ফোন আসবে…
লেখক: সায়নী ঘোষ
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
ঝকঝকে একটা সকাল। অদ্রিজা ঝট করে কুর্তির ওপর একটা ওড়না জড়িয়েই বেরিয়ে পড়ল। লামহাট্টার পাহাড়ি শ্যাওলা পড়া সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে একবার ফোনটা চেক করে নিল। না, আর কোনও মেসেজ আসেনি। নিশ্চিন্ত হল। সাইকেলটা টানতে টানতে হটাৎই ফোনটা বেজে উঠল। শুভমের এই তাড়া দেওয়ার অভ্যাসটা আর গেল না। কিন্তু আজ সত্যিই একটা কারণ আছে। তা বলে আধ ঘণ্টার পথ ১০ মিনিটে কী করে যাবে ও। রাস্তা ঝাঁট দেওয়া সবে শুরু হয়েছে। শুভম যেটা বলতে চাইছে সেটা হল ওর কাছে কিছুদিন ধরে অদ্ভুত কিছু ফোন আসছে। অদ্রিজা বলেছিল এতে আর অদ্ভুতের কী আছে! করছে হয়তো কেউ মজা করে। কিন্তু কেউ নয়, অনেকেই করছে। তারা আবার ওর খুব চেনা। নিয়মিত কথা হয় তাদের সঙ্গে। বিস্ফারিত দুটো চোখ কপালে উঠে গেছিল অদ্রিজার। যেমন টাব্বুদা নাকি ফোন করেছিল। টাব্বুদাকে অদ্রিজাও ভালো চেনে। এই তো সেদিন ওদের বাংলোয় পাত পেড়ে খেয়ে এল। চার বছর আগে টাব্বুদারা সবাই মিলে নাকি গোয়া গেছিল। গেছিল তো গেছিল তার সঙ্গে ফোনের কী সম্পর্ক। শুভম বলেছিল ওখানেই তো সম্পর্ক। শুভমকে গোয়ায় পৌঁছে ফোন করার কথা ছিল। কারণ সেবার সব ব্যবস্থা তো শুভমই করে দিয়েছিল। এই চার বছর পরে নাকি সেই ফোনটা এসেছে। সাইকেলটা রেখে গট গট করে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেল অদ্রিজা। শুভম সোফার ওপর বসে ডান পা-টা ক্রমাগত নেড়ে চলেছে। এটা ওর অভ্যাস। চোখ মেঝের দিকে। অদ্রিজা আসতেই ফোন করা হল টাব্বুদাকে। এরকম আশ্চর্য প্রশ্ন করবে বলেই অদ্রিজাকে ডেকে নিয়েছে। এ ছাড়া তো আর কোনও উপায়ও নেই ব্যাপারটা জানার।
—হ্যালো টাব্বুদা! জানো এবার না আমরা গোয়ায় যাব প্ল্যান করছি। তোমরা সেই…
—হ্যাঁ, তুইই তো প্ল্যান করে দিয়েছিলি।
—হ্যাঁ মানে… তুমি ওই হোটেলেই উঠেছিলে? যেটাতে আমি ঠিক করে দিয়েছিলাম?
—হ্যাঁ কেন উঠব না! কি বলতে চাইছিস বল তো?
