পোয়াবারো
লেখক: সায়ক দত্ত চৌধুরী
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
নামে কিবা আসে যায়, এটা যে একেবারেই কথার কথা তা বিমলের চেয়ে আর বেশি কে জানে। নাম যদি বিদঘুটে হয় তবে বন্ধুদের বিদ্রুপ থেকে শুরু করে প্রেমহীনতা, নানা সমস্যায় জীবন জর্জরিত হতে পারে। ক্লাস টুয়েলভে প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে শুনতে হয়েছিল, ‘তোকে বিয়ে করলে অমন একটা বিচ্ছিরি পদবি সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। ওটা পদবি, না মোটর সাইকেল স্টার্ট নেওয়ার আওয়াজ? সরি রে, পারলাম না।’
সেই সমস্যা এখনও যায়নি। হিন্দুস্তান ইলেকট্রনিকসের সিনিয়ার সেলস এক্সিকিউটিভ হওয়ার পরেও না। কতবার ভেবেছে পদবিটা বদলাতে হবে। কিন্তু মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড, অন্যান্য অফিসিয়াল কাগজে আছে বলে ঝামেলার কাজটা আর করে ওঠা হয়নি। এবার বিনতাকে সে কথা দিয়েছে বিয়ের আগে এফিডেভিট করে পদবিটা পালটে ফেলবে।
ভেইল-এর নতুন পার্চেস অফিসার গোবিন্দ সুরানাকে ফোনে সব কথা বুঝিয়ে বলার পর সে বলল, ‘আপনাদের কোম্পানির যাবতীয় অর্ডারগুলো আমিই দেখি। অফিসে আরও দুজন বিমল আছে, তাই আমার পদবি বললেই সবাই চিনতে পারবে। আপনি বলবেন ভট্টদত্তর সঙ্গে কথা হয়েছে।’
‘ক্যা? কিসকে সাথ? লিখ লেতে হ্যায়। থোড়া স্পেলিং বাতাইয়ে প্লিজ।’
‘ভি এ টি টি এ’
‘হাঁ, ভি এ টি টি এ’
‘ডি এ টি টি এ’
‘ও ভি নেহি, ডি এ টি টি এ?’
‘নেহি নেহি, ভি এ টি টি এ, ডি এ টি টি এ’
‘ডি এ টি টি এ, ডি এ টি টি এ?’
‘নেহি, পহলে ভি বাদমে ডি।’
‘ও ঠিক হ্যায়, থ্যানকু ভাট্টা ভাট্টা বাবু।’
যাক, তবু ভাট্টা ভাট্টা-র ওপর দিয়ে গেছে। তার পদবি বরাবর হাসিঠাট্টার বিষয়। কেউ কেউ তো হাট্টা কাট্টা, গাট্টাগোট্টাও বলে থাকে।
বিনতাদের দেশের বাড়িতে এসেও মনটা তেঁতো হয়ে আছে বিমলের। ছুটিটা সে জোর করেই নিয়েছে বলা যায়। এত বছর কাজ করছে সে এই কোম্পানিতে, ছুটি প্রায় নেয়নি কোনোদিন, কোনো দাম নেই তার? বোর্ড অব ডিরেক্টরে ঢোকার কোনো সম্ভাবনাই নেই আর। লেখাপড়া, পরিশ্রম কোন্ দিকে ঘাটতি ছিল? অদ্ভুত পদবীর জন্য অফিসে নানা সমস্যা হয়েছে, ইয়ার্কি সহ্য করতে হয়েছে। হাসিমুখে মেনে নিয়েছে সে সব কিছু। পারফরমেন্স কখনও বেড়েছে কখনও কমেছে। মাথার ওপর ছাতা হিসেবে তো কেউ ছিল না। তবু কাজের নিরিখে বিচার হলে প্রমোশনটার দৌড়ে তারও থাকার কথা। কিন্তু সে নেই, কোত্থাও নেই। সেদিন অফিস থেকে বেরোনোর সময় সিইও-র আর্দালি হরি রামকে বলতে শুনল, ‘দৌড়ে দুজনই আছে, তেজ পাল আর ফার্নান্ডেজ সাহেব। এদের দুজনের মধ্যেই কেউ ঢুকবে।’ বিমল জানে হরি রামের কথা মানে একেবারে ঘোড়ার মুখের খবর।
‘আমাদের সাহেবও তো খুব কাজের লোক।’ তার ডিপার্টমেন্টের গ্রুপ-ডি স্টাফ নিতাই বলল।
‘আরে না না, ভুট্টাবাবুর কোনো চান্স নেই। তেজ আর ফার্নান্ডেজ সাহেবের সঙ্গে ওপর মহলের কত জানাশোনা। একটা বিড়ি দে তো।’
খুব মন খারাপ করে অফিস থেকে বেরিয়েছিল সে। তখনই ঠিক করেছিল ছুটি নেবে।
বীরভূমের এই প্রত্যন্ত গ্রামে এসে কিন্তু ধীরে ধীরে মনখারাপটা কেটে গেল তার। সারাদিন মাঠে ঘাটে, অজয় নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। দোকানে বসে চা খেতে খেতে বাউল গান শুনেছে বেশ খানিক। এই বাড়ির সবাই জানে সে তাদের জামাই হতে চলেছে। কাজেই আদর আপ্যায়ন, খাওয়াদাওয়াও হয়েছে জমাটি। তবে আসার আগে বিনতা বলেছিল তার জন্য নাকি একটা সারপ্রাইজ আছে। এমন জিনিস নাকি দেখাবে যেটা সে আগে কোনোদিনও দেখেনি। কী দেখাবে সেটা ফাঁস করেনি অবশ্য। সন্ধ্যাবেলায় বাড়ির দালানে বসে আড্ডার সময় বিনতার এক খুড়তুতো দাদা একটা কাঠের বাক্স এনে বিমলের সামনে রাখল। সেখান থেকে বেরিয়ে এল একটা কাপড়ের তৈরি ছক। দেখতে যোগ চিহ্ন বা ক্রসের মতো। আর সঙ্গে বেশ কয়েকটি ঘুঁটি। সে সত্যি এ জিনিস আগে কখনও দেখেনি ছবিতে ছাড়া।
‘পাশা?’
‘আগে দেখেছ কখনও?’ রতনদা বললেন।
‘না’
‘খেলবে?’
‘দেখিইনি কোনোদিন, খেলব কীভাবে?’
‘আমাদের বাড়ির সকলেই কিন্তু এ খেলা জানে। বিনতাও।’
‘তাহলে?’
‘শিখে নাও। এমন কিছু জটিল নয়। খানিকটা ভাগ্য পরীক্ষাও হবে।’
‘বিনতার মতো মেয়ে যার গলায় মালা দেবে তার ভাগ্য যে খুবই ভালো সে তো এর মধ্যেই বোঝা গেছে।’ ছোটোকাকিমা ফুট কাটলেন। আশপাশের সবাই হো হো করে হেসে উঠল। বিনতা লজ্জায় লাল। এই যৌথ পারিবারের সকলে যে খুব খোলা মনের তা অনুভব করে ভারী ভালো লাগল বিমলের।
‘আচ্ছা শেখান তাহলে।’
‘অনেকটা দাবার মতো এ খেলা। চারজনে খেলা যায়। প্রত্যেকের ভাগে আটটা করে ঘুঁটি। প্রধান ঘুঁটি হল রাজা, ঘোড়া, গজ, আর নৌকা’। ঘুঁটিগুলোর চাল বোঝাতে লাগলেন রতনদা। তারপর বললেন ‘এবারে দেখো ছক্কাগুলোর দিকে। সাধারণ লুডোর ছক্কার মতো নয় সে তো দেখতেই পাচ্ছো। তিনটি ছক্কা, আর সেগুলোতে ১, ২, ৫, ও ৬ এই চারটি সংখ্যাই আছে কেবল। তোমার সৈন্য লড়বে এগুলোর চালের ওপর ভিত্তি করে। দাবা খেলার সঙ্গে এ খেলার এখানেই বড়ো পার্থক্য। তোমার ভাগ্য পরীক্ষাও হবে এভাবেই।’
‘প্রতিটা ঘরে একটা করে দেবনাগরী অক্ষর লেখা আছে দেখছি, এগুলো কী?’
