লিমেরেন্স
লেখক: সোহম গুহ
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)
আজকের এই ডিজিটাল বিশ্বের বিষে প্রচুর মানুষ আছেন যারা স্বনির্ভর ভাবে একলা। প্রেম, সত্যিকারের প্রেম হয়েছে ‘ক্ষ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফেরে পরশপাথর’। মনের আকাশে মুষল-কাল আসে ঠিকই, কিন্তু তা ধুয়ে দিতে পারেনা অভিমানের শোণিত দাগকে। বৃষ্টি ধোয়া মুখে শুকিয়ে যাওয়া কান্না আর নদীখাত আঁকে না।
রাই এমনই একটা মেয়ে, যার জীবনের আকাশে মেঘ-ছবি এঁকে গেছে আকাশ নামের এক ছেলে। না, এটা কোন ছেলে মেয়েকে দেখল, দুজনে প্রেমে পড়লো, সুখে থাকল আজীবন ধরনের গল্প নয়। ‘অন্তিম শেষ সুন্দর’ কেবল সিনেমাতেই হয়, এটা যে বাস্তব।
জানলায় পা ঝুলিয়ে রাই বাইরের বৃষ্টি দেখছিল, হেডফোনে মৃদু গুঞ্জন তুলছে লানা ডেল রেয়, “Will you still love me when I am not young and beautiful?”
“আর বিউটিফুল, এমনই তো আকাশের চোখে আমি নেই মানুষ হয়ে, কত করে, কত ভাবে ডাকি, শূন্যে কেবল যেন প্রতিধ্বনি ফেলে তা। কেন? আমি কি ওর যোগ্য নই?” রাইয়ের চিন্তায় বাধা পড়লো, সৈকতের এসএমএস ঢুকেছে, ওর একমাত্র বন্ধুর। মুখে অজান্তেই হাসি ফুটল রাইয়ের, এই একমাত্র, যাকে সব কথা প্রাণ খুলে বলা যায়। এসএমএসের উত্তর না দিয়ে ডায়াল করল সে সৈকতের নম্বর।
“অ্যাই, শোন, ফোন করতে একটা কি হয় তোর? জানিসই তো আমার অবস্থা, মানুষ-সঙ্গ হারাচ্ছি।“
সৈকত ওর অবস্থা বিলক্ষণ জানত, তাও বলল, “আকাশ কথা না বললেই তো আমার সঙ্গে কথা বলার বাই ওঠে তোর, নাহলে তো…”
“তোর সঙ্গে আমার পরিচয় কদিনের সৈকত?”
“তা প্রায় বছর আটেক হতে চলল, তোর মত মেন্টালের সঙ্গে কথা বলে…” প্রসঙ্গ পালটাল সৈকত, “রাই, আজকে তোর এত মুড অফ কেন? আকাশ কিছু কি বলেছে?”
হয়ত রাইয়ের মনের বাঁধটা ভাঙতে সৈকতের একটা সামান্য পেরেকই যথেষ্ট ছিল। রাইয়ের অকাল-শ্রাবণের মধ্যে সৈকত যেটুকু উদ্ধার করল তা হল যে রাই প্রিন্সেপ ঘাটে আকাশকে তার এক্সের ঠোঁটে ঠোঁট লাগাতে দেখেছে চক্ররেলে যেতে যেতে, হঠাৎই, এক খণ্ডমুহূর্তের জন্য।
“সৈকত, ওকে আমি কি ভীষণ ভালোবাসি তুই বুঝিস না, কারণ তুই কখন কারুর প্রেমে পরিসনি। যেন ভিমবেগের অদৃশ্য বুলেট ঢোকে হৃদয়ের গর্ভে। যন্ত্রণা হয় ভাই, ভীষণ রকমের। তারপরই মনে নামে মৃত্যু-পরবর্তী শান্তি।”
