আমার অদ্রীশদা
লেখক: উজ্জ্বল ধর
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)
অনেকদিন আগের কথা। তখন দেব সাহিত্য কুটির থেকে দারুণ দারুণ পূজা সংখ্যা বেরোত – অলকানন্দা, নীহারিকা ইত্যাদি নামে। সেই বইতেই প্রথম অদ্রীশ বর্ধনের কল্পবিজ্ঞান এর গল্প পড়লাম। আমি চিরকালই সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত। আইজ্যাক আসিমভের ভক্ত ছিলাম – চিন্তার মৌলিকত্বর জন্য। অদ্রীশ বর্ধনের কল্পবিজ্ঞানের সেই গুণ ছিল।
ভারতীয় কল্পবিজ্ঞান লেখকদের মধ্যে অদ্রীশ বর্ধনকে সেরা বলে আমি অন্তত মনে করি।
১৯৮৩/১৯৮৪ সালে দু পাতার ভজা–গজার কমিক্স নিয়ে গিয়েছিলাম “কিশোর মন” পত্রিকার দপ্তরে। অদ্রীশ বর্ধন তখন “কিশোর মন” এর সম্পাদক। সেই প্রথম দেখলাম আমার কল্পনার নায়ককে। দীর্ঘ মেদহীন চেহারা, বুদ্ধিদীপ্ত ঝকঝকে চোখ – কালো ফ্রেমের চশমাতে ঢাকা। কাঁচাপাকা বাবরি চুল, দীর্ঘ নাক।
এই সেই অদ্রীশ বর্ধন!!
আমার কল্পনার সঙ্গে মিলে গেল। আমার কমিক্স দেখে চোখ দুটো আরও ঝকঝকে হয়ে উঠলো, ঠোঁটে মৃদু হাসি। আচমকা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন আমার কমিক্স নিয়ে। ফিরে এলেন কিছুক্ষণ পর। আমাকে নিয়মিত কমিক্স দেয়ার জন্য বললেন। তখন কিশোর মন পনেরো দিন অন্তর প্রকাশিত হত। আমার কমিক্স নিয়মিত প্রকাশ হতে শুরু করলো। প্রতিবার আমার কমিক্স দেখে অদ্রীশদা অট্টহাসি হাসতেন, বুঝতে পারতাম, আমি ঠিক লাইনে আছি।
আমার কমিক্স ওনার এতই পছন্দের ছিল, আমার ওপর এতটাই ভরসা করিছিলেন যে, এক বিখ্যাত কমিক্স আর্টিস্ট এর কমিক্স বন্ধ করে দিয়ে, আমার কমিক্স চালু করে দিলেন। আমার জন্য আর এক বিখ্যাত কার্টুনিস্ট এবং “ইত্যাদি প্রকাশনী“-র বোর্ড মেম্বারদের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হয়েছে অদ্রীশদাকে।
এরপর ১৯৯৭ সালে অদ্রীশদা “ফ্যান্টাসটিক” পূজা সংখ্যার কাজ দিলেন। তখন সি আই টি রোডের গভর্নমেন্ট ফ্লাট এ থাকতেন। গ্রাউন্ড ফ্লোরের অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘর। বিপত্নীক অদ্রীশদা একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। আমি অবাক হয়ে ভাবতাম – এই অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘর থেকে কত কালজয়ী লেখার সৃষ্টি হয়ে চলেছে!
পরের বছর ফ্যান্টাসটিকের পুরো কাজ টাই আমাকে করতে বললেন। বইয়ের কভার ডিজাইন যে দিন দিয়ে এসেছি, সেদিন গভীর রাতে – প্রায় রাত ১টায় আমাদের বাড়ীর ফোন বেজে উঠল।
ফোন তুলে দেখি অদ্রীশদা! এত রাতে?
“উজ্জ্বল! তোমার কভার ডিজাইনটা সামনে নিয়ে বসে আছি – ঘুম আসছে না –“
ডিজাইনটা ছিল এলিয়েন ডাইনোসরের দল – ব্যাকগ্রাউন্ডে এলিয়েন প্ল্যানেট, স্পেসশিপ ইত্যাদি। পুরোটাই পেন অ্যান্ড ইঙ্ক এ করা। সারা রাত অদ্রীশদা আমার আঁকা কভার ডিজাইনটার সামনে বসেই ছিলেন। ওর মনটা হয়ত মহাকাশের কোন অচেনা কোনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
আমার মতো সামান্য এক শিল্পীকে এইভাবে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। উনি আমার গডফাদার।
Tags: আমার অদ্রীশদা, উজ্জ্বল ধর, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, স্মৃতিচারণ