দ্য গান
লেখক: মূল রচনা - ফিলিপ কে. ডিক, বাংলা রূপান্তর - মারুফ হোসেন
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য
দ্য গান
ফিলিপ কে. ডিক
রূপান্তর : মারুফ হোসেন
অলংকরণ – দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য
ফোকাস ঠিক করে নিয়ে টেলিস্কোপের আইপিসে চোখ রাখলেন ক্যাপ্টেন।
‘পারমাণবিক ফিশনই (বিভাজন) দেখেছিলাম আমরা,’ টেলিস্কোপে চোখ রেখে বললেন তিনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আইপিসটা সরিয়ে দিলেন চোখের সামনে থেকে। ‘কেউ চাইলে নিজের চোখে দেখে নিতে পার। কিন্তু দৃশ্যটা খুব একটা সুখকর নয়।’
‘দেখি তো’ প্রত্নতত্ত্ববিদ ট্যান্স বলল। দেখার জন্যে হাঁটু মুড়ে বসল সে। চোখ দুটো সরু করে চাইল আইপিসের ভেতর দিয়ে। ‘হা ঈশ্বর!’ আঁতকে উঠে পিছিয়ে এল সে, ধাক্কা খেল চিফ নেভিগেটর ডরিকের গায়ে।
আমরা তা হলে এত দূর এলাম কেন?’ অন্য লোকটির দিকে ঘুরে বলল ডরিক। ‘এখানে নামার কোন মানে হয় না। চলুন এখনই ফিরে যাই।’
‘ও বোধহয় ঠিকই বলেছে,’ আপনমনে বিড়বিড় করল জীববিজ্ঞানী। ‘তবে দৃশ্যটা আমি নিজের চোখে একবার দেখতে চাই, যদি সম্ভব হয়।’ ট্যান্সকে সরিয়ে আইপিসে চোখ রাখল সে।
বিশাল, অন্তহীন, ধূসর ভূপৃষ্ঠ দেখতে পেল সে; গ্রহের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। প্রথমে ভাবল, ওটা পানি। কিন্তু এক মুহূর্ত পর উপলব্ধি করতে পারল, ওটা আসলে ধাতুমল। গর্ত করে বসিয়ে দেয়া, পরস্পরের সঙ্গে লেগে থাকা ধাতুমল। মাঝে মাঝে নাক উঁচু করে নিজের অস্তিত্ব¡ জানান দিচ্ছে পাথরের স্তূপ। কোথাও কোন নড়াচড়া নেই, নেই কোন জীবনের চিহ্ন। সবকিছু নীরব, মৃত।
‘ওখানে জীবনের কোন চিহ্ন দেখতে পাইনি আমি,’ আইপিস থেকে চোখ সরিয়ে বলল ফমার। হাসতে চেষ্টা করল সে, কিন্তু ঠিকমতো ফুটল না হাসিটা। টেলিস্কোপের কাছ থেকে সরে দাঁড়াল।
‘আমি ভাবছি বায়ুমণ্ডলের নমুনায় না জানি কী থাকবে,’ বলল ট্যান্স।
‘আমি বোধহয় অনুমান করতে পারছি,’ জবাব দিলেন ক্যাপ্টেন। ‘বায়ুমণ্ডের বেশিরভাগই বিষাক্ত। কিন্তু এটাই তো আশা করেছিলাম আমরা, তাই না? এখন সবাই এত অবাক হচ্ছ কেন বুঝতে পারছি না। সবাই আমরা জানি, পারমাণবিক ফিশন একটা ভয়াবহ ব্যাপার।’
ভাবলেশহীন চেহারায়, গর্বিত পদক্ষেপে করিডর ধরে হেঁটে চলে গেলেন তিনি। কণ্ট্রোল রুমে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখল তাঁকে বাকিরা।
ক্যাপ্টেন দরজা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকতেই তাঁর দিকে ফিরল নাশা। ‘টেলিস্কোপ কী দেখাচ্ছে? ভাল না খারাপ?’
‘খারাপ। কোন জীবনের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। বায়ুমণ্ডল দূষিত, পানি বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে। গোটা গ্রহের মাটি ঢাকা পড়ে গেছে পাথুরে ধাতুমলে।’
গ্রহটার ভূপৃষ্ঠ ভাল করে দেখার জন্যে জানালার কাছে সরে গেলেন ক্যাপ্টেন। নাশাও চলে এল তাঁর পাশে। নীরবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল দুজনে। মাইলের পর মাইল বিস্তৃত ধ্বংসাবশেষ, ধাতুমল, আর মাঝে মাঝে পাথরের স্তূপ দেখা যাচ্ছে কেবল।
অকস্মাৎ লাফিয়ে উঠল নাশা। ‘দেখুন! ওই যে, ওখানে। দেখেছেন?’
দুজনে তাকিয়ে আছেন সেদিকে। কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু সেটা পাথরের স্তূপ নয়। গোল বৃত্তের মতো কিছু একটা, সাদা ফুটকির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে গ্রহটার মৃত ভূপৃষ্ঠে। কোন শহর? নাকি কোন ধরনের দালান?
