ছাতাবাবু
লেখক: শ্রীধর সেনাপতি
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
সকাল থেকে আকাশের মুখ অভিমানী ছেলের মতো ভার ভার। তারপর কলকাতা ভেসে গেল মাত্র ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে। বৃষ্টির মধ্যে আমাদের আড্ডাটা সেদিন ভালোই জমেছিল ব্রজেনদের বাড়িতে। অনেকদিন বাদে একসঙ্গে জুটে গিয়েছিলাম চার বন্ধু। ব্ৰজেন ছাড়েনি। দুপুরের খাওয়াটা সেদিন ওদের বাড়িতে হবে। তখনও বৃষ্টি একবারে থামেনি। ব্রজেনদের তেতলা ঘরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের রাস্তার দৃশ্য দেখতে দেখতে দেবেশ বলল, ‘বৃষ্টির জলে ভিজে একবার খুব শরীর খারাপ হয়েছিল আমার। সেদিন থেকে বৃষ্টিকে আমি ভীষণ ভয় পাই। আর রাস্তার ওই বুড়ো ভদ্রলোকটিকে দ্যাখ। বৃষ্টির জলে ঝুপঝুপ করে ভিজতে ভিজতে দিব্যি কেমন হেঁটে চলেছেন। অথচ হাতে একটা ছাতাও রয়েছে দেখছি। তবে গুটানো।’
তার কথা শুনে কেউ কৌতূহলী হয়ে জানালার পাশে উঠে গেল না।
আমি বললাম, ‘ছাতাটা হয়তো ভাঙা। আজকাল আর তেমন মজবুত ছাতা কে ব্যবহার করে?’
দেবেশ ঠাট্টার সুরে বলল, ‘আহা! নতুন ছাতা কিনে ভাবছেন হয়তো ওই ভদ্রলোক। এখনি তাই জলে ভেজাতে মায়া হচ্ছে।’
এবার ব্রজেন আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে দাঁড়ায় দেবেশের পাশে। রাস্তার দিকে নজর পাঠিয়ে শুধোয়, ‘কৈ, ভদ্রলোক কোনদিকে গেলেন!’
দেবেশ হাতের ইসারা করে দেখিয়ে বলে, ‘ওই যে! ওই ওদিকের নতুন ফ্ল্যাটবাড়ির মধ্যে ঢুকে গেলেন এইমাত্র।’
‘আমি ঠিকই আন্দাজ করেছিলাম তাহলে! খুব রোগা চেহারা তো। মাথার চুল গোঁফ চোখের ভ্রূ সব সাদা? তুই আমাদের পাড়ার ছাতাবাবুকে দেখেছিস।’
‘ছাতাবাবু?’
ব্ৰজেন হাসিমুখে বলে, ‘ভদ্রলোকের একটা নাম অবশ্যই আছে। তবে আমাদের পাড়ায় সবাই ওকে ছাতাবাবু বললে চিনতে পারে। অল্প কিছুদিন হল এসেছেন এ পাড়ায়। একটা ছোটো ফ্ল্যাট নিয়েছেন ওখানে। পাড়াপ্রতিবেশী কারো সঙ্গে আলাপ পরিচয় করতে মোটেই উৎসাহী নন। শুধু একজন কাজের লোক এসে রান্নাটান্না করে দিয়ে যায়। বৃষ্টির মধ্যেও যেমন, কড়া রোদের মধ্যেও দেখা যায় ছাতাটি ওর বগলে রয়েছে ওই রকম গুটানো অবস্থায়।’
রহস্যগল্প পড়ার খুব নেশা অভিজিতের। এসব কথা শুনে সে বলে উঠল, ‘রীতিমতো সন্দেহজনক আচরণ।’ আমি বললাম, ‘ভদ্রলোক হয়তো ভুলোমনের মানুষ। খেয়াল করে না যথাসময়ে ছাতা খুলে নিজের মাথায় ধরতে। হয়তো জলে গোটা শরীর ভিজে যাওয়ার পর খেয়াল হল। তখন আর ছাতা খুলে লাভটা কী। আর রোদের মাঝে কোনো রকম কষ্টবোধ করেন না কখনো। ক’জন আর রোদের মাঝে পথ চলতে ছাতা ব্যবহার করে বল।’
