ঘনাদার নতুন গল্প – ছিপি
লেখক: সৌরভ ঘোষ
শিল্পী: অঙ্কিতা, জটায়ু
মেসের বসবার ঘরের এই পীঠস্থানের আবহাওয়া ইদানিং বেশ শান্ত। তাস পিটে, লুডো কিংবা দাবা খেলে, এমনকি মাছি মেরেও সময় যেন গলতে চায় না। আর ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার কি অবস্থা তা লুডো কিংবা দাবার মতো খেলার কথা উল্লেখ করা থেকেই নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে। সবই যেন ন: গচ্ছতি। বাড়িটাকে পীঠস্থান কেন বললাম? তা বুঝে নিতে অবশ্য খুব একটা অসুবিধে হওয়ার কথা না। কলকাতার বাহাত্তর নম্বর বনমালী নস্কর লেনে আমাদের আদ্যিকালের ডাল-ভাত-পোস্ত মেস বাড়িটাকে যে পৃথিবীর কত দুর্ধর্ষ গুপ্তচর, কত অজানা বৈজ্ঞানিক তাঁদের চোরা জিপিএসে এই মুহূর্তে খুঁজে চলেছেন তার কি ইয়ত্তা আছে! যাকে অবশ্য খোঁজা চলছে সেই ঘনাদা প্রায় দিনতিনেক হল আমাদের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে নিজেকে তেতলার টঙে, কুটুরিতে বন্দী করেছেন। দেখা সাক্ষাতের মধ্যে শুধু ওই একটিবার খাওয়ার ঘরে তার লম্বা, গোমড়া মুখ। সাধ্য-সাধনা যে আমরা একেবারে করিনি তা নয়। এমনকি শিবুর হাসিচাপা হুপিং কাশিকেও বাপ-বাপান্ত করতে ছাড়া হয়নি। ক্রমাগত দু’দিন পাড়ার বিখ্যাত মাংসের সিঙ্গাড়া থালায় সাজিয়ে, বসবার ঘরে আমরা ফাঁদ পেতে বসেছিলাম। তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। তৃতীয় দিন শিশির রীতিমতো একটা নতুন সিল করা সিগারেটের কৌটোও তার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিল। পাছে ধার করা সিগারেটের সংখ্যা নিয়ে আবার ঘনাদা রাগ করে থাকেন। কিন্তু ভবি কিছুতেই ভোলবার নয়। প্রথমদিন ঘনাদা ঘরের কাছে এসেও আমাদের দিকে না তাকিয়ে পায়চারি করতে করতে বেরিয়ে গেলেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন কি যেন ভাবতে ভাবতে ঘরের সামনে চরকি পাক দিয়েই মাত্র চার সেকেন্ডের জন্য আমাদের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে সটান কোথায় উধাও হলেন। এই ঠান্ডা যুদ্ধের ধোপ দুরস্ত দায় যে আমাদেরই তাতে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু তার সঠিক কারণ জানতে একটু সময় লাগল এই যা। আজ একরকমের ধৈর্যচ্যুত এবং মরিয়া হয়েই আমরা রহস্য উদ্ঘাটনে তেতলার টঙের দিকে হানা দিয়েছিলাম। তেতলায় পৌঁছে গৌর দরজায় দু’বার টোকা দিল। আমি আর শিশির ‘ঘনাদা আছেন?’ বলে দু-তিনবার হাঁকডাকও করলাম। কোনও ভাবেই কোনও লাভ হল না দেখে, সিঁড়ির দিকে যখন সবাই পা বাড়িয়েছি ঘরের দরজায় ‘খুট’ করে খিল খোলার শব্দ হল। অত্যন্ত গম্ভীর মুখে ঘনাদা দরজা খুলে কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই আবার ঘরের এককোণে রাখা, টুলের ওপর টিনের বাক্সে জামাকাপড় গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এ দৃশ্য অবশ্য আমাদের দেখে দেখে ধাতে সয়ে গেছে। কারণ হোল্ডল বলতে যে বিশেষ কিছু নেই এ আমাদের সকলের জানা। অবস্থার গুরুত্ব বুঝে আমরাও গুটি-গুটি পায়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়লাম।
‘সেকি! এই ভর সন্ধ্যেবেলা কোথায় চললেন ঘনাদা?’
গৌরই প্রথম প্রশ্নটা করল। কারণ আজ ওর পালা। খানিকক্ষণ সব চুপ। ঘনাদার সেই দিকে কোনও ভ্রূক্ষেপই নেই। তিনি তখন বিছানার পাতলা চাদর গোটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। সে যেন এক বিশাল যজ্ঞি।
‘আপনার প্রতি কোনওরকম অবিচার বা ত্রুটি হয়েছে কি? তাহলে আমাদের জানান ঘনাদা। উপযুক্ত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’ কোনওমতে হাল্কা হাসি চেপে আমিও কঠিন স্বরে জুড়ে দিলাম। এইবার যেন মনে হল ঘনাদা একটু থামলেন। চাদর ভাঁজে ব্যর্থ হয়েই হোক বা ক্লান্ত হয়েই হোক, একটু যেন নরম হলেন। তারপর আমাদের দিকে না তাকিয়েই আঙুল দিয়ে একটা মাঝারি সাইজের সলতে লাগানো খয়েরি, হোমিওপ্যাথির শিশির দিকে নির্দেশ করলেন। এতক্ষণে আমাদের সত্যান্বেষণ আরেকটু স্পষ্ট হল। গত কয়েক সপ্তাহে কলকাতা করপোরেশনের আশীর্বাদে এ অঞ্চলে লোডশেডিং বেশ আধিপত্য বিস্তার করেছে। পাঁচ দিন আগের ঘটে যাওয়া লোডশেডিং-এ মেসের প্রত্যেকটা ঘরে লম্ফ বা হ্যারিকেন জ্বললেও, জ্বলেনি শুধু এই ঘরটিতে। কারণ স্বাভাবিকভাবেই কেরোসিনের অভাব। ঘনাদা অবশ্য তেলের জন্য অনেক হাঁকডাক করেছিলেন, কিন্তু তাতে বিশেষ কারুর সাড়া পাওয়া যায়নি। আমরা বসবার ঘরে ব্যাপারটা রসিয়ে বেশ মজাই নিয়েছিলাম। বিশ্ববরেণ্য ‘হের ডস’-এর শেষে কিনা কেরোসিনের অভাব! সেই হাসির রোল যে তেতলার ঘর অবধি পৌঁছোয়নি তা স্বয়ং যুধিষ্ঠিরও অস্বীকার করতে পারবে না।
অগত্যা আমিই বললাম, ‘এ ভারি অন্যায়! লোডশেডিং বড় আপদ হয়েছে। এবার থেকে এরকম পরিস্থিতি হলে সবার প্রথমে আপনার ঘরে লম্ফ জ্বলানোর দায় আমরা নিলাম। তারপর অন্য কথা।’
সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও খানিক আঁধারে আলো দেখে হাঁ হাঁ করে প্রতিবাদ করল। গৌর রীতিমতো করিৎকর্মা হয়েই নিজের ঘর থেকে কেরোসিনের ডিবেটা আনতে যাচ্ছিল। এমন সময় ঘনাদা ক্ষুদার্থ বাঘের মতো গর্জন করে উঠলেন, ‘আহাম্মক! এখনও বোঝোনি দেখছি।’ এই বলে আমাদের মাঝখান দিয়ে তাঁর ঢ্যাঙা হাতটা বাড়িয়ে লম্ফটা তুলে নিলেন। তার থেকে সলতে ছাড়িয়ে প্যাঁচ কেটে যাওয়া, গোল-তোবড়ানো ঢাকনাটা আমাদের সামনে রেখে তার দিকে আঙুল দেখালেন।
‘দেখো হরির কীর্তি! তেল ভরতে গিয়ে ব্যাটা ঢাকনাটাই দিয়েছে চুলোর দোরে। মহামূল্যবান, গুরুত্বপূর্ণ এমন জিনিসের যেখানে কোনও দামই নেই সেখানে কি আর থাকা যায়?’
‘একটা ছোট্ট ছিপি নিয়ে ঘনাদা…’, গৌর বিস্ময়ে বলে উঠল।
‘ছোট্ট ছিপি?’ বিস্ফারিত চোখে ঘনাদা চাইলেন আমাদের দিকে। ‘তা তোমাদের কাছে ছিপিই বটে কিন্তু আমার কাছে নয়।’
হরি আমাদের মেসের নতুন কাজের লোক। এসব বুঝিয়ে-সুঝিয়ে, হরিকে ডেকে ঘনাদার সামনে একটু ধমক দিয়ে পরিস্থিতি যখন প্রায় বাগে আনা হয়েছে – সেই সময় শিবু একটা বেফাঁস প্রশ্ন করে বসল।
‘তা এই মূল্যবান ছিপি দিয়ে কোন দেশোদ্ধার করলেন ঘনাদা? জার্মানি নাকি রাশিয়া? নাকি কোনও গিরিবর্ত্ব খসিয়ে দিলেন মানচিত্র থেকে?’ এই প্রশ্নের পরের পরিস্থিতি যে আমাদের চিকিৎসার বাইরে তা বুঝেই শিবুর দিকে যখন সবাই খড়্গহস্ত হয়েছি, তখন ঘনাদাই আলোর উৎস দেখালেন মেঘের আড়াল থেকে। শিবুর দিকে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আমাদের দিকে ভ্রূকুটি করে বললেন, ‘এই ছিপির মূল্য আজকালকার ছোকরা আর কি বুঝবে হে! ঝিল্লেতে চড়ে দিনরাত এক করে কখনও মাইলের পর মাইল কৌলেরপা ট্যাক্সিফোলিয়ার খোঁজ করেছ? কখনও ভেবেছ লাখ লাখ বিষাক্ত শামুক থেকে কীভাবে নিষ্কৃতি পাবে? কখনও ভেবেছ ইকথায়োসিস মতো মহামারীর কারণ? তা কীভাবে নিরাময় করা যেতে পারে?’