‘শিপ ঘোরান, প্লিজ। ওটা কী দেখা দরকার।’ উত্তেজিত কণ্ঠে বলল নাশা। মুখের সামনে এসে পড়া চুল সরাল মেয়েটা।
গতিপথ বদলে ঘুরে গেল স্পেসশিপ। সাদা ফুটকিগুলোর কাছে আসতেই শিপ নিচে নামালেন ক্যাপ্টেন। ‘খিলান,’ বললেন তিনি। ‘কোন ধরনের পাথরের খিলান। সম্ভবত কৃত্রিম পাথর। একটা শহরের ধ্বংসাবশেষ।’
‘ওহ্, কী ভয়াবহ!’ বিড়বিড় করল নাশা। ধ্বংসাবশেষ পেরিয়ে গেল মহাকাশযানটা। ধ্বংসাবশেষটা ভাঙা দাঁতের মতো অর্ধবৃত্তাকারে বিশাল জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে।
‘প্রাণের কোন অস্তিত্ব নেই,’ নীরবতা ভাঙলেন ক্যাপ্টেন। ‘আমাদের বোধহয় ফিরে যাওয়াই উচিত। বেশিরভাগ ক্রু-ই ফিরে যেতে চায়। গভর্নমেণ্ট রিসিভিং স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাও এখানে কী পেয়েছি আমরা। আর বলো যে আমরা ফিরছি…’
থমকে গেলেন ভদ্রলোক।
ঠিক তখনই প্রথম পারমাণবিক শেলটা ঘুরতে ঘুরতে আঘাত করল শিপে। আঘাতের চোটে কণ্ট্রোল টেবিলে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন ক্যাপ্টেন। কাগজপত্র ও নানারকম যন্ত্রপাতি বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ল তাঁর ওপর। উঠে দাঁড়াতে উদ্যত হতেই আঘাত করল দ্বিতীয় শেলটা। ছাতে ফাটল ধরল, বেঁকে গেল ছাতের গার্ডার। আচমকা থরথর করে কেঁপে উঠল গোটা শিপ। শুরু হল পতন। কিছুটা নিচে নামার পর অটোমেটিক কণ্ট্রোলের হাতে নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে সুস্থির হল স্পেসশিপ। এক কোণে বাতিল জিনিসপত্রের দঙ্গলের ভেতর থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে নাশা।
স্পেসশিপের গায়ে দেখা দেয়া ফাটল বোজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বাইরের লোকজন। মহামূল্যবান বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে ফাটল দিয়ে। ‘আমাকে কেউ সাহায্য করো!’ ডরিকের চিৎকার শোনা গেল। ‘এখানে আগুন লেগে গেছে।’ দুজন লোক দৌড়ে এল। ট্যান্সের চশমা ভেঙে গেছে, নিরুপায় হয়ে সবার ছোটাছুটি দেখছে সে।
‘এ গ্রহে তা হলে প্রাণের অস্তিত্ব আছে,’ আনমনে বলল ট্যান্স। ‘কিন্তু সেটা কী করে…’
‘আমাদের সঙ্গে একটু হাত লাগাও,’ ওকে পাশ কাটাতে কাটাতে বলল ফমার। ‘শিপটা ল্যাণ্ড করাতে হবে।’
***
রাত নেমে এসেছে। অল্প কিছু তারা জ্বলজ্বল করছে ওদের মাথার উপরে। মৃত গ্রহটার মাটিতে অবতরণ করেছে ওদের শিপ।
ভুরু কুঁচকে শিপের দিকে তাকিয়ে আছে ডরিক। ‘আটকা পড়ার আর জায়গা পেলি না, ব্যাটা!’ গজগজ করতে করতে শিপের বেঁকে যাওয়া কাঠামোতে হাতুড়ির ঘা মারল সে। ওর পরনে প্রেশার-স্যুট। এখনও অনেকগুলো ছোট ছোট ছিদ্র রয়ে গেছে শিপের গায়ে। গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে এসব ছিদ্র দিয়ে ইতিমধ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থকণা ঢুকে পড়েছে শিপের ভেতরে।
পাণ্ডুর মুখে কণ্ট্রোল রুমের টেবিলের সামনে বসে রয়েছে নাশা ও ফমার। কতটুকু কী মজুদ আছে সেই তালিকা পড়ছে।
‘কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ খুব কম,’ ফমার বলল। ‘চাইলে অবশ্য জমানো ফ্যাট গলিয়ে নিতে পারি, কিন্তু…’
‘বাইরে যদি কিছু পাওয়া যেত।’ জানালার কাছে চলে গেল নাশা। ‘জায়গাটা কী বিশ্রী।’
পায়চারি করতে শুরু করল ছিপছিপে গড়নের ছোটখাটো মেয়েটা। অবসাদের মুখটা অন্ধকার হয়ে আছে। ‘এক্সপ্লোরিং পার্টি পাঠালে কিছু পাবার সম্ভাবনা আছে?’
কাঁধ ঝাঁকাল ফমার। ‘খুব বেশি কিছুর আশা না করাই ভাল। ফাটলের ফাঁকে ফাঁকে জন্মানো কিছু আগাছা পাবে হয়ত। আমাদের কাজে লাগার মতো কিছু পাবে না। এ পরিবেশে জন্মানো সবকিছুই বিষাক্ত আর প্রাণঘাতী হবে।’
পায়চারি বন্ধ করে দিল নাশা, চিবুক ঘষছে। গভীর একটা আঁচড়ের দাগ দেখা যাচ্ছে চিবুকে, এখনও লাল হয়ে ফুলে আছে। ‘তা হলে এ ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করবে কীভাবে? তোমার তত্ত্ব অনুসারে এখানকার অধিবাসীরা মিষ্টি-আলুর মতো সেদ্ধ হয়ে মরেছে। কিন্তু আমাদের ওপর আক্রমণটা করল কে? আমাদের অবস্থান টের পেয়ে গিয়েছিল কেউ। টের পেয়ে আমাদের উদ্দেশে গুলি ছোঁড়ে।’
‘তা-ও আবার ঢিল ছোঁড়া দূরত্ব থেকে,’ কোনের কট থেকে ক্ষীণস্বরে বললেন ক্যাপ্টেন। ওদের দিকে ফিরলেন তিনি। ‘এ ব্যাপারটাই ভাবাচ্ছে আমাকে। প্রথম শেলটা আমাদের কাঁপিয়ে দিয়েছে। আর দ্বিতীয়টা প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে আমাদের। প্রতিটা শেল খুব ভালভাবে নিশানা করে, নিখুঁতভাবে ছোঁড়া হয়েছে। আমরা কোন সহজ টার্গেট নই।’
‘ঠিক।’ মাথা দোলাল ফমার। ‘হয়ত এখান থেকে চলে যাবার সময় প্রশ্নটার জবাব পাব আমরা। কী অদ্ভুত এক পরিস্থিতি! যুক্তি বলছে এখানে কোন প্রাণের অস্তিত্ব নেই। গোটা গ্রহ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, দূষিত হয়ে গেছে বায়ুমণ্ডল।’
‘পারমাণবিক শেল ছুঁড়েছে যে বন্দুক, ওটা বেঁচে গেছে,’ নাশা বলল। ‘তা হলে মানুষ বেঁচে যেতে সমস্যা কী?’
‘দুটো এক ব্যাপার নয়। ধাতুর শ্বাস নেবার জন্যে বাতাসের দরকার পড়ে না। তেজস্ক্রিয় কণিকা থেকে লিউকোমিয়াও হয় না কোন ধাতুর। ওদের খাবার বা পানিরও প্রয়োজন হয় না।’
কয়েক মুহূর্তের নীরবতা।
‘স্ববিরোধী ব্যাপার,’ বলল নাশা। ‘যাই হোক, আমার মনে হয় সকালে একটা সার্চ পার্টি পাঠানো উচিত। ততক্ষণে ফিরতি যাত্রার জন্যে শিপটাকে মেরামত করে ফেলা দরকার।’
‘আবার আকাশে ওঠার জন্যে কয়েকদিন লেগে যাবে,’ ফমার বলল। ‘শিপের প্রতিটা মানুষকে কাজে লাগাতে হবে। সার্চ পার্টি পাঠানোর মতো পরিস্থিতিতে নেই আমরা।’
স্মিত হাসল নাশা। ‘প্রথম পার্টিটাতেই তোমাকে পাঠাব। তুমি হয়ত আবিষ্কার করতে পারবে। কী নিয়ে যেন খুব লাফাচ্ছিলে?’
