আজি হতে
লেখক: মোহনা দেবরায়
শিল্পী: সৌরভ দে
সবজেটে আকাশটার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে ছিল নীলোৎপল। এই মাঠটায় কেউ আসে না। মাঠ অবশ্য নামেই। শুধুই খানিকটা লালচে ধূসর জমি। আসলে আজকাল মানুষ বাড়ি থেকে বেরোয়ই কম, কারণ বাড়ি থেকে বেরোনো মানেই জীবন বাজি রাখা। তবু নীলোৎপল বেরোয়। খুব সন্তর্পণে, মা-বাবার নজর বাঁচিয়ে। বেরিয়ে এসে কমপ্লেক্সের পিছনদিকে এই মাঠে বসে থাকে। আকাশ দেখে। ওর মনে হয়, এইটুকু না করতে পারলে ও মরে যাবে। অবশ্য বেরোনোর জন্য হাজারটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। বিশেষ ধরনের পোশাক পরতে হয়। নইলে পরিবেশের তেজস্ক্রিয়তা মুহূর্তে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেবে শরীর। মুখে একটা বিশেষ ধরনের মাস্ক পরতে হয়, যেটা দূষিত বাতাসকে পরিশোধন করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাঠায় ফুসফুসে। নীলোৎপল শুনেছে, আজ থেকে দু-তিনশো বছর আগে, মানুষের অনেক বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হতো জীবনধারণের জন্য। তারপর… আস্তে আস্তে যখন বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের পরিমাণ বিপজ্জনকভাবে কমতে শুরু করল, কিছু সদ্যোজাত শিশুর ওপর একটা জিন-এক্সপেরিমেন্ট করা হল। এক্সপেরিমেন্টের প্রথম দিকের ‘ভলান্টিয়ার্স’ হিসেবে অবশ্য অনাথ শিশুদেরই বেছে নিতে হয়েছিল। কিন্তু সেটা সফল হওয়ার পর দেখা গেল, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম অক্সিজেনে তারা জীবনধারণ করতে সক্ষম হচ্ছে। তারপর আস্তে আস্তে সব সদ্যোজাত শিশুকেই বাধ্যতামূলকভাবে আনা হল এর আওতায়। তারপর… তৈরি হল প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা ন্যূনতম অক্সিজেনের উপস্থিতিতেই সুস্থভাবে জীবনধারণ করতে পারল। তবু, আজকের অবস্থা এমনই, মানুষকে এই ফিল্টারিং মাস্কটা পরেই বাইরে বেরোতে হয়।
আকাশের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে অনেক কথা মনে ভিড় করে আসছিল নীলোৎপলের। আকাশটা নাকি, কোনও এক সুদূর ফেলে আসা অতীতে, এরকম ধূসর সবজেটে ছিল না। এককালে নাকি সে ছিল ঘন নীল। তারপর… তারপর… ভাবতে ভাবতে দু-চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে নীলোৎপলের। হয়তো অনেক অনেক অনেক বছর আগে… যখন আকাশ নীল ছিল, ছোট ছোট বাচ্চারা খেলে বেড়াতো এই মাঠে। গোল্লাছুট, কিতকিত, বুড়ি বসন্ত… ছুটতে ছুটতে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ত কেউ। উপুড় হয়ে। সঙ্গীরা খেলা ছেড়ে ছুটে আসত। সে ততক্ষণে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে ঘাসের ওপর সোজা হয়ে বসেছে। তার মেলে ধরা হাঁটুতে রক্তের ছোপ। ছড়ে গেছে অনেকটা। হঠাৎ কেউ ছিঁড়ে নিয়ে আসত কিছু পাতা। ডলে দিত ক্ষতস্থানে। হয়তো…
আচমকা চটকাটা ভেঙে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই প্রচণ্ড অবাক হয়ে যায় নীলোৎপল। কী যেন ভাবছিল এতক্ষণ…? গোল্লাছুট, কিতকিত, বুড়ি বসন্ত… এসব খেলার নাম সে জানল কোত্থেকে? সে অবশ্য শুনেছে আগেকার দিনে বাচ্চারা স্কুলে যেত, খেলাধুলো করত… কিন্তু সে সব তো বাবা-মায়েরও জন্মের অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। ওরাও জানে না এইসব খেলার নাম, নীলোৎপল নিশ্চিত। আচ্ছা এই নামগুলো দিয়ে কি আদৌ কোনও খেলা আছে? নাকি সবটাই নীলোৎপলের কল্পনা? স্বপ্ন কি? কিন্তু সে যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিল সবটা…। মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে উঠে দাঁড়াতে যায় নীলোৎপল। কিন্তু আচমকাই থেমে যেতে হয় তাকে। কেউ কথা বলছে। খুব ফিসফিসিয়ে। অস্পষ্ট সুরে। কিন্তু… শব্দের উৎসটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না নীলোৎপল। চোখ বন্ধ করে উৎসটা খুঁজতে গিয়ে অবাক হতে হয় আরও। আওয়াজটা আসছে তার মাথার ভেতর থেকেই। আস্তে আস্তে সাকার হচ্ছে শব্দগুলো।…
–“নীলোৎপল! নীলোৎপল!”
