কাকভুশুন্ডি
লেখক: উজ্জ্বল ঘোষ
শিল্পী: উজ্জ্বল ঘোষ
কাকভুশুন্ডি কে চেন তোমরা? না?
সে ঠিক আছে – কজনই বা জানে তার কথা? তাছাড়া কম দিন তো হল না, সেই রামায়ণের সময় থেকে আজ অব্দি কত মৃত্যু, কত জন্ম – কত শত প্রজন্ম প্রবাহিত হয়েছে; সে নিজে সময়ের ঊর্ধ্বে বলে বাকি জীবকুল তো আর তা নয়!
ওর কথা আপাতত থাক। বরং ইদানীংকালের একটা অদ্ভুত ঘটনার দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক, যার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারছে না কেউই। পাঠকরা পড়ে দেখে যদি কিছু যুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে, আমি চেষ্টা করব তা সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার। সত্যি বলতে, ওদের, মানে এ কাহিনীর মূল কলাকুশলীদের মানসিক কষ্ট আর চোখে দেখা যাচ্ছে না।
এ কাহিনী দুই ভাইবোনের – তুতুল আর তিতলির। ওদের ভালো নামও নিশ্চয়ই আছে কিছু, কিন্ত তাতে এ গল্পের, বা বলা ভালো সত্যি ঘটনাটির – কিছু যাবে আসবে না। ওদের আমরা এই নামেই ডাকব। প্রেক্ষাপট উত্তরবঙ্গের একটি পাহাড়ি আধা-শহর, ওদের বাবা যেখানে কর্মসূত্রে প্রতিষ্ঠিত। বাবা, মা, তুতুল আর তিতলি – এই চারজনের ছোট্ট সুন্দর সংসার, ছোট ছোট আনন্দ হাসি কান্না দিয়ে গাঁথা মালার মতো জীবন।
অন্তত তাই ছিল এখন পর্যন্ত। সদ্য ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সব ওলটপালট করে দিয়েছে।
তুতুল রোজকার মতোই একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে আজ। মন ভালো নেই আজকাল, চোখ খুলেই মাথা ভারি হয়ে যায়, গতদিনের বিষণ্ণতা ঘিরে ফেলে আষ্টেপৃষ্ঠে। মা বোধহয় কিছু বলতে এসেছিল, তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ওর বিছানার পাশে, ওর দিকেই তাকিয়ে, অথচ যেন শূন্যদৃষ্টি – যেন অন্য কিছু ভাবছে। ‘কিছু বলবে?’ – জিগ্যেস করল তুতুল, উত্তর পেল না। মা মুখ ফিরিয়ে চলে গেল। ভালো লাগছে না ওর কিচ্ছু, বরং বাইরে বেরোলে একটু হাল্কা লাগতে পারে, এই ভেবে, জামা গলিয়ে জুতো পরে বাইকে স্টার্ট দিল ও। সামনের বাজার টা পেরিয়ে, মিনিট পাঁচেক পরেই ওর প্রিয় জায়গা টা – খাদের কিনারায় পা ঝুলিয়ে বসে উলটোদিকের ঢালে ছোট ছোট খেলনার মতো বাড়িগুলো দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে সময় কেটে যায় – কখনো মেঘ এসে ঢেকে দেয় সবকিছু, আবার কখনো ঝকঝকে রোদ চোখ ধাঁদিয়ে দেয়। কতদিন এমন গেছে – তুতুল এখানে একা বসে বই পড়েছে, কখনো একটু ঘুমিয়ে পড়েছে, আবার কখনো তিতলির সঙ্গে বসে গল্প করেছে, ঝগড়া করেছে… কত সুন্দর ছিল সবকিছু, কি যে হয়ে গেল…
উঠে পড়ল ও। বোন এর স্কুল ছুটির সময় হয়ে আসছে, এটাই রুটিন হয়েছে এখন তুতুলের – নিজের সেমেস্টার পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে, পড়াশোনা নেই, সারাদিনের কাজ বলতে তিতলি কে স্কুল থেকে ফেরত আনা, বাকি সময় মনের সাধ মিটিয়ে গল্পের বই পড়া, আর মাঝে মাঝে একা বেরিয়ে এভাবে প্রকৃতির মাঝে বসে থাকা – ওর বন্ধুবান্ধব তেমন নেই, তাই আড্ডা ইত্যাদির দায় নেই। এতেই খুশি ও – অন্তত তাই ছিল। কিন্তু…
স্কুল এর সামনে পৌছতে বিশ মিনিট লাগল তুতুলের। ছুটির ঘণ্টা পড়তে আরো আধঘণ্টা, ততক্ষণ অপেক্ষা। আজ কি পালটাবে কিছু? না গত দু সপ্তাহ ধরে যা হয়ে আসছে তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে?
