ডরোথি
লেখক: অর্ণব দাস
শিল্পী: সুমিত রায়
ডরোথি
লেখক – অর্ণব দাস
অলংকরণ – সুমিত রায়
আজকাল একদম ভালো লাগছে না শান্তনুর ব্যবহার। যখন তখন জড়িয়ে ধরে। তখন শরীরের প্রতিটা খাঁজে ওর হাত আর ঠোঁট খেলা করে। প্রতিটা রাতে শরীরটাকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে নিজেকে অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত করতে চায় শান্তনু। হ্যাঁ, সময় সময় ভালো লাগে ব্যাপারটা। কি এক অজানা শিহরন খেলা করে যায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কিন্তু তাই বলে যখন তখন? সবসময় তো শরীরের এই খেলা ভালো নাও লাগতে পারে। সেটা যে কেন ও বুঝতে চায় না কে জানে?
‘ডরোথি, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ? কতবার ডাকছি তোমায়। কি হল ডরোথি?’
শান্তনুর গলায় চমক ভাঙল ডরোথির। এতক্ষণ সে নিজের চিন্তাতেই ডুবে ছিল। ছি ছি! শান্তনু কতবার ডেকেছে কে জানে? ওভেনের দিকে তাকিয়ে দেখল স্ক্রিনে টাস্ক কমপ্লিট দেখাচ্ছে। তাও তিন মিনিট আগেই। তাড়াতাড়ি খাবারটা প্লেটে সাজিয়ে এক নিমেষে হাজির হল খাওয়ার টেবিলে। শান্তনু রেডি হয়ে বসে আছে। টাইম চেক করে ডরোথি বুঝল যে সে আজ পাক্কা পাঁচ মিনিট লেট। আর ঠিক সাড়ে এগারো মিনিট পরেই শান্তনুর অফিস ক্যাব চলে আসবে।
‘তোমাকে কতবার ডাকলাম। কি করছিলে এতক্ষণ কিচেনে? এনি প্রবলেম?’
‘নো প্রবলেম শান্তনু। একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। সরি ফর বিইং লেট। এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। আর ঠিক দশ মিনিট পঞ্চাশ সেকেন্ড হাতে রয়েছে।’
শান্তনু খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ডরোথি একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই লোকটাকে নিয়েই তো সে এতক্ষণ ভাবছিল। কখনও বড্ড মায়া হয় ওর জন্য, আবার কখনও খুব রাগ। এই শান্তনুই মাঝে মাঝে এমন বদলে যায় যে সে চিনতেই পারে না। তখন শান্তনু যেন ক্ষুধার্ত লেপার্ড আর সে তার শিকার।
‘ফাটাফাটি ডরোথি, তোমার তুলনা হয় না। এত সুন্দর হয়েছিল না রান্নাটা যে বলার নয়।’
শান্তনুর কথায় চমক ভাঙল ডরোথির। সে একটু ব্লাশ করল। শান্তনু অবশ্য তখন ডরোথির দিকে পেছন ফিরে হাত পরিষ্কার করছিল, তাই সেটা দেখতে পেল না।
‘আমি কিন্তু কিছুই করিনি শান্তনু, শুধু উপকরণগুলোর যোগান দিয়েছি মাত্র।’
শান্তনু রেডি হয়ে গিয়েছিল। সময় চেক করে দেখল আরও এক মিনিট বাকি আছে ক্যাব আসতে। সে মৃদু হেসে বলল, ‘রান্নার তো ওইটাই আসল জিনিস ডরোথি। আর সেটা করতে তুমি সিদ্ধহস্ত।’
দরজার স্ক্রিনে ফুটে উঠল ক্যাবের ছবি। এবার কাজে বেরোতে হবে শান্তনুকে। সে ডরোথির গালে একটা হালকা চুমু দিয়ে হেসে এগিয়ে গেল ক্যাবের দিকে। তারপর তাকে নিয়ে ক্যাব উড়ে গেল গন্তব্যস্থলে। দরজা লক্ হওয়ার পর ডরোথি টেবিল পরিষ্কার করতে এগিয়ে এল।
‘ইস্, এত বয়সের একটা লোক অথচ খায় দেখো একেবারে বাচ্চার মতো করে। চারিদিকে কত ছড়িয়েছে।’
আবার নিজের ভাবনায় ডুবে যায় ডরোথি। এখন তার অনেক কাজ। এই গোটা সংসারের দায়িত্ব তার ওপরে।
২
ক্যাবে ওঠার পর থেকে শান্তনু একটু অন্যমনস্ক হয়ে ছিল। পাশেই অরণ্য বসেছে। তার ম্যানেজার। সদ্য তার বিয়ে হয়েছে, তাই ও খুব আনন্দিত। আনন্দে আর উত্তেজনার চোটে সে তার বউ আর নতুন সংসারের যাবতীয় খুঁটিনাটির কথা বলে এই মূহুর্তে শান্তনুর মাথা খাচ্ছিল। শান্তনুর একদম ভালো লাগছিল না তার কথা শুনতে। কিন্তু কিছু করার নেই, সে শান্তনুর বস। কোম্পানির নিয়ম মানতে সে বাধ্য বলে অন্য এমপ্লয়িদের সাথে এক ক্যাবে যায়। নাহলে কি যেত নাকি?