–“কে?”
–“আমায় চিনতে তোমার দেরি আছে। কিন্তু যা বলবো এখন, মন দিয়ে শোনো।”
–“আপনি… আপনি কি আমার মাথার ভেতর থেকে কথা বলছেন…?”
–“বলতে পারো। মানে আপাতত তোমার পক্ষে সেটা ভেবে নেওয়াই সোজা।”
–“কিন্তু…”
–“আঃ! চুপ করে কথাটা শোনো। সামনে একটা সরু নীলমতো জিনিস দেখতে পাচ্ছো?”
নীলোৎপল সবিস্ময়ে লক্ষ করে, মাঠের ওপর উল্লম্বভাবে আকাশের দিকে উঠে গিয়েছে একটা সরু, নীল রেখা। ঠিক যেন একটা আলোর রেখা। খুব উজ্জ্বল। একটু একটু করে চওড়া হচ্ছে সেটা।
–“হ্যাঁ!” মন্ত্রমুগ্ধস্বরে বলে নীলোৎপল।
–“এবার ওটার দিকে এগিয়ে যাও।”
–“কেন?”
–“প্রশ্ন করো না, নীলোৎপল। যেটা বলছি সেটা করো।”
–“যদি না করি?”
নীলোৎপলের মাথার ভেতরে যেন হেসে ওঠে কেউ, “চেষ্টা করে দেখো!”
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে নীলোৎপল। তারপর বাঁ-দিকে ঘুরে বাড়ির দিকে পা বাড়াতে চায়। কিন্তু তার পা মোটেই তার কথা শোনে না। অভিভূত নীলোৎপল লক্ষ করে, এক-পা এক-পা করে সামনে, সেই আলোটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে।
–“এটা কী হচ্ছে আমার সঙ্গে?” ভয়ার্ত, মরিয়া গলায় বলে ওঠে সে।
–“বললাম না, তোমার ক্ষমতা সীমিত। যাতে তুমি ভয় না পাও সেই জন্য সেটা এক্ষুণি বুঝতে দিতে চাইছিলাম না তোমায়। কিন্তু সেটা ছাড়া বোধহয় উপায়ও নেই।”
–“আপনি কে? কী চান?”
–“সব জানতে পারবে। শুধু এখন কোনও প্রশ্ন করো না।”
শরীরটা ছেড়ে দেয় নীলোৎপল। পা-দুটো আপনিই বয়ে নিয়ে চলে তাকে। ততক্ষণে নীল রেখাটা অনেকটা চওড়া হয়েছে। তার মাথাটা গিয়ে মিশেছে আকাশে। দূরত্ব কমতে কমতে যখন আর কয়েক হাত, আচমকা থেমে যায় নীলোৎপলের চলা। মাটির থেকে ফুটদুয়েক ওপরে জিনিসটার বেধ সবচেয়ে বেশি। প্রায় এক ফুট। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে তীব্র উজ্জ্বল আলো। এতটাই উজ্জ্বল, যে তার রং ঠাহর করতে পারে না নীলোৎপল। আর… যেন একটু স্বতন্ত্রভাবে, একটা অদ্ভুত আলোর রেখা। নীলচে, তবে একটু অন্যরকম। একটা নির্দিষ্ট আকার আছে সেটার। সরলরেখা নয়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বুঝতে পারে নীলোৎপল, একটা সিঁড়ি। স্বচ্ছ। আলোর তৈরি। হতভম্বের মতো সে দিকে চেয়ে থাকে ও। মাথার ভেতর থেকে কোনও নির্দেশ আসছে না, তবু নীলোৎপল বুঝতে পারে, এই সিঁড়িটা বেয়েই উঠতে হবে তাকে। আর, সে আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে, তার পা-দুটো নিজেই তাকে বয়ে নিয়ে যাবে ওই অজানার মধ্যে। সিঁড়িতে পা দেয় নীলোৎপল। সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন ডুবে যাওয়ার অনুভূতি হয়। শরীরটা পালকের মতো হালকা হয়ে গেছে যেন। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ভালো করে অনুভূত হচ্ছে না। না… হচ্ছে। কিন্তু সে যেন কেমন অন্য অনুভব। নীলোৎপলের চেনাজানা কিছু নয়। আলোর উজ্জ্বলতায় চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু যাচ্ছে না। বরং… আলোটা যেন একটু একটু করে গিলে নিচ্ছে তাকে, লীন করে নিচ্ছে নিজের দেহে। দু-চোখে ক্লান্তি নেই, তবু ঘুম নামছে।…
