বিষকন্যে
লেখক: গৌরব বিশ্বাস
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য (চিত্রচোর)
পূর্ণ চন্দ্রের উথলে ওঠা আলোয়, ভেসে যাচ্ছে সমস্ত নগরী। রাত্রি বেশ গভীর হল। প্রজারা গভীর নিদ্রায় মগ্ন। সম্রাট অবশ্য মূল প্রাসাদে অনুপস্থিত। তাঁর অবস্থান প্রাসাদ সংলগ্ন প্রমোদ ভবন। আজ তাঁর মন বড় প্রফুল্ল। সংলগ্ন রাজ্যের সম্রাট যে দিন দিন সামরিক শক্তিতে পরাক্রমশালী হয়ে উঠছেন, এ সংবাদ তিনি চর মারফত বেশ কিছুদিন যাবৎ পাচ্ছিলেন। তাঁর কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছিল বৈকি। অবশেষে চিন্তার অবসান। আজ বেলা দ্বিপ্রহরে সে রাজ্য থেকে এসেছে মিত্রতার প্রস্তাব। সেই সাথে মূল্যবান সব উপহার সামগ্রী। তবে একটি উপহারের রূপচ্ছটার কাছে ম্লান হয়ে যায় বাকি সব। সেটি কোনো মূল্যবান হীরে-জহরত নয়। এক অতীব সুন্দরী রমণী। রক্ত মাংসের এক নারী শরীর। দু চোখে তীব্র সম্মোহন। তার অনির্বচনীয় দেহ সৌষ্ঠব পুরুষের স্নায়ুতে আগুন ছড়ায়। সম্রাটের নারী আসক্তির কথা সর্বজন বিদিত। তাই এমন উপহারের ব্যবস্থা। সম্রাট দ্রুতপায়ে এগিয়ে চলেছেন প্রমোদ ভবনের শয়নকক্ষের দিকে। সেখানেই সখী সমভিব্যহারে অপেক্ষারত সেই যুবতী। আজ রাত্রে সম্রাটের শয্যাসঙ্গিনী। সখীরা তাকে সাজিয়েছে, আতরে – চন্দনে, বহুবিধ অলংকারে। মৃৎপ্রদীপের নরম আলো এক অপার্থিব মায়ার জাল বিছিয়েছে শয়নকক্ষ জুড়ে। তাতে সঙ্গত প্রদান করে, সখীগণের হাস্য-কাকলির মৃদু দমক। সুগন্ধী ধুপে শয়নকক্ষের বাতস আমোদিত। শয্যাপার্শ্বে এক রেকাবিতে রাখা হয়েছে শয্যাসঙ্গিনীর নিজ হস্তে রচিত শ্বেতপুষ্প মাল্য। শ্বেতপুষ্প সম্রাটের বড় প্রিয়। মদিরাও প্রস্তুত। দ্বারপ্রান্তে সম্রাটের পদশব্দে সখীরা সন্ত্রস্ত ভঙ্গিতে প্রস্থান করে। সম্রাট প্রবেশ করলেন শয়নকক্ষে। নিঃশব্দে এসে বসলেন যুবতীর পার্শ্বে। নির্নিমেষ দৃষ্টিতে লেহন করছেন অনির্বচনীয় দেহ সৌষ্ঠব। মেয়েটি ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকাল। সেই সম্মোহন। যার এক ঝলক অতি সংযমী পুরুষের হৃদয়কেও উদ্বেল করে। যুবতীর কবোষ্ণ শরীর বাঁধা পড়ল সম্রাটের লৌহকঠিন বাহুদ্বয়ের আলিঙ্গনে। যুবতীর দেহসৌরভ সম্রাটকে নেশাতুর করে তোলে। মৃৎপ্রদীপের আলো কক্ষের দেওয়ালে রচনা করছে আলিঙ্গনরত আত্মবিস্মৃত নর নারীর দৈত্যাকার ছায়াময় প্রতিকৃতি। কক্ষের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে রতিলিপ্সায় উন্মত্ত দুই নারীপুরুষের রতিঘন তপ্ত নিঃশ্বাসে। মূহুর্ত কাটতে থাকে নিঃশব্দে। যুবতীর