‘এটা কেবল এই পাশার ছকটার বৈশিষ্ট্য। সাধারণ খেলায় ওটা অপ্রয়োজনীয়। যদি একটা বিশেষ ঘটনা ঘটে তবেই দরকার হবে নয়তো নয়। চলো শুরু করি। খেলতে খেলতে শিখে যাবে।’
প্রথমে ভুল করলেও ধীরে ধীরে খেলার মজাটা বুঝতে পারছিল বিমল। এ খেলা নেশাগ্রস্ত করে। বুদ্ধি আর ভাগ্য একসঙ্গে থাকলে তবেই জেতা যাবে। পান্ডবদের দ্যূতক্রীড়ার কথা মনে পড়ছিল তার। এ তো একরকম জুয়া। কিছুক্ষণ পর চাল দিতেই ঘুরতে ঘুরতে দুটো ছক্কায় ছয় আরেকটায় এক পড়ল।
‘পোয়া বারো!’
দর্শক, খেলোয়াড় সক্কলে সমস্বরে চিৎকার করে উঠল।
‘মানে?’ বিমল বলল।
‘পাশা খেলায় বিরলতম দান। পাশাতে এক কে পোয়া বলে, আর দু ছক্কায় বারো। বাংলায় পোয়াবারো কাকে বলে জানো তো?’
‘হ্যাঁ, ভাগ্য সুপ্রসন্ন।’
‘একদম, শব্দটা এই পাশা খেলা থেকেই এসেছে। তোমায় ভাগ্য তো খুব ভালো ভায়া।’
‘কার আবার পোয়া বারো পড়ল?’ পাশের ঘর থেকে বিনতার বৃদ্ধ পিতামহ বের হয়ে এলেন।
‘বিমলের।’
‘রাজা কোন ঘরে?’
তার রাজা যে ঘরে ছিল দেখা গেল সেখানে দেবনাগরী অক্ষরে ‘স’ লেখা আছে।
‘এর মানে কী?’
‘সাধারণ পাশার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ও দাদামশাই, তুমিই বলো না।’
‘দ্যূতক্রীড়া ভারতের প্রাচীনতম খেলাগুলোর একটা। নানা প্রবাদ ছড়িয়ে আছে পাশা নিয়ে। এই খেলার কোনো কোনো ছক নাকি মন্ত্রপুত হত।’ দাদামশাই বেশ গল্পের মুডে আছেন বোঝা গেল।
‘শকুনির পাশার মতো?’
‘হ্যাঁ, এমনই একটা প্রবাদ এই ছকটাকে ঘিরেও রয়েছে। দেখেই বুঝতে পারছ এটা বহু পুরোনো।’
‘হ্যাঁ, এর অ্যান্টিক ভ্যালু তো মারাত্মক হবার কথা।’
‘নিশ্চয়ই, এ আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি, পারিবারিক দেবতার মতোই। আমার ঠাকুর্দার বাবা এটাকে এনেছিলেন কাশি থেকে।’
‘আর প্রবাদটা?’
‘বলছি। বলা হয় কোনো খেলোয়াড়ের যদি পোয়া বারো পড়ে তবে দেখতে হবে রাজা কোন্ ঘরে আছে। সেই ঘরে যে অক্ষর আছে সেই অক্ষরবিশিষ্ট নামের কোনো মানুষ ওই খেলোয়াড়ের প্রভুত উপকার করবেন। যেমন ধরো ‘স’ আছে এমন নামওলা কোনো মানুষ তোমার খুব উপকার করবেন এমন আশা তুমি করতেই পারো।’
‘সে তো অনেকেই আছেন।’
‘তাদের মধ্যেই কেউ করবেন হয়তো, কে করবেন তা আন্দাজ করতে পারো?’
‘না তো। এটা সত্যি সত্যি ঘটে?’