এই দুঃসময়ে শতরঞ্জিটা কি ভাগ্যি আমি হাতে করেই বয়ে নিয়ে এসেছিলাম। সুবর্ণ সুযোগ পেয়েই সেটা কোনওরকমে মাটিতে পেতে যে যার ঘাড়ের ওপর বসে পড়লাম। উত্তেজনা চাপতে না পেরে গৌর বলল, ‘আহা! খুলেই বলুন না ঘনাদা। বৈজ্ঞানিক ভাষায় গালাগালি দিয়ে রসিকতা কেন করছেন?’
***
ঘনাদা এতক্ষণে রাইট অ্যাঙ্গেল থেকে ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে অবটিউজ অ্যাঙ্গেলের আকার নিয়েছেন। একবার অলস সিংহের মতো হাই তুলে দু-আঙুল ফাঁক করে ডান হাতটা শিশিরের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। শিশিরও নিঃশব্দে সেই ফোকর বুজিয়ে কৌটো থেকে একটা সিগারেট গুঁজে দিল।
‘গালাগালি নয়। এগুলো সবই বৈজ্ঞানিক নাম।’ একটু চিবিয়েই বললেন ঘনাদা। যেন আমাদের বালখিল্যতাকে নীরবে মাফ করে দিলেন।
‘তা শুরু করতে হলে একবারে প্রথম থেকেই করতে হয়। প্রায় বছর তিনেক আগের কথা। আর্জেন্টিনার সাল্তায় অবস্থিত একটা বিখ্যাত আর্কিয়োলজিকাল মিউজিয়ামের সঙ্গে নতুন চুক্তি হয়েছে আমার। তাঁদেরই অনুরোধে আমি তখন মেক্সিকোর পুয়েবোলায় বিভিন্ন পিরামিডের আশেপাশে লুপ্তপ্রায় সব জীবজন্তুর জীবাশ্ম খোঁজার চেষ্টা করছি। চিচেনইৎজা, কোবা, কালাকমুল, এল তাজিন, লা ভেন্তে এসব পিরামিডের আশপাশে কাজ শেষ করে পৃথিবীর বৃহত্তম পিরামিড “চলুলা”-এর পথে পা বাড়িয়েছি। বিগত পাঁচ বছর ধরে দক্ষিণ আমেরিকার প্রত্যেকটা দেশ, প্রত্যেকটা শহরই যেন তখন আমার দ্বিতীয় বাসস্থান। সবই এই নখের ডগায়। এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে আমার পায়ের চিহ্ন পড়েনি। দক্ষিণ-পূর্ব পেরুর রিও আল্টো মাদ্রে ডি ডায়োস বরাবর ভিলিভা নামের একটা উন্মুক্ত নদীর তীরে খুঁজে পেয়েছি প্রায় দেড় কোটি বছরের পুরানো পৃথিবীর সব থেকে ছোট আকৃতির বানর প্রজাতি পারভিমিকো-এর দাঁত, চোয়াল আর হাড়ের জীবাশ্ম, যা একটা ছোট নেংটি ইঁদুরের সাইজের। এই নিয়ে বেশ একটু নামও হয় আমার। খবরের কাগজেও কম লেখালিখি হয়নি। সেসব যদিও তোমাদের জানারও কথা নয়।’
এই চরম মুহূর্তে শিবুর বিটকেল কাশিটা আবার চাগাড় দিয়ে উঠল। কোনটা কাশি আর কোনটা যে চাপা হাসির শব্দ সে বুঝে নিতে নিশ্চয়ই অসুবিধে হয় না। ঘনাদা অবশ্য সে সবে কান দিলেন না। ভুরু দুটো কুঁচকে একবার শিবুর দিকে চেয়ে দিব্যি আবার বলে চললেন।
‘সেই জীবাশ্ম সংরক্ষণ করতে একটা ছোট তুলো-ঠাসা শিশির প্রয়োজন ছিল। তবে শুধু শিশি হলেই তো হবে না। এমন একটা দামি জিনিস রাখা হবে, তাই তার ছিপিটিও হতে হবে মজবুত। আমার সঙ্গে থাকা কারুবো প্রজাতির কুলিটাকে দিয়ে তামা আর লোহা মেশানো বেশ আঁটো-সাঁটো, শক্ত একটা ছিপি বানিয়ে নিয়েছিলাম। জীবাশ্মটাকে মিউজিয়ামে চালান করার পর অবশ্য সে জিনিস আমার পকেটেই পড়ে ছিল। কিন্তু তখনও কি জানতাম ভাগ্যের পরিহাসে সেটা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে!
যে সময়ের কথা আমি বলছি সেটাকে পৃথিবীতে ইতিহাস লেখার এক স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে। বিশেষ করে মিশর ও পিরামিড গবেষকদের কাছে তো বটেই। গিজা মালভূমির ১৬০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে ওয়াদি-এল-হিতানে তখন সদ্য আবিষ্কার হয়েছে চার কোটি বছরের পুরানো এক লুপ্ত “আর্কায়োচেতি” প্রজাতির দানবীয় তিমি মাছের জীর্ণ কঙ্কাল। আবু সিম্বেলের মানমন্দিরের ভগ্নাবশেষ থেকে পাওয়া গেছে এক অদ্ভুত সুন্দর সৌর শ্রেণীবিন্যাস, যা চমকে দিয়েছে অনেক সৌর বৈজ্ঞানিকদেরও। দেশ-বিদেশে চলছে জমজমাটি পর্যালোচনা। এমন সময় এক স্প্যানিশ গুপ্তচর মারফত, আমার এক পুরানো বন্ধু ইতালির বিখ্যাত মেরিন বায়োলজিস্ট ড. গিউসেপের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা চিঠি হাতে এসে পৌঁছাল। জরুরি তলব। তলবের কারণ সে পরিষ্কার করে কিছুই লেখেনি চিঠিতে। চিঠিটা লেখা হয়েছে ক্রোয়েশিয়ার ক্রক দ্বীপ থেকে। মধ্য আর দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ নিয়ে, অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীরে ইংরেজির ওল্টানো সাতের মতো যে ছোট্ট দেশটা দেখা যায়, সেটাই হল ক্রোয়েশিয়া, যাকে উত্তর-পূর্বে হাঙ্গেরি আর উত্তর-পশ্চিমে শ্লোভানিয়া যক্ষের মত ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে নিয়াম নামের একটা সরু বদ্বীপ রেখা এসে মিশেছে এদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দিনাড়াতে। তারই আশপাশে ভাঙা খেলনার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ। যাদের মধ্যে সর্ববৃহৎ হল ক্রক আর ক্রেস। তাদের একটির থেকে ড. গিউসেপের চিঠি পেয়েছি। দ্বীপপুঞ্জগুলোর বেশির ভাগই জনমানবশূন্য। এই ছোট্ট দেশটার ওপর ইতিহাস খুব একটা সদয় না হলেও প্রকৃতি বড় একটা নির্দয় নয়। নিভৃতে গবেষণার কাজ চালানোর জন্য এরকম জায়গা পৃথিবীতে একটি বৈ দুটি হয় না। ক্রক দ্বীপের বিভিন্ন উপজাতি মগরোভিক, সুবিক, গুসিক “সেরেন” ও “জামিন” নামের বিভিন্ন শাখা পুঞ্জে বসবাস করছে তখন। তারই একটা শাখায় কূপা নদীর তীরে ড. গিউসেপের তাঁবু। সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু সুবিক উপজাতির ভাড়া করা কুলি। সালাতির মতো লম্বা মোটর-লাগানো বোট, ক্রোয়েশিয়ায় যাকে ঝিল্লে বলে, তাতে করেই পৌঁছেছি সেখানে। আমি অবশ্য একজন কুলি সঙ্গে এনেছি। সে পেরুর নাহুয়াদের সর্দার, রায়া। দক্ষিণ আমেরিকার ঘন জঙ্গলে সে আমার সবথেকে বিশ্বস্ত সহচর। ড. গিউসেপে আমাকে দেখে যতটা না উৎফুল্ল হলেন আমি তার দ্বিগুণ আশ্চর্য হলাম। একি চেহারা হয়েছে ড. গিউসেপের। যেন কঙ্কালের ওপর কোনওরকমে চামড়া সাঁটা। হাতের চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে চকলেটের রাংতার মতো বিশ্রীভাবে কুঁকড়ে গেছে। ব্রাজিলের কামায়ুরাদের হাত থেকে যখন বাঁচিয়েছিলাম গিউসেপেকে, তখন তিনি বিজ্ঞানী তো বটেই এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ পিরানহা শিকারিও ছিলেন। গিউসেপের সঙ্গে থাকা আশপাশের কুলিদেরও প্রায় একই অবস্থা। আমার দিকে চেয়ে ম্লান হেসে গিউসেপে তাঁবুর ভেতরে নিয়ে গেলেন। মৃদুস্বরে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, ‘তোমাকে যে কারণে ডেকেছি সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ ডস?’
