সায়ান্স আর ফিক্শনের শুভবিবাহ
লেখক: অদ্রীশ বর্ধন
শিল্পী: সুপ্রিয় দাস
সায়ান্স ফিক্শন লেখা বিলেতে প্রথম শুরু হয়েছিল ১৮০০ সালের পর থেকে শিল্প বিপ্লবের সূচনাতেই। কেননা, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি বিদ্যাই তো সমাজকে পরিবর্তিত করে চলে। প্রথম দিকে এই পরিবর্তন অতি ধীর গতিতে হয়েছে যে কারুর জীবদ্দশায় তা পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু সঞ্চিত পরিবর্তনের ফলে দূর ভবিষ্যত সমাজ কতখানি পালটে যাবে – এই কল্পনা করতে গিয়েই সায়ান্স ফিক্শন বা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের জন্ম। ব্রায়ান আয়ালডিস এবং আইজাক আসিমভ দু’জনেরই বিশ্বাস ১৮১৮ সালে গ্রেটবৃটেনে প্রকাশিত ‘ফ্রাঙ্কেন্সটাইন’ প্রথম সত্যিকারের সায়ান্স ফিক্শন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, প্রায় পৌনে দু’শ বছরেও এই সাহিত্য এখনো তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি রবীন্দ্রনাথ–বঙ্কিমচন্দ্র–শরৎচন্দ্রের এই দেশে। অথচ, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিদ্যার ঢেউ দ্রুত পাল্টে দিচ্ছে সমাজের চেহারা।
তবে আশার কথা, কল্পনাপ্রবণ ছোটদের কাছে সায়ান্স ফিক্শন এর মধ্যেই অতিশয় প্রিয়। সায়ান্স ফিক্শন মানে এই নয় যে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি বিদ্যার প্রয়োগে পরিবর্তিত সমাজের হুবহু চেহারা পরিবেশন করা। গল্প যদি রসের না হয়ে নীরস বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের নামান্তর হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে গল্পের মজা বলে আর কিছু থাকে না এবং সায়ান্স ফিক্শন অরুচিকর হয়ে দাঁড়ায়। সায়ান্স ফিক্শন পরিবর্তিত ভবিষ্যতের প্রবক্তা নয় – পরিবর্তনের প্রবক্তা। পরিবর্তনের জন্যে মনকে প্রস্তুত করে রাখা। এটি হলেই আজকের সমাজের অনেক দুরুহ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এবং এই কারণেই, রাজনীতিবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ এবং সর্বস্তরের সব মানুষেরই সায়ান্স ফিক্শন পড়া উচিৎ।
বাস্তব আর অতীতের সমাজের চেহারা নিয়ে যে লেখা, তা সায়ান্স ফিক্শন নয়, সায়ান্স ফিক্শন দূর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এমন সব কাহিনি বলে যায়, যা বিশ্বাস উৎপাদনকারী বিজ্ঞানতত্ত্ব সুরভিত কৌতুহলোদ্দীপক ভবিষ্য–কল্পনা – কিন্তু একেবারেই অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেওয়া কঠিন। সময়–পর্যটন, আলোর চেয়ে বেশী গতিবেগ ইত্যাদি এই ধরণের অসম্ভব–নয় কল্পনা।
ফ্যানট্যাসি কিন্তু সেই শ্রেনীর সাহিত্য যার উপাদান কখনোই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিবিদ্যা জনিত পরিবর্তন থেকে আহরণ করা হয় না – হলেও তা নিয়ে লেখক খুব একটা মাথা ঘামান না। অপ্রাকৃত গল্পকে এই সংজ্ঞা অনুসারে বিনা দ্বিধায় ফ্যানটাসি বলা যায়। চিত্তবিনোদিনী গুণের জন্যে বিভিন্ন ধরণের কিছু ফ্যানট্যাসি চিরকালই এই পত্রিকায় থাকে – কিন্তু মূলতঃ ফ্যানট্যাসটিক একটি সায়ান্স ফিক্শন ‘ফ্যানজাইন’ – ফ্যানট্যাসটিক ভক্তদের প্রিয় ম্যাগাজিনের নাম তো ফ্যানজাইন–ই হওয়া উচিৎ। নয় কি?
প্রসঙ্গতঃ, সায়ান্স ফিক্শনের আরো অনেক রকম সংজ্ঞা হাজির করেছেন বিভিন্ন লেখক স্ব–রুচি অনুযায়ী। কিন্তু যে সংজ্ঞাটি এখানে দেওয়া হল, এটি যাঁর তিনি এই সেদিন তাঁর দু’শতম গ্রন্থ প্রকাশ করে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। তাঁরই সুবিখ্যাত উপন্যাস ‘নেকেড সান’ এবং বিচিত্র গল্প ‘বাই জুপিটার’। ইনি একাধারে বিজ্ঞান এবং কল্পবিজ্ঞান দুই সাহিত্যেই নমস্য।
অলমিতি।
Tags: অদ্রীশ বর্ধন, দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, বিশেষ আকর্ষণ, সায়ান্স আর ফিক্শনের শুভবিবাহ