ওষ্ঠদ্বয়ের অনাঘ্রাত সরসতায় সম্রাটের চুম্বন প্রগাঢ় থেকে প্রগাঢ়তর হতে থাকে। কিন্তু একি! সম্রাট হাঁপাচ্ছেন বিস্ফারিত নয়নে। দম তার বন্ধ হয়ে আসছে। বহু প্রচেষ্টাতেও এত টুকু বাতাস প্রবেশ করছে না তার শ্বাসযন্ত্রে। বাইরে প্রহরারত দ্বাররক্ষীদের চিৎকার করে ডাকতে গেলেন। আওয়াজ বেরোল না কন্ঠ থেকে। অবিশ্বাসের ঘৃণ্য দৃষ্টিতে তিনি চাইলেন যুবতীটির দিকে। ‘বিশ্বাসঘাতকিণী’ , ‘গুপ্তঘাতিণী’ চিৎকার করে তিনি বলতে চাইলেন। কিন্তু তিনি যেন মূক হয়ে গেছেন। ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়লেন সম্রাট। মৃত্যুর শীতলতা গ্রাস করল তাঁকে। সম্রাটের মৃত্যুসংবাদ সেই রাত্রেই চর মারফত পৌছুল পাশের রাজ্যের সম্রাটের নিকট। তিনি প্রস্তুতই ছিলেন। পূর্ণ সামরিক শক্তি নিয়ে তিনি আক্রমণ করলেন মৃত সম্রাটের রাজ্য।
(২)
এ এক বিস্মৃত অতীতের আখ্যান। বোহেমিয়ার রাজা দ্বিতীয় ওয়েনচেসলাউস (Wenceslaus II) তখন পোল্যান্ডেরও অধিপতি। বছর তিরিশের সুপুরুষ তিনি। বলিষ্ঠ সুঠাম স্বাস্থ্যের অধিকারী। রাজপুরুষের চেহারা যেমন হয় আর কি। বহুগামীতা তার রক্তে। অতঃপর ওয়েনচেসলাউস প্রেমে পড়লেন সেই নগরের এক অপরূপা কন্যার। নাম তার এগনিস (Agnes)। এগনিসের মার্জিত ব্যবহার রাজার হৃদয় হরণ করল। কিছুদিনের মধ্যেই সামান্যা নগর অধিবাসী পেলেন রাজপ্রণয়িনীর পরিচয়। বছর গড়ায়, ওয়েনচেসলাউস এগনিসের প্রেমে আকুল হয়ে ওঠেন। তার রাজপুরুষোচিত চেহারায় ভাঙনের ছাপ স্পষ্ট। বলিষ্ঠ দেহ হয়ে পড়েছে ক্ষীণকায়। হারিয়ে ফেলছেন তাঁর রাজকীয় মেজাজ। প্রজাদের মধ্যে একটাই আলোচনা –“রাজা কি তবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন?” তাদের আশঙ্কাই সত্যি হল। অকালে মারা গেলেন বোহেমিয়া-রাজ। রাজবদ্যি মৃত্যুর কারণ ধরতে পারলেন না। রোগের হেতু সাব্যস্ত করা হল এগনিসকে। প্রজারাও তাতেই সায় দিল- “ওই মায়াবিনীর দেহ বিষের সায়র”। সমসাময়িক কবি ওয়াটেকারও (Ottacker) দুষলেন এগনিসকে- “…How could you do a deed like this? How could you mix poison with the fathomless sweetness which you carry in your delicate body? Mistress, you betrayed him, just as the Romans did when they betrayed an emperor. They brought up a child on poison, who later became the emperor’s mistress, and after he had lain with her he died. But that case was different, as the child had been trained by the Romans that she might poison the Emperor.”