‘লেগিউম। খাবার উপযোগী লেগিউম।’
‘হয়ত কিছু লেগিউম খুঁজে পাবে তুমি। তবে…’
‘তবে কী?’
‘সাবধান থেকো। আমরা কে বা কোত্থেকে এসেছি না জেনেই আমাদের ওপর গুলি ছুঁড়েছে ওরা। ওরা বোধহয় কোন পরিস্থিতিতেই কাউকে বন্ধু ভাবতে পারে না। কী অদ্ভুত বিবর্তন। এই হলো ইণ্টার-স্পিসিস ওয়ারফেয়ার। নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে মরছে!’
‘সকালেই জানতে পারব ব্যাপারটা আসলে কী,’ ফমার বলল। ‘এখন সবাই একটু ঘুমিয়ে নাও।’
সকাল এল, এক নিষ্ঠুর সূর্যের সঙ্গে। তিনজন মানুষ – দুজন পুরুষ ও একজন মহিলা; পা রাখল গ্রহটির পাথুরে মাটিতে।
‘কী একটা দিন!’ তিক্ত কণ্ঠে বলল ডরিক। ‘পৃথিবীর মাটিতে হাঁটতে চাই আমি, অথচ…’
‘থামো তো,’ নাশা বলল। ‘আমার পাশে এসো। তোমার সঙ্গে কথা আছে আমার।’
নাশার পাশে চলে এল ডরিক। একসঙ্গে হাঁটতে লাগল ওরা, পাথরের পৃষ্ঠে ঘষা খেয়ে কড়কড় আওয়াজ তুলছে ওদের ধাতব জুতো। ওর চোখে চোখ রাখল নাশা।
‘আমার কথা মন দিয়ে শোনো। ক্যাপ্টেন মারা যাচ্ছেন। একথা আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ জানে না। এ গ্রহের ড্রাই-পিরিয়ড শেষ হতে হতে মারা যাবেন উনি। শেলের আঘাত লেগেছে ওঁর বুকে। জানোই তো ওঁর বয়স প্রায় ষাট।’
নড করল ডরিক। ‘খারাপ খবর। ওঁকে আমি খুব শ্রদ্ধা করি। তুমি এখন ভাইস-ক্যাপ্টেন। তা হলে ওঁর পর তুমিই ক্যাপ্টেন হবে?’
‘না। আমি চাই অন্য কেউ নেতৃত্ব দিক। তুমি অথবা ফমার। ব্যাপারটা ভেবে দেখেছি আমি। আমার এখন উচিত তোমার দুজনের কারও সহকারী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করা। এর ফলে আরেকটু বেশি দায়িত্ববান হয়ে উঠবে তোমরা।’
‘বেশ, আমি ক্যাপ্টেন হতে চাই না। ফমারকে বানাও।’
ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে নাশা। লম্বা, দোহারা গড়নের মানুষ ডরিক, মাথা ভর্তি সোনালি চুল। ‘আমার ভোট তোমার পক্ষে,’ বলল মেয়েটা। ‘তবে তোমার ওপর জোরাজুরি করব না। দেখ, কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।’
পিছনে পড়ে গিয়েছিল ট্যান্স। ওকে এগিয়ে আসার সময় দিতে হাঁটা থামিয়ে দিল ওরা। একটা দালানের ধ্বংসাবশেষের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিনজনের দলটা। চিন্তিত চোখে সেদিকে চেয়ে আছে ডরিক।
‘দেখেছ, জায়গাটা প্রাকৃতিক বাটির মতো, বিশাল একটা উপত্যকা? এই দেখ পাথরগুলো কেমন করে মাটি ফুঁড়ে উপরে উঠেছে, মেঝেকে রক্ষা করছে। এখানে বোধহয় বিরাট কোন বিস্ফোরণ হয়েছিল।’
ধ্বংসাবশেষের মধ্যে হাঁটতে লাগল ওরা। মাঝেমধ্যে পাথর ও বিভিন্ন জিনিসে টুকরোটাকরা তুলে নিয়ে দেখছে। ‘আমার ধারণা এটা কোন খামারবাড়ি ছিল,’ একটা কাঠের টুকরো দেখতে দেখতে বলল ট্যান্স। ‘এটা টাওয়ারের উইণ্ডমিলের একটা অংশ।’
‘সত্যি?’ কাঠের টুকরোটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখল নাশা। ‘ইণ্টারেস্টিং। তবে এখন চলো এখান থেকে যাই। আমাদের হাতে বেশি সময় নেই।’
‘দেখো,’ হঠাৎ বলে উঠল ডরিক। ‘ওখানে একটা কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।’ একটু দূরে নির্দেশ করল সে।
‘সাদা পাথর,’ বলল নাশা।
‘কী?’
ডরিকের দিকে তাকাল মেয়েটা। ‘সাদা পাথর। শিপ থেকে ভাঙা দাঁতের মতো দেখাচ্ছিল ওগুলোকে। কণ্ট্রোল রুম থেকে দেখেছিলাম ক্যাপ্টেন আর আমি।’ আলতো করে ডরিকের হাত ছুঁল ও। ‘ওখানে থেকেই গুলি করা হয়েছে। আমি ভাবতেও পারিনি ওদের গুলির আওতায় চলে এসেছি।’
‘ওটা কী?’ বলল ট্যান্স। ‘চশমা ছাড়া আমি প্রায় অন্ধ। কী দেখছ তোমরা?’
‘শহরটা, যেখান থেকে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল।’
‘ওহ্।’ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছে ওরা তিনজন। ‘চলো দেখে আসি,’ ট্যান্স বলল। ‘বলা যায় না, কিছু পেয়েও যেতে পারি।’ ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকাল ডরিক।
দাঁড়াও। কীসের মধ্যে গিয়ে পড়ব জানি না আমরা। ওদের কাছে নিশ্চয় পেট্রোল আছে। তা ছাড়া এতক্ষণে হয়ত ওদের চোখে পড়ে গেছি আমরা।’
‘ওরা হয়ত এতক্ষণে আমাদের শিপটাই দেখে ফেলেছে,’ বলল ট্যান্স। ‘ওরা হয়ত জেনে ফেলেছে কোথায় গেলে পাবে আমাদের শিপ। সঙ্গে সঙ্গে উড়িয়ে দিতে পারবে ওটা। তা হলে শহরটার কাছে গেলে বা না গেলে কী ফারাক পড়ে?’
