প্রোফেসর চ্যালেঞ্জারের নতুন অভিযানঃ সন্ত্রাস নগরী
লেখক: সুদীপ দেব
শিল্পী: ওয়েন মিলার
এই কাহিনী ১৯১৪ সালের, লণ্ডন শহরের সর্বত্র শুধু যুদ্ধের গুজব। ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মাথারা তাঁদের সৈন্যসামন্ত জুটিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় শহরের দক্ষিণ অঞ্চলে একটি বিস্ফোরণ মানুষের মনে আরও বেশী ভয়ের সঞ্চার করল। সবার মনে একটাই আশঙ্কা, জার্মানি হয়ত অনেক দূর থেকে নিক্ষেপ করা যায় এমন কোন নতুন বোমা আবিষ্কার করেছে।
মিঃ ম্যাকআর্ডেল একটা জম্পেশ খবরের আশায় আমাকে কালবিলম্ব না করে বেড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিলেন। ভিক্টোরিয়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরার পরই অন্যান্য কাগজের রিপোর্টারদের ভীড় দেখে মেজাজটা বিগড়ে গেল। যদি কোন দেবদূত এসে আমায় সাহায্য না করে তবে অভিনব কিছু খবর পরিবেশনের আশা ত্যাগ করলাম।
দুপুরবেলা পেনজে এসে পৌঁছলাম। একটা বড় কোন ঘটনা যে ঘটেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। স্টেশনের দক্ষিণ দিকের তিনটে রাস্তা ও বাড়িঘর মিলিটারিরা ঘিরে ফেলেছে। স্টেশন থেকে বেরিয়ে একশ গজ যাওয়ার পরেই আমাদের আটকে দেওয়া হল।
“আর এগোবেন না।” সেনাদলের একজন কর্তা হেঁকে উঠল। তাঁর মুখ দেখেই বোঝা যায় সকাল থেকে এই একই কথা তাঁকে বহুবার বলতে হয়েছে।
আমি আধঘন্টা আশেপাশে ঘোরাঘুরি করলাম। কেউ কোন কথা বলছে না। আদপে ঠিক কী ঘটেছে সেই সম্মন্ধেও এলাকার কারো মুখে রা নেই। অবশেষে একজন সরাইখানার মালিককে পাওয়া গেল।
“ভোর পাঁচটা নাগাদ আমি দোকান খুলব বলে বেরিয়েছি,” তিনি বললেন, “হঠাৎ ভীষণ জোরে একটা বোমা ফাটার মত আওয়াজ। আমার দোকানের এক খদ্দের ওদিকেই ছিল। সে একটা আগুনের গোলার মত কিছু পড়তে দেখেছে। চারিদিকে পাথর টাথর ছিটকে উঠেছিল। তার নিজেরও লেগেছে, হাসপাতালে গেছে দেখাতে। তবে আমার মনে হয় তেমন কিছু নয়। যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেছে ফিরে এসে একটা পাইট নিয়ে বসবে।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কিন্তু আসলে জিনিসটা কী ছিল?”
“আমি নিজেও কি ছাই জানি?” সে বলল, “আসলে পুরো ব্যাপারটাই এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল, আর এখন তো আমার নিজের দোকানেই মিলিটারিরা ঢুকতে দিচ্ছে না…”
আমি তাঁকে ছেড়ে কোন সেনাপ্রধানের খোঁজে এগিয়ে গেলাম। বেশী খুঁজতে হল না। ইতিমধ্যেই রিপোর্টাররা ওসিকে ঘিরে ফেলেছে। এখানে কোন এক্সক্লুসিভ খবর পাওয়ার আশা বৃথা। ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে একরকম মনস্থির করে ফেলেছি, এমন সময় ঘেরাটোপের পাশে এক পরিচিত চেহারা দেখতে পেলাম। তাঁর সেই বিকটদর্শন চেহারা নিয়ে আমার দিকেই এগিয়ে আসছেন। প্রথমে আমি ভাবলাম হয়ত ভুল দেখছি। আমার পরিচিত বন্ধুর চেহারার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলেও এনার দাড়িটা যেন একটু বেশী পাকা। কিন্তু পরক্ষনেই দাড়ি আর চুল ঝাঁকিয়ে ধুলো ওড়ানোর চিরাচরিত বহর দেখে নিশ্চিত হলাম।
“চ্যালেঞ্জার!” আমি চিৎকার করে উঠলাম। দু’বার ডাকার পর অবশেষে আমায় দেখতে পেলেন তিনি।
“ম্যালোন? আরে বন্ধু, এসো এসো। কী করতে পারো দেখো।”