রাজা দ্বিতীয় ওয়েনচেসলাউস
(৩)
অমৃতা আর অজয়ের বিয়েটা শেষপর্যন্ত হল। কলেজে পড়তে ওদের প্রেম। তারপর বাড়িতে জানাজানি। প্রথম প্রথম দু পরিবারের তরফেই একটু আপত্তি থাকলেও, তা ধোপে টেকেনি। “মিঞা-বিবি রাজি তো ক্যায়া করেগা কাজি?”। আজ ওদের ফুলশয্যা। সন্ধ্যে থেকেই আত্মীয়-স্বজনের সমাগমে বাড়িটা আজ গমগম করছে। আত্মীয়-স্বজনের ভীড় কমতে কমতে রাত অনেকটাই গড়াল। তারপর স্ত্রী-আচার সেরে, যখন ওরা একে অপরকে পেল একান্ত নিভৃতে তখন মধ্যরাত্রি অতিক্রান্ত। চারি চোখের মিলন হল আবার। এমন তো কতবারই হয়েছে, তবু এ মূহুর্তের কোনো তুলনা হয় না। অজয়ের আলিঙ্গনে ধরা দিল অমৃতা। নিশ্চিন্তে মাথা রাখল অজয়ের বুকে। সারাদিনের ক্লান্তিতে দুটি দেহ অবসন্ন। দুজনেরই চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে। সকালে ঘুম ভাঙতে একটু দেরিই হল অমৃতার। অজয় তখনও ঘুমোচ্ছে। ঘুম ভাঙতেই অমৃতার চোখ পড়ল বেড সাইড ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। আয়নায় ধরা পড়েছে, অমৃতার প্রশান্ত মুখখানি। তাতে ভোরের শিশিরের স্নিগ্ধতা। কপালে সিঁদুরের টিপ অবিন্যস্ত। লজ্জায় আরক্তিম হয়ে উঠল সে। অজয়ের হাতটা সরিয়ে তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইল। অজয়ের হাতটা স্পর্শ করতেই একটা হিমেল আতঙ্ক চেপে ধরে অমৃতাকে। হাতটা বরফের মতো ঠান্ডা। শুধু হাত নয়, অজয়ের সমস্ত শরীরটাকেই গ্রাস করেছে শীতলতা। অজয়কে বার কয়েক জোরে ধাক্কা দেয় অমৃতা। কিন্তু অজয় যেন এক জড় বস্তু। নিঃসাড়। নিস্তব্ধ। নিস্পন্দ। অমৃতার গলা চিরে বেরিয়ে আসে অস্ফুট আর্তনাদ। …… ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন- “ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। ঘুমের মধ্যেই সব শেষ”। ডাক্তারের একটা শব্দে ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল, অমৃতার সব সুখ-স্বপ্ন।
বাড়িতে শোকের আবহ। প্রতিবেশীদের উৎসুক চোখ বার বার উঁকি মেরে ফেরে অমৃতার বেডরুমে। চারদিকে ফিসফাস। কানাকানি – “… প্রথম রাত্তিরেই সোয়ামীকে খেল!”
(৪)
অমৃতা যদি অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীতের কোনো এক রমণী হত, ওর কপালে নিশ্চিত জুটত ‘বিষকন্যা’র তকমা। সে যুগের সমাজ যেমন দিয়েছিল এগনিসকে বা এ নিবন্ধের শুরুর কল্পকাহিনিটির ওই অপরিচিতা যুবতীকে। তাঁর পরিচয় একটাই। সে ‘বিষকন্যা’। যার নিঃশ্বাস লাগলে পুরুষের আয়ুক্ষয় হয়। চোখে চোখ রাখলে পুরুষ হয় উন্মাদ। স্পর্শে যার মরণের আলিঙ্গন। চুম্বনে মৃত্যুর নিখুঁত নিশানা। সম্রাটের সামরিক শক্তির গোপনতম অস্ত্র । মূক অতীতের বুকে কান পাতলে বিষকন্যাদের নিয়ে কতই না রোমাঞ্চকর কাহিনি শোনা যায়। সবই কি কল্প-কাহিনি? বিষকন্যার অস্তিত্ব কি কেবল রোমান্স কাহিনি বা জনশ্রুতিতে? নাকি ‘বিষকন্যা’ একটি মূর্তিমান অপবাদ। এ সব প্রশ্নের নির্দিষ্ট সদুত্তর অতি বড় পণ্ডিতও দিতে অপারগ। তবে বিষকন্যাদের নিয়ে বহু চর্চিত কাহিনি গুলোকে বিশ্লেষণ করলে তা হয়ত কিছু সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করে।