মাথা ঝুঁকিয়ে আমার কথার সমর্থন জানিয়ে দেবেশ বলল, ‘তা, ঠিক। ছাতা হাতে নিয়ে ওইভাবে ঘোরা হয়তো ভদ্রলোকের একটা বিশেষ অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। বুড়ো মানুষ রোগা হালকা চেহারা। তাই মনে হয় ছাতাটা সময়ে সময়ে লাঠির কাজ করে।’
‘আরও একটা সম্ভাবনার কথা বলা যায়। ভদ্রলোকের হয়তো পাওনাদার আছে। হঠাৎ পথেঘাটে তাকে পাশ কাটানোর সময়ে ছাতার আড়াল দিয়ে সরে পড়েন। ছাতাটা স্রেফ, তখনই কাজে লাগে আর কী,’ শব্দ করে হেসে উঠল ব্ৰজেন।
আমাদের কথাগুলো অভিজিতের না-পছন্দ। সে বেশ কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলল, ‘এতটুকুও ভেবেচিন্তে দেখা নেই। স্রেফ সোজা হালকা কথাগুলোই বলে যাচ্ছিস অনবরত। আমার মতো একটু তলিয়ে বুঝে দ্যাখ। আচরণ যেখানে দেখা যায় সন্দেহজনক সেখানে মানুষের চিন্তাভাবনা অত সহজ পথে হাঁটবে কেন? তখন তার ভেতর কোনো রহস্য খুঁজে বেড়াতেই হয়।’
শুনে মজা লাগল। বললাম হাসতে হাসতে, ‘তোর ভাবনাচিন্তার দৌড়টা হয়েছে তাহলে নির্ঘাৎ কোনো বাঁকা পথে। তাতে কী পাওয়া গেছে শোনা যাক।’
অভিজিত সিরিয়াস গলায় বলল, ‘ওই রকম নিরীহ নিরীহ চেহারা দেখিয়ে ছাতার ভেতরে লুকিয়ে নিয়ে বেআইনীভাবে কোন চিজ্ উনি যে কোথাও পাচার করছেন না এসম্পর্কে আমরা নিঃসন্দেহ হচ্ছি কী করে?’
‘মানে? বেআইনীভাবে কোন জিনিস?’
‘ভদ্রলোক স্মাগলার হতে পারেন। ওইভাবে সকলের চোখের সামনে দিয়ে মোড়া ছাতার ভেতরে করে হয়তো মাদকদ্রব্য পাচার হয়। কিংবা সোনার বিস্কুট। উনি হতে পারেন বিদেশি চর। এখানকার অত্যন্ত গোপন খবর দরকারি কাগজপত্র নক্সা ইত্যাদি ছাতার ভেতরে লুকিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ। বাড়ির কাজের লোকটিকে ধরে কি পাড়ার কেউ কোনদিন জিজ্ঞাসা করেছিল, বুড়ো ভদ্রলোকটি কী করেন? ওর খরচ-খরচা চলে কী করে? কিংবা ওই রকম হাতে ছাতা নিয়ে উনি যখনতখন যান কোথায়?’
অভিজিতের কথা শুনতে শুনতে আমাদের চোখ ছানাবড়া! বাবা! কথাগুলো সত্যি হলে তো সাংঘাতিক ব্যাপার। ব্রজেন বলল, ‘হ্যাঁ বেছে বেছে একটা লোকও উনি জুটিয়েছেন বটে। আমরা পাড়ার ক’জন ছেলে জুটে একদিন পথে ধরেছিলাম ওঁর কাজের লোকটাকে। অমনি সাপের মতো ফোঁস করে উঠেছিল। আমি গরিব মানুষ, এখানে আসি, কাজ করে দিয়ে চলে যাই। বুড়ো কত্তার সঙ্গে আমার শুধু ওইটুকুর সম্পর্ক। উনি কী কাজ করেন, কী করে খাওয়াদাওয়া জোটান, অতশত আমি জানি না। আপনারা ভদ্দনোকের ছেলে, বুড়োকত্তার পেছনে লেগোনি বাবু। তাহলে আমার কাজ চলে যাবে। গরিব মানুষ বালবাচ্ছা নিয়ে না খেয়ে মরব। এরপর আর লোকটাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা যায়?’