একটা বাগান। নাম-না-জানা ফুলে ভর্তি। প্রজাপতি উড়ছে। একটা ছবির মতো ছোট্ট বাড়ি। তার উঠোনে টলমল পায়ে খেলে বেড়াচ্ছে একটা বাচ্চা। হঠাৎ ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন এক মহিলা। কোমরে আঁচল জড়ানো। বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে ঢুকে যান।…
দৃশ্যপট পরিবর্তন। বাগানটা একটু অযত্নরক্ষিত। ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একটা বছর এগারোর ছেলে। পিঠে ব্যাগ। পরনে এক রঙের জামাপ্যান্ট। দাঁড় করানো একটা সাইকেল বের করে নিয়ে গেটের দিকে এগিয়ে যায় সে।…
আবার পরিবর্তন। বাগানের গাছগুলো শুকনো শুকনো। উঠোনের একটা খোলা জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ঘরের ভেতর। বিছানা। দুটো শরীর নিবিড় হয়ে আছে তার ওপর। একজনের মুখের আদল দেখে বোঝা যায়, এ একটু আগে দেখা সেই ছোট ছেলেটা, আরেকটু বড়ো। অন্যটা, একটা মেয়ে।…
ফের পালটায় দৃশ্যপট। ফুলগাছগুলো মরা মরা। সংখ্যাতেও অনেক কম। বাড়ি থেকে ব্যস্তসমস্ত পায়ে বেরিয়ে আসছে একজন মধ্যত্রিশের লোক। চোখে চশমা। শরীরে মেদের কিঞ্চিৎ আধিক্য হয়েছে— তবু মুখের আদল দেখে তাকে এখনও তাকে চেনা যায় সেই আগের ছেলেটা বলে।
শেষ অবধি… বাগান প্রায় ফাঁকা। কয়েকটা মরা গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিক ওদিক। উঠোনের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ঘরের ভেতর মৃদু টিমটিমে আলো। খাটের ওপর একটা চেয়ার রাখা। লোকটা পাশে বসে আছে হাঁটু গেড়ে। বয়সটা আরো বেড়েছে তার। চুলে ধূসরের ছোঁয়া, মুখে বলিরেখার। উঠে দাঁড়ায় লোকটা। মাথার ওপর কী যেন দেখে। তারপর চেয়ারের ওপর একটা পা রেখে, মুখ ফিরিয়ে জানলার দিকে তাকায়। নীলোৎপলের চোখের সোজাসুজি। একটা হালকা হাসির আভাস খেলে যায় তার মুখে।…
আচমকা ঘুমটা ভেঙে নীলোৎপলের। অন্ধকার। চারিদিক নিকষ অন্ধকার। কোথায় চলে এসেছে ও? সেই আকাশছোঁয়া বিদ্যুতের মতো রেখাটা… এদিক ওদিক তাকায় নীলোৎপল। কোথাও কোনও শব্দ নেই। কিন্তু এই নৈঃশব্দ্য তার অচেনা নয়। বরং তার চিরপরিচিত। এটা নীলোৎপলের নিজের ঘর। বিছানায় উঠে বসে ও।
–“আলো জ্বলুক।” নিচুস্বরে উচ্চারণ করে নীলোৎপল। একটা মৃদু আলো জ্বলে ওঠে ঘরে। তেষ্টায় বুকটা শুকিয়ে গেছে। পুরো দেড়গ্লাস জল শেষ করে একটু ধাতস্থ হয় নীলোৎপল। কী একটা স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভাঙল…? স্বপ্ন, নাকি স্বপ্নের মধ্যে স্বপ্ন? একটা লোক। তার প্রায় গোটা জীবনটাই। আর শেষটা… নাহ্! মনে আসছে না।
