুক্তি খোলা আকাশের নিচে আমাদের পায়ের জন্য ততটাই রাস্তা রাখে যতটা হঠাৎ তুষার ঝড় এলে একজন মানুষ দৌড়ে ফিরতে পারে। কলকাতা বিশাল, কিন্তু এইটুকু জায়গার মধ্যে আর আমাদের এই তিনশো কুড়ি জনের জন্য খাবার খুব বেশি অবশিষ্ট নেই। আমরা সাহস করে কথাটা এখনও বাকিদের জানাতে পারিনি। আতঙ্ক সংক্রামক, আর এই শীতে তা দুরারোগ্য। রীতার কাছে এই সব কিছু থেকে বাঁচার একটা রাস্তা জানা ছিল। আমিই সেই রাস্তায় হাঁটার পক্ষপাতী ছিলাম না। ওটা যে ক্যাকটাসের বাগান।
“তুমি কি ওকে জিজ্ঞেস করতে পারো না?” আমার এঁড়ে জেদের সামনে রীতা মাঝে মাঝে অধৈর্য হয়ে ওঠে, অসহিষ্ণুও। স্টোরেজ ম্যানেজারকে আমি ব্যাগটা হস্তান্তর করার পর জিজ্ঞেস করল। আমি ওকে উত্তর না দিয়ে ম্যানেজারকে ব্যাগের জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিলাম। যা ওষুধ যোগাড় করে এনেছি, তাতে গুরুতর কিছু না হলে মোটামুটি সামাল দেওয়া যাবে। আমি ম্যানেজারকে বললাম, “ব্যাগে ইনসুলিন আর সিরিঞ্জ আছে। পরিমলকে দিয়ে বোলো মেপে খরচ করতে।”
“সংগ্রাম, তুমি আমার প্রশ্ন এভাবে এড়িয়ে যেতে পারো না।” রীতার গলায় রাগ স্পষ্ট। এই রাগ করার অধিকার ওর আছে। কারণ, ও ঠিক। কিন্তু হাওড়ার সঙ্গে সন্ধি করা আমার পক্ষে পারতপক্ষে অসম্ভব। হাওড়ার বর্তমান কম্যান্ডার নূর এ. আলম। ১৯৪৭ হলে বলতাম হয়তো নামটাই আমার এই বিদ্বেষের কারণ। কিন্তু না, ২০৩১ সালের পৃথিবীর ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্মানো এই বিদ্বেষের সঙ্গে ধর্মান্ধতার কোনও সম্পর্ক নেই। আশা করি নেই। সভ্যতা পাল্টায়, পাল টানা জাহাজের জায়গা নেয় অ্যাটমিক ডেস্ট্রয়ার, কিন্তু মানুষের মন সুপ্রাচীন ব্রিস্টিলকন পাইন গাছের মতো একই থাকে।
স্বাধীনতার ঠিক একবছর আগে, তখনও আমার প্রপিতামহ শেষ ট্রেনে করে নিঃস্ব অবস্থায় বরিশাল থেকে শিয়ালদার বস্তিতে ঠাঁই নিতে এসে পৌঁছায়নি – কলকাতার রাস্তা ভেসে গিয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার তীক্ষ্ণ ফলায় নিঃসৃত শোণিতে। নেতাজি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা খণ্ডবিখণ্ড হয়ে পড়ে ছিল সেই দিন হাজরার মোড়ে আর ঘুম না ভাঙা মানুষগুলোর চারপাশে। হ্যাঁ, তারপর কেটে গেছে প্রায় একশো বছর, দুনিয়াটা ধ্বংস হওয়ার আগে ক্ষণিকের জন্য হয়েছিল আমাদের মুঠোয় বন্দি। সেই এক লহমার কোকুনে আবিষ্ট হয়ে আমরা নিজেদের ভেবেছিলাম পৃথিবীর সম্রাট, যথেচ্ছাচার করেছি প্রকৃতির উপর। তারই হয়তো আজ প্রায়শ্চিত্ত করছি আমরা। নাঃ, মানুষের চরিত্র অপরিবর্তনীয়। হয়তো বর্ষার বৃষ্টিতে ছাতার নিচে বা গ্রীষ্মে এসির পেছনে লুকিয়ে থাকার জন্য, সেই আরামের জীবনযাপনের জন্য, আমাদের মুখের উপর একটা মুখোশ উঠে এসেছিল। আমরা বাইরে তখন ভীষণ ভালো, সবাই সমান, সবার সম অধিকার। কিন্তু এই শীত সেই মুখোশটাকে হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গেছে, বের করে এনেছে আমাদের ফ্রস্টবাইটে ক্ষতবিক্ষত দাঁত-নখ-সর্বস্ব জান্তব রূপটা।
হিন্দু মুসলিম ভাই-ভাই হতে পারে, কিন্তু কুরুক্ষেত্র যুদ্ধও তো ভাইদের মধ্যেই হয়েছিল।
“রীতা,” ওকে হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নামতে সাহায্য করলাম আমি।
“আমায় একটা কথা বলো তো, সেন্ট্রাল যে আমার থেকে অনেক দামি, আমি জানি। কিন্তু আমার কথা কি মনে পড়ে না তোমার বাইরে বেরনোর আগে? বা আমাদের অনাগত সন্তানের কথা?”
আমার কাছে উত্তর ছিল, কিন্তু সেটা মুখ দিয়ে আর বেরোল না। জানি রীতাকে আমার এই মানসিকতা রাগিয়ে তোলে, কিন্তু নিজের স্ত্রীর কাছে আমায় সত্য লুকোতে হয়; রাতে ঘুমের মধ্যে যখন আমি ঘেমেনেয়ে উঠে ছটফট করি, ও বুঝতে পারে না আমার দুঃস্বপ্নের উৎস কি।
আমাদের সামনে যেখানে সিঁড়ি শেষ হয়ে প্লাটফর্মের শুরু, সেখান থেকে শেষ অবধি কেবল সার-সার তাঁবু পাতা। কোনটার সামনে ধিকিধিকি করে জ্বলছে আগুন; কলেজ স্ট্রিটের বিভিন্ন গুদামের বই আজ আমাদের প্রাথমিক জ্বালানি। গরম হাল্কা হাওয়া বিভিন্ন ভেন্টিলেশন শ্যাফট বেয়ে উপরের জগতের দিকে ধাবমান। পোড়া কাগজের গন্ধ আমার চোখের সামনে হঠাৎ কিছু স্মৃতির ভিড় জমিয়ে দিল। দিনটা ছিল ২৬ জুলাই।
তিন মাস তখন কেটে গেছে ইয়েলোস্টোনের বিস্ফোরণের পর। সেই তিনমাস কলকাতার আকাশ মেঘাছন্ন। না, ইউরোপ বা জাপানের মতো বাড়ির আকারের জ্বলন্ত পাথরবৃষ্টি হয়নি এখানে। গোটা পৃথিবীর তুলনায় আমাদের আর আফ্রিকার গায়ে কোনও আঁচড়ই পড়েনি। আসলে আমাদের জন্য স্রষ্টা আরও বড় কিছু তুলে রেখেছিলেন – শৈত্যের গান। যে গান রক্তকে হৃৎপিণ্ডের মাঝে জমিয়ে দিতে পারে। তুষারপাত শুরুর তিনদিন পর পশ্চিম দিগন্ত কালো করে নামে ঝড়।
যখন ছোট ছিলাম, বাবার কাছে আয়লা, ফাইলিন ইত্যাদি দানবঝড়ের নাম শুনেছিলাম। লক্ষ করতাম, যখনই নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনাতেন, ওঁর হাতের লোম উত্তেজনায় খাড়া হয়ে উঠত। প্রায় ত্রিশ বছর পরে নিজের উপলব্ধি দিয়ে বুঝলাম প্রকৃতির রোষ কাকে বলে। কলকাতা স্তব্ধ হয়ে গেছিল প্রায় চল্লিশ ইঞ্চি পুরু তুষারের নিচে। এমজি রোডে তখন অফিস টাইমে দাঁড়ালে বোধহয় পিন ফেলার শব্দ শোনা যাবে। রাস্তায় লাইন করে বরফের ‘বালিয়াড়ি’ তৈরি হয়েছে, জেগে আছে কেবল বাসগুলোর নীল মাথা। নিজেদের ফ্ল্যাটে আমরা তখন কাঁপছি, কাঁপছে হাওয়ার তোড়ে কাচের জানলাগুলোও। বহুদিনের অব্যবহৃত কেরোসিনের স্টোভ জ্বালিয়ে নিজেদের উষ্ণ রাখছিলাম, পড়শির সাদা পার্সিয়ান বেড়ালটা ওঁর ঘরে করুণ সুরে কাঁদছিল। সেইদিন রাতের অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা আমাদের ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। আমরা পাশের ফ্ল্যাটের দরজায় টোকা দিই। দরজাটা খোলাই ছিল। ঘরের ভেতরে একটা ইজিচেয়ারে ঘুমিয়ে বৃদ্ধা। নাম মনে পড়ছিল না আমার। কোলে শুয়ে বেড়ালটা, খুব শান্ত হয়ে। কাছে গিয়ে লাইটারের আলোয় লক্ষ করেছিলাম তাদের নীলচে-সাদা হয়ে যাওয়া মুখগুলো। জমে বরফ হয়ে গেছে দুজনেই।
ভদ্রমহিলার পায়ের কাছে একটা আধপোড়া বই, তাঁর পেছনের সুবিশাল লাইব্রেরির একটা ছোট্ট উদাহরণ। নিজের অস্তমিত জীবন তাঁর ওই নিষ্প্রাণ কাগজগুলোর থেকে কম দামি মনে হয়েছিল। মানুষকে আমি বুঝি না, কিন্তু ওই বইগুলো পরবর্তী এক সপ্তাহের পারদ জমানো ঠান্ডার কাছে আমাদের হারতে দেয়নি। পোড়া কাগজের গন্ধকে আমি তাই জীবন বলে মানি।
এক সপ্তাহ পরে সেন্ট্রালে এসে পৌঁছেছিলাম কিছু মানুষকে অনুসরণ করে।
***
আমি যে সিঁড়ির শেষে থমকে গিয়েছিলাম বুঝতে পারিনি। হুঁশ ফিরল রীতার ডাকে। নিজেদের তাঁবুর পর্দা নামানোর আগে একবার ফিরে তাকালাম আমার বর্তমান বাসস্থানে। এখনও এই জায়গা উষ্ণ, বসবাসযোগ্য। আগে, যে মেট্রো লাইন ধর্মতলাকে হাওড়ার সঙ্গে জুড়েছে, সেই লাইনে ভোরের দিকে কান পাতলে দূরাগত নমাজের শব্দ পেতাম, কিন্তু বিগত বেশ কিছুদিন পাচ্ছি না। মানছি ওদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ, কিন্তু এই প্রাত্যহিক ক্রমবর্ধমান অনুপস্থিতি উপরের বাতাসকে টেনে নামায় শিরদাঁড়ার ভেতরে।
“কিছু বলবে?” পর্দা ফেলে আমি জিজ্ঞেস করলাম। ভেতরে টিমটিম করে জ্বলছে পেট্রোলের লণ্ঠন, সেই হলদে আলোয় ওকে যেন গুস্তাভ ক্লিম্টের ‘হোপ’ তৈলচিত্রটির মতো লাগছিল, নারীত্বের জৌলুস বিকিরিত হচ্ছে ওর দেহভাস্কর্যে।
“সংগ্রাম, কি করি বলতো তোমায় নিয়ে? আমি তোমার দলপতি হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্নই তুলছি না, আমি জানি সেন্ট্রালের জন্য তোমার থেকে যোগ্য কেউ নেই।” একটু থেমে আমার মুখচোখ নিরীক্ষণ করে ও বলল, “কিন্তু তুমি কি সেন্ট্রালের প্রাপ্য? তোমাকেই কেন যেতে হবে বারবার?”