অভিজিত বেশ বিজ্ঞের মত হেসে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, “হুম্। যেমন গুরু, তেমনি চ্যালা। এমনটাই হয়। এমন সময়ে যদি ব্যোমকেশ বক্সীকে পাওয়া যেত রে…’
তাহলে কী হত সেটা আর জিজ্ঞাসা করার সুযোগ হয়নি আমাদের। খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল। খাওয়া দাওয়ার পর আড্ডা আর জমেনি। আকাশও ততক্ষণে পরিষ্কার। ব্রজেনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম আমরা।
দিন দশ বাদে দুপুরবেলা ব্রজেন আর আমি বাড়ি ফিরছিলাম কলেজ থেকে। বিধান সরণির ওপর এক ব্যাঙ্কের কাছাকাছি পৌঁছনো মাত্র আচমকা আমাদের আশে পাশে দুম্ দুম্ করে পড়ল দু-তিনটে বোমা! আতঙ্কে যে যেদিকে পারে দৌড়তে শুরু করল। কিছু গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল দূরে দূরে। আমরা দুজনে দৌড়ে গিয়ে ব্যাঙ্কের কাছাকাছি একটা গাড়ি বারান্দার থামের আড়ালে নিলাম আশ্রয়। ঘটনার জায়গার এত কাছে ছিলাম যে বেশিদূরে পালিয়ে যাওয়া নিরাপদ মনে হয়নি। এই অবস্থায় আমরা সভয়ে লক্ষ করলাম খোলা ছাতা নিয়ে রাস্তার প্রায় হামাগুড়ি দিতে দিতে ব্যাঙ্কের দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে একটি লোক। সঙ্গে সঙ্গে ফট ফট করে গুলির আওয়াজ এল আমাদের কানে। ব্ৰজেন উত্তেজিত গলায় বলল, ব্যাঙ্কে নির্ঘাৎ ডাকাত পড়েছে!’
নিশ্বাস প্রায় বন্ধ করে বললাম আমি, ‘কিন্তু ওই লোকটা কী বুদ্ধুরে! দ্যাখ, দ্যাখ! এখন গুলি চলছে! আর ও কিনা ছাতার আড়াল করে এগিয়ে যাচ্ছে ব্যাঙ্কের গেট-এর দিকেই! কিন্তু কে সাবধান করবে ওকে?’
ভয়ে শিউরে উঠে ব্রজেনও বলল, ‘ছাতার কাপড় ছ্যাঁদা করে পিস্তল বা রিভলবারের গুলি লোকটার দেহটাকে ঝাঁঝরা করে দিল বোধহয়! ঈই৷’
আগেই লক্ষ করেছিলাম একটু তফাতে একটি যুবক দাঁড়িয়েছিল মোটরবাইক নিয়ে। দেখা গেল, ব্যাঙ্কের দিক থেকে দৌড়ে এসে মোটরবাইকের পেছনের সিট-এ চট্পট বসল আর-একটি যুবক। হাতে তার আগ্নেয়াস্ত্ৰ। চোখের পলক পড়তে না পড়তে মোটরবাইক উধাও।
কিন্তু ওদিকে ব্যাঙ্কের গেট-এর সামনে তখন কী এক ধুন্ধুমার লেগে গেছে। ডাকাতদের গুলিতে তাহলে নিশ্চয়ই ঝাঁঝরা হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে ওই হতভাগ্য রামবোকার রক্তাক্ত শরীরটা। সেটাকে ঘিরেই জমাটবাঁধা ভিড়ের মধ্যে এত হৈ-হট্টগোল কিনা কে জানে।
মানুষের মন থেকে ভয়ের প্রথম ধাক্কাটা কেটে গিয়েছিল। আশপাশের অনেক মানুষই দৌড়ে আসছিল ব্যাঙ্কের গেট লক্ষ্য করে। আমাদেরও মনে হল, যদি ব্যাঙ্কে ডাকাতি করতেই এসে থাকে, মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দিয়েছে দুজন ডাকাত। এ তো আমাদের চোখে দেখা। আড়াল থেকে বেরিয়ে আমরাও দৌড়ে গেলাম ব্যাঙ্কের দিকে। ভিড়ের কাছে গিয়ে দেখি একটি যুবকের ওপর জনগণের কিল-চড়-ঘুসি বর্ষিত হচ্ছে নির্দয়ভাবে। বিষয়টা পরিষ্কার। ধরা পড়ে গেছে ডাকাত দলের একজন। কিন্তু সেই মাথামোটা ছত্রধারীটির অবস্থা কী?