আমি মৃদু হাসলাম। বললাম, ‘সেটা তো তোমার একমাত্র কারণ নয় সাহেব। আসল কারণ কিন্তু তুমি চিঠিতে বলনি।’
‘মানে?’ আশ্চর্য চোখে চেয়ে আছেন গিউসেপে।
‘ক্রোয়েশিয়ার বেশ কয়েকটা দ্বীপপুঞ্জে এক বিশেষ চর্মরোগ ধীরে ধীরে প্রকোপ হয়ে উঠছে। তার খবর আমার কাছে আছে। সেই খুনি রোগকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইকথায়োসিস বলে। এই রোগে প্রথমে শরীরের চামড়া শুকিয়ে যায়। দেহের বিভিন্ন জায়গায় চাপ চাপ রক্তের মতো মৃত কোষ জমাট বাঁধতে থাকে। তারপরে শুরু হয় অঙ্গবিকৃতি। আর সবশেষে ঝরা পাতার মতো অকালমৃত্যু। যার শিকার মনে হয় তুমিও হতে চলেছ।’
‘তুমি ঠিকই ধরেছ ডস। শুধু এই নয়। আমার বিশ্বাস আর কয়েকদিনের মধ্যেই এই রোগ মহামারী হয়ে সমস্ত ক্রোয়েশিয়া কেন সমগ্র ইউরোপকে গ্রাস করবে।’
‘কিন্তু সে কী করে সম্ভব? এই রোগ তো জিনগত। অষ্টাদশ শতকে জার্মান ডাক্তার মার্কাস ব্লাক অন্তত তাই বলেছেন বলেই জানতাম। তাহলে তা মহামারীর আকার নেবে কীভাবে?’
‘সে তত্ত্ব সম্পূর্ণ নয়। বিজ্ঞান তার সন্ধানে আরও এগিয়েছে। এ প্রশ্ন যে তুমিই করবে ডস তা আমি জানতাম। তাই এর উত্তর তোমারই সবার আগে জানা দরকার। প্রায় দশ বছর ধরে দক্ষিণ আমেরিকার বন-বাদাড় ঘুরে আমি তখন ক্লান্ত। ঠিক সেই সময় খবর পেলাম কৌলেরপা ট্যাক্সিফোলিয়ার। যাকে এত বছর আমি হন্যে হয়ে, আমাজানের নদীতে তোলপাড় করে খুঁজেছি – সেই বিষাক্ত শ্যাওলাকে। তার দেখা যে আমি এই নির্জন দ্বীপে পাব তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। এই শ্যাওলা যে সমুদ্র বিজ্ঞানে কী বিপুল পরিবর্তন ঘটাতে পারে তা তোমায় কি বলব। এর বিষকে রিভার্স জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ব্যবহার করে যে কত সামুদ্রিক প্রাণীদের সমুদ্র দূষণ থেকে বাঁচানো সম্ভব তার হিসেব নেই। কিন্তু…’ এই বলে গিউসেপে মাথা নিচু করে থামলেন।
‘কিন্তু? কিন্তু কি? এখানেও তুমি হেরে গেলে তাইতো?’ আমার সহাস্য মুখ গিউসেপের বিস্ময়ভরা খয়েরি চোখের মণি দুটোকে আলোকিত করে উঠেছে।
আমি বলে চললাম, ‘ড. রিম্যান এখানেও তোমার সব আশা, সব স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল। কেবল ইউরোপই বা বলি কেন, সারা পৃথিবী জুড়ে কুখ্যাত এক বিজ্ঞানীর নাম ড. রিম্যান। বিশ্ব বৈজ্ঞানিক মহলে একটা লাল দাগ যে তার নামের পাশে সব সময়ই পড়েছে তা আশ্চর্যের নয়। তা সে-ই তোমার ফর্মুলা চুরি করল শেষে!’
গিউসেপে খানিকক্ষণ নির্বিকার চিত্তে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর বললেন, ‘তা যে অসম্ভব সেটা তুমি জানো! আমাজানেই তারাহুমারাদের বিষ তীরে সে মারা গেছে।’
আমি আবারও মৃদু হাসলাম, ‘সত্যিটা ঠিক কি তা আসলে তুমিও জানো গিউসেপে। সে আমাজানে মরেনি। বরং তার মৃত্যু সংবাদ সারা পৃথিবীতে রটিয়েছে সে। তারপর গা ঢাকা দিয়ে এই দেশেই তার বিকৃত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।’ গিউসেপের বিস্ফারিত চোখের দিকে চেয়ে একটু হাসিই পেল।
‘তা হলে সত্যিটা কী তুমিই বলে দাও’, বিরক্তভাবে বললেন গিউসেপে।
এইবারে গল্প থামিয়ে ঘনাদা আর চোখে আমাদের দিকে একবার চেয়ে সুর করে বললেন, ‘কৌলেরপা ট্যাক্সিফোলিয়া কি জিনিস বলিনি বুঝি? কৌলেরপা ট্যাক্সিফোলিয়া হল একধরনের বিষাক্ত সামুদ্রিক শ্যাওলার বৈজ্ঞানিক নাম। ইংরেজিতে একে অনেকে “কিলার অ্যাল্গি” বলে থাকে। দেখতে কতকটা লম্বা, পাখির পালকের মতো, হাল্কা সবুজ রঙের। এরা শরীর থেকে বিষাক্ত “কিউলারপিসিন” বার করে ছোট ছোট সামুদ্রিক পোকামাকড় শিকার করে। এই ধরনের বিষ শুধু সহ্য করতে পারে এক রকমের খোলসহীন শামুক। যাদের বৈজ্ঞানিক নাম এলিসিয়া সুবর্নটা। বলতে গেলে সেই বিষই তাদের খাদ্য। সে এক তাজ্জব প্রযুক্তি। শামুকগুলো তাদের মুখের অজস্র শুঁড় দিয়ে জাপটে ধরে শ্যাওলার বেরিয়ে থাকা সরু, লম্বা কাণ্ডগুলোকে। সেই শুঁড়ের আবার দুটো নল। একটা নল টেনে নেয় খাদ্যরস আর আরেকটা নল সেই বিষের থেকে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে যায় তাদের শরীরে।
যাক এরপর গিউসেপের সেই বিরক্তিমাখা, হেলায় ভরা প্রশ্নের উত্তর আমি দিলাম। বললাম, ‘সত্যিটা তোমার থেকে জানার জন্যেই যে আমি অ্যাদ্দুর ছুটে এসেছি ড. গিউসেপে। তুমি চাও না ড. রিম্যান মারা যাক। কিন্তু কেন? কেন বাঁচিয়েছিলে তুমি তাকে সেই বিষাক্ত তীর থেকে? কেনই বা সাহায্য করেছিলে তাকে এই দ্বীপে আসতে?’
এতক্ষণ মাথা নিচু করে গিউসেপে সব শুনছিলেন। এবার পকেট থেকে একটা পুরানো দিনের সাদা-কালো ছবি বার করে নিঃশব্দে আমার সামনে রাখলেন। ‘তোমার চোখকে ফাঁকি দেওয়া সত্যিই অসম্ভব। চিনতে পারছ ডস?’ ছবিতে দুটো ছেলে পরস্পরের কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার একটি ছেলে নিঃসন্দেহে ড. গিউসেপে। মুখের আদল এখনও সুস্পষ্ট। আর অন্যটি…
‘এ কি ড. রিম্যান…?’
‘হ্যাঁ, সে আমার ভাই। সৎ ভাই হলেও সে আমার বড় প্রিয়। ছোট থেকেই চুরি করা তার অভ্যেস। বুদ্ধিতে, জ্ঞানে আমি তার থেকে হাজার গুণে মেধাবী। তাই আমি তার ঈর্ষারও পাত্র। দোষটা আমারই, তাকে আমি থামাইনি। প্রশ্রয় দিয়ে, আদর দিয়ে বাঁচিয়ে এসেছি এতকাল। কিন্তু আজ সে শুধু নিজের না, সমগ্র ইউরোপের ওপর ডেকে আনছে এক ভয়ঙ্কর বিভীষিকা। ইউরোপের সরকার তাকে পাগলের মতো খুঁজে চলেছে হন্যে হয়ে। বিকৃত মস্তিষ্ক নিয়ে সে এক মরণ খেলায় মেতেছে ডস। আমার আয়ু যে আর বেশিদিন নেই তা তুমি বুঝতেই পারছ। তাকে একমাত্র তুমিই আটকাতে পারবে । তাই আমি অপারগ হয়েই…’
গলার স্বর কাঁপতে কাঁপতে ভারি হয়ে এল গিউসেপের।
‘তোমার এই আত্মবিশ্বাসে আমার যে হাসি পাচ্ছে! এই গুচ্ছের অজানা দ্বীপের মাঝখানে আমিই বা তাকে কোথায় খুঁজব? আর কোন অস্ত্র দিয়েই বা আমি তার মোকাবিলা করব? সে এক বিকৃত, অভিশপ্ত বৈজ্ঞানিক। তুমি জানো না সে কোথায়?’
‘সব কিছু চুরি করে সে পালিয়েছে। জোয়ান বয়সেই সে বুঝেছিল এই চুরিবিদ্যে নিয়ে বেশিদূর এগোন যাবে না। তাই সে তার স্বল্প মেধা দিয়েই আমার দেখাদেখি সমুদ্রবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা শুরু করে। বেশ কিছু আবিষ্কারও করে। কিন্তু সেসব অভিশপ্ত। সে আবিষ্কারের কোনও ভালো দিক নেই। পোচারদের দেওয়া মোটা টাকার লোভে আমাজানের বুকে শয়ে শয়ে নিষ্পাপ বোটো তার তীব্র আলট্রা সাউন্ডে প্রাণ হারিয়েছে সে তো তুমি জানই। বোটো নামের এই বিরল গোলাপি ডলফিন জাতটার আমাজানের বুক থেকে হঠাৎ প্রায় বিলুপ্তির কারণ বৈজ্ঞানিকদের কাছে অধরা হলেও তোমার আমার কাছে নয়। এখন তার নজর জন্মভূমি ইউরোপের ওপর পড়েছে। সে নিজে একজন ইউরোপীয় হয়ে নিজের দেশের ক্ষতি করবে। কি যে তার লাভ সেটাই আমার কাছে এখনও ধোঁয়াশা।’
‘এখনও বুঝলে না গিউসেপে?’ আমি শান্তভাবে বললাম।
গিউসেপে অন্যমনস্কভাবেই বলে চললেন, ‘এর আগেও সে চেষ্টা চালিয়েছে ইউরোপ আক্রমণের। কিন্তু সফল হয়নি। সামুদ্রিক পরজীবী কোপেপডদের দেহে ইউরিয়ার আধিক্য বাড়িয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিল বিষ। যাতে তাদের দ্রুত বংশবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে গোটা ইউরোপের মেরিন ইকোসিস্টেম ভেঙে পড়ে। বিষাক্ত হয়ে ওঠে সমস্ত ইউরোপের জল সরবরাহ। সম্পূর্ণ পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার পর তার অন্তিম রূপদানের আগেই ফরাসি গোয়েন্দা ক্লুঝেটের তত্ত্বাবধানে ফ্রান্সের পুলিশবাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। ইউরোপ সরকার অবশ্য শ্রীঘরে বেশিদিন তাকে ধরে রাখতে পারেনি। ইউনাইটেড নেশনের জোরাজুরিতে শেষমেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। এসবের কিছুই আমি জানতাম না যতক্ষণ সে আমাকে ধোঁকা দিয়ে আমারই গবেষণা চুরি করে চিঠি লিখে যায়। যদিও আমিই তাকে এই দ্বীপে এনে সুস্থ করে তুলি। বিজ্ঞান যেমন আশীর্বাদ তেমন অভিশাপও। ট্যাক্সিফোলিয়ার এই বিষ, সিন্থেসিস করার সময় কোনও ত্রুটি ঘটলে যে তা ইকথায়োসিসের মতো মারণব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে তাও আমিই তাকে বলি। ভেবেছিলাম সে হয়তো আগের মতো নেই কিন্তু তখনও…’ এই বলে গিউসেপে মাথা নিচু করে খানিকক্ষণ থামলেন।
একটু নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলে চললেন, এই ভুলের ক্ষমা নেই। এর ক্ষমা আমি নিজেকে কোনওদিনও করতে পারব না। তাই আজ আমার এই পরিণতি। গবেষণার সব জিনিস চুরি করে এমনকি তাঁবুটা পর্যন্ত ভেঙে সে কূপার জলে ভাসিয়ে দিয়ে গেছে। যখন এই রোগে আমি আক্রান্ত হলাম তখন বুঝলাম এই দেশেই সে লুকিয়ে আছে। সঙ্গে চলছে তার বিকৃত গবেষণা আর প্রস্তুতি চলছে দ্বিতীয় আক্রমণের। বলে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন গিউসেপে।
আমি মুচকি হেসে বললাম, ‘বিকৃত নয়। মাছ ধরেছে সে। আরও গভীর জলের মাছ বুঝলে সাহেব?’
গিউসেপে আমার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে তখনও। বলে চললাম, ‘এই নির্জন দ্বীপে এসে খবরের কাগজ যে তুমি একবারে বর্জন করেছ তা বেশ বুঝতে পারছি। যদিও ইউনাইটেড নেশনের এমন এক দাগী আসামীর জামিনের জন্য জোরাজুরির ব্যাপারটা থেকেই আসল কলকাঠির ব্যাপারে কিছু আঁচ করা উচিত ছিল তোমার। এই বছরে বেজিং আর রোমে হওয়া দুটো সামিটেই চীন আর ইউরোপের গলাগলি যে যুক্তরাষ্ট্র একদম ভালো চোখে দেখছে না সেটা ইউরোপের অলিগলির একটা বাচ্চাও এখন জানে।’
‘তুমি কি বলতে চাইছ এর পেছনে…?’
‘বলতে চাইছি না। বলছি। ক্ষমতা আর টাকার লোভ দেখিয়ে রিম্যানকে হাত করা খুবই সোজা এই ব্যাপারে। রিম্যানই যে এ কাজে সর্বংসহায় সেটা নিশ্চয়ই তোমায় আলাদা করে বোঝাতে হবে না। তবে এসব কিছু পার করেও যার মাথা এইসবের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেই ফেডেরাল ল্য এনফোর্সমেন্টের সার্জেন্ট কলিন্সকে সময় বুঝে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার।’
এই শুনে মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে এল গিউসেপের। তিনি তাড়াতাড়ি কাতর কণ্ঠে বললেন, ‘কিন্তু এখন রিম্যানকে খুঁজে বার করাই সবচেয়ে বেশি জরুরি।’
‘ঠিক তাই।’
এই বলে আমি আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে নিজেই একটা ঝিল্লার ব্যবস্থা করলাম।
***
‘নাহুয়া সর্দার রায়াকে নিয়ে চাঁদের আলো মেশা কূপার রুপোলি বুকে রিম্যানের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। শুধুমাত্র গিউসেপের কথায় নয়, এমনকি ইউরোপকে বাঁচানোর উদ্দেশেও নয়। আমার নিজের জন্য। আমাজনের পুরানো একটা হিসেব আমার রিম্যানের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে বাকি তখনও। জানি না কোথায় তার খোঁজ পাব। কিন্তু খোঁজ আমাকে তার পেতেই হবে। গিউসেপে অবশ্য জোর করে কতকগুলো সুবিক উপজাতির কুলি আমাদের সঙ্গে দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ওদের অসভ্য, সরল মুখগুলো দেখে বড্ড মায়া হল। তাই আর সঙ্গে নিলাম না। সর্বহারা গিউসেপের এই দুর্দিনে ওঁর থেকেই বা কি সাহায্য চাইব। বরং নিজের একমাত্র সঙ্গী লোডেড হ্যান্ডগানটাও ওঁর আত্মরক্ষার জন্য ওঁর সঙ্গে রাখতে দিয়ে এলাম। এই সব অঞ্চলে জংলা, বড় জোঁকের খুব উৎপাত। তাই আমি সেই পকেটস্থ শিশি ভর্তি করে নুন নিলাম। আর রায়াও তার আর্মাডিলোর চামড়ায় বানানো রুপ্তোতে ঠেসে নুন ভর্তি করল। কূপা নদীর উত্তরে সাভা আর দ্রাভা নদী এসে ক্রেস দ্বীপপুঞ্জের কাছেই মিশেছে। তার সীমারেখা সেখানেই শেষ। কিন্তু কূপা নদী ধরে সোজা দক্ষিণে নেমে গেলে প্যানোনিয়ান বেসিন ঘেঁষে ঝাগর্জে সমতলভূমি শুরু হয়েছে, যা গিয়ে শেষে পড়েছে দানিউবে। যদি রিম্যান ক্ষতি করার ফন্দিই এঁটে থাকে তবে সে নির্ঘাত দানিউবের আসে পাশেই গা ঢাকা দিয়েছে। কারণ ঝাগর্জে সমতল ভূমি থেকে দানিউব আরও দক্ষিণ-পূর্ব ঘেঁষে প্রশস্ত ইউরোপে প্রবেশ করছে। ঝিল্লায় চেপে আমরা সেই দিকেই রওনা দিলাম। নদীর তীরের আসপাশে, যেখানেই জল একটু স্বচ্ছ হচ্ছে আমরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে “কিলার অ্যাল্গি” শ্রেণীর কোনও শ্যাওলা যদি চোখে পড়ে তার নজর রাখছিলাম। কারণ সে অঞ্চলের আসপাশেই রিম্যানের থাকার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু কোথায় সেই শ্যাওলা, সাধারণ জাতের সামুদ্রিক শ্যাওলা ছাড়া দূর-দূরান্ত, মাইলের পর মাইল কিছুই চোখে পড়ে না। অথচ কি আশ্চর্য! ড. গিউসেপে বলেছিলেন ট্যাক্সিফোলিয়া এই দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর পরিমাণে আছে। কোথায় গেল তবে সেসব! দিন-রাত এক হয়ে গেল আমাদের খোঁজা কিন্তু শেষ হল না। রিম্যানকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যই বলা চলে। সেটা সত্যিই অসম্ভব হয়ে উঠত যদি না হঠাৎ সেই খোলসহীন শামুকের ভিড় দেখতে পেতাম।’ এই বলে ঘনাদা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আবার শুরু করলেন।
‘আমাদের ঝিল্লা যখন প্রায় ঝাগর্জে সমতলভূমির কাছে এসে পড়েছে এবং রিম্যানকে খুঁজে পাওয়ার আশা যখন নিরাশায় পরিণত হয়েছে, ঠিক সেই সময় এক অদ্ভুত জিনিস আমাদের দুজনেরই নজর কাড়ল। সে এক বীভৎস দৃশ্য। কাতারে কাতারে সেই খুদে খুদে খোলসহীন শামুক কূপা নদীর তীর ঘেঁষে জমা হচ্ছে। ঠিক যেরকম মৌচাক জুড়ে মৌমাছিরা থাকে। চকিতে মনে পড়ল তাদের খাদ্যরসই হল সেই অ্যাল্গির বিষ। তার মানে সেই বিষ কূপার জলে এসে মিশছে কোনওভাবে। ভাগ্যিস গিউসেপের ওই অবস্থা দেখার পর আমরা দ্রাভা নদীর থেকেই আমাদের দরকারি পানীয় জল নিয়ে রেখেছিলাম। আমি আর রায়া নিঃশব্দে ঝিল্লা নিয়ে নদীর তীর ধরে সেই শামুকদের রেখা অনুসরণ করতে থাকলাম। রেখাটা এক জায়গায় নদী ছেড়ে ডাঙ্গায় উঠে গেছে। আমরাও সেই রেখার পাশ বরাবর রাস্তা অনুসরণ করতে থাকলাম। অসংখ্য আধমরা শামুকের পচা গন্ধে ভর্তি সেই রেখা। আরও খানিকটা এগিয়ে একটা উঁচু জায়গা চোখে পড়ল। সেখানে একটা দোতলা সমান সাদা রঙের উঁচু বাড়ি। আমরা বাড়ির পেছনের দিকে এসে পড়ায় শুধু ঢোকার একটা খিড়কি দরজা ছাড়া, আর কোনও দরজা-জানলা চোখে পড়ল না। বাড়ির ছাদে সিমেন্টের গাঁথনির সঙ্গে পাতলা কাচের শেড আছে বটে কিন্তু সেগুলো সবই বন্ধ। আমি রায়াকে পেছনে রেখে নিরস্ত্র হয়েই লম্বা লম্বা ঘাসের ফাঁক দিয়ে প্রায় হামাগুড়ি দিতে দিতে এগিয়ে যেতে থাকলাম। অস্ত্র বলতে ওই শিশি ভর্তি জোঁক মারার নুন ছাড়া আর কিছুই নেই আমার কাছে। বাড়ির সামনে গিয়ে বুঝলাম বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা সরু এক নালার থেকে মাঝে মাঝে গড়িয়ে আসছে জলের সরু, কিন্তু প্রচণ্ড তীব্র এক ক্ষীণ রেখা। এ যে কোনও সাধারণ জল নয় সেটা এই হাজার মৃত শামুকের লাইন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। উপায় নেই দেখে সেই নালার খোলের ওপর বুটের হাল্কা ভর দিয়ে কোনওমতে কার্নিশ বেয়ে বাড়ির ছাদে পৌঁছলাম। সেই বন্ধ কাচের শেডের ওপর দুহাত রেখে মুখ দিয়ে আলো ঢেকে, হুমড়ি খেয়ে যখন ভেতরের দৃশ্য দেখার অনেক চেষ্টা করছি তখনই ঘটল এক বিপত্তি। ভাগ্যের এমনই পরিহাস সেই পাতলা কাচের শেড আমার ভার সামলাতে পারল না। সবসুদ্ধ ভেঙে পড়লাম নীচে এক রেলিং দেওয়া ঝুলন্ত রাস্তার ওপর। পড়েই জ্ঞান হারালাম।
জ্ঞান যখন ফিরল আমার হাত-পা তখন দুইই বাঁধা। ঝাপসা দৃষ্টিতে আমার পাশে একটা বড় লাল রঙের পিরানহা মাছের মতো কি ছটফট করছে মনে হল। ধীরে ধীরে চোখে আলোটা সয়ে যেতে বুঝলাম সেটা পিরানহা নয় – রায়া। তার লাল রঙের ব্রেস্ট প্লেট দেওয়া কামিলাক-টা আমার চোখ ঝলসে দিয়েছিল। আমারই মতো সে-ও একইভাবে বন্দী। কিন্তু আসপাশে চোখ ঘুরিয়ে যা দেখলাম তাতে নিজের চোখকে আজও যেন বিশ্বাস হয় না। পুরো বাড়িটাই একটা বিশাল বড় ল্যাবরেটরি। তার মাঝখান জুড়ে দেড়তলা সমান বিশাল এক কাচের বয়াম। ঠিক কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার অ্যাকুয়ারিয়ামের মতো। তাতে কিলবিল করছে লাখ লাখ সেই খোলশহীন শামুক। আমরা যেখানটা বাঁধা আছি তা ঠিক সেই দানব বয়ামের ওপরে ঝুলন্ত রেলিং দেওয়া রাস্তার নীচে। যেখানে শেড ভেঙে পড়েছিলাম তার দশ গজ মতো দূরে। সেই বয়ামে শুধু শামুকই নেই, রয়েছে একতলা সমান ভর্তি কিলার অ্যাল্গি। বয়ামটা আসলে একটা দাবনা দিয়ে দুটো ভাগে ভাগ করা। যার প্রাথমিক স্তরে ভর্তি করা হয়েছে সেই খুনি শৈবাল আর ওপরের স্তরে অর্থাৎ দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে সেই লাখ লাখ শামুক। বয়ামের ভেতর আস্রাবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই লাখ লাখ শামুক ভর্তি জলে মিশে যাচ্ছে ট্যাক্সিফোলিয়ার বিষাক্ত রসটুকু। তবে এই সব শামুক যেন সাধারণের থেকে একটু আলাদা। গায়ের রং কেমন কালচে নীল। আর আকৃতিতেও একটু বড়। বয়ামের ওপরের স্তর থেকে নলাকৃতির তিন ইঞ্চি পুরু এক নালা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছে। যার থেকে নিসৃত বিষাক্ত জল খুন করেছে হাজার হাজার শামুক। সেই নালা আবার ওপরে নীচে ওঠানো নামানোরও ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ বয়ামে কোনসময় প্রয়োজনের বেশি জলের স্তর বাড়লেই সেই বাড়তি জল নিষ্কাশনের এই পদ্ধতি। কিন্তু সেটাও যে কি মারাত্মক বিষ তা একটু আগেই আমরা দেখে এসেছি। কূপার জলে যা মিশছে দিনের পর দিন একটু একটু করে। সেই জলে মিশে আছে বিষাক্ত শামুকের শরীরের আঠা আর ট্যাক্সিফোলিয়ার বিশেষ প্রক্রিয়ান্তর বিষ। ল্যাবরেটরির ভেতরের চারপাশ তিন মানুষ সমান উঁচু সব বয়ামে ভর্তি। তাতে শুধু ঠেসে ভরা কিলার অ্যাল্গি। যার প্রত্যেকটা থেকে পুরুষ্টু বড় নল গিয়ে মিশেছে বয়ামের ওই প্রাথমিক স্তর ঘিরে। অ্যাল্গির প্রয়োজন মেটাতেই বোধহয় এই ব্যবস্থা। এতক্ষণে কূপার চারপাশে এই অ্যাল্গি বিশেষ দেখতে না পাওয়ার কারণ পরিষ্কার হল। বয়ামের পাশে ল্যাবরেটরির মেঝেতে রাখা রয়েছে প্রায় ৭-৮টা বরফের বড় বড় চাঁই। তার ভেতর একটা চাঁইয়ের কিছুটা কপিকলের সাহায্যে দড়ি দিয়ে বাঁধা। বোঝাই যায় একটু একটু করে ওই বরফের চাঁই মাঝে মাঝেই তুলে ফেলা হয় বয়ামের ভেতরে জলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য। বয়ামের দ্বিতীয় স্তরে আরও একটা নল রয়েছে তবে সেটা বন্ধ করা। সেটা বিচ্ছিন্ন করা আছে একটা লম্বা নালার থেকে। সেই নালা সুবিস্তৃত হয়ে মিশে গেছে বাইরের নদীর সঙ্গে। নদী মানেই অদূরে কূপা নদী শেষ হয়ে শুরু হচ্ছে দানিউব। বুঝতে বাকি রইল না এই অ্যাল্গির বিষে বিষাক্ত ওই লাখ লাখ শামুক ছেড়ে দেওয়া হবে দানিউবের জলে। তারা ঢুকে পড়বে ইউরোপের দক্ষিণ থেকে শুরু করে উত্তরের প্রায় প্রতিটা দেশে। ইকথায়োসিস গ্রাস করবে সমগ্র ইউরোপকে। বিপদটা আঁচ করে আমি চমকে উঠলাম।
এতক্ষণে ওপর থেকে ল্যাবরেটরির মেঝেতে টাক মাথা, এক গোল-গাল লোককে দেখতে পেলাম। সে মাথানিচু করে কন্ট্রোল রুমের কাছে এই ধ্বংসের তোড়জোড়েই ব্যাস্ত। চিনতে পারলাম – ড. রিম্যান। কন্ট্রোল রুমের বিপরীত দিকের দেওয়ালে থাকা আধ ইঞ্চির এক গর্ত থেকে একটা ক্ষীণ আলো এসে পড়েছে তার চেহারায়। বিকৃতির কোনও লক্ষণই তার মুখে দেখা যাচ্ছে না। কি এক অদ্ভুত শান্তি তার চোখে মুখে। আমাদের দিকে তাকিয়ে বেশ হাসছে। কিন্তু সে যে একটি বদ্ধ উন্মাদ তা তার কথায় প্রকাশ পাচ্ছে।
সে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে এক অদ্ভুত যান্ত্রিক স্বরে বললে, ‘ডস! শেষ পর্যন্ত তুমি এখানে যখন পৌঁছেই গেছ তখন তোমার আর গোটা ইউরোপের শেষ পরিণতি নিজের চোখেই দেখ নাও। এই শ্যাওলার বিষের পরিমান রিভার্স জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে আমি এমনই করেছি যে সেই বিষ দ্বিগুণ ভাবে বিষাক্ত আর নেশাগ্রস্ত করে তুলবে এই শামুকদের। তাদের অজান্তেই ইকথিওসিসের মতো রোগের মহামারীর বীজ তারা ছড়িয়ে দেবে সমগ্র ইউরোপে। এক নিমেষে মিশে যাবে দেশের পর দেশ। নিবে যাবে দেশবাসীর জ্ঞানের দম্ভ, অহংকার। পৃথিবীর সব থেকে সভ্য জাতি তাই না!
আবারও এক বিকৃত হাসি হেসে উঠল রিম্যান।
‘ভুলে যেও না তুমিও তাদের মধ্যে একজন। আমি যতটা সম্ভব দৃঢ়ভাবেই বললাম।’
সে যেন আমার কথার গ্রাহ্যই করল না। আরও জোর হাসিতে ফেটে পড়ল রিম্যান। যান্ত্রিক সেই স্বরে বলে চলল সে, ‘এই রকম একটা শামুক একটা গোটা শহরে ঢুকিয়ে দিতে পারে ইকথিওসিসের বিষ। আর এই বয়ামে রয়েছে লাখ লাখ শামুক। তাদের মাঝখানে যদি তোমাদের একবার এনে ফেলা যায় তুমি আর তোমার শাগরেদকে হয়তো আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না। দানিউবে এদের সঙ্গে তোমাদেরও ছেড়ে দেব। দুজনেই প্রার্থনা কর ডস। আর মাত্র কয়েক মিনিটের অপেক্ষা।’
তীব্র স্বরে চিৎকার করে আবার হেসে উঠল রিম্যান। কি অদ্ভুত সেই আওায়াজ। ঠিক টেলিফোনের ভেতর থেকে জোরে কেউ চিৎকার করলে যেমন শোনায়। এমন সময় আমার বাঁধা হাতের পাশে রেলিঙের একটা ভাঙা অংশের খোঁচ দেখে খানিক আশ্বস্ত হলাম। দড়ি বাঁধা হাতটা সেই দিকেই নিয়ে গিয়ে বার বার ঘষতে লাগলাম। তাতে কাজও দিল। একপাশের বাঁধা দড়ি কোনওরকমে খুলে এক হাতে ভর দিয়ে শরীরটাকে ওপরে টেনে তুললাম। রায়াকেও একইভাবে ইঙ্গিত দিয়ে দড়ি কাটার কথা বললাম। রিম্যান তখনও তোড়জোড়ে ব্যাস্ত। লোহার সিঁড়ি বেয়ে লাফিয়ে যখন একতলায় পৌঁছেছি বাইরে থেকে পাহারা দেওয়া দুটো ষণ্ডা লোক মত্ত হাতির মতো আমার দিকে ছুটে এল। আর পরক্ষণেই তাদের ঘরের এক কোণে গড়াগড়ি খেয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেল। গোঙানির আওয়াজ ভেসে এল কানে। এই সব ধস্তাধস্তির আওয়াজেও যেন রিম্যানের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। আশ্চর্য! সে তখনও শেষ প্রস্তুতি পর্বে ডুবে আছে। কন্ট্রোল রুমের পাশের মাঝারি অ্যান্ড্রয়েড স্ক্রিনে ফাইনাল সফ্টওয়্যার আপলোড দেখে যাচ্ছে একমনে। আমি নিস্তব্ধে রিম্যানের পেছনে গিয়ে যেই তাকে জাপটে ধরতে যাব তখনই ঘটল এক ভৌতিক কাণ্ড। রিম্যান যেন আমার নাগালের ভেতর দিয়ে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গেল। ব্যাপারটা কি ঘটল বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে এক বিষম ধাক্কায় ছিটকে পড়লাম সামনের দিকে। কোনওমতে সামলে পেছনে চেয়ে দেখি রিম্যান। ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতো তেড়ে আসছে আমার দিকে। সেই মসৃণ দেওয়ালের গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা আলোয় আবৃত তার শরীর। আমিও নিচু হয়ে তার মুখ বুঝে আপারকাট মারলাম। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হল না। কিছু একটা স্পর্শ করলাম মনে হল। কিন্তু পরক্ষণেই যে কে সেই। ওদিকে সফ্টওয়্যার আপলোড হয়েই চলেছে। আর মাত্র কুড়ি শতাংশ বাকি। অথচ প্রতি মিনিটে রিম্যানের এই বিকট গুঁতোর জেরে আমি কিছুতেই অ্যান্ড্রয়েড স্ক্রিন অবধি পৌঁছতে পারছিনা। প্রায় পনেরো মিনিট এইরকম একনাগাড়ে চলার পর ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হল। দেওয়ালের গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা আলোটা যে কোনও সাধারণ আলো নয় তা আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। এই ধরনের ‘হলোগ্রাম-টেক্টাইল প্রযুক্তি’ বিশ্বের বেশ কিছু নামীদামী মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারীতে ব্যবহার হয়ে থাকে। সেই আলো আসলে আসছে সেরকমই কোনও এক উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন ‘হ্যাপ্টিক প্রোজেক্টর’ থেকে। অর্থাৎ এই আলো সৃষ্টি করছে একধরনের বিশেষ হলোগ্রাম যা আমাদের স্পর্শ করতে পারে। আবার সেই আলোর ইচ্ছেমতো আমরাও তা স্পর্শ করতে পারি। তার মানে এ রিম্যান নয় – রিম্যানের প্রতিচ্ছবি মাত্র। আসল রিম্যান নিশ্চয়ই কন্ট্রোল রুমের ভেতরে। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার উপায় এখন একটাই। রিম্যানের এই হলোগ্রাম পেরিয়ে সেই গর্ত বুজিয়ে আলো বন্ধ করতে হবে। আমি পাগলের মতো চারপাশ দেখতে থাকলাম একটা জম্পেশ কিছুর আশায়। পকেট হাতড়াতেই আমার হাতে যে জিনিস এসে ঠেকল তার আর কোনও বিকল্প নেই। একটা ডিগবাজি খেয়ে, রিম্যানের সেই ছায়ার নাগাল কাটিয়ে, নীচ দিয়ে গলে কোনওমতে পকেট থেকে সেই ছিপি বার করে সেটা আটকে দিলাম গর্তে। কি আশ্চর্য যোগাযোগ – যেন আধ ইঞ্চির সেই গর্তের জন্যেই এই ছিপি তৈরি হয়েছে, এমনই খাপে খাপ এঁটে গেল সেটা। যেন এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্যেই এতদিন ধরে সমস্ত ঝড়-ঝাপটা যুঝে সম্রাট অশোকের মতো সেই ছিপি আমার পকেটে টিকে ছিল। পেছন ফিরে দেখি রিম্যানের ভূতুড়ে প্রতিচ্ছবি হাওয়ায় মিলিয়েছে। আমি অ্যান্ড্রয়েড স্ক্রিনের কাছে দৌড়ে গিয়ে আপলোড থামাতে পাশের কাচের ঢাকনা সরিয়ে বড় লাল সুইচটা টিপে দিলাম। কিন্তু তাতে কোনও কাজ দিল না। বুঝলাম সেটিও নকল। বরং সফ্টওয়্যার আপলোড হয়েই চলল, থামলো না। পাশে তাকিয়ে দেখলাম রায়া আরও চারটে ষণ্ডা লোককে ধরাশায়ী করেছে। খানিকক্ষণ পর কন্ট্রোল রুমের দিক থেকে এক বিকট অট্টহাসি শোনা গেল। সে হাসি রিম্যানের নয়। সেই হাসির আওয়াজ আমার ভীষণ চেনা। কন্ট্রোল রুম থেকে বেরিয়ে এলেন ড. গিউসেপে। তবে এ যে গিউসেপে নয় তা আমি জানি। মুখের ডানপাশ থেকে মুখোশের মতো নকল চামড়া খানিক খসে পড়েছে তার। এবারে সে গলার কাছে ছোট্ট ভয়েস মডিউলেশন যন্ত্র সমেত নিজেই সমস্ত নকল চামড়া টেনে খুলে ফেলল। একি – এ যে সার্জেন্ট কলিন্স।
‘অভিনয়টা ঠিক পছন্দ হল না মনে হচ্ছে ডস? হাঃ হাঃ হাঃ… হারতে কি আর সবার ভালোলাগে ডস? সেই একই বিকৃতি নিয়ে কলিন্স বলে চলল, কিন্তু আজ আমি জিতেছি। পৃথিবী বিখ্যাত ‘হের ডসের’ চোখও ধোঁকা খায় তাহলে? ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার ফল ইউরোপ আজ হাতে নাতে পাবে। রিম্যানও শেষ অবধি আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল। এতদিন ধরে আমাদের খেয়ে, আমাদেরই জন্যে কাজ করে ভাইয়ের কথায় বুদ্ধিভ্রষ্ট হল তার। সৎ ভাইয়ের ওপর হঠাৎ দরদ যেন উথলে উঠল। তাই আমাকেই শেষে নামতে হল এই নাটকে। বন্দুকের ডগায় দুই ভাইকে রেখে তোমার জন্য একটা চিঠি লিখিয়ে নিতে বেশি সময় লাগেনি। বন্ধুর বিপদে তুমি যে আসবেই এ আর এমনকি। সেই কঙ্গোয় লায়ন হান্টিঙের সময় থেকে তোমার সঙ্গে আমার বোঝাপড়া বাকি। তুমি ছাড়া যে এই পরিকল্পনা অসম্পূর্ণ ডস।’ ভুরু দুটো কুঁচকে, দন্তগুচ্ছ বার করে বিকৃতভাবে হাসল কলিন্স।
এতক্ষণে বুঝতেই পারছ গিউসেপে আর রিম্যানের পরিণতি। সে শক্ত দুহাতে আমার আর রায়ার দিকে তাগ করে ধরে আছে লেসার দেওয়া দুটো কালো গ্লক পিস্তল। তার একটার গায় আঁচড় দিয়ে জিডি লেখা দেখে বুঝলাম সেটা গিউসেপে ভেবে আমিই তাকে দিয়ে এসেছিলাম এখানে আসার আগে। বনমানুষের মতো ঘনদুটো ভুরুর নীচে কুতকুতে দুটো জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে কলিন্স বলে চলল, ‘তোমার অতিথি আপ্যায়ন গিউসেপে হয়ে তাই আমিই করলাম। ভেবেছিলাম রিম্যানকে খুঁজতে খুঁজতে নদীর ওই বিষাক্ত জলেই পচে মরবে। আর তা না হলে আমার কাছে ফিরে আসলে আমি শেষ করব। কিন্তু এখানেই যখন তুমি চলে এসেছ তখন ষোলকলা পূর্ণ হল। এই বিষাক্ত শামুকদের নিয়ে দানিউবের জলে ইউরোপের সঙ্গে পচে মরবে তোমরা।’
আমি হাসতে হাসতে এগিয়ে আসতে থাকলাম কলিন্সের দিকে। কলিন্স বন্দুক উঁচিয়ে চিৎকার করে বলল, ‘আর এক পা-ও না ডস। সাবধান!’ রায়াও মনে হয় হাত নেড়ে আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু আমি এগিয়ে আসতে থাকলাম। এবারে গুলি চলল। আমার শরীরের মধ্যে দিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সেই গুলী।’
এই সময় শিবু বলে উঠল, ‘সেকি! আপনি বুঝি তার আগেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন? আর ভূত হয়ে কলিন্সের ঘাড়ে চাপবেন বলে ভাবছেন?’
গৌর একটু বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আহ! ভুল বকছো কেন শিবু? তাহলে কি আর ঘনাদা এখন আমাদের গল্প শোনাতেন? চুপ করে শোনোই না বাপু।’
ঘনাদা সেদিকে কর্ণপাত করলেন না । এক অদ্ভুত তাচ্ছিল্যের সুরে বলে চললেন, ‘সেটা যে আমি নই এতক্ষণে তোমাদের পরিষ্কার করে দিই। আমি গিউসেপের অজান্তে গিউসেপের পেছনে লুকিয়েই এতক্ষণ নাটকের সমস্ত দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। যেটা গিউসেপের সামনে ছিল সেটা আমার হলোগ্রাম মাত্র। ছিপি দিয়ে দেওয়ালের গর্ত বোজানোর সময় দেখলাম প্রোজেক্টরের আলো দেওয়ালের ভেতর থেকে আসছে। বাকি ছোট ছোট আল্ট্রাসনিক ট্রান্সডিউসারসহ হ্যাপ্টিক যন্ত্রের মেইন সেটআপটা আধো অন্ধকারে দেওয়ালের এক কোণ থেকে বন্দুকের মতো তাগ করা রয়েছে বাইরের দিকে। ঠিক যেখানটা রিম্যান ছিল। এখন আমার হলোগ্রামটা রয়েছে, সেই দিকে। আল্ট্রাসনিক সেই রেডিয়েশানের চাপই আমার চামড়ার ওপর রিম্যানের স্পর্শের অনুভূতি এনে দিচ্ছিল। কাজটা আরও সোজা হয়ে গেল। গর্তে ছিপি এঁটে সেট-আপটা রিসেট করে সেই জায়গায় আমার ইমেজ পুরে দিলাম। আর গর্তের পাশটা আমার কাছে থাকা, আর্কিওলজির কাজে ব্যবহৃত ছোট্ট ট্রোয়েলটা দিয়ে খুঁচিয়ে প্রোজেক্টরের সামনে থেকে ছিপিটা আবার বার করে নিলাম। তারপর আপলোডিং থামানো গেল না দেখে হাসির আওয়াজ পেয়ে কন্ট্রোল রুমের দরজার পাশে এসে ঘাপটি মেরে দাঁড়ালাম। আর উল্টোদিকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল ঠিক আমারই মতো হুবহু হলোগ্রামটা। দরজার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে।
এতক্ষণে কলিন্স বিস্ফারিত দুটো চোখে চেয়ে থেকে বলে উঠল, ‘ইমমম-পসিব্যাল। ডসসস…’ ভুল ভাঙাতে আরও দু-বার ফায়ার করল সে। কিন্তু সেই একই ঘটনা ঘটায় সে তখন তার সঙ্গে করা চালাকিটা ধরতে পেরেছে। আমি এবার আস্তে করে কলিন্সের পেছন থেকে তার কানের পাশে ফিস ফিসিয়ে বললাম, ‘নামটা “ডস” নয় সাহেব। এই শর্মার পুরোনাম “ঘ-ন-শ্যা-ম দা-স”।
‘এই বলে পেছন থেকে সজোরে কলিন্সের ঘাড়ে ইং-ঝুয়া স্টাইলে একটা হ্যান্ডকিক মারলাম। কলিন্স জ্ঞান হারিয়ে মেঝের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। সফটওয়্যার আপলোড তখন আর টু পারসেন্ট বাকি। কোনওরকমে কন্ট্রোল রুমের ভেতর দৌড়ে গিয়ে আপলোড বন্ধ করার আসল লাল সুইচটা টিপতেই সেটা বন্ধ হল।’
শিবুর কাশিটা বোধহয় সত্যিই ছোঁয়াচে। হঠাৎ এই ফ্যাস-ফ্যাস আওয়াজ শুনেই আমরা ধমক দিলাম।
ঘনাদা রক্তচক্ষু দিয়ে শিবুর দিকে ভ্রুকুটি করেই বলে চললেন, ‘সে সব তো হল কিন্তু এই লাখ লাখ বিষাক্ত শামুক নিয়ে এখন কি হবে সেই প্রশ্নই পেয়ে বসল আমায়। ঠিক সেই মুহূর্তে কপিকলটার দিকে তাকিয়ে একটা বুদ্ধির ঝিলিক খেলে গেল মাথায়। আমি ওপরে চেয়ে রায়াকে নির্দেশ দিয়ে বললাম কপিকল দিয়ে বরফের সব চাঁইগুলোকে এক এক করে ওই বয়ামের ভেতর ফেলতে। সেই ফাঁকে আমি বরফের পাশে পরে থাকা আইস অ্যাক্সটা নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলাম। সরু নালার মুখে শামুকের মৃতদেহ বুট দিয়ে পরিষ্কার করে নালার খানিক সামনে সতর্কভাবে মাটি কোপাতে লাগলাম। যতক্ষণ না বেশ একটা আধ-চৌবাচ্চা মার্কা গর্ত তৈরি হয়। তারপর দোতলায় উঠে আমার শিশির ভেতরে থাকা ভর্তি নুন ঢেলে দিলাম বয়ামের জলে আর রায়ার রুপ্তোয় থাকা প্রায় দু-ব্যাগ সমান নুনও যোগ করলাম তার সঙ্গে। পনেরো মিনিটের ভেতর খেল খতম। কন্ট্রোলরুম থেকে বয়ামের ভেতর বাড়তে থাকা জলের চাপের বিস্ফোরণ কাটাতে আর সেই বিষাক্ত জল বাইরে বার করতে সেই নিষ্কাশক নালাকে ওপর নীচে অ্যাডজাস্ট করতে থাকলাম। পিচকিরি দিয়ে বিষাক্ত জল লাখ লাখ বিষাক্ত শামুকের মৃত দেহ নিয়ে সিঁধোল সেই হাফ-চৌবাচ্চা গর্তের মধ্যে। তারপর রায়ার সাহায্যে কোপানো মাটি চাপা এবং শামুকদের সলিল-সমাধি দুইই সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছিল আর কি। পরে অবশ্য কলিন্স ধরাও পড়েছিল ইউরোপ সরকারের হাতে।’ এই বলে ঘনাদা থামলেন।
গৌর প্রশ্ন করল, ‘সবই তো বুঝলাম কিন্তু জলে নুন কেন দিলেন?’
ঘনাদা চোখগুলো বড় বড় করে মুচকি হেসে বললেন, ‘নুন জলের হিমাঙ্ক কমিয়ে দেয়। বরফগুলো তাই না গলে অনেকক্ষণ জলটাকে ঠান্ডা রেখেছিল। ঠান্ডা এবং নুন এই দুটো জিনিসই শামুকদের বড় শত্রু তা জানো না বুঝি।’
অবস্থা বুঝে শিবু সেই সুর টেনেই প্রশ্ন করল, ‘ঘনাদা! আপনি বললেন শিশি এবং এই মজবুত ছিপি দুইই দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বানিয়ে এনেছেন। কিন্তু আমাদের পাড়ার নগেন ডাক্তারও কি আজকাল সেই দক্ষিণ আমেরিকা থেকে তাঁর হোমিওপ্যাথি ওষুধের শিশি অর্ডার দিচ্ছেন? আসলে তাঁর ওষুধের শিশিগুলোও ঠিক এমনই দেখতে কি না।’
ঘনাদা যেন শিবুর শেষ প্রশ্ন শুনলেনই না। হয়তো ভুল করেই শিশিরের সিগারেটের কৌটোটা তুলে নিয়ে অন্যমনস্কভাবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
Tags: অঙ্কিতা, কল্পবিজ্ঞান গল্প, ঘনাদা, চতুর্থ বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, জটায়ু, পূজাবার্ষিকী, সৌরভ ঘোষ
Very nice… Just like the original Ghanada stories.
Keep it up. Like to read more.
Many Many thanks sir..it really means a lot 🙂
আশ্চর্য অবিশ্বাস্য ইত্যাদি কথাগুলোও কম হয়ে যায় এই গল্পের জন্য! কে বলবে এ গল্প প্রেমেন্দ্র মিত্রের নয়! নিখুঁত প্যাস্টিশ, সেই সঙ্গে গল্পটিও অনবদ্য।
আভূমি সেলাম রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ ত্রিদিবেন্দ্র বাবু ! ভালোবাসা ও প্রণাম নেবেন 🙂
অতি চমৎকার হেরডসি আখ্যান। ভরপুর উপভোগ করলাম।
Many thanks Riju babu..porer bar points gulo mathay rakhbo 🙂
খাসা গল্প, তেমনি খাসা লেখনী। এক্কেবারে প্রেমেন্দ্রীয় ঢঙে লেখা। শেষটা অনবদ্য। খালি দুইখান কথা আছে –
১। শুরুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লেখটা ভালো লাগল না। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, প্যাস্টিশে মূল চরিত্রের পিরিয়ডটা না পাল্টানোই ভালো। প্যাস্টিশ হল পিরিয়ড পিস। ঘনাদার গল্প যখন লেখা হয়েছে তখন সোশ্যাল মিডিয়ার অস্তিত্ব ছিলনা। ঠিক যেমন এন্ড্রয়েড এর উল্লেখ না করলে ভালো হত।
২। মেসের দীর্ঘ দিনের চাকর রামভূজ কেন পাল্টে হরি হল, তার একটা ব্যাখ্যা থাকলে ভালো হত।
৩। গল্পের কথক আর শ্রোতা সবাই তো কলকাতার বাসিন্দা। কাজেই শুধু আলিপুরের চিড়িয়াখানা বললেই হত। কলকাতার আলিপুরের বলার দরকার ছিলনা।
পরিশেষে বলি, একটা গল্পে খিদে মিটলনা। তোমার হাত দিয়ে আরো ডস সাহিত্য চাই। ভালো থেকো।
অসংখ্য ধন্যবাদ কাকু 🙂 ভালোবাসা ও প্রণাম নিও।
পয়েন্ট ১ এবং ২ এ দেখাতে চেয়েছি বর্তমান কালের কিছু ছোঁয়া। এর অবশ্য কারণ টাইমলাইন। এই গল্পে তুমি যা যা তথ্য পড়েছ সবই প্রায় বর্তমানে ঘটনা ২-৩ বছরের ভেতর। এবং সবই সত্যি। ঘনাদার অন্য গল্পগুলোর মতই।যদি কেউ এই নিয়ে রিসার্চ করতে চান সেই ভেবেই লেখা। সেই ভাবেই সোশ্যালমিডিয়ার জমানায় মেসের ছেলেদের শুধু দাবা, তাস,ক্যারামে আটকে রাখতে মন চায়নি। হরির আগমন তাই রামভূজের বার্ধ্যকেরও কারণ হতে পারে সেই ভেবে পাঠকের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। ৩ নং পয়েন্ট সহমত আপনার সঙ্গে। অবশ্যই এই ব্যাপারটা মাথায় রাখব ।
Gopoti khubi valo laglo. Onek porisram korle erakam gappo dar korano jay.
Amar baktigato vabe mone holo galpota ektu jotil hoye gachay. Ektu sohoj sorol hole amar moton lokeder bujhte subidha hoto. Kolpobiggan jotil hok kintu Goolpobiggan sorol hok na kano!
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 🙂 দারুন বললেন 🙂 অবশ্যই পরের বারে আপনার কথা মাথায় থাকবে।
চমৎকার লেখা । অনেক ধরণের উপাদান আছে ।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
aro chai,dhanyobaad
prosenjit
Thank you 🙂 chesta korbo jotha sadhyo 🙂
খুব ভালো লাগল গল্পটি। জমজমাট প্লট।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
ধন্যবাদ দাদা । খুব ভালো লাগল। ভালো থাকবেন 🙂
অদ্ভুত সুন্দর
ধন্যবাদ দাদা 🙂 ভালো থাকবেন 🙂
প্রেমেন্দ্র মিত্রের স্টাইলে এক সিটিঙে গল্পটা শেষ করলাম। ভালো লেগেছে। কৈশোরের ঘনাদা বুদবুদটা আবার তৈরি করার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় থাকবো।
অসংখ্য ধন্যবাদ সোহম ভাই 🙂 অবশ্যই চেষ্টা করব :)ভালো থেকো 🙂
দারুন লেগেছে। সাসপেন্স বেশ জমজমাট, সায়েন্সের ব্যাখ্যা ও তথ্যগুলো ইন্টারেস্টিং, মাঝেমাঝে হালকা হিউমার সব মিলিয়ে চমৎকার একটা সায়েন্স ফিকশন ছোট গল্প। লেখকের কাছে এমন গল্প আরও চাই। শুভকামনা রইল।
সাইফূল বাবু অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার কমেন্টের জন্য। খুব ভালো লাগল 🙂 চেষ্টা করব আপনার আশা পূরণের। ভালো থাকবেন।
খুব আনন্দ পেলাম! দারুণ কাহিনী বিন্যাস, আসল প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখার ফ্লেভার পেলাম!
খুব ভাল লাগল ।