সম্পাদকীয়
লেখক: কল্পবিশ্ব সম্পাদকমণ্ডলী
শিল্পী:
চলতে চলতে হঠাৎই যেন থমকে গেছে আমাদের নীল রঙের এই গ্রহ। সভ্যতার হৃদয় থেকে দমচাপা এই বছরটাকে উপড়ে ফেলতে আমরা বদ্ধপরিকর। যেন কখনও এই বছরটা আসেইনি। কিন্তু তা কি করা যায় শেষ পর্যন্ত? অসুখের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আরোগ্যের দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া যে উপায় নেই। এদিকে বালিঘড়ির শরীর থেকে সময়কণা ঝরতে ঝরতে আরও একটা উৎসবের মুখোমুখি আমরা। আকাশের রং একেবারে নিয়ম মেনে নীল। সাদা মেঘের জৌলুসও অবিকল তেমনই, যেমন থাকার কথা। ঝকঝকে রোদ। আর আর্দ্রতা। মাঝেমাঝে এক পশলা বৃষ্টি। আয়োজন সম্পূর্ণ। যাবতীয় স্যানিটাইজেশন আর সামাজিক দূরত্বের সমান্তরালে বুকের মধ্যে শোনা যাচ্ছে গান, ‘গৌরী এল, দেখে যা লো…’ কিন্তু যতই আয়োজন থাক, সাবধানতাকে এড়িয়ে গেলে তো হবে না। তাই বাইরে বেরোলেও সব কোভিড বিধি মেনে চলতে যেন না ভুলি আমরা। কিন্তু ছুটির মরশুমে ঘরের কোণে বসে কল্পবিশ্ব পড়তে কোনও সমস্যা নেই। যাই হোক, শারদ সংখ্যার কথায় একটু পরে আসছি। আপাতত বইয়ের প্রসঙ্গে ইবুক নিয়ে কয়েকটা কথা না বললেই নয়। ছাপা বই বনাম ইবুক বিতর্ককে সরিয়ে রেখে এই দুই মাধ্যমের হাত ধরাধরি করে চলার বিষয়টিকেই যেন প্রতিষ্ঠা করল অতিমারী। লকডাউনের সময় থেকেই ইবুকের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ক্রমশ তা বেড়েই চলেছে। এবছর গোটা তিরিশেক পত্রিকার পুজোসংখ্যা ইবুক আকারে প্রকাশিত হয়েছে। কল্পবিশ্বও এই প্রথম শারদীয়া সংখ্যা ওয়েবজিন হিসেবে রাখার পাশাপাশি ইবুক আকারেও প্রকাশ করার কথা ভেবে নিয়েছিল শারদীয়ার পরিকল্পনা শুরু হতেই। প্রিবুকিংয়ের ব্যাপক সাড়া বুঝিয়ে দিয়েছে, সিদ্ধান্তটা কতটা সঠিক ছিল। আমাদের প্রকাশিত ইবুকের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। আগ্রহী পাঠকরা ট্রু ইবুক ফরম্যাটে কল্পবিশ্বের কল্পবিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসি বইগুলি হাতে পেয়ে অত্যান্ত খুশি। তাঁদের উৎসাহবাণী আমাদের পাথেয়।
দেখতে দেখতে পাঁচটা বছর হতে চলল। কল্পবিশ্ব তার নিজের মতো করে একে একে অনেক স্বপ্নকে ছুঁতে শুরু করেছে। মানুষের ভালোবাসা ও শুভ কামনা ছাড়া তা সম্ভব হত না। গত কয়েক মাসে কল্পবিশ্বের সম্পাদক ও লেখকরা বক্তৃতা দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মারাঠি বিজ্ঞান পরিষদের পরিচালিত আন্তর্জাতিক কল্পবিজ্ঞান সম্মেলনে। আসছে মাসে ইন্ডিয়ান সায়েন্স ফিকশান রাইটারস অ্যাসোসিয়েশান থেকে বিশেষ ভারতীয় কল্পবিজ্ঞানের আলোচনায় থাকছেন কল্পবিশ্বের সম্পাদক। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস প্রেস থেকে প্রকাশিত কল্পবিজ্ঞানের বইতে উল্লেখিত হয়েছে কল্পবিশ্বের কথা। স্ক্রোল ডট ইনের প্রবন্ধে জানানো হয়েছে বাংলা ইবুকের প্রসারে কল্পবিশ্বের অবদানের কথা। কল্পবিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য সোহম গুহের গল্প স্থান পেয়েছে সাউথ এশিয়ান সায়েন্স ফিকশান অ্যান্থোলজিতে। উল্লেখযোগ্য, এর আগে একমাত্র অদ্রীশ বর্ধন ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্পই প্রকাশিত হয়েছে হ্যাচেট ইন্ডিয়া থেকে প্রকাশিত এই বিখ্যাত সঙ্কলনে। এখনও এদিক ওদিক শোনা যাচ্ছে বটে যে বাংলায় কল্পবিজ্ঞান লেখা হয়নি বা লেখা হচ্ছে না। তবে বাংলা কল্পবিজ্ঞানের জয়যাত্রার সামনে এই কায়েমি স্বরগুলি ক্রমেই জমি হারাচ্ছে।
এবার শারদীয়ার কথা। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে অন্যান্য বারের মতোই উপন্যাস, বড়গল্প, গল্প, অনুবাদ, প্রবন্ধ, কমিকস আরও কত আকর্ষণে ঠাসা এবারের সংখ্যাও। ১৪২৭-এর শারদীয়া কল্পবিশ্বের অন্যতম আকর্ষণ নিঃসন্দেহে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা একটি গল্প। হোক না পুনর্মুদ্রণ। তবু অসামান্য ওই কল্পবিজ্ঞান গল্পটিকে কল্পবিশ্বের পাঠকের কাছে তুলে ধরতে পেরে আমরা আনন্দিত। পুনর্মুদ্রিত হয়েছে অদ্রীশ বর্ধন, রণেন ঘোষের লেখাও। পুরোনো আশ্চর্যের পাতা থেকে তুলে আনা হয়েছে দিলীপ রায়চৌধুরী ও গুরনেক সিং-এর কথা। পাশাপাশি দীপেন ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকারটিও এই সংখ্যার অন্যতম আকর্ষণ হতে যাচ্ছে বলে আমাদের বিশ্বাস। একজন শক্তিশালী কল্পবিজ্ঞান লেখক দীপেনবাবুর ভাবনাবিশ্বটিও সুগভীর ও অনুসন্ধিৎসায় পরিপূর্ণ। যার সঙ্গে পরিচয় হলে পাঠক ঋদ্ধ হবেন। এছাড়া জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞান লেখক রেবন্ত গোস্বামী এক যুগ পরে কল্পবিশ্বের জন্য পুনরায় তাঁর কলম তুলে নিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তা আমাদের ও বাংলা কল্পবিজ্ঞানের পাঠকদের কাছে মস্ত পাওনা। তাঁর কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
প্রিয় পাঠক, আপনার পাঠ শুভ হোক। সাবধানে থাকুন। উৎসবের আলোয় ঘুচে যাক মনের বন্দি দশা।
Tags: পঞ্চম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, সম্পাদকীয়
অনন্য উদ্যোগ “কল্পবিশ্ব”।আশাবাদী,বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে কল্পবিজ্ঞান এর অভিনব লেখাগুলো মননের সম্পদ।অভিভূত,গর্বিত!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। পাশে থাকবেন।