সাইজ ডাজ ম্যাটার
লেখক: বিশ্বদীপ দে
শিল্পী: সুপ্রিয় দাস
ঘুমটা আচমকাই ভেঙে গেল। দেখলাম সামনে রাখা জলের গ্লাসটা কাঁপছে। কাচের ভিতরে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে জলের শরীর। ক্রমশ বাড়ছে কম্পনটা।
ধড়মড় করে উঠে বসলাম বিছানায়। একটা কম্পন ছড়িয়ে যাচ্ছে বাড়িময়। কেমন যেন আশঙ্কায় সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল। ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় গেলাম। আর মুহূর্তের জন্য যেন আমার হৃৎস্পন্দন থমকে দাঁড়াল। একটা অতিকায় অমানুষিক পায়ের থাবা আমার ঠিক সামনে! মাথা আরও উঁচুতে তুলতেই দেখতে পেলাম তাকে। গোটা শহর ভাঙচুর করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অতিকায় জানোয়ারটা। তার পায়ের ফাঁকে পড়ায় কোনওমতে বেঁচে গেছি। আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই সেই মূর্তিমান দুঃস্বপ্ন চলে যাচ্ছে সামনের দিকে। চারপাশে ত্রাহি ত্রাহি রব। আতঙ্কে আমিও নড়াচড়া ভুলে যাচ্ছি। যেন কে এক অদৃশ্য রিমোটে আমাকে এখানেই ‘পজ’ করে রেখে চলে গেছে। আস্তে আস্তে ঠোঁট ফাঁক হল আর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, ‘গডজিলা!’
হ্যাঁ, এটা নিছকই কল্পনা। চারপাশের ডাল-ভাত-ডিএ-ট্র্যাফিক জ্যাম-শপিং মল জবাব চাই, জবাব দাও-এর নিত্যচেনা জীবনের সমান্তরালে একটা ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ কল্পনা। কিন্তু আপনি যদি জাপানের বাসিন্দা হন, তাহলে কিন্তু এটাকে কেবল শৌখিন কল্পনার তালিকায় ফেলে দেওয়া চলে না। কারণ ১৯৪৫-এর পর থেকে জাপানের মানুষের মনের কোণে চিরস্থায়ী হয়ে গিয়েছে একটা ভয়। সেই ভয় তাদের চেতনায় এক জলছাপ রেখে গেছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই ভয়কে বহন করে আসছে। তাদের কাছে তাই ‘গজিরা’ (যাকে আমরা চিনি গডজিলা নামে) কোনও নিছক স্বপ্ন নয়। তা যেন ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়ের বিকল্প রূপ। যে ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে জাপানিদের চেতনায়। যদিও গডজিলার ‘ইমেজ’ শুরুতে যা ছিল, আজ আর তা নেই। তবু… সেই ভয়াবহ দিনগুলোকে কি ভুলে যাওয়া যায়?
পর্দায় শ্বাসরোধ করে দেয় এই সব দৃশ্য
শুধু তো গডজিলা নয়, এই ধরনের কাল্পনিক বিচিত্রদর্শন মনস্টার যাদের ‘কাইজু’ গোত্রের সিনেমাতে দেখা যায়, তাদের সকলেরই কল্পনার পিছনে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও হিরোসিমা-নাগাসাকির ছায়া, এ কথা বলাই যায়। এই সব বিরাট বিরাট দৈত্যাকার প্রাণী পাঁচের দশক থেকে দাপিয়ে বেড়িয়েছে জাপানি সিনেমাগুলিতে। তবে গডজিলা নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। পরবর্তী সময়ে তাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে অতিকায় রোবটরা, যাদের দেখা মেলে ‘মেকা’ জঁরের কাহিনিতে। কিন্তু সে কথা পরে। আপাতত গডজিলার জন্মবৃত্তান্ত।
এক যুদ্ধবন্দি ও দুঃস্বপ্নের যুগ
চোখের সামনে উজ্জ্বল আলোয় ধাঁধিয়ে যাচ্ছিল চারপাশ। নিউ মেক্সিকোর ভোর সাড়ে পাঁচটা। বিস্ফোরণ গলিয়ে দিয়েছিল একশো ফুটের দীর্ঘ টাওয়ার। দূর-দূরান্তের বাসিন্দারা চোখ কচলে দেখেছিল, আজ দুবার সূর্য উঠল কিনা!