শোবার ঘর থেকে নেমে এসে কিচেনে যায় ও। সকাল হতে বেশি বাকি নেই। খিদে পেয়েছে। অনেক, অনেকদিন আগে, মানুষ চাষবাস করত খাদ্যের জন্য। এখন সব খাবারই সিনথেটিক, টিনজাত। সবই কারখানায় তৈরি হয়। সেসব কারখানায় মানুষ কাজ করে না। সমস্ত জিনিসটাই যন্ত্রনির্ভর। খুব কম উৎপাদনের কাজেই মানুষকে প্রয়োজন হয়।
বড় কোনও আলো জ্বালায়নি নীলোৎপল। উজ্জ্বল আলো বিশেষ ভালো লাগে না আর। খাবার নিয়ে টেবিলে বসে নিচুস্বরে কয়েকটা শব্দ উচ্চারণ করে ও। টেবিলের উলটোদিকের দেওয়ালটা জ্বলে ওঠে। টেবিলের উপরিতলটাও জ্বলে উঠে উন্মোচন করে একটি এলইডি স্ক্রিন। তার ওপর দ্রুত আঙুল চালায় নীলোৎপল। দেওয়ালে ফুটে ওঠে কয়েকটা ছবি। একটা প্রাচীন বিল্ডিং। অনেকগুলো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। পুরোনো দিনে এগুলোকেই স্কুল বলা হত। তারপর আসে একটা ছোট্ট ভিডিয়ো ক্লিপ। একটা খোলা মাঠ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে কিছু মানুষ। হালকা, ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে তারা। একে অপরের সঙ্গে গল্প করছে। মাথার ওপর ঝকঝক করছে রোদ। আকাশের রং নীল। একটা চমৎকার শীতের সকাল। তারপর আরও কিছু ছবি… বহু, বহু বিস্মৃতকালের। তখনকার মানুষের জীবন… কত রঙিন ছিল। সম্পর্কগুলোর কত মানে ছিল! এখন তো… এই সতেরোটা বছরে, মা-বাবার সঙ্গে ক-টা কথা হয়েছে নীলোৎপলের, বোধহয় গুনেই বলা যাবে। এখন আর কেউ কারো নয়। জীবন একটা অতিকায় যন্ত্র। আবেগের কফিন। যদিও আপাতদৃষ্টিতে কারো তাতে কোনও সমস্যাও হয় না। তাহলে নীলোৎপলেরই বা কেন…? রাতে স্বপ্নটা দেখার পর থেকে যেন কী একটা পরিবর্তন এসেছে ওর মধ্যে, ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারছে না নীলোৎপল। সেই সময়টাকে… সেই প্রাচীন সময়টাকে অনুভব করার বাসনাটা যেন প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরছে। যদি সে একবার সুযোগ পেত… আটকে দিতই এই সবকিছু। এই পরিবেশের নষ্ট হওয়া… এই যান্ত্রিকতার দাপট সবকিছু! কোনওরকমে উঠে তৈরি হয়ে নেয় নীলোৎপল। তারপর চুপচাপ বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে। আলো ফুটছে। আকাশের রং কালো থেকে ঘন সবজেটে ধূসরের দিকে যাত্রা করেছে। লালচে ধূসর জমিটার ওপর দাঁড়িয়ে আছে নীলোৎপল। তার চোখ দুটো বন্ধ।
–“জানতাম তুমি ফিরে আসবে।”
–“আপনি কে? কী করেছেন? কী হচ্ছে এটা আমার সঙ্গে?”
–“এটাই তুমি। এ-ই তোমার নিয়তি।”
–“কাল রাতে আমি যেটা দেখলাম, ওটা… স্বপ্ন ছিল?”
–“বাস্তব জিনিসটাই খুব গোলমেলে, নীলোৎপল। সেটা তুমি বুঝবে… পরে।”
–“আপনি কে? কী চান? কেন এভাবে আমার সবকিছু ঘেঁটে দিচ্ছেন…?”
–“আমি কে…? আমি যা, তোমার মস্তিষ্ক এখনও সেটা গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। অনেক নাম আছে আমার। কোনটা তুমি চাও বলো? নীলোৎপল নামটা কি তোমার পছন্দ?”
–“আপনি কি আমার সঙ্গে হেঁয়ালি করছেন?”
–“আর কথায় সময় নষ্ট করে কাজ নেই। এসো!”
