বৈসখা
লেখক: ঋজু গাঙ্গুলী
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
নীচে পরিবেশিত কথোপকথনটির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। মানবজাতির ইতিহাসে ‘বৈসখা’ ব্যবহারের শেষ নিদর্শন এটিই। পাঠকেরা এই দলিলটিকে যথাযথ গুরুত্ব দেবেন—এই আশা রাখি।
আন্তঃনক্ষত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হওয়া প্রতিটি মহাকাশযানেই একসময় বৈদ্যুতিক সখা—সংক্ষেপে বললে ‘বৈসখা’—নামের একটি যন্ত্র থাকত। এটির কাজ ছিল মহাকাশযান কোনো কারণে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে কোথাও অবতরণে বাধ্য হলে নভোচরদের পরামর্শ দেওয়া। দুর্ভাগ্যের বিষয়, পরে সেই নভোচর কোনোভাবে উদ্ধার পেলেও প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁরা দারুণ রাগে মূল্যবান যন্ত্রটিকে ভেঙেচুরে ফেলতেন। কেন তাঁরা এই কাজ করতেন, সেটাও এই দলিল থেকে বোঝা যায়।
এই কথোপকথনের প্রায় এক বছর পর উক্ত নভোচরের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছিল।
***
“আমাকে বাঁচাও! আমি একটি অজানা গ্রহে নেমেছি। এখন কী করব?”
আপনি কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যাবেন। কথায় আছে, সত্যরে লও সহজে। আমি কি আপনাকে আত্মহত্যার কোনো পদ্ধতি বলে দেব? ‘বৈসখা’-র অন্যতম নীতিই হল, ‘মরলে মরো। ছড়িও না।’ তাই এতে আপনার মৃত্যু হবে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত এবং পরিচ্ছন্ন।
“আশাবাদের মাত্রা পঞ্চাশ শতাংশ বাড়িয়ে রি-স্টার্ট করো তো।”
নমস্কার। আমি আপনারই একান্ত বৈসখা। কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি, বলুন।
“আমি একটি অজানা গ্রহে নামতে বাধ্য হয়েছি। আমায় সাহায্য করো।”
আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
“ধন্য… এক মিনিট! অভিনন্দন জানাচ্ছ কেন?”
কারণ এই ধরনের অবতরণের পর বাঁচার সম্ভাবনা এতই কম যে সেটা মাপাই যায় না।
অধিকাংশ মানুষ বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় তৈরি হওয়া তাপ আর ঝাঁকুনিতেই মরে যায়। তারপর কেউ বাঁচলেও মহাকাশযানের মোট ভরের মাত্র চল্লিশ শতাংশ বা তারও কম গ্রহের পৃষ্ঠদেশে পৌঁছোয়। সেখানে নামার সময় ধাক্কা লাগলে যে পরিমাণ তাপ তৈরি হয়, তাতেই লোকজন পুড়ে কাঠকয়লা হয়ে যায়।
ধরে নেওয়া যাক, তারপরেও কেউ বেঁচে রইল। এবার তাকে মহাকাশযানের ইঞ্জিন নিয়ে ভাবতেই হবে। যদি সেটা নিউক্লীয় শক্তিচালিত হয়, তাহলে তার রিয়্যাক্টর নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকবে। সেক্ষেত্রে জীবিত ব্যক্তিটিও যে পরিমাণে তেজস্ক্রিয়তার শিকার হবে তাতে বেঁচে থাকা অসম্ভব। আর ইঞ্জিনটি যদি তরল বা কঠিন জ্বালানি থেকে শক্তি পেয়ে থাকে, তাহলে সেই জ্বালানিতে আগুন লেগে যাওয়ার কথা— যা সেই নভোচারীকে ছাই করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
তারপরেও আপনি কথা বলছেন! আপনি বেঁচে আছেন!! এইরকম একটা অসাধ্য সাধন করে ফেলার পরেও যদি আপনাকে অভিনন্দন না জানাই, তাহলে অভিনন্দন জিনিসটা আছে কী করতে?
“অ। কিন্তু আমার কাঁধে খুব ব্যথা করছে। মনে হচ্ছে, হাড় ভেঙেছে।”
এই যে আপনি ব্যথা জিনিসটা অনুভব করতে পারছেন—এটাই তো একটা বিশাল ব্যাপার। তা ছাড়া আমার সেন্সর যা বলছে তাতে দেখছি, আপনি সত্যিই, যাকে বলে, ‘কপালে পুরুষ।’
“সে আবার কী?”
মানে আপনি অত্যন্ত ভাগ্যবান। আপনি যেখানে নেমেছেন সেটা এই গ্রহের একটা নাতিশীতোষ্ণ, প্রায় সমতল অঞ্চল। যদি আপনি সমুদ্রে পড়তেন, তাহলে ডুবে যেতেন। ভীষণ গরম বা দারুণ ঠান্ডা কোথাও নামলেও আপনার বাঁচার সম্ভাবনা থাকতই না বলা চলে। তার ওপর এই গ্রহের বাতাসে নিশ্বাস নিতে আপনার কষ্টই হবে না। এত ভাগ্য তো বঙ্গলক্ষ্মী লটারিতে সুপার-বাম্পার প্রাইজ জেতা লোকেদেরও হয় না।
“তাই নাকি?”
হ্যাঁ, আজ অবধি ওই প্রাইজটা কেউ জেতেনি।
“কিন্তু আমি এখন কী করব?”
সবচেয়ে আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি আবার পৃথিবীতেই নামেননি।
“কী?”
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেহাত কম নয়। এই ধরনের অবতরণের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গ্রহটি আসলে পৃথিবীই—শুধু পারমাণবিক যুদ্ধ, সময় ভ্রমণ, বা দেহের পরিবর্তনের ফলে তাকে চেনা যাচ্ছে না। হয়তো আপনি এমন এক পৃথিবীতে নেমেছেন, যার শাসক বানর বা ওইরকম কোনো প্রজাতি। আপনি একটু হাঁটাহাঁটি করলেই কোনো চেনা স্থাপত্যের সামনে পড়বেন, আর তখনই গ্রহটাকে চিনে ফেলবেন।
এইরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি হয়, যদি আপনার নাম হয় মানব (পুরুষ) বা মানবী (নারী)। সেক্ষেত্রে কিছুদিনের মধ্যেই বিপরীত লিঙ্গের একটি মানুষের সঙ্গে আপনার দেখা হবে। আপনারা প্রেমের মোহময় আবরণে কামে লিপ্ত হবেন। তার ফলেই আবার মানবজাতির বিকাশ ঘটবে।
“নাহ্, এটা নিঃসন্দেহে অন্য কোনো গ্রহ।”
তাহলে আপনাকে আবারও অভিনন্দন জানাই। আপনার ভাগ্য যে কত ভালো, তা ভাবতেও পারবেন না। শেষবার যখন পৃথিবীতে একটি মহাকাশযান অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছিল, তখন সরকার সবক’টি যাত্রীকে বন্দি করে। তাদের কাটাছেঁড়া করে সবটা চেপে দেওয়া হয়। এটা পৃথিবী না হলে আপনার ক্ষেত্রে তেমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
আচ্ছা, আপনি কি উড়তে পারেন?
“কী? না, আমি উড়তে পারি না।”
আপনি কি চেষ্টা করে দেখেছেন। হয়তো এই নতুন গ্রহের নতুন সূর্য আপনাকে অবিশ্বাস্য কিছু শক্তির অধিকারী করে তুলেছে। এমন প্রায়ই দেখা যায় যে পৃথিবীতে নামতে বাধ্য হওয়া ভিনগ্রহীরা অকল্পনীয় নানা শক্তির জোরে একেবারে অতিমানব হয়ে ওঠে।
“যত্তসব গাঁজাখুরি আইডিয়া!”
কী যেন বলেন, স্যার! আপনি এই গ্রহের সুপারম্যান হলে কী হবে, সেটা ভেবেছেন?
“আরে আমার কোনো অকল্পনীয় ক্ষমতা-টমতা নেই! আমি এই গ্রহে ফেঁসে গেছি। আমায় উদ্ধার করার একটা ব্যবস্থা করো।
আচ্ছা, আপনাকে কি ‘কিউট’ বলা চলে?
“কিউট! তা… বোধহয় বলা চলে। কেন?”
যদি আপনি কিউট হন, তাহলে এই অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল অপেক্ষা করা।
“অপেক্ষা! গোদো’র জন্য?
না-না। এই গ্রহের প্রাণীদের মধ্যে যেটি প্রধান শ্রেণি, সেই শ্রেণির একটি অপরিণত বা শিশু সদস্যর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে।
সে আপনাকে খাবারের লোভ দেখিয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে। তারপর আপনি নানা ধরনের জাদু… মানে বৈজ্ঞানিক ক্ষমতা দেখিয়ে তার সঙ্গে ভাব করবেন। তার ভাষা তো শিখবেনই; সঙ্গে সাইকেলটাকে হাওয়ায় ওড়াতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। এরপর আপনি নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের ব্যাবসা শুরু করতে পারেন। যদি আপনার ছবিটার কপিরাইট নিজের কাছে ধরে রাখতে পারেন, তাহলে আপনার ছবি-বসানো কাপ, বা খেলনার যে বিশাল বাজার গড়ে উঠবে, তার থেকে আপনি প্রচুর লাভ করবেন। সেই লাভের টাকায় আপনি একটি মহাকাশযান বানিয়ে, তাতে চেপে পৃথিবীতে ফিরতে পারেন।
“খাবারের লোভ না আরও কিছু! এই গ্রহের প্রধান প্রাণী কী—তাই জানি না।”
আচ্ছা, এই গ্রহের শাসক কি মূলত যোদ্ধা নারীরা, যারা স্রেফ বংশবিস্তারের জন্য পুরুষদের বন্দি করে রাখে?
“না!”
আপনি আকাশ থেকে ‘আগ্নেয় রথে’ নেমেছেন বলে, বা আপনার কাছে ‘বজ্রবাহী দণ্ড’ আছে বলে কেউ কি আপনার উপাসনা করছে?
“না।”
এই গ্রহের বাসিন্দারা কি প্রযুক্তির দিক দিয়ে পৃথিবীবাসীর তুলনায় এগিয়ে আছে?
“জানি না।”
যদি এই গ্রহের বাসিন্দারা প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে উদ্যমী হয়ে বৈসখা-র আরও একটি নীতিকে বাস্তবায়িত করতে হবে। সেটি হল—‘হাত থাকতে মুখ কেন?’ সেক্ষেত্রে এই গ্রহের শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদের মধ্যে প্রধানকে চিনে নিন। তারপর এক ঘুসিতে তার থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দিন, কারণ বৈসখা জানে, ‘অবশ হলেই বশ।’ এরপর গ্রহের রসকষহীন বাসিন্দাদের মধ্যে সুপ্ত অনুভূতি জাগিয়ে তোলার জন্য তাদের সঙ্গে প্রেমের মোহময় আবরণে কামে লিপ্ত হোন। অচিরেই আপনি ওই সমাজের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হয়ে উঠবেন।
যদি তারা প্রযুক্তির দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকে, তাহলে অবিলম্বে তাদের একটি ছোটো দলকে খুঁজে বের করুন। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সূর্যগ্রহণের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করুন। তারপর তাদের শেখান, কীভাবে বারুদ বানাতে হয়। দেখান, কীভাবে তরবারি তৈরি করতে হয়। সেইসব অস্ত্রশস্ত্রে তাদের সজ্জিত করে শত্রুগোষ্ঠীর উপর হামলা চালান। যেহেতু এইরকম কিছুর সম্ভাবনা শত্রুদের মাথায় থাকবেই না, তাই আপনাদের জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। আপনার এই নিজস্ব সেনাবাহিনী কিছুদিনের মধ্যেই এই গ্রহের অন্যান্য গোষ্ঠীকেও পরাস্ত করবে। আপনি হবেন রাজা, বা স্বরাট, বা সম্রাট!
তারপর প্রেমের মোহময় আবরণে কামে লিপ্ত হওয়ার অঢেল সুযোগ আসবে— এ-কথা বলাই বাহুল্য।
“এই গ্রহে বোধহয় অন্য কোনো প্রাণী থাকে না।”
তাহলে গ্রহটা নিজেই জীবন্ত নয় তো? এমন অনেক জীবন্ত গ্রহ আছে, যাদের হবি হল বিভিন্ন নভোচরকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ডেকে এনে তাদের মাথা খারাপ করা। কোথাও দেখা যায় যে সেই গ্রহের উদ্ভিদেরাই বুদ্ধিমান। কোথাও দেখা যায়, সেখানকার জলের নিজস্ব কিছু ক্ষমতা আছে। কখনো সে-সব গ্রহ ভালোবাসার মানুষের প্রতিরূপ তৈরি করে পাঠায়, যার পরে প্রেমের মোহময় আবরণে কামে লিপ্ত হওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না।
এও হয় যে গ্রহে নামার পর যেটা উপত্যকা বলে ভাবা হচ্ছিল, পরে দেখা যায় যে সেটা ওই গ্রহের মুখ। তেমন কিছু হলে অভিজ্ঞতাটা যে নভোচরদের পক্ষে সুখের হয় না— বলাই বাহুল্য।
“এই গ্রহটা জীবন্ত নয়।”
তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। “বলং বলং বাহুবলং” জপ করে কাজে লেগে পড়ুন। এই গ্রহকে জুতোর তলায় একেবারে জুতসই করেই ছাড়বেন আপনি— এ আমার স্থির বিশ্বাস।
“কিন্তু আমার কাছে তো কোনো যন্ত্রপাতি নেই!”
এই ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী যন্ত্র রয়েছে আপনার সঙ্গে। তা হল—আপনি স্বয়ং!
আপনার মস্তিষ্কে সঞ্চিত আছে মানবসভ্যতার সম্পূর্ণ জ্ঞান ও বুদ্ধি। ধাতুবিদ্যায় আপনার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আপনি মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি করে নিতে পারবেন বিভিন্ন যন্ত্র, এমনকি অস্ত্র! বিজ্ঞানের পাশাপাশি মনের জোর কাজে লাগিয়েও আপনি এই গ্রহকে সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলাও করে তুলতে পারবেন। সে-জন্যই তো বৈসখা-র অন্যতম প্রিয় প্রশ্ন, ‘মন রে, কৃষিকাজ জান না?’
জন্তু-জানোয়ারদের পোষ মানানো আপনার মতো মেধাসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে কোনো ব্যাপারই না। তাদের সাহায্যে আপনি এই গ্রহকে একেবারে নিজস্ব খামারে পরিণত করতে পারবেন। সেই ফাঁকে এই গ্রহের সরল বাসিন্দাদের অবশ বা বশ করে তাদের মাথায় চড়ুন। একবার ক্ষমতা দখল করতে পারলে আপনি যা-খুশি তাই ফলাতে পারবেন। একবার ভাবুন! নিজের হাতে চাষ করা ধানের ভাত, ডাল, তরকারি, এমনকি আলু-পোস্ত—সব আপনি তারিয়ে-তারিয়ে উপভোগ করছেন আপনার নিজের গ্রহে বসে। এরপর সঙ্গিনীর সঙ্গে প্রেমের মোহময় আবরণে কামে লিপ্ত হলে তাকেই তো স্বর্গসুখ বলা যায়—তাই না?
এই শেষ কাজটির জন্য একটি শ্রেণিকে আলাদা করে আপনি বাকিদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আবার উলটোটাও করতে পারেন। এখানে আপনাকে উচিত-অনুচিত নিয়ে কে কী বলবে?
“কিন্তু আমি তো এ-সবের কিছুই করতে জানি না!”
আপনি বলতে চান, ধাতুবিদ্যা, কৃষিবিজ্ঞান, পশুপালন, রাজনীতি—এর কিছুই আপনি পারেন না?
“আমি একজন নভোচর! ফর্ম ফিল-আপ, যন্ত্রপাতির পরিচর্যা—এগুলোই আমার কাজ—তাও টেবিল-চেয়ারে বসে!”
তাহলে আপনি অচিরেই মারা যাবেন। আপনার দিন শুভ হোক।
“মানে! আরে দাঁড়াও! ওই… প্রেমের মোহময় আবরণে কামে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারটার কী হবে?”
বৈসখা বন্ধ হচ্ছে। আবার চালু করতে হলে স্পষ্টভাবে বলুন ‘রি-স্টার্ট!’ তারপর নিজের পাসওয়ার্ড বলুন।
*
ঐতিহাসিক তথ্য:
বৈসখা-র সঙ্গে এক নভোচরের কথোপকথনের এটিই শেষ নিদর্শন।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত নভোচরদের বাঁচার সম্ভাবনা ভয়ানক কম বলে এর পরেই বৈসখা বাতিল করে দেওয়া হয়। তার পরিবর্তে আসে ‘সুখান্ত’। এটি একটি যৌনক্রিয়ায় দক্ষ রোবট—যা নভোচরদের প্রেমের মোহময় আবরণে কামে লিপ্ত করে শেষ অবধি আত্মহত্যা করতে সাহায্য করে।
‘সুখান্ত’ অচিরেই শুধু মহাকাশযাত্রায় নয়, পৃথিবীতেও অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেটির অপ্রতিহত জয়যাত্রা দেখে ঈর্ষাণ্বিত হয়ে অন্যান্য সংস্থারা একজোট হয়ে একটি বৈদ্যুতিন প্রযুক্তি বাজারে আনে। সেটির একমাত্র লক্ষ্য ছিল প্রেমের মোহময় আবরণে কামে লিপ্ত হওয়ার অনুভূতি জাগিয়ে রেখে নভোচরকে আত্মহননে সাহায্য করা। তার নাম দেওয়া হয় ‘বৈসুখ।’
শুধু নভোচর নয়; কোনো মানুষের পক্ষেই বৈসুখ-এর আবেদন অস্বীকার করা সম্ভব ছিল না। প্রথমে বৈধ, পরে অবৈধ উপায়ে এই প্রযুক্তি সবার কাছেই পৌঁছোয়।
তার কিছুদিনের মধ্যেই পৃথিবী থেকে মানবজাতি লুপ্ত হয়।
-*-
[লাইটস্পিড পত্রিকায় ২০১১ সালের জুন মাসে প্রকাশিত, গ্রেডি হেনড্রিক্স-এর লেখা গল্প ‘ট্র্যানস্ক্রিপ্ট অফ ইন্টার্যাকশন বিটুইন অ্যাস্ট্রোনট মাইক স্কাডারম্যান অ্যান্ড দ্য অনস্টার হ্যান্ডস-ফ্রি এ.আই ক্র্যাশ অ্যাডভাইসর’ অবলম্বনে]
Tags: অষ্টম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, ঋজু গাঙ্গুলী, মজার কল্পবিজ্ঞান
অসাধারণ। এখনো হাসছি।
ইয়ে, বৈসখা কে দেখিনি, তবে ‘বটতলার বই সখা’-র কথা মনে পড়ে গেল। দুটোরই কী ভীষণ মিল। মানে লক্ষ্য তো সেই একই, একটি বিশেষ আনন্দের পথের সন্ধান দেওয়া। 😊
অসংখ্য ধন্যবাদ।