(৫)
আলেকজান্ডারের বীরত্বের কাছে তখন প্রায় সব সম্রাটই পরাহত। একের পর এক রাজ্যজয়ের পর এক সন্ধ্যায় তিনি সৈন্য সমভিব্যহারে পৌঁছলেন এ দেশেরই এক ছোটো রাজ্য সীমান্তে। সেখানেই তিনি শিবির পাতলেন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন সূর্যোদয়ের সঙ্গেই আক্রমণ হানবার। ছোট রাজ্যের সামরিক শক্তি আলেকজান্ডারের কাছে নগণ্য। কিন্তু রাজার অস্ত্রভান্ডারে মজুত গুপ্তঘাতিনী। বিষকন্যা। শত্রু শিবিরকে শ্মশানে পরিণত করতে একটি অস্ত্রই যথেষ্ট। রাজজ্যোতিষীরা বহু আগেই ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন আলেকজান্ডার কর্তৃক এ আক্রমণের। রাজা তাই তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এই মহাস্ত্রকে। শত্রু পক্ষকে অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করলেন তিনি। আলেকজান্ডারের শিবিরে পাঠালেন পাঁচ অনিন্দ্য-সুন্দরী তরুণীকে। পাঁচ কন্যার পঞ্চমটি বিষকন্যা। বাকিদের সাথে তাঁর লাবন্যের তুলনাই চলে না। সে নৃত্য-গীত পটিয়সী। বীণাবাদিনী। গ্রীক বীরের কিছুমাত্র সন্দেহ হল না। সব রাজারাই বিনা যুদ্ধে তাঁর পরাজয় স্বীকার করেছেন। তারপর তাঁর প্রমোদ শিবিরে পাঠিয়েছেন এমনই সব লোভনীয় উপঢৌকন। ঘুণাক্ষরেও তিনি টের পেলেন না, রাজার দূরভিসন্ধি। পঞ্চম কন্যাটিকে দেখে, তাঁর মনে জ্বলে কামনার আগুন। তিনি এগিয়ে গেলেন তার দিকে। কিন্তু সে শিবিরে তখন উপস্থিত স্বয়ং অ্যারিস্টটল ও সক্রেটিস। বহুদর্শী প্রাজ্ঞ তাঁরা। তাঁদের স্থির বিশ্বাস, এ নারী কোনো সামান্যা নয়। এ বিষকন্যা। সক্রেটিস দ্রুত পায়ে এগিয়ে তরুণীকে স্পর্শের পূর্বেই আটকালেন আলেকজান্ডারকে। গুরুর এহেন আচরণে আলেকজান্ডার বিস্মিত। ইঙ্গিতে সক্রেটিস দুজন দাসকে কাছে ডাকলেন। আদেশ দিলেন তরুণীটিকে চুম্বন করতে। তারা আদেশ মান্য করল। নিমেষে তাদের দেহ লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। আলেকজান্ডার মূহুর্তমাত্র বিলম্ব না করে, তলোয়ার কোষমুক্ত করে দ্বিখন্ডিত করলেন বিষকন্যাকে।
(৬)
কিভাবে এক সাধারণ শিশুকন্যা পরিণত হত বিষকন্যায়? এ নিয়েও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোককথায় হরেক রকমের কাহিনি। তবে পন্ডিত ব্রুনেটো ল্যাতিনি’র ( Brunetto Latini) Li livers dou Tresor বইটির ইতালীয় সংস্করণে এক অত্যাশ্চর্য কাহিনির সাক্ষাৎ মেলে – সিজি নামক প্রদেশে এক বুদ্ধিমতী রাণী বাস করতেন। যাদুবলে তিনি অবগত হলেন, এক গ্রীক বীরের দ্বারা তিনি রাজ্যচ্যূত হবেন। নাম তার আলেকজান্ডার। আলেকজান্ডারের জন্মের খবর শোনামাত্র তাঁকে হত্যা করার ফন্দি আঁটতে লাগলেন রাণী। আলেকজান্ডারের জন্মের সময়, লক্ষণ ইত্যাদি বিচার করে রাণী দেখলেন বড় হলে আলেকজান্ডার শুধু বীরই হবেন না, সে সাথে নারী আসক্তও হবেন। রাণী একটি সুদর্শনা, সুলক্ষণা মানব শিশুকন্যা সংগ্রহ করে তাঁকে সাপের ডিমের মধ্যে পুরে রাখলেন। মা সাপ তার অন্যান্য সন্তানদের সাথে, শিশু কন্যাটিকেও প্রতিপালন করে। শিশুটি চালচলনে সর্পিণী হয়ে ওঠে। সে