ওই, ছুটি হয়েছে। সবাই দল বেঁধে বেরোচ্ছে, ওই যে তিতলি। ‘বোন’ বলে চেঁচিয়ে ডাকলো তুতুল। তিতলি যেন একটু চমকে ওর দিকে তাকাল – মাত্র একবার। তারপর ওর মুখ যেন কালো হয়ে উঠল, চোয়াল দুটো একবার শক্ত হয়ে উঠল, তারপর কোন উত্তর না দিয়ে ও বন্ধুর সঙ্গে সোজা গিয়ে বসল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাস এ। ও বাস ওদের বাড়ির পাশ দিয়েই যাবে, নেমে সামান্য একটু হাঁটলেই গন্তব্য – তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু এমন আচরণ মেনে নেওয়া যাচ্ছে না আর। মরিয়া হয়ে বাস এর জানলার পাশে দৌড়ে গেল তুতুল – ডাকল চেঁচিয়ে, আবারো তাকাল তিতলি, কিন্তু সে তাকানোয় যেন কত জন্মের ক্ষোভ, দুঃখ, রাগ – চোখের পাতা দুটোও কি একটু ফোলা? আর – ওকে এরকম রক্তশূন্য, ঝাপসা লাগছে কেন – যেন কোন কঠিন অসুখ করেছে!
সে সব ভাবতে ভাবতে বাস চলতে শুরু করেছে। তুতুল দাঁড়িয়ে পড়ল। হাল ছেড়ে দিয়েছে ও, আর ভালো লাগছে না কিছু। বাড়ি ফিরবে না এখন – ভাই বোনের মধ্যে ত মনকষাকষি হয়েই থাকে, আগেও হয়েছে, কিন্তু এরকম নয় – এবার ত’ ও বুঝতেই পারছে না কি হয়েছে।
মনে আছে গত দু সপ্তাহ আগের বুধবার – অন্য দিনের মতোই তিতলি কে নিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিল সে, ঝোলা ব্রিজটার ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় উলটো দিক থেকে আসা ট্রাকটা হঠাত ওদের কাছে চলে আসে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংএ ধাক্কা মেরেছিল তুতুল, তারপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরেছিল পরদিন সকালে, নিজের বিছানায় – গায়ে অসহ্য ব্যাথা, কিন্তু হাত-পা ভাঙেনি এই রক্ষে – তাড়াহুড়ো করে দেখতে গেছিল তিতলি কেমন আছে, সুস্থ দেখে তবে নিশ্চিন্ত। কিন্তু সেই শুরু – একটা কথাও বলেনি তিতলি ওর সঙ্গে – শুধু কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল। সেই আচরণ সমানে চলছে।
তুতুল কে একটু একা ছেড়ে দেওয়া যাক – বরং তিতলির মনের ভিতর কি চলছে তার একটা আভাস পাওয়া খুব প্রয়োজন।
বাস চলছে, পাশ দিয়ে সরে যাচ্ছে পাহাড় গাছ ঝরনা। তিতলি বান্ধবীর সঙ্গে বসে আছে, দুজনের হাত দুটো শক্ত করে ধরা। ওর মনে যেন অনেক কষ্ট অনেক কান্না, জমে পাথর হয়ে গেছে – ও যেন প্রতিজ্ঞা করেছে, কারোর সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করবে না। শুধু মৃদুস্বরে একবার বলল, আচ্ছা, আমি কি করেছি বল তো, যার জন্য দাদা একেবারে কথা বলাই বন্ধ করে দিল? মাঝে মাঝে মনে হয় আমার পাশেই আছে, মনে হয় আমার নাম ধরে ডাকছে, চমকে তাকাই কিন্তু কাউকে দেখতে পাই না। কখনো দেখতে পাই, কিন্তু মনে হয় যেন কত দুর থেকে দেখছি, কত বিবর্ণ, যেন পুরোনো দিনের রংচটা ছবি। জানিস দাদা আমাকে কত ভালোবাসত!
তিতলির বান্ধবীর চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল, মুখ দিয়ে শুধু বেরোল, ‘জানি। তুই একটু শান্ত হ’।
বাড়ি ফিরে, স্কুল এর ব্যাগ রেখে, এক ছুট্টে মা এর কাঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ল তিতলি। ‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা’ বলতে বলতে অবিরাম কাঁদছিল ও। মা-ও কাঁদছিলেন। ‘আমারও হচ্ছে রে তিতলি, কিন্তু কি করব বল তো – আমাদের কারোর হাতে কিছু নেই তো। তাই আফসোস করা ছাড়া আর কিছু নেই আমাদের। সেদিন যদি তোদের বাইক আর একটু আস্তে চলত, যদি ওই ট্রাকটা ওভাবে সামনে না আসত, যদি সেদিন স্কুলে না যেতিস, বা যদি বাস এ ফিরতিস – কত কত যদি-কিন্তু-অথবা… কিন্তু যতই ভাবি, কিছু পালটাবে না, যা হওয়ার হয়ে গেছে’।
– ‘কিন্তু মা, এমনও তো হতে পারে, দাদা বেঁচে গেছে? দাদার শরীর তো খুঁজে পাওয়া যায়নি! নাহলে আমি বারবার দাদাকে দেখতে পাচ্ছি কি করে?’
