অদ্রীশ বর্ধনের সঙ্গে কথোপকথন
লেখক: কল্পবিশ্ব
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)
অদ্রীশ বর্ধনকে নিয়ে সংখ্যা, অথচ তাঁর কোনও সাক্ষাৎকার থাকবে না, সেটা হতে পারে না। আমাদের সম্পাদকীয় বিভাগের আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে একথা। কিন্তু ওঁর নতুন কোনও সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব নয়। শ্রবণশক্তি প্রায় হারিয়েছেন। স্মৃতিও প্রায় মলিন। একই কথা বারবার বলেন। শারীরিক ভাবে খুবই ভেঙে পড়েছেন অশীতিপর অদ্রীশ বর্ধন। তাই তাঁকে আর জ্বালাতন না করাই ঠিক হবে বলে ঠিক করলাম সবাই। বরং হাতের কাছে থাকা পুরোনো সাক্ষাৎকারগুলিকে একসঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে রাখা হল এই সংখ্যায়।
অদ্রীশ বর্ধন : এটা কী বাবা?
আপনার কথাগুলো রেকর্ড করে নিচ্ছি।
অদ্রীশ বর্ধন : এইটুকু টেপ রেকর্ডার! আহ্! কোথায় পৃথিবী চলেছে। ক্রমশ অণু থেকে পরমাণু হয়েই যাচ্ছে।
আপনার প্রফেসর নাটবল্টু চক্র যা করে তার তুলনায় এ তো কিছুই না।
অদ্রীশ বর্ধন : আমরা যা ভিজুয়ালাইজ করতে পেরেছিলাম বর্তমান বিজ্ঞান তাকে টপকে অনেক দূর চলে যাচ্ছে। আমি বউমাকে সেদিন বলছিলাম কল্পবিজ্ঞান একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বর্তমান বিজ্ঞান তাকেও টপকে চলে যাচ্ছে। যেমন – ইন্টারনেট।
ছোটবেলা থেকে আপনার লেখা এত পড়েছি! গোয়েন্দা গল্প থেকে শুরু করে কল্পবিজ্ঞান, ভয়ের…
অদ্রীশ বর্ধন : আমি কিন্তু লিখতাম মনের আনন্দে। কারোর পড়ে ভালো লাগবে কখনও ভাবিনি। দেওয়াল পত্রিকা নিয়ে আমার সাহিত্য সাধনা শুরু হয়েছিল। প্রথম দিকে আমি ছবি আঁকতাম, গল্পও লিখতাম। প্রথম লেখা ভূতের গল্পটার নাম ছিল ‘পোড়োবাড়ির খাঁড়া’। ওটাই আমার জীবনের প্রথম গল্প। প্রথম ছাপা গল্প ‘রহস্য’ পত্রিকায়। ‘কোণের দোকান’। সে রহস্য পত্রিকাও নেই, তার সম্পাদকও নেই। শুধু আমি আছি।
রহস্য পত্রিকায় আপনার লেখা পড়ে তো তখন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা করা হত।
অদ্রীশ বর্ধন : শরদিন্দুবাবু আমায় খুব ভালবাসতেন। উনি আমাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিলেন। ওরকম ভাষা, ওরকম ভাব, ওরকম সংযম এটা যে কোনও গল্পে আলাদা মাত্রা যোগ করেছিল। ‘কালো মোরগ’ গল্পে ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন! আর একটা গল্প, ঠিক নামটা মনে পড়ছে না। বোধহয় ‘ছবি’। যেটা ‘রোমাঞ্চ’তে বেরিয়েছিল। গল্পটা উনি অনায়াসেই কল্পবিজ্ঞানে নিয়ে যেতে পারতেন। ফ্যান্টাসির রাজ্য আর কল্পবিজ্ঞানের দোরগোড়ায় গিয়ে উনি গল্পটাকে শেষ করে দিলেন। আমি বলেছিলাম আপনি আরেকটু এগোলে তো ওটা অসাধারণ সায়েন্স ফিকশন হত। গল্পটা অসাধারণ। তোমরা হয়তো পড়নি। যাহ্! ‘তোমরা’ বেরিয়ে গেল! (হাসি)
সবাই : না না! আপনি ‘তুমি’ই বলুন।
অদ্রীশ বর্ধন : কৈশোরের ধর্মই হচ্ছে প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়ে যাওয়া, যেদিকে বাধা সেদিকেই যেতে হবে। আমারও ঠিক তাই ছিল। যেখানে বাধা সেটাকে টপকে টপকে যাব। ‘কল্পবিজ্ঞান’— এই প্রতিশব্দটাই কারও মাথায় ছিল না। আমিই ওটা তৈরি করি। আসলে সায়েন্স ফিকশনের কোনও যোগ্য প্রতিশব্দ বাংলায় ছিল না। আমি শব্দটাকে উলটে দিলাম। আজকে সব জায়গায় কল্পবিজ্ঞানই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ইতিহাসটা কেউ জানে না। ১৯৬৩ সালে আমি ‘আশ্চর্য’ বার করলাম। সিমপ্লি আউট অব ম্যাডনেস। অনেক ভেবেচিন্তে ‘আশ্চর্য’ নামটা মাথা থেকে বের করেছিলাম।
আচ্ছা, এটা কি অনেক দিন ধরে ভেবেছিলেন যে পত্রিকাটা করব? হঠাৎ করে কল্পবিজ্ঞানের পত্রিকা করার কথা মাথায় এল কেন?
অদ্রীশ বর্ধন : ওই যে… ম্যাডনেস! বাংলায় এটা নেই। তাই ওটাই করব বলে ঠিক করি। আমি জানতাম সৎ সাহিত্য লেখার মতো ক্ষমতা আমার নেই। আমি নিশ্চয়ই প্রেমেন্দ্র মিত্র হতে পারব না। আমি শরৎ চট্টোপাধ্যায় হতে পারব না। আমার সে ক্ষমতা নেই। যাঁদের আছে তাঁরা লিখুন। আমি কল্পবিজ্ঞান, ভূতের গল্প, গোয়েন্দা গল্প এগুলো নিয়ে মেতে থাকতে পারি। এগুলো অন্ত্যজ সাহিত্য তো, বাচ্চাকাচ্চারা পড়বে। ওরা আমার ভুল ধরতে পারবে না। ( হাসি ) পরে অবশ্য দেখলাম ‘দেশ’ ও অন্যান্য বড় বড় পত্রিকায় আলোচনা বেরোচ্ছে, প্রশংসাও পাচ্ছি।
আপনি যদি আশ্চর্য পত্রিকাটা না করতেন তাহলে বাংলা সায়েন্স ফিকশন যে কোথায় থাকত। প্ল্যাটফর্মটা তো আপনিই দিয়েছিলেন।
অদ্রীশ বর্ধন : একটা ডিভাইন ফোর্স আমাকে দিয়ে করিয়েছে। না হলে করলাম কী করে। তার আগে তো আমি চাকরি করতাম। সেই সুবাদে আমায় ভারতবর্ষ ঘুরতে হয়েছে।
আপনি চোদ্দোবার চাকরি ছেড়েছেন?
অদ্রীশ বর্ধন : হ্যাঁ। আসলে কী জানো, আমি ভীষণ অভিমানী। ভীষণ সেন্টিমেন্টাল , ইমোশনাল। এগুলো না থাকলে ক্রিয়েশন করা যায় না। আমি চাকরির পরোয়া করতাম না। আমি বিশ্বাস করতাম যে কোনও ইন্টারভিউতেই সফল হবার ক্ষমতা আমার আছে।
যাই হোক, এইভাবেই দিন যাচ্ছিল। এর মধ্যে আচমকাই একদিন আরবসাগরে বসে বসে একটা গল্পের প্লট মাথায় এল। জীবনের প্রথম গোয়েন্দা গল্প। ‘প্রসাদ’ একটা গোয়েন্দা গল্পের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। আমি মেরিন ড্রাইভে বসে বসে সেখানে জমা দেবার জন্যই গল্পের প্লটটা ভাবলাম। তারপর লিখে পাঠিয়ে দিলাম। ‘আমার বান্ধবী সুনন্দা’। আমার প্রথম গোয়েন্দা গল্প। তা, গল্পটা প্রথম হয়ে গেল। কী আশ্চর্য! একটা গাঁজাখুরি গল্প প্রথম হয়ে গেল। (হাসি) যখন কলকাতায় এসে প্রসাদবাবুর সঙ্গে দেখা করলাম, উনি ড্রয়ার খুলে আমাকে এক গোছা টাকা দিলেন। গুনেও দেখলেন না কত টাকা দিচ্ছেন। ওটাই আমার জীবনের প্রথম পুরস্কার।
‘আশ্চর্য’–এর প্রথম প্রকাশ সম্বন্ধে কিছু বলুন।
অদ্রীশ বর্ধন : কী আর বলব! সে এক পাগলামির সময় ছিল। এতটাই পাগলামি ছিল, বাড়ির একতলায় প্রেস বসিয়ে ফেললাম। দুজন কমপোজিটরকে দিয়ে টাইপ কিনে ওখানে কমপোজ হত। ছাপাও হত। মাসে মাসে ‘আশ্চর্য’ বেরোতে লাগল। তবে ‘আশ্চর্য’ যে এতটা সমাদৃত হবে ভাবিনি।
ছদ্মনামে লিখতে হয়েছিল কেন?
অদ্রীশ বর্ধন : প্রেমেনদা (প্রেমেন্দ্র মিত্র) বলেছিলেন, ‘অদ্রীশ, সম্পাদকের নাম হিসাবে ছদ্মনাম দিয়ে দাও, তাহলে নিজের নামে অনেক লেখা লিখতে পারবে।’ তাই করলাম। সম্পাদিকের নাম দিলাম আকাশ সেন। যদিও তা নিয়ে পরে সমস্যা হয়েছিল। আমার জানা ছিল না ছদ্মনামে সম্পাদনা করা বেআইনি। এ জন্য আমাকে লালবাজার থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তৎকালীন ডিসি হেডকোয়ার্টার আমাকে ডেকে পাঠিয়ে প্রথমে খুব খোশগল্প করলেন। পরে আসল কথাটা পাড়লেন। জানিয়ে দিলেন, ছদ্মনামে পত্রিকা করা যায় না। তারপর থেকে আমার নামই যেত সম্পাদক হিসাবে। আসলে কাজটা যাতে ভালো হয়, কল্পবিজ্ঞান যাতে বাংলার পাঠকরা ভালোবাসেন, সেটাই ছিল আমার আসল উদ্দেশ্য। নাহলে খামোকা ছদ্মনামে এডিট করতে যাব কেন। আজকাল তো দেখি লোকে ম্যাগাজিন করতে গেলে প্রথমেই কীভাবে নিজের নামটা প্রজেক্ট করবে সেটাই সবার আগে ভাবে। আমার মধ্যে তেমন কোনও প্রবৃত্তি ছিল না।
আর সায়েন্স ফিকশন সিনে ক্লাব?
অদ্রীশ বর্ধন : সায়েন্স ফিকশনকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে, এই উদ্দেশ্যে আমি সায়েন্স ফিকশন সিনে ক্লাব খুললাম। মানিকদার সঙ্গে বসেই সব ঠিক হল।
উনিই তো সভাপতি ছিলেন?
অদ্রীশ বর্ধন : হ্যাঁ। ওনাকে বলেছিলাম যে কল্পবিজ্ঞানকে যদি ছড়িয়ে দিতে হয়, তাহলে একটা সিনে ক্লাব দরকার। উনি বললেন, হ্যাঁ খুব ভাল আইডিয়া। আমি বললাম আপনাকে প্রেসিডেন্ট হতে হবে। প্রেমেনদা ভাইস আর তুষারবাবু হবে পেট্রন। উনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন তুমি হবে সেক্রেটারি। আমি বললাম ঠিক আছে।
শুনেছি রেডিওতে মুখে মুখেই আপনারা একটি বারোয়ারি কাহিনি রচনা করেছিলেন।
অদ্রীশ বর্ধন : হ্যাঁ ওটাই রেডিওতে প্রথম কল্পবিজ্ঞান নিয়ে নাটক। ‘সবুজ মানুষ‘। মানিকদা প্রেমেনদা আমি আর দিলীপ রায়চৌধুরী এই চারজনে মিলে নাটকটা করেছিলাম। পরিকল্পনা করেছিলেন প্রেমেনদা। শুরুও করেছিলেন উনিই। পরের অংশটা লিখেছিলাম আমি। তৃতীয় অংশ দিলীপ রায়চৌধুরী। আর শেষ করেছিলেন মানিকদা। আকাশবাণীর সাহিত্য বাসরে গল্পটা পাঠ করা হয়েছিল। মনে আছে, সবাই হেরে গিয়েছিলাম মানিকদার অসামান্য কণ্ঠস্বরের কাছে। এক গ্লাস জল চেয়ে নিয়ে স্টুডিওতে ঢুকেছিলেন। রেকর্ডিং হয়ে যাওয়ার পরে প্লেব্যাক শুনে উপস্থিত সকলকে অভিভূত হয়ে বসে থাকতে হয়েছিল। মুখের কথায় এমন গভীর ধ্বনিময় চিত্রকল্প সৃষ্টি করেছিলেন মানিকদা যা কেবল ওঁর পক্ষেই সম্ভব।
‘আশ্চর্য’ থেকে ‘ফ্যান্টাস্টিক’… দুটি আলাদা পত্রিকা করলেন কেন?
অদ্রীশ বর্ধন : আসলে ‘আশ্চর্য’ যখন রমরমিয়ে চলছে, আমার জীবনে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল, যে সব কিছু বদলে গেল। ১৯৭০ সালে আমার বিয়ে হয়। ঠিক দু–বছর পরে আমি বিপত্নীক হই। আমার ছেলের বয়স তখন ১ বছর। ওই ১ বছরের শিশুকে মানুষ করব না অন্য কাজ করব! (অন্যমনস্ক) যাই হোক, মানিকদা আমায় বললেন তোমার জীবনের প্যাটার্ন পাল্টে গেছে অদ্রীশ। তুমি ‘আশ্চর্য‘ বন্ধ করে দাও। বন্ধ করে দেওয়ার কিছুদিন বাদে আবার মানিকদা, প্রেমেনদারাই বললেন এরকম করে তো চলবে না। তুমি আবার আর একটা কাগজ বার কর। তখন ‘ফ্যান্টাস্টিক’ বেরোল। ১৯৭৫–এর ১ সেপ্টেম্বর। মানিকদা বললেন শুধু পত্রিকা বের করলেই চলবে না। এগুলোকে পাবলিশও করতে হবে। ব্যাস পত্রিকার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল প্রকাশনা। বেরোতে লাগল একের পর এক বই।
বহু বিখ্যাত লেখকই তো লিখেছেন ‘ফ্যান্টাস্টিক’–এ?
অদ্রীশ বর্ধন : হ্যাঁ। মানিকদা–প্রেমেনদা–ক্ষিতীনদা এঁরা তো ছিলেনই। পরের জেনারেশনের সুনীল–শীর্ষেন্দু–সিরাজ, আরও অনেকেই লিখেছে। বিশেষ করে সুনীল তো খুবই ভক্ত ছিল ‘ফ্যান্টাস্টিক’–এর। কিন্তু ওকে দিয়ে লেখা বার করা (হাসি)… মনে আছে একবার আমাকে সামনে বসিয়েই গল্প লিখে দিল। আমাকে যেদিন গল্প দেওয়ার কথা, সেদিন ওর বাড়িতে যেতে স্বাতীকে বলল আমাকে চা দিতে। আমি চা খাচ্ছি, আর ও লিখছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গল্প এনে হাতে ধরিয়ে দিল। গল্পের নামটা এখনও মনে আছে। দুই বন্ধু। আরেকবার লেখা আনতে গিয়ে দেখি লিফট বন্ধ। ও বলেই রেখেছিল লিফট বন্ধ থাকলে আমি যেন হেঁটে না উঠি। কিন্তু আমার লেখা দরকার, আমি হেঁটেই আটতলায় উঠে গেছি। তাই দেখে সুনীল খুব বকল আমাকে। ‘কোনও মানে হয়? এতটা কেউ হেঁটে ওঠে?’ এ সব কথা কোনও দিনও ভুলব না।
লেখা আনতে আটতলায় হেঁটে ওঠার মতো ঘটনা নিশ্চয়ই অনেক ঘটিয়েছেন।
অদ্রীশ বর্ধন : হ্যাঁ, তা ঘটিয়েছি বটে। ‘আশ্চর্য’ তখন সবে বেরোচ্ছে। ভেসপো স্কুটার কলকাতায় সদ্য এসেছে। আমি সেই স্কুটার চালিয়ে এলাহাবাদে চলে গিয়েছিলাম। তবে লেখা আনতে নয়, পত্রিকার ডিস্ট্রিবিউশনের কাজে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, স্টেশনে স্টেশনে পত্রিকাকে ছড়িয়ে নিতে পারলে বিক্রি আরও বাড়বে। সেই জন্য খুব চেষ্টা করেছিলাম যাতে সমস্ত হুইলারগুলোতে ‘আশ্চর্য’ রাখে। হুইলারের কলকাতায় যে অফিস আছে, সেখানে গিয়ে পাত্তা পেলাম না। তখন স্কুটারে করে এলাহাবাদে চলে গেলাম। স্রেফ পাগলামি ছাড়া এ আর কী? তবে যাওয়াতে কাজ হয়েছিল। যে ভদ্রলোক ওখানকার দায়িত্বে, তিনি একজন বাঙালি। তিনি ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ‘আশ্চর্য’ সারা ভারতের স্টেশনে স্টেশনে ছড়িয়ে পড়েছিল।
আচ্ছা কল্পবিজ্ঞান কি বিজ্ঞানের সবটাকে ছুঁতে পেরেছে? নাকি কিছু অধরা রয়ে গেছে?
অদ্রীশ বর্ধন : কল্পবিজ্ঞানের বাইরেও একটা জগৎ আছে। সেখানে বিজ্ঞানকে ধরা যায় না। যেমন – বিগ ব্যাং। বিগ ব্যাং–এর পরিচয় জানার জন্য এখনও প্রচেষ্টা চলছে। আমায় আনন্দবাজারে রিভিউ করতে বলেছিল। আমি একটাই কথা বলেছিলাম। বিগব্যাং–এর আগে কী ছিল, সেটা কি কেউ বলতে পারবে? এই মহাবিস্ফোরণটা কেন হল? ব্রহ্মের স্বরূপ কী? কেউ কি বলতে পেরেছেন? শ্রীরামকৃষ্ণ দু‘বার সমাধিস্থ হয়ে গেছিলেন। সমাধিস্থ হবার পর তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি ব্যক্ত করতে পারেননি। সমাধিস্থ হয়ে সেই অনন্তের রূপ তিনি দর্শন করেছিলেন। কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে অনন্তকে ধরতে। যেমন, এইচপি লাভক্র্যাফট।
লাভক্র্যাফট বাংলায় সেভাবে পঠিত নয়। বলতে গেলে আপনিই তাঁকে বাঙালি পাঠকদের কাছে নিয়ে এলেন।
অদ্রীশ বর্ধন : এইচ পি লাভক্র্যাফট একজন ক্ষণজন্মা লেখক। বেশিদিন বাঁচেননি। কিন্তু অসাধারণ সব লেখা লিখে গেছেন। আমি যখন লাভক্র্যাফট অনুবাদ করেছি তখন ওঁর পুরো কাজ কোথাও পাওয়া যেত না। আজকাল অবশ্য শুনি ইন্টারনেটে সব পাওয়া যায়। যাই হোক, আমি অনেক কষ্ট করে জোগাড় করেছিলাম ওঁর রচনাবলীর কমপ্লিট সেট। তারপর খুব মন দিয়ে পড়ার পরে অনুবাদের কাজে হাত দিই। ওঁর বহু লেখাই আমি অনুবাদ করেছি। তবে যে সব জায়গায় উনি খুব বেশী পোয়েটিক ও ফিলজফিক্যাল হয়ে গেছেন সে সব অংশ আমি এডিট করেছি। কারণ আমাকে সব সময় আমার পাঠকদের কথা মাথায় রেখে লিখতে হয়েছে। সে কারণে আমি কোনান ডয়েল বা পো–কেও এডিট করেছি। বিনয়ের সঙ্গে জানাই, পাঠক আমার সে সব কাজ পছন্দই করেছেন।
আপনার জুল ভের্ন অনুবাদ নিয়ে একটু জানতে চাই। বিপুল ব্যস্ত জীবনে কী করে পারলেন ওই বিপুল রচনাকে সম্পূর্ণ অনুবাদ করতে?
অদ্রীশ বর্ধন : জুল ভের্ন লেখাটা একটা অলৌকিক ঘটনা। হ্যাঁ অলৌকিকই বলব। স্ত্রী বিয়োগের পরপর আমি যখন দাদার বাড়িতে ছিলাম, রাত আড়াইটেতে ঘুম ভেঙে যেত। আসলে ঠিক আড়াইটেতেই আমার স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন। এখনও আড়াইটের সময় আমার ঘুম ভেঙে যায়। আর ঘুমোতে পারি না। ছটফট করি। উঠে লিখতে বসি। তখনও তাই করতাম।পাশে এক বছরের ছোট ছেলে ঘুমিয়ে কাদা। আমি তখন বাইরের ঘরে টেবিলে বসে জুল ভের্ন লিখতে শুরু করলাম। তারপর লিখতে লিখতে কখন যে ভোর হয়ে যেত! এই ভাবে লিখতে লিখতে জুল ভের্নের পুরো রচনাবলীই অনুবাদ করে ফেলেছিলাম। পরে সেই বই ন’টা খন্ডে বেরিয়েছিল। পাঠক খুবই পছন্দ করেছিল। বই বেরোনোর আগে ফ্রেঞ্চ এমব্যাসির এক ভদ্রলোকের কাছে আমি জেনে নিয়েছিলাম ‘জুল ভের্ন’ আসল উচ্চারণ কী হবে? উনিই আমাকে বলেন, ‘জুলেস ভার্নে নয় বা জুলে ভার্নেও নয়, আসল উচ্চারণ হবে জুল ভের্ন।’ পরে বইমেলায় এসে ওই ভদ্রলোক আমার অনুবাদের ন’টা খণ্ডই কিনে নিয়ে গেছিলেন প্যারিস লাইব্রেরির জন্যে।
এডগার অ্যালান পো রচনা সংগ্রহের পেছনের জ্যাকেটে লেখা ছিল ‘অদৃশ্য দুনিয়ার অলৌকিক বিভীষিকাকে উনি যেন দেখতে পেতেন। অতীন্দ্রিয় আতঙ্ককে উপলব্ধি করতে পারতেন। আপনিও তো হরর কাহিনি লিখেছেন। আপনার নিজের লেখার সময় এমন কোনও অনুভূতি, বলা যায় আনক্যানি ফিলিংস হয়েছে?
অদ্রীশ বর্ধন : অফ কোর্স। এক কথায় বলব, আমার মনে হয় কে যেন আমার হাত ধরে লিখিয়ে দিচ্ছে! হাতটা যেন কেউ চেপে ধরে আর কলম আপনি চলে যায়। এমন শব্দ তখন মাথার মধ্যে আসে যেটা পরে আসে না। এক কথায় আমি তখন আবিষ্ট হয়ে যাই। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি।
আলোচনা যখন এইদিকে বাঁক নিল, তখন আরও একটু শুনতে চাই। আত্মা কি সত্যিই আছে? তারা দেখা দেয়? সত্যি সত্যি?
অদ্রীশ বর্ধন : দেয়। ছায়ার মতো। আমি দেখেছি বহুবার। তবে সেরকম মিডিয়ামের চোখ থাকলে তবেই দেখতে পাওয়া যাবে। এই তত্ত্বটাকে নিয়েই তো শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সূক্ষ্মদেহের উপর উপর একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন। নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
বাংলায় অনেক ভূত আবার ভয় দেখালে ভয় না পেলে অঙ্ক করে দেয়, ইংরেজি ট্রান্সলেশন করে দেয়। কেমন লাগে ভূতের এই কমিক চিত্রায়ন? অবন ঠাকুর, লীলা মজুমদার বা শীর্ষেন্দুর মিষ্টি ভূতের গল্প কেমন লাগে?
অদ্রীশ বর্ধন : লীলাদি একটু মজা করতে ভালবাসতেন। কিন্তু আমি চাই রোমহর্ষক ভূতের গল্প।পড়ে বেশ গায়ের লোম খাড়া হবে। মাথার চুল খাড়া হয়ে উঠবে। মানিকদাও এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন। উনিও বিশ্বাস করতেন ছোটদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন আছে। আমি নিজে ভয় পেতে ভালবাসি, ভয় দেখাতে ভালবাসি।
সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে আরও কিছু বলুন। অত বড় ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আপনি এসেছিলেন… তাঁর সঙ্গে প্রথম আলাপের দিনটা মনে আছে?
অদ্রীশ বর্ধন : থাকবে না? সেইদিনের কথা জীবনেও ভুলব না। তখন থাকতেন তিন নম্বর লেক টেম্পল রোডে। সারাদিন ধরেই খুব বৃষ্টি পড়ছিল। বিকেলের দিকে ফোন করলাম। নিজের পরিচয় দিয়ে জানালাম, ‘একবার আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। যদি একটু সময় দেন।’ উনি ওঁর সেই বিখ্যাত ব্যারিটোন ভয়েসে বললেন, ‘চলে এলেই তো হয়।’ আমি তো অবাক। সত্যি বলতে কি অত বড় মাপের একজন মানুষ যে এত সহজ সরল হতে পারেন আমার ধারণা ছিল না। তো, গেলাম ওঁর কাছে। দেখলাম একটা সোফায় উনি বসে আছেন সামনের তক্তাপোষের ওপরে পা তুলে। তক্তপোষ টা দেশ বিদেশের পত্রপত্রিকায় ভর্তি। পরে জেনেছি সব উনি পড়তেন। কিচ্ছু ফেলতে দিতেন না। যাই হোক, আমাকে প্রথমে ভালো করে স্টাডি করলেন। আসলে বুঝে নিতে চাইছেন আমি মানুষটা আদতে কেমন, ধান্দাবাজ কিনা। নখ দিয়ে মুখের আঁচিল খুটছেন আর আমায় দেখছেন। বেশ খানিকক্ষণ দেখার পর জানতে চাইলেন আমার আসার উদ্দেশ্য। আমি সরাসরি বললাম, ‘আপনাকে সঙ্গে রেখে একটা ফিল্ম সোসাইটি করতে চাই, যাতে আশ্চর্য ম্যাগাজিনটা ভালো বিক্রি হয়।’ আকেবারে সরাসরিই প্রস্তাবটা দিলাম। উনি এককথায় রাজি। জানালেন এরই মধ্যে ‘আশ্চর্য’ পত্রিকা দেখেছেন। ওঁর ভালো লেগেছে। দারুণ দারুণ সব আইডিয়াও দিলেন। সেই থেকেই ওঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। আমার জন্য ওঁর বাড়িতে সবসময় উন্মুক্ত দ্বার। পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর প্রথম সায়েন্স ফিকশন সিনে ক্লাব প্রতিষ্ঠা হল। সে সব দিন সত্যিই ভোলার নয়। একদিকে ‘আশ্চর্য’ পত্রিকা রমরমিয়ে চলছে। অন্যদিকে সায়েন্স ফিকশন সিনে ক্লাব নিয়েও চলছে হইচই। অসাধারণ সব ছবি দেখানো হত সেই ক্লাবে।
সব ছবি কি সত্যজিৎ রায়ই নির্বাচন করতেন?
অদ্রীশ বর্ধন : অবশ্যই। আমি ছবি এনে ওঁকে সেই তালিকা দেখাতাম। উনি সেখান থেকে ফাইনাল সিলেকশন করে দিতেন। কত কষ্ট করে ছবি এনে দিতাম। আর উনি বেশির ভাগই বাদ দিয়ে দিতেন (হাসি)। অবাক হয়ে দেখতাম, সব ছবির খবরই উনি রাখেন। কোনটা ভাল, আর কোনটা ভাল নয়, কোন ছবি কী বিষয়ে সমস্ত তাঁর নখদর্পণে।
কোথায় কোথায় ছবি দেখানো হত?
অদ্রীশ বর্ধন : প্রাচী, লাইটহাউস, নিউ এম্প্যায়ার, ম্যাজেস্টিক… আরও অনেক হলে। এইসব হলগুলোও উনি ঠিক করে দিতেন। কোন কোন হলের সাউন্ড ভালো, কোন হলে কী সমস্যা, অবাক হয়ে দেখতাম সে সবও ওঁর জানা! না হলে লাইটহাউস, নিউ এম্প্যায়ার ঠিক আছে। কিন্তু ম্যাজেস্টিক? ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের সেই হলটা নামে ম্যাজেস্টিক হলেও আসলে তা মোটেও ম্যাজেস্টিক ছিল না। কিন্তু সাউন্ড ছিল অ্যাকোয়াস্টিক। উনি সব খবর রাখতেন। যেতেনও ছবি দেখতে। মনে আছে ছবি চলাকালীন সাউন্ডের তারতম্য হলেই উনি চেঁচিয়ে উঠতেন, ‘সাউন্ড!’ অন্ধকার হলেও ওঁর সেই রাশভারী গলা শুনলেই বোঝা যেত উনিই বলছেন। আজও সেই কণ্ঠস্বর কানে ভাসে! মনে আছে প্রাচীতে ওঁকে দেখবার জন্য কি ভিড়! সবাই ওঁকে একবার দেখতে চায়! সিকিউরিটি তো হিমশিম।
বছরে কটা ছবি দেখানো হত?
অদ্রীশ বর্ধন : ছ’টা থেকে আটটা। অথচ চাঁদা ছিল বছরে ছ’টাকা। ওই পয়সাতেই অতগুলো ছবি দেখানো হত। সে সব দিনের কথা এই এতদিন পরেও স্মৃতিতে একই রকম উজ্জ্বল। সে এক পাগলামির সময় গেছে। আমার তিন বন্ধু, তারা এই পাড়াতেই থাকত, তাদের বিরাট পরিশ্রম ছাড়া সিনে ক্লাবের এই সাফল্য সম্ভব ছিল না। তিনজনই আজ আর পৃথিবীতে নেই। ওদের কথাও খুব মনে পড়ে।
‘আশ্চর্য’–র লোগোও তো সত্যজিৎবাবুরই করা?
অদ্রীশ বর্ধন : হ্যাঁ। এছাড়াও ভেতরের অনেক ইলাস্ট্রেশনও বিভিন্ন সময়ে উনি করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আরেক জনের কথা মনে পড়ছে। সে বিমল দাস। বিমল ছিল কুঁড়ের হদ্দ। অবশ্য সব আর্টিস্টরাই কমবেশি তাই–ই। ওকে দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে আমি একেবারে গলদঘর্ম হয়ে যেতাম। অবশ্য কাজ অসাধারণ করত। মানিকদাও ওর কাজ খুব পছন্দ করতেন। খালি বলতেন, ‘বিমলকে দিয়ে কাজ করাও। ওর কাজ দারুণ।’
সেদিন একটা ওয়েবসাইটে ভয়ের লেখকদের একটা রেটিং দেখতে পেলাম। সেখানে লাভক্র্যাফটকে রাখা হয়েছে এক নম্বরে আর পো আছেন চার নম্বরে। আপনাকে যদি এরকম রেটিং করতে বলা হয় আপনিও কি তাই করবেন?
অদ্রীশ বর্ধন : কখনই না। পো চার নম্বর হতেই পারে না। দ্যাখো, পো আর লাভক্র্যাফট দু’জনেই গ্রেট। আরও অনেকে আছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু ওঁদের মতো কেউ না। আমি দু’জনের মধ্যে থেকে একজনকে বাছতে পারব না। কখনও মনে হয় পো সেরা, কখনও লাভক্র্যাফট।
আপনার মতে কল্পবিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তিনজন লেখক কে?
অদ্রীশ বর্ধন : সারা পৃথিবী দেখলে জুল ভের্ন, আর্থার সি ক্লার্ক এবং আইজ্যাক আসিমভ। আরও অনেকেই আছে। তবে এঁদের নাম না করলেই নয়। বিশেষত জুল ভের্নের কথাটা একবার ভাব। অতদিন আগে কী সব কল্পনা করে গেছেন। সেই সময়ে লোকে তাঁর লেখা পড়ে হাসাহাসি করেছিল গাঁজাখুরি গল্প বলে। অথচ সে সব পরে সত্যি হয়েছিল। আসলে সময়ের থেকে বহু এগিয়েছিলেন উনি।
আর বাংলায়?
অদ্রীশ বর্ধন : সত্যজিৎ রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য এবং অবশ্যই হেমেন্দ্রকুমার রায়। হেমেন্দ্রকুমারের ভাষা ছিল অনবদ্য। স্পেসশিপ যাওয়ার বর্ণনায় উনি লিখেছিলেন– ‘একসঙ্গে অসংখ্য ঢাকঢোল বাজছে!’ আজও বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয় হেমেন রায় হয়নি। ওঁর লেখা আমায় ভীষণ প্রভাবিত করেছিল করেছিল ছোটবেলায়। মনে আছে ওনার সঙ্গে দেখাও করতে গেছিলাম। বাগবাজারে একটা সরু গলিতে উনি থাকতেন। সেখানে গিয়ে মুদিখানার সামনে টুলে বসে থাকা এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হেমেন্দ্রকুমার রায়ের বাড়িটা কোনটা?’ সেই রোগাপাতলা নিরীহ চেহারার ভদ্রলোক হেসে বললেন, ‘আমিই হেমেন্দ্রকুমার রায়।’ আমি তো থ! (হাসি)
আচ্ছা আপনি কখনও মেইন স্ট্রিম, মানে…
অদ্রীশ বর্ধন : সামাজিক উপন্যাস তো? হ্যাঁ, লিখেছি। একবারই। আমার স্ত্রী একদিন অভিমান করে বলেছিল, সবাইকে নিয়ে লিখেছ, আমায় নিয়ে কিছু লিখবে না? এরপর তো ও চলে গেল। ও মারা যাবার পর আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। আমার লোয়ার পোর্শান প্যারালিসিস হয়ে গেছিল। এই অবস্থাতেই লিখেছিলাম ‘তখন নিশীথ রাত্রি’। আশ্চর্যের ব্যাপার, উপন্যাসটা লেখার পর আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠি। বেঙ্গল পাবলিসার্স থেকে ওটা বই হয়ে বেরিয়েছিল। বইটা যারা পড়েছিল তারা প্রত্যেকেই কেঁদেছিল। বইটা রিপ্রিন্ট এর জন্য অনেক ডিমান্ড আছে। কিন্তু আমি হতে দিইনি। আর দেবও না। (সামান্য থেমে) যাক গে, আমি ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি।
আপনার বহু লেখা আজ আর পাওয়া যায় না। এই যেমন এই উপন্যাসটার কথা জানলাম। এই সব পুরোনো লেখা আবার নতুন করে বেরোনো দরকার। কোনও প্রকাশক সে ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন?
অদ্রীশ বর্ধন : আমিই আর ততটা উৎসাহ বোধ করি না। আজকাল সব কিছুতেই কেমন যেন ভাটা পড়ে গেছে বলে মনে হয়। পাবলিশাররাও আর তেমন নেই। সবাই বড্ড প্রফেশনাল হয়ে গেছে। আমার ভিতরে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিটা কোনও দিনই সেভাবে ছিল না। একটা অন্য রকমের ইন্সপিরেশনে আমি কাজ করে গেছি। নইলে ছদ্মনামে কেই পত্রিকা এডিট করে? অবশ্য পেশাদার মানসিকতা ছাড়া কিছু দাঁড়ায়ও না। (সামান্য থেমে) কিন্তু…আমার তো দাঁড়িয়েছিল।
Tags: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, বিশেষ আকর্ষণ, সাক্ষাৎকার
সুন্দর জিনিষ শেষ হতে সময় লাগেনা। আর আপেক্ষিক ভাবে যাকে আমরা অসুন্দর বলি তা দীর্ঘকাল স্থায়ী মনে হয়। ঠিক এইরকমই একটা অনুভূতি হল এই সাক্ষাৎকারটা শেষ হয়ে যেতেই। একটা আলপিন ফুঁটলে যেমন পা টা প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় সরে আসে, তেমনই কি যেন একটা বলে উঠল, ইস্! এইটুকুই, আমাদের আনন্দ বঞ্চিত করে, সেটা কিছুটা হলেও কমিয়ে দেওয়া হল।
এত কথার অবতারণা করার মূল বক্তব্য হল, এই অমূল্য শব্দের আদানপদান “অনবদ্য” বললেও খুবই কম বলা হবে, কারণ সুন্দর উত্তর পেতে গেলে সুচারুভাবে প্রশ্নমালা সাজাতে হয়, যেটা এখানে খুব সহজাত অনায়স দক্ষতায় করেছে “কল্পবিশ্ব টিম”
এই মানুষটি বাংলা সাহিত্যের জন্য কী না করেছেন…আর আজ যখন তিনি সময়ের কাছে অসহায়, কেউ কি আর তাঁর দিকে ফিরে তাকায়…?
তবে এটুকু আমার বিশ্বাস আছে–যে তাঁকে ছাড়ে ছাড়ুক, টিম কল্পবিশ্ব তাঁকে ছাড়বে না। তাঁর এই চরম অসুস্থতার দিনে একরাশ শ্রদ্ধা বুকে নিয়ে তাঁর পাশে থাকবে।… আর কল্পবিশ্ব ইতিমধ্যেই সেই আশা পুরণ করতে শুরু করেছে। K.B. তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতাবোধকে কোনো ভাষা ফুটিয়ে তুলতে পারবে না…
এবং অদ্রীশ মহারাজা–তোমারে সেলাম !
বিজ্ঞানের কল্পনা আর কল্পনার বিজ্ঞানকে যিনি বাংলাসাহিত্যে নির্দিষ্ট আসন পেতে বসিয়েছিলেন, সেই মানুষটিকে তাঁর জীবনসায়াহ্নে টিম কল্পবিশ্ব যথাযোগ্য মর্যাদা দিল। কুর্ণিশ জানাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
আবার কোন একসময় কিংবদন্তীর বাড়ি গেলে বলবেন সুদুর ত্রিপুরায়ও তার অসংখ্যা গুণমুগ্ধ আছে।
Sorry ’অসংখ্য’
দারুণ সাজিয়েছ, কত কি জানলাম। আমি ওনার একটা সাক্ষাতকার পড়েছিলাম 2012 তে,পরে বই হয় দীপ প্রকাশনী থেকে! পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
বইটির নাম বলতে পারবেন?