সাধারণ মানুষদের ধারেপাশে ঘেঁষতে না দিলেও চ্যালেঞ্জারের আবেদনে আমাকে যেতে দেওয়া হল। আমার সতীর্থ সাংবাদিকদের ঈর্ষান্বিত কথোপকথন কানে এল। আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে গেলাম বিস্ফোরণস্থলের দিকে।
“তারপর বলুন, আসল গল্পটা কী?” ফাঁকা রাস্তা দিয়ে ধ্বংসস্তুপের দিকে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করলাম। রাস্তার ওপর ইতিউতি পাথরের টুকরো আর ধুলোবালি ছড়িয়ে আছে। ভাঙা ইঁটের ফাঁক দিয়ে অল্প অল্প ধোঁয়া বেরোতে দেখা যাচ্ছে। চ্যালেঞ্জার প্রথমে আমার কথার কোন উত্তর দিলেন না।
ধ্বংসস্তুপের কাছে মাটিতে একটা বিশাল গর্ত দেখিয়ে বললেন, “এই হল তোমার গল্প, ম্যালোন। আর বেশ জম্পেশ গল্প।”
আমি গর্তটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেখানে রয়েছে আধপোড়া একটা আলমারির অংশ আর একটা গোলাকার পাথরের টুকরো। তার থেকে এখনও ধোঁয়া বেরুচ্ছে।
“এটার জন্যই আমাকে ডাকা হয়েছে।” চ্যালেঞ্জার বললেন, “কিন্তু এ যে কতক্ষণে ঠাণ্ডা হবে কে জানে। কয়েক ঘন্টা তো বটেই। তার আগে পরীক্ষা করে দেখা যাবে না। চলো, কিছু খাওয়া যাক।”
মিনিট দশেক পর সেই সরাইখানায় ফিরে এসেছি। চ্যালেঞ্জারকে দেখেই অন্য সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরেছে। এবং তারপর শুরু হয়ে গেছে প্রশ্নবাণ। তাঁদের উল্টোপাল্টা প্রশ্নের জবাবে একজনের মুখে ঘুষি চালিয়ে দিলেন চ্যালেঞ্জার। তারপর একটা বিকট গর্জন ছাড়তেই সব ভোঁ ভা। আমরাও একটু ধাতস্থ হয়ে কোণের দিকে একটা টেবিল দখল করে বসলাম।
“এটা একটা উল্কাখন্ড।” সশব্দে একটি লম্বা শ্বাস টেনে চ্যালেঞ্জার বললেন, “ভাগ্য ভাল যে এটা আরও ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পড়ে নি।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “এটা এল কোথা থেকে?”
তিনি আকাশের দিকে তর্জনি নির্দেশ করলেন।
“কে বলতে পারে হয়তো কোটি কোটি বছর ধরে এটা মহাকাশে চরকিপাক খাচ্ছিল।” তিনি বললেন, “তারপর একসময় পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে পড়ে ধেয়ে আসে এখানে। অথবা হতে পারে কোন গ্রহাণু, কোন মহাজাগতিক বিস্ফোরণে ছিটকে এদিক পানে চলে এসেছে। আমরা সত্যিই জানি না। তবে হ্যাঁ, জানার জন্য এটা একটা মস্ত সুযোগ নিঃসন্দেহে।”
বেশ একটা জমজমাট রহস্যকাহিনীর বুনোট চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তার একজন কুশীলব আমি নিজে। এই সুযোগ কোনমতে হাতছাড়া হলে ম্যাকআর্ডেল আমার পিণ্ডি চটকে দেবে। তাই চুপ করে থাকাই সমীচীন বোধ করলাম।
হঠাৎ একজন সেপাই হন্তদন্ত হয়ে সরাইখানায় ঢুকল। চ্যালেঞ্জারকে দেখতে পেয়ে প্রায় ছুটে এসে বলল, “কর্ণেল আপনাকে এত্তেলা দিলেন স্যার। ওইখানে কিছু একটা হয়েছে।”
চ্যালেঞ্জার অবিলম্বে চলল ঘটনাস্থলে। গর্বিত মুখে চ্যালেঞ্জারের সঙ্গ নিলাম আমি, আর সাংবাদিক বন্ধুরা সরাইখানা থেকে কর্ডন করে রাখা জায়গা পর্যন্ত আমাদের পিছু নিল।
গর্তটার দিকে তাকিয়ে অবশ্য একটু হতাশ হলাম।
একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে ঠিকই। পাথরটার গা আর মসৃণ নেই। একটা গোল বলের আকার নিয়েছে। ঘড়ির মত টিকটিক করে একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে ওর মধ্যে থেকে। ওপরের দিকে এক জায়গায় একটা ক্ষতর মত দেখা যাচ্ছে। তার ভেতর থেকে একটা ধাতব অংশ উঁকি মারছে।