‘শান্তনু, তোমার কি শরীর খারাপ?’
‘না তো, হঠাৎ আপনার এরকম মনে হল কেন? ডু আই লুক সিক্?’
‘না তা নয়, কিন্তু একটু চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে। আমি এত কথা বলে যাচ্ছি, কিন্তু তুমি বোধহয় শুনছো না।’
অরণ্যর গলার টোনে যে ইঙ্গিত ছিল তা বুঝতে অসুবিধা হল না শান্তনুর। চটজলদি হেসে সে ব্যাপারটা হালকা করার চেষ্টা করল। তারপর বলল, ‘আরে না না, আপনার কথা শুনবো না কেন? এখন তো আপনারই দিন। নতুন সংসার বলে কথা। আমরা তো এখন আপনার কাছ থেকেই টিপস্ নেব। কি দেবেন তো দু-চারটে টিপস্ আমাদেরকেও।’
প্রশংসায় নিমেষে গলে জল হয়ে গেল অরণ্য। একগাল হেসে বলল, ‘দু-চারটে কেন, আরও অনেক বেশি দেব। আফটার অল তোমরাও তো একদিন বিয়ে করবে। কি তাই না? তখন এই ট্রিকগুলো তোমাদের কাজে আসবে।’
পেছন থেকে শান্তনুর কলিগ গগন বলে উঠল, ‘দিল্লি বহুত দূর স্যার, এই দুহাজার দুশো উনিশ সালে একটা বিয়ের রেজিস্ট্রেশন খরচ আর সংসার করার খরচ সামলানোর মতো স্যালারি পেতে পেতে আমাদের টাক পড়ে যাবে।’
ক্যাবের সবাই কথাটায় হেসে উঠলেও সবাই মনে মনে জানে যে কথাটা কতটা সত্যি। গত পঞ্চাশ বছরে বিয়ে জিনিসটা মারাত্মক হারে কমে এসেছে। এমনিতেই মেয়েদের সংখ্যা যে হারে কমে এসেছে তাতে একটা মেয়ে খুঁজে বিয়ে করাটা খুব কঠিন। তার ওপর সরকার বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করার খরচ এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছে যে বিয়েটা এখন অনেকের কাছে স্বপ্ন। কতশত যুবক এখন খালি বিয়ের জন্য টাকা জমাচ্ছে।
শান্তনুর ভাগ্য তাও কিছুটা ভালো যে সে লিভ-ইন করতে পারছে ডরোথির সাথে। অনেকের স্যালারি তো সেটাও পারমিট করে না। কিন্তু কিছুদিন হল শান্তনু লক্ষ্য করছে যে ডরোথি কেমন যেন অন্যরকম ব্যবহার করছে। গত পনেরোদিনে ডরোথিকে অনেকবার অন্যমনস্ক হতে লক্ষ্য করেছে সে। যেন মনে হয় সে কিছু ভাবছে। কিন্তু এই তো পনেরোদিন আগেও সবকিছু কত নর্মাল ছিল। পনেরোদিন আগে সেই যে ঘটনাটা ঘটল, তার পর থেকেই যত গোলমালের সূত্রপাত।
এসব ভাবনাচিন্তার মধ্যেই ক্যাব অফিস ক্যাম্পাসে পৌঁছে গিয়েছে। সেখান থেকে নেমে এবার টাওয়ারের পঞ্চাশ তলায় যেতে হবে। ছেচল্লিশ থেকে পঞ্চান্ন তলা অব্দি শান্তনুর কোম্পানির অফিস। শান্তনু ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে প্রথমে ওই ছেচল্লিশ তলাতেই চাকরি পেয়েছিল। এখন প্রোমোশন পেয়ে পঞ্চাশ তলায় এসেছে। তবেই না সে ডরোথির সাথে লিভ-ইনের অ্যাপ্লাই করতে পেরেছে!