—না না। আসলে তুমি গিয়ে ফোন করেছিলে কিনা মনে পড়ছে না তো! তাই! আসলে ফোন নম্বরটা…
—ওহ্ তাই বল! হ্যাঁ তোকে মনে হয় ফোন করেছিলাম। ক্রস কানেকশন হয়ে গেছিল বোধহয়। রং নাম্বার এরকম কিছু বলেছিল বোধহয় ঠিক মনে পড়ছে না। কিন্তু তোকে না পেয়ে হোটেলের ম্যানেজারকে কল করেছিলাম মনে হয়। নাম্বারটা তোকে মেসেজ করে দিচ্ছি।
ব্যাস বলে সোফায় বসে পড়ল শুভম। কালকে টাব্বুদা যখন ফোনের ওপার থেকে বলছিল আমরা গোয়ায় পৌঁছে গেছি। হতচকিত হয়ে রং নাম্বার বলে কেটে দিয়েছিল। যা অনুভব করার পরে করেছিল। হৃদয়ে একটা আশা দপ করে জ্বলে উঠল। একটা অনন্য ঘটনা যখন ওর সঙ্গে ঘটেছে নিশ্চয়ই এর কোনও কারণ আছে। ‘বাবা’ বলে এক অস্ফুট শব্দ ভেসে এল শুভমের মুখ থেকে। অদ্রিজা অবাক চোখে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গেই ও সব বুঝতে পারল। ঢোক গি্লে চোখ বন্ধ করে সেই দিনটার কথা চিন্তা করল সে। শুভম আর ও একসঙ্গে অফিসেই ছিল সেদিন। চার বছর আগের কথা। সন্ধেবেলার দিকে হসপিটাল থেকে একটা ফোন আসে। শুভমের দুনিয়াটাই ওলটপালট হয়ে যায় সেদিন। সম্পূর্ণ একা হয়ে যায় ও। ১৩ জুলাই ঝড়বৃষ্টির একটা সন্ধে। শুভম হসপিটালে গিয়ে দেখে বাবার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। শেষ অবস্থা তখন। ওর দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে ছিলেন বাবা। কেন? কিছু একটা বলতে চেষ্টা করছিলেন কি? কারুর নাম বলতে চাইছিলেন কি? ওটা কি খুন ছিল? সমস্ত উত্তর পাবার আরেকটা সুযোগ ওর সামনে। শ্বাসের গতি দ্রুত হয়ে গেল শুভমের। পরে বাবার মোবাইলে দেখেছিল শেষ ফোনটা ওকেই করেছিলেন বাবা। কিন্তু সে ফোন তো ও পায়নি। সেদিন প্রচণ্ডআফসোস হয়েছিল শেষবার বাবার সঙ্গে কথা না বলতে পারার জন্য। হাউ হাউ করে কেঁদেছিল। সেই ফোনটা কি এবার আসবে? ও তো চাইলেই বাবাকে বাঁচিয়ে নিতে পারে। অতীতকে বদলে দিতে পারে। এও কি হয়? শরীর ঠান্ডা হয়ে এল। সবটা বুঝিয়ে বলল অদ্রিজাকে।
শুভম রাত তিনটের সময়ও ঘুমতে পারে না। ডক্টর রবিনসনের জন্যই কী এসব হচ্ছে! চার-সাড়ে চার বছর আগের একটা সকাল। হটাৎ ওদের অফিসে আসেন ডক্টর রবিনসন। অফিসের ম্যানেজার শুভম মিত্রর সঙ্গে কিছু আলাদা কথা বলতে চেয়েছিলেন। পাহাড়ি ছোট্ট একটা জনপদ লামহাট্টা। এখানকার নেটওয়ারকিং অফিসে বাইরের লোক দেখতে পাওয়া অনেকটাই অদ্ভুত। আরও অদ্ভুত ছিল ওঁর প্রস্তাব। যেটা গোপনীয় ছিল। লামহাট্টায় একটা মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের কাজ। ওপর থেকে কথা বলেই তিনি এসেছিলেন। তার সব কথা শোনার নির্দেশও এসেছিল। শুভমের কোম্পানির একটা বড় মাপের শেয়ার তিনি কিনে নিয়েছেন। কিন্তু তার এই লামহাট্টার মতো জায়গায় হটাৎ টাওয়ার বসানোর ইচ্ছে হল কেন? চোখ কপালে উঠেছিল শুভমের। কানাঘুষো শোনা গেছিল বেশ অনেক বছর ধরেই সাহেব এখানে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন করার উপায় ছিল না। জায়গা নির্বাচন করেছিলেন রবিনসন নিজেই। কিন্তু পুরো কাজটাই সম্পূর্ণ ধোঁয়াশায় করতে হয়নি শুভমকে। একমাত্র শুভমকেই কিছুটা হলেও জানাতে হয়েছিল। শুভমের এখনও মনে আছে তখন টাওয়ার বসানোর কাজ শেষ। একদিন ভোর সকালে টাওয়ারের কাছে ডেকে পাঠালেন সাহেব। শুভম ততদিনে ওঁর বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠেছে। টাওয়ারের ঠিক পাশেই জঙ্গল, অনুচ্চ পাহাড়। সেই পাহাড়ের টিলার ওপর ফাটলের মত একটা সুড়ঙ্গ। খুব সরু। সেটা নীচের দিকে খুলেছে। স্পষ্ট আলো দেখা যাচ্ছে, পরিষ্কার। নিজের ফাউন্টেন পেনটা রবিনসন ওই সুড়ঙ্গ দিয়ে ফেলে দিলেন। কিন্তু অবাক কাণ্ড! সেটা নীচ দিয়ে বেরিয়ে এল না। লোকটা বলেছিল তার যন্ত্রপাতির ধারণা এটা একটা ওয়ার্মহোল। পরে শুভমের কাছে সিম ক্লোনিংয়ের ব্যাপারেও জানতে চান। অনেক টাকার বিনিময়ে বেআইনিভাবে সিম ক্লোন করা হয়। এসব কেন হচ্ছে কী জন্য হচ্ছে কিছুই জানতে চায়নি শুভম। শুভমের সিম-ই ক্লোন করতে বলেন রবিনসন। আর সেই সিমের সঙ্গে কানেক্ট করা হয় টাওয়ারটাকে। সিমটা সিগন্যাল রিসিভ করছে দেখে রবিনসনের আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে কী চিৎকার! তবে কি কোনও সম্পর্ক আছে এই ফোনের সঙ্গে? মনে পড়তেই হুঁশ ফিরল শুভমের। বাবার কথা চিন্তা করতে করতে শুতে গেল সেদিন।
পরের কয়েকটা দিন খাওয়াদাওয়া ঘুম সব বন্ধ। টাব্বুদার গোয়া ট্রিপের ডেটটা জানতে ওরা পৌঁছে গেল ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে। মনে তো আছে গরমকালে। কিন্তু মাস আর ডেটটা ঠিক মনে নেই। সমীরবাবু সুদূর ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। এঁকে বলেই গোয়া ট্রিপটা প্ল্যান করে দিয়েছিল শুভম। অনেকবারই এসেছে এই অফিসে। শুভম প্রচুর বেড়াতে ভালোবাসত। বাবার সঙ্গেই যেত। বাবা চলে যাবার পর সেরকম কোথাও যায় না।
—ওহ শুভম বাবু যে! এতদিন পরে। বসুন বসুন।
—একটা হেল্প দরকার ছিল সমীরদা।
—কী? বলুনই না, দেখি যদি করতে পারি।
—আপনার মনে আছে আমি ২০১৫ তে একটা বুকিং করেছিলাম আমার এক দাদার জন্য…
—হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে আছে।
—একটু যদি ডেটটা বলেন। মানে প্রচণ্ডই দরকার দাদা। দাদা, দয়া করে যদি একটু…
—আরে এত কিন্তু কিন্তু করছেন কেন? এতে আর কী আছে। আপনার দাদার নামটা বলুন?
—তথাগত সেন।
—এই তো তথাগত সেন… ১৪ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত বুকিং ছিল।
—১৪ মে!! দু-দিন আগে যেদিন ফোনটা এসেছিল সেটাও তো ১৪ মে ছিল! মানে ঠিক চার বছর পর আসছে ফোনগুলো। মানে আর দু-মাস! আর দু-মাস পরেই বাবার মৃত্যুদিনের দিন। আর সেদিনই আবার একটা ফোন আসবে। সেই ফোনটা।
সেদিনই দুপুরে হঠাৎ মনে হল এত আশা যে জমছে উড়ে যাবে না তো ধোঁয়ার মতো। আরও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন ওর। বিনুদার কাছে নিশ্চয়ই রবিনসনের নাম্বার থাকবে। ফোন করতে বিনুদা একটু চমকে উঠল ঠিকই কিন্তু নাম্বারটা দিয়ে দিল। শুভমের দায়িত্ব ছিল প্রতি মাসে গিয়ে জায়গাটা দেখে আসা সিগন্যালটা পাওয়া যায় কিনা। রবিনসন বছর দুয়েক পর আশাহত হয়ে ইংল্যান্ড ফিরে যান। আর তেমন যোগাযোগ হয়নি। ফোন করতে অপর প্রান্তের একটা ভারী হ্যালো শোনা গেল। শুভম সবটা বুঝিয়ে বলল ওঁকে। বলল কিছুদিন আগে শুভম ওখানেই হঠাৎই প্রথম ফোনটা পেয়েছিল। ও ভাবেইনি এরকম কিছু হতে পারে তাই জানায়নি। উনি প্রচণ্ড আনন্দিত হয়ে উঠলেন। ওঁর প্রয়োগ সফল। শুভম ১৩ জুলাই এর কথাটাও জানাল ওঁকে। উনি বললেনও যদি আগের ফোনগুলো এসে থাকে এটাও অবশ্যই আসবে। শেষে ও বলল—
—আপনি দেশে আসুন। অবশ্যই এটা আপনার আবিষ্কার। কিন্তু শুধু ১৩ জুলাই পর্যন্ত সময় আমার দরকার। তারপর এ ফোন আর সিমটা আমি অবশ্যই আপনাকে দিয়ে দেব।
শুভমের বাবা অরুন মিত্র সরকারি কর্মচারী ছিলেন। সম্পূর্ণ একা হাতে ওকে মানুষ করেছিলেন। কাজের চাপে ওকে সময় দিতে পারতেন না ছোটবেলার দিকটায়। কিন্তু পরে, শুভম লামহাট্টায় চাকরি পাবার পর অরুনবাবুও যখন রিটায়ার্ড, তখন ওদের সম্পর্কটা অনেক বদলে গেছিল। ওরা বছরে চার-পাঁচবার বেড়াতে যেত। অরুনবাবুই শুভমের একমাত্র সম্বল। ওর সবটা জুড়ে শুধু বাবা। এই তো ঠিক অরুনবাবু চলে যাওয়ার আগের মাসেই ওরা বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর বেড়াতে গিয়েছিল। অরুনবাবু খুবই আনন্দ পেয়েছিলেন। অনেকদিন ধরে চাইছিলেন এখানে আসতে। শুভমই সময় পাচ্ছিল না। জায়গাটা অরুনবাবুর স্মৃতির অনেকটা জুড়ে রয়েছে শুভম জানত। অনেক বছর এখানে চাকরি করতেন অরুনবাবু। পরে বদলি হয়ে যান। তখন শুভম খুব ছোট। সেই কোয়ার্টারটা বাইরে থেকে দেখে এসেছিলেন। শুভমকে না বলেই হঠাৎ করে দেখতে চলে গেছিলেন। সকালবেলা উঠে হোটেলে কোথাও বাবাকে খুঁজে না পেয়ে খুব চিন্তায় পড়েছিল শুভম। দুপুরের দিকে নিজেই ফিরে এসেছিলেন। শ্রান্ত একটা দৃষ্টি দু চোখে শুভম লক্ষ করেছিল। ও জানে এখানে ওর মায়ের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সেদিন জয়চণ্ডী পাহাড়ে এসেও দেখেছিল অরুনবাবুর চোখটা চিকচিক করে উঠেছে। পাহাড়ের পাশে একটা ঝুপড়ি দোকানে দুজনে জমিয়ে মোটা চালের ভাত আর ডিমের ঝোল খেয়েছিল। অন্ধকার নেমে আসতে ওরা গাড়ি করে ফিরে আসে। সেই শেষ একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া ওদের। এর পর কিছুদিনের জন্য শুভম অফিসের কাজে দিল্লী গেছিল। আর সেরম কথা হয়নি বাবার সঙ্গে।
-*-
এই ক-দিনে অদ্রিজা ওর সহকর্মীর থেকে আরও বেশি কিছু হয়ে উঠেছে। অদ্রিজা নিজেই চলে এসেছে ওর কাছে থাকতে। সাহস জোগাতে। ওই দিনটার চিন্তা শুভমকে পাগল করে দিচ্ছে। একটা ঠেকনার খুব প্রয়োজন ওর। শুভম জিজ্ঞেস করেছিল কিরে তুই বাড়ি যাবি না?
—না তোর বাড়ি জবর দখল করে নেব ভাবছি।
চাইলে পুলিশে জানা। অদ্রিজার এই উত্তরে মৃদু হেসেছিল শুভম। অদ্রিজার হাতের আলু সেদ্ধ ভাত পরম তৃপ্তিতে খেত দুজনে। আর হোম ডেলিভারির খাবার খেতে হত না শুভমকে। একটা আশা বুকে তিলে তিলে বড় হচ্ছে ওর। দিনটা যত এগিয়ে আসছে এক অনাবিল প্রত্যাশা একটা অযাচিত আনন্দ ওকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে। ও অনেক ভেবেছে এই সুযোগ তো ওর পাবার কথা ছিল না। এত চিন্তার কী আছে ওর। সব ভালোই হবে। ও করবে। কী হবে ও জানে না। কিন্তু যদি ফোনটা আসে ও বাবাকে ঠিক বাঁচিয়ে নেবে। মাঝে আরও দু-একটা ২০১৫ সালের ফোন এসেছিল। সব ফোন না, বেছে বেছে কিছু কিছু।
জুলাই মাস পড়ে গেল। হপ্তাটা আর কাটতেই চাইছে না। ১২ তারিখ রাতে সারা রাত ওরা টাওয়ারের সামনেই একটা তাঁবু খাটিয়ে বসে রইল। অদ্রিজা মাঝে মাঝে কফি করে আনছে। জ্বলজ্বল করছে হাজার হাজার তারা। আকাশের দিকে তাকিয়ে শুভম মাথাটা অদ্রিজার কাঁধের ওপর হেলিয়ে দিল। রাতটা এইভাবেই কেটে গেল। ভোর সকালে তারা খসা দেখল শুভম। মানে কি মানে না তখন আর এত কিছু মনে ছিল না ওর। বাবাকে চেয়েই ফেলল চোখ বন্ধ করে।
ঠিক বিকেল ৪টের সময় ফোনটা এল।
—হ্যালো বাবু।
—হ্যাঁ বাবা, বলছি…
—শোন না কাল তোর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। সারাদিন ওর কথা ভেবেছি। ভেবেছি তোকে একটা কথা জানানো দরকার।
—কোন কথা নয় বাবা। তুমি বাড়ি থেকে বেরিয়ো না। বেরিয়ো না প্লিজ…
—আমি আজ তোকে বলবই।। মহুয়া মানে তোর মা আমাদেরকে ছেড়ে এক ব্যবসায়ীর অরন্য সেনের সঙ্গে চলে যাবে ঠিক করেছিল সেদিন। তুই তখন ৬ বছরের। আমি সবটা জেনে ফেলেছিলাম। মহুয়া অসুখে মারা যায়নি। আমিই ওকে স্লিপিং পিলগুলো দিয়েছিলাম। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমিই দিয়েছিলাম। এতদিন কথাটা বুকের ভিতর জমিয়ে রেখে আমি বাঁচতে পারছিলাম না রে। মুখোমুখি তোকে এই কথাগুলো বলার সাহস আমার নেই। না আর কোনওদিন তোর মুখোমুখি হতে পারব।
শুভম আর একটাও কথা বলতে পারল না। ওর গলার সমস্ত স্বর যেন কে গিলে খেয়ে নিয়েছে। কী করবে কী বলবে কিচ্ছু মাথায় এল না। উথালপাথাল হতে থাকল অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যতের প্রত্যেকটা মুহূর্ত। ওর বাবা এরপরেও অনেকক্ষণ ফোনটা ধরে ছিলেন। ওর মনে পড়ে যাচ্ছিল মাকে। যাকে ও সেভাবে কখনও পায়নি। ছোটবেলায় খুব খারাপ লাগত যখন অন্যদের মা-রা তাদের জন্য টিফিন বানিয়ে দিত। আর ও খেত কেনা কেক আর মিষ্টি। না ও আর নিজেকে সামলাতে পারছে না, শ্বাস ঘন হয়ে আসছে ওর। ফোনের ওই প্রান্তে বাবা এখনও রয়েছেন। ও কিছু বলতেই পারল না। নিজে হাতে ফোনটা কেটে দিল।
Tags: কল্পবিজ্ঞান, গল্প, ষষ্ঠ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, সায়নী ঘোষ