–“কোথায়?”
–“যেখানে যেতে চেয়েছ আজীবন, সেখানে! কেন, যাবে না?”
ততক্ষণে আবার আবির্ভূত হয়েছে সেই অতিজাগতিক নীল রেখা। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই দিকে এগিয়ে যায় নীলোৎপল। আবার সেই আলোর সিঁড়ি। এবারও আলোটা গিলে নেয় তাকে। তবে… এবার যেন সবকিছু একটু অন্যরকম। যেন এক আকাশ তারার মধ্যে নীলোৎপলকে ভাসিয়ে দিয়েছে কেউ। যেন মহাশূন্যের মধ্যে দিয়ে ভেসে চলেছে সে। আলোর গতিতে… কিংবা সে নিজেই আলো, কিংবা আরও দ্রুত কিছু। সময় বলে কিছু নেই। শুধু অনুভব আছে। তীক্ষ্ণ, উজ্জ্বল অনুভব। তারপর… অন্ধকার। শুধু একটা নিটোল উপস্থিতি।…
*****
কোথায় বন্দী নীলোৎপল? তার ক্ষমতা এত কম কেন? কেন সে যাই করতে চায়, তার শরীর তাকে বাধা দেয়? কেন তার সমস্ত সত্তা একটি শিশুর দেহের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ? অপেক্ষা করতে হবে তাকে…
–“আজ ওইদিক দিয়ে ফেরা যাবে না।” স্কুল ড্রেস পরা ছেলেটা সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিতে দিতে বলছে।
–“কেন?”
–“ওমা, জানিস না? কোথায় থাকিস তুই, নীল? ওরা ওদিকটায় ধরনায় বসবে আজকে।”
–“কেন?”
–“ওই… দক্ষিণপাড়ার ফাঁকা জমিটায় নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট হবে। ওদের দাবি, ওখান থেকে বেরোনো রেডিয়োঅ্যাক্টিভ ওয়েস্টেজ অঞ্চলের পরিবেশ নষ্ট করবে।”
–“ওরা বলতে?”
–“ওই… এলাকার কিছু মান্যগণ্য বুদ্ধিজীবী! ভবতোষ স্যারও তো— এই এই নীল…! সামলে!!”
কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। নীলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে তার সাইকেল। তাড়াতাড়ি তাকে মাটি থেকে তুলতে তুলতে পাশের ছেলেটি বলে, “কী ব্যাপার? মনটা কোথায় পড়ে আছে তোর?”
–“আটকাতে হবে।” চাপাস্বরে বলে ওঠে নীল।
–“মানে? কী আটকাতে হবে?”
–“পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রোজেক্টটা। নইলে খুব খারাপ হবে। খুব খুব… খারাপ!”
–“তোর কি মাথার গণ্ডগোল হয়েছে? কত লোক ওখানে কাজ পাবে জানিস? এলাকার ভোল পালটে যাবে রাতারাতি। ওই লোকগুলো ভীষণ নির্বোধ। কিছু তো করতে পারবেই না, ফালতু ঝামেলা বাড়াবে।”
–“আমি ওইদিকেই যাবো। ধরনায় বসব ওদের সঙ্গে।”
–“চুপচাপ আমার সঙ্গে বাড়ি যাবি।”
–“না সৌম্য! তুই বুঝতে পারছিস না… ভবিষ্যৎ খুব খারাপ হবে তাহলে!”
–“তাই বুঝি? বল… কতদূরের ভবিষ্যৎ খারাপ হবে? এটা ২০২৯ সাল। তোর কি মনে হয় না, তিন-তিনটে মহামারীর পর এমনিতেই আমরা যথেষ্ট খারাপ আছি? এমনিতেই… এই পৃথিবীকে আমরা যেমন জানি তার মেয়াদ আর খুব বেশি নয়?”
–“তোর কোনও ধারণা নেই সৌম্য। একটা দিন আসবে… গায়ে রেডিয়েশন আটকানোর জামা পরে পথেঘাটে বেরোতে হবে।”
এবার হেসে ওঠে সৌম্য নামের ছেলেটা, “বটে? তুই দেখে এসেছিস?”