‘কখনও ঘটে, কখনও নয়।’ বিনতা বলল, ‘যেমন ঠাকুমার একবার খেলার সময় পোয়া বারো পড়েছিল চারবার। রাজা ছিল র ক ত ম এর ঘরে। এরপর প্রচণ্ড হার্ট অ্যাটাকের সময় ওকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন যে ডাক্তার তার নাম রক্তিম ব্যানার্জি।’
‘বাব্বা। এ তো দারুণ ব্যাপার।’
‘তবে সবসময়ই যে মেলে তার কোনো মানে নেই। আমারও একবার পড়েছিল, কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি।’
এই আলোচনার পরেও সেদিন খেলা চলেছিল। সব্বাইকে অবাক করে তার পোয়া বারো পড়েছিল পাঁচ-পাঁচবার। রাজা ছিল স ক প থ আর র এর ঘরে।
‘বিগিনার্স লাক, বুঝলে ভায়া, বিগিনার্স লাক।’ রতনদা বলেছিলেন। সবাই নিশ্চিত ছিল তার জীবনে এমন কেউ আছে যে তার খুব উপকার করবে, আর যার নামের মধ্যে ওই অক্ষরগুলো অবশ্যই থাকবে। কিন্তু অনেক ভেবেও সে এমন কারো নাম মনে করতে পারল না।
‘নতুন প্রেমিকা জোটাওনি তো?’ বিনতা হাসতে হাসতে বলল।
‘কি যে বলো।’ অমল বলল। কিন্তু তার মাথার মধ্যে অক্ষরগুলো ঘুরপাক খেতে লাগল। কে হতে পারে? সেদিন রাতে সে স্বপ্ন দেখল অক্ষরগুলো মিলে তার দুটো ডানা তৈরি করেছে। সে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। ঘুম ভেঙে ধড়মড়িয়ে উঠে বসল সে। থম মেরে কী যেন সব ভাবল খানিকক্ষণ। তারপর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল আবার।
গত এক সপ্তাহ ধরে বিনতা তার সঙ্গে কথা বলছে না। তার অভিযোগ, ‘এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলে অথচ আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না? তোমার সঙ্গে জীবন জুড়তে চলেছি আমি, তুমি আমায় কিচ্ছু না জানিয়ে পদবি বদলে নিলে? তোমায় পরিষ্কার জানিয়ে দি, তোমার নতুন পদবিও আমার পছন্দ হয়নি। পদবি বদলানোর তো সত্যি তেমন দরকার ছিল না, আর বদলালেই যদি, ভট্টদত্ত থেকে শুধু ভট্ট বা দত্ত বাদ দিলেই চলত, এটা তুমি বাছলে কীভাবে?’
এটাই তো ভয় ছিল, বিমল ভাবল। যদি তুমি রাজি না হও? আর কারণটাও এমন যা তোমায় এখনি বলি কী করে? যদি আমার আন্দাজ না মেলে? এটা যে একরকম পাগলামিই তা অস্বীকার করি কী করে।
সুতরাং কারণটা না বলায় প্রবল অভিমান, এবং কথা বন্ধ। রোজই মান ভাঙানোর চেষ্টা করে চলেছে সে। এখনও বরফ গলেনি। এদিকে অফিসেও আড়ালে হাসাহাসি চলছে। একে এফিডেভিট করে পদবি বদলানো খুবই বিরল। তারপর তার নতুন পদবিটাও কম শোনা যায়। একবার সে শুনতে পেল, ‘আগে আধা ছিল, এখন পুরো হয়েছে।’
নাঃ, পাগলামিটা না করলেই হত।
আজ অফিসে ঢোকার পর অনেকের মুখে যেন একটা চাপা হাসি দেখতে পেল বিমল। কারণটা একটু বাদেই বুঝতে পারল সে। নিতাই এসে খবর দিল, ‘চ্যাটার্জি সাহেব আপনাকে ডেকেছেন।’ সর্বনাশ, চ্যাটার্জি সাহেব! তাদের কোম্পানির সিইও। বছরের বেশির ভাগ সময় বিদেশে থাকেন। অফিসে থাকলে সকলে তার ভয়ে থরহরি কম্পমান। কোথায় কোথায় কী গাফিলতি আছে তার, মনে করার চেষ্টা করল বিমল। বিনা দোষে মাথা না কাটা যায়।
ভয়ে ভয়ে চ্যাটার্জি সাহেবের ঘরের দিকে যাবার সময় শুনল, ‘নতুন পদবির জন্য অভিনন্দন জানাবেন বলে ডেকেছেন হয়তো।’ তারপরেই খিক করে একটা হাসির শব্দ।
‘মে আই কাম ইন স্যার?’ প্রবল ব্যক্তিত্বপূর্ণ প্রবাল চ্যাটার্জির ঘরের দরজা খুলে প্রায় কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল সে।
‘আরে এসো এসো।’ স্যারের গলায় তেমন গাম্ভীর্য নেই তো। যাক, তাহলে তেমন গুরুতর কিছু নয়।
‘বোসো, শরীর ঠিক আছে তো? কয়েকদিন ছুটি নিয়েছিলে শুনলাম।’
সে খবরও পৌঁছে গেছে। গেলো এবার। আক্রমণটা কোন্ দিক থেকে হবে ঠিক বুঝতে পারছে না বিমল।
‘হ্যাঁ স্যার, ঠিক আছে।’
‘বেশ। একবারে কাজের কথায় আসা যাক। আমাদের বোর্ড অব ডিরেক্টরে এই অফিস থেকে একজনকে নেওয়া হবে জানো নিশ্চয়ই।’
‘হ্যাঁ স্যার।’ শুকনো মুখে বলল বিমল।
‘তিনজনের নাম প্রথমে ভেবেছিলাম আমরা। তেজ আর ফার্নান্ডেজের সঙ্গে তুমিও ছিলে। তোমরা তিনজনেই বেশ ভালো। তবে ওদের দুজনের পরিচিতিটা একটু বেশি। এদিকে তুমি একটু পিছিয়ে।’ মৃদু হাসি ফুটে উঠল চ্যাটার্জি সাহেবের ঠোঁটে।
‘কিন্তু আমি চাই আমাদের নতুন বোর্ড মেম্বার হবে তুমি।’
বোম পড়লেও এতো চমকাতো না বিমল।
‘তোমার অসুবিধা নেই তো?’
অসুবিধা??? নিঃশব্দে ঘাড় নেড়ে না বলল বিমল।
‘এই অফিসের সব খবর আমি রাখি। তোমার নাম নিয়ে হাসিঠাট্টা, তোমার মুখ বুজে কাজ করা, জুনিয়রদের উৎসাহিত করা, সব। মাথা ঠান্ডা ছেলে হিসেবে তোমাকে পছন্দ করার অনেক কারণ আছে। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটা কারণ। তোমার নতুন পদবি। আমি যাকে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি আর ভালোবাসি, তিনি হচ্ছেন আমার মা। এটা কোনোমতেই তোমার জানার কথা নয়। অথচ তোমার পদবি তাঁর বিবাহ পূর্বের পদবির সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তোমার সঙ্গে অদ্ভুত এক আত্মীয়তা অনুভব করছি আমি। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ আমার মায়ের পদবি আগে ছিল পুরকায়স্থ।’
প্রায় ঘণ্টাখানেক নানা বিষয়ে আলোচনার পর ঘর থেকে বেরনোর পর হরি রাম তাকে দেখে যেভাবে স্যালুট ঠুকল তাতে বেশ বোঝা গেল এতক্ষণে বোর্ড অব ডিরেক্টরের নতুন সদস্যর নাম সকলে জেনে গেছে।
মিলে গেছে তার তার আন্দাজ। স ক প থ আর র যুক্ত কাউকেই খুঁজে পায়নি সে। তাই সে নিজের নামের সঙ্গেই জুড়ে নেবে ওই অক্ষরগুলো এমনই ঠিক করেছিল। পুরকায়স্থ, এটাই মাথায় এসেছিল তার। এবার আর বিনতাকে বলতে বাধা নেই। প্রোমোশন আর বিয়ের জন্য উৎসব করতে হবে জমিয়ে। পার্কিং লটের দিকে যাওয়ার সময় আনন্দের চোটে দু-হাত তুলে একটু নেচে নিলেন মি. পুরকায়স্থ।
[অ্যালিস লরেন্স-এর ‘দ্য গেম অব দ্য নেম’ অনুসরণে।]
Tags: অষ্টম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, সায়ক দত্ত চৌধুরী