সবুজ
লেখক: শর্মিষ্ঠা ঘোষ
শিল্পী: চিত্রা মিত্র
ও আমার দিকে তাকালো। না না, আমি আমার দিকে তাকালাম। ওর চোখে ঘৃণা। আমি আমাকেই ঘৃণা করছি এখন। বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে? চলুন, বরং আমি ওয়ান, আমি টু করে বলি আমাদের। আমার এই দ্বিতীয় আমির বয়স প্রথম আমার থেকে এক ইয়ুথ ইয়ার কম। আমি টু হলাম আমি ওয়ানের ক্লোন। যৌবনে পা দিয়ে আমি নাম্বার ওয়ান প্রথম যখন প্রেমিকাকে আদর করতে করতে জানতে পেরেছিলাম আমার পক্ষে ওকে সুখী করা সম্ভব নয়, সেক্স অরগ্যানে বিশেষ খুঁত রেখে দিয়েছেন মেকার, আমি প্রেমিকাকে ফেয়ারওয়েল ট্রিট হিসেবে ড্রিঙ্কসের গ্লাস এগিয়ে দিয়েছিলাম। জেনি রিফিউজ করেনি। হাজার হোক কিছুটা সময় ডেটিং করার পরই আমরা বিছানায় যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ব্যাপারটা ক্লিক করল না। তবে কোন খারাপ স্মৃতি রাখব না আমরা। আফটার অল উই ওয়ার ইন লাভ। গ্লাসের অর্ধেক শেষ হতে না হতেই ঘুমিয়ে পড়ল জেনি। আমি ওর ড্রিঙ্কে বিশেষ একটি ড্রাগ মিশিয়ে দিয়েছিলাম। তাতে ও অন্তত এক ইয়ুথ ইয়ার ঘুমিয়ে থাকবে। হাইবারনেশান টাইপ আর কি। খিদে তৃষ্ণা থাকবে না। অরগ্যানগুলোর সেল ডিভিশানও থেমে যাবে ওর।আমি ওকে সোফা থেকে পাঁজাকোলা করে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে যত্ন করে ঢেকে দিলাম। এই ঘরের তাপমাত্রা ফিক্সড। তারপর স্পেসস্কুটার নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম মেকারের ল্যাবের দিকে।
মেকার গেছেন ই টু তে একটা সেমিনারে। গ্রহাণুগুলোর ক্লোনদের সুরক্ষিত রাখতে হলে আবহাওয়া কন্ট্রোল করতে হবে। সেই নিয়ে দিনরাত কথা চলছে। মেকার সেই সময়ের জন্য ল্যাবে বসিয়ে গেছেন তাঁর ক্লোন কে। মেকারের ক্লোন আমায় দেখে হাসল। আফটার অল্ আমি একজন সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট। কিন্তু হাসিটা কেমন যেন মলিন। অবাক হলাম। মেকারের ক্লোনের হাসিতে এই মালিন্য কেন! মেকারের মতোই গ্ল্যামারাস লাইফ লিড করতে পারে ও। কোনকিছুর অভাব নেই। খুব কম লোকই জানে ও আসলে মেকারের ক্লোন। একই রকম ঠাঁটবাট। মেকারের অনুপস্হিতিতে তার ক্লোন প্রক্সি দেয়। টুকটাক কাজকর্ম করে দেয়। কমপ্লিকেটেড কেসগুলো স্বাভাবিকভাবেই পারে না। ক্লোনেদের ব্রেন ম্যাপিংটা সেরকমই। আসলকে কোনভাবেই ছাড়াতে পারবে না। বুদ্ধি কিংবা শক্তিতে। অলওয়েজ ইনফিরিওর। মেড টু সার্ভ। লাইক আলাদিনস্ জিনি। যে যার জীবন বাঁচবে। অনুভুতি এবং এক্সপিরিয়েন্স কপি করা যায় না। ওকে বুঝিয়ে বললাম আমার চাহিদা। নোট করে নিল ও মাপজোক। আমার ক্লোন তৈরি করতে হবে। তৈরী হবে আমি টু। তার যেন কোন খুঁত না থাকে। আমার হাতে এক ইয়ুথ ইয়ার সময়। আমার ক্লোন ততদিনে যুবক হয়ে উঠবে। সে হবে জেনির বেড পার্টনার।