“জীবিতের শহরের মানুষগুলো আজ জীবন্মৃত হয়েছে রাই”, সৈকতের গলার স্বর নরম হোল। সে বোঝেনা আকাশ কেন রাইকে দূরে সরাচ্ছে। বাবা ছাড়া বড় হয়ে যাওয়া মেয়েটা জীবনে অনেক পদদলিত হয়েছে, ওর আর যাই হোক জীবনে একটু ভালোবাসাটা প্রাপ্য। সে নিজে এই অনুভূতির নপুংসক। ছোটবেলায় এক মস্তিষ্কের আঘাত ওর হাসার এবং প্রেমে পড়ার ক্ষমতাকে চিরকালের মত কেড়ে নিয়েছে, নাহলে সে নিজেই রাইকে ভালবাসায় মুড়ে রাখত, সেই সুখ-চাদরের সোয়েটারে ঢেকে ওম দিতো ওর দুঃখী হৃদয়কে।
হয়তো ওর কথা আরও কিছুক্ষণ শুনত সৈকত, কিন্তু কিছু মনে পড়তে রাইকে বাধা দিল সে, “রাই, তুই কি চাস আকাশ তোর প্রেমে পড়ুক? ওর রাতের আকাশে কেবল জ্বলুক তোর মুক্তো-মুখী সন্ধ্যাতারা? চাস কি মনে প্রাণে? তো বল।”
“জীবনের কোন সাধ তাহলে আর এই স্নেহের ভিখারির অপূর্ণ থাকবে না রে। কিন্তু কোন মানুষকে আমি নিজের প্রেমে ফেলতে চাই না তার অনিচ্ছায়। যদি তার সত্ত্বাকে না পাই, তাহলে তার দেহকে পেয়ে কেবল লাভ কী আমার? আমি তার প্রেমের জন্য তৃষ্ণার্ত হতে পারি, কিন্তু কামের সাগরে টাইটানিক ডোবানোর কোন ইচ্ছা নেই আমার।”
“আমি ওয়ান-নাইট-স্ট্যান্ডের কথা বলছিনা রাই; আমি প্যাশনেট প্রেমের কথা বলছি। যে প্রেমের জন্য জীবন দিয়েছিলো রোমিও আর জুলিয়েট, যে প্রেমের জন্য ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ সূর্যাস্ত হয়নি কখনো; সেই প্রেমের কথা বলছি আমি। সেই প্রেম যা আলেকজান্দ্রিয়ার প্রজ্বলন্ত বাতিঘরের মত দিশা-হীন জীবন-সমুদ্রে পথ দেখাবে তোকে, যে প্রেম…”, সৈকতের আর কিছু বলার প্রয়োজন ছিলনা, ওপাশে থেমে গেছিল কান্না। ধরা গলায় রাই জিজ্ঞেস করল, “কি করে সম্ভব সেটা? তুই তো ভগবান নোস।”
।।২।।
ভায়ালটা অনেকক্ষণ উলটে পাল্টে দেখেও রাই তার ভেতরের চকমকে রুপালি সবুজ তরলের মাথামুণ্ডুও বুঝতে পারলো না। “কী আছে এতে?” ওর জিজ্ঞাস্য ধেয়ে এল সৈকতের দিকে।
“লিমেরেন্সিক ন্যানোবট।”
“কীসের কী?” রাইয়ের ভ্রূ আরও কোঁচকাল।
“আমি চাকরি করি কীসে?”
“সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন, তার সঙ্গে এর…”
“সম্পর্ক আছে মাদাম। সম্পর্ক আছে।”
“আমাদের কাছে প্রতিমাসে বহু ড্রাগ হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য আসে রিপোর্ট সমেত। শোন, বর্তমানে জিন থেরাপিতে ন্যানোবটের প্রচলন অনেক বেড়েছে…”
“সৈকত, আমি বাংলায় অনার্স, বুঝি না তোর সায়েন্টিফিক কপছপানি।”
“তোমার জন্যই বলছি গোদা বাংলায়। এটার মধ্যে একটা রেট্রোভাইরাস আছে, যেটাতে তোর শরীরের ফেরোমন কোডিং ঢুকিয়ে ওটাকে আকাশের পেটে ঢোকাতে হবে। সেখান থেকে সেটা রক্ত হয়ে ব্রেনে পৌঁছালে খেলা শুরু হবে।”
“খেলা বলতে?”
