সম্পাদকীয়
লেখক: কল্পবিশ্ব
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য (চিত্রচোর)
প্রিয় পাঠক,
মন একদম ভালো নেই আমাদের কারও। বইপোকা ও সাহিত্য সরণি ফেসবুক গ্রুপের স্রষ্টা ছাব্বিশ বছরের তরতাজা তরুণ নির্মাল্য চট্টোপাধ্যায় আর নেই। তার অকালপ্রয়াণে আমরা শোকস্তব্ধ। অনলাইনে বাংলা বইয়ের প্রচার ও প্রসারে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। লাজুক চেহারার একটা ছেলে কেমন করে যেন বাংলার লেখক ও পাঠকদের মধ্যে একটা সুদৃশ্য সেতুবন্ধনের কাজ করে গেছে। নির্মাল্য ছিল একজন নিমগ্ন পাঠক। কিন্তু কেবল নিজে পড়েই সে ক্ষান্ত থাকেনি। পড়ার এই প্যাশন সে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে অন্যদের মধ্যে। নিয়মিত ইভেন্ট তৈরি করে পাঠকের হাতে কলমও তুলে দিয়েছে সে। চারপাশে যখন বই পড়ার প্রতি মানুষের এক তীব্র অনীহা জন্মাচ্ছিল, ঠিক সময়ে দাঁড়িয়ে বইকে ভালোবাসার এক ম্যাজিক যেন সে ছড়িয়ে দিল সকলের মধ্যে! কত না পাঠক আবার নতুন করে হাতে তুলে নিল বই! আমাদের এবারের কল্পবিশ্বের সংখ্যা আমরা নির্মাল্যর স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদন করছি।
এবার মনে করিয়ে দিই একটা বহু প্রচলিত কথাকে। তিনবারের জয়। অন্য সবকিছুর ক্ষেত্রে এটা কতটা সত্যি, জানা নেই। কিন্তু একটি পত্রিকার জীবনে তিন নম্বর প্রকাশটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময়ই দেখা যায়, কোনও পত্রিকা প্রথম প্রকাশের সময়ে যে পরিমাণ উৎসাহ থাকে, সেটা দ্বিতীয় সংখ্যার সময়ে বেশ কমে আসে। আর সেটাও প্রকাশিত হয়ে গেলে পত্রিকার সদস্যদের মধ্যে বেশ একটা গা-ছাড়া ভাব চলে আসে। আসলে, প্রকাশের পরে উৎসাহ বা নিন্দার মিলিত ককটেল কোথায় যেন সদস্যদের খিদেটা অনেকটাই মিটিয়ে দেয়। ফলে তৃতীয় সংখ্যা প্রকাশের ব্যাপারে তারা কেমন যেন স্তিমিত হয়ে পড়ে। কিন্তু সেটাকে অতিক্রম করে যারা সেই তিন নম্বর সংখ্যাতেও পৌঁছে যায়, তারা কিন্তু এটা প্রমাণ করে দেয়, তাদের খিদে এত সহজে মেটার নয়। কল্পবিশ্ব তার তৃতীয় সংখ্যা প্রকাশ করেও বোধহয় পাঠকদের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিচ্ছে। আসলে কল্পবিশ্ব আমাদের কাছে নিছক কোনও পত্রিকা নয়, একটা স্বপ্নের নাম। আর স্বপ্ন নির্মাণে কেউ কোনওদিন ক্লান্ত হয় নাকি? তার ওপর আবার যদি এমন হয়, কয়েকজনের স্বপ্ন আস্তে আস্তে আরও অনেকের স্বপ্ন হয়ে উঠছে, তখন উৎসাহ আরও বেড়ে যেতে থাকে। নতুন নতুন সেই সব স্বপ্নের শরিকদের সঙ্গে নিয়ে আমরা তাই নিজেদের স্বপ্নকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত করার পথে হাঁটতে চাই।
প্রসঙ্গত জানাই, এ বছর স্টার ট্রেকের পঞ্চাশ বছর। ১৯৬৬ সালে স্টার ট্রেকঃ দ্য অরিজিনাল সিরিজ নামে যা শুরু হয়েছিল তা দেখতে দেখতে পেরিয়ে এল পাঁচ দশকের মাইলফলক। স্টারশিপ এনটারপ্রাইজ নামে এক মহাকাশযান ভেসে চলেছে ছায়াপথ দিয়ে। সেই যানের ক্যাপ্টেন জেমস টি কার্ক, আর তার ফার্স্ট অফিসার ভলক্যান গ্রহের বাসিন্দা স্পক। সেই ভেসে চলা আজও অব্যাহত। পরবর্তী সময়ে স্টার ট্রেক কেবল সিরিয়ালেই আটকে থাকেনি, তা নিয়ে সিনেমাও হয়েছে একাধিক। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘স্টার ট্রেক বিয়ন্ড’, যা প্রথম সপ্তাহেই রোজগার করেছে ৬ কোটি ডলার। প্রবল জনপ্রিয় এই মার্কিন টিভি সিরিজ সেই সাদা-কালো টিভির যুগে আমাদের দূরদর্শনের পর্দাতেও হাজির হয়েছিল। আমাদের দেশের মানুষও তাকে আপন করে নিয়েছিল। মনে আছে, একে অনুসরণ করে একটা হিন্দি সিরিয়ালও হয়েছিল ‘সিগমা’ নামে। স্টার ট্রেকের সেই মহাকাশযানের মতো আমরাও চাই আমাদের কল্পনার স্পেসশিপকে নিয়ে ভেসে বেড়াতে…
স্বপ্নের কথা আপাতত এই পর্যন্তই। এবার তৃতীয় সংখ্যা নিয়ে দু-চার কথা। এবারের প্রচ্ছদকাহিনি জেনেটিকস। এই মুহূর্তের অন্যতম জনপ্রিয় ও বহুলচর্চিত এই বিষয়কে নিয়ে দুটি মননশীল প্রবন্ধ লিখেছেন অঙ্কিতা ও সুপ্রিয় দাস। অদ্রীশ বর্ধনের ভাবশিষ্য ও ‘বিস্ময়’ পত্রিকার সম্পাদক সাহিত্যিক রণেন ঘোষের সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্ত নিয়ে লিখেছেন বিশ্বদীপ দে। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও একসময়ের জনপ্রিয় ‘রামধনু’ পত্রিকার সম্পাদক অধুনাবিস্মৃত ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্যকে নিয়ে সন্তু বাগ লিখেছেন একটি পরিশ্রমসাধ্য প্রবন্ধ। রয়েছে গত সংখ্যায় প্রকাশিত প্রয়াত সাহিত্যিক সিদ্ধার্থ ঘোষের সায়েন্স ফিকশন নিয়ে লেখা অসামান্য প্রবন্ধটির দ্বিতীয় পর্ব। গত সংখ্যার মতো এই সংখ্যাতেও অকালপ্রয়াত দিলীপ রায়চৌধুরীর আরেকটি অসামান্য গল্প থাকছে কল্পবিশ্বের পাঠকদের জন্য। লাভক্র্যাফটের গল্প ‘শ্যাডো আউট অফ টাইম’-এর অনুবাদ এবং লুইস প্যাডগেটের ‘টাইম লকার’-এর মর্মানুবাদের পাশাপাশি রয়েছে একগুচ্ছ রুদ্ধশ্বাস মৌলিক গল্পও। ফেসবুকের কল্পবিজ্ঞান গ্রুপের পাতা থেকে হাজির ভবিষ্যতের খবর, ঠিক যেমন করে আমরা এনেছিলাম লিমেরিক ও দশ শব্দের কল্পবিজ্ঞানকে। তার সঙ্গে আরও প্রবন্ধ, কমিকস, বিজ্ঞানের খবর, গ্রন্থ পরিচয় ও চলচ্চিত্র সমালোচনা, কল্পবিজ্ঞানের লিমেরিক, দশ শব্দের কল্পবিজ্ঞান, অনুগল্প, কুইজ… সব মিলিয়ে পাঠকদের জন্য বিপুল আয়োজন।
আপনারা আসুন বন্ধুরা। আমাদের স্বপ্নের মহাকাশযান তার পরবর্তী উড়ানের জন্য তৈরি। কাউন্টডাউন শেষের পথে। তিন… দুই… এক… শূন্য…
Tags: প্রথম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, সম্পাদকীয়