জেনিকে আমি কোনমতেই হারাতে চাই না। ওর চোখদুটো মারাত্মক। প্রথম দেখাতেই আমার ভালো লেগেছিল। স্ক্যান করে দেখেছিলাম ওর পার্টস গুলো গ্রীন প্ল্যানেটের কিছু জিন বহন করছে। সেই সময়ের, যাদের সেলগুলো ছিল অক্সিজেন ভর্তি। ফুরফুরে। ওর সঙ্গে যে কেউ শুলে রিচার্জড হয়ে যাবে অল্পসময়ে। আমি না পারলেও আমার ক্লোন ওকে বিছানায় তৃপ্ত করবে। জেনি হবে আমার লাইফ পার্টনার। আমার ক্লোনের বেড পার্টনার। আমি টু কে এমনভাবে তৈরী করা হবে যে ও জেনির সঙ্গে সেক্স করবে মেকারের ভরে দেওয়া চিপ অনুযায়ী। জেনির প্রতি আমি ওয়ানের মতো কোন দুর্বলতা থাকবে না। আমি ওয়ান যে দৃষ্টিকোণ থেকে জেনিকে পেতে চাইছি সেভাবে দেখবে না আমি টু। তার কাছে জেনি হবে মিয়ার সেক্স অবজেক্ট। হর্নি ফিল করলে জেনিকে আদর করবে ও। অরগাজম এনে দেবে। সন্তানও। জেনিকে কামনা করলেও আমি ওয়ান যা দিতে অপারগ। মেকারের ল্যাবে আমায় দেখে মেকারের ক্লোন ম্লান হাসল কেন বিষয়টা একটু খচ খচ করলেও ভুলে গেলাম। আমার মাথায় এখন জেনি ছাড়া কিছু নেই। ওকে চাই আমি। যেভাবেই হোক। আমায় ফিরতে হবে জেনির কাছে।
বাড়ি ফিরে জেনির পাশে বসে একটা সফট পর্ন দেখলাম। জেনি টানছে আমায়। উঠে গিয়ে সাবধানে জেনির পোষাক খুলে দিলাম। তাকিয়ে থাকলাম ওর ঝকঝকে স্কিনের দিকে। চুমু খেলাম কপাল থেকে পায়ের পাতা অবধি। উন্নত স্তনবৃন্তে মুখ ডুবিয়ে চুষলাম কিছুক্ষণ। শিউরে উঠল কি ও! ক্লিভেজে মুখ গুঁজে রাখলাম। তারপর চুমু খেতে খেতে নামতে নাগলাম। নাভি। জিভ ঢুকিয়ে আদর করলাম। নামতে নামতে যোনি। রিমুভ করা জেনিটাল হেয়ার। জিভ ঢুকিয়ে দিলাম যোনিতে। শুকনো। ক্লিট চুষলাম। আমার উত্থিত লিঙ্গ যোনি স্পর্শ করতে না করতে ইজাকুলেশন হয়ে গেল। নিজেকে খুব করে খিস্তি দিলাম। তারপর ওর পাশে শুয়ে পড়লাম ওকে কোলবালিশ করে। জেনিকে হারাতে চাই না। আমার সন্তান ধারণ করবে না জেনি। না না ভুল বললাম। আমি টু সন্তান এনে দেবে জেনিকে। তারপর আমি টু কে সরিয়ে দেব এই প্ল্যানেট থেকে। জেনি বুঝতে পারবে না কিছুই।
আমি এবার জেনির আধখাওয়া গ্লাসে চুমুক দিলাম। তারপর শুয়ে পড়লাম দরজা ভেজিয়ে। কাল মেকার এসে আমাদের দুজনকেই ল্যাবে নিয়ে রাখবে। আমার ডি এন ও নিয়ে তৈরী হবে আমার ক্লোন। জেনির ঘুম না ভাঙা পর্যন্ত, আমি টু র বয়স এক ইয়ুথ ইয়ার না হওয়া পর্যন্ত আমি ওয়ান এবং জেনি ঘুমোবো। জেগে উঠব আমি টু মানে আমার ক্লোন যুবক হলে।
তারপর এল সেই দিন। মেকার আমায় জাগিয়ে তুলল প্রথমে। ল্যাবে। চোখ খুলে দেখলাম আমার সামনে একটা আয়না। না না ভুল করলাম। ওটা তো আসলে আমার ক্লোন। হুবহু আমার ফটোকপি। মানে আমি টু। যার ব্রেন ডিজাইনিং করার কথা আমার চাহিদা অনুযায়ী। যে আমার মতো দেখতে আচারে ব্যবহারে উইদ এ ডিফারেন্স। আমার মতো ভাবতে পারবে না ও। আমার মতো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হবে না। ওর থাকবেনা রাগ অনুরাগ, ক্রোধ, প্রতিহিংসা। সেরকমটাই আমি চেয়েছি ওর ব্রেনের চিপ্। ও হবে আমার অনুগত । পোষা রোবটের মতো। আড়াল থেকে ওকে চালাব আমি। ও প্রক্সি দেবে আমার হয়ে। যেভাবে স্ট্যান্টম্যান প্রক্সি দেয় হিরোদের। ধরুন পাহাড় থেকে বাঙ্গি জামপিং বা বাইক নিয়ে দশতলা বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ। আমার ক্লোন প্রেমের অভিনয় করবে জেনির সঙ্গে। তৃপ্ত করবে। আমি টু কে বাড়ি নিয়ে এলাম। ইতিমধ্যে মেকার জেনিকেও জাগিয়ে দিল। তার আগে জেনির ব্রেনে সামান্য একটা অপারেশান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জেনি ভুলে গেছে আমি ওয়ানের সঙ্গে সেক্সের হতাশাজনক স্মৃতি। জেনি ফিরে গেছে আমাদের আদর শুরুর আগের সময়ে। একেবারে ফোর প্লে স্টেজে। জেনি জেগে উঠল আমি টু র চোখে চোখ রেখে। তার চোখ মেদুর। যেন আমাজনের সবুজ টান। অক্সিজেন ভুস্ ভুস্ করে বেরচ্ছে। আমি আড়াল থেকে দেখতে লাগলাম। আমি টু র বাহুবন্ধনে জেনি। দে আর গেটিং অ্যামোরাস। শান্তি।
জেনি এখন প্রেগন্যান্ট। আমি ওয়ান দিনরাত ওর সঙ্গে সঙ্গে থাকি। খুব যত্ন করি ওর। শিশুর ক্ষতি হতে পারে। তাই সেক্স বন্ধ। আমি টু কে ঘেঁষতে দিই না ওর আশেপাশে। জেনির চেহারা ক্রমশ ভারি হয়ে উঠছে। আরও সুন্দরী লাগে ওকে। চোখ আরও সবুজ। আমার সন্তান জন্মাবে সবুজ প্ল্যানেটের গন্ধ নিয়ে। আমার ঘর ভরে যাবে হারানো পৃথিবীর গন্ধে। আমার কয়েক পুরুষ আগে হারিয়ে ফেলা সবুজ। যার গল্প শুনেছি কেবল।
আজ দি ডে। আমি বাবা হব। জীবাণুমুক্ত কাচের ঘরে জেনিকে প্রসব করাব আমি নিজেই। হঠাৎ চোখ গেল দেয়ালের দিকে। আমি টু ঠান্ডা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সেই চোখের ভাষা পড়তে পারছি না। কিন্তু তা যে আনুগত্য নয় সেটা বুঝলাম। কি আছে তাহলে? ঔদ্ধত্য? ক্রোধ? ঘৃণা? কিন্তু ওর সেই অনুভুতিগুলো তো মেকারের মিউট করে দেবার কথা ছিল। মেকারের ক্লোন কে তো সেরকমই অর্ডার লিখিয়ে দিয়ে এসে ছিলাম আমি। তবে কি ও পয়েন্টগুলো নোট করেনি ঠিকমতো নাকি ইটস্ আ ডেলিবারেট মিসটেক? মেকারকে জানায় নি পয়েন্টগুলো ঠিকঠাক। মেকারের ক্লোন ইচ্ছে করে সেই সব অনুভুতিগুলো ভরতে দিয়েছে আমি টু র ব্রেন চিপে যেগুলো আসল আমি চাই নি? এটা কি ওর নিজের খামতি বোধের জন্য প্রতিহিংসা? মেকারের মতো দেখতে হলেও মেকারের সমান টেকনিক্যাল নলেজ না থাকার কারণে ক্ষোভ? কাস্টমারদের কাছে মেকারের সমান পাত্তা না পাবার জন্য রাগ? এই জন্যই কি সেদিন বিমর্ষ ছিল ওর হাসি যেদিন ওর ল্যাবে গিয়েছিলাম? যারা ক্লোন অর্ডার দেয় তাদের ওপর এভাবেই ঝাল মেটায় ও? হতে পারে। নাহলে আমি টু র এমন অনাকাঙ্খিত আচরণ সম্ভব নয়। মেকারকে সাবধান করে দিতে হবে। আর কোন কাস্টমারের সঙ্গে যেন এমন না হয়। এভাবে চললে অচিরেই ভেঙে পড়বে মেকারের ক্লোন মেকিং এর ব্যবসা। তৈরী হবে এক একটা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন দানব। আমি টু র পকেটে ঢোকানো হাতে কি আছে? মারণাস্ত্র? আমার ক্লোন আজ আমার ওপর চরম আঘাত হানতে চায়? আমি ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছি জেনিকে, কেড়ে নিতে চলেছি ওর সন্তানকেও, সেসবই বুঝে গেছে ও? তাই প্রতিশোধ নিতে চায়?