সাপের মতো খায়। সাপের মতো শিষ দেয়। তারপর একদিন গোপনে সাপের আস্তানা থেকে শিশু কন্যাটিকে নিজের প্রাসাদে নিয়ে আসলেন রাণী। নবীনা সর্পিণীকে বন্দি করে রাখলেন খাঁচায়। সে শিশুর কাছে যাওয়ার উপায় নেই। তার সহচর্যে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর সাত সপ্তাহ ধরে রাণী তাঁকে মানুষের খাদ্য দিলেন। তাঁকে মানুষের ভাষায় শিক্ষিত করে তুললেন। সাত বছর পরে কন্যা যৌবনে পা দিল। নিজের নিরাভরণ রূপ দেখে কন্যা নিজেই লজ্জিত হয়। তারপর একদিন সসৈন্যে আলেকজান্ডার হাজির হলেন সে রাজ্যে। রাণী এমন দিনেরই অপেক্ষায় ছিলেন। দুজন সখীসহ বিষকন্যাকে তিনি পাঠালেন গ্রীক শিবিরে। তারপর কি হল? আলেকজান্ডার প্রথম দর্শনেই হৃদয় দিলেন সেই কন্যাকে। তাকে শয্যাসঙ্গিনী রূপে পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। এবার তাঁর ত্রাতা হয়ে দেখা দিলেন অ্যারিস্টটল। তিনি কন্যাটিকে প্রত্যক্ষমাত্র অনুভব করলেন, এ কন্যা সর্প-লক্ষণা। এ বিষকন্যা। আলেকজান্ডারকে সব জানালেন তিনি। তাঁকে ধৈর্য ধরতে বললেন অ্যারিস্টটল। পর দিন সকালে অ্যারিস্টটল এক বিষধর সাপ জোগাড় করে তাকে ঢাকা দিয়ে রাখলেন। তারপর এক বুনো লতার রস দিয়ে সেই ঢাকনার চারপাশে গোল করে গন্ডি কেটে ঢাকনাটা তুলে নিলেন। আশ্চর্য কান্ড! সাপটা বার বার চেষ্টা করে সেই গণ্ডির বাইরে বেরোতে, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। একসময় সেটি নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এরপর বিষকন্যাটিকে হাজির করা হল সেখানে। সেই সাথে তাঁর দুই সখীকেও। প্রত্যকের চারপাশে সেই লতার রস দিয়ে গণ্ডি কেটে দিলেন অ্যারিস্টটল। দুই সখী অবলীলায় বেরিয়ে এল গণ্ডি থেকে। কিন্তু বিষকন্যাটি অচল, নিস্পন্দ। তারপর হঠাৎই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল সে। আলেকজান্ডার লজ্জিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন অ্যারিস্টটলের দিকে।
এ কাহিনির সত্যতা বিচার সাপেক্ষ। তবে সম্ভবত এ কাহিনিরই এক ক্ষীণ উল্লেখ পাওয়া যায়, ‘Secretum Secretorum’ বইয়ের এক সতর্কবাণীতে। এখানেই এ বই প্রসঙ্গে কিছু বলে রাখা প্রয়োজন। অ্যারিস্টটল তখন বৃদ্ধ। বার্ধক্যের জন্য তিনি আলেকজান্ডারের বিজয় অভিযানে সঙ্গ দিতে পারেন না। কিন্তু গ্রীস থেকে নিয়মিত তাঁর চিঠি আসে আলেকজান্ডারের কাছে। ‘Secretum Secretorum’ এমনই কিছু গোপন পত্রের সংকলন। তবে এই পত্রগুলির লেখক এবং প্রেরক আদৌ অ্যারিস্টটল কিনা, সে নিয়ে পণ্ডিতদের বিস্তর মতভেদ। সে ভাবনা পন্ডিতেরাই ভাবুক। আমরা বরং নজর রাখি সেই সতর্কবাণীতে- “Remember the mother of the Indian king who sent to thee presents, one of which was a girl who had been brought up on poison until her nature had become that of poisonous serpents. And if I had not found out through my knowledge of the Indian kings and physicians, and had not suspected her to be capable of inflicting a fatal bite, surely she would have killed thee”.