এই নতুন আবিষ্কারে আবার একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হল। কর্ণেলের ধারণা এটা একটা বোমা ছাড়া কিছুই নয়, যে কোন মুহূর্তে ফেটে যেতে পারে। তিনি সবাইকে নিরাপদ দুরত্বে সরে যেতে নির্দেশ দিলেন। কিন্তু চ্যালঞ্জার সে কথা শুনলে তো! সেনাবাহিনী পিছু হটে গেল, আমি আর চ্যালেঞ্জার একা দাঁড়িয়ে রইলাম। নিজেকে বেশ বীরপুরুষ বলে মনে হচ্ছিল।
“কর্নেলের কথাটা কিন্তু ফেলে দেওয়ার মত নয়।” চ্যালেঞ্জারকে ওই ধ্বংসস্তুপে ভরা গর্তে নামতে দেখে বললাম, “এটা হতেও পারে কোন ভয়ানক অস্ত্র।”
“চোপরাও!” প্রোফেসর জিনিসটা স্পর্শ করার মত দূরত্বে পৌঁছে গেছেন, “কোন অস্ত্রে এমন ভাস্কর্য খোদাই করা থাকে কি? নিজে নেমে এসে একবার দেখে যাও।”
তাঁর এমন কথার পরে আর কোন তর্ক চলে না। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দিয়ে পথ করে আমিও নেমে এলাম। জিনিসটা এখন একটা সম্পূর্ণ ধাতব গোলকের আকার নিয়েছে। কাছাকাছি হাত নিয়ে বুঝলাম এখনও ওর মধ্যে থেকে তাপ নির্গত হচ্ছে।
“অস্ত্র না হলেও এটা কোন উল্কাপিণ্ডও তো নয়। তাহলে এতো গরম কেন?” আমি ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করলাম। বুঝতে পারছি বেশী জোরে কথা বলতেও ভয় লাগছে।
চ্যালেঞ্জারের অবশ্য কোন ভয় নেই। তিনি অট্টহাসি হেসে বললেন, “এ এক দারুণ রহস্য। এই দেখো।”
তিনি গোলকটির গায়ের ভাস্কর্যগুলির দিকে নির্দেশ করলেন। তাঁর তর্জনীর নিচেই কতগুলি সমকেন্দ্রিক বৃত্ত দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্র থেকে চার নম্বর বৃত্তের খোদাই একটু বেশী গভীর বলে মনে হল।
“এটা বেশী স্পষ্ট, তাই না?” চ্যালেঞ্জার ওই বৃত্তের পরিধি বরাবর আঙুল বুলিয়ে বললেন, “কেন্দ্র থেকে চার নম্বর বৃত্ত। এর মানে একটাই, এই গোলাটা এসেছে মঙ্গল গ্রহ থেকে। আর আমরা আমাদের প্রতিবেশীর সাক্ষাত পেতে চলেছি।”
চ্যালেঞ্জার কথাটা বলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার অভিব্যক্তি দেখছিলেন। তাই তিনি খেয়াল করেন নি তাঁর আঙুলের নিচে সমকেন্দ্রিক বৃত্তগুলি একে অপরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে গোলকের মধ্যে একটি অন্ধকার গর্তের সৃষ্টি করেছে। সেই গর্তের মধ্যে দিয়ে বাদামী রঙের ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে। পরক্ষনেই প্রোফেসর আর্তনাদ করে উঠলেন। গর্তের মধ্যে দিয়ে একটা চিমটির মত কিছু বেরিয়ে এসে তাঁর হাত কামড়ে ধরেছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে চ্যালেঞ্জার আবার চিৎকার করে উঠে হাতটা বেশ জোরে ঝাঁকাতে লাগলেন। তাঁর হাতে কামড়ে থাকা বস্তুটা এর ফলে ছিটকে গিয়ে কিছুটা দূরে পড়ল। জিনিসটা এবার ভালভাবে দেখতে পেলাম।
প্রথম দর্শনে মনে হল একটা বেশ বড় বিছে জাতীয় পোকা। প্রায় এক ফুট লম্বা, দেহের প্রতিটা খণ্ডের বেড় এক ইঞ্চির মত, অনেকগুলি পা, আর মাথার সামনে দুটো শুঁড় নাড়িয়ে বাতাসের স্বাদ নিচ্ছে। তবে এ কোন প্রাণী নয়, দেখেই বোঝা যাচ্ছে চকচকে কোন ধাতু দিয়ে তৈরি করা জিনিস।
“আরে ধরো ধরো ম্যালোন।” চ্যালেঞ্জার চিৎকার করে উঠলেন, কিন্তু আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই জিনিসটা সরসর করে দৌড়ে ধ্বংসস্তুপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।
“ধুত্তোরি!” চ্যালেঞ্জার গর্জন করে উঠলেন। আমি ক্ষমা চাইতে যাচ্ছি এমন সময় গোলকটার গর্তের মধ্যে থেকে আরও আধ ডজন শুঁড় বেরিয়ে নড়তে দেখলাম।
আমি বললাম, “আমার মনে হয় এখন ফিরে যাওয়াই ভাল।” চ্যালেঞ্জার আমার কথা মেনে নিলেন। আমি এক হাত বাড়িয়ে তাঁকে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে উঠে আসতে সাহায্য করলাম। তাঁর অন্য হাতে যথেষ্ট যন্ত্রণা হচ্ছে বুঝতে পারছি। তাও তিনি উঠে আসার পরেও একবার পিছন ফিরে তাকালেন।
ততক্ষণে আরও কয়েকটা জীব গোলকের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে দেখছে।
আমার প্রথম কর্তব্য হল চ্যালেঞ্জারের ক্ষতর চিকিৎসা করা। তিনি আরও কিছুক্ষণ থাকতে চাইছিলেন, আসলে ঘটনাপ্রবাহ তাঁকে বেশ উত্তেজিত করে তুলেছে। চুরুট আর স্কচের প্রলোভন দেখিয়ে আপাতত তাঁকে নিস্ক্রিয় করতে পেরেছি।
কর্নেল অবশ্য জানতে চাইলেন যে আসল ঘটনাটা আমরা কী প্রত্যক্ষ করেছি, কিন্তু তিনি আমাদের “যান্ত্রিক পোকার গল্প” বিশ্বাস করতে চান নি। তিনি দুজন সেপাইকে পাঠালেন ব্যাপারটা তদন্ত করে দেখার জন্য। আমার অবশ্য বেশী চিন্তা হচ্ছিল চ্যালেঞ্জারের ক্ষত নিয়ে। আমি তাঁকে জোর করে সরাইখানায় ফিরিয়ে এনে অবশেষে বসাতে সক্ষম হলাম।
ভদ্রলোক এতে বেশ ঝিমিয়ে পড়লেন। তাঁর তর্জনী আর বুড়ো আঙুলের মাঝখানে কিছুটা মাংস খুবলে নিয়েছে। ক্ষতস্থানটা ভাল করে ধুয়ে দিতে উনি একটা রুমাল দিয়ে বেঁধে নিলেন; এবং পরক্ষনেই ব্যাপারটা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে ঘটনার পর্যালোচনায় ফিরে গেলেন।
“এটা অবশ্যই মঙ্গল থেকে এসেছে।” একটা চুরুট ধরিয়ে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বললেন চ্যালেঞ্জার। আমি স্কচের পাত্রটা এগিয়ে দিলাম। তাতে একটা চুমুক দিয়ে দাড়ি ভিজিয়ে বললেন, “কিন্তু প্রশ্ন হল এখানে কেন? আর এখনই বা কেন?”
আমি বললাম, “আমার মনে হয় আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, কোথায়? পোকাগুলো এখন কোথায়? আর তারা কী করছে?”
তিনি আমার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন না। “আমাদের প্রযুক্তি নিশ্চয়ই অনেক বছর পিছিয়ে আছে,” তিনি বললেন, “কিন্তু ভাবনা পিছিয়ে নেই, বুঝলে ম্যালোন, ব্যাপারটা আর কিছুই নয়, মহাকাশে লক্ষ লক্ষ মাইল দূরে কোন একটা বিন্দুতে লক্ষ্য স্থির করে একটা বস্তুকে নিক্ষেপ করা।”
“আবার প্রশ্ন, কী উদ্দেশ্যে?”
চ্যালেঞ্জারের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, “উত্তর জানার একটাই উপায়, চলো জিজ্ঞেস করে আসি।”
আমার বিশ্বাস তাঁর পক্ষে এ কোন অসম্ভব কাজ নয়, তাই অবিলম্বে আবার তাঁকে নিরস্ত করতে হল।
অবশেষে আমি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর পেলাম। সরাইখানার এক কোণ থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসতেই পরিষ্কার হয়ে গেল যে পোকার দল এখন কোথায় আছে।
একজন একটা পানপাত্র ছুড়ে ফেলে দিতে সেটা দেয়ালে লেগে চৌচির হয়ে গেল। মেঝেতে বিয়ার ছড়িয়ে পড়ল। আর আমি একটা সরসর করে আওয়াজ শুনতে পেলাম যেন অনেকগুলি ধাতব পা কাঠের মেঝেতে দৌড়ে গেল।
একজন চিৎকার করে উঠল, “ওটা কী জ্বলজ্বল করছে?”
কেউ উত্তর দেওয়ার আগেই একজন মহিলার আর্তনাদ ভেসে এল, “আরে আমার পায়ের ওপর এটা কী!” এরপর তিনি আবার চিৎকার করে উঠলেন। এবার আর ভয় বা বিস্ময়ে নয়, তীব্র যন্ত্রণায়। এরপর এক চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হল। সরাইখানার ভেতরের লোকেরা বাইরে বেরিয়ে পালাতে চাইছে, একই সঙ্গে বাইরের লোকেরা ভেতরে কী হচ্ছে তা দেখার চেষ্টা করছে। আর আমাদের চারপাশে কাঠের ওপর দিয়ে ধাতব সরসর আওয়াজ ঘুরে বেড়াতে লাগল।
অবশেষে লোকজন বেরিয়ে ফাঁকা হতে আওয়াজটা কমল। চ্যালেঞ্জার চারিদিকে তাকিয়ে দেখলেন। ঘরের তিনটে আলাদা আলাদা জায়গা থেকে সরসর আওয়াজটা আবার ফিরে এল। তিনি দাড়ি ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন, এবং সবচেয়ে কাছের জায়গাটার দিকে অগ্রসর হলেন। আমিও সতর্কভাবে তাঁকে অনুসরণ করলাম। আমি চ্যালেঞ্জারের পাশে পৌছনোর পর তিনি ঘুরে কোনের দিকে তাকালেন। লক্ষ করলাম তাঁর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
একটি মৃতদেহ পড়ে আছে, চোখদুটো ছাদের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকানো। ঘাড়ের কাছে একটা ছোট ছিদ্র। মনে হচ্ছে তার শরীরের সব রক্ত সেই ছিদ্রপথে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। তার পাশ দিয়ে রক্তমাখা পোকার পায়ের ছাপ সরাইখানার বাইরে বেরিয়ে গেছে।
এরপর শুরু হল অভিযোগ–পালটা অভিযোগের বন্যা। সেনাদলের চরম ব্যর্থতা ঢাকতে কর্নেল হম্বিতম্বি করে বেড়াতে লাগলেন। তাঁর সুস্পষ্ট ক্রোধ গিয়ে পড়ছিল চ্যালেঞ্জারের ওপর। এদিকে অনেক মানুষের অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন। আমি তাঁদের সাহায্য করতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। প্রোফেসর কিন্তু খুব শান্ত মেজাজে ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষন করছিলেন। অবশেষে কর্নেলের বাক্যবাণ থামলে তিনি মুখ খুললেন।
“আমাকে আবার ঘটনাস্থলে ফিরে যেতে হবে।” তিনি শান্তভাবে স্থিরদৃষ্টিতে কর্নেলের চোখের দিকে তাকিয়ে আবার বললেন, “দরকার পড়লে তোমাকে মাড়িয়ে যাব।”
খুব কম লোককেই দেখেছি প্রোফেসরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে। কর্নেলও থমকে গিয়ে প্রথমে চোখ নামিয়ে নিলেন। আমার মনে হল কর্নেল এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন যদি আকাশ ভেঙে কোন অজানা বিধ্বংসী অস্ত্র নেমে আসে তা হলে চ্যালেঞ্জারই একমাত্র ত্রাতার ভূমিকা নিতে পারেন।
“আপনাকে দশ মিনিট সময় দিলাম। তার মধ্যে না ফিরলে আমি মর্টার–বম্বিং করে সব সমান করে দেব। সেক্ষেত্রে অজানা শত্রুর সঙ্গে আপনার প্রাণহানি হলেও আমার কিছু করার থাকবে না।” প্রোফেসরের উত্তরের অপেক্ষা না করে কর্নেল ঘুরে অন্যদিকে চলে গেলেন।
প্রোফেসর আমার দিকে ভুরূ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী ম্যালোন? এবার কি তোমার গল্পের পিছু ছাড়বে?”
আবার যখন আমরা বেষ্টনী অতিক্রম করলাম ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে এসেছে। তিনজন সেপাইকে দেখলাম ফিরে আসছে। তারা আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একজন বলল, “যান, দেখে আসুন। আমার তো বেশ রোমাঞ্চকর লাগল।”
“আর আক্রমণ করে নি?” চ্যালেঞ্জার জিজ্ঞেস করলেন।
লোকটা মাথা নেড়ে বলল, “না, তবে হতচ্ছাড়াগুলো নিশ্চয়ই কিছু একটা মতলব ভাঁজছে।”
লোকটার কথার মানে আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। তবে এই অল্প রাস্তাটুকু হাঁটার সময় বারবার চমকে উঠতে লাগলাম। প্রতিটা ঘাসের কোণে, প্রতিটা আনাচে–কানাচে মনে হচ্ছে তারা লুকিয়ে আছে। যেন সেই সরসর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। একসময় আমরা সত্যিই একটার দেখা পেলাম। রাস্তার পাশে একটা ছোট গাছ থেকে বেরি খেতে ব্যাস্ত। ব্যাটা আমাদের পাত্তাই দিল না। চ্যালেঞ্জার এই সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। তিনি ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আরও কাছে এগিয়ে গেলেন।
“সাবধান!” চ্যালেঞ্জার আমাকে পাত্তা না দিয়ে গাছটার নীচে গিয়ে দাঁড়ালেন। আমি যেন মানসচক্ষে দেখতে পেলাম পোকাটা টুপ করে তার মুখের ওপর পড়ল। আমি প্রোফেসরের কাঁধটা খামচে ধরলাম।
“তাড়াতাড়ি চলুন প্রোফেসর, আমাদের সময় খুব কম। কর্নেলের মর্টার–বম্বিং–এর কথা মনে আছে তো?”
প্রোফেসর আর আমি আবার চললাম মূল ঘটনাস্থলের দিকে।
“এদের কারুকাজ বেশ সূক্ষ্ম।” প্রোফেসর আপন মনে বললেন, “কিন্তু আমাদের পোকামাকড়ের সঙ্গে এতো মিল কেন? বিবর্তনের ধারা কি সারা ব্রহ্মাণ্ডেই একই রকম?”
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার কম্মো নয়, তাই আমি আরও তাড়াতাড়ি পা চালালাম।
ঘটনাস্থলটা পোকামাকড়গুলোর কর্মক্ষেত্রের একদম কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করছে। গোলকটার মধ্যে তারা ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দিয়ে ছুটে ছুটে আসা যাওয়া করছে। কেউ ধ্বংসস্তুপের পাথর, কেউ বিভিন্ন গাছপালা বা অন্য বস্তু নিয়ে এসে গোলকের মধ্যে সেই ছিদ্র দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। একটা অদ্ভুত গুঞ্জনের আওয়াজ পাচ্ছি।
“ঠিক ধরেছি।” চ্যালেঞ্জার বিড়বিড় করে বললেন, “এরা নমুনা সংগ্রহ করছে।”
“তাহলে বলুন, সেই হতভাগা মানুষটাকে হত্যা করে এরা কী নমুনা সংগ্রহ করল?” আমি বললাম।
“রক্ত।” প্রোফেসর বললেন, “আমার মনে হয় এরা জানতে চাইছে আমাদের প্রাণের উৎস কী।”
প্রোফেসর গর্তের মধ্যে নামতে লাগলেন।
“আমাদের হাতে বেশী সময় নেই, প্রোফেসর। যে কোন সময় মর্টার হানা শুরু হয়ে যেতে পারে।”
“নিকুচি করেছে মর্টারের। এর থেকে ভাল সুযোগ আর পাবো না। আমাকে চেষ্টা করতেই হবে।”
তিনি আমাকে অনুসরণ করার সুযোগ না দিয়ে একাই গর্তে নেমে গেলেন। একবারও ভাবলেন না দরকার পড়লে কে তাঁকে আবার হাত ধরে টেনে ওপরে তুলবে।
আমরা গোলকটার যত কাছে এগোতে লাগলাম সেই গুঞ্জন আরও স্পষ্ট হতে লাগল। তার সঙ্গে সারা শরীরে একটা কম্পন অনুভব করলাম। একটানা আওয়াজে মাথা ধরে আসছে। একটা পোকা একটা পুরনো রাগবির লগি নিয়ে আমার পায়ের ওপর দিয়ে দৌড়ে চলে গেল।
চ্যালেঞ্জার গোলকটার একদম কাছে চলে গেলেন। দুটো হাত উঁচু করে দেখালেন যে তিনি নিরস্ত্র। গুঞ্জনধ্বনি আরও জোরাল হল। আমার সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেল, মনে হল যেন পায়ের নিচে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দিয়ে নীলাভ বিদ্যুতের ঝলক প্রবাহিত হয়ে গেল।
“চ্যালেঞ্জার?” আমি তাঁর কাঁধে হাত রেখে বাধা দিতে গেলাম। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। চ্যালেঞ্জার তাঁর ডান হাতটা সরাসরি গোলকটার ওপর রেখে দিয়েছেন।
আমরা পাড়ি দিলাম।
বর্ণনা করার মত আমার আর অন্য কোন ভাষা জানা নেই। এক মুহূর্ত আগে আমরা পেনজের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলাম, এক মুহূর্ত পরেই মনে হল একটা লাল মরুভূমির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছি। মাথার ওপর বেগুনী রঙের আকাশ। পায়ের নিচে দিয়ে আরও পোকামাকড় ছোটাছুটি করছে। একটা ভগ্ন শহরের ওপর কিছু দূরে নীল রঙের লম্বা প্যাঁচানো স্তম্ভ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। আমার মাথার মধ্যে যেন কেউ অজানা বিশ্বের একের পর এক ছবি এঁকে চলেছে।
সামান্য কিছু সময় একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। হঠাৎ একটা তীক্ষ্ণ হুইশেলের শব্দে আমার স্বপ্নভঙ্গ হল।
মর্টার! মর্টার–বোম্বিং–এর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।
চ্যালেঞ্জার তখনও গোলকটার গায়ে স্পর্শ করে ছিলেন। তাঁর চোখের দৃষ্টি নিষ্প্রভ। আমি গায়ের জোরে তাঁকে হ্যাঁচকা টানে সরিয়ে আনলাম। তিনি আমার দিকে ফিরলেন, স্পষ্টতই মুখে রাগের অভিব্যক্তি। আমার ভয় হল তিনি হয়তো আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবেন। এমন সময় আবার সেই হুইশেলের শব্দ শোনা গেল।
“মর্টার বোম্বিং, চ্যালেঞ্জার,” আমি বললাম, “আমাদের তাড়াতাড়ি এই জায়গা ছেড়ে যেতে হবে।”
“উজবুক কোথাকার!” চ্যালেঞ্জার গর্জে উঠলেন, “তুমি জানো না কী করছ!”
আমি ভেবেছিলাম যে তিনি হয়তো আবার গোলকটার কাছে ফিরে যাবেন। কিন্তু তিনি এবার গর্তটা থেকে ওপরে উঠতে শুরু করলেন। আমিও পিছু নিলাম। অনেক পোকামাকড় দ্রুতগতিতে উলটো দিকে ছুটে যাচ্ছে, তাদের এত জোরে দৌড়তে আগে দেখি নি। অবাক হয়ে লক্ষ করলাম যেন কোন অজানা নেতৃত্বে তারা সবাই একসঙ্গে গোলকের মধ্যে ঢুকে যেতে লাগল। সেই গুঞ্জনধ্বনি এখন যেন কানে তালা ধরিয়ে দেওয়ার উপক্রম করেছে। ঠিক এই সময় কর্নেলের তৃতীয় এবং অন্তিম হুইশেলের শব্দ শুনতে পেলাম। চ্যালেঞ্জার আর আমি গর্ত থেকে বেরিয়ে ছুটতে শুরু করলাম। এবার কাছাকাছি আরেকটা হুইশেল বেজে উঠল, যেন মাথার ওপর দিয়ে মর্টার বৃষ্টি শুরু হল।
“মাথা নিচু করো।” চ্যালেঞ্জার চিৎকার করে উঠলেন। আমাকে দু’বার বলতে হল না। দু’হাত দিয়ে মাথা ঢেকে আমি মাটিতে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লাম। এই বোধহয় সব শেষ।
তীব্র আলোর ঝলকানির সঙ্গে একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হল। একটা গরম হাওয়ার ঢেউ যেন আমাকে কিছুটা সামনে ঠেলে দিল। আমার থুতনিটা পাথরে ঘষটে গেল। এর পর আর কিছু জানি না, সব অন্ধকার।
জানি না কতক্ষণ অচেতন ছিলাম, মনে হয়ে কয়েক সেকেণ্ডই হবে। তারপর চ্যালেঞ্জার আমায় এগিয়ে যেতে সাহায্য করলেন। এমন সময় দেখলাম কয়েকজন সেনা এদিকে আসছে। কর্নেল চ্যালেঞ্জারের মুখোমুখি হলেন।
“যত্ত সব আহাম্মকের দল…”
কর্নেলের কথা অসমাপ্ত রয়ে গেল, কারণ ততক্ষণে তাঁর চোয়ালে চ্যালেঞ্জারের একটা বিরাশি সিক্কার ঘুষি এসে পড়েছে। তাঁদের অফিসারের এই হেনস্থায় সেনাদলের মধ্যে কোন ভাবান্তর লক্ষ করা গেল না। বরং তাদের মধ্যে একজন আমার দিকে চোখ টিপে একটা ছোট্ট হাসি উপহার দিল।
ততক্ষণে চ্যালেঞ্জার আবার ফিরে চলেছেন সেই জায়গায়… কিছু অবশিষ্ট আছে কি না দেখতে। কর্নেল তাঁর কথা রেখেছেন। সেই জায়গাটা একদম সমান করে দিয়েছেন। ভগ্ন বাড়িটার আর কোন অস্তিত্বই নেই, আর না আছে সেই গোলকের কোন চিহ্ন।
“এ আমরা কী করলাম, ম্যালোন? ভিনগ্রহের প্রাণীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটা সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল আমাদের কাছে। তারা আমাদের এই ব্যাবহার কি ভাল চোখে নেবে!”
নতুন ধ্বংসস্তুপের কেন্দ্রে একটা কম্পন ও আলোড়ন দেখা দিল। আমার পায়ের নিচে একটা কাঁপুনি অনুভব করলাম। তারপর আবার সেই গুঞ্জনধ্বনি শুরু হল। মাটি ফুঁড়ে সেই চকচকে ধাতব গোলকটা আবার উদয় হল।
সৈন্যরা তাঁদের বন্দুক তাক করল, কিন্তু গুলি করার আগেই অনির্বচনীয় দ্রুততায় সেই গোলক আকাশে উড়ে গেল। আমরা আকাশের দিকে মুখ তুলে দেখলাম মেঘের মধ্যে একটা গোল ছিদ্র করে সেটা মহাকাশে বিলীন হয়ে গেল।
“ওরা কি আবার ফিরে আসবে?” একজন সেপাই জিজ্ঞাসা করল।
“হয়তো আসতেও পারে।” চ্যালেঞ্জার মৃদুস্বরে বললেন, “আপনাদের কর্নেলকে ধন্যবাদ। আমরা ওদের কাছ থেকে যা না জানলাম, ওরা বরং আরও বেশী অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে গেল।”
সরাইখানায় ফিরে এসে আমরা আবার পানাহারে বসলাম। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য সেনাবাহিনী দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। অন্য কাগজের এক সাংবাদিকের কাছ থেকে জানতে পারলাম অফিশিয়ালি জানানো হচ্ছে পেনজের এক পরিত্যক্ত খনিতে গ্যাস জমে গিয়ে বিস্ফোরণ হয়েছে। এছাড়া সমস্ত ঘটনার আর কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না।
ফিরে এসে মিঃ ম্যাকআর্ডেলকে আমার অভিজ্ঞতার সবটাই জানালাম। সম্পূর্ণ ঘটনার বিবরণ আমি লিখেও ফেলেছিলাম। কিন্তু পরের দিন সকালে সমস্ত কাগজে দেখলাম পরিত্যক্ত খনিতে গ্যাস জমা হয়ে বিস্ফোরণের গল্প ছাপা হয়েছে। আমার মনে হল এমন এক চূড়ান্ত অবিশ্বাস্য কাহিনী আমাদের কাগজে বেরুলে কে আর তা মেনে নেবে। হয়তো লাল মরুভূমিতে আমার মানসভ্রমণের কাহিনী শুনে আমাকে পাগল মনে করতে পারে সবাই।
মূল রচনাঃ স্যার আর্থার কন্যান ডয়েলের প্রোফেসর চ্যালেঞ্জারের ইংরেজি প্যাস্টিশ The Penge Terror
রচনাঃ William Meikle
ছবিঃ Wayne Miller
Tags: অনুবাদ গল্প, ওয়েন মিলার, গল্প, দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, প্রোফেসর চ্যালেঞ্জারের নতুন অভিযানঃ সন্ত্রাস নগরী, সুদীপ দেব
Golpo ta hoyto ektu hotas koreche, but pore vebe dekhlam pastish hisebe thik ache. Anubad khub sundor hoyeche. Tumi nisondehe aro onk anubad korte paro. Tomar anubad er ami fan hoye porechi…
আমারও গল্পটা পচ্ছন্দ হয়নি। অনুবাদ ভালই।
Once upon a time, একটা ভয়ঙ্কর অনুবাদ পড়েছিলাম। ফলে গল্পগুলোও সেই সময় ভালোলাগেনি। আজ অনেকদিন পরে একটা সাবলীল, প্রাঞ্জল অনুবাদের জন্য নতুন করে ভালোলেগে গেল।