একটু চেষ্টা করতেই দেখা গেল ব্যাঙ্কের কোলাপসিবল গেট-এর ভেতরে সিঁড়ির ওপর আর একটা ভিড়। মাথার ওপর উজ্জ্বল আলো। ভিড় ঠেলে এগোলাম। তারপরই ব্রজেনের বিস্ময়বিমূঢ় গলা কানে এল আমার।
‘এই বিকাশ। এ যে আমাদের পাড়ার ছাতাবাবু রে।’
মুখ চিনতাম না। আগে চোখে দেখিনি। এখন চোখ বড়ো বড়ো করে দেখলাম, রোগা চেহারার এক বৃদ্ধ বসে রয়েছেন সিঁড়ির ধাপে। মাথার পাতলা চুল গোঁফ ভ্ৰূ সমস্ত সাদা। ঘামে ভেজা রোগা রোগা মুখখানা খুশির আলোয় চক্চক্ করছে। দেখলাম, খোলা ছাতাটাকে পাকিয়ে পাকিয়ে ফের আগের মতো গুটিয়ে রাখলেন। ব্যাঙ্কের বড়োবাবুরা হাঁসফাস করতে করতে এসে বললেন, ‘ফোন করে দিয়েছি। এখনি পুলিশ এসে পড়বে, স্যার। আসুন।’
বৃদ্ধকে তারা আদর করে নিয়ে চললেন ওপরে। প্রচণ্ড দুর্নিবার কৌতূহল আমাদের তার পিছু পিছু চলতে বাধ্য করল। বৃদ্ধকে এখানে সবাই বীরের সম্মান দিচ্ছেন বোঝা গেল।…
বৃদ্ধের নাম প্রফেসর ইন্দ্র গুপ্ত।
সেদিন ব্রজেন আর আমি প্রফেসর গুপ্ত সম্পর্কে যেটকু খবর জানতে পেরেছিলাম, তা গল্প উপন্যাসের চেয়ে কম চমকপ্রদ নয় কোন অংশে। প্রফেসর গুপ্তর একটা ল্যাবরেটরি রয়েছে তাঁর বাড়িতে। নিজে ব্যাচেলর। চাকরি করতেন বিদেশে। অবসর নিয়ে স্বদেশে ফিরে ভাইপো-ভাইঝির সংসারে ঢুকে পড়েন একদিন। একমাত্র ভাইপো এয়ারলাইন্স পাইলট। মাসের অধিকাংশ দিন তার বাইরে বাইরে কাটে। আর বাড়িতে রয়েছে কলেজে পড়া এক ভাইঝি। প্রফেসর গুপ্ত তাদের অভিভাবক। কিন্তু এ বয়সে ল্যাবরেটরির কাজে তাকে আগের মতো আর বেশিক্ষণ থাকতে দেওয়া হত না। প্রফেসর গুপ্ত বলেন, যে সাধনায় নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন তিনি, তা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তবে লক্ষ্যে তিনি প্রায় পৌঁছে গেছেন। চূড়ান্ত পরীক্ষাটা শুধু সেরে নিতে বাকি। কিন্তু ভাইপো ভাইঝি আমলই দিতে চায় না তাঁর কথা। তারা বলে, বয়স তো আর বসে নেই। শরীর ভেঙে গেছে আগের তুলনায় অনেক। এত পরিশ্রম কীসের জন্যে? এই নিয়ে মনোমালিন্য। কিছুটা ক্ষোভও জন্মেছিল প্রফেসর গুপ্তর মনে। ল্যাবরেটরিতে বসে তিনি যে কাজটি করে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে সে বিষয়ে কিছুটা ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্যে সামান্যতম কৌতূহলও কোনো সময়ে দেখায়নি তারা। অথচ মানুষের প্রয়োজনে আসবে, এমন একটা দারুণ জিনিস আবিষ্কারের উন্মাদনার মধ্যে দিনগুলো কাটছিল তাঁর। একটা চূড়ান্ত পরীক্ষা সেরে নেবার অপেক্ষায় সময় গুণছিলেন তিনি।