জেনির দিকে তাকালাম। ও ব্যথায় কাতর। দেখতে পায় নি আমি টু কে। যা করার ঝটপট করে ফেলতে হবে। সময় নেই হাতে। সন্তান আসছে আমার। সে এসব ভাবাভাবির জন্য তো বসে থাকবে না। এখন অন্য দিকে মন দেওয়া যাবে না। অধীর আগ্রহে এই দিনটার জন্য আমি অপেক্ষা করেছি এক ইয়ুথ ইয়ারেরও বেশি সময়। যার জন্য আমি প্রতিটি প্ল্যান করেছি একেবারে মেপে মেপে। আর জেনি? এখন মনে হয় জেনির থেকেও আমি ভালোবেসেছি জেনির সবুজ চোখ। আমার আজীবনের স্বপ্ন সেই সবুজকে ছোঁয়া। আমার সন্তানের চোখ আমি জেনির মতো সবুজ হোক চাই। ওকে না দেখে আমি মরতে রাজি নই। ও তো আমারই সন্তান আসলে। যে যাই বলুক ও আমারই আকাঙ্খা। সারোগেট মাদারের কি ফিলিং থাকে না সন্তানের জন্য? নাই বা জন্মালো সরাসরি আমার ঔরসে, আমি টু তো আমারই ডি এন এ বহন করছে। আমার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না ওর বাবা হবার আনন্দ। কেউ না। আইন যাই বলুক। বিজ্ঞান যাই বলুক। আমি ওকে চেয়েছি প্রাণপণ। আমি পিতা হতে চেয়েছি। সবুজ চোখের সন্তানের। আমাদের হারানো পৃথিবীর গন্ধ পেতে চাই আমি একবার। সিনেমায় দেখেছি। ই বুকে পড়েছি। আজ থেকে দেড়শো বছর আগে ছিল যে সবুজ সভ্যতা। আমাদের নিজেদের লোভে পাপে দম্ভে হারিয়ে যাওয়া।
আমি দরজা এঁটে দিলাম ভেতর থেকে। বুলেট প্রুফ দেয়াল। সাউন্ড প্রুফও। পর্দা টেনে দিলাম চারদিকে। কাম্ অন জেনি। থ্রাস্ট থ্রাস্ট থ্রাস্ট। মাই লাভ মাই সুইটহার্ট। আর একটু সহ্য কর। এই তো। বেরিয়ে আসছে সে। ছোট্ট মাথা। ছোট্ট ছোট্ট হাত মুঠো পাকানো। মিষ্টি একটা গোলাপি বেবি। আমার সন্তান। আমার আমার আমার। আম্বিলিকাল কর্ড কেটে গিঁট দিয়ে দিলাম। ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে নিলাম। রক্ত লেগে গেল অ্যাপ্রণে। এবার ওকে কাঁদাতে হবে। শ্বাস নেবে ও। উল্টো করে ঝুলিয়ে দিলাম দু পা ধরে। জেনি লুক। আমাদের সন্তান সবুজ চোখের। কেঁদে উঠল ও। চুমু খেলাম ওর কপালে। রক্ত মুছিয়ে জেনির বুকে তুলে দিলাম। জেনি যন্ত্রণা ভুলে মলিন হাসল। ওর স্তনবৃন্ত শিশুর মুখে ধরলাম। চুষতে শুরু করল। কি খিদে। খা রে সবুজ শিশু। খা। সুধারস। হাতের থেকে খুলে ফেললাম রক্তমাখা গ্লাভস। শেষবার ঘুরে দেখলাম। জেনি আদর করছে আমাদের সন্তান কে। ভালো রেখ ওকে জেনি। সবুজের যত্ন নিও। হ্যাঁ ওকে আমি সবুজ বলেই ডাকব। যাই হোক ওর লিঙ্গ। ও তো আসলে স্বপ্ন আমার। সবুজের স্বপ্ন। স্বপ্ন সার্থক। এবার আমি মরতেও ভয় পাই না। দরজা খুলে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসলাম। একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। কোথায় পালাব ? কতদিন? এক ফুল দো মালি কি হয় বাস্তবে? ওসব গল্প। আমি টু দরজা তখনও দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছে ঠায়।
Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, চতুর্থ বর্ষ প্রথম সংখ্যা, চিত্রা মিত্র, শর্মিষ্ঠা ঘোষ