‘ঠিকই বলেছ,’ সায় জানাল নাশা। ‘ওরা যদি আমাদের সত্যিই খুন করতে চায়, কিচ্ছু করতে পারব না আমরা। আমাদের সঙ্গে কোন অস্ত্র নেই।’
‘ছোট একটা হ্যান্ড-ওয়েপন আছে আমার কাছে।’ নড করল ডরিক। ‘চলো তা হলে এগোই। তুমি বোধহয় ঠিকই বলেছ, ট্যান্স।’
‘তবে আমাদের একসঙ্গে থাকা উচিত,’ নার্ভাস ভঙ্গিতে বলল ট্যান্স। ‘নাশা, বড্ড দ্রুত হাঁটছ তুমি।’
পিছনে ফিরে হাসল নাশা। ‘সন্ধ্যা নামার আগে ওখানে পৌঁছতে চাইলে দ্রুত পা চালানো ছাড়া গতি নেই।’
মাঝ-দুপুরে শহরটার উপকণ্ঠে পৌঁছুল ওরা। হলুদ, ঠাণ্ডা সূর্যটা ঝুলে আছে ওদের মাথার উপরে, রঙহীন আকাশে। শৈলশিরার চূড়ায় দাঁড়িয়ে শহরটা নিরীক্ষণ করতে লাগল ডরিক।
শহরটার খুব বেশি কিছু বেঁচে নেই। ওরা যে সাদা দাঁতের মতো কংক্রিট দেখেছিল ওটা আসলে দালানের ধ্বংসপ্রাপ্ত ভিত। তীব্র উত্তাপে সেদ্ধ ও দগ্ধ হয়ে প্রায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে তার ভিতগুলো। এই সাদা ভিতগুলোর বৃত্ত ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। বৃত্তটার ব্যাস হবে প্রায় চার মাইল।
বিরক্তিতে থুতু ফেলল ডরিক। ‘শুধু শুধু সময় নষ্ট করলাম। একটা শহরের মরা কঙ্কাল। ব্যস।’
‘গুলি দুটো কিন্তু এখান থেকেই ছোঁড়া হয়েছিল,’ বিড়বিড় করে বলল ট্যান্স। ‘সে-কথা ভুলে যেও না।’
‘এবং গুলিটা করেছিল দক্ষ ও অভিজ্ঞ কেউ,’ যোগ করল নাশা। ‘চলো এগোই।’
ধ্বংস হয়ে যাওয়া দালানগুলোর ভেতরে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শহরে প্রবেশ করল ওরা। কারও মুখে কথা নেই। নীরবে হাঁটছে তিনজনেই। নিজেদের পদক্ষেপের প্রতিধ্বনি শুনছে।’
‘ভয়াবহ,’ আপনমনে বিড়বিড় করল ডরিক। ‘আগেও অনেক ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর দেখেছি। ওগুলো সব বয়সের কারণে মরে গিয়েছিল। কিন্তু এই শহরটাকে ঠেলে দেয়া হয়েছে ধংসের দিকে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ শহর বয়সের কারণে আপনাআপনি মারা যায়নি – খুন করা হয়েছে একে।’
‘কে জানে কী নাম ছিল শহরটার,’ বলল নাশা। একটা দালানের ভিতের সিঁড়ির কাছে চলে গেল ও। ‘তোমার কি মনে হয় কোন সাইনপোস্ট পাব?’
ধ্বংসস্তূপের ফাঁকফোকরে উঁকি মারছে মেয়েটা।
‘ওখানে কিছু নেই,’ অধৈর্য গলায় বলল ডরিক। ‘চলে এসো।’
‘দাঁড়াও।’ হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছে নাশা। একটা কনক্রিটের পাথর পরখ করে দেখছে। ‘পাথরটায় কিছু একটা লেখা আছে।’
‘কী এটা?’ ওর দিকে এগিয়ে এল ট্যান্স। ধুলোর মাঝে উবু হয়ে বসল সে। দস্তানা পরা আঙুল বোলাতে শুরু করল পাথরটার গায়ে। ‘ঠিকই বলেছ, কিছু একটা লেখা আছে।’ প্রেশার স্যুট থেকে রাইটিং-স্টিক বের করে পাথরে খোদাই করা লেখাটা টুকে নিল এক টুকরো কাগজে। ওর কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি মারল ডরিক। পাথরটার গায়ে লেখা:
ফ্রাঙ্কলিন অ্যাপার্টমেণ্টস
‘শহরটার নাম তা হলে ফ্রাঙ্কলিন অ্যাপার্টমেণ্টস,’ মৃদু কণ্ঠে বলল নাশা।
কাগজের টুকরোটা পকেটে রেখে উঠে দাঁড়াল ট্যান্স। আবার পথ চলতে শুরু করল ওরা। কিছুক্ষণ পর ডরিক বলল, ‘নাশা, আমার মনে হচ্ছে, কেউ যেন নজর রাখছে আমাদের ওপর। ডানে-বাঁয়ে তাকিও না।’
আড়ষ্ট হয়ে গেল মেয়েটা। ‘একথা বলছ কেন? তুমি কি কিছু দেখেছ?’
‘না। তবে আমার মন বলছে কেউ নজর রাখছে আমাদের ওপর। তোমার এরকম কিছু মনে হচ্ছে না?’
স্মিত হাসল নাশা। ‘না। নিজের শরীরের ওপর পুরুষদের দৃষ্টি দেখতে দেখতে এসব আমার গা সয়ে গেছে।’ মাথাটা সামান্য ঘোরাল ও।
‘ওহ্!’
চট করে অস্ত্র বেরিয়ে এল ডরিকের হাতে। ‘কী? কী দেখেছ?’ স্থাণু হয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়েছে ট্যান্স, মুখটা হাঁ হয়ে গেছে।
‘বন্দুক,’ বলল নাশা।
‘জিনিসটার সাইজ দেখ।’ হ্যান্ড-ওয়েপনটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখল ডরিক।
বন্দুকটা বিশাল বড়। কংক্রিটের স্ল্যাবের ওপর বসানো ভয়ালদর্শন, বিশাল বন্দুকটার মুখ আকাশের দিকে তাক করে রাখা। গোড়ার ওপর ভর করে চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরছে বন্দুকটা। বন্দুকটার গায়ে লাগানো পাতলা একটা পাখা ঘুরছে বাতাসে।
‘বন্দুকটা জীবিত,’’ ফিসফিস করে বলল নাশা। ‘আমাদের কথা শুনছে ওটা, নজর রাখছে আমাদের ওপর।’
আবারও নিজ অক্ষের ওপর ঘুরে গেল বন্দুকটা, এবার ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে। অস্ত্রটা এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যেন একটা চক্করে সম্পূর্ণ একটা বৃত্ত পূর্ণ করতে পারে। ব্যারেলটা একটু নিচু হয়ে এল, কটমট চোখে তাকাল যেন ওদের দিকে। তারপর আগের জায়গায় ফিরে গেল।
‘কিন্তু ওটা থেকে গুলি ছোঁড়ে কে?’ বলল ট্যান্স।
ডরিক হাসল। ‘কেউ না।’
ওর দিকে চেয়ে রইল বাকি দুজন। ‘কী বলতে চাইছ?’
‘এটা নিজে নিজেই গুলি ছোঁড়ে।’
ওর কথা বিশ্বাস হল না অন্য দুজনে। ওর দিকে কাছিয়ে এল নাশা। ভুরু কুঁচকে চেয়ে রইল ওর দিকে। বুঝতে পারছি না। তুমি বলতে চাইছ, বন্দুকটা নিজে থেকে গুলি ছোঁড়ে?’
‘এসো, দেখাচ্ছি। নড়ো না।’ মাটি থেকে একটা পাথর তুলে নিল ডরিক। এক মুহূর্ত দ্বিধা করে উপরের দিকে ছুঁড়ে মারল সে পাথরটা। বন্দুকের সামনে দিয়ে চলে গেল পাথরটা। সঙ্গে সঙ্গে উঁচু হয়ে গেল বন্দুকের ব্যারেল, পাখাটা সঙ্কুচিত হয়ে গেল।
পাথরটা মাটিতে পড়ে গেল গুলির আঘাতে। তারপর আবার আগের অবস্থানে ফিরে এল বন্দুকটা, ঘুরতে শুরু করল নিজের অক্ষে।
‘দেখলে তো,’ ডরিক বলল, ‘আমি পাথরটাকে উপরে ছুঁড়ে মারতেই টের পেয়ে গেছে বন্দুকটা। মাটির উপরে উড়ন্ত বা চলমান কোন জিনিসই ওটার চোখ এড়ায় না। সম্ভবত আমরা এ গ্রহের অভিকর্ষজ বলয়ের মধ্যে প্রবেশ করার পর থেকেই বন্দুকটা চোখ রাখছিল আমাদের ওপর। শুরু থেকে বোধহয় আমাদেরকে নিশানা করেছে ওটা। বাঁচার কোন সুযোগ নেই আমাদের। আমাদের শিপের ব্যাপারে সবকিছু জানে বন্দুকটা। শিপটা নিয়ে আবার কখন উড়ি, সে অপেক্ষাতেই আছে।
‘বুঝলাম,’ নড করে বলল নাশা। ‘আমরা মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি বলে আমাদের লক্ষ করেনি ওটা। শুধু উড়ন্ত জিনিসকে গুলি ছোঁড়ার জন্যে বানানো হয়েছে জিনিসটা। ফের যতক্ষণ পর্যন্ত না উড়ছি, নিরাপদ থাকবে আমাদের শিপ।’
‘কিন্তু বন্দুকটা এখানে রাখা হয়েছে কেন?’ ওদের কথায় বাগড়া দিল ট্যান্স। ‘একজন মানুষও বেঁচে নেই এ গ্রহে। মরে ভূত হয়ে গেছে সবাই।’
‘এটা একটা মেশিন,’ বলল ডরিক। ‘নির্দিষ্ট কাজ করার জন্যে বানানো হয় একটা মেশিনকে। আর বন্দুকটা নিজের কাজ করছে। জিনিসটা কী করে বিস্ফোরণের কবল থেকে বেঁচে গেল, জানি না। শত্রুর জন্যে অপেক্ষা করছে অস্ত্রটা। শত্রুরা নিশ্চয় কোন ধরনের শিপে করে আকাশপথে আসত।’
‘শত্রুরা ওদের নিজেদের গোত্রেরই,’ বলল নাশা। ‘বিশ্বাস করা শক্ত, নিজেদের গোত্রকে বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে ওরা। গুলি ছুঁড়েছে নিজেদের স্বজাতিকে লক্ষ করে।’
‘হুম। এই বন্দুকটা এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছে, অপেক্ষা করছে শত্রুর জন্যে। বিকল হবার আগ পর্যন্ত গুলি চালিয়ে যাবে এটা।’
‘ততদিনে মরে ভূত হয়ে যাব আমরা সবাই,’ তিক্ত কণ্ঠে বলল নাশা।
‘এরকম আরও শত শত বন্দুক আছে নিশ্চয়,’ বিড়বিড় করল ডরিক। ‘ওগুলোকে নিশ্চয় নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছিল গ্রহের বাসিন্দারা। ঘুম, খাবার, গির্জার মতো। লড়াই করতে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেবার জন্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল মানুষদের। স্বাভাবিক পেশা হিসেবে নিয়েছিল তারা সৈনিকজীবনকে। সৈনিকদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করত তারা।’
ধীরে ধীরে বন্দুকটার দিকে এগিয়ে গেল ট্যান্স। উঁকি মেরে দেখতে লাগল ওটার কলকব্জা। ‘অস্ত্রটার কলকব্জার গঠন বেশ জটিল, তাই না? আমার মনে হয় অণুবীক্ষণ যন্ত্রের কারিকুরি কাজে লাগিয়ে বানানো হয়েছে বন্দুকটা।’ অস্ত্রটার লম্বা টিউবের শেষপ্রান্ত স্পর্শ করল ওর দস্তানা পরা হাত।
সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে গেল বন্দুকটা, টান পড়েছে ব্যারেলে।
‘কেউ নড়ো না!’ চেঁচিয়ে উঠল ডরিক। জায়গায় জমে গেল প্রত্যেকে। ব্যারেলটা ওদেরকে পার হয়ে গেল। এক মুহূর্তের জন্যে চাপা গুঞ্জন তুলে ওদের মাথার ওপর থমকাল ওটা। তারপর আস্তে আস্তে চাপা গুঞ্জনটা মিলিয়ে গেল, নড়াচড়া বন্ধ করল বন্দুকটা।
হেলমেটের ভেতর থেকে বোকা হাসি দিল ট্যান্স। ‘আমি বোধহয় ওটার লেন্সে হাত দিয়ে ফেলেছিলাম। এখন থেকে আরও সতর্ক থাকব।’ ঘুরে বন্দুকের পেছন দিকে চলে গেল সে, আড়াল হয়ে গেল বাকি দুজনের দৃষ্টিসীমা থেকে।
‘গেল কোথায়?’ বিরক্ত হয়ে বলল নাশা। ‘সবাইকে খুন করিয়ে ছাড়বে ও।’
‘ট্যান্স, ফিরে এসো!’ চেঁচাল ডরিক। ‘কী করছ ওখানে?’
‘এক মিনিট।’ দীর্ঘ নীরবতা। শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হল প্রত্নতত্ত্ববিদ। ‘কিছু একটা খুঁজে পেয়েছি বোধহয়। এসো দেখাচ্ছি।’
‘কী পেয়েছ?’
‘ডরিক, তুমি বলেছিলে শত্রুদের দূরে রাখার জন্যে বন্দুকটা এখানে রেখে দিয়েছিল এখানকার বাসিন্দারা। শত্রুদের ওরা তাড়াতে চাইত কেন, এ প্রশ্নটার জবাব বোধহয় পেয়ে গেছি।’
কী করা উচিত বুঝতে পারছে না কেউ।
‘বন্দুকটা কী পাহারা দিচ্ছে বুঝতে পেরেছি বোধহয় আমি। এসো, আমাকে সাহায্য করো।’
‘ঠিক আছে,’ দ্বিধাপ্রস্ত গলায় বলল ডরিক। ‘চলো।’ নাশার হাত ধরল সে। ‘দেখি কী পেয়েছে ও। বন্দুকটা দেখার পরই ভেবেছিলাম এরকম কিছু ঘটতে পারে।“
‘কী রকম?’ হাত ছাড়িয়ে নিল নাশা। ‘কীসের কথা বলছ তুমি? তোমার কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, ও কী পেয়েছ তা তুমি জানো।’
‘হ্যাঁ, জানি।’ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাসল ডরিক। ‘প্রতিটা গোত্রের মধ্যে প্রচলিত সেই কিংবদন্তিটার কথা মনে আছে তোমার? মাটির নিচে লুকানো গুপ্তধনে, ড্রাগন, ওটাকে পাহারা দেয়া সাপের মিথ, এসবের কথা মনে আছে?’
নড করল নাশা। ‘মনে আছে, তো?’
ইশারায় বন্দুকটা দেখাল ডরিক।
‘এই বন্দুকটা,’ বলল সে, ‘সেই ড্রাগন। এসো।’
একটা স্টিলের আচ্ছাদনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ট্যান্স। তিনজনে মিলে সরিয়ে ফেলল আচ্ছাদনটা। পরিশ্রমের চোটে ঘেমে-নেয়ে উঠেছে ডরিক।
হ্যান্ড-ল্যাম্পটা জ্বেলে দিল নাশা। ল্যাম্পের আলোয় দেখা গেল একসারি সিঁড়ির ধাপ নেমে গেছে নিচের দিকে। পুরু ধুলো ও পাথরকুচির স্তূপ জমেছে সিঁড়িগুলোতে।
‘এসো,’ উত্তেজিত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল ট্যান্স। সিঁড়ি ভেঙে নামতে শুরু করল সে। সিঁড়ি বেয়ে একটা দরজার সামনে নেমে ওটার হাতল ধরে টান দিল। ‘হাত লাগাও।’
‘লাগাচ্ছি।’ সন্তর্পণে ওর পাশে চলে এল বাকি দুজন। দরজাটা পরখ করে দেখল ডরিক। দরজাটায় হুড়কো তুলে তালা মেরে দেয়া হয়েছে। খোদাই করা লেখা দেখা যাচ্ছে ওটাতে; কিন্তু লেখাটা পড়তে পারছে না ও।
‘এবার কী?’ বলল নাশা।
হ্যান্ড-ওয়েপনটা বের করে হাতে নিল ডরিক। ‘পিছিয়ে দাঁড়াও। আর কোন উপায় দেখতে পাচ্ছি না।’ অস্ত্রের সুইচ টিপল সে। দরজার গোড়ার দিকে লাল আলোর ছটা পড়ল। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে শুরু করল জায়গাটুকু। কয়েক মিনিটের মধ্যে ভেঙে পড়ল গোটা দরজাটা। সুইচ টিপে অস্ত্রটা নিষ্ক্রিয় করে দিল ডরিক। দরজার ভাঙা টুকরোগুলো স্তূপ করে সিঁড়ির প্রথম ধাপে রেখে দিল তিনজনে মিলে। তারপর হ্যান্ড-ল্যাম্পের আলোতে পথ দেখে আগে বাড়ল।
একটা ভল্টে এসে ঢুকেছে ওরা। চারদিকে ধুলোর রাজত্ব, প্রতিটা জিনিসের ওপর কয়েক ইঞ্চি পুরু ধুলো। দেয়ালের কাছে সারি সারি কাঠের বাক্স রাখা। বিরাট বিরাট বাক্স, প্যাকেজ আর কণ্টেইনার। কৌতূহলী দৃষ্টিতে চারপাশে চোখ বোলাচ্ছে ট্যান্স।
‘এগুলো আসলে কী?’ বিড়বিড় করল সে। ‘নিশ্চয় মূল্যবান কিছু হবে।’ গোল একটা ড্রাম তুলে নিয়ে খুলে ফেলল সে। ওটা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে কালো ফিতের মতো গোটানো রিল বেরিয়ে এল পাক খুলে। জিনিসটা আলোর কাছে এনে পরখ করল ভাল করে।
‘এদিকে দেখো!’
ওর দু’পাশে চলে এল নাশা ও ডরিক। ‘ছবির রিল,’ নাশা বলল।
‘কোনকিছুর রেকর্ড।’ রিলটা গুটিয়ে আবার ড্রামে ভরে রাখল ট্যান্স। ‘দেখ, শয়ে শয়ে ড্রাম।’ ল্যাম্পের আলো ফেলল সে চারপাশে।
‘চলো তো ওই বাক্সগুলো খুলে দেখি কী আছে ভেতরে।’
ইতিমধ্যে কাঠের বাক্সগুলোর ভেতরে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে ডরিক। বাক্সগুলোর কাঠ শুকিয়ে পলকা হয়ে গেছে। একটা বাক্সের একপাশ ভেঙে ফেলতে সক্ষম হল সে।
একটা ছবি বেরোল ভেতর থেকে। নীল পোশাক পরা একটা ছেলে, ক্যামেরার দিকে আছে হাসিমুখে। অল্পবয়স্ক ছেলেটা দেখতে সুদর্শন, কেতাদুরস্ত। হ্যান্ড-ল্যাম্পের আলোতে দেখে মনে হচ্ছে ছেলেটা যেন জীবন্ত, ওদের দিকে হাঁটতে শুরু করবে যে-কোন মুহূর্তে। এ গ্রহের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গোত্রের একজন সে।
দীর্ঘ সময় নিয়ে চেয়ে রইল ওরা ছবিটার দিকে। শেষমেশ ছবিটা আগের জায়গায় রেখে দিল ডরিক।
‘বাকি বাক্সগুলোতে আরও ছবি আছে। কিন্তু এই ড্রামগুলো কী দিয়ে ভর্তি? আর ওই বাক্সগুলোতে?’
‘ওগুলোর ভেতর ওদের সম্পদ,’ স্বগতোক্তি করল ট্যান্স। ‘এগুলো ওদের ছবি। ওদের শিল্প-সাহিত্য, ইতিহাস, কিংবদন্তি, বিশ্বজগত সম্পর্কে ওদের চিন্তা-ভাবনার দলিল হচ্ছে এসব।’
‘এসব থেকে ওদের সভ্যতার অগ্রগতি, ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারব। জানতে পারব ওদের পরিচয়, কেন ওরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ লিপ্ত হল।’
ঘুরতে ঘুরতে ভল্টটা দেখছে ডরিক। ‘অদ্ভুত,’ বিড়বিড় করল সে। ‘নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু করলেও ওরা জানত ওদের আসল সম্পদ হচ্ছে এসব ছবি, বই, নিজেদের কিংবদন্তি, পুরাণ। ওরা হয়ত আশায় ছিল, বড় বড় শহর, দালান-কোঠা ধ্বংস হলে গেলেও আবার এখানে ফিরে আসতে পারবে।’
‘পৃথিবীতে ফিরে এখানে একটা অনুসন্ধান দল পাঠাতে অনুরোধ করব,’ ট্যান্স বলল। ‘ওদেরকে এসব নিয়ে যেতে বলব আমরা”
থেমে গেল সে।
‘হ্যাঁ, তিনদিন পর এখান থেকে চলে যাব আমরা,’ শুকনো গলায় বলল ডরিক। ‘শিপটা মেরামত করেই আবার উড়াল দেব। শিগগিরই বাড়ি ফিরব, যদি না কোন দুর্ঘটনা ঘটে।’
‘আহ্, থামো তো,’ অধৈর্য কণ্ঠে বলল নাশা। ‘পরেও ভাবা যাবে এসব নিয়ে। আগে বন্দুক-সমস্যার সমাধান করতে হবে। নইলে এখান থেকে বেঁচে ফেরার কোন আশা নেই।’
নড করল ডরিক। ‘তোমার পরামর্শ কী এ ব্যাপারে? উড়তে শুরু করলেই শিপের উদ্দেশে গুলি ছোঁড়া শুরু করবে বন্দুকটা।’ বিরক্তিতে মুখটা বিকৃত হয়ে গেল ওর। ‘সম্পদ পাহারা দেবার জন্যে ভাল একখান পাহারাদারই বসিয়েছে ব্যাটারা। একটা কাজই জানত এ গ্রহের বাসিন্দারা। বন্দুক বানাও এবং অপরিচিত কাউকে দেখলেই সে-বন্দুক দিয়ে গুলি কর। ব্যাটারা ভাবত সবাই বুঝি ওদের শত্রু; ওদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে যেতে আসছে সবাই।’
ভাবনায় ডুবে গেছে নাশা। হঠাৎ সশব্দে নিঃশ্বাস ফেলল মেয়েটা। ‘ডরিক,’ বলল ও, ‘তাতে আমাদের সমস্যা কী? বন্দুকটা আমাদের জন্যে মোটেও ভয়ের কারণ নয়।’
পুরুষ দুজন তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
‘ভয়ের কারণ নয়?’ সবিস্ময়ে বলে উঠল ডরিক। ‘ওটা ইতিমধ্যে দু’বার গুলি করেছে আমাদের উদ্দেশে। আর আবার ওড়ার চেষ্টা করলেই……’
‘হ্যাঁ, বন্দুকটা একটা বোকার হদ্দ। এমনকী আমিও সামলাতে পারব ওটাকে।’
‘তুমি?’
জ্বলজ্বল করছে নাশার চোখ দুটো। ‘হ্যাঁ, একটা ক্রো-বার দিয়ে। সঙ্গে একটা হাতুড়ি বা লম্বা একটা কাঠের টুকরো লাগবে। চলো শিপে ফিরে যাই। শূন্যে থাকা অবস্থায় অবশ্য বন্দুকটার করুণার পাত্র আমরা; ওটাকে বানানোই হয়েছে এমন করে। উড়ন্ত যে-কোন কিছুকেই গুলি করে ফেলে দিতে পারে এটা। ব্যস, ওর কারিকুরি এই পর্যন্তই। মাটির কোনকিছুর কাছ থেকে নিজেকে বাঁচানোর ক্ষমতা নেই বেচারার।’
ধীরে ধীরে মাথা দোলাল ডরিক। ‘বুঝেছি, ড্রাগনের নরম তলপেট। কিংবদন্তি অনুসারে, ড্রাগনের পেটের দিকে কোন সুরক্ষা থাকে না।’ হাসতে শুরু করল সে। ‘একদম ঠিক ধরেছ তুমি।’
‘চলো শিপে ফিরি,’ নাশা বলল। ‘ওখানে কিছু কাজ আছে।’
পরদিন সকালে শিপে ফিরল ওরা। গত রাতে মারা গেছেন ক্যাপ্টেন। প্রথা অনুসারে তাঁর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে ক্রু’রা। ক্যাপ্টেনের মৃতদেহ পুড়ে ছাই হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত তাঁর চিতার সামনে মৌন গাম্ভীর্যে দাঁড়িয়ে রইল তারা। সবাই যখন যার যার কাজে ফিরে যাচ্ছে তখনই ফিরে এল ওরা তিনজন। ধুলো, ময়লায় শরীর নোংরা হয়ে আছে তিনজনের। দীর্ঘ পথ হেঁটে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত, তবুও উত্তেজিত উত্তেজিত হয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর দল বেঁধে লাইন ধরে বেরিয়ে এল সবাই শিপ থেকে। প্রত্যেকে হাতে করে কিছু-না-কিছু বইছে। বন্দুকটার কাছে পৌঁছেই ক্রো-বার, হাতুড়ি, মোটকথা যার হাতে যা ছিল তা নিয়েই ওটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল দলটা।
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের কাজ করে যে কাঁচ, ওটা ভেঙে চুর চুর করে দেয়া হল প্রথমেই। ভেতরের ওয়্যারিং টেনে বের করে ফেলা হল। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হল বন্দুকটার গিয়ার।
সবশেষে গুঁড়িয়ে দেয়া হল ওয়ারহেড। তারপর খুলে ফেলা হল ফায়ারিং পিন।
অবশেষে ধ্বংস হল বিশাল বন্দুকটি। ভল্টে ঢুকে ভেতরের জিনিসপত্রগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল অভিযাত্রীদের দলটা। নিবিষ্ট মনে
ছবিগুলো নিরিখ করল ওরা। বইয়ের স্তূপ, রত্নখচিত মুকুট, পানপাত্র, ভাস্কর্য পর্যবেক্ষণ করল।
সূর্য যখন ধূসর কুয়াশার আড়ালে অস্ত যাচ্ছে তখন ভল্ট থেকে বেরিয়ে এল ওরা। এক মুহূর্ত বিধ্বস্ত বন্দুকটার সামনে থমকে দাঁড়াল দলটা। তারপর ফের রওনা হল শিপের উদ্দেশে। এখনও অনেক কাজ বাকি। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিপটা। যত দ্রুত সম্ভব ওটার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো মেরামত করতে হবে।
সবাই মিলে বাহনটা ঠিক করতে আরও পাঁচ দিন লেগে গেল।
কণ্ট্রোল রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নাশা। ধীরে ধীরে গ্রহটাকে মিলিয়ে যেতে দেখছে পিছনে। রুমের একমাত্র টেবিলের ওপর বসে পড়ল মেয়েটা।
‘কী ভাবছ?’ জানতে চাইল ডরিক।
‘আমি? কিছু না।’
‘সত্যি বলছ তো?’
‘ভাবছি, একদিন নিশ্চয় এই বেহাল দশা ছিল না গ্রহটার। প্রাণের প্রাচুর্য ছিল তখন এখানে।’
‘হ্যাঁ। আমাদের সিস্টেমের কোন শিপ এখানে এল না—ব্যাপারটা দুঃখজনক। কিন্তু আকাশে ফিশনের আলোকছটা দেখার আগে পর্যন্ত আমরাও ভাবতে পারিনি এদিকে কোন বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব আছে।’
‘যখন জানতে পারলাম, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।’
‘অনেক দেরি হয়ে গেছে বলা যায় না। ওদের সংগীত, শিল্পকলা, বই, ছবি—এসব তো টিকে থাকবে। ওগুলো পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে গবেষণা করব আমরা। এসব থেকে লব্ধ জ্ঞান বদলে দেবে আমাদের সভ্যতাকে। বিশেষ করে ওদের ভাস্কর্যশিল্প এক ধাক্কায় কয়েক ধাপ এগিয়ে দেবে আমাদের। মাথা ও হাতবিহীন ওই বিশাল পাখাঅলা প্রাণীটার ভাস্কর্য দেখেছ? মাথা আর হাত দুটো বোধহয় ভেঙে গেছে। তবে ওটার পাখা দুটো দেখে মনে হয় ভাস্কর্যটা অনেক প্রাচীন। এ ভাস্কর্যটা আমাদের অনেক বদলে দেবে।’
‘আবার যখন ফিরে আসব, বন্দুকটা অপেক্ষা করবে না আমাদের জন্যে,’ বলল নাশা। ‘পরেরবার গুলি না খেয়ে নিরাপদেই ল্যাণ্ড করতে পারব আমরা। তারপর নিরাপদে ফিরে যাব গ্রহটার সমস্ত সম্পদ নিয়ে।’ ডরিকের দিকে তাকিয়ে হাসল ও। ‘পরেরবার আমাদের নেতৃত্ব দেবে তুমি।’
‘আমি?’ দেঁতো হাসি দিল ডরিক। ‘তুমি তা হলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ।’
কাঁধ ঝাঁকাল নাশা। ‘ফমার আমার সঙ্গে বড় বেশি তর্ক করে। তাই তোমাকেই আমার বেশি পছন্দ।’
‘তা হলে,’ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল ডরিক। ‘এবার চলো বাড়ি ফিরে।’
গর্জন তুলে বিশাল একটা পরিধি নিয়ে বিধ্বস্ত শহরটার উপর চক্কর মারল ওদের শিপ। তারপর ফিরে চলল পৃথিবীর উদ্দেশে। শহরের কেন্দ্র পার হবার সময় ধ্বংস করে দেয়া বন্দুকটা দেখতে পেল নাশা ও ডরিক। শিপটা দেখতে পেয়ে জ্বলে উঠল ওটার ওয়ার্নিং লাইট। তারপর যন্ত্রণাকাতর মানুষের মতো ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ তুলে ঘুরতে লাগল।
তারপরই দূরে, শহর থেকে প্রায় শত মাইল দূরে আরেকটা লাল ওয়ার্নিং লাইট জ্বলে উঠল ভূগর্ভের অভ্যন্তরে। কাজ শুরু করল অটোম্যাটিক রিলে। চালু হয়ে গেল গিয়ার, গুঙিয়ে উঠল বন্দুকের বেল্ট। ধাতুমলের একটা ধাতব অংশ ফাঁকা হয়ে গেল। ঢালু একটা রাস্তা দেখা গেল সেই ফাটলের ভেতর।
এক মুহূর্ত বাদে দু’চাকার ছোট একটা কার্ট গড়িয়ে বেরিয়ে এল সেই ঢালু রাস্তা ধরে।
শহরের দিকে ছুটতে শুরু করল কার্টটা। দ্বিতীয় একটা কার্ট বেরিয়ে এল প্রথমটার পিছু পিছু। ওয়্যারিং ক্যাবল স্তূপ করে রাখা দ্বিতীয় কার্টে। টেলিস্কোপিক টিউব সাইট ভর্তি তৃতীয় একটা কার্ট বেরিয়ে এল ওটার পিছনে। ওটার পিছনে সারি বেঁধে বেরিয়ে আসতে লাগল আরও দু’চাকার কার্ট। কোনটা ছুটছে রিলে নিয়ে, কোনটা ফায়ারিং কণ্ট্রোল নিয়ে, কোনটা আবার ছুটছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে। কোন কোন কার্ট ভর্তি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, স্ক্রু, বোল্ট, পিন, নাট-বল্টু দিয়ে। সর্বশেষ কার্ট ছুটছে অনেকগুলো অ্যাটমিক ওয়ারহেড নিয়ে।
পিছনের কার্টগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রথম কার্ট। লাফিয়ে লাফিয়ে, গড়াতে গড়াতে অভূতপূর্ব, অপার্থিব এক দৃশ্যের অবতারণা করে ছুটল সবগুলো কার্ট। লাইন ভাঙছে না কেউ। ছুটছে সবাই শহরের দিকে।
নষ্ট করে দেয়া বন্দুকটির উদ্দেশে।
Tags: অনুবাদ গল্প, তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য, দ্য গান, পূজাবার্ষিকী, ফিলিপ কে. ডিক, মারুফ হোসেন