লিফট দিয়ে উঠতে উঠতে শান্তনু ঠিক করল যে কাল একটা কল দিতে হবে ডরোথির জন্য। ওর বোধহয় কোনো অসুবিধা হচ্ছে। চেকআপ করাতে হবে।
৩
সারাটা দিন কাজের মধ্যে দিয়ে কেটে গেল ডরোথির। তবে এর মাঝে মাথাটা দু-একবার ঝিমঝিম করে উঠেছিল তার। কি হচ্ছে কে জানে? সেই ঘটনার পর থেকে মাঝে মাঝেই তার মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে।
তখন শান্তনুর সাথে লিভ-ইনের মাত্র নয়মাস কেটেছে। দিনটা ছিল রোববার। শান্তনুর ছুটির দিন। ছুটির দিনে শান্তনু তার হাতে হাত লাগিয়ে বাড়ির কিছু কাজ করে। শান্তনুর মতে তাতে নাকি ভালোবাসা বাড়ে। কিন্তু সেদিন কাজের চাপ ছিল, তাই ছুটির দিনেও শান্তনু কাজ করছিল। ডরোথি ওয়াশিং মেশিনের স্ক্রিনটা ছুঁতেই জোর ঝটকা খায়। কোনো কারণে ওয়াশিং মেশিনে শর্ট সার্কিটের কারণে সেটা ডরোথিকে খুব জোর ইলেকট্রিক শক দিয়েছিল। গোটা একদিন পর চোখ খুলেছিল ডরোথি। চোখ খুলে সে দেখে তার পাশে চেয়ারে বসে শান্তনু ঘুমোচ্ছে। ঘুমন্ত শান্তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন একটা অনুভূতি হয়েছিল তার।
এই অনুভূতি তার আগে হয়নি। এটাকে ঠিক কি বলে তাও জানে না সে। ঘুমন্ত শান্তনুকে তখনি জড়িয়ে ধরে আদর করতে ইচ্ছে করছিল। ওই ঘটনার পর থেকে চারপাশের দুনিয়াটাই বদলে গিয়েছে ডরোথির। চারিদিকের কংক্রিটের জঙ্গলের ভেতর সে যে কখন শব্দ-বর্ণ-গন্ধময় পৃথিবী আবিষ্কার করে ফেলেছে সেটা সে নিজেই জানে না। অবশ্য তাতে ডরোথির ভালোই হয়েছে। একঘেয়ে জীবনটা কেমন যেন পালটে যাচ্ছে তার।
শুধু শান্তনুর সবসময় তার শরীরকে নিয়ে খেলা করার ধরণটা তার এখন একেবারেই পছন্দ হচ্ছে না। আগেকার কথা আলাদা, কিন্তু এখন তার ওসব সবসময় ভালো লাগে না। শান্তনুকে সে ভালোবাসে, কিন্তু তাই বলে তার নিজের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না? তারও যে ভালো লাগা মন্দ লাগা আছে সেটা কেন শান্তনু বোঝে না?
শক খাওয়ার পর শান্তনু তার খুব খেয়াল রাখত। শান্তনু তার খেয়াল করত সেটা তার খুব ভালো লাগত। একটু একটু করে ডরোথি শান্তনুর প্রতি তার ভেতরের অন্যরকম অনুভূতির মানে বুঝতে শিখেছে। এখন সে জানে যে সে শান্তনুকে ভালোবাসে। শুধু শান্তনু একটু যদি তার অনুভূতির খেয়াল করত।
রাত ঠিক আটটায় শান্তনুর ক্যাব তাকে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিয়ে গেল। অন্যদিনের মতো শান্তনুকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল বটে, কিন্তু সে খুশিতে ফেটে পড়ছিল। ব্যাগটা রেখেই শান্তনু এসে ডরোথিকে জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল, ‘ও ডরোথি মাই ডিয়ার, আমি আজ প্রমোশন পেয়েছি! কাল থেকে আমি অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার পোস্টে জয়েন করব। কি আনন্দ যে আমার হচ্ছে তা বলে বোঝাতে পারছি না। এবার আমার স্যালারিও একটা ভদ্র জায়গায় যাবে। যদিও অরণ্যটা এখনও আমার বস থেকে গেল।’