– ‘এই নিয়ে আমরা অনেকবার কথা বলেছি তিতলি, তুই অজ্ঞান হয়ে গেছিলি, কিন্তু সবাই দেখেছে, ব্রিজের রেলিঙে ধাক্কা লেগে তোর দাদা নিচে খাদে…’ গলা বুজে আসছিল মায়ের…’তুই যা দেখছিস তা একেবারেই মনের ভুল – এতদিনের অভ্যেস তো, মনের ছবিগুলোই বারবার চোখের সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে। ’
– ‘কিন্তু…’ মন মানছিল না তিতলির – কিন্তু ও জানে, মা যা বলছে, সেটাই সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা।
যখন এইসব আলোচনা চলছে, কাছেই কোথাও, অথবা বহুদূরে – তুতুলের সঙ্গে তার বাবার যা হচ্ছে তাকে বচসা বললে খুব একটা বাড়াবাড়ি হবে না। শৌভিকবাবু এই জেলার ম্যাজিস্ট্রেট, তাই এই দুর্ঘটনার পর, তুতুল কে উদ্ধার করার পর, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ শুনে নিজের মেয়ের শরীর উদ্ধারের কাজে লোক লাগাতে বিন্দুমাত্র দেরি করেননি। তবে গভীর, অতল খাদের কতটুকুই বা পৌঁছতে পেরেছে তারা! তুতুল সেই যুক্তিই সাজাচ্ছিল।
– ‘এমন তো হতে পারে, বাবা, তিতলি অদ্ভুতভাবে বেঁচে গেছে? নাহলে আমার সঙ্গে বারবার দেখা হচ্ছে কি করে?’
– ‘ইউ আর হ্যালুসিনেটিং তুতুল। অবাস্তব-কে এভাবে কতদিন আঁকড়ে থাকবি? তিতলি নেই রে, থাকতে পারেনা। তুই বাড়ি যা, আর কয়েকদিন বাইক চালানো বন্ধ রাখ। আমি তাশি কে বলে দিচ্ছি, তোকে নামিয়ে আসবে।‘
– ‘হোয়াটএভার!’ – রাগে গজরাতে গজরাতে যখন বেরিয়ে আসছে তুতুল, স্পষ্ট শুনতে পেল, সেক্রেটারি আঙ্কল ফিসফিস করে বলছেন, ‘পোস্ট-এক্সিডেন্ট ট্রমা, আর ক’টাদিন সময় দিন স্যার।‘
যা শুনতে বা দেখতে পেল না ও – কড়া শাসক শৌভিকবাবুর চোখের কোনেও তখন জল চিকচিক করছে।
ঘটনার বিবরণ এখানেই শেষ। এবার ব্যাখ্যার পালা। দেখি তো কোন পাঠক কি ভেবেছ – আমার ব্যাখ্যা রইল এর পরেই, কিন্তু তা পড়ার আগে, যে কজন এই লেখা পড়লে, দশ বা একশো বা হাজারজন – হয়ত কোন ছোট মোবাইলে, বা ছাপার অক্ষরে, বা কম্পিউটার এ – সবাই নিজের নিজের ব্যাখ্যা ভেবো, জানিও। আমি নিশ্চিত, তাদের প্রত্যেকটিই হয়ত সঠিক, সম্ভব, বাস্তব। এখানে, নয়ত অন্য কোনখানে!