১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই। সামান্য কদিন পরেই হিরোসিমা-নাগাসাকি বিস্ফোরণ। তার আগেই হয়েছিল এই পরীক্ষা। কমলা রঙের কুণ্ডলী পাকানো সেই বিষ-মেঘের দিকে তাকিয়ে গীতার শ্লোক উচ্চারণ করে বসেছিলেন ম্যানহাটন প্রোজেক্টের সর্বময় কর্তা রবার্ট ওপেনহাইমার। তাঁর মনের মধ্যে ভেসে উঠেছিল গীতার যে শ্লোক, সেখানে পরমাত্মার জ্যোতির সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে বলা হয়েছিল ‘দিবি সূর্যসহস্রস্য ভবেদ্ যুগপদুত্থিতা’-র কথা। হাজারটা সূর্য! গীতার শ্লোকের সেই বিপুল দ্যুতি ও শক্তির প্রকাশকে মনে পড়েছিল ওপেনহাইমারের।
অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন পরমাণু বোমা ফেলা হলে কী ঘটতে পারে। কিন্তু ঘটনা হল সকলের কল্পনাকেও কয়েক মাইল পিছনে ফেলে দিয়েছিল হিরোসিমা ও নাগাসাকির ঘটনা।
বোমা বিস্ফোরণ, মৃত্যু ও ধ্বংসের করুণ চিত্র পৃথিবী কম দেখেনি তার আগে। কিন্তু ১৯৪৫-এর ৬ ও ৯ আগস্ট যে ভয়াবহ ও ক্রমান্বয়ে চলতে থাকা মৃত্যুমিছিল রচনা করল, তেমনটা এই নীল রঙের গ্রহ কক্ষনও দেখেনি। শুধু কি তাই! মৃত্যুর বিকট বীভৎসতা? সেও ছিল অভূতপূর্ব। অথচ ওই ঘটনার আগেই কিন্তু জাপানের নৌশক্তি প্রায় নিঃশেষিত। একটি দ্বীপরাষ্ট্রের পক্ষে এর পরে আর মাথা তুলে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না। তবু আমেরিকা এ কাণ্ড ঘটিয়েছিল।
জাপানিদের অনমনীয় মনোভাব, তাদের দুর্দমনীয় স্পিরিটকে সহজে কাবু করতে পারা যায়নি। হিরোসিমায় পরমাণু বোমা ফেলার পরেও তাই তারা আত্মসমর্পণের কথা ভাবেনি। কিন্তু নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বিস্ফোরণের পরে আত্মসমর্পণ ছাড়া আর উপায় ছিল না। একটা রটনা ক্রমেই ছড়াচ্ছিল যে, তিনদিন পর এবার টোকিয়োতেই নিক্ষিপ্ত হবে আরেকটি পরমাণু বোমা। শেষমেশ তরুণ সম্রাট হিরোহিতো আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করার পরে অবসান হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের।
আত্মসমর্পণের পরে জাপানে আত্মহত্যার এক মহামারিই যেন দেখা দিয়েছিল। আসলে আপ্রাণ লড়াই করেও স্রেফ টেকনোলজির দাপাদাপির তলায় পিষ্ট হয়ে হার স্বীকার করে নেওয়াটা সেদেশের মানুষ মেনে নেননি। এত কথা বলতে হল, কারণ জাপানের কল্পবিজ্ঞান সিনেমার এই সব অতিকায় মনস্টার বা কাইজু যে কেবল ছেলেভোলানো কল্পনা নয়, বরং তাদের সৃষ্টির পিছনে রয়েছে এক বিদীর্ণ ইতিহাস সে কথা বলা একান্তই জরুরি।
প্রথম গডজিলা ‘গজিরা’ (১৯৫৪)-এর একটি দৃশ্য
ইশিরো হন্ডা। গডজিলার প্রথম ছবির পরিচালক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তিনি ছিলেন যুদ্ধবন্দি। হিরোসিমা-নাগাসাকির ওই নারকীয় পরিবেশের দৃশ্য তাঁর মনের মধ্যে যে অনুরণন তুলেছিল তা-ই শেষমেশ সৃষ্টি করেছিল গডজিলার অতিকায় ও জীবনধ্বংসী মূর্তি। তাঁর স্ত্রী কিমি হন্ডার কথায়, ‘উইদাউট দ্য বম্ব দেয়ার কুড নট হ্যাভ বিন এ মনস্টার।’ এই একটি বাক্যেই ধরা আছে গডজিলার জন্মবৃত্তান্ত।
লাকি ড্রাগন, হিবাকুশা এবং পর্দার বিরাট দানব
গডজিলার জাপানি নাম গজিরা, আগেই বলেছি। এই গজিরা নাকি এসেছে গরিলা আর তিমি (কুজিরা) থেকে। অর্থাৎ পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট জল ও ডাঙার দুই দৈত্যাকার প্রাণীর সংকর হিসেবে প্রাথমিকভাবে কল্পনা করা হয়েছিল গডজিলাকে (অবশ্য ভিন্নমতও আছে)। অতিকায় এক সর্বগ্রাসী, অপরাজেয় দানব যার নিশ্বাসে ঠিকরে বেরোয় তেজস্ক্রিয় রশ্মি! পায়ের তলায় পাঁপড়ভাজার মতো গুঁড়িয়ে যায় বাড়ি-ঘর-ব্রিজ সবকিছু।
ছবির অনুপ্রেরণা হিসেবে কিং কং-এর কথা জানা যায়। আরও একটা ছবি ‘দ্য বিস্ট ফ্রম ২০,০০০ ফ্যাদমস’। সেখানে একটা অতিকায় ডাইনোসর এসে শহর তছনছ করে দেয়। সেই ছবিটাও মাথায় ছিল হন্ডা সাহেবের। কিন্তু গডজিলা চেহারা ও বৈশিষ্ট্যে মোটেই এদের ‘কপি’ নয়। বরং মনস্টারদের এই সব চেনা চেহারার সঙ্গে নতুন কল্পনাকে মিশিয়ে এমন একটা মনস্টার তৈরি করা হল, যা একেবারেই আলাদা।
১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে আরও একটা ঘটনা ঘটল, যেটা জাপানিদের স্নায়ুতে নতুন করে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিল। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের বিকিনি দ্বীপপুঞ্জে আমেরিকা হাইড্রোজেন বোমা নিয়ে পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়। পরীক্ষার আগে সমস্ত জাহাজ বা বোটকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও ‘লাকি ড্রাগন ৫’ নামের মাছধরা বোটটির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। যদিও তারা বিস্ফোরণের কেন্দ্রের সত্তর মাইল দূরে ছিল। কিন্তু পারমাণবিক বিস্ফোরণের বিষের কাছে সেটা কোনও দূরত্বই নয়। বোটের লোকজন বা মাছ সবই হয়ে ওঠে তেজস্ক্রিয়। কাগজে এই খবর পড়ার পরে আতঙ্ক ছড়াতে থাকে সকলের মনে। কোনওভাবে যদি তেজস্ক্রিয় মাছ বাজারে চলে আসে, আর সেটা কেউ খেয়ে ফেলে তাহলে তারাও হয়ে যাবে সেই তেজস্ক্রিয়তার শিকার!
আতঙ্কে কাহিল হয়ে যাওয়া মুখগুলো আসলে যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানের মুখচ্ছবি
এর আট মাস পরে ৩ নভেম্বর রিলিজ হয় গডজিলা। ছবির প্রথম দৃশ্যে দেখা যায় একটা মাছধরা বোট গিয়ে পড়ছে ব্যাখ্যাতীত একটা উজ্জ্বল আলোর কবলে। সেই দৃশ্য মুহূর্তে দর্শকদের মনে করিয়ে দিয়েছিল লাকি ড্রাগনের কথা। বোটের অনেকেই তেজস্ক্রিয়তার শর্ট টার্ম এফেক্টের শিকার হয়েছিল। তাদের দেহে সেই তেজস্ক্রিয়তার চিহ্ন ছিল স্পষ্ট। এই হতভাগ্য মানুষগুলোকে বলা হত ‘হিবাকুশা’ অর্থাৎ বোমা আক্রান্ত ব্যক্তি। গডজিলাকে নির্মাণ করা হয়েছিল এক অতিকায় হিবাকুশা হিসেবে। যে পারমাণবিক বিস্ফোরণের এক অসহায় শিকার। যেন সে মানব সভ্যতার এক জলজ্যান্ত দগদগে ঘা। মানুষের অকারণ হিংসা আর খামখেয়ালিপনার ফসল।