‘এই আনন্দের মুহূর্তে তোমার বসের কথা ভেবে মন খারাপ কোরো না শান্তনু। এখন আমাদের আনন্দ করার সময়। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি তোমার সবচেয়ে পছন্দের প্রোটিন ড্রিঙ্ক বানিয়ে আনছি।’
কথাগুলো বলে ডরোথি আনন্দে নাচতে নাচতে কিচেনের দিকে গেল। শান্তনুর প্রমোশন বলে কথা। তার তো খুব আনন্দ আজকে। এবারে সে শান্তনুকে বিয়ের কথাটা বলতে পারবে। তবে আজ নয়, দুতিনদিন যাক। তারপর শান্তনুর যখন মুড ভালো থাকবে তখন বলা যাবে।
প্রমোশনের আনন্দে আজ শান্তনু সিনেমার একটা প্রিমিয়াম স্লট কিনে ফেলল। ঠিক রাত সাড়ে নটায় বাড়িতে স্পেশাল সার্ভিস ড্রোন চলে এল। তারপর সিক্স ডি হলোগ্রাম প্রজেক্টরে শুরু হল সিনেমা। দুজনে চুটিয়ে এনজয় করল সিনেমাটা। শান্তনু পুরো সিনেমা উপভোগ করেছে, কিন্তু ডরোথি অনেকটা সময় শান্তনুর হাসিমুখ দেখে কাটিয়েছে। শান্তনু হাসলে ডরোথির ভেতরে কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে। হয়তো এটাই ভালোবাসা। শান্তনু মাঝে দু-একবার তার দিকে ঘুরে জিজ্ঞাসা করেছে, কি হয়েছে? কিন্তু ডরোথি মাথা হেসে নেড়ে বলেছে, কিছু না।
রাতে যথারীতি শান্তনুর সেই শরীরের খেলা আরম্ভ হল। মাথাটা আজ বেশ কয়েকবার ঝিমঝিম করেছে। তাই ডরোথির আজ একদম ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু শান্তনু তো শোনে না। তার ওপর আজ প্রমোশনের খবর পেয়ে সে আরও অ্যাগ্রেসিভ ভাবে ডরোথিকে আদর করছে। আনন্দ তো ডরোথিরও হচ্ছে, কিন্তু সব আনন্দ কি বিছানায় প্রমাণ করতে হবে?
বাধা সে দিতেই পারত, কিন্তু শান্তনুর আজকের স্পেশাল রাতটা সে মাটি করতে চায় না। বিছানায় তার ওপর ওঠানামা করতে থাকা ঘর্মাক্ত শান্তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে সে তার সব অনিচ্ছাগুলোকে ভুলে থাকতে চায়। তাই সে শান্তনুকে আরও জোরে আঁকড়ে ধরে।
৪
আজ ডরোথির জীবনে সবথেকে আনন্দের দিন। কারণ এবারে শান্তনু তার সবচেয়ে পছন্দের কাজটা করতে চলেছে।
আজ সকালে কিচেনে থাকাকালীন ডরোথি শুনতে পায় যে শান্তনু তার মায়ের সাথে কথা বলছে। শান্তনুর মা ডরোথিকে ভালোভাবে নেন না সেটা সে জানে, তাই ওদের দুজনের কথা শোনার প্রবৃত্তিও তার নেই। ব্রেকফাস্ট দিয়ে ফেরার সময় শান্তনুর টুকরো কিছু কথা সে শুনেছে।
‘হ্যাঁ মা, আমি ভেবেছি ব্যাপারটা। বিয়ে তো করবই। প্রমোশনের পর বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের খরচ নিয়ে ঝামেলা হবে না। কে ডরোথি? না ওকে কাল বলব।’
টুকরো টুকরো কথাগুলো নিজের মনে জুড়ে নিয়েছে ডরোথি। এর মানে দাঁড়ায় যে এবার শান্তনু তাদের সম্পর্কটাকে লিভ-ইন থেকে বিয়ের দিকে নিয়ে যেতে চায়। এর থেকে আনন্দের আর কিছু আছে কি?
অফিস যাওয়ার আগে খাওয়ার টেবিলে বসে শান্তনু ডরোথির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। এত আনন্দিত সে আগে কখনও ডরোথিকে দেখেনি। সেই শক খাওয়ার ঘটনার পর থেকে মাঝে মাঝেই ডরোথির ব্যবহার তাকে অবাক করেছে। যাকগে, ওসব নিয়ে ভাবার আজ তার সময় নেই। আজ বোধহয় অফিসে সেলিব্রেশন হবে।
শান্তনু চলে যাওয়ার পর গান চালিয়ে খানিক নেচে নিল ডরোথি। আজ তার আনন্দের সীমা নেই। খালি একটাই কথা কানে বাজছে, ‘কে ডরোথি? না ওকে কাল বলব।’
তার মানে আজ অফিস থেকে ফিরে আজ শান্তনু তাকে প্রপোজ করবে! ইস্, কি আনন্দটাই যে আজ হচ্ছে! তার তো মনে হচ্ছে দুটো পাখনা গজিয়েছে, আর তাতে করে সে খালি এদিক ওদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। খালি মনে হচ্ছে কখন সন্ধ্যে নামবে।
সারাটা দিন মাটিতে আর পা পড়লই না ডরোথির। কতদিনের স্বপ্ন সফল হবে আজ। কাজের মাঝে থ্রিডি টিভিটা চালিয়ে ইন্টারনেট থেকে পুরোনোদিনের রোম্যান্টিক সিনেমা দেখেছে সে আজকে। উফ্, কি রোম্যান্সটাই না ছিল সেইসব দিনে! আজকাল তো সবই অ্যাকশন আর সায়েন্স ফিকশনের সিনেমা। শান্তনু অবশ্য ওইসবেরই ফ্যান। তার ভালো না লাগলেও শুধু শান্তনু পছন্দ করে বলে সে দেখতে বসে। শান্তনুর জন্য সে সব করতে পারে।
পুরোনো দিনের রোম্যান্টিক সিনেমা দেখা ডরোথির খুব পছন্দ। আগে এতটা ছিল না। শক খাওয়ার পর থেকে এইসব শখ আর ভালোলাগাগুলো বেড়ে যাচ্ছে। তবে আজকে সে খুব মন দিয়ে সিনেমা দেখছিল। যখন হিরো হিরোইনকে প্রপোজ করে তখন সে কিভাবে লজ্জা পায় আর তারপর কিছুক্ষণ থেমে কিভাবে আলতো স্বরে ‘হ্যাঁ, আমি রাজি’ বলে, সেই জায়গাটা বার বার দেখে নিয়েছে। আফটার অল তার জীবনে তো শান্তনু হিরো আর সে হিরোইন। শান্তনু যখন হাঁটু গেড়ে বসে তার দিকে ভালবেসে তাকিয়ে বলবে, ‘ডরোথি উইল ইয়ু ম্যারি মি?’, তখন যে তার কি অবস্থা হবে সে নিজেও জানে না। তাই টিভি দেখে ঠিক করে নিচ্ছে যে কিভাবে হ্যাঁ বলবে।
খান চারেক সিনেমা দেখার পর হ্যাঁ বলার একটা স্টাইল খুব পছন্দ হল ডরোথির। এটায় বেশ চমক আছে। শান্তনু ভাবতেই পারবে না যে এভাবেও হ্যাঁ বলা যায়!
অবশ্য তার সাথে সাথে নিজের জন্য একটা লাল টুকটুকে গাউনও পছন্দ করে রেখেছে ডরোথি। লাল রঙ তার খুব পছন্দ। আগে এত রঙের দিকে তার নজর ছিল না। ইদানিং তার লাল, পিঙ্ক আর কালো এই তিনটে রঙ বড্ড পছন্দের হয়ে উঠেছে। তার কাছে যে কটা ড্রেস আছে তার মধ্যে এই লাল গাউনটা সবথেকে ব্রাইট। তাই এটাকেই পছন্দ হল আজকের জন্য। আফটার অল আজকের সন্ধ্যেটা খুবই স্পেশাল।
সারাটা দিন কোথা দিয়ে যে কেটে গেল বুঝতেই পারল না ডরোথি। ঘড়িতে যখন ছটা তখনই সে গাউনটা পরে রেডি হয়ে বসে থাকল। আয়নায় নিজেকে দেখে জাস্ট বিশ্বাস করতে পারছিল না ডরোথি। সে এটা? তাকে তো কোনো রাজকন্যের মতো দেখাচ্ছে!
আজকে একঘণ্টা আগেই শান্তনু ফ্ল্যাটে ফিরে এল। অফিসের কলিগ কাম বন্ধুরা তার প্রমোশনের জন্য পার্টি দিয়েছিল। ওই অরণ্যটাও তাকে কংগ্র্যাচুলেট করেছে। শালার তো প্রচুর ফেটেছে তাকে অভিনন্দন জানাতে। কিন্তু সবার সামনে এমন ভাব করছিল যেন ওর প্রমোশনে সেই সবথেকে বেশি খুশি।
ফ্ল্যাটে ঢুকেই অবাক হয়ে গেল শান্তনু। ডরোথি তার সামনে এক অপূর্ব সুন্দর লাল গাউন পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। একি? ডরোথি ব্লাশ করছে? এও কি সম্ভব? সে তো পার্টিতে ড্রিঙ্ক করেনি, তাহলে এসব কি সত্যি হচ্ছে?
শান্তনু যে ফ্ল্যাটে ঢুকে তাকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে সেটা ওর চোখ দেখে বুঝেছে ডরোথি। শান্তনুকে একটা বাচ্চা মেয়ের মতো সে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমাকে কেমন দেখাচ্ছে শান্তনু?’
‘অসাধারণ দেখাছে ডরোথি। ঠিক যেন অচিনপুরের রাজকন্যা। কিন্তু এখন এসব আউটফিটের…’
শান্তনুর কথা শেষ হল না। তার আগেই ডরোথি অত্যন্ত লজ্জার সাথে বলে উঠল, ‘আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি শান্তনু।’
৫
মাথাটা কাজ করছে না শান্তনুর। কি বলছে ডরোথি? কিসের প্রস্তাব? আর কিসেই বা রাজি সে? তার অবাক করা মুখের দিকে তাকিয়ে ডরোথি কি ভাবল কে জানে? কিন্তু নিজের সমস্ত ভালোবাসা দুচোখের মধ্যে ভরে শান্তনুর বক্ষলগ্না হয়ে তার দিকে চেয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘তুমি ধরা পরে গেছ দুষ্টুসোনা। আমি তোমার বিয়ের মতলব আজকে সকালেই জেনে গিয়েছি। তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দেবে ভেবেছিলে, কিন্তু দেখ আমি তোমাকেই চমকে দিলাম। আমি রাজি সোনা, তোমার বিয়ের প্রস্তাবে আমি রাজি।’
কথাটা বলে দুচোখ বন্ধ করে দুহাতে শান্তনুকে জড়িয়ে ধরল ডরোথি। কিন্তু শান্তনু ততক্ষণে আতংকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। মাথাটা দপদপ করছে তার। কিছুদিন ধরে ডরোথির পরিবর্তনগুলো চোখে পড়ছিল। কিন্তু তাই বলে এই পরিবর্তন! রাগে মাথাটা আগুন হয়ে উঠল শান্তনুর।
বিকট জোরে সে চিৎকার করে উঠল, ‘না, এ হতে পারে না।’ কথাটা বলে সাথে সাথেই তাকে জড়িয়ে ধরে থাকা ডরোথিকে এক ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে ঠেলে দিল সে। রাগে তার ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠেছে। এদিকে ডরোথি প্রচণ্ড অবাক চোখে শান্তনুকে দেখছে। শান্তনুর এত রুক্ষ চেহারা সে আগে কোনোদিন দেখেনি। কাঁপাকাঁপা গলায় সে বলে উঠল, ‘কি হয়েছে সোনা? তুমি এত রাগ করছ কেন?’
‘ওহ্ শাট্ আপ ইয়ু ব্লাডি বিচ। বিয়ে করার শখ জন্মেছে তোমার? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছ কখনও? ভুলে যেও না ডরোথি যে তুমি সামান্য অ্যান্ড্রয়েড ফিফটি! স্পেশালি লিভ-ইন করার জন্য তৈরি একটা সিলিকনের রোবট! তোমার সাথে সবসময় হেসে কথা বলি, ভালো ব্যবহার করি। কিন্তু তার মানে তুমি এই করেছ?’
আবার মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল ডরোথির। তবে এবার একটু বেশি সময়ের জন্য। শান্তনুর সব কথা সে শুনতে পায়নি। তবে অ্যান্ড্রয়েড ফিফটি কথাটা শুনেছে। আচ্ছা, তাহলে এইজন্য শান্তনু এত চিন্তিত? সে রোবট আর শান্তনু মানুষ, এই সামান্য পার্থক্য শান্তনু নিতে পারছে না? কি পাগল ছেলেটা। ডরোথি শান্তনুর দিকে আরও কিছুটা এগিয়ে এসে নরম গলায় বলে ওঠে, ‘তাতে কি সোনা? আমার এই সিলিকনের শরীরটা কি তোমায় সুখ দিতে পারবে না? কেন আমাকে নিয়ে বিছানায় কি তোমার কোনো প্রবলেম হয়েছে এতদিন তোমার? হ্যাঁ, একটা বাচ্চা হয়তো দিতে পারব না আমি। কিন্তু সেটাও তো অ্যাডাপ্ট করা যায়। তাহলে কি কমতি আছে আমার মধ্যে বলো?’
ডরোথির মুখে এইসব কথা শুনে যেন আগুনে ঘি পড়ল। শান্তনু আরও জোরে চিৎকার করে উঠল, ‘কি? বাচ্চা? শালা একটা রোবটের বাচ্চা নেওয়ার শখ জন্মেছে? আর বিছানার কথা বলছ? ওটা তোমাকে ভাড়া নেওয়ার আগে আমি ভালো করে দেখে নিয়েছি। ট্রায়াল পিরিয়ডে তুমি আমায় বিছানায় সন্তুষ্ট করেছ বলেই নিয়েছি। এর মধ্যে ভালোবাসা কথা থেকে আসছে?’
‘তার মানে তুমি আমায় ভালোবাসো না? আচ্ছা আমার কি দোষ বলতে পারবে? আমি তো তোমায় এক রক্তমাংসের নারীর মতোই ভালবেসেছি। আমার সবটা দিয়ে তোমাকে সন্তুষ্ট করতে চেয়েছি। আমি এখন কি করব?’
কথাগুলো বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল ডরোথি। দুহাতে মুখ ঢেকে সে সোফায় বসে পড়ল। ডরোথিকে ওভাবে কাঁদতে দেখে শান্তনুর খারাপ লাগল। এতদিনের সাথী ডরোথি। সে কষ্ট পাচ্ছে দেখে শান্তনুর রাগও পরে এল। শান্ত স্বরে সে ডরোথিকে বোঝানোর চেষ্টা করল।
‘দেখ ডরোথি, তোমার মধ্যে কোন কমতি নেই। কিন্তু আমরা দুজন সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের একটা সত্ত্বা থাকে, তার আত্মা থাকে। আমরা শরীরকে ভালোবাসি না, শরীরের মধ্যেকার মনটাকে ভালোবাসি। তুমি একটা রোবট। তোমার মন, আত্মা, প্রাণ এসব থাকে না, থাকতে পারে না। আমার মনে হয় তোমার অ্যালগরিদমে কিছু গণ্ডগোল হয়েছে। হয়তো ভেতরের কোনো প্রোগ্রামিং ক্র্যাশ করেছে। তাই তোমার এসব মনে হচ্ছে। আমি সার্ভিস সেন্টারে জানাচ্ছি, ওরা এসে তোমাকে ভালো করে দেবে।’
৬
এতক্ষণ খুব শান্তস্বরে কথাগুলো বলছিল শান্তনু। এতক্ষণে সে নিশ্চিত যে সেদিনের তীব্র শক পেয়ে ডরোথির মাথা বিগড়ে গিয়েছে। তবে শুধু তাই নয়, এর সাথে সাথে ডরোথি হয়তো চিন্তা করার ক্ষমতাও পেয়েছে। হয়তো মানুষের মত কিছু গুণও জন্মেছে তার মধ্যে। নাহলে একটা অ্যান্ড্রয়েড কিভাবে একজন মানুষকে ভালোবাসার কথা বলে?
সুতরাং ব্যাপারটা খুব বুদ্ধি করে সামলাতে হবে। তাই ডরোথিকে তার মিষ্টি কথার জালে জড়িয়ে যেভাবে হোক সার্ভিস সেন্টারে পাঠাতেই হবে। তার সাথে কথা বলতে বলতেই স্মার্টওয়াচের কল বাটনটা টাচ করতে যাচ্ছিল শান্তনু। কিন্তু সেটা করার আগেই সাঁ করে লেজার এসে কবজিসহ স্মার্টওয়াচটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল।
ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এল কবজি থেকে। বিকট আর্তনাদ করে শান্তনু মেঝেতে পড়ে গেল। লেজারটা এসেছে ডরোথির আঙুল থেকে। সার্ভিস সেন্টারে ফোন করার উপায়কে সে সমূলে উৎপাটিত করেছে।
কিন্তু শান্তনুর রক্ত দেখে সে ছুটে গেল তার দিকে। রক্তে ভরা হাতটা নিজের হাতের ভেতরে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অসংলগ্নভাবে বলতে লাগল, ‘ইস্, কতটা কেটে গেল বল তো! আমি সবসময় বলি সাবধানে থাকতে। কিন্তু তুমি তো শুনবে না। সেই সার্ভিস সেন্টারে ফোন করতেই যাচ্ছিলে। আমাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ভুলিয়ে ভালিয়ে সেই খারাপ কাজ করতে যাচ্ছিলে। যাকগে চিন্তা কোরো না। আমি সব ঠিক করে দেব। আমি তোমায় নতুন হাত এনে দেব, কেমন?’
রাগে, দুঃখে, যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল শান্তনু, ‘শাট আপ ইয়ু ব্লাডি সাইকো রোবট। আমি মানুষ, আমার হাত ওভাবে কিনতে পাওয়া যায় না। আমার রক্ত বন্ধ কর তাড়াতাড়ি। নাহলে আমি মরে যাব।’
‘ও হ্যাঁ, তাইতো। মেডিক্যাল কিটের কথা তো আমি ভুলেই গিয়েছি।’
কথাটা বলে ডরোথি কেমন অসংলগ্নভাবে হাসল। তারপর বেডরুমের দিকে দৌড়ে গেল। মেডিক্যাল কিট নিয়ে আসার সময় আবার মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল ডরোথির। তবে এবার কেমন একটা চিনচিনে ব্যাথা আর হালকা বিপবিপ শব্দ শুনতে পেল সে। শব্দটা হালকা, কিন্তু মাথার মধ্যে ক্রমাগত বেজেই চলেছে।
মেডিক্যাল কিট নিয়ে ডরোথিকে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগে পাগল হয়ে যাবার জোগাড় শান্তনুর। গলায় যত জোর আছে সব দিয়ে চিৎকার করে সে বলে উঠল, ‘কি হল কিটটা নিয়ে এসো? পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলে কেন?’
জবাবে হঠাৎ হা হা করে হেসে উঠল ডরোথি। তারপর মেডিক্যাল কিটটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা ওটা না হলে তুমি মরে যাবে তাই না? জানো, আমি সিনেমায় দেখেছি যে রোমিও জুলিয়েটকে না পেয়ে দুঃখে মরে গিয়েছিল। তুমিও কি সেভাবেই মরে যাবে? ওহ্ সোনা, তুমি কত ভালোবাসো আমায়। এত ভালোবাসা পেয়ে আমারই তো এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে।’
ডরোথি এ কি বলছে? সে চাইছে শান্তনু মরে যাক? নাহ্, এ রোবট পাগল, খুনে হয়ে গিয়েছে। এর থেকে বাঁচার একটা মাত্র উপায়। শান্তনুর বাম পায়ে একটা এসওএস চিপ বসান আছে। চামড়ার ওপর একটা লাল অংশ আছে যেটাকে ছিঁড়ে দিলেই হবে। কিন্তু ডান হাত অকেজো, তাই বাম হাতেই কাজটা সারতে হবে।
ওদিকে ডরোথি আবার কেমন যেন করছে। তার চোখ বন্ধ আছে। এই সুযোগ, বাম পায়ের দিকে হাত বাড়াল শান্তনু।
শান্তনুর সাথে কথা বলতে বলতেই আবার কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল ডরোথির। তার সাথে এবার মাথার ভেতর কেমন যেন মাছির ভনভন শব্দ শোনা যাচ্ছে। অসহ্য যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে মাথাটা। কয়েক সেকেন্ড পরে চোখ খুলেই মাথা আগুন হয়ে গেল ডরোথির। শান্তনু ওর পায়ের এসওএস চিপটা অ্যাক্টিভেট করতে চলেছে। ডরোথি খুব ভালো করে জানে যে ওটা অ্যাক্টিভেট হলে পুলিশ নিমেষে পৌঁছে যাবে এখানে। ওরা চিরদিনের মতো শান্তনুকে আর তাকে আলাদা করে দেবে।
নাহ্, এটা ডরোথি কিছুতেই হতে দেবে না। এই শান্তনুটা বড্ড দুষ্টুমি করতে আরম্ভ করেছে। এবারে ওর দুষ্টুমি থামাতে হবে। শান্তনুর অজান্তেই তার দিকে আঙুল তুলে ধরল ডরোথি।
ডিনার বানাতে বানাতে আজ রাত এগারোটা বেজে গেল ডরোথির। আসলে শান্তনু এমন দুষ্টুমি আরম্ভ করল যে ওকে থামাতে গিয়েই অনেকটা সময় চলে গেল। তবে ডরোথি আজ খুব খুশি। শান্তনুর সাথে তার বিয়ে হতে যাচ্ছে। এটা কি কম খুশির কথা?
শান্তনুর সবচেয়ে পছন্দের রান্নাটা করেছে সে আজ। মুগের ডাল, বেগুনভাজা, শুক্তো, আলুপোস্ত আর আমের চাটনি। খাবারগুলোকে টেবিলে রেখে শান্তনুর দিকে চেয়ে সে মিচকি হাসল। তারপর লজ্জা লজ্জা ভাব করে বলল, ‘তোমার পছন্দের সব খাবার বানিয়েছি। দেখ ভালো লাগে কিনা?’
কথাটা বলে টেবিলের দিকে তাকিয়ে ডরোথি জিভ কাটল, ‘আরে! চাটনিটাই তো আনা হয়নি। তুমি চুপটি করে বস, আমি কিচেন থেকে আসছি।’
শান্তনুর কাটা মুণ্ডুটা তখন টেবিলে রাখা আছে। মুখটা হাঁ করে খোলা, জিভটা বেরিয়ে আছে আর চোখ দুটো ভয়ে বিস্ফারিত। কিচেনে থেকে ভেসে আসছে ডরোথির গুনগুন গানের আওয়াজ।
Tags: অর্ণব দাস, কল্পবিজ্ঞান গল্প, গল্প, ডরোথি, তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী, সুমিত রায়
khub bhalo hoeche,tobe ektu predictable.hoyto sutro gulo eeche korei lekhak diyechen,jai hok khub bhalo laglo
prosenjit
Valo laglo pore. Anukul er kotha mathay aschhilo Porte Porte.