“ভাইরাসটা ওর ব্রেনের কিছু সাইনাপ্সের কিছু পরিবর্তন করবে। ফলে ও তোর ফেরোমন চিনতে পারলেই তার শরীরে অক্সিটোসিন আর ভেসোপ্রেসিন ক্ষরণ তুঙ্গে উঠবে, কিন্তু বাকীদের কাছে গেলেই তা একেবারে তলানিতে পৌঁছাবে। সোজা ভাষায়, ওর জীবনে তোর বাদে আর কারুর প্রেমে পড়ার ক্ষমতা থাকবেই না।”
রাই ভায়ালটা তুলতে যেতেই সৈকত বাধা দিল, “মামনি, এটা সরকার ওমনি ওমনই নিষিদ্ধ করেনি। আমার কাছের এই ভায়ালটা অবৈধ ভাবে বেচলে সঠিক জায়গায়, আমি হতাম কোটিপতি। প্রেম মূল্যহীন, নাহলে তাজমহল সাহ্জাহান বানাত না।”
“তুই জানিস আমার বাবা নেই, লোকের বাড়িতে আশ্রিতা, টাকা চাইছিস কি ভাবে? জানিস তো দিতে পারব…”
“টাকা আমি চাইছি কে বলল?”
“তবে?” রাই সৈকতের চোখের দৃষ্টির পরিবর্তন খেয়াল করল, সামনে যেন তার বন্ধু নয়, একটা ক্ষুধাতুর শেয়াল বসে।
“সতীত্ব মানুষের আরেকটা মূল্যবান সম্পদ রাই। আমায় তুই তোর সতীত্ব দে, বদলে ভায়ালটা তোর। ধরে নে বিনিময় প্রথা, আকাশের প্রেমের বদলে…” সৈকতের কথা আটকে গেলো রাইয়ের কান্না আসা চোখ দেখে। সৈকতের ফ্ল্যাটে সৈকত একমাত্র বাসিন্দা। মেঝেতে পরে রইল তার সদ্য খোলা টপ, পায়ে পায়ে রাই অনিচ্ছার সঙ্গে এগোল বিস্ফারিত চোখে তাকে নিরীক্ষণ করা সৈকতের দিকে। মনের জ্বালা, বড় জ্বালা।
।।৩।।
“কিহে রাই? হঠাৎ প্যারামাউন্টে আমায় তলব করার মানে? জানোই তো আমদের ইছাপুর গান ফ্যাক্টরিতে ছুটি পাওয়া কি ভীষণ চাপের!” চেয়ার টেনে ওর সামনে বসে আকাশ জিজ্ঞেস করল।
“না, মানে।” রাই পার্সে একবার নজর বুলিয়ে নিল, না ভায়ালটা যথাস্থানেই আছে। সেদিন ভোরে সৈকত ওর একটু রক্ত নিয়ে তার এক ফোঁটা মেশাল ভায়ালে, তখনো ও কাঁপছিল ঠকঠক করে। সৈকত প্রেমে পড়তে অক্ষম ঠিকই, কিন্তু ওর লিবিডো আকাশচুম্বী। কাম আর প্রেম যে এক নয়!
“কথা আছে তোমার সাথে আকাশ।” দুটো নারকেল ঘোলের অর্ডার দিয়ে রাই বলল, “সেটা ভীষণই দরকারি।”
“কী এমন যে এইখানেই ডাকতে হোল তোমায়?”
“আছে।” উত্তেজনায় অতিসংক্ষিপ্ত উত্তর বেরল রাইয়ের মুখ দিয়ে।
“কি সেটা? বলবে কি? আমায় নিশ্চয়ই এমনি এমনি ডাকোনি এখানে?”
কিছুক্ষণের মধ্যেই দুটো গ্লাস ভর্তি শরবত এসে পরায় আকাশের মুখ বন্ধ হল। ওর মুহূর্তের অসতর্কতায় নেতাজির ছবি দেখানোর ফাঁকে ওর গ্লাসে ভায়ালটা খালি করে দিল রাই।
।।৪।।
আইনক্সের অন্ধকার ব্যাকসিটে সিনেমার আলোর নিচে আকাশের কাঁধে মাথা রেখে রাই জিজ্ঞেস করল, “আমায় ভালোবাসো আকাশ?”
“বিশ্বের সবকিছুর থেকে বেশি রাই,” কানের কাছে ওর ফিসফিসিয়ে উঠল আকাশের ভারী গলা। ওর বলিষ্ঠ হাতকে নিজের বুকের মাঝে রেখে আরও যেন ও মিশে গেল আকাশের গায়ে। আরও কাছে, আরও কাছে নেমে এল ওর অজান্তেই। রাইয়ের ঠোঁটের ভেজা ছোঁয়া লাগলো আকাশের ঠোঁটে। অন্ধকারের নিভৃততায় মিলিত হল ওদের দুটো ঠোঁট। রাইয়ের শরীরে যেন বজ্রপাত হল।
অতীত কি? ভবিষ্যৎও তো কেমন অর্থহীন। এই বর্তমান মুহূর্ত, এই ক্ষণ-কাহন যা রচিত হল ওদের মধ্যে, সেতো গীতগোবিন্দের চেয়েও মধুর।
কিন্তু তাহলে ওর বুকে টান দিচ্ছে কেন একটা কষ্ট? আকাশকে অবাক করে রাই হল থেকে বেড়িয়ে গেল, সিনেমার আলোর প্রতিসরণ ঘটল ওর পড়তে থাকা কান্নার জলে।
।।৫।।
“আবার কি চাই? তুই জানিস তো কাজের জায়গায় গেস্ট আল্যাউড নয়?” মাইক্রোস্কোপের থেকে চোখ উঠিয়ে সৈকত জিজ্ঞেস করল।
“আমি এটা পারবোনা সৈকত। এই প্রেম, যা ভেতরে ভেতরে এতটাই ফাঁকা যে…” রাই কান্না চাপল, “আকাশ বলছে আমায় ভালবাসার কথা, কিন্তু তা যেন ওর কথা নয় সৈকত, যেন আমি বলাচ্ছি ওকে দিয়ে ওর অনিচ্ছায়।”
“তোর কথা আমি ধরতে পারছি না রাই, ক্লিয়ার কর।“
“সত্যি তুই বুঝছিস না প্রেমে পরিসনি কখনো বলে,” রাই হঠাৎ একটু হাসল, “আমি চাই ওই ন্যানোবট ছাড়াই ওর স্বাধীন সত্ত্বা কারুর জন্য ওই হরমোন দুটো তৈরি করুক। সেটা আমার জন্য নাহলেও ক্ষতি নেই।”
“কিন্তু কেন রাই?” সৈকতের কথায় বিস্ময় উপচে পড়লো, মেয়েটাকে সে সত্যিই চিনতে পারছেনা। “যেটা তোর স্বপ্ন ছিল সেটা তো পূরণ করে দিয়েছি, আর সেটার জন্য তুইও আমায়…”, সৈকত চুপ করে গেল।
“কারণ সৈকত, আমি ওকে সত্যিকারের ভালবাসি, তাই মিথ্যা আশ্রয়ে আটকে রাখতে চাইনা যেটা ওর নয়। খাঁচার পাখি আর বনের পাখির মিলন যে বাঞ্ছনীয় নয় রে। ওকে আমি নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থপর স্বার্থের জন্য আটকে রাখি কি করে? তুই বল?” রাইয়ের গলায় কষ্টের একটা দলা আটকে গেলো।
ক্রায়োফ্রিজের একটা গোপন জায়গা থেকে আরেকটা ভায়াল বের করল সৈকত, “এটা ওটার অ্যান্টিভাইরাস। নে, এবার যা। আর কোনদিন আমার কাছে আর কিছু চাইবি না, যেটা করতে যাচ্ছিস সেটা ভালো নয়। সবাই জীবনে প্রেম পায়না, আর তুই পেয়েও হারাচ্ছিস…”
“কারণ আমি সেটার মর্ম বুঝি সৈকত।” ল্যাবের দরজা বন্ধ করার সময় রাই উত্তর দিল।
উপসংহার
রাইয়ের ফোন সুইচড অফ গত সাতদিন ধরে, বিরক্ত বোধ করল সৈকত। মেয়েটার কোন খোঁজখবর নেই। সেই যে বেড়িয়ে গেলো অ্যান্টিভাইরাস নিয়ে, তার পর পুরো বেপাত্তা। না ফেসবুক, না অন্য কিছু।
ওকে হঠাৎ অবাক করে সেই সময় ল্যাবের দরজা ঠেলে উদ্ভ্রান্তের মত ঢুকল আকাশ, রাইয়ের কাছে দেখা ফটো থেকে ওর মুখ চিনতো সৈকত। “কি চাই?” মুখ থেকে আপনিই প্রশ্ন বেরল ওর।
“রাইয়ের কোন খবর কি জানো তুমি?”
“হঠাৎ রাইয়ের খবর জানার এত বাই…”
“কারণ আমি ওকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি সৈকত, প্রচণ্ড। এতোটাই যে বনলতা করতে পারি ওকে নিজে জীবনানন্দ হয়ে। আমার গত ছয় মাসের শ্রেষ্ঠ, সম্ভবত গোটা জীবনের যা সুখস্মৃতি সব ওর দেওয়া। ওকে ছাড়া নিজেকে নুজ্জ্য আর খালি লাগছে সৈকত। চলে যাবার আগে আমায় হঠাৎ অবাক করে; ও যোগ্য নয়, ও নাকি আমায় প্রেমের জন্য ব্যবহার করেছে ইত্যাদি বলল। একটা তরলের ভায়াল ধরিয়ে দিল হাতে। ও আমায় এটা খেয়ে খালি ভায়ালটা তোমায় দিতে বলেছে।” আকাশের বাড়ানো হাতের অ্যান্টিভাইরাসের ভায়ালটা সৈকত চিনতে পারলো।
হিসাবটা ঠিক মিলছে না, ওর হিসাব অনুযায়ী আকাশের এখন আবার প্রিন্সেপ ঘাটের সিনে ফেরত যাবার কথা, কিন্তু ও পাগলের মত রাইকে খুঁজছে। সত্যিকারের প্রেমে না পড়লে মানুষ এটা করেনা!
সৈকত বুঝতে পারলো কি হয়েছে। রিপ্রিকারশন! ন্যানোবটের স্থান নিয়েছে ওদের একসঙ্গে কাটানো ৬ মাসের সব স্মৃতিগুলো। জীবন সবসময়ই তার রাস্তা খুঁজে নেয়, সেটার জন্য তার কোন কৃত্রিম অনুঘটক বা উত্তেজকের প্রয়োজন নেই। সৈকত হেসে ফেলল আকাশকে অবাক করে।
“আকাশ, গোবরডাঙা ষ্টেশনে পৌঁছে কাউকে জিজ্ঞেস করো, খোঁজ ওর পেয়ে যাবে তুমি।” বিল্ডিঙের বাইরে আকাশকে বিদায় জানিয়ে কি মনে হতে শেষবারের মত চিৎকার করে বলল, “গুড লাক আকাশ, প্রেম সবাই পায়না। তোমরা সৌভাগ্যবান যে খুঁজে পেয়েছ এই মূল্যহীন সম্পদ। আঁকড়ে ধরে বাঁচো দুজনের হৃদয়ে, চিরকালের মত! সুখে দুঃখে যেন বলতে পারো পরস্পরকে- ‘শুধু তোমারই জন্য’। ছোটো আকাশ, ছোটো, ও কান্না ভেজা চোখে তোমার অপেক্ষায় বসে। বিরহ পরবর্তী রাগ যে মধুরতম প্রেম!”
আকাশ লিমেরেন্স কাকে বলে আমি বুঝিনি। রাই, প্রেমে পড়লে কি হয় জানাবি আমায়?
‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—
সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়।
সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ।’
দরজা বন্ধের আগে সৈকতের মনে ভাসা ভাষা আকাশ শুনতে পেলো না। ও তখন ছুটছে, ওর ডেসডিমোনা ওর অপেক্ষায় বসে যে!
Tags: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), প্রথম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, লিমেরেন্স, সোহম গুহ
Story ending is excellent..