ছবিতে গডজিলার ধ্বংসলীলার চেয়েও যেটা বেশি লক্ষ করা যায়, সেটা হল তার আক্রমণের সামনে পড়ে যাওয়া মানুষদের ভয়ে ভীত মুখ! এই আতঙ্কে কাহিল হয়ে যাওয়া মুখগুলো আসলে যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানের মুখচ্ছবি।
ভিলেন থেকে অ্যান্টিহিরো
১৯৫৪-এর প্রথম গডজিলার মুক্তির পর থেকে পরবর্তী সময়ে গডজিলার সিনেমাগুলিতে কল্পনার আধিক্য তার এন্টারটেনমেন্ট ভ্যালু বাড়িয়ে দিয়েছিল। এরপর স্পেশাল এফেক্টের যত উন্নতি হয়েছে তত চোখ ধাঁধানো হয়ে উঠেছে সিনেমাগুলো। কিন্তু অনেকের মতে, ছয়ের দশকের শেষে ও সাতের দশক জুড়ে এমন সব ‘গডজিলা মুভি’ তৈরি হয়েছে যেগুলি সস্তা বিনোদন মাত্র। ছবির ধাঁচের মধ্যেও কোনও নতুনত্ব নেই। বলাই বাহুল্য, গডজিলার ফ্যানরা এইসব নিয়ে কখনও মাথা ঘামায়নি।
এইখানে একটা কথা বলা দরকার। হিরোসিমা-নাগাসাকির ভয়াল ভয়ঙ্কর পরিণতির পরেও কিন্তু পারমাণবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হয়নি। পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে পাগলামির বিরুদ্ধে গজিরার বক্তব্য এত জোরালো ছিল, সারা পৃথিবীর মননশীল মানুষ সেই ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। ছবির শেষে প্রটাগনিস্ট ইয়েমেনের এরকম একটা বক্তব্য ছিল যে, অনেক কষ্টে একটা গডজিলাকে ধ্বংস করে ফেলা গেছে। যদি মানুষ সচেতন না হয়, পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতেই থাকে, তাহলে আবার একটা গডজিলা জন্ম নিতে পারে যখন তখন।
এটাই ছিল ছবির মূল বার্তা। এরপর ১৯৫৬ সালে হন্ডা সাহেবের ‘গজিরা’ পাড়ি দেয় হলিউডে। অনেক এডিট করে গডজিলাকে আমেরিকান বানিয়েছিলেন টেকনিশিয়ানরা। স্বাভাবিক ভাবেই, ছবির যে অংশগুলির রাজনৈতিক-সামাজিক বক্তব্যগুলি তাদের পছন্দ হয়নি, সেগুলো ছেঁটে ফেলা হয়। পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া হয় পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধাচরণ সম্পর্কিত ‘বাড়াবাড়ি-সূচক’ (অবশ্যই তাদের মতে) অংশগুলিও। এইভাবে বাদ যায় প্রায় ষোলো মিনিটের ফুটেজ। বেশ কিছুটা অংশের শুটিং হয় নতুন করে। ছবির নামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় ‘কিং অফ মনস্টারস’। এইভাবে আমেরিকা কায়দা করে বদলে দেয় গডজিলার আদব কায়দা। তার বিরাট আকার ও ধ্বংসলীলার দিকে ফোকাস করে বড় পর্দা কাঁপানো দানবের রাজা এক মহাতারকায় পরিণত করে দেয় তাকে। যেখানে বিনোদনই হয়ে ওঠে একমাত্র লক্ষ্য। কোথায় যেন হারিয়ে যেতে থাকে ইশিরো হন্ডার মেসেজ।
সভ্যতার দিকে আরেকবার ক্রদ্ধ পা ফেলা
আর এখানেই কোথায় যেন খর্ব করে দেওয়া হয় কল্পবিজ্ঞানের অসীম শক্তিকেও। কল্পবিজ্ঞান মানে কেবল ভিনগ্রহীর আক্রমণ কিংবা ইচ্ছেমতো অতীত ভবিষ্যতে চলে গিয়ে অ্যাডভেঞ্চার করা নয়। মনোরঞ্জনের পাশাপাশি সমাজ-দর্শন-ইতিহাস চেতনার প্রতিফলনই তাকে সার্থক করে তোলে। যে কোনও শিল্পেরই সেটা মূল উদ্দেশ্য। কাজেই গডজিলার ভয়াল ভয়ঙ্কর চেহারার মেটাফরের আড়ালে যে কথাগুলি বলতে চেয়েছিলেন ইশিরো হন্ডা, সেটাকে বিনোদনের উজ্জ্বলতার আড়ালে ম্লান করে দিয়ে কাহিনির আসল স্পিরিটকেই যেন হারিয়ে দেওয়া হল।