আমি হাসলাম। “সেটাই তো আমার কাজের অন্যতম অংশ। আমি যে মালিক নই, নেতা। তাই মানুষের এই শেষ সম্রাজ্যের দায়িত্ব আমার ওপরই। আমি যাই কারণ আরও কিছু মানুষ বেরোয় আমারই মতো, আমায় অনুসরণ করে। মালিক পথ বানাতে বলে। নেতা পথ দেখায়।”
“আরেকটা উপায় আছে কিন্তু। তুমি জানো, কিন্তু মানতে চাও না। নূরদের কাছে উইন্ড টারবাইনের আলোয় আলোকিত গ্রিনহাউস আছে। আর এদিকে আমরা কুপি জ্বালিয়ে দোকান থেকে খুদকুঁড়ো চুরি করে পেট ভরছি। আর কতদিন? নূরের আমাদেরকে দরকার নেই, কিন্তু ওদের টাটকা সব্জি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন।”
আমি ঘাড় গোঁজ করে বসে উত্তর দিলাম, “ঠিক আছে, আমি কী করতে পারি দেখি।”
(২)
বরফ পড়ার পর কোয়েস্ট মলে আজ আমার প্রথম পদার্পণ। কিছুই বদলায়নি এখানে, কেবল একতলায় রাজত্ব বসিয়েছে অনাহূত বরফ আর গা ছমছমে শূন্যতা। ভাঙা কাচ ছড়িয়ে যত্রতত্র। যুদ্ধ হয়েছিল এখানে; কিছু মানুষ শেষ চেষ্টা করেছিল টিকে থাকার। স্লেজহ্যামারটা পিঠে বেঁধে আমি বরফের ঢিবি টপকে ঢুকলাম। থমকে যাওয়া দোতলায় ওঠার এস্কেলেটরটা আমায় স্বাগত জানাল। শহরের বাকি জায়গাগুলোর মতো এখানেও আমার অনেক স্মৃতি জমে।
“সমুদ্র উঠবে সংগ্রাম, আবার আমাদের পালাতে হবে হয়তো ভিটেমাটি ছেড়ে,” বাবার কণ্ঠস্বর যেন অতীতের বাতাস বয়ে আনল মলের ভেতরে। বাবা যখন অফিস থেকে ফিরে বাসের ভিড়ে ভাঁজ নষ্ট হওয়া ঘামে ভেজা শার্টটাকে আলনায় রাখত পরের দিন আবার পরে যাওয়ার জন্য, যখন মায়ের অভাব প্রচণ্ড অনুভব করে ভূতের মতো রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে নিজেই চায়ের জল গরম করত, তখন বুঝিনি বাবা ওই কথাগুলোর মধ্যে লুকিয়ে ছিল কি বিপুল যন্ত্রণা। যখন বুঝলাম, তখন বাবা কেবল একটা স্মৃতি – আমি হঠাৎ অনেকটা বড়, যার বুক জুড়ে ছাইচাপা এক অব্যক্ত কষ্ট। এই মা মরা ছেলেটাকে বাবা মল ঘোরাতে আনত, আমার চোখ ধাঁধিয়ে যেত উজ্জ্বল পসরা সাজিয়ে বসা কাচে ঘেরা দোকানগুলোর মিথ্যে বৈভব দেখে। বায়না করতাম, আর সেই বায়না বাবা প্রায়ই সাধ্যের বাইরে গিয়ে মেটাত। আমি বুঝিনি বাবা কেন এরকম করত। আমার নিজের জন তার মাতৃগর্ভের ওমে ঘুমিয়ে, কিন্তু আমায় বাবার ওই অনুভুতিকে চেনার পথগুলো জন্য এই দুনিয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
সন্তানের জন্য মানুষ একটা অন্যরকমের স্বার্থপর হয়ে ওঠে; আমার অজাতের জন্য আমিও কি হয়ে উঠছি না?
আজকে বাইরের আবহাওয়া শান্ত, আকাশ কিছুটা পরিষ্কার। ঘোলাটে ক্যানভাসে যেন সামান্য নীল তুলির ছোঁয়া। আরেকটা ঝড় আসছে। বড় ঝড়। এটা তারই আগের শান্তি। বিধ্বংসী শক্তি দলা পাকাচ্ছে পূর্ব দিকচক্রবালে, ঘটকপুকুরের উপরেই সম্ভবত মেঘটা। এই ঝড় যদি কিছুক্ষণের মধ্যে কলকাতায় নেমে আসে, আমি জমে মরব।
তখনই ‘লরেল’-এর দোকানটার ডানদিকে দেখতে পেলাম লোকটাকে। তার লাল দাড়ির আর ভ্রুর উপরে ঝুলছে বরফ। অনাবৃত চামড়া পেয়েছে ফিকে অপরাজিতার রং, এবং নিষ্প্রাণ চোখদুটো একদৃষ্টে তাকিয়ে। লোকটাকে আমি চিনি। চিনতাম। মহম্মদ সাজিদ, নূরের ডানহাত। ও এখানে কী করছে?
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে কি মনে হতে ফেরার সময় সাজিদের পোশাক নির্লজ্জের মতো হাতড়ালাম কিছু পাওয়ার লোভে। তখনই জিনিসটা চোখে পড়ল। ওর তলপেটের কাছে বৃত্তাকারে একখাবলা মাংস নেই। এখনও পরিষ্কার দাঁতের দাগ। একবিন্দু ঘাম তৈরি হয়েই আমার কপালে জমে গেল। দাগগুলো মানুষের দাঁতের।
(৩)
আমার মুখে শুনেও রীতা কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিল না। “কি বলছ? সাজিদকে কেউ খেয়েছে?”
“আমি সিওর।” ওর নরম হাতটাকে রাখলাম আমার দুই তালুর মাঝে। “আমাদের সঙ্গে নদীর ওপারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন বহুকাল। আমরা জানি না সময়ের সঙ্গে হাওড়ার কি কি পরিবর্তন ঘটেছে। হেঃ, ওরা বেঁচে আছে না মরে গেছে সেটাও তো জানি না।” কিছুটা দোনামোনা করে আমি যে রক্তের দাগ দেখেছিলাম কিছুদিন আগে সেটা রীতাকে বললাম। ওর আঙুল মটকানোর শব্দ জানান দিল ও ভাবছে। ওর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট চেটে ধীরে ধীরে বলল, “দেখা করো ওর সঙ্গে।”
“কেন?” আমি ওর কথার পেছনের কারণ ধরতে পারছিলাম না। খাবার যা আছে তাতে এখনও ছয় মাস চলে যাবে। সবথেকে দুর্যোগপূর্ণ সময় যখন কাটিয়ে আসতে পেরেছি, তখন কেন? এখনি কেন? আমরা তো ভালো আছি, যতটা থাকা সম্ভব এই জমে যাওয়া জগতে। রীতা হয়তো আমার মনের কথা পড়তে পারছিল, কাছে ঘনিয়ে এসে বলল, “দীঘার কথা মনে আছে?”