ভাইপো ভাইঝি’র ওপর রাগে ও ক্ষোভে ভেতরে ভেতরে অস্থিরও ছিলেন। শেষে অন্য পাড়ায় (ব্রজেনদের পাড়ায়) একটা ছোটো ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি অল্প কিছুকাল আগে। তাঁর আবিষ্কৃত বুলেট-প্রুফ হালকা ছাতাটিকে সর্বক্ষণের সাথী করে ঘুরে বেড়াতেন শহরের এদিক ওদিক। রোদবৃষ্টি আটকানোর জন্যে তো এ ছাতা নয়। চারদিকে ইটপাথর ছোড়াছুড়ির ঘটনা হামেশাই ঘটে থাকে। লোহার জালের ঢাল নিয়ে হামলা ঠেকাতে বেরোয় পুলিশ। ও জিনিসটা আদৌ হালকা নয়। নাড়াচাড়া করতে বেশ অসুবিধে হয় তাদের, বোঝা যায়। কিন্তু আজকাল ইটপাটকেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বোমা গুলিটুলিও তো কম ছোড়া হয় না। পুলিশের হাতের ওই ঢাল তখন অকেজো। কিন্তু প্রফেসর ইন্দ্র গুপ্তের আবিষ্কৃত এই হালকা ছাতা অপরিহার্য হয়ে পড়বে এসব ক্ষেত্রে। এইরকম সম্ভাবনার কথা অনবরত মাথায় ঘুরছিল প্রফেসর গুপ্তর।
যখন তিনি ওই ব্যাঙ্ক থেকে কিছু টাকা তুলে নিয়ে পথে এসে পা রেখেছেন মাত্র, কিন্তু ওই সময়ে ব্যাঙ্কে হানা দেয় ডাকাত দল। ভেতর থেকে বাধা পেয়ে সুবিধে করতে পারে না। ডাকাতি না করেই গুলি ছুড়তে ছুড়তে দৌড়ে বেরিয়ে আসছিল। প্রফেসর গুপ্ত সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা অনুমান করে নিলেন। অমনি ফটাস করে খুলে গেল তাঁর হাতের বুলেটপ্রুফ ছাতা। ছাতার আড়ালে হামাগুড়ি দিতে দিতে তিনি এগিয়ে গেলেন ব্যাঙ্কের গেটের দিকে। দুজন ডাকাত পালিয়ে গেল মোটরবাইকে চেপে। ক-টা গুলি ঠাঁই ঠাঁই করে ছাতার কাপড়ে লেগে ছিটকে বেরিয়ে গেল। তারপরই একটি ডাকাত দৌড়ে এসে পড়ল প্রফেসর গুপ্তর নাগালের ভেতর। ছাতার ভেতরের একটা গোপন বোতাম টিপলেন তিনি। অমনি কাপড়ের ওপরে ছাতার বাঁট-এর অংশটি বেঁকে একটা আঁকশি হয়ে গেল। ওই আঁকাশি ডাকাতটার পায়ে গায়ে বা হাতে—ঠিক কোথায় লেগে ছিল, উত্তেজনার মুখে সেটা মালুম করতে পারেননি প্রফেসর। মনে আছে সজোরে একটা হ্যাঁচকা টান মারতেই রাস্তার ওপর দমাস করে পড়ে গিয়েছিল ডাকাতটা। তার হাত থেকে রিভলবারটাও ছিটকে পড়েছিল অনেক দূরে।
এসমস্ত খবর ঘটনার পরদিন অনেক কাগজেই বেরিয়েছিল অবশ্য। তবে সংক্ষিপ্ত আকারে।
Tags: অষ্টম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, কল্পবিজ্ঞান গল্প, মজার কল্পবিজ্ঞান, শ্রীধর সেনাপতি
ভালো গল্প