কোনও উত্তর আসে না নীলের পক্ষ থেকে। না, সে দেখেনি। তবু সে জানে এটাই হবে। মাঝে মাঝে… কেমন অদ্ভুত বোধ হয় তার। যেন আদতে সে অনেক কিছু জানে। কিন্তু তার অস্তিত্ব সেই সব জানাটুকুকে প্রসেস করতে পারে না। তবে সেদিন ধরনায়ও যাওয়া হয় না তার।
আকাশটা ধোঁয়ায় ছেয়ে থাকে আজকাল সর্বক্ষণ। পরিবেশবিদরা বলছেন এগুলো অত্যধিক মাত্রায় বায়ুদূষণের ফল। বাড়ির বাইরে বেশিক্ষণ নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আজকাল। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের অতিকায় চিমনিদুটো দাঁড়িয়ে থাকে মূর্তিমান অবসাদ হয়ে।
বাবা বছরদুয়েক আগে গত হয়েছেন লাং ক্যান্সারে। মায়েরও ক্যান্সার। কোনওরকমে বেঁচে আছেন জীবন্মৃত হয়ে। দুশ্চিন্তার চাকায় পেষাই হতে হতে, নীল নামের ছেলেটা হারিয়ে ফেলেছে জীবনের অনেকগুলো পাতা। দেশে দেশে সেনা অভ্যুত্থান, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার পরিবেশচিন্তাকে খানিকটা পিছনের আসন দিয়ে দিয়েছে। মুহূর্তে বাঁচাটাই এই মুহূর্তে মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে, ক্যাম্পাসিং-এ এই পাওয়ার প্ল্যান্টেই চাকরি পেয়েছে নীল। যে কারখানার প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে একদিন ধরনায় বসবে ভেবেছিল, সকালবেলা উঠে, নাকে-মুখে গুঁজে সেই কারখানাতেই ছুটতে হয় পেটের দায়ে। আর কিছু অনুভব করে না নীল। তার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে।
তবু বসন্ত আসে নিজের নিয়মে। মেয়েটির নাম প্রজ্ঞা। ওর সঙ্গেই কাজ করে। আজকাল দেখা করার মতো একটু খোলা আকাশ পাওয়া খুব কঠিন। পেলেও, সেখানে সবুজের প্রত্যাশা বিলাসিতা। তবু কীভাবে যেন একটা পার্কের সন্ধান পেয়েছিল ওরা। সেখানে একসঙ্গে বিকেলটা কাটাতে কাটাতে, নীলের কাঁধে মাথা রেখে প্রজ্ঞা হঠাৎ বলেছিল, “আচ্ছা নীল, দেখেছ আকাশের রংটা কেমন পালটে যাচ্ছে আস্তে আস্তে?”
অনেকদিন পরে কী এক অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠেছিল নীলের। প্রজ্ঞা বলে চলেছিল, “হয়তো একটা দিন আসবে… আমরা হয়তো দেখার জন্য বেঁচে থাকব না, কিন্তু আকাশের রংটা একদিন পালটে যাবে! যে আকাশের নীলে আশ্রয় পেয়েছিলাম, সেই নীল আর থাকবে না। কিংবা থাকলেও… আর চেনা যাবে না।”
নীল উত্তর দেয়নি। ওদের ঘিরে সন্ধে নেমেছিল নির্বিবাদে।
***
নীলের স্ত্রী প্রজ্ঞার ওয়াটার ব্রেক শুরু হয়েছিল হঠাৎ। নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয়েছে তাড়াহুড়ো করে। সব ফর্মালিটি মিটিয়ে, ওকে অ্যাডমিট করে দিয়ে, আর দাঁড়ায়নি নীল। বাড়ি চলে এসেছে। বিয়ের সাড়ে পাঁচ বছর পর সন্তানের মুখ দেখতে চলেছে সে। মন প্রফুল্ল থাকার কথা তার। কিন্তু মনের গহীনে হাতড়ে হাতড়ে দেখেছে নীল… সেখানে আনন্দের লেশমাত্রও নেই। কেন? পৃথিবীতে একজন উত্তরাধিকারী রেখে যেতে চলেছে সে— এই ভাবনাটা কি আনন্দদায়ক নয়? নিশ্চয়ই! তবু তার আনন্দ হচ্ছে না কেন?
গেট খুলে বাগানে পা দিতেই যেন বুকে একটা ধাক্কা লাগে। একটা মারাত্মক দেজাভ্যু হচ্ছে বলে মনে হয়। বাগানটা এত শুকিয়ে গেল কবে? কতদিন যত্ন হয় না এটার? আগে কেন মনে পড়েনি নীলের? হঠাৎ ভীষণ আক্ষেপের একটা অনুভূতি মনকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেয়। চকিতে মনে হয়, শুধু এই বাগানটার পরিচর্যা করলেই এই সব কিছু আটকানো যেত। কিন্তু কোন সব কিছু?