(৭)
সক্রেটিস আর অ্যারিস্টটল যেমন আলেকজান্ডারকে বার বার রক্ষা করেছেন সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে, তেমনি চাণক্যও রক্ষা করেছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যকে। বিষকন্যাকে নিয়ে যাবতীয় কাহিনির বেশীরভাগই আবর্তিত হয়েছে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের দুই বীরকে ঘিরে। চাণক্যের বিচক্ষণতায় কিভাবে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য রক্ষা পেয়েছিলেন বিষকন্যার হাত থেকে সে কাহিনিই ধরা পড়েছে বিশাখ দত্তের মুদ্রারাক্ষসে ।
সমস্ত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে পাটুলিপুত্রের সিংহাসনে বসলেন চন্দ্রগুপ্ত। মৌর্য্য বংশ প্রতিষ্ঠা হল। কিন্তু চাণক্য নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। তিনি জানেন, মহারাজা নন্দের মৃত্যু ঘটলেও, নন্দের প্রধানমন্ত্রী রাক্ষস এখনও তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। রাক্ষস সদা সচেষ্ট গোপনে আঘাত হানাতে। এমন সময় চন্দ্রগুপ্ত ঠিক করলেন নন্দের প্রাসাদ পরিদর্শনে যাবেন। রাক্ষস এমন সুযোগেরই প্রতীক্ষায় ছিলেন। চন্দ্রগুপ্তের শয়নকক্ষের মেঝেতে লুকিয়ে রাখলেন কিছু সৈন্যকে, তাকে হননের উদ্দেশ্যে। চন্দ্রগুপ্ত শয়নের পূর্বে চাণক্য ঘুরে দেখতে লাগলেন সে কক্ষ। হঠাৎ চাণক্য প্রত্যক্ষ করলেন, মেঝের এক ছিদ্র থেকে এক পাল পিপড়ে সারিবদ্ধ ভাবে বেরিয়ে আসছে। মুখে তাদের খাদ্যকণা। রাক্ষসের ষড়যন্ত্র মূহুর্ত মধ্যে ধরে ফেললেন বুদ্ধিমান চাণক্য। চাণক্য আদেশ দিলেন কক্ষে আগুন দিতে। মারা পড়ল লুকিয়ে থাকা সমস্ত সৈন্য । এমন সুবর্ণ সুযোগ ব্যর্থ হওয়ায় রাক্ষস এবার প্রয়োগ করলেন তাঁর চরম অস্ত্র। বিষকন্যা। মনোরঞ্জনকারিণী রূপে তাকে পাঠালেন চন্দ্রগুপ্তের দরবারে। কিন্তু প্রাজ্ঞ চাণক্য সহজেই ধরতে পারলেন মনোরঞ্জনকারিণীর আসল রূপ। চন্দ্রগুপ্তের কাছে পৌছানোর পূর্বেই তিনি ধরে ফেললেন তাকে। কিন্তু চাণক্য বিষকন্যাকে হত্যা করলেন না। তিনি অন্য অভিসন্ধি ফাঁদলেন। বিষকন্যাকে তিনি প্রেরণ করলেন পর্বতকের কাছে। পর্বতক এক সময় ছিল চন্দ্রগুপ্তের মিত্র। কিন্তু তিনিও তখন গোপনে হাত মিলিয়েছেন রাক্ষসের সঙ্গে। অতএব রাক্ষস প্রেরিত বিষকন্যাকে দিয়েই পর্বতককে হত্যার সিদ্ধান্ত।
পর্বতক হনন পর্বের এক পরিবর্তিত রূপ পাওয়া যায়, “পরিশিষ্ট পর্বণ” গ্রন্থেও। পরবর্তী কালে ‘মুদ্রারাক্ষসের’ এ কাহিনি স্থান পায় ‘অমর চিত্রকথা’ কমিকসে। বিষকন্যার সাক্ষাৎ মেলে সোমদেব ভট্টের ‘কথাসরিৎসাগরে’ও। সেখানে বৎস রাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করেছেন রাজা ব্রহ্মদত্তের মন্ত্রী – “তিনি বিষ প্রয়োগে তাঁর যাত্রাপথের গাছপালা ফুলপল্লব জল ঘাস সব দূষিত করলেন। নর্তকী হিসেবে শত্রু শিবিরে প্রেরণ করলেন বিষকন্যাদের”।
(৮)