***
আমাদের কলেজের থার্ড ইয়ারে, যখন রীতার সঙ্গে আমার প্রেম তুঙ্গে, আমরা কাউকে না জানিয়ে দীঘা বেড়াতে এসেছিলাম, একসঙ্গে নিঃসঙ্গতা যাপন করতে। লুকিয়ে এসেছিলাম কারণ আমাদের সমাজ তখনও (এখনও) নারীপুরুষের প্রাকবৈবাহিক অবাধ ঘনিষ্ঠতাকে খোলা মনে মেনে নেয়নি; এটা যে অপসংস্কৃতি। ‘ভারতবর্ষ ট্র্যাডিশনের দেশ’, কে যেন বলেছিলেন বহুকাল আগে। আমাদের অতি স্বল্প বাজেটে এই একটা জায়গাই আসছিল কলকাতার কাছেপিঠে।
বিশ্বউষ্ণায়ন এবং ক্রমবর্ধমান সমুদ্রের জলস্তরের প্রভাবে দীঘা জনশূণ্য। উঁচু জায়গায় তিমি মাছের মতো জেগে থাকা দু-একটা হোটেল টিকে তখনও। তারা চলে যেতে পারেনি, কেবল অসহায়ভাবে দেখেছে নোনা জলের রাজত্ব বৃদ্ধি। তারই মধ্যে নিউ দীঘার এককালীন সমুদ্রতট জুড়ে অ্যাটলাসের মতো দাঁড়িয়ে একটা ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট। সমুদ্রের নোনা জলকে স্বাদু করে সে বিশাল পাইপে করে পাঠাচ্ছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া আর দুই মেদিনীপুরের জলকষ্টে ভোগা অঞ্চলে। এই মেগাস্ট্রাকচারের চিফ টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নূরের সঙ্গে আমাদের তখনই প্রথম পরিচয়। আমাদের দেখে সে নিজেই গাইডের ভূমিকা নিল। “আসুন, সব বুঝিয়ে দিচ্ছি।” নূরকে আমরা প্রথম দর্শনে ঠিক বুঝতে পারিনি।
চোখের তারায় তার তখনই এক ঝলমলে অসুস্থ দ্যুতি, যেন চাঁদের প্রতিচ্ছবি পড়েছে কোনও অশান্ত ডোবায়। লোকটা অতিমাত্রায় ধীমান, না হলে ওই প্ল্যান্ট সামলানো বা পরবর্তীকালে গ্রিন হাউস তৈরি করা, সাধারণ মস্তিকের কর্ম নয়। রীতার সিঁথিতে সিঁদুরের অনুপস্থিতি তার চোখে পড়েছিল, বর্তমানে এই প্রায় পাণ্ডববর্জিত জায়গায় আমরা কি করতে এসেছিলাম তা ও আন্দাজ করেছিল। কিন্তু সেটা আমাদের তখন বলেনি, বলেছিল শেষবার আমার সঙ্গে মেট্রোর টানেলে দেখা করে।
বিশাল ইঞ্জিনের সামনে দাঁড়িয়ে ও সেদিন যীশুর মতো দু-হাত ছড়িয়ে বলেছিল, “নিজেকে ঈশ্বর লাগে এই যন্ত্রের সামনে দাঁড়ালে।”
এখন যেমন বলে, “আমিই হাওড়ার ঈশ্বর।”
আমি পেছন থেকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগে ও ঘুরে দাঁড়িয়ে বলেছিল, “অগস্ত্যর মতো সমুদ্রের জল শুষে ফেলছে এই যন্ত্র, এর সৃষ্টি আমার হাতে। বলা যায় এ আমার সন্তান, আমি কি তাহলে ঈশ্বর নই? আমারই জন্য তো আজ এমন সব গ্রামে গ্রীষ্মে ফসল ফলছে যেখানে আগে কেবল জলের জন্য হাহাকার হত। চারটে জেলা আজকে দাঁড়িয়ে আমার এই প্ল্যান্টের মুখ চেয়ে।”
একটু থেমে রীতাকে আরেকবার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে ও বলেছিল, “ঈশ্বরে বিশ্বাস আমরা প্রত্যেকেই করি, না চাইলেও।”
চলে আসার আগে ওর কথাগুলো আমার মনে দাগ কেটে যায়। আমি নাস্তিক, কিন্তু যখন যখন সেন্ট্রালের ভাগ্যে দুর্যোগ ঘনিয়ে আসে, আমার ঠোঁটে ‘হে ভগবান, রক্ষা করো’ কথাটাও গড়িয়ে নামে।
অতীত মনে পড়াতে আমি রীতাকে জিজ্ঞেস করলাম, “মনে আছে, তোমার প্ল্যান কি?”
“কুমোরটুলিতে রমিতা আর সায়ন্তনি কি খুঁজে পেয়েছে মনে পড়ে?”
চোখ চকচক করে উঠলো আমার। “হ্যাঁ, হ্যাঁ! আর তিথিও তো আসন্ন।”
“সংগ্রাম, আমাদের ওই মন্ত্র ওঁর গলাতেই চাই। যেভাবে পারো, ব্যবস্থা করো। নূর আসবেই।”
(৪)
“যা চন্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী যা মাহিষোম্নুলিনী…
যা ধুম্রেক্ষণচন্ডমন্ডমথনী যা রক্তবিজাশনী……”
না, সূর্য ওঠেনি আজকে। শরতের আকাশকে বরণ করেনি শিউলি ফুলের নেশা ধরা গন্ধ। দেবীপক্ষের সূচনা ঘোষণা করেনি খবরের কাগজের স্পেশাল ইস্যু। কুমোরটুলিতে চক্ষুদানও বন্ধ বহুকাল। কিন্তু আজকে ষোলোই অক্টোবর, মহালয়া এসেছে তিথি মেনে। কেউ জানান দিচ্ছে মৃতপ্রায় শহরকে, তার সন্তানদের একবার ঘুম থেকে গা ঝেড়ে উঠতে। এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনে যেখানে নর্থ-সাউথ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট লাইন দুটো পরস্পরকে একচুলের জন্য ছুঁয়ে যাচ্ছে, সেই সংযোগস্থলে হাওড়ার দিকে মুখ করে মন্ত্রপাঠ করছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তাঁর উদাত্ত গলার উৎস দুটো স্পীকার আর তাদের শক্তি যোগাচ্ছে একটা গাড়ির ব্যাটারি। এমনিতে এই কমজোরি স্পিকারের শব্দ ঢেকে যেত কলকাতার জীবনের আর গাড়ির কলতানে। কিন্তু আজ? নিস্তব্ধতার মধ্যে সে একাই শব্দের প্রহরী। মেট্রোর সুড়ঙ্গ গমগম করছে মন্ত্রপাঠের শব্দে। রেলের ট্র্যাকের দিকে আনমনে তাকিয়ে ছিলাম আমি। রীতার কথা শুনে আমি কি ঠিক করলাম?
রীতা বলেছিল, “ধর্ম কি, সংগ্রাম? র্যাডক্লিফ লাইন আমাদের আর পাঞ্জাবীদের ভেঙেছিল, ভাঙতে পেরেছিল, কারণ আমাদের ঈশ্বর এক নয়। অনেক তো হল এই একই চর্বিতচর্বণ। আর কেন? এই দুনিয়া, বা তার যা কিছু এখনও অবশিষ্ট আছে, তাতে মানুষের কথা কি ঈশ্বরের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়?”
রীতা ঠিকই বলেছিল। প্রকৃতি আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছে, তার শত অভিশাপের মাঝে।
ওয়াকম্যানটা তার এমপিথ্রি ফাইলটা চালিয়ে চুপ করে গেল। কিন্তু হাওড়ার দিক থেকে ভেসে এল না কোনও পদশব্দ।
আমায় ভাবাল লোকটার অনুপস্থিতি। নূরের যা জ্ঞান আমাদের ধর্ম সম্পর্কে, ওর আসা উচিত ছিল। ও জানে এই মন্ত্রের মানে কি – এটা সন্ধিচুক্তি। শুভবুদ্ধি কিছু থাকলে ও এখানে হাজির হত।
তাহলে?
মহাকরণ স্টেশনের পর যেখানে হুগলি নদীর নিচের মেট্রো টানেল শুরু, সেখানে আপৎকালীন অবস্থার জন্য এয়ারটাইট ভাল্ভ ডোর বসানো হয়েছিল। দরজার উপরের লিভারে মরচে পড়েছে; ফলে সেটাকে ঘোরাতে আমায় রীতিমতো কালঘাম ছোটাতে হল। যে মাস্টার কি দুটোর একটা আমি নিয়েছিলাম নূরের কাছ থেকে, আমাদের কথা বন্ধের আগে, সেটা নির্দিষ্ট ফুটোয় ঢুকিয়ে চাপ দিলাম।
বিবাদটা সেন্ট্রাল আর হাওড়ার মাঝে হলেও আসলে আমার আর নূরের। নিজের জমিতে দাঁড়িয়ে দুজনেই সঠিক, এবং একে ওপরকে একফোঁটা সেই জমি ছাড়তে রাজি নই। এই বিদ্বেষ, এই প্রবল পরধর্ম অসহিষ্ণুতা – আমাদের মধ্যে জন্ম থেকে রোপণ করে এসেছে সমাজ, তার এটাই ফলশ্রুতি।
যদি আগামি এক শতাব্দী এইরকম মেঘাচ্ছন্ন আকাশের জন্য আমাদের উটপাখির মতো মাটির নিচে মুখ লুকিয়ে থাকতে হয়, যদি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্ম হয় এই অন্ধকারে, তাহলে তাদেরকে বিশ্বাস করানো কঠিন হবে যে আমরা এককালে এই পৃথিবীর রাজা ছিলাম। আমরা আকাশচুম্বী শহর বানিয়েছিলাম কংক্রিট, স্টিল আর কাচের। আমরা পাড়ি দিয়েছিলাম গহীন মহাসমুদ্রের তলদেশে। আমরা আকাশকে করেছিলাম পায়ের ভৃত্য। চাঁদ আর মঙ্গলে প্রায় অবিকৃত আমাদের পায়ের ছাপ। এ সবই এখন বিগত অতীত। তাই তারা বিশ্বাস করবে না জনসমুদ্র কথাটার প্রকৃত অর্থ, যে এককালে আমাদের এগারো বিলিয়ান এই পৃথিবীতে ছিল। তারা আমাদের কথাকে অতিরঞ্জিত ভাববে। আমরা জানব, আমাদের শেষ নিশ্বাস অবধি, এই মনকে দেহের সঙ্গে বিদায় জানানোর আগে অবধি। আমরা আমাদের শীতল কবরে নিয়ে যাব অনেক শেষ স্মৃতি – নতুন বইয়ের সুবাস, বাসের কনডাক্টরের সেই অতি পরিচিত ‘হাওড়া, হাওড়া, খালি গাড়ি…’ আহ্বান, রাতে কুকুরের চিৎকার বা শেষ ট্রেনের ডাক। তারা বিশ্বাস করবে না মানুষের জন্ম হয়েছিল খোলা হাওয়ায় শ্বাস নেওয়ার জন্য, এই বদ্ধ পরিবেশে পচে মরার জন্য নয়। তারা নিজেদের এই পরিস্থিতির জন্য আমাদের দায়ী করবে। “জন্ম দেওয়ার কি দরকার ছিল?” কথাটা ছুটে আসবেই। বাবা-মা হওয়ার কোন অধিকার তো আমাদের নেই। রীতা আজ গর্ভবতী আমার ভুলের মাশুল দিতে। পূর্ববর্তী প্রজন্ম সবসময় দোষী তার উত্তরসূরিদের কাছে। আমরা আমাদের বাবা-মা-কে বলতাম, “এত দূষণ রুখতে পারনি?” ঠিক যেমন তারা তাদের বাবা-মাকে কোণঠাসা করেছিল নকশাল আমল নিয়ে, বা ঠাকুরদা-ঠাকুমাকে দায়ী করেছিল দেশভাগ আর বিশ্বযুদ্ধের জন্য। কিন্তু কেউ দায়ী নয়। পাপের ইউট্রিফিকেশন হচ্ছে এক জনু থেকে পরবর্তীতে। আমরা পৃথিবীকে উত্তরাধিকার সুত্রে পাই না। এটা সন্তানদের কাছে আমাদের সুদসহ ধার।
দোনামোনা করে আমি ভাল্ভ ডোরটাকে সর্বশক্তি দিয়ে ঠেললাম, হাত লাগাল সেন্ট্রালের আরও দুজন কর্মঠ পুরুষ। একটা আপত্তিসূচক শব্দ করে সেটা যখন পুরোটা খুললো, আমার নাক সুড়সুড় করে উঠলো ওপাশ থেকে আসা একচিলতে ঠান্ডা বাতাসে। সুড়ঙ্গে এই বাতাসের উপস্থিতি কাম্য নয়।
পেছন ফিরে একবার রীতাকে দেখলাম। একটা পেট্রোম্যাক্স জ্বলছে ওর হাতে, সেই আলোয় আলোআঁধারি খেলছে ওর মুখ জুড়ে। ওর পেছনে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে গোটা সেন্ট্রালের মানুষ। ওর ঠোঁট দুটো যেন খুব স্পষ্ট ওই আলোয়, তিরতির করছে দুশ্চিন্তায়।
টানেলের এইপাশে এসে আমরা তিনজন বাধ্য হলাম ভাল্ভ ডোরটাকে বন্ধ করে দিতে। এইপাশের টানেলের দুই দেওয়ালে অনেক ফাঁকফোকর তৈরি হয়েছে। তার ভেতরে টর্চ ফেললে দেখা যাচ্ছে অনেক জ্বলজ্বলে চোখ। গোটা টানেল মুখরিত কিচকিচ শব্দে। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে ইঁদুরের দল আমাদের আক্রমণ করল না। টর্চের আলোকবৃত্তে যে কয়েকটাকে পালাতে দেখালাম অন্ধকারে, সেগুলো রীতিমতো নধর। যেখানে আমরাই রেশনে দিন চালাচ্ছি, সেখানে এদের ভোজের ব্যবস্থা হচ্ছে কিভাবে?
হয়তো এই নিয়ে চিন্তা করতাম, কিন্তু আমাদের গতি রুদ্ধ হল একটা কারণে। যত হাওড়ার দিকে এগোচ্ছি, ঠান্ডা বাড়ছে, এবং সেই সঙ্গে সুড়ঙ্গে আলোও। আমি বাকিদের টর্চ বন্ধ করতে বললাম। একটা বাঁক পেরনোর পর একটা উজ্জ্বল বৃত্তাকার আলো আমাদের প্রায় চোখ ধাঁধিয়ে দিল। চোখ সয়ে আসতে বুঝলাম ওটা সুড়ঙ্গের আরেক মুখ। কিন্তু আলো? এই আলো তো থাকার কথা নয়!
আমার গতি উৎকণ্ঠায় দ্রুততর হল। সুড়ঙ্গের শেষ কয়েক মিটার পার করলাম বলতে গেলে দৌড়ে। আমাদের স্বাগত জানালো আকাশ থেকে খসে পড়া ক্রিস্টালের মতো স্বচ্ছ বরফকণা।
না, আমাদের সম্ভাষণ জানানোর জন্য পিস্তল নিয়ে নূর দাঁড়িয়ে ছিল না। ছিল না তার অনুগত অনুচরেরা, যারা নূর ভাইজান বলতে অজ্ঞান ছিল। ছিলেন না এককোণে দর্শকমাত্র হয়ে দাঁড়িয়ে ডক্টর আজমল মালিক, তুষারযুগের আগে যিনি ছিলেন গোটা ভারতের সর্বসেরা গাইনেকলজিস্ট। ছিলেন না কামালভাই, ইয়াকুবভাই, সালেমাবিবি – যাঁদের সঙ্গে ঈদ মানিয়েছি কতবার। অন্য ধর্মের বলে তাঁরা কখনও আমাকে অন্য চোখে দেখেননি, নিজের করে নিয়েছিলেন বরাবর।
আমাদের জন্য হাওড়ায় অপেক্ষা করছিল কেবল নিদারুণ শূন্যতা। আলোটা সকালের মরা সূর্যের। হাওড়ার অস্তিত্ব মাটির সঙ্গে মিশে গেছে বরফ ঢাকা পম্পেই হয়ে। ছাদ ভেঙে মেঝে হয়েছে কবে আমরা আন্দাজ করতে পারলাম না। আমাদের দৃষ্টি স্থির, হাঁটু দুর্বল। যা প্রশ্ন আমাদের মনে জমে ছিল সব উত্তর হয়ে পড়ে আমাদের চোখের সামনে।
কেন ইঁদুরগুলো ওরকম পুরুষ্টু? কেন সাজিদ পালিয়ে গেছিল জীবনপণ করে পার্ক সার্কাসে? কেন নূর আসেনি? কেন নমাজ বন্ধ?
এখানে একটা যুদ্ধ হয়েছিল, ছাদ ভেঙে পড়ার কিছুদিন পরে। ট্রয়ের মতো নয়, কিন্তু তার থেকে কমও কিছু নয়। যুদ্ধ হয়েছিল নিষ্ক্রিয় হতে বসা মস্তিষ্ক এবং এবং ক্ষুধার্ত জঠরের মধ্যে। কে জিতেছিল বলা কঠিন হত যদি না সময়কে বরফ এভাবে থমকে দিত।
আমার পাশ থেকে একজন অস্ফুটে বলল, “ওরা… ওরা নিজেদেরকে খাওয়াখাওয়ি করেছে!”
আমার সামনে যে মৃতদেহগুলো পড়ে ইতস্তত। অবিকৃত, অক্ষত না। চরম ক্ষুধার কাছে পরাজয় স্বীকার করেছিল মস্তিষ্ক, ঝাঁপিয়ে পড়েছিল লোকগুলো একে ওপরের উপর। হাওড়ার পতন হয়েছে। যে আশা আমি দেখেছিলাম, রীতা দেখিয়েছিল, সেই আশা জমে যাওয়া মাংসপিণ্ড হয়ে পড়ে রয়েছে এই ধ্বংসস্তূপের মাঝে। কোনও গ্রিনহাউস নেই, সন্ধিচুক্তির জন্যও কেউ নেই। নূর আসেনি। ওর মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটেছিল; এর জন্য ওর দর্শনই দায়ী।
নূর বিশ্বাস করতো মানুষ আসলে একটা পরজীবী প্রজাতি, পৃথিবীকে শোষণ করার জন্যই যার সৃষ্টি। আমরা প্রকৃতির কাছে অচ্ছুৎ হয়েছি সভ্যতার সৃষ্টি করে। এখন পৃথিবীর স্বার্থে মানুষের বিদায় নেওয়াই উচিত।
হাওড়ায় এই পরিবেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে কেন জানি না নূরের আত্মাকে বলতে পারলাম না, ‘তুমি ভুল। মানুষ টিকে থাকবে। তাদের থাকতে হবে।’ ওর আর আমার পরস্পরবিরোধী যুক্তি দলামোচড়া খেয়ে একটা আতঙ্ক হয়ে ঠেলে উঠলো গলা দিয়ে। আমি অনুভব করলাম গ্লাভসের মধ্যে আমার হাত কাঁপছে। বাকিদের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকালাম; তাদের মুখ ফুটে বলতে পারলাম না আমার ভয়ের কারণ।
আমি হাওড়ার কঙ্কালের মধ্যে অনাগতবিধাতার মত সেন্ট্রালকে দেখতে পেলাম। আমি দেখতে পেলাম আমি জন্তুর মত কোন একজনের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছি। তার জন্য কোনও পাপবোধ নেই আমার। নেই কোন বিবেক দংশনও। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার রক্তমাখা হাতের নিচে স্থির হয়ে শুয়ে রীতা। তার গর্ভ চিড়ে দিয়েছি আমি। আমার মুখে নবজাতকের নরম মাংস।
নরম তুষারে ধপ করে বসে পড়লাম আমি। আকাশ ঘুরছে ভোঁভোঁ করে মাথার উপরে।
জোরে জোরে মাথা নাড়লাম। না, না, না! এই দুঃস্বপ্নকে বাস্তব করতে দেওয়া যায় না। খাদ্য শেষের মুখে, কোথা থেকে আরও জোগাড় করব জানি না। নূরই দায়ী হাওড়ার এই অবস্থার জন্য। ওর টলমলে দৃষ্টি আসলে ছিল অ-প্রকৃতিস্থতার লক্ষণ।
নিজেকে অনেক বোঝালাম, সান্ত্বনা দিলাম। দুঃস্বপ্ন প্রথমবারের তুলনায় অনেক ক্ষীণ, যেন তার সামনে একটা পর্দা টাঙানো। আমি নূর নই। আমি সুস্থ। সেন্ট্রালের দায়িত্ব আছে আমার উপর। এবং তার থেকে আরও বড় একটা দায়িত্ব বর্তাতে চলেছে – বাবা হওয়ার।
যে পর্দাটা দুঃস্বপ্নের ওপর টাঙানো, তার নাম আশা। এই আশাই আমাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের একমাত্র পথপ্রদর্শক।
হঠাৎ চমকে উঠে আকাশের দিকে কান পাতলাম। এটা কি আমার মনের ভুল? নাকি দূরে শোনা যাচ্ছে হেলিকপ্টারের শব্দ? সঙ্গীদের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালাম। না, ভ্রম নয়, তারাও শুনেছে।
(৫)
অস্ট্রেলিয়া – বরফ এখানেও পড়ে, কিন্তু তার তীব্রতা উত্তর গোলার্ধের মতো না। নূরের কাছে আমরা সবাই ঋণী। মৃত্যুর আগে তার সবথেকে বড় কাজ সে সম্পূর্ণ করে যেতে পেরেছিল। এখানেই তার জয় – যোগাযোগ স্থাপন করেছিল সে। এখন ডিসেম্বর, কিন্তু এখন দশ ডিগ্রী উষ্ণতার গ্রীষ্মও অসহ্যকর লাগে। উত্তর গোলার্ধ বসবাসের অযোগ্য, কিন্তু পৃথিবী তো বিশাল! আমাজনের জায়গা নিয়েছে প্রেইরি, অস্ট্রেলিয়ায় আজ ইংল্যান্ডের জলবায়ু, বদলে গেছে সবকিছু; কিন্তু মানুষ বিলুপ্ত হয়নি।
আমার সামনে এক দিগন্ত বিস্তৃত ক্ষেত; ফসল ফলাচ্ছি আমরা গ্রীষ্মের এই কয় মাস জুড়ে। মরুভূমির মাটি বৃষ্টির জল পেয়ে তেজ ফলাচ্ছে আমাকে এই সোনালি ধানের ঢেউ উপহার দিয়ে। না, এখন এখানে দাঁড়ালে চলবে না। পার্থের এক নার্সিংহোমে রীতা ভর্তি। আকাশের দিকে কি মনে হতে তাকালাম। কিউমুলোনিম্বাস এখন আর আমায় ভয় দেখায় না।
(৬)
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, অপারেশন থিয়েটারে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর আমার স্ত্রী। বাইরে স্থাণুর হয়ে দাঁড়িয়ে আমি। নূর একবার আমাকে বলেছিল, ঈশ্বর ডানপিটে আর পরের সুখ অন্বেষণ করা মানুষদের রক্ষা করেন, পথ দেখান। আমি উড়িয়ে দিয়েছিলাম ওর কথা। আসলে নূরকে আমি কোনওদিন চিনতেই পারিনি। প্রথম পর্যায় ও আমার কাছে এক গোঁড়া ইঞ্জিনিয়ার, দ্বিতীয় পর্যায়ে এক উন্নাসিক নেতা। আসল মানুষটা কে ছিল? যে তার হাওড়ার জন্য বায়ুবিদ্যুৎ চালিত ভূগর্ভস্থ গ্রিনহাউস বানিয়েছিল না যে আমার সঙ্গে আদর্শবিরোধ ঘটায় হাতাহাতি করেছিল? জানি না। এই মানুষটাকে তার মৃত্যুপরবর্তী সম্মানও দিতে পারিনি। আজও সে খোলা চোখে তাকিয়ে আছে ভেঙে পড়া ছাদ ছুঁয়ে থাকা মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে।
চিন্তায় বাধা পড়ল। ও.টি.-র দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছেন ডাক্তার, তার মুখে স্মিত হাসি। “আপনিই ওঁর স্বামী?”
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো মাথা নাড়লাম। ভেতর থেকে ভেসে আসছে এক সদ্যজাতর কান্না।
Tags: ইন্টারনেট, কল্পবিজ্ঞান গল্প, চতুর্থ বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী, সোহম গুহ
বেশ লাগল আপনার এই বিপর্যয় পরবর্তী হিমযুগ কবলিত কলকাতাকে ।
ধন্যবাদ প্রদীপ্ত বাবু।
দুর্দান্ত ভাই, ভাবিনি কখনো বাংলা ভাষায় এরকম লেখা পড়তে পাব। Day after tomorrow তে যেরকম বরফ ঢাকা নিউ ইয়র্ক দেখিয়েছে সেরকম দেখেই অভস্ত্য ছিলাম আমি , কলকাতাকে পটভূমি করে তুমি যে পোস্ট এপোক্যালিপ্টিক ছবি এঁকেছো তা জাস্ট অনবদ্য। কুর্নিশ তোমায় , কুর্নিশ
এটা অনেকটা ভাবনাকে একটা জায়গায় ঢোকানোর চেষ্টা। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম
বাংলা স্পেকুলেটিভ ফিকশনে নবযুগ আসবে তখনই, যখন তা সময়ের দাবি মেনে এগিয়ে যাবে ডিস্টোপিয়া আর আশার দিগন্তের দিকে। এই লেখা তারই পদধ্বনি। চরৈবেতি সোহম।
ধন্যবাদ ঋজুদা। আশা করবো এরকম গল্প আরো লেখার।
কলকাতার এই শৈত্য যেন পড়তে পড়তে অনুভব করা যায় নিজের অস্থি-র অন্তরালে। খুব ভাল লাগল।
ধন্যবাদ সৌম্যবাবু।
পূর্বনারী কিম্বা পূর্বপুরুষের থেকে পাওয়া উত্তরাধিকার নয় বরং উত্তরপ্রজন্মের থেকে পাওয়া ‘সুদসহ ধার’ এই সাধের সভ্যতার যে ছবি ফুটে উঠেছে নিকট ভবিষ্যতের ক্যানভাসে তা মুন্সিয়ানার দাবি রাখে। বিশেষ করে অকুস্থল যখন আমাদের ভালোবাসার শহর। বাংলা কল্পবিজ্ঞান জাগছে শৈত্যের ঘুম ভেঙে। এমন লেখা সেই আশাই জাগায়।
গল্পটা যে “Of the Bengalis, for the Bengalis, by a Bengali”. এক জায়গায় রিজেক্টেড হইয়াছে বলে কল্পবিশ্বএ এই লেখা দিতে খুব কিন্তু কিন্তু করছিলাম। এক সম্পাদক ধমক দিতে মেল করেছি। যাক। উৎরেছি।
অসাধারণ বললে কম বলা হয়। আমার অনুরোধ, সোহমবাবু লেখাটার প্লট নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লিখে ফেলুন। ডিস্টোপিয়ান সাহিত্যে হয়ত বাস্তব অর্থে বাংলার প্রথম উপন্যাস হয়ে থাকবে। অনেক ধন্যবাদ এই গল্পের জন্যে।
এই কথাটা এখন আমার ডায়লগ হয়ে গেছে 😀 । “সময় এবং তার স্বল্পতা আমার এখন সবথেকে বড় শত্রু”। অনুরোধ হয়তো রাখতে পারবো না, কিন্তু এই মাপের গল্প নিয়ে ফেরার চেষ্টা করবো এই পত্রিকার ‘পাতায়’। ধন্যবাদ।
A mind blowimg dystopian scifi story. Having seen a kolkatascape of near future a sudden chill runs down the spine.
ধন্যবাদ পার্থবাবু।
erakam din siggiri asbe.
I loved to read your story of future(very near!!!!)
Aitijhya
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার লেখার ভঙ্গি এবং বাক্য গঠন অসাধারণ। গদ্য রচনায় মুনশিয়ানা লক্ষ্যণীয়। সাধারণ narrative story অসাধারণ হয়ে উঠেছে আপনার অপূর্ব লেখার গুণে। কল্পবিজ্ঞানকে সার্থক সাহিত্য করে তুলেছেন আপনি।
ধন্যবাদ লেখাটি ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য।
অনবদ্য। এর পর যতবার মেট্রো রেলের সফর করব। এই কাহিনী মনে পড়বে
মেট্রো সফরকালীনই এই গল্প আমার মাথায় এসেছিল। ধন্যবাদ।
Eta niye ekta full upponyas er dabi kintu arekbar vebe dekhar moto…
ধন্যবাদ দাদা। উপন্যাসের দাবি পূরণ করার প্রচেষ্টা করবো।
ভীষণ ভাল একটা লেখা পড়লাম যেটা ঐ নির্মিত রচিত দৃশ্যপটের মধ্যে নিয়ে দাঁড় করায়। উত্তীর্ণ লেখা।
ডি স্যালাইনেশন প্ল্যান্ট ব্যাপারটার তো সত্যিই সফল ব্যবহার করেছে ইস্রায়েল। কাজেই আমাদের এখানেই বা নয় কেন।
হিমযুগের সঙ্গে কলকাতাকে খাপ খাওয়ানো, মেট্রো আর হাওড়া বনাম সেন্ট্রাল, দুর্দান্ত। বৃহত্তর ইতিহাস/রাজনীতি এবং তার পরের ধাপে, দর্শনের দিকটা সর্বদা সোহমের গল্পে আসে… সেটা আরেকটা প্রাপ্তি। এখানেও একেবারে সুপ্রযুক্ত।
খুব ভাল লাগল ।