লেখকের ব্যাখ্যা
সমান্তরাল মহাবিশ্বের কথা তো কল্পবিজ্ঞানের পাঠক মাত্রেই জানে। সেখান থেকে আরও একধাপ এগিয়ে, গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওয়ারড ওয়াইসম্যান তাঁর টীম নিয়ে একটি গবেষণা করেন, যা পরে মাইকেল হল এর নেতৃত্বে একটি রচনার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ‘ফিজিক্যাল রিভিউ এক্স’ নামের জার্নালে প্রকাশ পাওয়া এই গবেষণাপত্রের মূল বক্তব্য হলঃ কোয়ান্টাম থিওরি মেনে, এটা বলা সম্ভব যে – কোন বিরল মুহূর্তে, একটি বিশ্বের সঙ্গে অন্য একটি সমান্তরাল বিশ্বের কাটাকুটি হওয়া অবাস্তব নয়। এর আগে সমান্তরাল মহাবিশ্বগুলিকে একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবা হত, এই বিশেষ লেখাটি বেরোনোর পর জোরালো দাবি ওঠে যে অগুন্তি, হুবহু বিশ্ব একই স্থানে, একই সময়ে থাকতে পারে এবং একে অপরের সঙ্গে দিব্বি যোগাযোগ করতে পারে, ছাপিয়েও যেতে পারে। একে ‘ব্লিড থ্রু’ বা ‘ওভারল্যাপ’ বলে ডাকতেই পারি আমরা। আর যখন এই তথাকথিত কাটাকুটি বা ‘ব্লিড থ্রু’ হয়, তখন, এক বিশ্বের কোন মানুষ অন্য সমান্তরাল বিশ্বে হারিয়ে যেতেই পারে – ঘরে ফেরার সব পথ বন্ধ করে।
ঠিক এখানেই আসছে আমাদের কাহিনীর ব্যাখ্যা। দুই জগতেই এক জোড়া করে তুতুল আর তিতলি আছে – বা বলা ভালো, ছিল – দুর্ঘটনার আগে পর্যন্ত। দুর্ঘটনায় এক বিশ্বের তিতলির মৃত্যু ঘটে, খাদে তলিয়ে গিয়ে। অন্য বিশ্বে একই ভাবে, তুতুল মারা পড়ে। কিন্তু সেই সঙ্গে আর একটি ঘটনা ঘটে। কালের ছেলেখেলায়, ঠিক ওখানেই, দুটি সমান্তরাল মহাবিশ্বের কাটাকুটিতে দুজনেই এক বিশ্ব থেকে অন্য বিশ্বে প্রবেশ করে। দুজনের কেউই তা বোঝেনি। দুর্ঘটনায় মৃত শরীর যদি খুঁজে পাওয়া যেত, একটা বড় সমস্যা হতে পারত অবশ্য, তা হয়নি।
তাই পড়ে রইল শুধু দুই ভাইবোনের যন্ত্রণা – মাঝে মাঝে ঝাপসা ছবির মতো একে অপরকে দেখতে পাওয়া, দুই মহাবিশ্বের মাঝের প্রাচীর ভেদ করে – যা তাদের মস্তিকপ্রসুত নয় একেবারেই, তবুও যা অন্য কেউ কোনদিন দেখতে পাবেনা, ‘ট্রমা’ বা ‘হেলুসিনেশন’ বলে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করবে। তবে সে আর নতুন কি – মানুষ তো চিরকালই যা ব্যাখ্যা করতে পারেনি তাকে ‘অলৌকিক’, যার কথা বোঝেনি তাকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে এসেছে। ‘কোয়ান্টাম কনশাসনেস’ আর ক’জনই বা বোঝে – দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে দুই ভাইবোন খুব স্বাভাবিকভাবেই একে অপরের কথা ভাবছিল – তা’ই বা আর কে জানে!
এর পরেও, সচেতন পাঠকের মনে একটা প্রশ্ন থেকে যাওয়া স্বাভাবিক।
এই গল্পের লেখক কে, যে কিনা দুই বিশ্বের দু’ জোড়া ভাইবোনের কথা জানে, তাদের খবর রাখে? সে নিজে কোন বিশ্বের অংশ?
চল, আর একবার কাকভুশুন্ডির কথায় ফিরে যাওয়া যাক। রামায়ণের এক অদ্ভুত চরিত্র সে, প্রথম রামায়ণের বর্ণনাও তারই করা – বাল্মীকি বা অন্য কারোর অনেক আগে। তার জীবনী বর্ণনা এ লেখার উপজীব্য নয় তাই বিস্তারিত বিবরণ এড়িয়ে যাচ্ছি, তবে এটুকু না বললেই নয় যে ঈশ্বরের বরে, কাকভুশুন্ডি নিজেকে সময়চক্রের বাইরে নিয়ে ফেলতে পেরেছিল। তারপর, সে নিজের চোখে এগারো বার রামায়ণের সম্পূর্ণ ঘটনাবলি দেখে। একইভাবে, ষোলবার মহাভারত দেখেছিল কাকভুশুন্ডি। প্রত্যেকবারের ফলাফল ছিল আলাদা আলাদা। খুব সম্ভবত কাকভুশুন্ডি এগারো এবং ষোলটি মহাবিশ্বে যথাক্রমে রামায়ণ আর মহাভারত ঘটতে দেখেছিল – সময়ের বাঁধন তার গায়ে বসেনি বলে সর্বত্র ছিল তার অনায়াস, অবাধ বিচরণ!
তোমরা কী বল?
ইতি।
কাকভুশুন্ডি।
Tags: উজ্জ্বল ঘোষ, গল্প, সপ্তম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা