আলো পড়ে যেখানে
লেখক: ভার্জিনিয়া উল্ফ, ভাবানুবাদ- দেবাঞ্জলি রায়
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
এবড়োখেবড়ো জমি পেরিয়ে ছুটছিল ছেলেটা। তার বুটের সঙ্গে ঠোকর খেয়ে ইতিউতি ছিটকে যাচ্ছে ছোট ছোট টুকরো পাথর। কপাল আর গলা বেয়ে নামছে ঘাম। অস্তগামী সূর্যকে পিছনে ফেলে বাসায় ফিরছে উড়ন্ত পাখির ঝাঁক। কিন্তু কোনও কিছুর দিকে নজর নেই তার। কতদূর যাওয়ার আছে? কীসের টানে এই দৌড়? কার কাছে পৌঁছোতে চাইছে ও? কিচ্ছুটি জানা নেই ওর। কিন্তু ও জানে, পৌঁছতে না পারলে বোধহয় বড় দেরি হয়ে যাবে। কোনও এক ভারী আপনজনের কাছে যেতেই হবে ওকে। শুধু স্থানিক ব্যবধানেই কেন দূরত্ব মাপে মানুষ? ছেলেটার মনে হচ্ছিল, হয়তো সেই একজনকে কাছে পাওয়ার জন্য এক জন্মের সময়রেখাও পেরিয়ে যাচ্ছে সে।
********
১
লন্ডন শহরের ডামাডোলের আওতার বাইরে অবস্থিত অভিজাত ক্লাবটিতে মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইভিমের দেওয়া পার্টিটা জমে উঠেছে। ক্লাবের প্রাচীন অট্টালিকাটি অষ্টাদশ শতকে এক আর্লের সম্পত্তি ছিল, কাজেই সমগ্র পরিবেশে ঐতিহ্যময় সুরুচির ছাপ ছড়ানো। কারুকার্য করা থামওলা হলঘরে রাজকীয় ঝাড়লন্ঠনের আলোয় খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা; তা ছাড়া বারান্দায় বসে সামনের বিস্তৃত মাঠটির দিকে চেয়ে থাকতেও বড় মনোরম লাগে। তার ওপর আজকের রাতটাও বড় সুন্দর। সদ্য গরম পড়তে শুরু করেছে, বাতাসে লেগে আছে আরামদায়ক উষ্ণতা। আশপাশের গাছগুলিতে নতুন পাতা গজাতে শুরু করেছে। চাঁদনি রাত হলে চেস্টনাট গাছের সাদা-গোলাপি ফুলগুলো স্পষ্ট দেখা যায়।
আজ অবশ্য চাঁদের দেখা নেই। তার বদলে আকাশের গায়ে কিছু আলোর স্তম্ভ চক্রাকারে ঘুরছে, যেন পার্টির অতিথিদের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যেই। ব্যাপারটা অবশ্য আর কিছুই নয়; এয়ারফোর্সের মহড়া চলছে। আলোকপ্রভা কোনও এক কাল্পনিক সন্দেহজনক শত্রুবিমানের গতিবিধির স্থানাঙ্কে মুহূর্তের জন্য থমকে যাচ্ছে, পরক্ষণেই আবার সরে যাচ্ছে। সেই আলোর আন্দোলন দেখলে হঠাৎ করে কোনও উইন্ডমিলের পাখা কিংবা কোনও অতিকায় পতঙ্গের ডানার কথা মনে পড়ে যায়। সেই আলোয় মাঝে মাঝে এখানে-ওখানে উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে বড়সড় পাথরখণ্ড বা ফুলে-ঢাকা চেস্টনাট গাছগুলি। বিশ্বযুদ্ধের আগুন যদিও নিভু-নিভু প্রায়, আপাত শান্তি-পরিস্থিতি বজায় আছে বটে, কিন্তু সেনাবাহিনীর কঠোর সতর্কতায় কোনও ছেদ নেই।
পার্টির পরে সবার কাছের থিয়েটারে নাটক দেখতে যাওয়ার কথা, কিন্তু শো শুরু হতে এখনও খানিকটা দেরি। ডিনারের পর অতিথিরা চওড়া বারান্দায় কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে চুপচাপ মশগুল হয়ে এই অদ্ভুত আলোর খেলা দেখছিলেন। কফি আর তামাকের গন্ধে ভরপুর হয়ে আছে চারপাশের নৈঃশব্দ্য।
হঠাৎ একটা আলোর স্তম্ভ ছুটে এল বারান্দাটার দিকে। এক সেকেন্ডের জন্য একটা লেডিজ হ্যান্ডব্যাগে রাখা আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে চকচক করে উঠল একটা উজ্জ্বল আলোর চাকতি।
পার্টির হোস্ট, মিসেস আইভিমেও অতিথিদের সঙ্গে সেখানেই একটা আরামকেদারায় বসেছিলেন। এই ক্ষুদ্র ঘটনাটিতে হঠাৎ সচকিতভাবে অস্ফুট একটা চিৎকার করে সোজা হয়ে বসলেন।
তাঁর চিৎকারটা ক্ষীণ হলেও নিঃস্তব্ধতার কারণে সবার কানে গেছে। অনেকেই ঘুরে তাকালেন সেদিকে। এদিকে আলো সরে গিয়ে আবার অন্ধকার নেমে এসেছে চারদিকে।
“কী হল?” প্রশ্ন করলেন একজন।
“কিছু না, আসলে এই আলোর চাকতিটা দেখে হঠাৎ…” মিসেস আইভিমে কথার মাঝখানেই থেমে গেলেন।
অতিথিরা কয়েকজন পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। ভদ্রমহিলা যে একটু কল্পনাপ্রবণ, নাটুকে গোছের— সে কথা মোটামুটি অনেকেই জানেন।
মিসেস আইভিমে আবার মুখ খুললেন, “এই আলোর ব্যাপারটা ভারী অদ্ভুত, তাই না? এই যেমন এক্ষুনি ওই আয়নাটা চকচক করে উঠল— আলোটা না এসে পড়লে কী আমরা জানতাম ওটা আছে? হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আমার গ্রেট গ্র্যান্ডফাদারের কাছে একটা ঘটনা শুনেছিলাম। ভারী অবিশ্বাস্য ঘটনা।”
“কী ঘটনা?” কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন আরেকজন অতিথি।
– “আপনারা শুনতে চাইলে আমি বলার চেষ্টা করব। প্লে শুরু হতে এখনও বেশ কিছুটা দেরি আছে।”
২
“কোথা থেকে যে শুরু করি!”
এমনিতে গুছিয়ে বসলেও যেন তাঁর চিন্তাগুলো গুছিয়ে নিতে একটু সময় নিলেন মিসেস আইভিমে।
“সালটা কত হবে, এই ধরো, আঠেরোশো’… কুড়ি? আমার প্রপিতামহ তখন নেহাতই বাচ্চা ছেলে! আমার বয়স তো নেহাত কম হল না; তা’ আমিই শুনেছি কত ছোটবেলায়! আমার প্র্রপিতামহের তখন বেশ অনেকটাই বয়স। কিন্তু বয়স হলে কী হবে, বুড়োর ঘন পাকাচুল আর নীল চোখ দেখলে তখনও বেশ ঠাহর হত যৌবনে তিনি দারুণ হ্যান্ডসাম ছিলেন। আগে ইয়র্কশায়ারে আমাদের বেশ বড় জমিদারি ছিল। তবে আমার প্রপিতামহের শৈশবেই সেসবের বেশির ভাগটা হাতছাড়া হয়ে কেবল অবশিষ্ট ছিল খোলা মাঠের মধ্যে একটা ছোট ফার্মহাউস, আর একটা টাওয়ার।
“বছর দশেক আগে আমরা একবার বাড়িটা দেখতে গিয়েছিলাম। গাড়ির রাস্তা ছেড়ে বেশ কিছুটা পথ আমাদের খোলা মাঠের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে হয়েছিল। একটা পায়েহাঁটা পথেরও কোনও চিহ্ন নেই। মস্ত মাঠের মধ্যে একাকী দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটি; গেট বেয়ে উঠেছে ঘাস আর আগাছার জঙ্গল। বাড়ির সামনের দেওয়ালে ‘কোট অব আর্মস’খানা অবশ্য বোঝা যাচ্ছিল। ভিতরে থরে থরে পুরনো বই; ছাতা-ধরা, পোকায় কাটা। তারই মধ্যে বনমুরগির দল ঘরদোরে চরে বেড়াচ্ছে। সমস্ত কিছুর ঝড়তিপড়তি ভগ্নদশা। আমার চোখের সামনেই তো টাওয়ার থেকে হুড়মুড়য়ে একখানা পাথর ভেঙে পড়েছিল।”
মিসেস আইভিমে একটু দম নেওয়ার জন্য থেমে ফের বলতে শুরু করলেন।
“সেইখানে আমার প্রপিতামহ তাঁর বাবার সঙ্গে থাকতেন। তাঁর মা মারা গিয়েছিলেন আগেই। বাপ-ছেলের দেখাশোনা আর ফার্মের কাজকর্মের ফাইফরমাশ খাটার জন্য একটি স্থানীয় মেয়েকে রেখেছিলেন। আত্মীয়স্বজন বলতে কেউ তেমন ছিলেন না; যাঁরা ছিলেন তাঁরাও বিশেষ খোঁজখবর নিতে আসতেন না। মা-হারা ছেলেটির দুনিয়া বলতে ছিল বাড়িভরতি রাশি রাশি পুরনো বই আর ম্যাপ; তার যাবতীয় শিক্ষা ছিল ওই থেকেই, আর তার রাজত্ব ছিল ওই টাওয়ারের টঙের ওপর। ভাঙাচোরা সিঁড়ি বেয়ে আমরা উঠেওছিলাম ওপরে। বললে বিশ্বাস করবেন না, টাওয়ারের জানলার সামনে তাঁর চেয়ারখানা আজও আছে, যদিও বসার জায়গার অংশটা পোকায় কেটে আর ভেঙেচুরে নষ্ট হয়ে গেছে। জানলাটারও পাল্লা ভেঙে খসে পড়েছে; আর সেখান দিয়ে দেখা যাচ্ছে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত ‘মুর’ বা জলাভূমির দৃশ্য!
“কিন্তু, আমরা টেলিস্কোপটা খুঁজে পেলাম না, জানেন!”
মিসেস আইভিমে থামলেন আবার। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল এক কিশোরী সেই ভাঙা জানলার ধারটিতে বসে দূরের জলাভূমির দিকে মগ্ন হয়ে তাকিয়ে অত্যন্ত বিচলিতভাবে হারানো টেলিস্কোপটার জন্য চিন্তা করছে; ডাইনিং হল থেকে ভেসে আসা বাসনপত্রের ধাতব শব্দ তার কানেই ঢুকছে না।
“টেলিস্কোপ কেন?”
কোনও এক অধৈর্য শ্রোতার প্রশ্নবাণে বাস্তবের মাটিতে ফিরে এলেন মিসেস আইভিমে।
-“কেন? কারণ, টেলিস্কোপটা না থাকলে হয়তো আমিও আজ এইখানে বসে থাকতাম না।” হেসে জবাব দিলেন তিনি।
আবার সেই সুবেশা মধ্যবয়স্কা হাসিখুশি অভিজাত মহিলাটি হয়ে অতিথিদের মধ্যে ফিরে এসেছেন মিসেস আইভিমে। তিনি বলে চললেন,
“অথচ টেলিস্কোপটা থাকার কথা! প্রতি রাতে, সবাই শুয়ে পড়ার পর বাচ্চা ছেলেটি সেই জানলার ধারে বসে টেলিস্কোপটায় চোখ পেতে তারাদের দেখত— বৃহস্পতি গ্রহ, কালপুরুষের কাঁধের ওপরে রোহিনী নক্ষত্রটি, ক্যাসিওপিয়া। একলা মানুষ এক আকাশ নক্ষত্রের নীচে বসে যুগে যুগে মহাবিশ্বের রহস্যময়তাকে যে প্রশ্ন করে এসেছে সেই একই প্রশ্ন ঘুরত ছেলেটির মাথায়। কোথা থেকে এল এই বিপুল নক্ষত্রের দল? কীভাবেই বা এল? আর মানুষ? সেই বা কোত্থেকে এল?”
অতিথিরা সকলে আকাশের দিকে চোখ রেখে নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে ছিলেন। লন্ডন শহরের ব্যস্ত কোলাহল, যানবাহনের গর্জন বহুদূরে ডুবে গিয়েছে। অন্ধকার গাছগুলির মাথার উপর একে একে ফুটে উঠছে তারাগুলি। তাদের দেখে স্থির, অপরিবর্তনশীল বলে ভুল হয়; শতাব্দীকালের দীর্ঘ যাত্রা কোনও ছাপ রাখেনি তাদের নিশ্চলতায়। তাঁরা যেন সেদিনের সেই বালকটির সঙ্গে আজও বসে আছেন জলাশয়ের উপর বিছিয়ে থাকা একই নক্ষত্ররাজির নীচে।
“দার্শনিক হোক বা বৈজ্ঞানিক, এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো সঙ্গী বেচারার ছিল না!” বিড়বিড়িয়ে বললেন মিসেস আইভিমে।
তাঁর গলার আওয়াজে বাকিরাও যেন ধ্যান ভেঙে নড়েচড়ে উঠলেন। মিসেস আইভিমে আলগা হয়ে যাওয়া গল্পের খেইটা ধরে নিয়ে ফের বলতে শুরু করলেন, “যে দিনটার কথা বলছি, সেটাও ছিল গরমের দিন। জুন মাসের উষ্ণ, দীর্ঘ, ক্লান্তিকর একটি দিন। পোষা মুরগিগুলো বাড়ির উঠোনে চরে বেড়াচ্ছে, আস্তাবলে দাপাদাপি করছে তাদের বুড়ো ঘোড়াটা। বৃদ্ধ বাবা তাঁর চশমাটি নাকের ওপর ঝুলিয়ে ঝিমোচ্ছেন। কাজের মেয়েটি নোংরা বাসনকোসন পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। ছেলেটির মনে হচ্ছিল এই একঘেয়ে দিনটার বোধহয় কোনও শেষ নেই। তার চোখের সামনে ‘মুরে’র বিশাল এলাকাটা দূরের দিগন্তরেখায় মিশে আছে, নাকি আকাশটাই নেমে এসেছে নীচে? শুধু সবুজ আর নীল, চরাচর জুড়ে শুধু সবুজ আর নীলের রাজত্ব, শুধু জলাভূমি আর আকাশ ছাড়া পৃথিবীতে আর কিছু নেই।”
আধো আলো আধো অন্ধকার ঘিরে আছে মিসেস আইভিমে’কে। গালে হাত রেখে বারান্দা থেকে একটু ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি; আবার যেন ফিরে গেছেন সেই টাওয়ারের জানলায়, সেই মুরের দৃশ্যের সামনে।
“কিন্তু টেলিস্কোপ দিয়ে পৃথিবীটাকে ঠিক কেমন দেখায়?”
নড়ে উঠে সোজা হয়ে বসলেন মিসেস আইভিমে। তাঁর শরীরী ভাষা দিয়েই তিনি যেন আস্ত একটা টেলিস্কোপকে চালনা করছেন; আঙুল দিয়ে কোনও এক অদৃশ্য স্ক্রু ঘুরিয়ে যেন নির্দেশ দিচ্ছেন সেটাকে।
“দূরবর্তী কালো বিন্দুর মতো জঙ্গলটার দিকে ছেলেটি ফোকাস করল তার যন্ত্রটা। আস্তে আস্তে তার চোখের সামনে ফুটে উঠতে লাগল প্রতিটি গাছের প্রতিটি পাতা, গাছের ডালে বসে থাকা এবং ইতিউতি উড়ন্ত প্রতিটি পাখি, তারপর… খানিকটা ধোঁয়ার মেঘ… আর তারপর… নীচে, আরেকটু নীচে, গাছপালার মধ্যে… একটা… একটা ছোট ফার্মহাউস। তার প্রতিটি ইঁট, দরজার একপাশে টবে পোঁতা গাছে ফুটে থাকা নীল-গোলাপি হাইড্র্যাঞ্জিয়া ফুলগুলি পর্যন্ত সে স্পষ্ট দেখতে পেল।”
“এমন সময় বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে এল একটি তরুণী, মাথায় বাঁধা নীল ফিতেটি উঁকি মারছে তার চুলের ফাঁকে। দরজায় দাঁড়িয়ে পাখিগুলোর উদ্দেশে খাবারের দানা ছুড়ে দিচ্ছে মেয়েটি; পায়রাগুলো ফড়ফড়িয়ে উড়ে উড়ে এসে বসছে তার হাতে, কাঁধে।”
“তারপর… তারপর… বাড়ির পিছনদিক থেকে বেরিয়ে এল একটি দীর্ঘদেহী সুপুরুষ। গভীর স্নেহে সে তরুণীটিকে জড়িয়ে নিল তার বাহুবন্ধনে। পরস্পরের ঠোঁটে তারা এঁকে দিল গভীর, সুগভীর চুম্বন।”
“এরপর যে ঠিক কী হয়েছিল… টেলিস্কোপটা সরিয়ে ছেলেটা সিঁড়ি বেয়ে ছুটে নেমে এল, ছুটতে ছুটতে পেরোল মাঠ, খেত, বড় রাস্তা… মাইলের পর মাইল এভাবে ছুটে সে যখন ধূলিধূসরিত, ঘর্মাক্ত অবস্থায় জঙ্গলের ধারের সেই বাড়িটায় পৌঁছোল; তখন সন্ধের অন্ধকার নেমে এসেছে, গাছের মাথায় দেখা যাচ্ছে একটি-দুটি তারা।”
মিসেস আইভিমে থেমে গেলেন; যেন বহু মাইল দূর থেকে ছুটে আসা সেই কিশোরের অবয়ব এসে দাঁড়িয়েছে তাঁর সামনে।
“তারপর? তারপর কী হল? আপনার প্রপিতামহ কী করলেন তারপর? আর মেয়েটিই বা কে ছিল?”
বিভ্রান্ত শ্রোতাদের প্রশ্নগুলো ধেয়ে এল মিসেস আইভিমে’র দিকে। তাঁর ওপর রঙ্গমঞ্চের স্পটলাইটের মতো এসে পড়েছে মহড়ারত এয়ারফোর্সের আলোকরেখার নির্দেশ। স্মৃতির অতল থেকে উঠে এলেন তিনি।
“ওহ, মেয়েটি… মেয়েটি ছিলেন আমার প্রপিতামহী” চেয়ার পিঠে রাখা ক্লোকটা গুটিয়ে তুলতে তুলতে জবাব দিলেন মিসেস আইভিমে।
“আর সেই সুদর্শন লোকটি?”
“লোকটা? ও হ্যাঁ, লোকটা! তাকে আর তখন সেখানে কেউ দেখেনি।”
অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এল সবার মাঝে।
একটু থেমে থেমে, ধীরে ধীরে বাকি কথাগুলো যোগ করলেন মিসেস আইভিমে, “তাই বলছিলাম, এই আলোর ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত, বলুন? কখন যে কোনও দৃশ্যের ওপর এসে পড়ে… হয়তো অতীতের, কিংবা হয়তো, ভবিষ্যতের? কে বলতে পারে!”
সার্চলাইটের আলোটা আবার সরে গেছে। জিনিসপত্র গুছিয়ে উঠে পড়লেন সকলে। নাটকের সময় হয়ে গেছে।
মূল কাহিনি- দ্য সার্চলাইট
সূত্র- A Haunted House and Other Short Stories
Tags: অনুবাদ গল্প, দেবাঞ্জলি রায়, ভার্জিনিয়া উল্ফ, ষষ্ঠ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা