সম্পাদকীয়
লেখক: সম্পাদক
শিল্পী:
প্রিয় বন্ধুরা, বেশ কিছুদিন পরে আপনাদের কাছে ফিরে এলাম কল্পবিশ্বের নতুন সংখ্যা নিয়ে। কিন্তু এই নতুন সংখ্যা প্রকাশের মধ্যেও আনন্দিত হতে পারছি কই? শুধু আমাদের দেশ নয়, সমগ্র মানব সভ্যতা আজ এসে দাঁড়িয়েছে এক অভূতপূর্ব বিপদের সামনে। আমাদের বাসগ্রহে মারী সংক্রমণ আজ, সেই গভীর অসুখে তথাকথিত সভ্যতার পিঠ আক্ষরিক ভাবে ঠেকে গিয়েছে এক অকল্পনীয় জগতের দেয়ালে। এর আগে গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন আগামী দিনের সমস্যা হবে নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব। কিন্তু তা বলে সেই রোগ যে অতিমারীর আকার নেবে তা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল? মাসব্যাপী লকডাউনের মাঝে আমরা যেন দাঁড়িয়ে আছি এক অদ্ভুত ডিস্টোপিয়ার সন্ধিক্ষণে, ভবিষ্যৎ যেখানে অনিশ্চিত। তাও কি জীবন দাঁড়িয়ে থাকে? ডাক্তার, গবেষক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, পুলিশ, সাফাইকর্মী এবং আরও আপৎকালীন পরিষেবা কর্মীরা লড়াই করে চলেছেন আমাদের জন্য, যাতে আমরা সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারি। এই সময়ে শুধুমাত্র দরকার ছাড়া কেউ দয়া করে বাড়ি থেকে বের হবেন না। সবাই সুস্থ থাকুন, সরকারি গাইডলাইন মেনে চলুন।
এবার আসি কল্পবিশ্বের খবরে। আমরা এবছর প্রথম ২৩টি বই নিয়ে বইমেলায় ছিলাম প্রতিশ্রুতির স্টলে। দেখা হয়েছে অনেক বন্ধুদের সঙ্গে, হয়েছে অনেক গল্প-আড্ডা— এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। কল্পবিজ্ঞানের যে এখনও এত চাহিদা আছে তা বইমেলায় উপস্থিত না হলে জানতেই পারতাম না। কল্পবিশ্বের কাজের পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু সময়ের অভাব এবং আকস্মিক ঘটনায় এই বছর জানুয়ারি মাসের সংখ্যা আমরা বের করতে পারিনি। সমস্ত লেখক ও পাঠকদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। বছরের সেরা কল্পবিজ্ঞান গল্পের যে পুরস্কারের কথা আমরা ঘোষণা করেছিলাম তার কাজ অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার পরেও তা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরিকল্পনা আছে লকডাউনের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অনুষ্ঠানটি সংগঠিত করার। কল্পবিশ্বের এই সংখ্যার বিষয় পাশ্চাত্য সায়েন্স ফিকশনের স্বর্ণযুগ, যদিও এই অভিধায় মূলত কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের ইতিহাসের একটা বিশেষ কালচিহ্নকেই ধরা হয়। এই পত্রিকা শুধু বাংলা কল্পবিজ্ঞানই নয়, বিশ্বসাহিত্য থেকে কল্পবিজ্ঞান ধারার নানা লেখালেখির অনুবাদ প্রকাশ করার ওপর জোর দিয়েছে শুরু থেকেই। সেই ধারা বজায় রেখেই আমরা চাই বাঙালি পাঠক ইংরেজি ও নানা বিদেশি ভাষায় প্রকাশিত কল্পবিজ্ঞানের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হোন, যে ইতিহাসের মধ্যে সম্পৃক্ত হয়ে আছে কিছু পত্রিকা এবং কয়েকজন অগ্রণী সম্পাদকদের দূরদর্শী কল্পনা। সায়েন্স ফিকশন বলতে আমরা যা বুঝি তার উৎপত্তি ও বিস্তার সম্পর্কে জানতে গেলে হুগো গার্নসব্যাক ও জন ক্যাম্পবেল জুনিয়ার— এই দুজন সম্পাদকের কথা জানা আবশ্যিক। আশা করব এঁদের দেখানো পথ অনুসরণ করে এবং এঁদের কিছু সীমাবদ্ধতা থেকেও শিক্ষা নিয়ে আমরা কল্পবিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। এই দু’জনকে নিয়ে লিখেছেন সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায়, অঙ্কিতা ও দীপ ঘোষ। এছাড়া সেই যুগের প্রতিনিধিত্বমূলক বেশ কিছু অসামান্য গল্পের অনুবাদ করেছেন বিশ্বদীপ দে, অমিতানন্দ দাশ, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত ও আরও অনেকে। থাকছে বাংলাদেশের লেখক বন্ধু মোহাম্মদ সাইফূল ইসলামের কল্পবিজ্ঞানের উপন্যাস। এছাড়াও মৌলিক গল্প, প্রবন্ধ ও কমিকস থাকছে অন্য সব সংখ্যার মতোই। চলুন তবে, ঘরে বসেই ডুব দেওয়া যাক কল্পবিজ্ঞানের জগতে। আপনার পাঠ শুভ হোক।
Tags: পঞ্চম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, সম্পাদকীয়