বিষকন্যার এতসব কাহিনি বর্ণনার পর, স্বভাবতই যে প্রশ্ন সর্বাগ্রে উঠে আসে- সত্যিই কি একের দেহের বিষ স্পর্শ, চুম্বন, শারিরীক মিলনের মাধ্যমে অপর দেহে সঞ্চার করা সম্ভব? কোনো রূপবতীর স্পর্শ, চুম্বনে তাৎক্ষণিক মৃত্যুও কি সম্ভব? হয়ত এসব প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচারই বিষকন্যার অস্তিত্ব সম্বন্ধীয় যাবতীয় রহস্যে আলোকপাত করতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞান কারুর স্পর্শে, চুম্বনে তাৎক্ষণিক মৃত্যুর তত্ত্বকে খারিজ করে। যদি না স্পর্শে, চুম্বন কালে উত্তেজিত পুরুষটির অকস্মাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে থাকে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এরকম অকস্মাৎ মৃত্যু তো ঘটতে পারে যে কোনো মুহূর্তেই। সুতরাং বিষকন্যার সহচর্যে তাৎক্ষণিক মৃত্যু, বিষকন্যাকে নিয়ে জনশ্রুতি গুলোর অলংকার মাত্র, যা তাদের যুগ যুগ ধরে মনোগ্রাহী করে তুলেছে। তাহলে সে সমস্ত পুরুষদের মৃত্যু হত কিভাবে? এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা মূলত দায়ী করছেন দুটি রোগকে। প্রথমটি tuberculosis , দ্বিতীয়টি syphilis। এই দুই রোগের ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব, যীশুর জন্মের আগে থেকেই পৃথিবীতে ছিল। মনেরাখতে হবে, বোহেমিয়া-রাজ দ্বিতীয় ওয়েনচেসলাউস মারা গিয়েছিলেন ক্ষীণকায় হয়ে। যা টিউবারকুলোসিসের অন্যতম লক্ষণ। আধুনিক চিকিৎসকেরা ওয়েনচেসলাউসের মৃত্যুর কারণ হিসেবে টিউবারকুলোসিসকেই দায়ী করেছেন। হতে পারে এগনিস হয়ত অজান্তেই টিউবারকুলোসিসে আক্রান্ত ছিলেন। কারণ তখন রোগলক্ষণ বিচার করে রোগনির্ণয়ের মতো উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। এগনিসের থেকে হয়ত আক্রান্ত হয়েছিলেন ওয়েনচেসলাউস। এ সম্ভাবনা একেবারে নস্যাৎ করা যায় না। কারণ মৃত্যুর আগের দিনগুলিতে এগনিসের সহচর্যেই বেশীরভাগ সময়ই কাটিয়েছিলেন তিনি।
সিফিলিসের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মিলেছে মিশরের ফ্যারাওয়ের মমি থেকেও। সে কালের অনেক সম্রাটেরই যে একাধিক যৌনসঙ্গিনী ছিল এ কথা বলাই বাহুল্য। সুতরাং কার দ্বারা সম্রাট এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, সেটি ওয়েনচেসলাউসের মৃত্যু তত্ত্বের মতোই বহু সম্ভাবনাময়। হয়ত, সম্রাট বিষকন্যার দ্বারা কোনো ভাবেই সংক্রামিত হননি। এগনিসের ক্ষেত্রেও সেকথা প্রযোজ্য। তাকে হয়ত দোষারোপ করা হয়েছে অকারণেই। আসলে পুরুষতন্ত্র যুগে যুগে নারী চরিত্রের দিকে নিক্ষেপ করেছে সন্দেহ, দোষারোপ, অবজ্ঞার বাণ। সেদিন তাই কবি ওয়াটেকারও কী অবলীলায় দোষ চাপিয়েছেন এগনিসের উপর, তার প্রায় দুশোধিক বছর পর এদেশের তুলসীদাসও নারী চরিত্রের প্রতি কটাক্ষ করে লেখেন- “ দিনকি মোহিনী, রাতকি বাঘিণী/ পলক পলক লোহু চোষে”। একবিংশ শতাব্দীর অমৃতাকেও শুনতে হয় ‘অপয়া”।
তবে মৃত্যুর কারণ দুটিকে বিশ্লেষণ করলে তা আরও একটি অবিশ্বাস্য সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করে। এমনও তো হতে পারে অতীতের কোনো কুটিল ষড়যন্ত্রকারী তার শত্রুকে নিকেশের উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্য প্রণদিত ভাবেই কোনো রূপবতীর দেহে সংক্রামিত করেছিল দূরারোগ্য ওই ব্যধি। কন্যেটি নিজের অজান্তেই হয়ে উঠেছিল বিষকন্যা। সাধারণ এক রমণী হয়ে উঠেছিল অন্যের হাতের ক্রীড়ানক। তারপর সেই ষড়যন্ত্রকারী তাকে প্রেরণ করল তার দুশমনের দরবারে। কন্যাটি কিন্তু সত্যিই প্রেমে পড়ল তার বধ্য পুরুষটির। মনে মনে তাকে প্রেমাস্পদ রূপে বরণ করল। কোনো এক রাত্রে আশ্লেষে আবদ্ধ প্রেমিক কে ভরিয়ে দিল চুম্বনে। তারপর বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে অসহায় ভাবে প্রত্যক্ষ করেছিল তার প্রেমিকের মৃত্যু। বিষকন্যার ট্র্যাজিডি স্থান পেয়েছে, বিশ্বসাহিত্যের বহু গল্প উপন্যাসে। ১৮৮৪ সাল নাগাদ মার্কিন সাহিত্যিক হাউথর্ণ (Nathaniel Hawthorne)
লিখলেন ছোটগল্প ‘Rappaccini’s daughter’। ইতালীর ছোট এক শহরে বাস করতেন এক ক্ষ্যাপাটে বৈজ্ঞানিক। নাম তার Giacomo Rappaccini। বিষাক্ত গাছপালা থেকে ভয়ঙ্কর সব বিষ তৈরী করা তার নেশা। নিজের বাগানেই বিষাক্ত গাছের চাষ করেন তিনি। তার ছোট্ট মেয়ে বেট্রিস (Beatrice) আপন খেয়ালেই ঘুরে বেড়ায় সে বাগানে। নিজের অজ্ঞাতেই বিষাক্ত গাছ গাছালির বিষ সঞ্চিত হতে থাকে তার শরীরে। ক্রমে সে হয়ে ওঠে বিষকন্যা। তারপর ছোট্ট বেট্রিস বড় হয়ে উঠল। সে এখন অপরূপা সুন্দরী। একদিন তার পাশেরই এক বাড়িতে থাকতে এলেন এক সুদুর্শন যুবক। নাম তার জিওভানি (Giovanni) । প্রথম দর্শনেই জিওভানি মজল বেট্রিসে। বেট্রিসও মুগ্ধ জিওভানিকে দেখে। কিন্তু জিওভানি জানে না, বেট্রিস বিষকন্যা। জিওভানির প্রফেসর ব্যাগ্লিওনি ( Baglioni) তাঁকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেন। দিন যত গড়ায় বেট্রিস আর জিওভানির প্রেম তত প্রগাঢ় হতে থাকে। কিন্তু বেট্রিস জিওভানিকে ধরা দেয় না। সে জানে , তার স্পর্শে প্রেমিকের প্রাণসংশয় নিশ্চিত। এমতবস্থায় ব্যাগ্লিওনি এলেন জিওভানির সাহায্যার্থে। তিনি তৈরী করেছেন এক অ্যান্টিডোট, যা বেট্রিসকে বিষমুক্ত করতে সক্ষম। কিন্তু জিওভানি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তার প্রফেসরের কুটিল অভিসন্ধি। ব্যাগ্লিওনির সাথে বেট্রিসের বাবার শত্রুতা বহুদিনের। তার প্রতিশোধ নিতেই, তিনি ব্যবহার করলেন জিওভানি-বেট্রিসের প্রেমকে। জিওভানি বেট্রিসের হাতে তুলে দিল সেই অ্যান্টিডোট। তা পান করতেই বেট্রিস ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে।
সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিষকন্যা’ উল্কা পড়েছিল, রাজা সেনজিৎ এর প্রেমে। সেনজিৎ কে বাঁচাতেই শেষ পর্যন্ত উল্কা বেছে নেয়, আত্মহননের পথ।
বিষকন্যার কাহিনি, সুদূর অতীতের অন্ধকারাচ্ছন্ন রহস্যময় সমাজ জীবনের কাহিনি। যার প্রতিটি শব্দ লেখা হয়েছিল কিছু হতভাগিনীর অশ্রুজলের বিনিময়ে। সেদিনের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যাদের উপর আরোপ করেছিল ‘বিষকন্যা’র অপবাদ।
তথ্যসূত্রঃ
১) Poison-Damsels and Other Essays by N.M. Penzer (1951 edition)
২) N.M Penzer এর ‘Poison-Damsels’ প্রবন্ধ। C.H. Tawney এর কথাসরিৎসাগরের ইংরেজি অনুবাদের Appendix-III তে পাওয়া যাবে।
৩) Secretum Secretorum’ এর ইংরেজি অনুবাদ।
৪) কথাসরিৎসাগরের বাংলা অনুবাদ, পারুল প্রকাশনী, অদ্রীশ বর্ধনের অনুবাদ।
৫) বিশাখ দত্তের ‘মুদ্রারাক্ষসের’ জন্য রঞ্জিত সীতারাম পণ্ডিতের ইংরেজি অনুবাদ (The Signet ring)।
৬) মুদ্রারাক্ষের বঙ্গানুবাদ এর জন্য ‘অমর চিত্রকথা’র ‘চাণক্য’ কমিকটি অনবদ্য।
৭) দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত শ্রীপান্থের লেখা ‘দেবদাসী’ বইটির ‘বিষকন্যা’ অধ্যায়টি দ্রষ্টব্য।
Tags: গৌরব বিশ্বাস, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য, দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা, প্রবন্ধ, বিষকন্যে