গডজিলা ভার্সেস…
এরপর সময় বদলেছে। জাপান ক্রমশ আচ্ছন্ন হয়েছে গডজিলা-জ্বরে। জাপানের বিখ্যাত ফিল্ম ও থিয়েটার কোম্পানি তোহো কোম্পানি লিমিটেড গডজিলাকে নিয়ে এখনও পর্যন্ত ২৯টা ছবি বানিয়েছে। শুধু গডজিলা নয়, এই ধরনের অতিকায় প্রাণী আর তাদের কাণ্ডকারখানা জাপানের মানুষের খুব পছন্দের। আগেই জানিয়েছি, এরা সবাই ‘কাইজু’ জঁরের শ্রেণিভুক্ত। তবে গডজিলা নিঃসন্দেহে জনপ্রিয়তায় এদের সকলের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে।
‘কিং কং ভার্সেস গডজিলা’ ছবির একটি দৃশ্য
এত বছরে অবশ্য গডজিলার চেহারায় বিরাট কিছু পরিবর্তন হয়নি (তবে দৈর্ঘ্যে সে বোধহয় পরের দিকে আরও বড় হয়েছিল)। কিন্তু তার চরিত্রে বদল এসেছে বিস্তর। আর সেটাই হয়তো স্বাভাবিক ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানও তো বদলেছে। সারা পৃথিবীর রাজনৈতিক সমীকরণ, পারমাণবিক নীতি ইত্যাদির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গডজিলাও আর নিছক পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হওয়া এক নারকীয় দানব হয়েই থেকে যায়নি। হয়ে উঠেছে এক অ্যান্টিহিরো। যে আর আচমকা হানা দিয়ে শহর ধ্বংসে মত্ত হয় না। বরং বিপদের মুহূর্তে এসে দাঁড়ায় রক্ষাকর্তা হয়ে।
বহু ভয়ঙ্কর দানবের হাত থেকে জাপানকে বাঁচিয়েছে গডজিলা। তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক কিং ঘিডোরা, মথরা, রোডান, হেডোরা। এদের পাশাপাশি রয়েছে আমাদের চিরচেনা কিং কং-ও। আরেকজনের কথাও বলা উচিত। মেকাগডজিলা। নাম থেকেই মালুম হয়, সে গডজিলারূপী বিরাট যন্ত্রদানব (‘মেকা’ গোত্রের কাহিনিতে যেমনটা দেখা যায়)। ছোটোবেলায় যারা পর্দায় এই সব দানবের সঙ্গে গডজিলার মহারণ দেখেছে, তারা জানে হলের অন্ধকারে বিরাট পর্দায় কী দুরন্ত ম্যাজিক উপহার দিয়েছে এই সব প্রকাণ্ড না-মানুষেরা।
কিং ঘিডোরা
গডজিলার সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু কিং ঘিডোরা। তিন মাথাওয়ালা এক প্রকাণ্ড ড্রাগন, যার মুখ দিয়ে বেরোয় মারণরশ্মি। ডানার ঝাপটায় শহর জুড়ে শুরু হয়ে যায় তাণ্ডব। উড়ে যেতে থাকে ঘরবাড়ি। গডজিলা এই দুর্ধর্ষ দুশমনকে একা কোনওদিনই হারাতে পারেনি! সঙ্গী মনস্টারদের সাহায্য নিয়ে তবেই তাকে শহরছাড়া করতে পেরেছে। তবে এত শক্তি নিয়েও অবশ্য কিং ঘিডোরা কখনও হারাতে পারেনি গডজিলাকে। কিং কং-ই একমাত্র শত্রু যার কাছে (সেই পর্বের ছবিগুলিতে) হার মেনেছিল গডজিলা। কং অবশ্য এদের দলভুক্ত নয়। তাকে বলা হয় হিউম্যানয়েড মনস্টার (জাপানে তাকে বলা হয় কাইজিন)।
গডজিলার পরেই সবচেয়ে জনপ্রিয় মনস্টার হল মথরা। ১১টা গডজিলা ছবিতে তাকে দেখা গেছে। প্রকাণ্ড এই মথ ঠিক ঠিক ‘আদ্যন্ত ভয়ঙ্কর ঘৃণ্য’ ধরনের নয়। সে পৃথিবীকে বারকয়েক বাঁচিয়েছেও। সাহায্য করেছে গডজিলাকেও। ঠিক রোডানের মতোই। রোডান এক প্রকাণ্ড প্রাগৈতিহাসিক পাখি। সময় বিশেষে সে গডজিলাকে সাহায্যও করেছে। তবে মথরা বা কিং ঘিডোরা কিন্তু গডজিলার সঙ্গে মোলাকাতের আগেই পর্দায় দেখা দিয়েছে। সেই ছবিগুলিতে একমাত্র কাইজু ছিল তারা নিজেরাই।
জাপানের তোহো কোম্পানির এই ছবিগুলির বৈশিষ্ট্য গডজিলার সঙ্গে এই সব প্রাণীদের লড়াই। তবে গডজিলার ছবি ছাড়াও জাপানের সংস্কৃতি জুড়ে রয়েছে কাইজু। যদিও সব মনস্টারের রাজা গডজিলাই। সে জাপানের পর দখল নিতে শুরু করে হলিউড ও ইউরোপের ফিল্ম দুনিয়ারও। হয়ে ওঠে জাপানি-আমেরিকান পপ সংস্কৃতির এক প্রতীক। টোকিয়ো শহরের একাধিক জায়গায় গডজিলার নানা রকম স্ট্যাচু বসানো হয়েছে। জাপানের শিনজুকু জেলার পর্যটন দূত করা হয়েছে গডজিলাকে। শিনজুকু শহরের মেয়র কেনিচি ইয়োশিজুমি তাঁদের প্রিয় গজিরাকে সেই শহরের ‘পর্যটন দূত’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। জাপানি সিনেমার শ্রেষ্ঠ আইকন এখন ট্যুরিস্টদের কাছেও বিরাট আকর্ষণের জায়গা। সে আসলে গোটা জাপানেরই ‘সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রদূত’।
সারা জাপানের পরম আত্মীয় ‘গডজিলা’
উড়ুক্কু রোবট ও ছেলেবেলা
জাপানি কল্পবিজ্ঞান সিনেমা বা টিভি সিরিজগুলির একটা জনপ্রিয় ধারা যদি ‘কাইজু’ হয়, অন্যটা অবশ্যই ‘মেকা’। বিরাট আকার ও আকৃতির রোবট এই ধরনের কাহিনির মুখ্য আকর্ষণ। আসলে সেই ‘গডজিলা’ থেকেই জাপানিদের কাছে বিরাট ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ উপাদানগুলির আবেদন তুমুল। সেই পথ বেয়েই এসে পড়েছিল মেকা। যা পরবর্তী সময়ে জাপানি ‘অ্যানিমে’-র (অ্যানিমেশন) দুনিয়ায় রীতিমতো বিপ্লব এনে দেয়। ১৯৯৮ সালে হলিউডে নির্মিত ‘গডজিলা’ ছবির ক্যাপশনের কথা এই সূত্রে মনে পড়ে গেল—‘সাইজ ডাজ ম্যাটার’। এই ক্যাপশন কেবল গডজিলা নয়, সমস্ত কাইজু ও মেকা জঁরের কাহিনিরই মূল কথা।
মেকা জঁরের কাহিনিতে যে রোবটগুলির দেখা মেলে তারা সেই অর্থে ‘স্বাধীন’ নয়। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে মানুষই। কখনও রিমোটে, কখনও নিজেরাই তাদের মধ্যে ঢুকে পড়ে তাদের পাইলট হয়ে! সেই কোন আদি যুগে, কল্পবিজ্ঞান যখন সবে হাঁটি হাঁটি পা পা, এইচ জি ওয়েলসের কালজয়ী ‘ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস’ উপন্যাসে দেখা মিলেছিল ফাইটিং মেশিনের। কিংবা তারও আগে জুল ভের্নের ‘দ্য স্টিম হাউস’ উপন্যাসে আবির্ভাব ঘটেছিল যান্ত্রিক হাতির। সেই কল্পনাই পরবর্তী সময়ে মেকার জন্ম দেয় জাপানে।
প্রথমদিকের মেকা-কাহিনিতে রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবহারই দেখা যেত। যার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ জনি সোকো অ্যান্ড হিজ ফ্লাইং রোবট। কলকাতা দূরদর্শনের আদি যুগে সাদা-কালো টিভির পর্দা বেয়ে যে ঢুকে পড়েছিল কলকাতার ড্রয়িংরুমে। কলকাতা তথা সারা দেশের ছোটদের কাছেই, যারা ছেলেবেলা কাটিয়েছে আটের দশকের মাঝামাঝি থেকে নয়ের দশকের প্রথমার্ধে, তাদের কাছে এই টেলি-সিরিয়ালটির আবেদন আজও মারাত্মক। ইচ্ছেমতো ইন্টারনেট ঘেঁটে পুরোনো সেই সিরিয়ালের এপিসোডগুলো দেখলেই মনকেমন করে ওঠে।
গডজিলা ও কিং কং-এর দ্বৈরথ কলকাতা দূরদর্শনের ‘ছুটি ছুটি’-র এক মুখ্য আকর্ষণ ছিল। তবে জনি সোকো নামের এক বাচ্চা ছেলে ও তার আশ্চর্য যন্ত্রমানবের কাণ্ডকারখানা ততদিনে কলকাতার মন জিতে নিয়েছে। গডজিলার আগেই তারা এসে পৌঁছেছিল এখানে।
জনি সোকো ও তার রোবট
জাপানি ‘জায়ান্তো রোবো’ আমেরিকায় গিয়ে ‘জনি সোকো অ্যান্ড হিজ ফ্লাইং রোবট’ হয়েছিল। তবে ভায়োলেন্সের আধিক্যের (ছয়ের দশকের আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ডস ফর চিল্ড্রেন প্রোগ্রামিং অনুসারে) কারণে খানিকটা এডিট করা হয়েছিল। সিরিয়ালের মূল আকর্ষণ ছিল গারগোয়াল গ্যাংয়ের পাঠানো মনস্টারদের সঙ্গে রোবটের দ্বৈরথ। গ্যাংয়ের নেতা ছিল গিলোটিন নামের এক বিকটদর্শন প্রাণী। সমুদ্রের তলায় এক রঙচঙে মহাকাশযানে বসে সে তার নির্দেশ পাঠাত। বিভিন্ন সময়ে অদ্ভুতদর্শন সব প্রাণী সে পাঠাত পৃথিবীর বুকে। সেই সব অদ্ভুত চেহারা ও বৈশিষ্ট্যের মনস্টারদের সঙ্গে রোবটের লড়াই ছিল জমজমাট। একেবারে শেষে এসে গিলোটিন মুখোমুখি হয় উড়ুক্কু রোবটের। বিরাট আকার ধারণ করে নিজেকে পৃথিবীর সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করে সে। উড়ুক্কু রোবটের উপায় ছিল না তাকে ধ্বংস করার। কারণ গিলোটিনের শরীরে ছিল পারমাণবিক শক্তি। শেষমেশ তাকে সঙ্গে করে মহাকাশে চলে যায় জনির প্রিয় রোবট। এক বিরাট বিস্ফোরণে গিলোটিনের সঙ্গে নিজেকেও ধ্বংস করে ফেলে সে। তার আত্মাহুতিতে পরমাণু বিস্ফোরণের হাত থেকে রক্ষা পায় পৃথিবী। এই সিরিজেও এভাবেই এসে পড়ে পারমাণবিক শক্তির উল্লেখ, যা দারুণভাবে গল্পের পরিণতিকেও প্রভাবিত করে। এর থেকে বোঝা যায়, হিরোসিমা-নাগাসাকির সেই অভিশাপকে জাপান কিছুতেই ভুলতে পারেনি।
যাই হোক, মেকার কথাই যখন উঠল তখন ‘অ্যানিমে’ ও ‘মাঙ্গা’র কথা না বললে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। জাপানের অ্যানিমে সারা পৃথিবীর আনিমেশনের ভক্তদের কাছে প্রচণ্ড প্রিয়। ১৯০৭ সালে জাপানি অ্যানিমের জন্ম। পরবর্তী সময়ে ওয়াল্ট ডিজনির সাফল্যের স্রোত জাপানেও পৌঁছোয়। ডিজনির কিছু ছবি জাপানি প্রেক্ষপটে তৈরি হয় জাপানে।
এরপর নতুন করে জোয়ার আসে সাতের দশকে। সেই সময় থেকে জনপ্রিয় হতে থাকে মাঙ্গা। ইংরেজিতে যা কমিকস, তা-ই জাপানে মাঙ্গা। তবে কমিকস মানেই নিছক শিশুতোষ ‘ছবিতে কাহিনি’ বোঝানোর সরলীকরণ দেখা যায় আজকাল, মাঙ্গা মোটেই তেমন নয়। কমিকস ও গ্রাফিক নভেলের এক উৎকর্ষ রূপ আমরা পাই মাঙ্গাতে। মাঙ্গাতে অ্যাডাল্ট উপাদানও আকছার দেখা যায়।
হাল আমলের মেকা অ্যানিমে
এই মাঙ্গার জনপ্রিয় কাহিনিগুলি নিয়ে একে একে তৈরি হতে থাকে অ্যানিমে। এই ধরনের অ্যানিমের প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে দৈত্যাকার রোবট। হইচই পড়ে যায় জাপান জুড়ে। পরে আটের দশকে এসে আনিমে জাপানের মূলধারার শিল্পে উন্নীত হয়। আর তারপর থেকে টেকনোলজির যত উন্নতি হচ্ছে ততই যেন জনপ্রিয়তার পারদ চড়ছে অ্যানিমের।
তবে তা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ এই লেখায় নেই।
প্যাসিফিক রিম
এবং প্যাসিফিক রিম।
এই লেখার স্বল্প পরিসরে আরও অনেক কিছুই ছুঁয়ে যাওয়া হল না। কিন্তু প্যাসিফিক রিমের কথা বলতেই হবে। মেকা ও কাইজু দুই জঁর মিলেমিশে এক অনন্য সাধারণ বিনোদন তৈরি হয়েছে এই ছবিতে। হাল আমলের এই ছবি ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় এক উত্তুঙ্গ উচ্চতাকে স্পর্শ করেছে।
প্যাসিফিক রিম
ছবিটা হলিউডে নির্মিত হলেও তোহো কোম্পানির তৈরি ছবিগুলির বৈশিষ্ট্যকেই ধারণ করে। পাঁচ-ছয়-সাতের দশকের পরের কয়েক দশকে স্পেশাল এফেক্টেসের বিরাট উন্নতি হয়েছে। ফলে এই ছবিতে বিনোদনের যে পরিপূর্ণ প্যাকেজ, তা এক অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০১৩ সালের এই ছবিতে দেখা গেছে, সমুদ্রের তলা থেকে উঠে আসছে একের পর এক কাইজু। তাদের অঙ্গসজ্জায় রয়েছে জাপানি আর্টের চিহ্ন। মানুষ তাদের সঙ্গে পারবে না, সেটা সহজেই অনুমেয়। ফলে তৈরি করা হল বিরাট চেহারার যন্ত্রমানবদের। যাদের নাম জায়েগারস। দৈত্যাকার এই রোবটদের নিয়ন্ত্রণ করেন দুজন পাইলট। একে অপরের সঙ্গে তারা মানসিক দিক দিয়ে সংযুক্ত। ছবি জুড়ে রয়েছে চোখ ধাঁধানো সব কাণ্ডকারখানা। ছবিটির বাণিজ্যিক সাফল্য আরেকবার নতুন করে প্রমাণ করে দেয়, আজও এই বিশাল কাইজু ও বিরাট মেকাদের মানুষ কতটা ভালোবাসেন।
ছোটোবেলা থেকেই এই ধরনের জাপানি ছবির তুমুল অনুরক্ত ছিলেন ছবির পরিচালক ডেল টরো। এর জন্মকথা ও তার ঐতিহ্যের কথা তাঁর ভালোভাবেই জানা। তাঁর কথায়, ‘আমি ঐতিহ্যকে অনুসরণ করেছি। যেটা আসলে ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষত থেকে সেরে ওঠার একটা প্রক্রিয়া।’
এভাবেই আদ্যিকালের গডজিলা এসে জুড়ে যায় হাল আমলের জনপ্রিয় পরিচালকের চেতনাস্রোতের সঙ্গে। বুঝিয়ে দিয়ে যায়, সে আজও কতটা প্রাসঙ্গিক। পাশাপাশি আমরাও টের পাই কীভাবে পারমাণবিক বিস্ফোরণের হিম আতঙ্ক থেকে জন্ম নেওয়া এক ধারা পরবর্তী সময়ে নানা রূপের ভিতর দিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে এগিয়ে চলছে। আর জন্ম দিচ্ছে নিত্যনতুন জনপ্রিয় শিল্পের।
Tags: দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা, প্রচ্ছদ কাহিনি, বিশ্বদীপ দে, সাইজ ডাজ ম্যাটার
অসাধারন লেখা। কেউ যদি গডজিলা নিয়ে আগ্রহী হয়, তাহলে এর থেকে মনোজ্ঞ লেখা চট করে পাওয়া মুশকিল। ইতিহাস ছেনে গডজিলা কে জীবন্ত করে তুলেছেন প্রাবন্ধিক।
জনি সোকো অ্যান্ড হিজ ফ্লাইং রোবট,sotyi e mon kemon kore uthlo sei samay gulor kotha bhebe.
oshadharon article
prosenjit
অসাধারণ লেখনী। মনস্টার গোত্রীয় সিনেমা যে নিছক বিনোদন নয়, তার নেপথ্যেও যে সামাজ জীবনের প্রতিফলন থাকে, তা দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।