ঘরে ঢুকে, হাতমুখ না ধুয়েই, নিজের মুখোমুখি বসে নীল। অনেক, অনেকদিন পর।
–“নীল, বুঝতে পেরেছ ব্যাপারটা?” মাথার ভেতর বসে যে মাঝে মাঝে অদ্ভুত অদ্ভুত জ্ঞান দিত নীলকে, সে আজ প্রথম কথা বলছে। অথচ, ভয় তো দূরের কথা, একটু অবাক পর্যন্ত লাগছে না নীলের।
–“না।” সে উত্তর দেয়।
–“আমি আসলে তুমিই। তোমার ভবিষ্যতের সত্তা। তোমার মাথার ভিতর বসবাস করি, কারণ আমার নিজের কোনও শরীর নেই। বিগত প্রায় চল্লিশ বছর নানাভাবে তোমাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে লাগাতার ব্যর্থ হয়ে আসছি।”
–“জানি।”
–“আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর পর, আমার শরীর ধারণ করার কথা, নীলোৎপল নামে। এখন আমি যে কাজটা করছি, তখন তুমি সেটা করবে আমার মাথার ভিতর বসে। তোমার ভবিষ্যৎ সত্তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে এই অতীতে। এইভাবেই চক্রটা চলতে থাকবে।”
–“কিন্তু এসব করে কী লাভ?”
–“কোনও লাভ নেই। এখানে লাভ বা ক্ষতির প্রশ্নই নেই। জানো তো নীল, এই এত বছর তোমার মাথার ভেতর বসে থেকে একটা জিনিস উপলব্ধি করেছি আমি। সমস্ত মানুষ আসলে একটাই পরম সত্তার অগুনতি বিভাজন। আর বিভাজনটা শুধু মানুষে-মানুষে নয়, সময়ে-সময়েও। অর্থাৎ প্রতিটি মুহূর্তে তুমি একজন আলাদা মানুষ। আসলে সমস্ত সচেতন প্রাণ, এক বৃহত্তর সচেতনতার অংশবিশেষ। তুমি যা, প্রজ্ঞাও তাই। তোমার মা-বাবা… সবাই আসলে একই। তাই মানবজীবনে সেই অর্থে কোনও লাভ-ক্ষতির প্রসঙ্গ নেই। তার প্রাথমিক লক্ষ্য একটাই… এই অভেদটা বুঝতে পারা। দেহের গণ্ডি এবং পাঁচটা ইন্দ্রিয় প্রতিমুহূর্তে আমাদের সেই বুঝতে পারাটাতে বাধা দেয়। আমিও তো ইন্দ্রিয় দ্বারা আবদ্ধ। হয়তো তোমার থেকে একটু আলাদাভাবে, তবু… আবদ্ধই!”
–“তাহলে শঙ্করাচার্যই ঠিক বলেছিলেন।”
–“সবাই ঠিক বলেছিলেন। নিজের নিজের মতো করে।”
–“আচ্ছা আপনি ভবিষ্যৎ থেকে এলেন কীভাবে?”
–“সেটা এক্ষুণি তোমাকে বোঝানো একটু কঠিন। ধরে নিতে পারো… তোমরা যেটাকে টাইম ট্রাভেল বলো, সেটা করেই। তবে তার প্রসেসটা… একটু আলাদা।”
–“কীরকম?”
–“সেটা তুমি আস্তে আস্তে বুঝে যাবে। মানবমস্তিষ্ক যে কী পারে আর কী পারে না, তার কোনও ধারণাই আমরা রাখি না।”
–“ভবিষ্যতে কি মানুষ টাইম ট্রাভেল আবিষ্কার করবে?”
–“করলেও, যে ধরনের ‘ট্রাভেল’ করে আমি এসেছি, তেমন ‘ট্রাভেল’ মানুষকে আবিষ্কার করতে হয় না, ঘটাতে হয়। এই ‘ঘটানো’টা তুমি শিখে যাবে। মানবমস্তিষ্কের অন্ধকার কোণ জুড়ে বসে থাকার যে কত সুবিধা, বুঝতে পারবে ধীরে ধীরে।”
–“কিন্তু আমি… আমার সন্তান হবে…”
–“হ্যাঁ। একটা কলুষিত পৃথিবী উপহার দেবে তুমি তাকে। তোমার স্ত্রী তাকে জন্ম দিতে গিয়েই মারা যাবে। আর তুমি… তুমি এখন যাবে আমার সঙ্গে। তোমার অনাথ সন্তান হবে একটা বৈপ্লবিক এক্সপেরিমেন্টের প্রথম গিনিপিগ— যে এক্সপেরিমেন্ট ভবিষ্যতে মানুষকে অনেক কম পরিমাণ অক্সিজেনেও বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে।”
–“আমি কোথাও যাবো না আপনার সঙ্গে। আমার সন্তানকে ফেলে…”
–“যেতে তোমাকে হবেই। কারণ ওটাই তোমার নিয়তি। তবে চিন্তা করো না… অনেক কিছু শিখবে তুমি। অনেক কিছু জানবে। পুষিয়ে যাবে তোমার।”
–“এক মিনিট এক মিনিট! নিয়ে যাবেনটা কীভাবে আমাকে? আমি তো সাইকিক পাওয়ার দিয়ে টাইম ট্রাভেল করতে পারি না…?”
–“একটা চেয়ার নিয়ে এসো।”
–“মানে?”
–“প্রশ্ন করো না। যা বলছি সেটা করো। … হুম, এবার খাটের ওপর রাখো ওটাকে। … এইবার, হাঁটু গেড়ে বসো। খাটেই। সিলিঙের দিকে তাকাও। কিছু দেখতে পাচ্ছো?”
–“একটা নীল আলোর স্ল্যাশ।”
–“ওটার ওপর কনসেনট্রেট করো।”
আলোর রেখাটা বড়ো হচ্ছে আস্তে আস্তে, নীল দেখতে পায়। সেদিক থেকে চোখ না সরিয়েই প্রশ্ন করে, “বুঝতেই পারছি একটা পোর্টাল খুলছে। কিন্তু ওখানে কেন?”
–“বিষয়টা পুরোপুরি আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, তাই। তুমি যখন আমার জায়গায় থাকবে, তুমি অনেকটা বেটার করতে পারবে।”
–“আপনি এত বছরেও কেন পারেননি?”
–“আমাকে অন্য লড়াই লড়তে হচ্ছিল। যদি সেটা জিততে পারতাম হয়তো এই চক্রটা ভেঙে দেওয়া যেত।”
–“আমাকে পরিবেশ সচেতন করে তোলার লড়াই, তাই তো? যাতে আমি ভবিষ্যতে নিউক্লিয়ার অ্যাপোক্যালিপ্সটা আটকাতে সাহায্য করতে পারি…?”
–“হ্যাঁ! কিন্তু…”
–“কিন্তু আর সব মানুষের মতো ইমিডিয়েট স্বস্তিটাই আমার কাছে বেশি প্রাধান্য পেল। তাই একটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে পর্যন্ত স্ট্যান্স নিতে পারলাম না। পৃথিবীর কোর্স অব অ্যাকশন পালটানো তো অনেক পরের কথা।”
–“হয়তো আমারই চেষ্টায় কোনো ত্রুটি ছিল।”
–“না, আপনার চেষ্টায় কীসের ত্রুটি? আপনি বুঝতে পারছেন না, যা ঘটার ছিল, তাই ঘটছে…?”
–“হ্যাঁ… তোমার জায়গায় থেকে একসময় এই কথা আমিও ভেবেছিলাম বটে। তবু হাতে ক্ষমতা পাওয়ার পর আশা ছাড়তে পারিনি। ভবিষ্যৎটা তুমি এখনো দেখোনি, নীল। তোমাকে না দেখাতে হলেই আমি সবচেয়ে খুশি হতাম, কিন্তু… ওই ভবিষ্যৎ দেখে অতি বড় নিয়তিবাদীরও মাথার ভেতর সবকিছু ওলটপালট হয়ে যেতে বাধ্য।”
কথাগুলো ক্রমেই ভ্রমরের গুঞ্জনের মতো অস্পষ্ট হয়ে আসছে কানের মধ্যে। নীল ফাটলটা বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে। তার থেকে একটা উজ্জ্বল আলো বেরিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে নীলের। ক্রমে সেখান থেকে নেমে আসছে একটা আলোর তৈরি সিঁড়ি।
চেয়ারের ওপর একটা পা রেখে, জানলা দিয়ে একবার বাইরে তাকায় নীল। একটা হালকা হাসির আভাস খেলে যায় তার মুখে।…
Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, মোহনা দেবরায়, ষষ্ঠ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা